আব্দুর রাজ্জাক খান
প্রশ্ন: জুনিয়র হাইস্কুল থেকে কলেজ—এই রূপান্তরের গল্পটি জানতে চাই।
মাহবুবুর রহমান মোল্লা: বর্তমানে সারা দেশে সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ বেশ সুপরিচিত। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির শুরুটা হয়েছিল খুবই সাধারণভাবে। অল্প কয়েকজন শিক্ষক নিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়। তখন অনেকটা চেয়ে, অনুরোধ করে শিক্ষার্থী সংগ্রহ করতে হতো। পড়ানো হতো বিনা বেতনে। এমনকি মাস শেষে শিক্ষকেরা বেতনও পেতেন না। তবু হাল ছেড়ে দিইনি। প্রতিষ্ঠানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা করেছি। প্রাথমিক ও বৃত্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় এবং বৃত্তি পায়। অভিভাবকদের আগ্রহ বাড়ে। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি জুনিয়র হাইস্কুল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এর পর থেকে নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ে, প্রতিষ্ঠানের প্রতি অভিভাবকদের বিশ্বাস ও আগ্রহ বাড়তে থাকে। ১৯৯৫ সালে প্রথমবারের মতো এসএসসি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। ফলও হয় সন্তোষজনক। ১৯৯৫ সালে সামসুল হক খান হাইস্কুল এমপিওভুক্ত হয়। তত দিনে ডেমরা-যাত্রাবাড়ীতে এ প্রতিষ্ঠানটি সুপরিচিত হয়ে ওঠে। প্রতিষ্ঠানপ্রধান ও শিক্ষকদের প্রতি অভিভাবকদের আস্থা বেড়ে যায়। এ প্রতিষ্ঠানের পড়াশোনার মানের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে থাকে। আমরা স্কুল নিয়েই পড়ে থাকতাম। কয়েকবার এসএসসিতে ফল ভালো করার পর মাতুয়াইলের অভিভাবকেরা এ প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের জন্য কলেজ শাখা চালু করার জোর দাবি জানান। তাঁদের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ২০০৩ সাল কলেজ শাখা চালু করা হয়। তখন থেকেই এটি সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ। কলেজ শাখার প্রথম ব্যাচ ২০০৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। প্রথমবারেই শতভাগ পাসসহ ঢাকা বোর্ডে তৃতীয় স্থান অধিকার করি আমরা।
প্রশ্ন: ধানখেতে নির্মিত টিনশেডের সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি আজ দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ। সাফল্যের চাবিকাঠি কী ছিল?
মাহবুবুর রহমান মোল্লা: যাকে ভালোবাসি তাকে যত্ন করতে হয়—এটিই বড় হওয়ার মূলমন্ত্র। প্রতিষ্ঠানটিকে নিজের হাতে গড়েছি। কী করলে শিক্ষার্থীরা মনোযোগী হবে, লেখাপড়া কবরে, পরীক্ষায় ভালো করবে—প্রতিনিয়ত সেই চিন্তা করেছি। শিক্ষার্থীদের মেধা ও মনোযোগ দিয়ে, তাদের পাঠোন্নয়ন প্রচেষ্টা নিয়ে নিয়মিত অভিভাবক সমাবেশ করেছি। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতি ও শ্রেণিকক্ষে মনোনিবেশের ব্যাপারে প্রতিষ্ঠান কখনোই শিথিল ছিল না। পুরো শিক্ষাবর্ষ সেমিস্টার পদ্ধতিতে পাঠদানের ব্যবস্থা করেছি। সাপ্তাহিক কুইজ ও পরীক্ষার্থীদের সব রকম মডেল টেস্ট গ্রহণ করা হয়। নিয়মিত পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের উজ্জীবিত করতে শিক্ষকেরা যে যাঁর মতো ভূমিকা পালন করেন, তাদের বড় মাপের মানুষ হতে স্বপ্ন দেখান। শিক্ষার্থীদের আনন্দ-বিনোদনের উদ্দেশ্যে গড়ে তোলা হয়েছে সমৃদ্ধ সহশিক্ষা অঙ্গন। ভালো লাগা, ভালোবাসা, আশাবাদ ও নিরবচ্ছিন্ন অনুশীলন সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজকে ধীরে ধীরে বিকশিত করেছে। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য স্কুল ও কলেজ শাখায় রাইডের ব্যবস্থা রয়েছে, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় সেন্ট্রাল জেনারেটরের মাধ্যমে, শিক্ষার্থীদের তথ্য অভিভাবককে পৌঁছে দেওয়া হয় খুদে বার্তার মাধ্যমে। শিক্ষার্থীদের গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন শিক্ষকেরা। গৃহীত সব পরিকল্পনার ফলশ্রুতি পর্যাপ্ত মেধা বৃত্তি, এবং ২০১৫ সালে এসএসসিতে ঢাকা বোর্ডে প্রথম স্থান অধিকার করে। তারও আগে ২০১২ সালে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। এ কলেজ থেকে অসংখ্য এইচএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী সরকারি মেডিকেল কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। নিত্যনতুন পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টায় সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ আজ দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বিদ্যাপীঠ।
প্রশ্ন: কলেজটি প্রতিবছর ঈর্ষণীয় ফল বয়ে আনছে, এর পেছনের কারণ কী?
মাহবুবুর রহমান মোল্লা: বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পরিকল্পনার ফসল ক্রমাগত ঈর্ষণীয় সাফল্য। প্রথমত, মেধার ভিত্তিতে সেকশন বিভাজন। অর্থাৎ মেধাবী ও দুর্বল মেধার শিক্ষার্থীদের আলাদা করা হয়। তারা কী পড়বে এবং কেমন করে পড়বে সে ব্যাপারে বিষয় শিক্ষকেরা পরিকল্পিত ভূমিকা রাখেন। দ্বিতীয়ত, শিক্ষার্থীদের ভালো পরীক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকেরা তদারকি করেন। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক সমস্যা প্রশাসনিক উদ্যোগে অবগত হতে হয়। তাদের সব রকম সমস্যা বিবেচনায় রেখে পরীক্ষা প্রস্তুতিতে প্রতিষ্ঠান নিয়মিত সহযোগিতা করে। অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের পাঠোন্নয়নে পরামর্শ দেওয়া হয়। কোনো পরিস্থিতিতেই শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের নিরাশ বা নিরুৎসাহিত করা হয় না। পরীক্ষার্থীদের আনন্দিত ও উৎসাহিত রাখতে প্রতিষ্ঠান তার ভূমিকা পালন করে যায়। পরীক্ষার্থীদের পাঠের পরিবেশ জানতে হোম ভিজিট করা হয়, শ্রেণি সমন্বয়ক শিক্ষকেরা তাদের খোঁজখবর রাখেন। এসব প্রচেষ্টা পরীক্ষার ফলাফলকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে এবং প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় আশাব্যঞ্জক ফল লাভ করে।
প্রশ্ন: কলেজ শাখার বিশেষত্ব কী বলে আপনি মনে করেন?
মাহবুবুর রহমান মোল্লা: কলেজ শাখার বিশেষত্ব একটি নয়, অনেক। তবে সচেতন অভিভাবকদের কাছে যে বিশেষত্ব স্পষ্ট হওয়ার কথা, তা হলো, নির্ধারিত পাঠের প্রশ্নে শিক্ষক-শিক্ষার্থী কেউ আপস করে না। প্রত্যেক শিক্ষক চান তাঁর পড়া খুব ভালো করে পড়াতে হবে, যথাযথ ফিডব্যাক নিতে হবে আর প্রত্যেক শিক্ষার্থীও চায় তার নির্দিষ্ট পাঠ নিখুঁতভাবে বুঝে নিতে। পড়াশোনা নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই যে ব্যতিক্রম ঐক্য, এইটিই কলেজ শাখার বিশেষত্ব। অনেক চেষ্টা ও তদারকির ফল এই পাঠের ঐক্য। ছাত্রীরা এখানে ভর্তি হয়েই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে সে কেমন ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা করে। এসব কারণে এইচএসসি পরীক্ষায় সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ অনেকবার ঢাকা বোর্ডে সেরা দশের মধ্যে স্থান লাভ করেছে।
প্রশ্ন: পাঠদানে কী কী মৌলিক বিষয় অনুসরণ করা হয়?
মাহবুবুর রহমান মোল্লা: শিক্ষার্থীদের পাঠ বোঝাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে শিক্ষকের পাঠের বিষয় উপস্থাপন। শিক্ষকের বোঝানো সহজ-সরল ও আন্তরিক হওয়া চাই। তাঁর কণ্ঠস্বর স্পষ্ট হবে, ভঙ্গিও চমৎকার হবে। মাঝে মাঝে তিনি রসবোধের পরিচয় দেবেন। অকারণে জটিল, অচেনা শব্দ ও দীর্ঘ বাক্য ব্যবহার করবেন না। প্রায়ই প্রশ্ন করবেন বুঝে নিতে তাঁর আলোচনা বিষয় শিক্ষার্থী বুঝতে পারছে কি না। তাকে হোমওয়ার্ক দেবেন। সর্বোপরি শিক্ষক পাঠদান কার্যক্রমের মধ্য দিয়েই প্রমাণ করবেন, শিক্ষক শুভাকাঙ্ক্ষী ও পরম আপনজন। পাঠের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মনোযোগী, দায়িত্বশীল ও আন্তরিক করার চেষ্টা নিরলসভাবে করে যাবেন শিক্ষক। শ্রেণিকক্ষে এই পদ্ধতিগুলো সব সময় পালন করেন আমাদের শিক্ষকেরা।
প্রশ্ন: সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ সহশিক্ষা কার্যক্রমে কতটা এগিয়ে?
মাহবুবুর রহমান মোল্লা: সহশিক্ষায় দেশের অগ্রগামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ। শিক্ষার্থীদের বিনোদন দিতে ও সংস্কৃতি চর্চায় উৎসাহী করার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠানে গড়ে উঠেছে ১৫টি ক্লাব। এর মধ্যে স্কাউট গ্রুপ, ডিবেট ক্লাব, ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ ক্লাব, বিজ্ঞান ক্লাব ও আর্ট অ্যান্ড কালচারাল ক্লাব উল্লেখযোগ্য। জাতীয় মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা পুরস্কার ও পদক জয় করছে। প্রতিষ্ঠানের প্রায় সব শিক্ষার্থীই কোনো না কোনো ক্লাবের সদস্য। এ বছরের জানুয়ারি মাসে উদ্যাপিত হলো জাঁকালো ক্লাব উৎসব। এভাবে নানা চিন্তায়, চেষ্টায় শিক্ষার্থীরা এগোচ্ছে, সহশিক্ষার অঙ্গন প্রতিষ্ঠানের বিকাশে অনন্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
প্রশ্ন: শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়?
মাহবুবুর রহমান মোল্লা: শিক্ষক নিয়োগে প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষায় তাঁদের জানার গভীরতা, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাঁদের জ্ঞান যথাসম্ভব যাচাই করা হয়। আসল পরীক্ষা হয় ডেমোনেস্ট্রেশনে। সেখানে লক্ষ করা হয় তাঁর প্রকাশভঙ্গি, বক্তব্যের সৌন্দর্য ও ক্লাস নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা। শিক্ষক নিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ দিক বিবেচনা করা হয় সাক্ষাৎকারে। শিক্ষাদানে প্রার্থীর আগ্রহ ও অনুরাগ বড় বিবেচ্য বিষয়। শিক্ষক প্রত্যক্ষভাবে শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করেন, তাই যিনি শিক্ষক হবেন তাঁর জ্ঞানস্পৃহা, চরিত্র, শিক্ষার্থীদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ও দায়িত্বশীলতা আমরা বিবেচনা করি। নির্ধারিত বিষয়ের বাইরেও দেশ-কাল-বিশ্ব সম্পর্কে তাঁর সচেতনতা যাচাই করি। এসব দিক বিবেচনায় রেখে সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজশিক্ষক নিয়োগ করে।
প্রশ্ন: কলেজ নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মাহবুবুর রহমান মোল্লা: নিত্যনতুন পরিকল্পনা করছি। কলেজ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো, শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি করে আরও প্রসারিত করা। আরও একটি পরিকল্পনা হলো, দেশের দৈন্য দুর্দশা চ্যালেঞ্জে যোগ্য, দক্ষ ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জনশক্তি তৈরি করা। সময়টা নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী নেতৃত্বের। তাই স্বপ্ন দেখি সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রীদের মধ্যে থেকে অদূরভবিষ্যতে যোগ্য নারী দল বেরিয়ে আসুক। এ ছাড়া পড়াশোনাসহ যাবতীয় দিকের গুণগতমান বৃদ্ধির পরিকল্পনাও রয়েছে।
প্রশ্ন: জুনিয়র হাইস্কুল থেকে কলেজ—এই রূপান্তরের গল্পটি জানতে চাই।
মাহবুবুর রহমান মোল্লা: বর্তমানে সারা দেশে সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ বেশ সুপরিচিত। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির শুরুটা হয়েছিল খুবই সাধারণভাবে। অল্প কয়েকজন শিক্ষক নিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়। তখন অনেকটা চেয়ে, অনুরোধ করে শিক্ষার্থী সংগ্রহ করতে হতো। পড়ানো হতো বিনা বেতনে। এমনকি মাস শেষে শিক্ষকেরা বেতনও পেতেন না। তবু হাল ছেড়ে দিইনি। প্রতিষ্ঠানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা করেছি। প্রাথমিক ও বৃত্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা অংশ নেয় এবং বৃত্তি পায়। অভিভাবকদের আগ্রহ বাড়ে। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি জুনিয়র হাইস্কুল হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এর পর থেকে নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হয়। শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়ে, প্রতিষ্ঠানের প্রতি অভিভাবকদের বিশ্বাস ও আগ্রহ বাড়তে থাকে। ১৯৯৫ সালে প্রথমবারের মতো এসএসসি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। ফলও হয় সন্তোষজনক। ১৯৯৫ সালে সামসুল হক খান হাইস্কুল এমপিওভুক্ত হয়। তত দিনে ডেমরা-যাত্রাবাড়ীতে এ প্রতিষ্ঠানটি সুপরিচিত হয়ে ওঠে। প্রতিষ্ঠানপ্রধান ও শিক্ষকদের প্রতি অভিভাবকদের আস্থা বেড়ে যায়। এ প্রতিষ্ঠানের পড়াশোনার মানের ব্যাপারে নিশ্চিত হতে থাকে। আমরা স্কুল নিয়েই পড়ে থাকতাম। কয়েকবার এসএসসিতে ফল ভালো করার পর মাতুয়াইলের অভিভাবকেরা এ প্রতিষ্ঠানে মেয়েদের জন্য কলেজ শাখা চালু করার জোর দাবি জানান। তাঁদের দাবির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ২০০৩ সাল কলেজ শাখা চালু করা হয়। তখন থেকেই এটি সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ। কলেজ শাখার প্রথম ব্যাচ ২০০৫ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। প্রথমবারেই শতভাগ পাসসহ ঢাকা বোর্ডে তৃতীয় স্থান অধিকার করি আমরা।
প্রশ্ন: ধানখেতে নির্মিত টিনশেডের সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি আজ দেশের অন্যতম সেরা বিদ্যাপীঠ। সাফল্যের চাবিকাঠি কী ছিল?
মাহবুবুর রহমান মোল্লা: যাকে ভালোবাসি তাকে যত্ন করতে হয়—এটিই বড় হওয়ার মূলমন্ত্র। প্রতিষ্ঠানটিকে নিজের হাতে গড়েছি। কী করলে শিক্ষার্থীরা মনোযোগী হবে, লেখাপড়া কবরে, পরীক্ষায় ভালো করবে—প্রতিনিয়ত সেই চিন্তা করেছি। শিক্ষার্থীদের মেধা ও মনোযোগ দিয়ে, তাদের পাঠোন্নয়ন প্রচেষ্টা নিয়ে নিয়মিত অভিভাবক সমাবেশ করেছি। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত উপস্থিতি ও শ্রেণিকক্ষে মনোনিবেশের ব্যাপারে প্রতিষ্ঠান কখনোই শিথিল ছিল না। পুরো শিক্ষাবর্ষ সেমিস্টার পদ্ধতিতে পাঠদানের ব্যবস্থা করেছি। সাপ্তাহিক কুইজ ও পরীক্ষার্থীদের সব রকম মডেল টেস্ট গ্রহণ করা হয়। নিয়মিত পাঠদানের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের উজ্জীবিত করতে শিক্ষকেরা যে যাঁর মতো ভূমিকা পালন করেন, তাদের বড় মাপের মানুষ হতে স্বপ্ন দেখান। শিক্ষার্থীদের আনন্দ-বিনোদনের উদ্দেশ্যে গড়ে তোলা হয়েছে সমৃদ্ধ সহশিক্ষা অঙ্গন। ভালো লাগা, ভালোবাসা, আশাবাদ ও নিরবচ্ছিন্ন অনুশীলন সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজকে ধীরে ধীরে বিকশিত করেছে। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য স্কুল ও কলেজ শাখায় রাইডের ব্যবস্থা রয়েছে, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় সেন্ট্রাল জেনারেটরের মাধ্যমে, শিক্ষার্থীদের তথ্য অভিভাবককে পৌঁছে দেওয়া হয় খুদে বার্তার মাধ্যমে। শিক্ষার্থীদের গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন শিক্ষকেরা। গৃহীত সব পরিকল্পনার ফলশ্রুতি পর্যাপ্ত মেধা বৃত্তি, এবং ২০১৫ সালে এসএসসিতে ঢাকা বোর্ডে প্রথম স্থান অধিকার করে। তারও আগে ২০১২ সালে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে। এ কলেজ থেকে অসংখ্য এইচএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী সরকারি মেডিকেল কলেজ ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পায়। নিত্যনতুন পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টায় সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ আজ দেশের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় বিদ্যাপীঠ।
প্রশ্ন: কলেজটি প্রতিবছর ঈর্ষণীয় ফল বয়ে আনছে, এর পেছনের কারণ কী?
মাহবুবুর রহমান মোল্লা: বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পরিকল্পনার ফসল ক্রমাগত ঈর্ষণীয় সাফল্য। প্রথমত, মেধার ভিত্তিতে সেকশন বিভাজন। অর্থাৎ মেধাবী ও দুর্বল মেধার শিক্ষার্থীদের আলাদা করা হয়। তারা কী পড়বে এবং কেমন করে পড়বে সে ব্যাপারে বিষয় শিক্ষকেরা পরিকল্পিত ভূমিকা রাখেন। দ্বিতীয়ত, শিক্ষার্থীদের ভালো পরীক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষকেরা তদারকি করেন। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর শারীরিক, মানসিক ও আর্থিক সমস্যা প্রশাসনিক উদ্যোগে অবগত হতে হয়। তাদের সব রকম সমস্যা বিবেচনায় রেখে পরীক্ষা প্রস্তুতিতে প্রতিষ্ঠান নিয়মিত সহযোগিতা করে। অভিভাবকদের সঙ্গে মতবিনিময়ের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের পাঠোন্নয়নে পরামর্শ দেওয়া হয়। কোনো পরিস্থিতিতেই শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের নিরাশ বা নিরুৎসাহিত করা হয় না। পরীক্ষার্থীদের আনন্দিত ও উৎসাহিত রাখতে প্রতিষ্ঠান তার ভূমিকা পালন করে যায়। পরীক্ষার্থীদের পাঠের পরিবেশ জানতে হোম ভিজিট করা হয়, শ্রেণি সমন্বয়ক শিক্ষকেরা তাদের খোঁজখবর রাখেন। এসব প্রচেষ্টা পরীক্ষার ফলাফলকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে এবং প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় আশাব্যঞ্জক ফল লাভ করে।
প্রশ্ন: কলেজ শাখার বিশেষত্ব কী বলে আপনি মনে করেন?
মাহবুবুর রহমান মোল্লা: কলেজ শাখার বিশেষত্ব একটি নয়, অনেক। তবে সচেতন অভিভাবকদের কাছে যে বিশেষত্ব স্পষ্ট হওয়ার কথা, তা হলো, নির্ধারিত পাঠের প্রশ্নে শিক্ষক-শিক্ষার্থী কেউ আপস করে না। প্রত্যেক শিক্ষক চান তাঁর পড়া খুব ভালো করে পড়াতে হবে, যথাযথ ফিডব্যাক নিতে হবে আর প্রত্যেক শিক্ষার্থীও চায় তার নির্দিষ্ট পাঠ নিখুঁতভাবে বুঝে নিতে। পড়াশোনা নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই যে ব্যতিক্রম ঐক্য, এইটিই কলেজ শাখার বিশেষত্ব। অনেক চেষ্টা ও তদারকির ফল এই পাঠের ঐক্য। ছাত্রীরা এখানে ভর্তি হয়েই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে সে কেমন ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা করে। এসব কারণে এইচএসসি পরীক্ষায় সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ অনেকবার ঢাকা বোর্ডে সেরা দশের মধ্যে স্থান লাভ করেছে।
প্রশ্ন: পাঠদানে কী কী মৌলিক বিষয় অনুসরণ করা হয়?
মাহবুবুর রহমান মোল্লা: শিক্ষার্থীদের পাঠ বোঝাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে শিক্ষকের পাঠের বিষয় উপস্থাপন। শিক্ষকের বোঝানো সহজ-সরল ও আন্তরিক হওয়া চাই। তাঁর কণ্ঠস্বর স্পষ্ট হবে, ভঙ্গিও চমৎকার হবে। মাঝে মাঝে তিনি রসবোধের পরিচয় দেবেন। অকারণে জটিল, অচেনা শব্দ ও দীর্ঘ বাক্য ব্যবহার করবেন না। প্রায়ই প্রশ্ন করবেন বুঝে নিতে তাঁর আলোচনা বিষয় শিক্ষার্থী বুঝতে পারছে কি না। তাকে হোমওয়ার্ক দেবেন। সর্বোপরি শিক্ষক পাঠদান কার্যক্রমের মধ্য দিয়েই প্রমাণ করবেন, শিক্ষক শুভাকাঙ্ক্ষী ও পরম আপনজন। পাঠের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মনোযোগী, দায়িত্বশীল ও আন্তরিক করার চেষ্টা নিরলসভাবে করে যাবেন শিক্ষক। শ্রেণিকক্ষে এই পদ্ধতিগুলো সব সময় পালন করেন আমাদের শিক্ষকেরা।
প্রশ্ন: সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ সহশিক্ষা কার্যক্রমে কতটা এগিয়ে?
মাহবুবুর রহমান মোল্লা: সহশিক্ষায় দেশের অগ্রগামী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ। শিক্ষার্থীদের বিনোদন দিতে ও সংস্কৃতি চর্চায় উৎসাহী করার উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠানে গড়ে উঠেছে ১৫টি ক্লাব। এর মধ্যে স্কাউট গ্রুপ, ডিবেট ক্লাব, ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ ক্লাব, বিজ্ঞান ক্লাব ও আর্ট অ্যান্ড কালচারাল ক্লাব উল্লেখযোগ্য। জাতীয় মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা পুরস্কার ও পদক জয় করছে। প্রতিষ্ঠানের প্রায় সব শিক্ষার্থীই কোনো না কোনো ক্লাবের সদস্য। এ বছরের জানুয়ারি মাসে উদ্যাপিত হলো জাঁকালো ক্লাব উৎসব। এভাবে নানা চিন্তায়, চেষ্টায় শিক্ষার্থীরা এগোচ্ছে, সহশিক্ষার অঙ্গন প্রতিষ্ঠানের বিকাশে অনন্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
প্রশ্ন: শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়?
মাহবুবুর রহমান মোল্লা: শিক্ষক নিয়োগে প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষায় তাঁদের জানার গভীরতা, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাঁদের জ্ঞান যথাসম্ভব যাচাই করা হয়। আসল পরীক্ষা হয় ডেমোনেস্ট্রেশনে। সেখানে লক্ষ করা হয় তাঁর প্রকাশভঙ্গি, বক্তব্যের সৌন্দর্য ও ক্লাস নিয়ন্ত্রণের দক্ষতা। শিক্ষক নিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ দিক বিবেচনা করা হয় সাক্ষাৎকারে। শিক্ষাদানে প্রার্থীর আগ্রহ ও অনুরাগ বড় বিবেচ্য বিষয়। শিক্ষক প্রত্যক্ষভাবে শিক্ষার্থীদের প্রভাবিত করেন, তাই যিনি শিক্ষক হবেন তাঁর জ্ঞানস্পৃহা, চরিত্র, শিক্ষার্থীদের প্রতি তাঁর ভালোবাসা ও দায়িত্বশীলতা আমরা বিবেচনা করি। নির্ধারিত বিষয়ের বাইরেও দেশ-কাল-বিশ্ব সম্পর্কে তাঁর সচেতনতা যাচাই করি। এসব দিক বিবেচনায় রেখে সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজশিক্ষক নিয়োগ করে।
প্রশ্ন: কলেজ নিয়ে আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
মাহবুবুর রহমান মোল্লা: নিত্যনতুন পরিকল্পনা করছি। কলেজ নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো, শিক্ষার্থী সংখ্যা বৃদ্ধি করে আরও প্রসারিত করা। আরও একটি পরিকল্পনা হলো, দেশের দৈন্য দুর্দশা চ্যালেঞ্জে যোগ্য, দক্ষ ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধিবৃত্তিসম্পন্ন জনশক্তি তৈরি করা। সময়টা নারীর ক্ষমতায়ন ও নারী নেতৃত্বের। তাই স্বপ্ন দেখি সামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রীদের মধ্যে থেকে অদূরভবিষ্যতে যোগ্য নারী দল বেরিয়ে আসুক। এ ছাড়া পড়াশোনাসহ যাবতীয় দিকের গুণগতমান বৃদ্ধির পরিকল্পনাও রয়েছে।
দিগন্তবিস্তৃত ধানখেতের মাথার ওপর নীল আকাশে উঁকি দেবে সাদা মেঘ। শরৎকাল বলে ভুল হতে পারে। ভুল ভাঙলে দেখতে পাবেন, মেঘের ভেলা সূর্যের আলোয় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে হয়ে উঠছে গোলাপি কিংবা লাল। বুঝবেন, আপনি শরতের সাদা মেঘ নয়, দেখছেন তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
২ দিন আগেকোনো কিছু ওপর থেকে নিচে পড়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে। স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে আমরা সবাই এ বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলোতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্র কাজ করে না। অর্থাৎ সেসব জায়গায় কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। যেতে চান সেই সব জায়গায়?
২ দিন আগেশীত, বসন্ত আর বর্ষায় বাংলার নীল নদ সারির রূপ বদলে ফেলে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে দক্ষ মাঝিরাও ভয়ে ভয়ে বইঠা চালান। আর শীতে সারি নদীর নীল পানি দেয় অপার্থিব জগতের খোঁজ। নদীটি ধরে কিছুদূর উজান বাইলেই পাওয়া যাবে লালাখাল জিরো পয়েন্ট।
২ দিন আগেভ্রমণকালে রোগবালাই থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী না হলে ভ্রমণের আনন্দ মাঠে মারা যেতে পারে। ভ্রমণের সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেছে নিতে পারেন কিছু উপায়।
২ দিন আগে