রিক্তা রিচি, ঢাকা
বনলতা সেন চুলের যত্নে কী করতেন, কবি সে বিষয়ে কিছু বলেননি। তাই সেই টোটকার কথা আমরা জানি না। কিন্তু যুগ যুগ ধরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে যেটা জেনেছি সেটা হলো, ঘন কালো, ঝলমলে, প্রাণবন্ত ও সুন্দর চুলের জন্য যত্ন চাই। যত্নহীন যেমন গাছ বাঁচে না, তেমনি চুলও টিকে থাকে না।
সাধারণত একটি চুলের গড় আয়ু দুই থেকে পাঁচ বছর। কেউ কেউ বলেন আরও কম। এরপর চুল এমনিতেই ঝরে যায়। চ্যালেঞ্জের বিষয় হলো চুল পড়ার পাশাপাশি নতুন চুল গজানো। নতুন চুল গজালে চুল পড়লেও মাথায় চুলের পরিমাণ ঠিক থাকে। চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস মেনে চলতে হয়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ঘুম, দুশ্চিন্তাহীন জীবন, যত্নে ভালো পণ্যের ব্যবহার ইত্যাদি সুন্দর চুলের সঙ্গে যুক্ত।
১. স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া
চুলের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে সবার আগে আসে খাদ্যাভ্যাস। কিছু বিশেষ খাবার চুলের যত্নে বেশ সহায়ক—
ডিম
প্রোটিন ও বায়োটিনের খুব ভালো উৎস হলো ডিম। চুল ভালো রাখার জন্য এ দুই উপাদান খুব গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ না করা হলে চুলের স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায়। অতিরিক্ত চুল পড়ে। প্রোটিন ও বায়োটিন ছাড়াও ডিমে আছে জিংক, সেলেনিয়াম এবং চুলের জন্য উপকারী পুষ্টি উপাদান। তাই চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খাদ্যতালিকায় ডিম রাখুন।
বেরি তথা জাম
স্ট্রবেরি, ব্ল্যাকবেরি ইত্যাদি চুলের বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে সাহায্য করে। এ ধরনের ফলে আছে ভিটামিন সি, অ্যান্টি অক্সিডেন্টসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি দূর করে। এক কাপ স্ট্রবেরিতে ১৪৪ গ্রাম ভিটামিন সি থাকে, যা প্রতিদিনের ভিটামিন সি-এর চাহিদার ১৪১ শতাংশ পর্যন্ত পূরণ করে। এ ছাড়া অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ফ্রি র্যাডিকেলের হাত থেকে ত্বককেও রক্ষা করে।
পালং শাক
আমাদের খুব পরিচিত পালং শাক। এতে রয়েছে উপকারী উপাদান, যেমন ফোলেট, আয়রন, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি। এগুলো দ্রুত চুলের বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে। ভিটামিন এ ত্বকের গ্রন্থিতে সিবাম উৎপাদন করতে সহায়তা করে। এতে মাথার ত্বক সতেজ থাকে। এক কাপ বা ৩০ গ্রাম পালং শাক ভিটামিন এ-এর দৈনিক চাহিদার ৫৪ শতাংশ পূরণ করে। পালং শাকে উচ্চ পরিমাণে আয়রন আছে। এটি চুলের বৃদ্ধিতে উপকারী ভূমিকা রাখে।
তৈলাক্ত মাছ
সব ধরনের তৈলাক্ত মাছ চুলের জন্য ভীষণ উপকারী। স্যামন, রুই, কাতলাসহ ছোট-বড় সব মাছ খাদ্যতালিকায় রাখুন। কারণ, মাছে আছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। এটি চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তৈলাক্ত মাছে আরও আছে প্রোটিন, সেলেনিয়াম, ভিটামিন ডি৩, ভিটামিন বি এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। এগুলো চুল ভালো রাখে। চুলে প্রাণ ফেরায়।
মিষ্টি আলু
মিষ্টি আলুতে থাকে বিটা ক্যারোটিন। শরীর বিটা ক্যারোটিনকে ভেঙে ভিটামিন এ-তে রূপান্তর করে। বিটা ক্যারোটিন ও ভিটামিন এ চুলের জন্য উপকারী। যদি চুল পড়া কমাতে চান, তাহলে খাদ্যতালিকায় মিষ্টি আলু রাখুন।
বাদাম
চীনাবাদাম, কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম ইত্যাদি সব ধরনের বাদাম চুল ভালো রাখতে সহায়তা করে। বাদামে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন বি, ভিটামিন ই, জিংক এবং প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড। এক আউন্স বা ২৮ গ্রাম কাঠবাদাম দৈনিক চাহিদার ৩৭ শতাংশ পূরণ করে। রোজ বাদাম খেলে চুল তো ভালো থাকেই। সেই সঙ্গে হার্ট ভালো থাকে।
বীজ
বিভিন্ন ধরনের বিচি ও বীজ খাদ্যতালিকায় রাখুন। এগুলো চুল পড়া বন্ধ করে এবং চুলে পুষ্টি জোগায়। বিচি ও বীজে থাকে চুলের জন্য উপকারী ভিটামিন ই, জিংক ও সেলেনিয়াম। মটরশুঁটি, শিমের বিচিসহ এ জাতীয় খাবারেও পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান থাকে। থাকে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। এ উপাদানগুলো চুলের ভেঙে যাওয়া রোধ করে এবং চুলের বৃদ্ধি অব্যাহত রাখে।
মাংস
চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সপ্তাহে নির্দিষ্ট পরিমাণে মাংস খান। কারণ, এতে আছে উচ্চ পরিমাণে প্রোটিন। আর প্রোটিন খেলে চুল শক্ত ও মজবুত থাকে। মাংস খেলে চুলের ফলিকলগুলো ভালো থাকে।
২. চুলের যত্নে ঘরোয়া হেয়ার প্যাক
চুলের যত্নে ঘরোয়া কিছু হেয়ার প্যাক ভীষণ কাজে দেয়—
মেথি পেস্ট
মেথি চুলের জন্য উপকারী। এতে শর্করা, প্রোটিন, চর্বি, আয়রন, ম্যাংগানিজ, কপার, ম্যাগনেশিয়াম আছে। এতে আরও আছে বায়োটিন, ফোলেট, সেলেনিয়াম, জিংক। এই উপাদানগুলো চুলের জন্য উপকারী। মেথি চুল পড়া কমাতে, নতুন চুল গজাতে কাজ করে। মেথি ও মেথি ভেজানো পানি দুই-ই কাজে লাগে।
সারা রাত মেথি ভিজিয়ে রেখে সকালবেলা পানিটা আরেকটি পাত্রে রেখে দিন। সেই পানি স্প্রে বোতলে ভরে চুলে লাগালে নতুন চুল গজায়। চুল ভালো থাকে। মেথি পেস্ট করে প্রতি সপ্তাহে একদিন মাথায় লাগালে চুলের গোড়া শক্ত হয়। চুল পড়া বন্ধ হয় এবং মাথায় নতুন চুল গজায়।
ডিমের হেয়ার প্যাক
ডিম চুল ভালো রাখে। চুল সিল্কি ও ঝরঝরে করতে ডিমের জুড়ি নেই। একটি ডিমের সঙ্গে এক কাপ দুধ, দুই টেবিল চামচ লেবুর রস এবং দুই টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ মাথার ত্বকে লাগিয়ে নিন। শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে ২০ মিনিট ঢেকে রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাক চুলের বৃদ্ধি ঘটায়। চুল পড়া বন্ধ করে।
কলার হেয়ার মাস্ক
কলায় আছে উচ্চ পরিমাণে পটাশিয়াম, প্রাকৃতিক তেল ও ভিটামিন। এ উপাদানগুলো চুল পড়া কমায়। দুটি কলা, এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, এক টেবিল চামচ নারকেল তেল এবং এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে নিন। সবগুলো উপাদান ব্লেন্ড করে প্যাক তৈরি করে নিন। প্যাকটি কিছুক্ষণ রেখে কুসুম গরম পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এ হেয়ার মাস্কটি চুলকে সতেজ করবে, চুলের ড্যামেজ দূর করবে, চুলের খুশকি দূর করবে এবং চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াবে।
দইয়ের হেয়ার মাস্ক
চুল নরম ও সুন্দর রাখতে দইয়ের জুড়ি নেই। চুলে পুষ্টি জোগাতে কাজ করে দই। এক কাপ দইয়ের সঙ্গে এক টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার এবং এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে নিন। হেয়ার মাস্কটি চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এর পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
কারি পাতা ও নারকেল তেলের হেয়ার মাস্ক
কারি পাতা চুলের হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে। চুল কালো করতে এবং অকালে চুল পাকা রোধ করতে সহায়তা করে। ১০ থেকে ১২টি কারি পাতার সঙ্গে দুই টেবিল চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। এই পেস্ট মাথার ত্বকে ও চুলে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিন। এর পর শ্যাম্পু করে নিন। সপ্তাহে দুবার ব্যবহারে ভালো উপকার পাবেন।
ক্যাস্টর অয়েলের মাস্ক
ক্যাস্টর অয়েলে উচ্চ পরিমাণে প্রোটিন আছে। এটি ব্যবহারে খুশকি দূর হয়। চুলের রুক্ষতা দূর করে চুলকে প্রাণবন্ত করে ক্যাস্টর ওয়েল। এর সঙ্গে ডিম মিশিয়ে চুলে লাগাতে পারেন। যাদের চুল কোঁকড়ানো, তারা এই প্যাক লাগাতে পারেন। ডিম ও প্যাক চুল স্ট্রেইট তথা সোজা করতে সাহায্য করে।
ভিটামিন ই ক্যাপের ব্যবহার
ভিটামিন ই-তে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে চুল পড়া বন্ধ করতে সহায়তা করে। ভিটামিন ই-তে টোকোফেরল রয়েছে, যা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এতে আছে অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিইনফ্লামেটরি উপাদান। এগুলো মাথার ত্বক সুস্থ রাখে।
দুটি ভিটামিন ই ক্যাপের সঙ্গে এক টেবিল চামচ আমন্ড তেল, এক টেবিল চামচ নারকেল তেল, এক চা-চামচ ক্যাস্টর অয়েল এবং কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ সারা রাত মাথায় লাগিয়ে রাখুন। সকালে চুল ধুয়ে নিন। সপ্তাহে তিনবার এটি ব্যবহার করলে রুক্ষ চুলে প্রাণ ফিরবে।
৩. চুলে ভালো ব্রাশ ব্যবহার করা
মাথার ত্বকে রক্ত চলাচল ঠিক রাখতে চুলে ভালো ব্রাশ ব্যবহার করুন। যাদের বেশি চুল পড়ে অথবা যাদের চুলে জট লাগে, তারা মোটা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করুন। মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ালে চুল পড়া কমে। চুল ভালো রাখতে প্যাডল ব্রাশের চিরুনি, পিন ব্রাশ, কুইল ব্রাশ, বোর ব্রিশল ব্রাশের চিরুনি কিনতে পারেন।
৪. প্রয়োজনে হট অয়েল ম্যাসাজ
চুলে প্রাণ ফেরাতে হট অয়েল ম্যাসাজ করুন। একটি পাত্রে তেল নিয়ে কুসুম গরম করে নিন। তারপর চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করুন। এতে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে।
৫. নিয়মিত চুলে তেল দেওয়া
মাথার ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে মরা চামড়া থেকে অনেক খুশকি হয়। তাই মাথার ত্বক কোমল ও সতেজ রাখতে তেল ব্যবহারের বিকল্প নেই। সপ্তাহে তিন দিন চুলে তেল দিলে চুল ভালো থাকবে। আপনার মাথায় সহ্য হয়, এমন যেকোনো তেল ব্যবহার করতে পারেন।
৬. ভালো বালিশ ব্যবহার করা
চুল ও ত্বক ভালো রাখতে সিল্কের বালিশ কভার ব্যবহার করার পরামর্শ দেন রূপবিশেষজ্ঞরা। সুতি কভারের বালিশে ঘুমালে ঘষা লেগে চুল নষ্ট হতে পারে। সিল্ক ও সাটিনের বালিশের কভার ব্যবহার করলে চুল ও বালিশের মধ্যে ঘর্ষণ কম হয়। এতে চুলে জট বাঁধা ও ক্ষয় কম হয়।
৭. সঠিক উপায়ে বেণি করা
অনেকে ঘুমানোর আগে শক্ত করে বেণি করেন। এতে চুল ভেঙে যাওয়া কিংবা ঝরে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। বেণি আঁটসাঁটভাবে না করে, কিছুটা হালকাভাবে করতে হবে। এতে চুল কুঁকড়ে যাবে না।
৮. আলতোভাবে চুলে তোয়ালে ব্যবহার করা
গোসলের পর ভেজা চুল তোয়ালে দিয়ে শক্তভাবে না বেঁধে আলতোভাবে বাঁধুন। বেশি শক্ত করে বাঁধলে এবং ভেজা চুল আঁচড়ালে চুল বেশি পড়ে।
৯. হেয়ার স্ট্রেইটনার বেশি বেশি ব্যবহার না করা
আপনি জানেন কি, বেশি বেশি হেয়ার স্ট্রেইটনার ব্যবহার করলে চুল ভেঙে যায়? এ ছাড়া বেশি বেশি হেয়ার স্ট্রেইটনার ব্যবহার করলে চুল পড়া বাড়ে। হেয়ার স্ট্রেইটনার ব্যবহার করলে ধীরে ধীরে চুলের আর্দ্রতা কমে যায়। চুল শুষ্ক হয়ে চুলের আগা ফেটে যায়। চুলে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করলেও চুলের ক্ষতি হয়। অকালে চুল ঝরে পড়ে।
১০. হেয়ার প্রোডাক্ট ঘন ঘন পরিবর্তন না করা
চুল ভালো রাখতে আপনার চুলের জন্য যেসব শ্যাম্পু, কন্ডিশনার ও প্যাক উপকারী, সেগুলো ব্যবহার করুন। তবে দীর্ঘদিন একই পণ্য ব্যবহার করবেন না। কারণ, বয়স, আবহাওয়া ইত্যাদির সঙ্গে সঙ্গে ত্বক ও চুলে পরিবর্তন আসে। মাঝেমধ্যে ভিন্ন ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। তবে আজ এক শ্যাম্পু বা প্যাক, কাল অন্য একটি, পরের দিন আরেকটি পণ্য ব্যবহার করবেন না। ঘন ঘন পণ্য পরিবর্তন করলে চুলের কিউটিকলের ক্ষতি হতে পারে।
১১. হেয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করা
যাদের চুল খুব রুক্ষ, প্রাণহীন তারা অবশ্যই চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন। কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে শ্যাম্পু করার পর। ভুলেও চুলের গোড়ায় কন্ডিশনার লাগাবেন না। কন্ডিশনার লাগাতে হয় চুলে। চুলে কন্ডিশনার লাগানোর পর সঙ্গে সঙ্গে না ধুয়ে ৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ধুতে হবে।
১২. চুলে অ্যালোভেরার ব্যবহার
অ্যালোভেরা প্রাকৃতিকভাবে চুলকে সতেজ, কোমল ও ঝলমলে রাখে। এটি মাথার ত্বকের অ্যালার্জি দূর করে, খুশকি ও রুক্ষতা দূর করে এবং চুল পড়া বন্ধ করে। মাথায় নতুন চুল গজাতে ত্বকে অ্যালোভেরা জেল ঘষতে পারেন। ঘষে ১ ঘণ্টার মতো রেখে ধুয়ে ফেলুন। যেকোনো হেয়ার প্যাকের সঙ্গে অ্যালোভেরার জেল মিশিয়ে নিতে পারেন। যারা নিয়মিত মেহেদি প্যাক ব্যবহার করেন, সেখানেও অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে মাথায় লাগাতে পারেন। একটি পাত্রে অ্যালোভেরার জেল, নারকেল তেল ও অলিভ অয়েল মিশিয়ে, কুসুম গরম করে মাথায় লাগালেও উপকার পাবেন।
১৩. চুলের যত্নে ডিম
ডিম চুল ভালো রাখে। চুল সিল্কি ও ঝরঝরে করতে এর জুড়ি নেই। কারণ, ডিমে আছে প্রোটিন ও বায়োটিন। এ দুই উপাদান চুল ভালো রাখতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। একটি ডিমের সঙ্গে এক কাপ দুধ, দুই টেবিল চামচ লেবুর রস এবং দুই টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ মাথার ত্বকে লাগিয়ে নিন। শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে ২০ মিনিট ঢেকে রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাক চুলের বৃদ্ধি ঘটায়। চুল পড়া বন্ধ করে।
মেথি পেস্ট কিংবা অন্য যেকোনো প্যাকের সঙ্গে ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে লাগাতে পারেন। এতেও দারুণ উপকার পাবেন।
১৪. চুলে পেঁয়াজের ব্যবহার
চুল পড়া কমিয়ে মাথায় নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে পেঁয়াজের রস। কারণ, এতে আছে সালফার। এটি চুল ভালো রাখতে ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। যাদের প্রচুর চুল পড়ে, তাঁরা পেঁয়াজ ব্লেন্ড করে তার রসটুকু মাথার ত্বকে লাগাতে পারেন। লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে চুল ঘন হবে।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের যত্ন
পেঁয়াজ, ডিম, কলা, দই, মসুর ডাল, মেথি ইত্যাদি উপাদানগুলো দিয়ে ঘরোয়া উপায়ে চুলের যত্ন নেওয়া যায়।
পেঁয়াজ ব্লেন্ড করে তার রসটুকু মাথার ত্বকে লাগাতে পারেন। লাগানোর পর ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি নিয়মিত ব্যবহারে চুল ঘন হবে।
মসুর ডালের পানি, মেথির পেস্ট ও ডিম একসঙ্গে মিশিয়ে ৩০ মিনিট চুলে লাগিয়ে রাখুন। এর পর শ্যাম্পু করে ফেলুন।
কলা ও ডিম ব্লেন্ড করে তার সঙ্গে ভিটামিন ই ক্যাপ মিশিয়ে চুলে লাগাতে পারেন।
দই চুল ভালো রাখে। দইয়ের সঙ্গে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে চুলে লাগাতে পারেন। এই প্যাক চুলে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রাখুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন।
দইয়ের সঙ্গে মধু ও ঘৃতকুমারীর জেল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। এই প্যাক চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ৩০-৪০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এর পর কুসুম গরম পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
চুলের জন্য ভালো শ্যাম্পু
টাকা খরচ করে যেসব শ্যাম্পু আমরা কিনি, সেসব শ্যাম্পুতে থাকা বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান চুলের ক্ষতি করে। যেসব শ্যাম্পুতে সোডিয়াম ক্লোরাইড, পলিথিলিন গ্লাইকল, ডাইথেনোসেমিন অথবা ট্রাইএথোলেনিনের মতো উপাদান রয়েছে, সেগুলো চুলের জন্য ভালো নয়। শ্যাম্পু কেনার আগে দেখে নেবেন শ্যাম্পুতে অ্যামোনিয়াম লরেথ সালফেট এবং সোডিয়াম লরেথ সালফেট আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে সে শ্যাম্পু কিনবেন না। কারণ, অ্যামোনিয়াম লরেথ সালফেট এবং সোডিয়াম লরেথ সালফেট চুলের জন্য ক্ষতিকর। শ্যাম্পুতে থাকা প্যারাবিন, ফরমালডিহাইডও চুলের ক্ষতি করে। তাই একটু ভালো ব্র্যান্ডের দামি শ্যাম্পু কিনুন। কম দামি শ্যাম্পুতে বেশি ফেনা হলেও, সেগুলোতে বেশি ক্ষতিকর উপাদান থাকে।
জাফরান হেয়ার অয়েল ব্যবহারের নিয়ম
চুল শক্ত ও মজবুত করে জাফরান হেয়ার অয়েল। এর সঙ্গে নারকেল তেল কিংবা অলিভ অয়েল সামান্য গরম করে মাথার তালুতে ম্যাসাজ করুন। এতে চুলের গোড়ায় রক্ত সঞ্চালন বাড়বে।
রুক্ষ চুলের যত্ন
রুক্ষ চুলের যত্নে সপ্তাহে ৩ দিন চুলে নারকেল তেলের সঙ্গে ভিটামিন ই ক্যাপ ও অলিভ অয়েল মিশিয়ে লাগাতে পারেন। চুলে প্রাণ ফেরাতে ডিম ও দইয়ের জুড়ি নেই। ডিম, দই, কলা একসঙ্গে ব্লেন্ড করে সপ্তাহে একদিন চুলে লাগাতে পারেন। এতে চুলের রুক্ষতা দূর হবে।
ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহারের নিয়ম
ক্যাস্টর অয়েলে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়া, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান আছে। ত্বকের পিএইচ লেভেলের পাশাপাশি মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন করতে সাহায্য করে এটি।
মাথায় ক্যাস্টর অয়েল লাগানোর আগে হাতে গ্লাভস পরে নিন। কয়েক ফোঁটা ক্যাস্টর অয়েল হাতে নিয়ে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করুন। তারপর পুরো চুলে ক্যাস্টর অয়েল লাগিয়ে নিন। তারপর একবার চুল আঁচড়ে নিতে পারেন। একটি শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে চুল ঢেকে নিয়ে দুই ঘণ্টা রেখে দিন। এর পর শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
বনলতা সেন চুলের যত্নে কী করতেন, কবি সে বিষয়ে কিছু বলেননি। তাই সেই টোটকার কথা আমরা জানি না। কিন্তু যুগ যুগ ধরে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে যেটা জেনেছি সেটা হলো, ঘন কালো, ঝলমলে, প্রাণবন্ত ও সুন্দর চুলের জন্য যত্ন চাই। যত্নহীন যেমন গাছ বাঁচে না, তেমনি চুলও টিকে থাকে না।
সাধারণত একটি চুলের গড় আয়ু দুই থেকে পাঁচ বছর। কেউ কেউ বলেন আরও কম। এরপর চুল এমনিতেই ঝরে যায়। চ্যালেঞ্জের বিষয় হলো চুল পড়ার পাশাপাশি নতুন চুল গজানো। নতুন চুল গজালে চুল পড়লেও মাথায় চুলের পরিমাণ ঠিক থাকে। চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস মেনে চলতে হয়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ঘুম, দুশ্চিন্তাহীন জীবন, যত্নে ভালো পণ্যের ব্যবহার ইত্যাদি সুন্দর চুলের সঙ্গে যুক্ত।
১. স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়া
চুলের যত্ন নেওয়ার ক্ষেত্রে সবার আগে আসে খাদ্যাভ্যাস। কিছু বিশেষ খাবার চুলের যত্নে বেশ সহায়ক—
ডিম
প্রোটিন ও বায়োটিনের খুব ভালো উৎস হলো ডিম। চুল ভালো রাখার জন্য এ দুই উপাদান খুব গুরুত্বপূর্ণ। পর্যাপ্ত প্রোটিন গ্রহণ না করা হলে চুলের স্বাস্থ্য খারাপ হয়ে যায়। অতিরিক্ত চুল পড়ে। প্রোটিন ও বায়োটিন ছাড়াও ডিমে আছে জিংক, সেলেনিয়াম এবং চুলের জন্য উপকারী পুষ্টি উপাদান। তাই চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে খাদ্যতালিকায় ডিম রাখুন।
বেরি তথা জাম
স্ট্রবেরি, ব্ল্যাকবেরি ইত্যাদি চুলের বৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে সাহায্য করে। এ ধরনের ফলে আছে ভিটামিন সি, অ্যান্টি অক্সিডেন্টসহ আরও গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট চুলের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি দূর করে। এক কাপ স্ট্রবেরিতে ১৪৪ গ্রাম ভিটামিন সি থাকে, যা প্রতিদিনের ভিটামিন সি-এর চাহিদার ১৪১ শতাংশ পর্যন্ত পূরণ করে। এ ছাড়া অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ফ্রি র্যাডিকেলের হাত থেকে ত্বককেও রক্ষা করে।
পালং শাক
আমাদের খুব পরিচিত পালং শাক। এতে রয়েছে উপকারী উপাদান, যেমন ফোলেট, আয়রন, ভিটামিন এ, ভিটামিন সি। এগুলো দ্রুত চুলের বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে। ভিটামিন এ ত্বকের গ্রন্থিতে সিবাম উৎপাদন করতে সহায়তা করে। এতে মাথার ত্বক সতেজ থাকে। এক কাপ বা ৩০ গ্রাম পালং শাক ভিটামিন এ-এর দৈনিক চাহিদার ৫৪ শতাংশ পূরণ করে। পালং শাকে উচ্চ পরিমাণে আয়রন আছে। এটি চুলের বৃদ্ধিতে উপকারী ভূমিকা রাখে।
তৈলাক্ত মাছ
সব ধরনের তৈলাক্ত মাছ চুলের জন্য ভীষণ উপকারী। স্যামন, রুই, কাতলাসহ ছোট-বড় সব মাছ খাদ্যতালিকায় রাখুন। কারণ, মাছে আছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। এটি চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তৈলাক্ত মাছে আরও আছে প্রোটিন, সেলেনিয়াম, ভিটামিন ডি৩, ভিটামিন বি এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। এগুলো চুল ভালো রাখে। চুলে প্রাণ ফেরায়।
মিষ্টি আলু
মিষ্টি আলুতে থাকে বিটা ক্যারোটিন। শরীর বিটা ক্যারোটিনকে ভেঙে ভিটামিন এ-তে রূপান্তর করে। বিটা ক্যারোটিন ও ভিটামিন এ চুলের জন্য উপকারী। যদি চুল পড়া কমাতে চান, তাহলে খাদ্যতালিকায় মিষ্টি আলু রাখুন।
বাদাম
চীনাবাদাম, কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম ইত্যাদি সব ধরনের বাদাম চুল ভালো রাখতে সহায়তা করে। বাদামে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন বি, ভিটামিন ই, জিংক এবং প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড। এক আউন্স বা ২৮ গ্রাম কাঠবাদাম দৈনিক চাহিদার ৩৭ শতাংশ পূরণ করে। রোজ বাদাম খেলে চুল তো ভালো থাকেই। সেই সঙ্গে হার্ট ভালো থাকে।
বীজ
বিভিন্ন ধরনের বিচি ও বীজ খাদ্যতালিকায় রাখুন। এগুলো চুল পড়া বন্ধ করে এবং চুলে পুষ্টি জোগায়। বিচি ও বীজে থাকে চুলের জন্য উপকারী ভিটামিন ই, জিংক ও সেলেনিয়াম। মটরশুঁটি, শিমের বিচিসহ এ জাতীয় খাবারেও পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান থাকে। থাকে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। এ উপাদানগুলো চুলের ভেঙে যাওয়া রোধ করে এবং চুলের বৃদ্ধি অব্যাহত রাখে।
মাংস
চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সপ্তাহে নির্দিষ্ট পরিমাণে মাংস খান। কারণ, এতে আছে উচ্চ পরিমাণে প্রোটিন। আর প্রোটিন খেলে চুল শক্ত ও মজবুত থাকে। মাংস খেলে চুলের ফলিকলগুলো ভালো থাকে।
২. চুলের যত্নে ঘরোয়া হেয়ার প্যাক
চুলের যত্নে ঘরোয়া কিছু হেয়ার প্যাক ভীষণ কাজে দেয়—
মেথি পেস্ট
মেথি চুলের জন্য উপকারী। এতে শর্করা, প্রোটিন, চর্বি, আয়রন, ম্যাংগানিজ, কপার, ম্যাগনেশিয়াম আছে। এতে আরও আছে বায়োটিন, ফোলেট, সেলেনিয়াম, জিংক। এই উপাদানগুলো চুলের জন্য উপকারী। মেথি চুল পড়া কমাতে, নতুন চুল গজাতে কাজ করে। মেথি ও মেথি ভেজানো পানি দুই-ই কাজে লাগে।
সারা রাত মেথি ভিজিয়ে রেখে সকালবেলা পানিটা আরেকটি পাত্রে রেখে দিন। সেই পানি স্প্রে বোতলে ভরে চুলে লাগালে নতুন চুল গজায়। চুল ভালো থাকে। মেথি পেস্ট করে প্রতি সপ্তাহে একদিন মাথায় লাগালে চুলের গোড়া শক্ত হয়। চুল পড়া বন্ধ হয় এবং মাথায় নতুন চুল গজায়।
ডিমের হেয়ার প্যাক
ডিম চুল ভালো রাখে। চুল সিল্কি ও ঝরঝরে করতে ডিমের জুড়ি নেই। একটি ডিমের সঙ্গে এক কাপ দুধ, দুই টেবিল চামচ লেবুর রস এবং দুই টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ মাথার ত্বকে লাগিয়ে নিন। শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে ২০ মিনিট ঢেকে রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাক চুলের বৃদ্ধি ঘটায়। চুল পড়া বন্ধ করে।
কলার হেয়ার মাস্ক
কলায় আছে উচ্চ পরিমাণে পটাশিয়াম, প্রাকৃতিক তেল ও ভিটামিন। এ উপাদানগুলো চুল পড়া কমায়। দুটি কলা, এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল, এক টেবিল চামচ নারকেল তেল এবং এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে নিন। সবগুলো উপাদান ব্লেন্ড করে প্যাক তৈরি করে নিন। প্যাকটি কিছুক্ষণ রেখে কুসুম গরম পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এ হেয়ার মাস্কটি চুলকে সতেজ করবে, চুলের ড্যামেজ দূর করবে, চুলের খুশকি দূর করবে এবং চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াবে।
দইয়ের হেয়ার মাস্ক
চুল নরম ও সুন্দর রাখতে দইয়ের জুড়ি নেই। চুলে পুষ্টি জোগাতে কাজ করে দই। এক কাপ দইয়ের সঙ্গে এক টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার এবং এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে নিন। হেয়ার মাস্কটি চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এর পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
কারি পাতা ও নারকেল তেলের হেয়ার মাস্ক
কারি পাতা চুলের হারিয়ে যাওয়া সৌন্দর্য ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে। চুল কালো করতে এবং অকালে চুল পাকা রোধ করতে সহায়তা করে। ১০ থেকে ১২টি কারি পাতার সঙ্গে দুই টেবিল চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। এই পেস্ট মাথার ত্বকে ও চুলে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিন। এর পর শ্যাম্পু করে নিন। সপ্তাহে দুবার ব্যবহারে ভালো উপকার পাবেন।
ক্যাস্টর অয়েলের মাস্ক
ক্যাস্টর অয়েলে উচ্চ পরিমাণে প্রোটিন আছে। এটি ব্যবহারে খুশকি দূর হয়। চুলের রুক্ষতা দূর করে চুলকে প্রাণবন্ত করে ক্যাস্টর ওয়েল। এর সঙ্গে ডিম মিশিয়ে চুলে লাগাতে পারেন। যাদের চুল কোঁকড়ানো, তারা এই প্যাক লাগাতে পারেন। ডিম ও প্যাক চুল স্ট্রেইট তথা সোজা করতে সাহায্য করে।
ভিটামিন ই ক্যাপের ব্যবহার
ভিটামিন ই-তে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এটি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমিয়ে চুল পড়া বন্ধ করতে সহায়তা করে। ভিটামিন ই-তে টোকোফেরল রয়েছে, যা চুলের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এতে আছে অ্যান্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টিইনফ্লামেটরি উপাদান। এগুলো মাথার ত্বক সুস্থ রাখে।
দুটি ভিটামিন ই ক্যাপের সঙ্গে এক টেবিল চামচ আমন্ড তেল, এক টেবিল চামচ নারকেল তেল, এক চা-চামচ ক্যাস্টর অয়েল এবং কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ সারা রাত মাথায় লাগিয়ে রাখুন। সকালে চুল ধুয়ে নিন। সপ্তাহে তিনবার এটি ব্যবহার করলে রুক্ষ চুলে প্রাণ ফিরবে।
৩. চুলে ভালো ব্রাশ ব্যবহার করা
মাথার ত্বকে রক্ত চলাচল ঠিক রাখতে চুলে ভালো ব্রাশ ব্যবহার করুন। যাদের বেশি চুল পড়ে অথবা যাদের চুলে জট লাগে, তারা মোটা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করুন। মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ালে চুল পড়া কমে। চুল ভালো রাখতে প্যাডল ব্রাশের চিরুনি, পিন ব্রাশ, কুইল ব্রাশ, বোর ব্রিশল ব্রাশের চিরুনি কিনতে পারেন।
৪. প্রয়োজনে হট অয়েল ম্যাসাজ
চুলে প্রাণ ফেরাতে হট অয়েল ম্যাসাজ করুন। একটি পাত্রে তেল নিয়ে কুসুম গরম করে নিন। তারপর চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করুন। এতে রক্ত সঞ্চালন বাড়বে।
৫. নিয়মিত চুলে তেল দেওয়া
মাথার ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে মরা চামড়া থেকে অনেক খুশকি হয়। তাই মাথার ত্বক কোমল ও সতেজ রাখতে তেল ব্যবহারের বিকল্প নেই। সপ্তাহে তিন দিন চুলে তেল দিলে চুল ভালো থাকবে। আপনার মাথায় সহ্য হয়, এমন যেকোনো তেল ব্যবহার করতে পারেন।
৬. ভালো বালিশ ব্যবহার করা
চুল ও ত্বক ভালো রাখতে সিল্কের বালিশ কভার ব্যবহার করার পরামর্শ দেন রূপবিশেষজ্ঞরা। সুতি কভারের বালিশে ঘুমালে ঘষা লেগে চুল নষ্ট হতে পারে। সিল্ক ও সাটিনের বালিশের কভার ব্যবহার করলে চুল ও বালিশের মধ্যে ঘর্ষণ কম হয়। এতে চুলে জট বাঁধা ও ক্ষয় কম হয়।
৭. সঠিক উপায়ে বেণি করা
অনেকে ঘুমানোর আগে শক্ত করে বেণি করেন। এতে চুল ভেঙে যাওয়া কিংবা ঝরে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। বেণি আঁটসাঁটভাবে না করে, কিছুটা হালকাভাবে করতে হবে। এতে চুল কুঁকড়ে যাবে না।
৮. আলতোভাবে চুলে তোয়ালে ব্যবহার করা
গোসলের পর ভেজা চুল তোয়ালে দিয়ে শক্তভাবে না বেঁধে আলতোভাবে বাঁধুন। বেশি শক্ত করে বাঁধলে এবং ভেজা চুল আঁচড়ালে চুল বেশি পড়ে।
৯. হেয়ার স্ট্রেইটনার বেশি বেশি ব্যবহার না করা
আপনি জানেন কি, বেশি বেশি হেয়ার স্ট্রেইটনার ব্যবহার করলে চুল ভেঙে যায়? এ ছাড়া বেশি বেশি হেয়ার স্ট্রেইটনার ব্যবহার করলে চুল পড়া বাড়ে। হেয়ার স্ট্রেইটনার ব্যবহার করলে ধীরে ধীরে চুলের আর্দ্রতা কমে যায়। চুল শুষ্ক হয়ে চুলের আগা ফেটে যায়। চুলে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করলেও চুলের ক্ষতি হয়। অকালে চুল ঝরে পড়ে।
১০. হেয়ার প্রোডাক্ট ঘন ঘন পরিবর্তন না করা
চুল ভালো রাখতে আপনার চুলের জন্য যেসব শ্যাম্পু, কন্ডিশনার ও প্যাক উপকারী, সেগুলো ব্যবহার করুন। তবে দীর্ঘদিন একই পণ্য ব্যবহার করবেন না। কারণ, বয়স, আবহাওয়া ইত্যাদির সঙ্গে সঙ্গে ত্বক ও চুলে পরিবর্তন আসে। মাঝেমধ্যে ভিন্ন ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। তবে আজ এক শ্যাম্পু বা প্যাক, কাল অন্য একটি, পরের দিন আরেকটি পণ্য ব্যবহার করবেন না। ঘন ঘন পণ্য পরিবর্তন করলে চুলের কিউটিকলের ক্ষতি হতে পারে।
১১. হেয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করা
যাদের চুল খুব রুক্ষ, প্রাণহীন তারা অবশ্যই চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করবেন। কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে শ্যাম্পু করার পর। ভুলেও চুলের গোড়ায় কন্ডিশনার লাগাবেন না। কন্ডিশনার লাগাতে হয় চুলে। চুলে কন্ডিশনার লাগানোর পর সঙ্গে সঙ্গে না ধুয়ে ৫ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে চুল ধুতে হবে।
১২. চুলে অ্যালোভেরার ব্যবহার
অ্যালোভেরা প্রাকৃতিকভাবে চুলকে সতেজ, কোমল ও ঝলমলে রাখে। এটি মাথার ত্বকের অ্যালার্জি দূর করে, খুশকি ও রুক্ষতা দূর করে এবং চুল পড়া বন্ধ করে। মাথায় নতুন চুল গজাতে ত্বকে অ্যালোভেরা জেল ঘষতে পারেন। ঘষে ১ ঘণ্টার মতো রেখে ধুয়ে ফেলুন। যেকোনো হেয়ার প্যাকের সঙ্গে অ্যালোভেরার জেল মিশিয়ে নিতে পারেন। যারা নিয়মিত মেহেদি প্যাক ব্যবহার করেন, সেখানেও অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে মাথায় লাগাতে পারেন। একটি পাত্রে অ্যালোভেরার জেল, নারকেল তেল ও অলিভ অয়েল মিশিয়ে, কুসুম গরম করে মাথায় লাগালেও উপকার পাবেন।
১৩. চুলের যত্নে ডিম
ডিম চুল ভালো রাখে। চুল সিল্কি ও ঝরঝরে করতে এর জুড়ি নেই। কারণ, ডিমে আছে প্রোটিন ও বায়োটিন। এ দুই উপাদান চুল ভালো রাখতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে। একটি ডিমের সঙ্গে এক কাপ দুধ, দুই টেবিল চামচ লেবুর রস এবং দুই টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ মাথার ত্বকে লাগিয়ে নিন। শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে ২০ মিনিট ঢেকে রেখে ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাক চুলের বৃদ্ধি ঘটায়। চুল পড়া বন্ধ করে।
মেথি পেস্ট কিংবা অন্য যেকোনো প্যাকের সঙ্গে ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে লাগাতে পারেন। এতেও দারুণ উপকার পাবেন।
১৪. চুলে পেঁয়াজের ব্যবহার
চুল পড়া কমিয়ে মাথায় নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে পেঁয়াজের রস। কারণ, এতে আছে সালফার। এটি চুল ভালো রাখতে ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। যাদের প্রচুর চুল পড়ে, তাঁরা পেঁয়াজ ব্লেন্ড করে তার রসটুকু মাথার ত্বকে লাগাতে পারেন। লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে চুল ঘন হবে।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুলের যত্ন
পেঁয়াজ, ডিম, কলা, দই, মসুর ডাল, মেথি ইত্যাদি উপাদানগুলো দিয়ে ঘরোয়া উপায়ে চুলের যত্ন নেওয়া যায়।
পেঁয়াজ ব্লেন্ড করে তার রসটুকু মাথার ত্বকে লাগাতে পারেন। লাগানোর পর ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি নিয়মিত ব্যবহারে চুল ঘন হবে।
মসুর ডালের পানি, মেথির পেস্ট ও ডিম একসঙ্গে মিশিয়ে ৩০ মিনিট চুলে লাগিয়ে রাখুন। এর পর শ্যাম্পু করে ফেলুন।
কলা ও ডিম ব্লেন্ড করে তার সঙ্গে ভিটামিন ই ক্যাপ মিশিয়ে চুলে লাগাতে পারেন।
দই চুল ভালো রাখে। দইয়ের সঙ্গে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে চুলে লাগাতে পারেন। এই প্যাক চুলে লাগিয়ে ১৫-২০ মিনিট রাখুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন।
দইয়ের সঙ্গে মধু ও ঘৃতকুমারীর জেল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। এই প্যাক চুলের গোড়ায় লাগিয়ে ৩০-৪০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এর পর কুসুম গরম পানি দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
চুলের জন্য ভালো শ্যাম্পু
টাকা খরচ করে যেসব শ্যাম্পু আমরা কিনি, সেসব শ্যাম্পুতে থাকা বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান চুলের ক্ষতি করে। যেসব শ্যাম্পুতে সোডিয়াম ক্লোরাইড, পলিথিলিন গ্লাইকল, ডাইথেনোসেমিন অথবা ট্রাইএথোলেনিনের মতো উপাদান রয়েছে, সেগুলো চুলের জন্য ভালো নয়। শ্যাম্পু কেনার আগে দেখে নেবেন শ্যাম্পুতে অ্যামোনিয়াম লরেথ সালফেট এবং সোডিয়াম লরেথ সালফেট আছে কিনা। যদি থাকে তাহলে সে শ্যাম্পু কিনবেন না। কারণ, অ্যামোনিয়াম লরেথ সালফেট এবং সোডিয়াম লরেথ সালফেট চুলের জন্য ক্ষতিকর। শ্যাম্পুতে থাকা প্যারাবিন, ফরমালডিহাইডও চুলের ক্ষতি করে। তাই একটু ভালো ব্র্যান্ডের দামি শ্যাম্পু কিনুন। কম দামি শ্যাম্পুতে বেশি ফেনা হলেও, সেগুলোতে বেশি ক্ষতিকর উপাদান থাকে।
জাফরান হেয়ার অয়েল ব্যবহারের নিয়ম
চুল শক্ত ও মজবুত করে জাফরান হেয়ার অয়েল। এর সঙ্গে নারকেল তেল কিংবা অলিভ অয়েল সামান্য গরম করে মাথার তালুতে ম্যাসাজ করুন। এতে চুলের গোড়ায় রক্ত সঞ্চালন বাড়বে।
রুক্ষ চুলের যত্ন
রুক্ষ চুলের যত্নে সপ্তাহে ৩ দিন চুলে নারকেল তেলের সঙ্গে ভিটামিন ই ক্যাপ ও অলিভ অয়েল মিশিয়ে লাগাতে পারেন। চুলে প্রাণ ফেরাতে ডিম ও দইয়ের জুড়ি নেই। ডিম, দই, কলা একসঙ্গে ব্লেন্ড করে সপ্তাহে একদিন চুলে লাগাতে পারেন। এতে চুলের রুক্ষতা দূর হবে।
ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহারের নিয়ম
ক্যাস্টর অয়েলে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়া, অ্যান্টি-ফাঙ্গাল উপাদান আছে। ত্বকের পিএইচ লেভেলের পাশাপাশি মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন করতে সাহায্য করে এটি।
মাথায় ক্যাস্টর অয়েল লাগানোর আগে হাতে গ্লাভস পরে নিন। কয়েক ফোঁটা ক্যাস্টর অয়েল হাতে নিয়ে চুলের গোড়ায় ম্যাসাজ করুন। তারপর পুরো চুলে ক্যাস্টর অয়েল লাগিয়ে নিন। তারপর একবার চুল আঁচড়ে নিতে পারেন। একটি শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে চুল ঢেকে নিয়ে দুই ঘণ্টা রেখে দিন। এর পর শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন।
দিগন্তবিস্তৃত ধানখেতের মাথার ওপর নীল আকাশে উঁকি দেবে সাদা মেঘ। শরৎকাল বলে ভুল হতে পারে। ভুল ভাঙলে দেখতে পাবেন, মেঘের ভেলা সূর্যের আলোয় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে হয়ে উঠছে গোলাপি কিংবা লাল। বুঝবেন, আপনি শরতের সাদা মেঘ নয়, দেখছেন তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
৩ দিন আগেকোনো কিছু ওপর থেকে নিচে পড়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে। স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে আমরা সবাই এ বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলোতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্র কাজ করে না। অর্থাৎ সেসব জায়গায় কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। যেতে চান সেই সব জায়গায়?
৩ দিন আগেশীত, বসন্ত আর বর্ষায় বাংলার নীল নদ সারির রূপ বদলে ফেলে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে দক্ষ মাঝিরাও ভয়ে ভয়ে বইঠা চালান। আর শীতে সারি নদীর নীল পানি দেয় অপার্থিব জগতের খোঁজ। নদীটি ধরে কিছুদূর উজান বাইলেই পাওয়া যাবে লালাখাল জিরো পয়েন্ট।
৩ দিন আগেভ্রমণকালে রোগবালাই থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী না হলে ভ্রমণের আনন্দ মাঠে মারা যেতে পারে। ভ্রমণের সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেছে নিতে পারেন কিছু উপায়।
৩ দিন আগে