মুহাম্মদ জাভেদ হাকিম
যেখানে রাত সেখানেই কাত—এ কথা ভাবতে ভাবতে এবারের গন্তব্য ঠিক করা হলো কুতুবদিয়া দ্বীপ। কক্সবাজারগামী রাতের গাড়িতে চড়ে ভোরের বদলে দুপুরে পৌঁছাই চকরিয়ায়। ততক্ষণে ভ্রমণ পরিকল্পনা নতুন করে সাজাতে মস্তিষ্কে বাড়তি চাপ দিতে হয়েছে।
পথের পাশের বাসস্ট্যান্ডের এক রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাবার সেরে লেগুনায় চড়ে ছুট দিলাম মগনামা ঘাট। এরপর বড়ঘোপ ঘাটগামী ট্রলারে উঠে বসি। কুতুবদিয়া চ্যানেলের নজরকাড়া সৌন্দর্য দেখতে দেখতে ট্রলারের চিরপরিচিত ঠেলাঠেলি ভুলে গেলাম। সবাই যে লাইফ জ্যাকেট কিংবা বয়া ছাড়াই চ্যানেল পাড়ি দিচ্ছে, সে বিষয়েও কারও ভ্রুক্ষেপ নেই। দেখতে দেখতে আর ভাবতে ভাবতে কুতুবদিয়া চ্যানেল পাড়ি দিয়ে পৌঁছে গেলাম বড়ঘোপ ঘাটে। সেখান থেকে গিয়ে উঠলাম নির্ধারিত হোটেলে। আর অল্প সময়ের মধ্যে সমুদ্রসৈকতে। খুঁজতে থাকলাম রাতে তাঁবু খাটানোর জন্য জুতসই জায়গা। দক্ষিণ দিকে মাতবরপাড়ায় পেয়েও গেলাম একটি জায়গা। এ পাশটায় ঘন ঝাউবন। তার পাশেই শ্মশান। আছে আছড়ে পড়া সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ। ক্যাম্পিং আজ হবে ভৌতিক!
তাঁবু টানানো, হ্যামোক ঝোলানো, ক্যাম্প ফায়ারের জন্য লাকড়ি সংগ্রহ করতে করতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। ভরা পূর্ণিমার সে সন্ধ্যায় জ্বালিয়ে দেওয়া হলো আগুন, ছোট ছোট ভাগ করে বেশ কয়েক জায়গায়। সমুদ্রে তখন ভাটা। হেঁটে চলে যাওয়া যায় বহুদূর। মাথার ওপর নীল আকাশে চাঁদের আলো আর শুভ্র মেঘের লুকোচুরি। ধীরে ধীরে রাত গাঢ় হলো। চারপাশ সুনসান।
গত রাতে ভৌতিক কিছু ঘটেনি। ভোরবেলা তাঁবুর ফাঁক দিয়ে মাথা বের করতেই স্নিগ্ধ ভোরের বাতাস দৈহিক চঞ্চলতা বাড়িয়ে দিল বহুগুণ। দ্রুত বের হয়ে জলরাশির দিকে হাঁটতে থাকলাম। চোখ আটকায় জমাট বাঁধা প্রবালে। এ রকমটা যে এখানে রয়েছে, তা জানা ছিল না। চরম আহ্লাদে, পরম যতনে গুটিগুটি পায়ে প্রবালের ওপর হেঁটে বেড়াই। প্রবালের খাঁজে খাঁজে সামুদ্রিক ছোট প্রাণী বেশ আয়েশি মুডে ঘুরছিল।
ঘড়ির কাঁটায় সময় বাড়ে। পানির ছলাৎ ছলাৎ শব্দ জোয়ারের আগমনী বার্তা দেয়। ঝাউবনের পেছন থেকে উঁকি মেরে পুব আকাশটা লাল করে সূর্য তার অস্তিত্ব জানান দিলে আমরাও তল্পিতল্পা গুটিয়ে বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প পরিদর্শনে আলী আকবর ডেইলের দিকে চলে যাই। যাওয়ার পথে সিএনজিচালিত অটোরিকশা থামিয়ে লবণখেতে লবণ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ দেখি। এরপর অল্প সময়ের মধ্যে আলী আকবর ডেইলে পৌঁছে যাই। এখানে রয়েছে ২০০৬ সালে স্থাপিত দেশের প্রথম বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প। মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন কুতুবদিয়া দ্বীপবাসীকে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দিয়েছিল এই বায়ুকল; কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে মুখ থুবড়ে পড়ে এটি। এখন শুধু এর ৫০টি পাখাসংযুক্ত পিলার শোভাবর্ধন করে যাচ্ছে। প্রকল্পটি বেড়িবাঁধের কোলঘেঁষা। পর্যটকেরা বায়ুকলের বিশালাকৃতির পাখার পিলার দেখে, সাগরতীরে বসানো সিসি ব্লকে দাঁড়িয়ে সুন্দর ছবি তুলে ফিরে আসেন।
কুতুবদিয়া দ্বীপ যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর, তেমনি রয়েছে এর ইতিহাস-ঐতিহ্য। প্রায় দেড় লাখ মানুষের বসবাস ৬০০ বছর বয়সী এ দ্বীপে। এর আয়তন প্রায় ৮৩ দশমিক ৩২ বর্গমাইল। পঞ্চাশের দশকের দিক থেকে কুতুবদিয়া দ্বীপে মানুষের চলাচল শুরু হয় বলে জানা যায়। হজরত কুতুবউদ্দিনের নামে এই অঞ্চলের মানুষেরা দ্বীপের নাম রাখে কুতুবউদ্দিনের ডিয়া। বাসিন্দারা দ্বীপকে ডিয়া বা দিয়া বলেন। কালের পরিক্রমায় কুতুবউদ্দিনের ডিয়া কুতুবদিয়া হিসেবে কাগজ-কলমে স্বীকৃতি পেয়েছে। তাঁর সমাধি এখনো কুতুবদিয়ায় সংরক্ষিত রয়েছে।
অটোরিকশায় চেপে চলে যাই দক্ষিণ-পশ্চিম ধুরুং। এখানে রয়েছে ব্রিটিশ আমলের তৈরি বাতিঘর। এর নির্মাণকাল ১৮২২ সাল। ১২০ ফুট উচ্চতার টাওয়ারটি চালু করা হয়েছিল ১৮৪৬ সালে। সে সময় জাহাজের নাবিকেরা এর আলো প্রায় ২২০ কিলোমিটার দূর থেকেও দেখতে পেতেন। এখনো দেশের মানুষের কাছে কুতুবদিয়ার পরিচয় বাতিঘরের দ্বীপ হিসেবে। যদিও এটি একসময় সাগরগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। টাওয়ার-লাগোয়া সৈকতের সৌন্দর্য অনন্য।
যাবেন যেভাবে
ঢাকা-কক্সবাজার রুটের যেকোনো বাসে চড়ে চকরিয়া নামতে হবে। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় মগনামা ঘাট। সেখান থেকে ট্রলার বা স্পিডবোটে বড়ঘোপ ঘাট। ঘাট থেকে অটোরিকশা বা মোটরসাইকেলে বড়ঘোপ বাজার ও সৈকতে যাওয়া যায়।
আবাসিক হোটেল ও রেস্তোরাঁ রয়েছে কুতুবদিয়ায়। ইচ্ছা করলে সৈকতে তাঁবু টানিয়েও থাকা যাবে।
যেখানে রাত সেখানেই কাত—এ কথা ভাবতে ভাবতে এবারের গন্তব্য ঠিক করা হলো কুতুবদিয়া দ্বীপ। কক্সবাজারগামী রাতের গাড়িতে চড়ে ভোরের বদলে দুপুরে পৌঁছাই চকরিয়ায়। ততক্ষণে ভ্রমণ পরিকল্পনা নতুন করে সাজাতে মস্তিষ্কে বাড়তি চাপ দিতে হয়েছে।
পথের পাশের বাসস্ট্যান্ডের এক রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাবার সেরে লেগুনায় চড়ে ছুট দিলাম মগনামা ঘাট। এরপর বড়ঘোপ ঘাটগামী ট্রলারে উঠে বসি। কুতুবদিয়া চ্যানেলের নজরকাড়া সৌন্দর্য দেখতে দেখতে ট্রলারের চিরপরিচিত ঠেলাঠেলি ভুলে গেলাম। সবাই যে লাইফ জ্যাকেট কিংবা বয়া ছাড়াই চ্যানেল পাড়ি দিচ্ছে, সে বিষয়েও কারও ভ্রুক্ষেপ নেই। দেখতে দেখতে আর ভাবতে ভাবতে কুতুবদিয়া চ্যানেল পাড়ি দিয়ে পৌঁছে গেলাম বড়ঘোপ ঘাটে। সেখান থেকে গিয়ে উঠলাম নির্ধারিত হোটেলে। আর অল্প সময়ের মধ্যে সমুদ্রসৈকতে। খুঁজতে থাকলাম রাতে তাঁবু খাটানোর জন্য জুতসই জায়গা। দক্ষিণ দিকে মাতবরপাড়ায় পেয়েও গেলাম একটি জায়গা। এ পাশটায় ঘন ঝাউবন। তার পাশেই শ্মশান। আছে আছড়ে পড়া সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ। ক্যাম্পিং আজ হবে ভৌতিক!
তাঁবু টানানো, হ্যামোক ঝোলানো, ক্যাম্প ফায়ারের জন্য লাকড়ি সংগ্রহ করতে করতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। ভরা পূর্ণিমার সে সন্ধ্যায় জ্বালিয়ে দেওয়া হলো আগুন, ছোট ছোট ভাগ করে বেশ কয়েক জায়গায়। সমুদ্রে তখন ভাটা। হেঁটে চলে যাওয়া যায় বহুদূর। মাথার ওপর নীল আকাশে চাঁদের আলো আর শুভ্র মেঘের লুকোচুরি। ধীরে ধীরে রাত গাঢ় হলো। চারপাশ সুনসান।
গত রাতে ভৌতিক কিছু ঘটেনি। ভোরবেলা তাঁবুর ফাঁক দিয়ে মাথা বের করতেই স্নিগ্ধ ভোরের বাতাস দৈহিক চঞ্চলতা বাড়িয়ে দিল বহুগুণ। দ্রুত বের হয়ে জলরাশির দিকে হাঁটতে থাকলাম। চোখ আটকায় জমাট বাঁধা প্রবালে। এ রকমটা যে এখানে রয়েছে, তা জানা ছিল না। চরম আহ্লাদে, পরম যতনে গুটিগুটি পায়ে প্রবালের ওপর হেঁটে বেড়াই। প্রবালের খাঁজে খাঁজে সামুদ্রিক ছোট প্রাণী বেশ আয়েশি মুডে ঘুরছিল।
ঘড়ির কাঁটায় সময় বাড়ে। পানির ছলাৎ ছলাৎ শব্দ জোয়ারের আগমনী বার্তা দেয়। ঝাউবনের পেছন থেকে উঁকি মেরে পুব আকাশটা লাল করে সূর্য তার অস্তিত্ব জানান দিলে আমরাও তল্পিতল্পা গুটিয়ে বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প পরিদর্শনে আলী আকবর ডেইলের দিকে চলে যাই। যাওয়ার পথে সিএনজিচালিত অটোরিকশা থামিয়ে লবণখেতে লবণ সংগ্রহ ও সংরক্ষণ দেখি। এরপর অল্প সময়ের মধ্যে আলী আকবর ডেইলে পৌঁছে যাই। এখানে রয়েছে ২০০৬ সালে স্থাপিত দেশের প্রথম বায়ুবিদ্যুৎ প্রকল্প। মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন কুতুবদিয়া দ্বীপবাসীকে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দিয়েছিল এই বায়ুকল; কিন্তু কয়েক বছরের মধ্যে মুখ থুবড়ে পড়ে এটি। এখন শুধু এর ৫০টি পাখাসংযুক্ত পিলার শোভাবর্ধন করে যাচ্ছে। প্রকল্পটি বেড়িবাঁধের কোলঘেঁষা। পর্যটকেরা বায়ুকলের বিশালাকৃতির পাখার পিলার দেখে, সাগরতীরে বসানো সিসি ব্লকে দাঁড়িয়ে সুন্দর ছবি তুলে ফিরে আসেন।
কুতুবদিয়া দ্বীপ যেমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর, তেমনি রয়েছে এর ইতিহাস-ঐতিহ্য। প্রায় দেড় লাখ মানুষের বসবাস ৬০০ বছর বয়সী এ দ্বীপে। এর আয়তন প্রায় ৮৩ দশমিক ৩২ বর্গমাইল। পঞ্চাশের দশকের দিক থেকে কুতুবদিয়া দ্বীপে মানুষের চলাচল শুরু হয় বলে জানা যায়। হজরত কুতুবউদ্দিনের নামে এই অঞ্চলের মানুষেরা দ্বীপের নাম রাখে কুতুবউদ্দিনের ডিয়া। বাসিন্দারা দ্বীপকে ডিয়া বা দিয়া বলেন। কালের পরিক্রমায় কুতুবউদ্দিনের ডিয়া কুতুবদিয়া হিসেবে কাগজ-কলমে স্বীকৃতি পেয়েছে। তাঁর সমাধি এখনো কুতুবদিয়ায় সংরক্ষিত রয়েছে।
অটোরিকশায় চেপে চলে যাই দক্ষিণ-পশ্চিম ধুরুং। এখানে রয়েছে ব্রিটিশ আমলের তৈরি বাতিঘর। এর নির্মাণকাল ১৮২২ সাল। ১২০ ফুট উচ্চতার টাওয়ারটি চালু করা হয়েছিল ১৮৪৬ সালে। সে সময় জাহাজের নাবিকেরা এর আলো প্রায় ২২০ কিলোমিটার দূর থেকেও দেখতে পেতেন। এখনো দেশের মানুষের কাছে কুতুবদিয়ার পরিচয় বাতিঘরের দ্বীপ হিসেবে। যদিও এটি একসময় সাগরগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। টাওয়ার-লাগোয়া সৈকতের সৌন্দর্য অনন্য।
যাবেন যেভাবে
ঢাকা-কক্সবাজার রুটের যেকোনো বাসে চড়ে চকরিয়া নামতে হবে। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় মগনামা ঘাট। সেখান থেকে ট্রলার বা স্পিডবোটে বড়ঘোপ ঘাট। ঘাট থেকে অটোরিকশা বা মোটরসাইকেলে বড়ঘোপ বাজার ও সৈকতে যাওয়া যায়।
আবাসিক হোটেল ও রেস্তোরাঁ রয়েছে কুতুবদিয়ায়। ইচ্ছা করলে সৈকতে তাঁবু টানিয়েও থাকা যাবে।
দিগন্তবিস্তৃত ধানখেতের মাথার ওপর নীল আকাশে উঁকি দেবে সাদা মেঘ। শরৎকাল বলে ভুল হতে পারে। ভুল ভাঙলে দেখতে পাবেন, মেঘের ভেলা সূর্যের আলোয় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে হয়ে উঠছে গোলাপি কিংবা লাল। বুঝবেন, আপনি শরতের সাদা মেঘ নয়, দেখছেন তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
১ দিন আগেকোনো কিছু ওপর থেকে নিচে পড়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে। স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে আমরা সবাই এ বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলোতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্র কাজ করে না। অর্থাৎ সেসব জায়গায় কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। যেতে চান সেই সব জায়গায়?
১ দিন আগেশীত, বসন্ত আর বর্ষায় বাংলার নীল নদ সারির রূপ বদলে ফেলে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে দক্ষ মাঝিরাও ভয়ে ভয়ে বইঠা চালান। আর শীতে সারি নদীর নীল পানি দেয় অপার্থিব জগতের খোঁজ। নদীটি ধরে কিছুদূর উজান বাইলেই পাওয়া যাবে লালাখাল জিরো পয়েন্ট।
১ দিন আগেভ্রমণকালে রোগবালাই থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী না হলে ভ্রমণের আনন্দ মাঠে মারা যেতে পারে। ভ্রমণের সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেছে নিতে পারেন কিছু উপায়।
১ দিন আগে