সানজিদা কাওছার ঋতু, ঢাকা
হেলিকপ্টার প্যারেন্টিং বলতে সন্তান লালনপালনের ক্ষেত্রে অতি সুরক্ষামূলক আচরণ এবং সন্তানের জীবনে খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ আরোপকে বোঝায়। সাধারণত হেলিকপ্টার থেকে কোনো অপরাধীকে যেমন অনুসরণ করা হয়, তেমনি এই ধরনের বাবা–মায়েরাও সন্তানের জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে তাঁদের ছায়া বিস্তার করে রাখেন। সার্বক্ষণিক নজরদারি করেন।
হেলিকপ্টার বাবা–মায়েরা সন্তানের স্কুলের কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে প্রত্যেক কাজের ক্ষেত্রেই গভীর মনযোগ দেন। তাদের দুঃখ–কষ্ট ও হতাশা থেকে রক্ষা করার জন্যই শুধু নয়, সন্তানকে ইচ্ছা–অনিচ্ছাকে উপেক্ষা করে তাঁদের কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জনে সাহায্য করতে এমনটি করে থাকেন তাঁরা। সন্তানের ছোটখাটো সব বিষয়ে জড়িয়ে থাকার প্রবণতা তাঁদের মধ্যে প্রবল।
মানসিক আরোগ্য পরিষেবা লাইফক্যাটালিস্ট থেরাপি ও কোচিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা ক্লিনিক্যাল মনোবিজ্ঞানী মিচেল এম রেনোল্ডস বলেন, ‘এ ধরনের বাবা–মায়েরা সন্তানের প্রতি অতিরিক্ত রক্ষণশীল হন এবং তাদের নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তা করেন। তাঁরা সন্তানের প্রত্যেক কর্মকাণ্ডে অত্যধিক নিয়ন্ত্রণ রাখতে চান এবং সন্তানের চলার পথ মসৃণ করার মানসে সবকিছুতেই ঘন ঘন হস্তক্ষেপ করেন।’
১৯৬৯ সালে ‘বিটুইন প্যারেন্ট অ্যান্ড টিনএজার’ বইয়ে ‘হেলিকপ্টার প্যারেন্ট’ শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয়। বইটির কিশোর চরিত্রটি বলে, তার মা হেলিকপ্টারের মতো তার ওপর নজরদারি করেন। তখন থেকেই অনেক কলেজ প্রশাসন এ শব্দযুগল এমন বাবা–মায়েদের বোঝাতে ব্যবহার শুরু করে, যারা কলেজে ওটা সন্তানের ওপর দূর থেকে নজর রাখার চেষ্টা চালিয়ে যান। এরপরই অতিরিক্ত রক্ষণশীল বাবা–মায়েদের বোঝাতে এ শব্দের ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়।
আপনি কি হেলিকপ্টার প্যারেন্ট?
হেলিকপ্টার প্যারেন্ট চেনার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো, সন্তানদের অতি রক্ষণশীল বা তাদের কর্মকাণ্ডে অতিমাত্রায় জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা। তবে এ সংজ্ঞাটি অসম্পূর্ণ। এ ধরনের বাবা–মায়েরা সব বিষয়ে চরম মাত্রায় জড়িয়ে পড়েন। সন্তানের শৈশব থেকে কলেজ পর্যন্ত সবকিছুতে তাঁরা এত বেশি জড়িয়ে থাকেন যে নিজের প্রয়োজনীয় কাজ আর শখ–আহ্লাদ সব বিসর্জন দিতেও দ্বিধা করেন না। এমনকি পরিবারের খরচের বাজেটও সন্তানের চাহিদাকে কেন্দ্র করেই নির্ধারণ করেন।
হেলিকপ্টার প্যারেন্টিংয়ের বিভিন্ন ধরন আছে: অনেক বাবা–মা স্কুল ও নানা কাজে সফল হওয়ার জন্য সন্তানের ওপর অত্যধিক চাপ প্রয়োগ করে থাকেন। আবার অনেক বাবা–মা সন্তানকে নির্দিষ্ট বিষয় থেকে আড়াল করে রাখেন এবং তাদের হয়ে কাজ করে দেন।
আবার সব পরিবারে হেলিকপ্টার প্যারেন্টিং একরকম হয় না। যেমন, এক ধরনের হেলিকপ্টার বাবা–মা স্কুলে সবার চেয়ে এগিয়ে থাকার জন্য সন্তানকে অত্যধিক চাপে রাখেন। এ চাপ শুধু স্কুলে এগিয়ে থাকা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে না। গানের স্কুল থেকে শুরু করে খেলাধুলাতেও তাঁরা চান সন্তানই যেন এগিয়ে থাকে। অনেক হেলিকপ্টার বাবা–মা সন্তানকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখতে স্কুলের হোমওয়ার্ক করে দিতেও দ্বিধা করেন না।
সন্তানের সঙ্গে কারও বিরোধ হলে এ বাবা–মায়েরা সন্তানের হয়েই সহপাঠী, শিক্ষক, কোচ বা খেলার সঙ্গীর সঙ্গে তর্ক শুরু করে দেন। এমনকি সন্তানের বন্ধু বাছাই ও সামাজিক অবস্থান নির্ধারণেও হস্তক্ষেপ করেন তাঁরা। তাঁদের লক্ষ্য থাকে সন্তানের জন্য যত বেশি সম্ভব সুযোগ তৈরি করা।
হেলিকপ্টার বাবা–মায়েরা সন্তানের সব বিষয়ে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাকে বেশ গর্বের সঙ্গেই দেখেন। অনেকেই এভাবে সন্তান লালন–পালনকে ঠিক মনে করেন। নিজের এমন আচরণকে সন্তানের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ হিসেবে দেখেন তাঁরা। সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দুনিয়াতে তাদের সফল হতে যা করা সম্ভব তার সবই করতে চান তাঁরা।
হেলিকপ্টার প্যারেন্টিংয়ের বেশ কিছু ঝুঁকি রয়েছে। সন্তানের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় জড়িয়ে পড়া তাদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তারা সহজে স্বাধীন ও স্বনির্ভর হতে পারে না। এভাবে লালন–পালনের কারণে শিশুরা যেসব সমস্যায় ভুগতে পারে তা হলো—
সমস্যা সমাধানের দক্ষতা ব্যাহত হওয়া
সব বয়সের শিশুরই বয়স উপযোগী সমস্যা সমাধানের দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। পাঁচ বছরের শিশুর যেমন কোনো শব্দ কীভাবে উচ্চারণ করতে হয় তা নিজে শিখতে হয়, তেমনি চাকরির খোঁজে থাকা ২৫ বছর বয়সী তরুণকেও নিজের সমস্যা নিজ উদ্যোগে সমাধান করতে পারা উচিত। কিন্তু যেসব বাবা–মায়ের সন্তানের জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করার অভ্যাস, তাঁরা সন্তানের সামান্য সমস্যার ইঙ্গিত পেলেই তা সমাধানের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন। এ ধরনের শিশুরা সমস্যা সমাধানের মূল্যবান দক্ষতা শেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।
বাবা–মায়ের ওপর নির্ভরশীল
হেলিকপ্টার বাবা–মায়েরা সন্তানের সব কাজ করে দেন বলে, সন্তানেরা তাঁদের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে ওঠে। যদি ১৯ বছর বয়সী সন্তানকে সকালে ক্লাসে যাওয়ার জন্য রোজ বাবা–মাকেই ডেকে দিতে হয় তবে সে কখনোই নিজে ঘুম থেকে ওঠা শিখবে না। বাবা–মায়ের উচিত সন্তানকে তাঁদের ছাড়াই কীভাবে বেঁচে থাকতে হয় এবং সাফল্য অর্জন করতে হয় তা শিখতে সহায়তা করা।
আত্মপক্ষ সমর্থনে বাধা
হেলিকপ্টার বাবা–মায়েরা প্রায়ই কীভাবে নিজের হয়ে কথা বলতে হয় তা না শিখিয়ে সন্তানের হয়ে ওকালতি করেন। শিশুদের যখন কোনো কিছুর প্রয়োজন হয় তখন প্রশ্ন করতে পারা, অকপট হতে শেখা এবং পক্ষ–বিপক্ষ নিয়ে কথা বলতে পারা গুরুত্বপূর্ণ। স্কুলে বা কর্মক্ষেত্রে, এই শিশুদের কোনো চ্যালেঞ্জিং অ্যাসাইনমেন্ট বা বস মোকাবিলা করতে নিশ্চয়ই কোনো বাবা–মা থাকবেন না।
আত্মবিশ্বাস কম থাকে
বাবা–মা যদি সন্তানের প্রত্যেক কাজে নজরদারি করেন, তবে সন্তানের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হতে পারে যে, তারা কখনোই কোনো কাজ ঠিকঠাক করতে পারে না। বেড়ে ওঠার পুরো সময়টাই যদি তারা বাবা–মায়ের এমন নজরদারিতে থাকে, তবে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয় না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, হেলিকপ্টার প্যারেন্টিংয়ের কারণে আত্মবিশ্বাস বা নিজের সক্ষমতার ওপর আস্থা, মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সামাজিক মিথস্ক্রিয়া, দায়িত্বজ্ঞান ও অভিযোজন ক্ষমতার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
স্বাভাবিক পরিণতিতে বাধা
শিশুদের জীবনে নেতিবাচক কিছু ঘটলেও স্বাভাবিক পরিণতি ভোগ করতে শেখা প্রয়োজন। বাবা–মায়ের অনুপস্থিতিতে সন্তানকে ব্য়র্থতার পরিণতি ভোগ করতেই হয়। তা সত্ত্বেও হেলিকপ্টার বাবা–মায়েরা সন্তানকে নেতিবাচক পরিণতি থেকে রক্ষা করতে তাদের প্রত্যেক কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করেন।
স্বেচ্ছাচারিতা
যেসব শিশুর সামাজিক, একাডেমিক ও শিক্ষাজীবন সব সময় বাবা–মা নিয়ন্ত্রণ করেছেন, এসব শিশু সব সময় সবকিছু নিজের মতো করে পেতে অভ্যস্ত থাকে। এতে তাদের মধ্যে স্বেচ্ছাচারী মনোভাব তৈরি হয়।
বাবা–মা ও সন্তানের সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব পড়ে
সন্তানের প্রতি অপত্য স্নেহের বশেই হেলিকপ্টার প্যারেন্টিং করা হলেও, এতে সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। যদি সন্তানের মনে হয়, বাবা–মা সারাক্ষণ বাড়ির কাজের জন্য ঘ্যানঘ্যান করছেন, তার হয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বা তাদের প্রত্যেক কাজের ওপর নজরদারি করছেন, তবে একপর্যায়ে বাবা–মায়ের মিথস্ক্রিয়াকে ইতিবাচকভাবে নেবে না। এ ধরনের কাজের মাধ্যমে বরং সন্তানকে আরও দূরে ঠেলে দেওয়া হয়। এমনকি তারা বাবা–মায়ের প্রতি এ সন্দেহ পোষণ করে যে, বাবা–মা তাদের সক্ষমতা ও বিচার–বিবেচনার ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না।
হেলিকপ্টার প্যারেন্টিং বলতে সন্তান লালনপালনের ক্ষেত্রে অতি সুরক্ষামূলক আচরণ এবং সন্তানের জীবনে খুব বেশি নিয়ন্ত্রণ আরোপকে বোঝায়। সাধারণত হেলিকপ্টার থেকে কোনো অপরাধীকে যেমন অনুসরণ করা হয়, তেমনি এই ধরনের বাবা–মায়েরাও সন্তানের জীবনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে তাঁদের ছায়া বিস্তার করে রাখেন। সার্বক্ষণিক নজরদারি করেন।
হেলিকপ্টার বাবা–মায়েরা সন্তানের স্কুলের কর্মকাণ্ড থেকে শুরু করে প্রত্যেক কাজের ক্ষেত্রেই গভীর মনযোগ দেন। তাদের দুঃখ–কষ্ট ও হতাশা থেকে রক্ষা করার জন্যই শুধু নয়, সন্তানকে ইচ্ছা–অনিচ্ছাকে উপেক্ষা করে তাঁদের কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জনে সাহায্য করতে এমনটি করে থাকেন তাঁরা। সন্তানের ছোটখাটো সব বিষয়ে জড়িয়ে থাকার প্রবণতা তাঁদের মধ্যে প্রবল।
মানসিক আরোগ্য পরিষেবা লাইফক্যাটালিস্ট থেরাপি ও কোচিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা ক্লিনিক্যাল মনোবিজ্ঞানী মিচেল এম রেনোল্ডস বলেন, ‘এ ধরনের বাবা–মায়েরা সন্তানের প্রতি অতিরিক্ত রক্ষণশীল হন এবং তাদের নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তা করেন। তাঁরা সন্তানের প্রত্যেক কর্মকাণ্ডে অত্যধিক নিয়ন্ত্রণ রাখতে চান এবং সন্তানের চলার পথ মসৃণ করার মানসে সবকিছুতেই ঘন ঘন হস্তক্ষেপ করেন।’
১৯৬৯ সালে ‘বিটুইন প্যারেন্ট অ্যান্ড টিনএজার’ বইয়ে ‘হেলিকপ্টার প্যারেন্ট’ শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয়। বইটির কিশোর চরিত্রটি বলে, তার মা হেলিকপ্টারের মতো তার ওপর নজরদারি করেন। তখন থেকেই অনেক কলেজ প্রশাসন এ শব্দযুগল এমন বাবা–মায়েদের বোঝাতে ব্যবহার শুরু করে, যারা কলেজে ওটা সন্তানের ওপর দূর থেকে নজর রাখার চেষ্টা চালিয়ে যান। এরপরই অতিরিক্ত রক্ষণশীল বাবা–মায়েদের বোঝাতে এ শব্দের ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়।
আপনি কি হেলিকপ্টার প্যারেন্ট?
হেলিকপ্টার প্যারেন্ট চেনার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো, সন্তানদের অতি রক্ষণশীল বা তাদের কর্মকাণ্ডে অতিমাত্রায় জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা। তবে এ সংজ্ঞাটি অসম্পূর্ণ। এ ধরনের বাবা–মায়েরা সব বিষয়ে চরম মাত্রায় জড়িয়ে পড়েন। সন্তানের শৈশব থেকে কলেজ পর্যন্ত সবকিছুতে তাঁরা এত বেশি জড়িয়ে থাকেন যে নিজের প্রয়োজনীয় কাজ আর শখ–আহ্লাদ সব বিসর্জন দিতেও দ্বিধা করেন না। এমনকি পরিবারের খরচের বাজেটও সন্তানের চাহিদাকে কেন্দ্র করেই নির্ধারণ করেন।
হেলিকপ্টার প্যারেন্টিংয়ের বিভিন্ন ধরন আছে: অনেক বাবা–মা স্কুল ও নানা কাজে সফল হওয়ার জন্য সন্তানের ওপর অত্যধিক চাপ প্রয়োগ করে থাকেন। আবার অনেক বাবা–মা সন্তানকে নির্দিষ্ট বিষয় থেকে আড়াল করে রাখেন এবং তাদের হয়ে কাজ করে দেন।
আবার সব পরিবারে হেলিকপ্টার প্যারেন্টিং একরকম হয় না। যেমন, এক ধরনের হেলিকপ্টার বাবা–মা স্কুলে সবার চেয়ে এগিয়ে থাকার জন্য সন্তানকে অত্যধিক চাপে রাখেন। এ চাপ শুধু স্কুলে এগিয়ে থাকা পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে না। গানের স্কুল থেকে শুরু করে খেলাধুলাতেও তাঁরা চান সন্তানই যেন এগিয়ে থাকে। অনেক হেলিকপ্টার বাবা–মা সন্তানকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখতে স্কুলের হোমওয়ার্ক করে দিতেও দ্বিধা করেন না।
সন্তানের সঙ্গে কারও বিরোধ হলে এ বাবা–মায়েরা সন্তানের হয়েই সহপাঠী, শিক্ষক, কোচ বা খেলার সঙ্গীর সঙ্গে তর্ক শুরু করে দেন। এমনকি সন্তানের বন্ধু বাছাই ও সামাজিক অবস্থান নির্ধারণেও হস্তক্ষেপ করেন তাঁরা। তাঁদের লক্ষ্য থাকে সন্তানের জন্য যত বেশি সম্ভব সুযোগ তৈরি করা।
হেলিকপ্টার বাবা–মায়েরা সন্তানের সব বিষয়ে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠাকে বেশ গর্বের সঙ্গেই দেখেন। অনেকেই এভাবে সন্তান লালন–পালনকে ঠিক মনে করেন। নিজের এমন আচরণকে সন্তানের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ হিসেবে দেখেন তাঁরা। সন্তানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দুনিয়াতে তাদের সফল হতে যা করা সম্ভব তার সবই করতে চান তাঁরা।
হেলিকপ্টার প্যারেন্টিংয়ের বেশ কিছু ঝুঁকি রয়েছে। সন্তানের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অতিমাত্রায় জড়িয়ে পড়া তাদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তারা সহজে স্বাধীন ও স্বনির্ভর হতে পারে না। এভাবে লালন–পালনের কারণে শিশুরা যেসব সমস্যায় ভুগতে পারে তা হলো—
সমস্যা সমাধানের দক্ষতা ব্যাহত হওয়া
সব বয়সের শিশুরই বয়স উপযোগী সমস্যা সমাধানের দক্ষতা থাকা প্রয়োজন। পাঁচ বছরের শিশুর যেমন কোনো শব্দ কীভাবে উচ্চারণ করতে হয় তা নিজে শিখতে হয়, তেমনি চাকরির খোঁজে থাকা ২৫ বছর বয়সী তরুণকেও নিজের সমস্যা নিজ উদ্যোগে সমাধান করতে পারা উচিত। কিন্তু যেসব বাবা–মায়ের সন্তানের জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করার অভ্যাস, তাঁরা সন্তানের সামান্য সমস্যার ইঙ্গিত পেলেই তা সমাধানের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েন। এ ধরনের শিশুরা সমস্যা সমাধানের মূল্যবান দক্ষতা শেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।
বাবা–মায়ের ওপর নির্ভরশীল
হেলিকপ্টার বাবা–মায়েরা সন্তানের সব কাজ করে দেন বলে, সন্তানেরা তাঁদের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হয়ে ওঠে। যদি ১৯ বছর বয়সী সন্তানকে সকালে ক্লাসে যাওয়ার জন্য রোজ বাবা–মাকেই ডেকে দিতে হয় তবে সে কখনোই নিজে ঘুম থেকে ওঠা শিখবে না। বাবা–মায়ের উচিত সন্তানকে তাঁদের ছাড়াই কীভাবে বেঁচে থাকতে হয় এবং সাফল্য অর্জন করতে হয় তা শিখতে সহায়তা করা।
আত্মপক্ষ সমর্থনে বাধা
হেলিকপ্টার বাবা–মায়েরা প্রায়ই কীভাবে নিজের হয়ে কথা বলতে হয় তা না শিখিয়ে সন্তানের হয়ে ওকালতি করেন। শিশুদের যখন কোনো কিছুর প্রয়োজন হয় তখন প্রশ্ন করতে পারা, অকপট হতে শেখা এবং পক্ষ–বিপক্ষ নিয়ে কথা বলতে পারা গুরুত্বপূর্ণ। স্কুলে বা কর্মক্ষেত্রে, এই শিশুদের কোনো চ্যালেঞ্জিং অ্যাসাইনমেন্ট বা বস মোকাবিলা করতে নিশ্চয়ই কোনো বাবা–মা থাকবেন না।
আত্মবিশ্বাস কম থাকে
বাবা–মা যদি সন্তানের প্রত্যেক কাজে নজরদারি করেন, তবে সন্তানের মধ্যে এমন ধারণা তৈরি হতে পারে যে, তারা কখনোই কোনো কাজ ঠিকঠাক করতে পারে না। বেড়ে ওঠার পুরো সময়টাই যদি তারা বাবা–মায়ের এমন নজরদারিতে থাকে, তবে তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয় না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, হেলিকপ্টার প্যারেন্টিংয়ের কারণে আত্মবিশ্বাস বা নিজের সক্ষমতার ওপর আস্থা, মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সামাজিক মিথস্ক্রিয়া, দায়িত্বজ্ঞান ও অভিযোজন ক্ষমতার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
স্বাভাবিক পরিণতিতে বাধা
শিশুদের জীবনে নেতিবাচক কিছু ঘটলেও স্বাভাবিক পরিণতি ভোগ করতে শেখা প্রয়োজন। বাবা–মায়ের অনুপস্থিতিতে সন্তানকে ব্য়র্থতার পরিণতি ভোগ করতেই হয়। তা সত্ত্বেও হেলিকপ্টার বাবা–মায়েরা সন্তানকে নেতিবাচক পরিণতি থেকে রক্ষা করতে তাদের প্রত্যেক কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করেন।
স্বেচ্ছাচারিতা
যেসব শিশুর সামাজিক, একাডেমিক ও শিক্ষাজীবন সব সময় বাবা–মা নিয়ন্ত্রণ করেছেন, এসব শিশু সব সময় সবকিছু নিজের মতো করে পেতে অভ্যস্ত থাকে। এতে তাদের মধ্যে স্বেচ্ছাচারী মনোভাব তৈরি হয়।
বাবা–মা ও সন্তানের সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব পড়ে
সন্তানের প্রতি অপত্য স্নেহের বশেই হেলিকপ্টার প্যারেন্টিং করা হলেও, এতে সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। যদি সন্তানের মনে হয়, বাবা–মা সারাক্ষণ বাড়ির কাজের জন্য ঘ্যানঘ্যান করছেন, তার হয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন বা তাদের প্রত্যেক কাজের ওপর নজরদারি করছেন, তবে একপর্যায়ে বাবা–মায়ের মিথস্ক্রিয়াকে ইতিবাচকভাবে নেবে না। এ ধরনের কাজের মাধ্যমে বরং সন্তানকে আরও দূরে ঠেলে দেওয়া হয়। এমনকি তারা বাবা–মায়ের প্রতি এ সন্দেহ পোষণ করে যে, বাবা–মা তাদের সক্ষমতা ও বিচার–বিবেচনার ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না।
খাবার মজাদার করতে আমরা সাধারণভাবে তেল-মসলার খুব বাড়াবাড়ি করে ফেলি। সেখান থেকে বাদ যায় না পেঁয়াজ কিংবা রসুন। পেঁয়াজকে কায়দা করে সরিয়ে রাখলেও খাবার মজাদার হতে পারে। তেমনই কিছু রেসিপি...
১৭ ঘণ্টা আগেবাংলা অঞ্চলে মিষ্টিজাতীয় প্রাচীন খাবারগুলোর মধ্যে সন্দেশের নাম আছে একেবারে প্রথম দিকে। সব মিষ্টির কিছু না কিছু বদল হলেও, এর বদল হয়েছে খুবই কম। যশোরের নলেন গুড়ের সন্দেশ, মানিকগঞ্জ বা নাগরপুরের প্যারা সন্দেশ, পাবনার মাছের পেটি সন্দেশ ইত্যাদি কে না খেতে পছন্দ করে!
১৮ ঘণ্টা আগেজীবনানন্দ দাশের কবিতায় ঘুরেফিরে এসেছে দারুচিনি দ্বীপের কথা, তার রহস্যময় শ্যামলিমার কথা, সেই সবুজের গহিনে দিকহারা নাবিকের আশ্রয়-আকাঙ্ক্ষার কথা। এই দারুচিনি দ্বীপ কি আসলে কোনো সমুদ্রঘেরা ভূখণ্ড, নাকি বনলতা সেন নিজেই, তা নিয়ে কবিরা বিতর্ক করুক। আমরা বরং এই দ্বীপের তত্ত্বতালাশ করি।
১৮ ঘণ্টা আগে‘প্রসেসেস’-এ প্রকাশিত এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ভাতের মাড় ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য একটি হজমযোগ্য স্বাস্থ্যকর পানীয় হিসেবে কাজ করে। এমনকি এটি ওজন কমাতে পারে।
১৮ ঘণ্টা আগে