রজত কান্তি রায়, ঢাকা
কাজী নজরুল ইসলাম এসেছেন ফরিদপুরে কবি জসীমউদ্দীনের বাড়িতে। জসীমউদ্দীন কলকাতা থেকে আসার সময় সঙ্গে নিয়ে আসেন চা-পাতা। বাড়িতে এসেই তিনি অন্দরমহলে চায়ের রেসিপি জানিয়ে বলে গেলেন, কাজীদাকে সময়মতো চা দিতে হবে। অনেকক্ষণ গল্প হওয়ার পর অন্দরমহল থেকে চা এল। নজরুল ইসলাম চায়ে চুমুক দিলেন। জসীমউদ্দীন ভয়ে ভয়ে জানতে চাইলেন, চা কেমন হয়েছে? নজরুল ইসলাম জানালেন, ভালোই হয়েছে, তবে লবণ আর ঝালটা একটু চড়া।
বিশ শতকের শুরুতে বাঙালির চা পানের গল্প এমনই। তবে ওই সময় থেকে বাঙালি চায়ে চুমুক দেওয়া শুরু করে সকাল, বিকেল, সন্ধ্যা কিংবা রাতে। এর পেছনে ‘গভীর ষড়যন্ত্রের হাত’ ছিল ব্রিটিশদের। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ব্রিটিশরা বাঙালিদের সেই যে চা খাওয়ানো শেখাল, তারপর আর বাঙালি পেছন ফিরে তাকায়নি। এখন বাংলাদেশের মানুষ বছরে গড়ে ৭৮-৮০ হাজার টন চা পান করে বলে জানিয়েছে ‘দি ইকোনমিস্ট’–এর ওয়ার্ল্ড ইন ফিগার। চা এখন বাঙালি সংস্কৃতির অংশ এবং এই অংশ বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে ইতিমধ্যে।
ব্রিটিশরা ভারতে তাদের বিশাল কলোনির বিভিন্ন জায়গায় চা চাষের উদ্যোগ নেয় এবং সফল হয় বিশ শতকের আগেই। চা চাষের এই সফলতাকে কেন্দ্র করে তারা চীনাদের চায়ের বাজারে ভাগ বসিয়েছিল পৃথিবীজুড়ে। বিশ শতকের শুরু থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে চা সংস্কৃতি জোরদার হয়। ধীরে ধীরে চা এতটাই জনপ্রিয়তা লাভ করে যে বাঙালি ‘খাবে’ নাকি ‘পান করবে’— এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুগতে ভুগতে সামাজিকতার অন্য নাম দিয়ে ফেলে চা। ‘চা খেতে আসবেন’ বা ‘বাড়িতে চা খেয়ে যাবেন’ অথবা ‘চলুন, চা খেয়ে আসি’—এ রকম কথা শোনা যায় কান পাতলেই। বাড়ি থেকে শুরু করে অফিসপাড়া, বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন, খেয়াঘাট, হাট-বাজার, শপিং মল, গলির মোড়ে— কোথায় চায়ের আয়োজন নেই, সেটাই প্রশ্ন।
আমাদের দেশে মূলত দুধ চা ও দুধ ছাড়া লাল চা বা র চা খাওয়ার প্রবণতা বেশি। সম্প্রতি এতে যোগ হয়েছে টি ব্যাগ। আছে হরেক রকম গ্রিন ও হারবাল টি। অতি সাম্প্রতিক সময়ে শহুরে চা সংস্কৃতিতে যোগ হয়েছে আইস টি। আর টং দোকানের অর্থোডক্স ব্ল্যাক টি তো আছেই বাঙালি চা সংস্কৃতির প্রত্নপ্রমাণ হিসেবে। আর রেসিপি? তার যথাযথ হিসাব কেউ দিতে পারবে বলে মনে হয় না। এক দুধ চায়েরই কত রেসিপি আছে! তার ওপর এখন মানুষ মালাই চা-ও বানায়। আর এই ঘোর কলিকালে ট্রেন্ড চলছে ক্যারামেল চায়ের। এত দিন দেখে এসেছি, ক্যারামেল পুডিং বানাতেই কাজে লাগে। এখন চা বানাতেও।
কোন খাবারটি কতটা জনপ্রিয় তা বোঝার ভালো উপায় তার বৈচিত্র্যময় রেসিপি। চায়ের যে রাশি রাশি রেসিপি পাওয়া যায় আমাদের রান্নাঘর থেকে শুরু করে টং দোকান হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, তাতেই বোঝা যায় এ দেশের মানুষ চা ফ্রিক। আজ থেকে ১২২ বছর আগে শ্রী গিরিশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘চা প্রস্তুত শিক্ষাপ্রণালী’ নামে একখানি পুস্তিকা লিখেছিলেন, কীভাবে চা তৈরি করতে হবে তার ওপর। ১২২ বছরের মাথায় বাঙালি যে চায়ের রেসিপি তৈরিতে পৃথিবীর সব জাতিকে ছাড়িয়ে যাবে, সেটা কি তিনি জানতে পেরেছিলেন কোনোভাবে?
সে যাই হোক, সাম্প্রতিক ট্রেন্ড হিসেবে চলছে ক্যারামেল চায়ের রমরমা। আপনাদের সেই চায়ের রেসিপি দিয়ে যাই। ট্রেন্ডি থেকে চুমুকে চুমুকে চায়ের চর্চা করুন।
ক্যারামেল চা
উপকরণ
চিনি ৬ চা-চামচ, পানি ৩ কাপ, গুঁড়ো দুধ ৪ টেবিল চামচ, চা-পাতা ৪ চা-চামচ। এই উপকরণ ২ কাপ চায়ের জন্য।
প্রণালি
প্যানে ৩ চা-চামচ চিনি ক্যারামেল করতে হবে। বেশি গাঢ় করা যাবে না। এরপর ৩ কাপ পানি দিয়ে ভালোভাবে মেশাতে হবে। এবার আধা কাপ পানিতে ৪ টেবিল চামচ গুঁড়ো দুধ মিশিয়ে চুলায় ওই ক্যারামেল পানিতে দিয়ে নাড়তে হবে। এরপর ৪ চা-চামচ চা-পাতা দিয়ে চুলার হিট একবার বাড়াতে হবে, আরেকবার কমাতে হবে। এভাবে দুই-তিনবার বলগ এলে নামিয়ে আরও ৩ চা-চামচ চিনি দিয়ে নেড়ে কাপের অনেকটা ওপর থেকে চা ঢালতে হবে। এতে করে অনেকটা ফেনা
ফেনা দেখাবে।
চায়ের ভালোমন্দ
কাজী নজরুল ইসলাম এসেছেন ফরিদপুরে কবি জসীমউদ্দীনের বাড়িতে। জসীমউদ্দীন কলকাতা থেকে আসার সময় সঙ্গে নিয়ে আসেন চা-পাতা। বাড়িতে এসেই তিনি অন্দরমহলে চায়ের রেসিপি জানিয়ে বলে গেলেন, কাজীদাকে সময়মতো চা দিতে হবে। অনেকক্ষণ গল্প হওয়ার পর অন্দরমহল থেকে চা এল। নজরুল ইসলাম চায়ে চুমুক দিলেন। জসীমউদ্দীন ভয়ে ভয়ে জানতে চাইলেন, চা কেমন হয়েছে? নজরুল ইসলাম জানালেন, ভালোই হয়েছে, তবে লবণ আর ঝালটা একটু চড়া।
বিশ শতকের শুরুতে বাঙালির চা পানের গল্প এমনই। তবে ওই সময় থেকে বাঙালি চায়ে চুমুক দেওয়া শুরু করে সকাল, বিকেল, সন্ধ্যা কিংবা রাতে। এর পেছনে ‘গভীর ষড়যন্ত্রের হাত’ ছিল ব্রিটিশদের। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে ব্রিটিশরা বাঙালিদের সেই যে চা খাওয়ানো শেখাল, তারপর আর বাঙালি পেছন ফিরে তাকায়নি। এখন বাংলাদেশের মানুষ বছরে গড়ে ৭৮-৮০ হাজার টন চা পান করে বলে জানিয়েছে ‘দি ইকোনমিস্ট’–এর ওয়ার্ল্ড ইন ফিগার। চা এখন বাঙালি সংস্কৃতির অংশ এবং এই অংশ বেশ শক্তিশালী হয়ে উঠেছে ইতিমধ্যে।
ব্রিটিশরা ভারতে তাদের বিশাল কলোনির বিভিন্ন জায়গায় চা চাষের উদ্যোগ নেয় এবং সফল হয় বিশ শতকের আগেই। চা চাষের এই সফলতাকে কেন্দ্র করে তারা চীনাদের চায়ের বাজারে ভাগ বসিয়েছিল পৃথিবীজুড়ে। বিশ শতকের শুরু থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে চা সংস্কৃতি জোরদার হয়। ধীরে ধীরে চা এতটাই জনপ্রিয়তা লাভ করে যে বাঙালি ‘খাবে’ নাকি ‘পান করবে’— এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ভুগতে ভুগতে সামাজিকতার অন্য নাম দিয়ে ফেলে চা। ‘চা খেতে আসবেন’ বা ‘বাড়িতে চা খেয়ে যাবেন’ অথবা ‘চলুন, চা খেয়ে আসি’—এ রকম কথা শোনা যায় কান পাতলেই। বাড়ি থেকে শুরু করে অফিসপাড়া, বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন, খেয়াঘাট, হাট-বাজার, শপিং মল, গলির মোড়ে— কোথায় চায়ের আয়োজন নেই, সেটাই প্রশ্ন।
আমাদের দেশে মূলত দুধ চা ও দুধ ছাড়া লাল চা বা র চা খাওয়ার প্রবণতা বেশি। সম্প্রতি এতে যোগ হয়েছে টি ব্যাগ। আছে হরেক রকম গ্রিন ও হারবাল টি। অতি সাম্প্রতিক সময়ে শহুরে চা সংস্কৃতিতে যোগ হয়েছে আইস টি। আর টং দোকানের অর্থোডক্স ব্ল্যাক টি তো আছেই বাঙালি চা সংস্কৃতির প্রত্নপ্রমাণ হিসেবে। আর রেসিপি? তার যথাযথ হিসাব কেউ দিতে পারবে বলে মনে হয় না। এক দুধ চায়েরই কত রেসিপি আছে! তার ওপর এখন মানুষ মালাই চা-ও বানায়। আর এই ঘোর কলিকালে ট্রেন্ড চলছে ক্যারামেল চায়ের। এত দিন দেখে এসেছি, ক্যারামেল পুডিং বানাতেই কাজে লাগে। এখন চা বানাতেও।
কোন খাবারটি কতটা জনপ্রিয় তা বোঝার ভালো উপায় তার বৈচিত্র্যময় রেসিপি। চায়ের যে রাশি রাশি রেসিপি পাওয়া যায় আমাদের রান্নাঘর থেকে শুরু করে টং দোকান হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, তাতেই বোঝা যায় এ দেশের মানুষ চা ফ্রিক। আজ থেকে ১২২ বছর আগে শ্রী গিরিশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ‘চা প্রস্তুত শিক্ষাপ্রণালী’ নামে একখানি পুস্তিকা লিখেছিলেন, কীভাবে চা তৈরি করতে হবে তার ওপর। ১২২ বছরের মাথায় বাঙালি যে চায়ের রেসিপি তৈরিতে পৃথিবীর সব জাতিকে ছাড়িয়ে যাবে, সেটা কি তিনি জানতে পেরেছিলেন কোনোভাবে?
সে যাই হোক, সাম্প্রতিক ট্রেন্ড হিসেবে চলছে ক্যারামেল চায়ের রমরমা। আপনাদের সেই চায়ের রেসিপি দিয়ে যাই। ট্রেন্ডি থেকে চুমুকে চুমুকে চায়ের চর্চা করুন।
ক্যারামেল চা
উপকরণ
চিনি ৬ চা-চামচ, পানি ৩ কাপ, গুঁড়ো দুধ ৪ টেবিল চামচ, চা-পাতা ৪ চা-চামচ। এই উপকরণ ২ কাপ চায়ের জন্য।
প্রণালি
প্যানে ৩ চা-চামচ চিনি ক্যারামেল করতে হবে। বেশি গাঢ় করা যাবে না। এরপর ৩ কাপ পানি দিয়ে ভালোভাবে মেশাতে হবে। এবার আধা কাপ পানিতে ৪ টেবিল চামচ গুঁড়ো দুধ মিশিয়ে চুলায় ওই ক্যারামেল পানিতে দিয়ে নাড়তে হবে। এরপর ৪ চা-চামচ চা-পাতা দিয়ে চুলার হিট একবার বাড়াতে হবে, আরেকবার কমাতে হবে। এভাবে দুই-তিনবার বলগ এলে নামিয়ে আরও ৩ চা-চামচ চিনি দিয়ে নেড়ে কাপের অনেকটা ওপর থেকে চা ঢালতে হবে। এতে করে অনেকটা ফেনা
ফেনা দেখাবে।
চায়ের ভালোমন্দ
দিগন্তবিস্তৃত ধানখেতের মাথার ওপর নীল আকাশে উঁকি দেবে সাদা মেঘ। শরৎকাল বলে ভুল হতে পারে। ভুল ভাঙলে দেখতে পাবেন, মেঘের ভেলা সূর্যের আলোয় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে হয়ে উঠছে গোলাপি কিংবা লাল। বুঝবেন, আপনি শরতের সাদা মেঘ নয়, দেখছেন তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
২ দিন আগেকোনো কিছু ওপর থেকে নিচে পড়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে। স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে আমরা সবাই এ বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলোতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্র কাজ করে না। অর্থাৎ সেসব জায়গায় কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। যেতে চান সেই সব জায়গায়?
২ দিন আগেশীত, বসন্ত আর বর্ষায় বাংলার নীল নদ সারির রূপ বদলে ফেলে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে দক্ষ মাঝিরাও ভয়ে ভয়ে বইঠা চালান। আর শীতে সারি নদীর নীল পানি দেয় অপার্থিব জগতের খোঁজ। নদীটি ধরে কিছুদূর উজান বাইলেই পাওয়া যাবে লালাখাল জিরো পয়েন্ট।
২ দিন আগেভ্রমণকালে রোগবালাই থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী না হলে ভ্রমণের আনন্দ মাঠে মারা যেতে পারে। ভ্রমণের সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেছে নিতে পারেন কিছু উপায়।
২ দিন আগে