ফাতিমা জাহান
একটা কফিশপে কয়েক ঘণ্টা ধরে বসে আছি। পাশে পূর্ব আফ্রিকার ঐতিহ্যবাহী হাতে আঁকা চিত্রকলার দোকান। ঘাড় ঘোরালেই ভীষণ রঙিন সব চিত্রকর্ম দেখা যায়। কফির সঙ্গে মুফতে পাওয়া শৈল্পিক আনন্দ। এই যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কফিশপে বসে বসে পথ আর মানুষ দেখছি, এতে দোকানের কারও কিছু এসে যাচ্ছে না। ওয়েটার মেয়েটি বেশ আপ্যায়ন করছে। হেসে চলে যাচ্ছে। আফ্রিকা না হলে নিশ্চয়ই ভ্রু কুঁচকে থাকত। আশপাশের সব দোকান ও অফিস একতলা। বেশির ভাগই নির্মিত হয়েছে বিশ শতকের প্রথম দিকে। আর পূর্ব আফ্রিকার যে ব্যাপারটা আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে তা হলো, রাস্তায় কেউ হর্ন বাজায় না, কেউ উঁচু স্বরে কথা বলে না। নিঃশব্দে চলছে অল্পসংখ্যক গাড়ি।
উগান্ডার একটি ছোট শহর জিঞ্জা। এখান থেকে আমি যাব নীল নদের উৎস দেখতে। বেশির ভাগ পর্যটক জিঞ্জায় আসে নীল নদের উৎস দেখতে। নীল নদ আমাকে সব সময়ই মুগ্ধ করেছে। মিসরের নীল নদ দেখে সেখানেই থেকে যেতে ইচ্ছে করেছে। নীলের আধার খুঁজে খুঁজে একসময় আমায় নিয়ে এসেছে এই অচিন দেশে।
রাস্তার উল্টো পাশে সারি সারি দোকান। ১৯২৪ সালে নির্মিত ভবনে পুলিশ স্টেশন। দোকানগুলোর মাথায় বিভিন্ন রঙে নির্মাণকাল লেখা। হলুদ, নীল, লাল রঙের দোকান রং ছড়াচ্ছে। আর বাঁ দিকে ফিরলে সারি সারি পেইন্টিং রাখা আছে ফুটপাতে, দোকানেও শোভা পাচ্ছে কিছু।
রাজধানী কাম্পালা থেকে ট্যাক্সিতে চড়ে এসেছি। সময় লেগেছে প্রায় তিন ঘণ্টা। নীল নদের উৎস দেখা হয়ে গেলে আমাকে জিঞ্জায় রেখে ট্যাক্সি চলে যাবে। এমন ছিমছাম শহরে থাকার লোভ আমি কিছুতেই সামলাব না।
মূল জিঞ্জা শহর থেকে নীলনদের উৎস ২০ মিনিটের পথ। আসার পথে দুই ধারে প্রসারিত আখের খেত দেখেছি। পাহাড়ের চূড়া থেকে ঢাল পর্যন্ত সারি সারি আখখেত। কিছু কিছু জায়গায় কলার বাগানও আছে। আমাদের যেমন প্রধান খাদ্য ভাত, উগান্ডায় তেমন কাঁচা কলা সেদ্ধ করে ভর্তা বা মাতোকে। এই কলাভর্তা এরা মাছ বা মাংসের তরকারির সঙ্গে খায়।
নীল নদের উৎসের দিকের পথের দুপাশে ঘন সবুজ জঙ্গল পেরিয়ে গেলেই দেখা পাব জলের। ট্যাক্সি থেকে নেমে নদের দিকে যেতে চোখে পড়ল মহাত্মা গান্ধীর আবক্ষ ভাস্কর্য। পূর্ব আফ্রিকার ব্যবসা-বাণিজ্য মূলত চালায় ভারতীয়রা বা কয়েক প্রজন্ম ধরে বসবাস করে আসা ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষ। উগান্ডার সবচেয়ে বড় আখখেতের মালিক এক ভারতীয়—আসার পথে দেখে এসেছি। এ ছাড়া বড় সব প্রতিষ্ঠানও চালায় ভারতীয়রা। জিঞ্জায় মহাত্মা গান্ধীর ভাস্কর্য স্থাপন করেছেন একজন ভারতীয়।
লেক ভিক্টোরিয়া আর নীল নদ এখানে এক হয়ে মিশে গেছে। নীল নদের উৎস লেক ভিক্টোরিয়া। এই হ্রদের যে জায়গা থেকে নীল নদের জন্ম, সেখানে নৌকায় করে যেতে হবে, ইঞ্জিনের নৌকা। আমি সোলো ট্রাভেলার বলে আস্ত একটা বড় নৌকা ভাড়া করতে হলো। নৌকা যাচ্ছে লেক ভিক্টোরিয়ার এক বনভূমির মাঝ দিয়ে। চারদিক মেটে আর ধূসর রং হঠাৎ সবুজ হয়ে উঠেছে। চারপাশের বনানী নিখাদ সবুজ। লেকের জলও তা-ই। একটা বনভূমি, একটা জলাধার অমূল্য রত্নখনি। সবার অজান্তে লুকিয়ে আছে আফ্রিকার বুকে।
নৌকায় আমার সঙ্গে মাঝি ছাড়াও ছিলেন ইংরেজি জানা গাইড রাহমান। তিনি পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা বনের পাখি চেনাচ্ছিলেন। বেশির ভাগই বিভিন্ন রঙের হাঁস, বক বা সারস, মাছরাঙাজাতীয় পাখি। কিন্তু আমার পাখি দেখায় মন নেই। আমি এই বনানী, এই জল দেখে এতই বিমোহিত হয়ে গিয়েছি যে তাঁর কোনো কথাই আমার কানে যাচ্ছিল না। শুধু টুকরো টুকরো শুনতে পাচ্ছিলাম। রাহমান বলে চলেছেন বিভিন্ন পাখির নাম—টোরাকো, সোয়াম্ফেন, কিংফিশার ইত্যাদি। মাঝে গিরগিটিজাতীয় প্রাণীও দেখা যাচ্ছে নদের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা গাছে পাতার ফাঁকে। সামনের তীরে ইঞ্জিনবিহীন নৌকায় কয়েকটি দামাল ছেলে জলে ঝাঁপ দিয়ে যাচ্ছে। আরেক পাশে জেলেরা নৌকায় বসে ছিপ দিয়ে মাছ ধরছেন।
পাখি আর বনভূমি দেখতে দেখতে ইঞ্জিনের শব্দ থেমে গেল। আমি নীল নদের উৎসে চলে এসেছি। এখানে জলের মাঝেই একটা ভাসমান রেস্তোরাঁ বানিয়েছে এরা। সেখানে দাঁড়িয়ে নীল নদের উৎসের উত্তাল স্রোতের ওঠানামা দেখা যায়। উৎস দেখতে এসে দেখি সেও কম মনোমুগ্ধকর নয়, সেও বিমোহিত করে। একরাশ মেঘ থেকে টেনে আনন্দের ঝলমলে রোদ সে দেখাতে পারে, সে সব পারে। উৎসের দিকে একটা সরু পথ করে দেওয়া আছে, চাইলে সেখানে গিয়েও দেখা যায়। আমি আরও কাছ থেকে দেখতে চাই। যদিও অন্যান্য দেশের নীল নদের গাঢ় নীল রঙের মতো নদের উৎস নীল হয়ে জন্মায়নি, এর রং ধূসর নীল। তবু এ এক আশ্চর্য প্রাপ্তি। আমি ছুঁয়ে দেখি এক অপার আশ্চর্য, সাড়ে ৬ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া এক দীর্ঘ নদের ধরে রাখার আশ্চর্য, আফ্রিকার ঐশ্বর্য হয়ে থাকার আশ্চর্য। এ আশ্চর্যের কাছে মানুষের তৈরি সব আশ্চর্য মলিন হয়ে যায়।
একটা কফিশপে কয়েক ঘণ্টা ধরে বসে আছি। পাশে পূর্ব আফ্রিকার ঐতিহ্যবাহী হাতে আঁকা চিত্রকলার দোকান। ঘাড় ঘোরালেই ভীষণ রঙিন সব চিত্রকর্ম দেখা যায়। কফির সঙ্গে মুফতে পাওয়া শৈল্পিক আনন্দ। এই যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কফিশপে বসে বসে পথ আর মানুষ দেখছি, এতে দোকানের কারও কিছু এসে যাচ্ছে না। ওয়েটার মেয়েটি বেশ আপ্যায়ন করছে। হেসে চলে যাচ্ছে। আফ্রিকা না হলে নিশ্চয়ই ভ্রু কুঁচকে থাকত। আশপাশের সব দোকান ও অফিস একতলা। বেশির ভাগই নির্মিত হয়েছে বিশ শতকের প্রথম দিকে। আর পূর্ব আফ্রিকার যে ব্যাপারটা আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে তা হলো, রাস্তায় কেউ হর্ন বাজায় না, কেউ উঁচু স্বরে কথা বলে না। নিঃশব্দে চলছে অল্পসংখ্যক গাড়ি।
উগান্ডার একটি ছোট শহর জিঞ্জা। এখান থেকে আমি যাব নীল নদের উৎস দেখতে। বেশির ভাগ পর্যটক জিঞ্জায় আসে নীল নদের উৎস দেখতে। নীল নদ আমাকে সব সময়ই মুগ্ধ করেছে। মিসরের নীল নদ দেখে সেখানেই থেকে যেতে ইচ্ছে করেছে। নীলের আধার খুঁজে খুঁজে একসময় আমায় নিয়ে এসেছে এই অচিন দেশে।
রাস্তার উল্টো পাশে সারি সারি দোকান। ১৯২৪ সালে নির্মিত ভবনে পুলিশ স্টেশন। দোকানগুলোর মাথায় বিভিন্ন রঙে নির্মাণকাল লেখা। হলুদ, নীল, লাল রঙের দোকান রং ছড়াচ্ছে। আর বাঁ দিকে ফিরলে সারি সারি পেইন্টিং রাখা আছে ফুটপাতে, দোকানেও শোভা পাচ্ছে কিছু।
রাজধানী কাম্পালা থেকে ট্যাক্সিতে চড়ে এসেছি। সময় লেগেছে প্রায় তিন ঘণ্টা। নীল নদের উৎস দেখা হয়ে গেলে আমাকে জিঞ্জায় রেখে ট্যাক্সি চলে যাবে। এমন ছিমছাম শহরে থাকার লোভ আমি কিছুতেই সামলাব না।
মূল জিঞ্জা শহর থেকে নীলনদের উৎস ২০ মিনিটের পথ। আসার পথে দুই ধারে প্রসারিত আখের খেত দেখেছি। পাহাড়ের চূড়া থেকে ঢাল পর্যন্ত সারি সারি আখখেত। কিছু কিছু জায়গায় কলার বাগানও আছে। আমাদের যেমন প্রধান খাদ্য ভাত, উগান্ডায় তেমন কাঁচা কলা সেদ্ধ করে ভর্তা বা মাতোকে। এই কলাভর্তা এরা মাছ বা মাংসের তরকারির সঙ্গে খায়।
নীল নদের উৎসের দিকের পথের দুপাশে ঘন সবুজ জঙ্গল পেরিয়ে গেলেই দেখা পাব জলের। ট্যাক্সি থেকে নেমে নদের দিকে যেতে চোখে পড়ল মহাত্মা গান্ধীর আবক্ষ ভাস্কর্য। পূর্ব আফ্রিকার ব্যবসা-বাণিজ্য মূলত চালায় ভারতীয়রা বা কয়েক প্রজন্ম ধরে বসবাস করে আসা ভারতীয় বংশোদ্ভূত মানুষ। উগান্ডার সবচেয়ে বড় আখখেতের মালিক এক ভারতীয়—আসার পথে দেখে এসেছি। এ ছাড়া বড় সব প্রতিষ্ঠানও চালায় ভারতীয়রা। জিঞ্জায় মহাত্মা গান্ধীর ভাস্কর্য স্থাপন করেছেন একজন ভারতীয়।
লেক ভিক্টোরিয়া আর নীল নদ এখানে এক হয়ে মিশে গেছে। নীল নদের উৎস লেক ভিক্টোরিয়া। এই হ্রদের যে জায়গা থেকে নীল নদের জন্ম, সেখানে নৌকায় করে যেতে হবে, ইঞ্জিনের নৌকা। আমি সোলো ট্রাভেলার বলে আস্ত একটা বড় নৌকা ভাড়া করতে হলো। নৌকা যাচ্ছে লেক ভিক্টোরিয়ার এক বনভূমির মাঝ দিয়ে। চারদিক মেটে আর ধূসর রং হঠাৎ সবুজ হয়ে উঠেছে। চারপাশের বনানী নিখাদ সবুজ। লেকের জলও তা-ই। একটা বনভূমি, একটা জলাধার অমূল্য রত্নখনি। সবার অজান্তে লুকিয়ে আছে আফ্রিকার বুকে।
নৌকায় আমার সঙ্গে মাঝি ছাড়াও ছিলেন ইংরেজি জানা গাইড রাহমান। তিনি পাতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা বনের পাখি চেনাচ্ছিলেন। বেশির ভাগই বিভিন্ন রঙের হাঁস, বক বা সারস, মাছরাঙাজাতীয় পাখি। কিন্তু আমার পাখি দেখায় মন নেই। আমি এই বনানী, এই জল দেখে এতই বিমোহিত হয়ে গিয়েছি যে তাঁর কোনো কথাই আমার কানে যাচ্ছিল না। শুধু টুকরো টুকরো শুনতে পাচ্ছিলাম। রাহমান বলে চলেছেন বিভিন্ন পাখির নাম—টোরাকো, সোয়াম্ফেন, কিংফিশার ইত্যাদি। মাঝে গিরগিটিজাতীয় প্রাণীও দেখা যাচ্ছে নদের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা গাছে পাতার ফাঁকে। সামনের তীরে ইঞ্জিনবিহীন নৌকায় কয়েকটি দামাল ছেলে জলে ঝাঁপ দিয়ে যাচ্ছে। আরেক পাশে জেলেরা নৌকায় বসে ছিপ দিয়ে মাছ ধরছেন।
পাখি আর বনভূমি দেখতে দেখতে ইঞ্জিনের শব্দ থেমে গেল। আমি নীল নদের উৎসে চলে এসেছি। এখানে জলের মাঝেই একটা ভাসমান রেস্তোরাঁ বানিয়েছে এরা। সেখানে দাঁড়িয়ে নীল নদের উৎসের উত্তাল স্রোতের ওঠানামা দেখা যায়। উৎস দেখতে এসে দেখি সেও কম মনোমুগ্ধকর নয়, সেও বিমোহিত করে। একরাশ মেঘ থেকে টেনে আনন্দের ঝলমলে রোদ সে দেখাতে পারে, সে সব পারে। উৎসের দিকে একটা সরু পথ করে দেওয়া আছে, চাইলে সেখানে গিয়েও দেখা যায়। আমি আরও কাছ থেকে দেখতে চাই। যদিও অন্যান্য দেশের নীল নদের গাঢ় নীল রঙের মতো নদের উৎস নীল হয়ে জন্মায়নি, এর রং ধূসর নীল। তবু এ এক আশ্চর্য প্রাপ্তি। আমি ছুঁয়ে দেখি এক অপার আশ্চর্য, সাড়ে ৬ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়া এক দীর্ঘ নদের ধরে রাখার আশ্চর্য, আফ্রিকার ঐশ্বর্য হয়ে থাকার আশ্চর্য। এ আশ্চর্যের কাছে মানুষের তৈরি সব আশ্চর্য মলিন হয়ে যায়।
দিগন্তবিস্তৃত ধানখেতের মাথার ওপর নীল আকাশে উঁকি দেবে সাদা মেঘ। শরৎকাল বলে ভুল হতে পারে। ভুল ভাঙলে দেখতে পাবেন, মেঘের ভেলা সূর্যের আলোয় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে হয়ে উঠছে গোলাপি কিংবা লাল। বুঝবেন, আপনি শরতের সাদা মেঘ নয়, দেখছেন তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
১ দিন আগেকোনো কিছু ওপর থেকে নিচে পড়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে। স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে আমরা সবাই এ বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলোতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্র কাজ করে না। অর্থাৎ সেসব জায়গায় কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। যেতে চান সেই সব জায়গায়?
১ দিন আগেশীত, বসন্ত আর বর্ষায় বাংলার নীল নদ সারির রূপ বদলে ফেলে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে দক্ষ মাঝিরাও ভয়ে ভয়ে বইঠা চালান। আর শীতে সারি নদীর নীল পানি দেয় অপার্থিব জগতের খোঁজ। নদীটি ধরে কিছুদূর উজান বাইলেই পাওয়া যাবে লালাখাল জিরো পয়েন্ট।
১ দিন আগেভ্রমণকালে রোগবালাই থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী না হলে ভ্রমণের আনন্দ মাঠে মারা যেতে পারে। ভ্রমণের সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেছে নিতে পারেন কিছু উপায়।
১ দিন আগে