আফসানা বেগম
সুনির্দিষ্ট সময় পরে পেছনে ফিরে তাকানো চলে। কতটুকু এগোলাম? পেছনে ফিরে তাকালে কত কিছুই না দেখা যায়। দেখার পরিধি ক্রমেই ছোট করে এনে স্থির হতে পারি ‘বাংলাদেশের নারী’-সংক্রান্ত বিষয়াদিতে।
কয়েক শতাব্দীব্যাপী বাংলাদেশের নারীর জীবনযাপন আমূল বদলে গেছে; বিশেষ করে স্বাধীনতাযুদ্ধে বিজয়ের পর থেকে আজ অবধি নারীর অবস্থানে আশাতীত পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশের নারীরা এখন স্বাধীনচেতা, স্বনির্ভর ও সমাজসচেতন হতে শিখেছেন। তবে অধিকাংশ নারী এখনো সমাজের চাপিয়ে দেওয়া লৈঙ্গিক ভূমিকা পালনের ও বস্তুত পুরুষতান্ত্রিক সমাজটিতে অধিকার আদায়, তথা নিজেকে পুরুষের সমান্তরালে স্থাপন করার সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তাঁর জীবন অতিবাহিত করেন। কারণ, সমাজের নিয়মকানুন ও দেশের আইনের অধিকাংশ এখনো নারীবান্ধব নয়।
ক্ষেত্রবিশেষে নারীকে কোণঠাসা করতে সামাজিক অনুশাসন ও রাষ্ট্রের আইন মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তাই সমস্যায় ডুবে থাকা সমাজে অবস্থান করেও নারীর বিশেষ অর্জন উল্লেখযোগ্য। নারীর জন্য বেঁচে থাকার যেখানে সুস্থ পরিবেশই নিশ্চিত করা যায় না, সেখানে গবেষণায়, খেলায়, শিল্পে, রাজনীতিতে নারীর উত্থান ও অর্জন এক অভূতপূর্ব সাফল্য। অন্যদিকে, ফোর্বস তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এশিয়ার ষষ্ঠ ক্ষমতাধর নারী হিসেবে উল্লিখিত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি সময় ধরে একজন নারী দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারায় তাঁর এ অর্জন।
বর্তমান সমাজে নারী অতীতের মতো গৃহবন্দী নেই। তাই বিচিত্র নারী জীবনের সংগ্রাম যেন তাতে অনেকাংশে লাঘব হয়েছে। যেমন এবারের সাফ ফুটবল টুর্নামেন্টে ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে ১-০ গোলে হারিয়ে বাংলাদেশের নারীদের অনূর্ধ্ব-১৯ দল জয়লাভ করে। সাফ গেমসের ফাইনাল খেলায় এটাই বাংলাদেশের প্রথম বিজয়। এর আগেও দলটি ভারতের সঙ্গে নয়টি ম্যাচ খেলেছিল বিভিন্ন পর্বে। এর মধ্যে পাঁচটিতে বাংলাদেশ জয়লাভ করেছে। ফুটবল টিমের, বিশেষ করে অনূর্ধ্ব-১৯-এর নারী সদস্যরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা এবং বলা বাহুল্য প্রধানত সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী থেকে তাঁদের উত্থান। তাই এ জয় বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
অন্যদিকে, ২০২১ সালের নভেম্বরে নারী ক্রিকেট দল এক দিনের বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রকে হারিয়ে মূল পর্বে খেলার সুযোগ নিশ্চিত করে। এটাই হবে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দলের প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের মূল পর্বে পা রাখা। এই সুযোগ বাংলাদেশের নারীদের জন্য বিশাল অর্জন।
এ তো গেল খেলার অঙ্গনের অর্জন, অন্যান্য সৃজনশীল ক্ষেত্রেও নারীরা আমাদের দেশের নাম উজ্জ্বল করেছে। বছরের শেষভাগে স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম স্যার জন স্যোন মিউজিয়ামের দেওয়া ‘স্যোন’ (Soane) পুরস্কার অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশের নারীদের জন্য গৌরব বয়ে এনেছেন। স্যোন মিউজিয়াম স্থাপত্যশিল্পে যুগান্তকারী ছাপ রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ এ পুরস্কার ২০১৭ সালে প্রবর্তন করে। ৫২ বছর বয়সী মেরিনা তাবাসসুম এর আগেও একটি মসজিদের নকশাকারী হিসেবে আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। স্থাপত্য নকশায় আলোর বিচিত্র ব্যবহার তাঁর নকশায় প্রতিফলিত হয়। বর্তমানে তিনি রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের ক্যাম্পে এবং সমুদ্রতীরবর্তী ভূমিতে অতিদরিদ্রদের জন্য সবচেয়ে কম মূল্যের উপাদানে কী করে স্থানান্তরযোগ্য বাসস্থান তৈরি করা যায়, এ নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত আছেন।
করোনাকালে বাংলাদেশের বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ নারীর কথা না বললেই নয়। তিনি হলেন সাদিয়া খানম। টানা ১৪ মাসের গবেষণায় তিনি ‘ভলটিক’ নামের এক স্প্রে আবিষ্কার করেছেন, যা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকসহ আরও অনেক জীবাণু মুহূর্তে ধ্বংস করতে সক্ষম। ২০২১ সালের জুলাইয়ে আবিষ্কৃত এ স্প্রেকে এনএইচএস ও নাসা একযোগে যুগান্তকারী বলে বর্ণনা করেছে।
বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারী থেকে শুরু করে শহুরে নারী, এমনকি বিদেশে অবস্থানকারী নারীরাও নিজ নিজ ক্ষেত্রে কাজের ছাপ রাখতে সক্ষম হচ্ছেন, এ অত্যন্ত আশার সংবাদ। দেশের সংস্কৃতি, শিল্প-বাণিজ্য ও কারুশিল্প, প্রতিটি স্থানে নারীর অবস্থান এখন সুস্পষ্ট। ২০২১ সালেই বাংলাদেশ প্রথম বাণিজ্যিক ব্যাংকে নারী সিইও প্রত্যক্ষ করেছে। নারী উদ্যোক্তা আগের চেয়ে করোনাকালে অনেকাংশে বেড়েছে। পোশাকশিল্পে নারী কর্মীর সংখ্যা এ বছর ৮০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।
নারীর অর্জন কেবল তার অর্জন নয়, নারীর অর্জন মূলত মানবজাতিরই অর্জন।
লেখক: কথাসাহিত্যিক
সুনির্দিষ্ট সময় পরে পেছনে ফিরে তাকানো চলে। কতটুকু এগোলাম? পেছনে ফিরে তাকালে কত কিছুই না দেখা যায়। দেখার পরিধি ক্রমেই ছোট করে এনে স্থির হতে পারি ‘বাংলাদেশের নারী’-সংক্রান্ত বিষয়াদিতে।
কয়েক শতাব্দীব্যাপী বাংলাদেশের নারীর জীবনযাপন আমূল বদলে গেছে; বিশেষ করে স্বাধীনতাযুদ্ধে বিজয়ের পর থেকে আজ অবধি নারীর অবস্থানে আশাতীত পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশের নারীরা এখন স্বাধীনচেতা, স্বনির্ভর ও সমাজসচেতন হতে শিখেছেন। তবে অধিকাংশ নারী এখনো সমাজের চাপিয়ে দেওয়া লৈঙ্গিক ভূমিকা পালনের ও বস্তুত পুরুষতান্ত্রিক সমাজটিতে অধিকার আদায়, তথা নিজেকে পুরুষের সমান্তরালে স্থাপন করার সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তাঁর জীবন অতিবাহিত করেন। কারণ, সমাজের নিয়মকানুন ও দেশের আইনের অধিকাংশ এখনো নারীবান্ধব নয়।
ক্ষেত্রবিশেষে নারীকে কোণঠাসা করতে সামাজিক অনুশাসন ও রাষ্ট্রের আইন মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তাই সমস্যায় ডুবে থাকা সমাজে অবস্থান করেও নারীর বিশেষ অর্জন উল্লেখযোগ্য। নারীর জন্য বেঁচে থাকার যেখানে সুস্থ পরিবেশই নিশ্চিত করা যায় না, সেখানে গবেষণায়, খেলায়, শিল্পে, রাজনীতিতে নারীর উত্থান ও অর্জন এক অভূতপূর্ব সাফল্য। অন্যদিকে, ফোর্বস তালিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এশিয়ার ষষ্ঠ ক্ষমতাধর নারী হিসেবে উল্লিখিত হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি সময় ধরে একজন নারী দেশের প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারায় তাঁর এ অর্জন।
বর্তমান সমাজে নারী অতীতের মতো গৃহবন্দী নেই। তাই বিচিত্র নারী জীবনের সংগ্রাম যেন তাতে অনেকাংশে লাঘব হয়েছে। যেমন এবারের সাফ ফুটবল টুর্নামেন্টে ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে ১-০ গোলে হারিয়ে বাংলাদেশের নারীদের অনূর্ধ্ব-১৯ দল জয়লাভ করে। সাফ গেমসের ফাইনাল খেলায় এটাই বাংলাদেশের প্রথম বিজয়। এর আগেও দলটি ভারতের সঙ্গে নয়টি ম্যাচ খেলেছিল বিভিন্ন পর্বে। এর মধ্যে পাঁচটিতে বাংলাদেশ জয়লাভ করেছে। ফুটবল টিমের, বিশেষ করে অনূর্ধ্ব-১৯-এর নারী সদস্যরা দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আসা এবং বলা বাহুল্য প্রধানত সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী থেকে তাঁদের উত্থান। তাই এ জয় বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।
অন্যদিকে, ২০২১ সালের নভেম্বরে নারী ক্রিকেট দল এক দিনের বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রকে হারিয়ে মূল পর্বে খেলার সুযোগ নিশ্চিত করে। এটাই হবে বাংলাদেশের নারী ক্রিকেট দলের প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের মূল পর্বে পা রাখা। এই সুযোগ বাংলাদেশের নারীদের জন্য বিশাল অর্জন।
এ তো গেল খেলার অঙ্গনের অর্জন, অন্যান্য সৃজনশীল ক্ষেত্রেও নারীরা আমাদের দেশের নাম উজ্জ্বল করেছে। বছরের শেষভাগে স্থপতি মেরিনা তাবাসসুম স্যার জন স্যোন মিউজিয়ামের দেওয়া ‘স্যোন’ (Soane) পুরস্কার অর্জনের মাধ্যমে বাংলাদেশের নারীদের জন্য গৌরব বয়ে এনেছেন। স্যোন মিউজিয়াম স্থাপত্যশিল্পে যুগান্তকারী ছাপ রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ এ পুরস্কার ২০১৭ সালে প্রবর্তন করে। ৫২ বছর বয়সী মেরিনা তাবাসসুম এর আগেও একটি মসজিদের নকশাকারী হিসেবে আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। স্থাপত্য নকশায় আলোর বিচিত্র ব্যবহার তাঁর নকশায় প্রতিফলিত হয়। বর্তমানে তিনি রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের ক্যাম্পে এবং সমুদ্রতীরবর্তী ভূমিতে অতিদরিদ্রদের জন্য সবচেয়ে কম মূল্যের উপাদানে কী করে স্থানান্তরযোগ্য বাসস্থান তৈরি করা যায়, এ নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত আছেন।
করোনাকালে বাংলাদেশের বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ নারীর কথা না বললেই নয়। তিনি হলেন সাদিয়া খানম। টানা ১৪ মাসের গবেষণায় তিনি ‘ভলটিক’ নামের এক স্প্রে আবিষ্কার করেছেন, যা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাকসহ আরও অনেক জীবাণু মুহূর্তে ধ্বংস করতে সক্ষম। ২০২১ সালের জুলাইয়ে আবিষ্কৃত এ স্প্রেকে এনএইচএস ও নাসা একযোগে যুগান্তকারী বলে বর্ণনা করেছে।
বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারী থেকে শুরু করে শহুরে নারী, এমনকি বিদেশে অবস্থানকারী নারীরাও নিজ নিজ ক্ষেত্রে কাজের ছাপ রাখতে সক্ষম হচ্ছেন, এ অত্যন্ত আশার সংবাদ। দেশের সংস্কৃতি, শিল্প-বাণিজ্য ও কারুশিল্প, প্রতিটি স্থানে নারীর অবস্থান এখন সুস্পষ্ট। ২০২১ সালেই বাংলাদেশ প্রথম বাণিজ্যিক ব্যাংকে নারী সিইও প্রত্যক্ষ করেছে। নারী উদ্যোক্তা আগের চেয়ে করোনাকালে অনেকাংশে বেড়েছে। পোশাকশিল্পে নারী কর্মীর সংখ্যা এ বছর ৮০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে।
নারীর অর্জন কেবল তার অর্জন নয়, নারীর অর্জন মূলত মানবজাতিরই অর্জন।
লেখক: কথাসাহিত্যিক
দিগন্তবিস্তৃত ধানখেতের মাথার ওপর নীল আকাশে উঁকি দেবে সাদা মেঘ। শরৎকাল বলে ভুল হতে পারে। ভুল ভাঙলে দেখতে পাবেন, মেঘের ভেলা সূর্যের আলোয় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে হয়ে উঠছে গোলাপি কিংবা লাল। বুঝবেন, আপনি শরতের সাদা মেঘ নয়, দেখছেন তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
১ দিন আগেকোনো কিছু ওপর থেকে নিচে পড়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে। স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে আমরা সবাই এ বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলোতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্র কাজ করে না। অর্থাৎ সেসব জায়গায় কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। যেতে চান সেই সব জায়গায়?
১ দিন আগেশীত, বসন্ত আর বর্ষায় বাংলার নীল নদ সারির রূপ বদলে ফেলে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে দক্ষ মাঝিরাও ভয়ে ভয়ে বইঠা চালান। আর শীতে সারি নদীর নীল পানি দেয় অপার্থিব জগতের খোঁজ। নদীটি ধরে কিছুদূর উজান বাইলেই পাওয়া যাবে লালাখাল জিরো পয়েন্ট।
১ দিন আগেভ্রমণকালে রোগবালাই থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী না হলে ভ্রমণের আনন্দ মাঠে মারা যেতে পারে। ভ্রমণের সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেছে নিতে পারেন কিছু উপায়।
১ দিন আগে