অনলাইন ডেস্ক
চিড়িয়াখানা বা সাফারি পার্কে বাঘ দেখা যায় অনায়াসেই। তবে জঙ্গলে বাঘকে তার নিজের পরিবেশে দেখার যে আনন্দ কিংবা রোমাঞ্চ, তার কোনো তুলনা নেই। বাঘ দিবসে পৃথিবীর এমন কিছু জঙ্গলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব, যেখানে ভাগ্য ভালো থাকলে বুনো পরিবেশে রাজকীয় এই প্রাণীটির দেখা পেয়ে যেতে পারেন। অবশ্য এখানে বলে রাখা ভালো, এই জঙ্গলগুলোর বেশির ভাগই ভারতে। অবশ্য পৃথিবীর মোট বুনো বাঘের একটি বড় অংশেরই বাস দেশটিতে।
রন্থাম্বর জাতীয় উদ্যান, ভারত
৩ লাখ ৩০ হাজার একরের রন্থাম্বর ন্যাশনাল পার্ক উত্তর ভারতের সবচেয়ে বড় জাতীয় উদ্যানগুলোর একটি। ২০২১ সালের হিসাবে অরণ্যটিতে রয়েল বেঙ্গল টাইগার আছে ৮১টি। জায়গাটি একসময় ছিল জয়পুরের মহারাজাদের প্রিয় শিকারের জায়গা। আশ্চর্যজনক হলেও এর সীমানার ভেতরেই আছে বেশ কয়েকটি প্রাচীন মন্দির, মসজিদ এমনকি ১০ শতকের একটি দুর্গও।
জঙ্গলটিতে গাড়িতে চাপিয়ে পর্যটকদের ঘুরিয়ে দেখানো হয়। সাধারণত ছয় আসনের জিপ কিংবা ২০ আসনের এক গাড়িতে। অক্টোবর থেকে জুন পর্যন্ত তিন ঘণ্টার এই ভ্রমণে নিয়ে যাওয়া হয়। মোটামুটি ৯০ দিন আগে বুকিং দিয়ে রাখলে আশা করা যায় ভ্রমণের সুযোগ পেতে কোনো ঝামেলা হবে না।
এই জঙ্গলে ঘুরতে গিয়ে বাঘের দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এ ছাড়া প্রাচীন সব ধ্বংসাবশেষ তো দেখবেনই। ভাগ্য ভালো থাকলে চিতাবাঘ, শ্লথ ভালুক, কুমির, হায়েনার মতো প্রাণীদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ হয়ে যেতে পারে।
এখানে ফেব্রুয়ারি কিংবা মার্চে সবচেয়ে চমৎকার আবহাওয়া পাবেন। তবে এপ্রিল কিংবা মের উষ্ণ দিনগুলোতে বাঘরা জলের উৎসগুলোতে যেতে প্রলুব্ধ হয় বেশি। কাজেই ওই সময় আশ্চর্য সুন্দর এই প্রাণীটিকে দেখার ভালো সুযোগ আছে।
জিম করবেট জাতীয় উদ্যান
১৯৩৬ সালে হেইলি ন্যাশনাল পার্ক নামে আত্মপ্রকাশ ঘটলেও পরে বিখ্যাত শিকারি ও প্রকৃতিবিদ জিম করবেটের নামে নামকরণ হয়। ভারতের প্রথম জাতীয় উদ্যান এটি। ২০২০ সালের হিসাবে এখানকার শাল, জলাভূমির জঙ্গল ও ঘাসবহুল অঞ্চলে ২৩১টি বাঘের বাস। এটি ভারতের সেই অল্প কয়েকটি টাইগার রিজার্ভের একটি, যেখানে রাতে থাকার অনুমতি আছে আপনার। এতে ভয়ংকর সুন্দর এই প্রাণীটিকে দেখার সুযোগ বেড়েছে।
পাঁচটি আলাদা জায়গায় জিপ ও মিনি বাসে করে সাফারির সুযোগ আছে। আছে হাতির পিঠে চড়ে বন ভ্রমণের সুযোগও। ভারতের বন বিভাগ এই সাফারি বা ভ্রমণের আয়োজন করে। মোটামুটি পাঁচটি এলাকায়ই বাঘ দেখার সম্ভাবনা একই ধরনের। সকালে ও সন্ধ্যায় ট্যুরের আয়োজন করা হয়।
জঙ্গলটিতে ভ্রমণের সময় চোখ-কান খোলা রাখুন। বিশেষ করে গ্রীষ্মে বুনো হাতির দলের দেখা পেয়ে যেতে পারেন। চিতাবাঘ, শ্লথ ভালুক কিংবা বিভিন্ন প্রজাতির হরিণদের দেখাও মিলতে পারে রাতে থাকতে পারেন ঢিকালা ফরেস্ট লজে।
এপ্রিল থেকে জুনে বাঘ দেখার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। গ্রীষ্মের মাস গুলাতে ঝোপ-জঙ্গলের আশ্রয় ছেড়ে বেরিয়ে খোলামেলা জায়গায় অবস্থিত জলাশয়গুলোতে যায় পানি খেতে কিংবা শরীরটাকে একটু শীতল করতে। এ সময় স্বাভাবিকভাবেই এদের দেখার ভালো সুযোগ থাকে।
সুন্দরবন, বাংলাদেশ ও ভারত
বাংলাদেশ ও ভারতে অবস্থিত সুন্দরবন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ অরণ্য। বাঘের জন্য বিখ্যাত এ বনটিতে বাঘ দেখা অবশ্য খুব সহজ নয়। জালের মতো ছড়িয়ে থাকা নদী-খাল আর ছোট ছোট দ্বীপে ভরা অরণ্যটির বাংলাদেশ অংশকে বাঘ দেখার জন্য বেশি উপযোগী বলেছে লোনলি প্লেনেট।
২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাস করা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা ১১৪।
খুলনা, বাগেরহাটের মোংলা কিংবা সাতক্ষীরা থেকে লঞ্চে করে ভ্রমণ করে আসতে পারবেন সুন্দরবন। লঞ্চ থেকেই ছোট ছোট নৌকায় চেপে ঘুরতে পারবেন জঙ্গলের অন্দি-সন্ধিতে। বনপ্রহরীদের সঙ্গে নিয়ে জঙ্গলের ভেতরেও হেঁটে বেড়াতে পারবেন। তবে শ্বাসমূলের কারণে এই বনে হাঁটাটা একটু কষ্টকর।
বনে বাঘ ছাড়াও দেখা পেতে পারেন চিত্রা ও মায়া হরিণ, বুনো শূকরদের।
ভাগ্য ভালো থাকলে বছরের যেকোনো সময়ই বনটিতে বাঘের দেখা পেতে পারেন। তবে কম পর্যটক যখন থাকে তখন অর্থাৎ বর্ষাকাল বাঘ দেখার জন্য ভালো সময় হতে পারে। তখন এমনকি দিনের বেলাও বাঘ খোলামেলা জায়গায় চলে আসে। অপর দিকে পর্যটক বেশি থাকলে তাদের বিচরণটা হয় মূলত রাতেই।
রয়েল মানস জাতীয় উদ্যান, ভুটান
উত্তর হিমালয়ে অবস্থিত জঙ্গলটিতে ভুটানের প্রথম জাতীয় উদ্যান। নানা ধরনের গাছপালা ও বন্য প্রাণীর জন্য এটি বিখ্যাত। অরণ্যটি ইউনেসকো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। এখানে বাস গন্ডার, বুনো হাতি, বুনো মহিষ এবং অবশ্যই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মতো প্রাণীদের। পার্বত্য এলাকায় অবস্থিত অরণ্যটিতে বাঘের ঘনবসতির দিক থেকে পৃথিবীর বিখ্যাত জঙ্গলগুলোর একটি। ২০০৮ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে এখানে বাঘের সংখ্যা।
মজার ঘটনা, এই জঙ্গলটিকে ঘিরে আছে ভারত ও ভুটানের বেশ কিছু বিখ্যাত অরণ্য। এদের মধ্যে আছে মানস টাইগার রিজার্ভ, ফিপসু বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য, খালিং বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য, থ্রামশিংলা জাতীয় উদ্যান প্রভৃতি। আর এই সবগুলো জঙ্গল মিলিয়ে বড় এলাকা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারে বাঘেরা।
এখানে ভারতের জঙ্গলগুলোর তুলনায় বাঘ দেখানোর সাফারির পরিমাণ কম। আবার পাহাড়ি বনটিতে বাঘ দেখার সম্ভাবনাও একটু কম। তবে এখানকার প্রকৃতি, বন্য প্রাণী আর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য মিলিয়ে ভ্রমণের জন্য অসাধারণ এক জায়গা।
অভয়ারণ্যটিতে অসাধারণ কিছু প্রাণীর বাস। এগুলোর মধ্যে বাঘ ছাড়াও আছে মেঘলা চিতা, বামন শূকর, এক শিংয়ের গন্ডার, বুনো হাতি, বুনো মোষ প্রভৃতি।
রয়েল মানসের সেরা আবহাওয়া থাকে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তবে গ্রীষ্মে বাঘ দেখার সম্ভাবনা থাকে বেশি। বর্ষার সময়, মে থেকে সেপ্টেম্বর যখন কাছের ভারতের মানস জাতীয় উদ্যান বন্ধ থাকে তখন এই বনে ঘুরতে গেলে বৃষ্টি থেকে বাঁচার মতো জিনিসপত্র সঙ্গে রাখবেন।
চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্ক, নেপাল
নেপাল-ভারত সীমান্তে অবস্থান নেপালের চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্ক বা জাতীয় উদ্যানের। একশৃঙ্গ গন্ডার, বাঘ ও ঘড়িয়ালের জন্য বিখ্যাত জঙ্গলটি ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য। এই অরণ্যে ৫০ জাতের বেশি স্তন্যপায়ী প্রাণী আছে। ২০১৮ সালের হিসাবে চিতওয়ানের জঙ্গলে বাস করা বাঘের সংখ্যা ৯৩টি। এখানে ঘুরে বেড়ানোর সময় অনায়াসে গন্ডারদের দেখা মিললেও বাঘের দেখা পাওয়া সহজ নয়।
জঙ্গলটিতে গাড়িতে চড়ে ভ্রমণের যেমন সুযোগ আছে, তেমনি আছে হাতির পিঠে চড়ে ঘুরে বেড়ানোর ব্যবস্থা। এখানে আরও দেখা মেলে বুনো হাতি, চিতা বাঘ, ডোরাকাটা হায়েনা, অ্যান্টিলোপ প্রভৃতির।
চিতওয়ান জাতীয় উদ্যানের আবহাওয়া সবচেয়ে ভালো থাকে অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত। তবে এপ্রিল-মে মাসে বাঘ এবং গন্ডার দেখার সম্ভাবনা থাকে বেশি।
তাবোদা জাতীয় উদ্যান, ভারত
ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে অবস্থিত তাবোদা জাতীয় উদ্যানে অন্তত ৮০টি বাঘের উপস্থিতির পরও তুলনামূলকভাবে পর্যটকদের পা পড়ে কম। এর আশপাশের এলাকাগুলোতেও আরও শ দুয়েক বাঘ আছে। তাই বাঘ দেখার সুযোগও জঙ্গলটিতে বেশ বেশি থাকে।
পার্কটির তিনটি এলাকায় শীত ও গ্রীষ্মে জিপ সাফারির ব্যবস্থা থাকে। জুলাই-আগস্ট ছাড়া বাকি ১০ মাসই জঙ্গলটিতে ঘুরতে পারবেন। সাধারত সকালে ও সন্ধ্যায় সাফারির ব্যবস্থা থাকে।
চিতাবাঘ, শ্লথ ভালুক, কুমির, অজগরের জন্যও বিখ্যাত বনটি। মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে এখানে বাঘ দেখার সম্ভাবনা বেশি। তবে এ সময় জঙ্গলটিতে গেলে প্রচণ্ড গরমের বিষয়টি মাথায় রেখেই যেতে হবে।
বারদিয়া জাতীয় উদ্যান, নেপাল
উত্তর-পশ্চিম নেপালের দুর্গম এলাকায় জঙ্গলটির অবস্থান। সাম্প্রতিক সময়ে নেপালের জঙ্গলগুলোয় বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। পাঁচটি জাতীয় উদ্যানে ২৩৫টির বেশি বাঘের বিচরণ। এর মধ্যে বারদিয়া জাতীয় উদ্যানে বসবাস ৮০টির মতো বাঘের।
গাড়ির পাশাপাশি গাইড নিয়ে হেঁটেও জঙ্গলটি দেখতে পারেন। গাইডের হাতে আত্মরক্ষার জন্য থাকা কেবল একটি বাঁশের লাঠি রোমাঞ্চ আরও বাড়াবে। এ ছাড়া কপাল ভালো থাকলে দেখা পেতে পারেন বুনো হাতি, একশৃঙ্গ গন্ডার কিংবা কুমিরের।
গোটা বছরজুড়েই পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে জঙ্গলটি। তবে স্বাভাবিকভাবেই গ্রীষ্মে বাঘ আর গন্ডার দেখার সম্ভাবনা বেশি। তখন বাঘদের প্রায়ই দেখা যায় গিরওয়া নদীতে।
হোয়াই খা খায়েনং বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য, থাইল্যান্ড
থাইল্যান্ডের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় প্রাণীর সমাবেশ ঘটেছে যেসব অরণ্যে তার একটি হোয়াই খা খায়েনং বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য। ২ হাজার ৭৮০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের অরণ্যটি ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য। ২০২১ সালের হিসাবে জঙ্গলটিতে বাস ৮৯টি বাঘের। এক দশক আগেও সংখ্যাটি ছিল ৪২। এই বনের বাঘগুলো কিন্তু বেঙ্গল টাইগার নয় বরং ইন্দো চাইনিজ বাঘ।
বনে দেখা মেলে চিতাবাঘ, মেঘলা চিতা, সোনালি চিতা, মালায়ান তাপির, বুনো হাতি, বান্টেং, বুনো মোষসহ আরও নানা ধরনের প্রাণীর।
তবে বনটিকে সংরক্ষণের জন্য বেশ কঠোর নিয়ম-নীতি থাকায় সাধারণত পর্যটকেরা তুলনামূলক কম যান। তবে বিশেষ করে স্তন্যপায়ী বন্য প্রাণী নিয়ে যাদের আগ্রহ তাঁদের অনেকেই হাজির হোন সেখানে। বাঘ দেখাটাও বেশ সৌভাগ্যের ব্যাপার এখানে।
কানহা জাতীয় উদ্যান, ভারত
ভারতের মধ্যপ্রদেশের অবস্থান কানহা জাতীয় উদ্যানের। এখানকার চারটি এলাকা পরিচিত মুক্কি, কানহা, কিসলি ও সারহি নামে। মুক্কি আর কানহা বন্য প্রাণী দেখার জন্য আদর্শ। তবে গোটা জঙ্গলের পরিবেশই অসাধারণ। এই অরণ্যে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বাঘের সংখ্যা ১০৮।
বান্ধবগড় জাতীয় উদ্যান, ভারত
পার্কটির বেশির ভাগ অংশই পাথুরে। তবে পাথুরে এই এলাকায় পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর প্রাণীগুলোর একটি বাঘের বাস। বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে বেশি ভেতরে ঢুকতে হবে না। তবে বাঘ দেখাটা ভাগ্যের ব্যাপার। এ জঙ্গলে বাঘের সংখ্যা ১২৪।
সূত্র: লোনলি প্লেনেট, টাইমস অব ইন্ডিয়া, থাই ন্যাশনাল পার্কস
চিড়িয়াখানা বা সাফারি পার্কে বাঘ দেখা যায় অনায়াসেই। তবে জঙ্গলে বাঘকে তার নিজের পরিবেশে দেখার যে আনন্দ কিংবা রোমাঞ্চ, তার কোনো তুলনা নেই। বাঘ দিবসে পৃথিবীর এমন কিছু জঙ্গলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব, যেখানে ভাগ্য ভালো থাকলে বুনো পরিবেশে রাজকীয় এই প্রাণীটির দেখা পেয়ে যেতে পারেন। অবশ্য এখানে বলে রাখা ভালো, এই জঙ্গলগুলোর বেশির ভাগই ভারতে। অবশ্য পৃথিবীর মোট বুনো বাঘের একটি বড় অংশেরই বাস দেশটিতে।
রন্থাম্বর জাতীয় উদ্যান, ভারত
৩ লাখ ৩০ হাজার একরের রন্থাম্বর ন্যাশনাল পার্ক উত্তর ভারতের সবচেয়ে বড় জাতীয় উদ্যানগুলোর একটি। ২০২১ সালের হিসাবে অরণ্যটিতে রয়েল বেঙ্গল টাইগার আছে ৮১টি। জায়গাটি একসময় ছিল জয়পুরের মহারাজাদের প্রিয় শিকারের জায়গা। আশ্চর্যজনক হলেও এর সীমানার ভেতরেই আছে বেশ কয়েকটি প্রাচীন মন্দির, মসজিদ এমনকি ১০ শতকের একটি দুর্গও।
জঙ্গলটিতে গাড়িতে চাপিয়ে পর্যটকদের ঘুরিয়ে দেখানো হয়। সাধারণত ছয় আসনের জিপ কিংবা ২০ আসনের এক গাড়িতে। অক্টোবর থেকে জুন পর্যন্ত তিন ঘণ্টার এই ভ্রমণে নিয়ে যাওয়া হয়। মোটামুটি ৯০ দিন আগে বুকিং দিয়ে রাখলে আশা করা যায় ভ্রমণের সুযোগ পেতে কোনো ঝামেলা হবে না।
এই জঙ্গলে ঘুরতে গিয়ে বাঘের দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এ ছাড়া প্রাচীন সব ধ্বংসাবশেষ তো দেখবেনই। ভাগ্য ভালো থাকলে চিতাবাঘ, শ্লথ ভালুক, কুমির, হায়েনার মতো প্রাণীদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ হয়ে যেতে পারে।
এখানে ফেব্রুয়ারি কিংবা মার্চে সবচেয়ে চমৎকার আবহাওয়া পাবেন। তবে এপ্রিল কিংবা মের উষ্ণ দিনগুলোতে বাঘরা জলের উৎসগুলোতে যেতে প্রলুব্ধ হয় বেশি। কাজেই ওই সময় আশ্চর্য সুন্দর এই প্রাণীটিকে দেখার ভালো সুযোগ আছে।
জিম করবেট জাতীয় উদ্যান
১৯৩৬ সালে হেইলি ন্যাশনাল পার্ক নামে আত্মপ্রকাশ ঘটলেও পরে বিখ্যাত শিকারি ও প্রকৃতিবিদ জিম করবেটের নামে নামকরণ হয়। ভারতের প্রথম জাতীয় উদ্যান এটি। ২০২০ সালের হিসাবে এখানকার শাল, জলাভূমির জঙ্গল ও ঘাসবহুল অঞ্চলে ২৩১টি বাঘের বাস। এটি ভারতের সেই অল্প কয়েকটি টাইগার রিজার্ভের একটি, যেখানে রাতে থাকার অনুমতি আছে আপনার। এতে ভয়ংকর সুন্দর এই প্রাণীটিকে দেখার সুযোগ বেড়েছে।
পাঁচটি আলাদা জায়গায় জিপ ও মিনি বাসে করে সাফারির সুযোগ আছে। আছে হাতির পিঠে চড়ে বন ভ্রমণের সুযোগও। ভারতের বন বিভাগ এই সাফারি বা ভ্রমণের আয়োজন করে। মোটামুটি পাঁচটি এলাকায়ই বাঘ দেখার সম্ভাবনা একই ধরনের। সকালে ও সন্ধ্যায় ট্যুরের আয়োজন করা হয়।
জঙ্গলটিতে ভ্রমণের সময় চোখ-কান খোলা রাখুন। বিশেষ করে গ্রীষ্মে বুনো হাতির দলের দেখা পেয়ে যেতে পারেন। চিতাবাঘ, শ্লথ ভালুক কিংবা বিভিন্ন প্রজাতির হরিণদের দেখাও মিলতে পারে রাতে থাকতে পারেন ঢিকালা ফরেস্ট লজে।
এপ্রিল থেকে জুনে বাঘ দেখার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। গ্রীষ্মের মাস গুলাতে ঝোপ-জঙ্গলের আশ্রয় ছেড়ে বেরিয়ে খোলামেলা জায়গায় অবস্থিত জলাশয়গুলোতে যায় পানি খেতে কিংবা শরীরটাকে একটু শীতল করতে। এ সময় স্বাভাবিকভাবেই এদের দেখার ভালো সুযোগ থাকে।
সুন্দরবন, বাংলাদেশ ও ভারত
বাংলাদেশ ও ভারতে অবস্থিত সুন্দরবন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ অরণ্য। বাঘের জন্য বিখ্যাত এ বনটিতে বাঘ দেখা অবশ্য খুব সহজ নয়। জালের মতো ছড়িয়ে থাকা নদী-খাল আর ছোট ছোট দ্বীপে ভরা অরণ্যটির বাংলাদেশ অংশকে বাঘ দেখার জন্য বেশি উপযোগী বলেছে লোনলি প্লেনেট।
২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাস করা রয়েল বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা ১১৪।
খুলনা, বাগেরহাটের মোংলা কিংবা সাতক্ষীরা থেকে লঞ্চে করে ভ্রমণ করে আসতে পারবেন সুন্দরবন। লঞ্চ থেকেই ছোট ছোট নৌকায় চেপে ঘুরতে পারবেন জঙ্গলের অন্দি-সন্ধিতে। বনপ্রহরীদের সঙ্গে নিয়ে জঙ্গলের ভেতরেও হেঁটে বেড়াতে পারবেন। তবে শ্বাসমূলের কারণে এই বনে হাঁটাটা একটু কষ্টকর।
বনে বাঘ ছাড়াও দেখা পেতে পারেন চিত্রা ও মায়া হরিণ, বুনো শূকরদের।
ভাগ্য ভালো থাকলে বছরের যেকোনো সময়ই বনটিতে বাঘের দেখা পেতে পারেন। তবে কম পর্যটক যখন থাকে তখন অর্থাৎ বর্ষাকাল বাঘ দেখার জন্য ভালো সময় হতে পারে। তখন এমনকি দিনের বেলাও বাঘ খোলামেলা জায়গায় চলে আসে। অপর দিকে পর্যটক বেশি থাকলে তাদের বিচরণটা হয় মূলত রাতেই।
রয়েল মানস জাতীয় উদ্যান, ভুটান
উত্তর হিমালয়ে অবস্থিত জঙ্গলটিতে ভুটানের প্রথম জাতীয় উদ্যান। নানা ধরনের গাছপালা ও বন্য প্রাণীর জন্য এটি বিখ্যাত। অরণ্যটি ইউনেসকো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। এখানে বাস গন্ডার, বুনো হাতি, বুনো মহিষ এবং অবশ্যই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মতো প্রাণীদের। পার্বত্য এলাকায় অবস্থিত অরণ্যটিতে বাঘের ঘনবসতির দিক থেকে পৃথিবীর বিখ্যাত জঙ্গলগুলোর একটি। ২০০৮ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে এখানে বাঘের সংখ্যা।
মজার ঘটনা, এই জঙ্গলটিকে ঘিরে আছে ভারত ও ভুটানের বেশ কিছু বিখ্যাত অরণ্য। এদের মধ্যে আছে মানস টাইগার রিজার্ভ, ফিপসু বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য, খালিং বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য, থ্রামশিংলা জাতীয় উদ্যান প্রভৃতি। আর এই সবগুলো জঙ্গল মিলিয়ে বড় এলাকা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারে বাঘেরা।
এখানে ভারতের জঙ্গলগুলোর তুলনায় বাঘ দেখানোর সাফারির পরিমাণ কম। আবার পাহাড়ি বনটিতে বাঘ দেখার সম্ভাবনাও একটু কম। তবে এখানকার প্রকৃতি, বন্য প্রাণী আর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য মিলিয়ে ভ্রমণের জন্য অসাধারণ এক জায়গা।
অভয়ারণ্যটিতে অসাধারণ কিছু প্রাণীর বাস। এগুলোর মধ্যে বাঘ ছাড়াও আছে মেঘলা চিতা, বামন শূকর, এক শিংয়ের গন্ডার, বুনো হাতি, বুনো মোষ প্রভৃতি।
রয়েল মানসের সেরা আবহাওয়া থাকে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। তবে গ্রীষ্মে বাঘ দেখার সম্ভাবনা থাকে বেশি। বর্ষার সময়, মে থেকে সেপ্টেম্বর যখন কাছের ভারতের মানস জাতীয় উদ্যান বন্ধ থাকে তখন এই বনে ঘুরতে গেলে বৃষ্টি থেকে বাঁচার মতো জিনিসপত্র সঙ্গে রাখবেন।
চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্ক, নেপাল
নেপাল-ভারত সীমান্তে অবস্থান নেপালের চিতওয়ান ন্যাশনাল পার্ক বা জাতীয় উদ্যানের। একশৃঙ্গ গন্ডার, বাঘ ও ঘড়িয়ালের জন্য বিখ্যাত জঙ্গলটি ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য। এই অরণ্যে ৫০ জাতের বেশি স্তন্যপায়ী প্রাণী আছে। ২০১৮ সালের হিসাবে চিতওয়ানের জঙ্গলে বাস করা বাঘের সংখ্যা ৯৩টি। এখানে ঘুরে বেড়ানোর সময় অনায়াসে গন্ডারদের দেখা মিললেও বাঘের দেখা পাওয়া সহজ নয়।
জঙ্গলটিতে গাড়িতে চড়ে ভ্রমণের যেমন সুযোগ আছে, তেমনি আছে হাতির পিঠে চড়ে ঘুরে বেড়ানোর ব্যবস্থা। এখানে আরও দেখা মেলে বুনো হাতি, চিতা বাঘ, ডোরাকাটা হায়েনা, অ্যান্টিলোপ প্রভৃতির।
চিতওয়ান জাতীয় উদ্যানের আবহাওয়া সবচেয়ে ভালো থাকে অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত। তবে এপ্রিল-মে মাসে বাঘ এবং গন্ডার দেখার সম্ভাবনা থাকে বেশি।
তাবোদা জাতীয় উদ্যান, ভারত
ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে অবস্থিত তাবোদা জাতীয় উদ্যানে অন্তত ৮০টি বাঘের উপস্থিতির পরও তুলনামূলকভাবে পর্যটকদের পা পড়ে কম। এর আশপাশের এলাকাগুলোতেও আরও শ দুয়েক বাঘ আছে। তাই বাঘ দেখার সুযোগও জঙ্গলটিতে বেশ বেশি থাকে।
পার্কটির তিনটি এলাকায় শীত ও গ্রীষ্মে জিপ সাফারির ব্যবস্থা থাকে। জুলাই-আগস্ট ছাড়া বাকি ১০ মাসই জঙ্গলটিতে ঘুরতে পারবেন। সাধারত সকালে ও সন্ধ্যায় সাফারির ব্যবস্থা থাকে।
চিতাবাঘ, শ্লথ ভালুক, কুমির, অজগরের জন্যও বিখ্যাত বনটি। মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে এখানে বাঘ দেখার সম্ভাবনা বেশি। তবে এ সময় জঙ্গলটিতে গেলে প্রচণ্ড গরমের বিষয়টি মাথায় রেখেই যেতে হবে।
বারদিয়া জাতীয় উদ্যান, নেপাল
উত্তর-পশ্চিম নেপালের দুর্গম এলাকায় জঙ্গলটির অবস্থান। সাম্প্রতিক সময়ে নেপালের জঙ্গলগুলোয় বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। পাঁচটি জাতীয় উদ্যানে ২৩৫টির বেশি বাঘের বিচরণ। এর মধ্যে বারদিয়া জাতীয় উদ্যানে বসবাস ৮০টির মতো বাঘের।
গাড়ির পাশাপাশি গাইড নিয়ে হেঁটেও জঙ্গলটি দেখতে পারেন। গাইডের হাতে আত্মরক্ষার জন্য থাকা কেবল একটি বাঁশের লাঠি রোমাঞ্চ আরও বাড়াবে। এ ছাড়া কপাল ভালো থাকলে দেখা পেতে পারেন বুনো হাতি, একশৃঙ্গ গন্ডার কিংবা কুমিরের।
গোটা বছরজুড়েই পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে জঙ্গলটি। তবে স্বাভাবিকভাবেই গ্রীষ্মে বাঘ আর গন্ডার দেখার সম্ভাবনা বেশি। তখন বাঘদের প্রায়ই দেখা যায় গিরওয়া নদীতে।
হোয়াই খা খায়েনং বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য, থাইল্যান্ড
থাইল্যান্ডের সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় প্রাণীর সমাবেশ ঘটেছে যেসব অরণ্যে তার একটি হোয়াই খা খায়েনং বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য। ২ হাজার ৭৮০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের অরণ্যটি ইউনেসকো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্য। ২০২১ সালের হিসাবে জঙ্গলটিতে বাস ৮৯টি বাঘের। এক দশক আগেও সংখ্যাটি ছিল ৪২। এই বনের বাঘগুলো কিন্তু বেঙ্গল টাইগার নয় বরং ইন্দো চাইনিজ বাঘ।
বনে দেখা মেলে চিতাবাঘ, মেঘলা চিতা, সোনালি চিতা, মালায়ান তাপির, বুনো হাতি, বান্টেং, বুনো মোষসহ আরও নানা ধরনের প্রাণীর।
তবে বনটিকে সংরক্ষণের জন্য বেশ কঠোর নিয়ম-নীতি থাকায় সাধারণত পর্যটকেরা তুলনামূলক কম যান। তবে বিশেষ করে স্তন্যপায়ী বন্য প্রাণী নিয়ে যাদের আগ্রহ তাঁদের অনেকেই হাজির হোন সেখানে। বাঘ দেখাটাও বেশ সৌভাগ্যের ব্যাপার এখানে।
কানহা জাতীয় উদ্যান, ভারত
ভারতের মধ্যপ্রদেশের অবস্থান কানহা জাতীয় উদ্যানের। এখানকার চারটি এলাকা পরিচিত মুক্কি, কানহা, কিসলি ও সারহি নামে। মুক্কি আর কানহা বন্য প্রাণী দেখার জন্য আদর্শ। তবে গোটা জঙ্গলের পরিবেশই অসাধারণ। এই অরণ্যে সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী বাঘের সংখ্যা ১০৮।
বান্ধবগড় জাতীয় উদ্যান, ভারত
পার্কটির বেশির ভাগ অংশই পাথুরে। তবে পাথুরে এই এলাকায় পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর প্রাণীগুলোর একটি বাঘের বাস। বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে বেশি ভেতরে ঢুকতে হবে না। তবে বাঘ দেখাটা ভাগ্যের ব্যাপার। এ জঙ্গলে বাঘের সংখ্যা ১২৪।
সূত্র: লোনলি প্লেনেট, টাইমস অব ইন্ডিয়া, থাই ন্যাশনাল পার্কস
দিগন্তবিস্তৃত ধানখেতের মাথার ওপর নীল আকাশে উঁকি দেবে সাদা মেঘ। শরৎকাল বলে ভুল হতে পারে। ভুল ভাঙলে দেখতে পাবেন, মেঘের ভেলা সূর্যের আলোয় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে হয়ে উঠছে গোলাপি কিংবা লাল। বুঝবেন, আপনি শরতের সাদা মেঘ নয়, দেখছেন তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
১ দিন আগেকোনো কিছু ওপর থেকে নিচে পড়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে। স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে আমরা সবাই এ বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলোতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্র কাজ করে না। অর্থাৎ সেসব জায়গায় কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। যেতে চান সেই সব জায়গায়?
১ দিন আগেশীত, বসন্ত আর বর্ষায় বাংলার নীল নদ সারির রূপ বদলে ফেলে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে দক্ষ মাঝিরাও ভয়ে ভয়ে বইঠা চালান। আর শীতে সারি নদীর নীল পানি দেয় অপার্থিব জগতের খোঁজ। নদীটি ধরে কিছুদূর উজান বাইলেই পাওয়া যাবে লালাখাল জিরো পয়েন্ট।
১ দিন আগেভ্রমণকালে রোগবালাই থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী না হলে ভ্রমণের আনন্দ মাঠে মারা যেতে পারে। ভ্রমণের সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেছে নিতে পারেন কিছু উপায়।
১ দিন আগে