রজত কান্তি রায়, ঢাকা
সেই সব স্বামী পুণ্যবান, যাঁরা কলাপাতায় ঘি দিয়ে মাখা, মৌরালা বা মলা মাছের ঝোল আর নলিতা বা পাটশাক দিয়ে খেতে পারেন গরমাগরম ভাত। আমার কথা নয়। বাংলা ভাষার আদি কবিদের একজন বলেছেন,
‘ওগগরা ভত্তা রম্ভঅ পত্তা গাইক ঘিত্তা দুগ্ধ সজুক্তা
মৌইলি মচ্ছা নলিতা গচ্ছা দিজ্জই কান্তা খা(ই) পুনবন্তা।’
-চর্যাপদ
বরাবরই সুখী বাঙালি দম্পতির ছবি যখন আঁকা হয়েছে, গদ্যে, পদ্যে কিংবা ক্যানভাসে, সেটা ছিল খেতে বসা কোনো পুরুষের ছবি। সামনে অনেক পদের তরকারি, কাঁসার থালায় ভাত, পাশ থেকে একজন নারী বাতাস করছেন—এ রকম একটা ছবি আমাদের চোখেও ভাসে। এই যে থরে থরে সাজানো খাবার, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হিসেবে কিন্তু থাকত ছোট মাছের বিভিন্ন পদ। তা সে ভাজাই হোক বা চচ্চড়ি অথবা অম্বলের অংশ।
গরম ভাতে কড়কড়ে করে ভাজা পুঁটি, খলশে, মলা কিংবা কুঁচো চিংড়ির বড়া অথবা ঝিরিঝিরি করে কাটা আলু দিয়ে রান্না করা কাঁচকি মাছের চচ্চড়ি! এ শুধু অক্ষরের পর অক্ষর সাজিয়ে বর্ণনা লেখা নয়। এ হলো স্বাদযাপনের দিনলিপি। নাহ, বাঙালির খাবারের ভান্ডার খুব ছোট নয়, যদি খেতে জানেন। যদি জানেন, মসলার বাহুল্য ছাড়া শুধু কাঁচা মরিচের ফালি, হালকা জিরা ও স্বাদমতো লবণ দিয়েও রান্না করে ফেলা যায় অমৃতসম কাঁচকি মাছ। আর পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, লবণ, তেলে মেখে হাত ধোয়া পানিতে রান্না করা মৌরালা মাছের চচ্চড়ি কেউ যদি না খেয়ে থাকেন, তাহলে বাঙালি স্বাদ নিয়ে তাঁর কথা না বলাই ভালো।
কতভাবে ছোট মাছ খাওয়া হয় এ দেশে তার কোনো হিসাব নেই। সম্ভবও নয় সে হিসাব বের করা। তার আগে বলে নিই, ছোট মাছ কোনগুলো। মৌরালা বা মলা, ডানকিনে, পুঁটি, কাঁচকি, খলশে, কুঁচো চিংড়ি, দেশি চাঁদা—সাধারণত এগুলোই ছোট মাছ হিসেবে পরিচিত। এ মাছগুলো খাওয়া যায় ভাজি করে, চচ্চড়ি করে, অন্য কোনো সবজির সঙ্গে মিশিয়ে কিংবা খই অথবা বেসনের সঙ্গে মিশিয়ে বড়া বানিয়ে। যে রেসিপিতেই আপনি রাঁধুন না কেন, ছোট মাছ উতরে যাবে। তবে হ্যাঁ, ভুলেও এতে আদা আর রসুন দেবেন না। তাতে স্বাদ পাবেন না।
যে বিষয়টি বলে রাখা ভালো, সেটি হলো, প্রতিটি খাবারের একটি করে সেট মেন্যু থাকে। তার সঙ্গে মিলিয়ে না খেলে পুরো স্বাদ পাওয়া যায় না কোনো খাবারের। যেমন, চায়ের সঙ্গে বিস্কুট, পরোটার সঙ্গে ভুনা মাংস কিংবা লুচির সঙ্গে পাঁচফোড়নে রান্না করা সবজি অথবা পায়েস কিংবা পানের সঙ্গে চুন-সুপারি, বিরিয়ানির সঙ্গে ঢাকাই বোরহানি। জুটি ধরেই চলে সব। নইলে স্বাদে মেলে না। ছোট মাছ হলো সম্পর্কে শ্যালিকার মতো। সব ধরনের খুনসুটি চলে তার সঙ্গে। শুক্তো, মুগের ডাল, খেসারির ডালের বড়া আর ঘণ্টর মতো নিরামিষ পদের পাশে ছাঁকা তেলে ভাজা মলা মাছ রেখে দিন। একটা দারুণ কম্বিনেশন তৈরি হবে। কিংবা শুধুই সরু করে কাটা আলু দিয়ে কাঁচকি মাছের তরকারির সঙ্গে ঘন মসুর ডাল। ব্যস, আর কিছুর দরকার নেই।
উত্তরবঙ্গের সিগনেচার খাবার প্যালকা। অনেক রকম শাকের মিশেলে বানানো হয় এটি। প্যালকার সঙ্গে খেসারির ডালের বড়া, ছোট ছোট আলু ভাজা আর পুঁটি অথবা ডানকিনে মাছের কড়কড়ে ভাজা। একবার যদি খেয়ে থাকেন জিবে লেগে থাকবে বহুকাল। মহেশচন্দ্র রায় তাঁর বিখ্যাত ভাওয়াইয়া গান ‘কানিছাত গাড়িনু আকাশি আকালি’তে এক অনির্বচনীয় রেসিপির কথা বলেছেন ডানকিনে বা ডাইরকা মাছ ভাজার।
‘শাইল ডাইরকা মাছোতে জ্বালা আকালি
থুস থুস করিয়া দিইম পিঁয়াজ ফালি
ফাইক করি ছাঁচি তেল উহাতে ঢালিয়া
তুলিম মচো মচো রে বন্ধুয়া
খাইবেন হোশেশোসে…’
মহেশচন্দ্র রায় বলছেন, শাইল ডাইরকা, অর্থাৎ বড় বড় ডানকিনে মাছ, জ্বালা আকালি মানে কচি মরিচ আর মিহি করে কাটা পেঁয়াজের ফালিতে মেখে নিয়ে ছাঁচি তেল, অর্থাৎ কাঠের ঘানিতে ভাঙানো সরষের তেলে মচ মচ করে ভেজে বন্ধুকে খেতে দেব। বন্ধু তা খাবে আমন ধানের ভাতের সঙ্গে প্যালকা দিয়ে।
আষাঢ় শেষ। শ্রাবণও শেষের দিকে। সময়টা এখন ছোট মাছের। সময়টা এখন পুণ্যবানমানুষদের।
সেই সব স্বামী পুণ্যবান, যাঁরা কলাপাতায় ঘি দিয়ে মাখা, মৌরালা বা মলা মাছের ঝোল আর নলিতা বা পাটশাক দিয়ে খেতে পারেন গরমাগরম ভাত। আমার কথা নয়। বাংলা ভাষার আদি কবিদের একজন বলেছেন,
‘ওগগরা ভত্তা রম্ভঅ পত্তা গাইক ঘিত্তা দুগ্ধ সজুক্তা
মৌইলি মচ্ছা নলিতা গচ্ছা দিজ্জই কান্তা খা(ই) পুনবন্তা।’
-চর্যাপদ
বরাবরই সুখী বাঙালি দম্পতির ছবি যখন আঁকা হয়েছে, গদ্যে, পদ্যে কিংবা ক্যানভাসে, সেটা ছিল খেতে বসা কোনো পুরুষের ছবি। সামনে অনেক পদের তরকারি, কাঁসার থালায় ভাত, পাশ থেকে একজন নারী বাতাস করছেন—এ রকম একটা ছবি আমাদের চোখেও ভাসে। এই যে থরে থরে সাজানো খাবার, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হিসেবে কিন্তু থাকত ছোট মাছের বিভিন্ন পদ। তা সে ভাজাই হোক বা চচ্চড়ি অথবা অম্বলের অংশ।
গরম ভাতে কড়কড়ে করে ভাজা পুঁটি, খলশে, মলা কিংবা কুঁচো চিংড়ির বড়া অথবা ঝিরিঝিরি করে কাটা আলু দিয়ে রান্না করা কাঁচকি মাছের চচ্চড়ি! এ শুধু অক্ষরের পর অক্ষর সাজিয়ে বর্ণনা লেখা নয়। এ হলো স্বাদযাপনের দিনলিপি। নাহ, বাঙালির খাবারের ভান্ডার খুব ছোট নয়, যদি খেতে জানেন। যদি জানেন, মসলার বাহুল্য ছাড়া শুধু কাঁচা মরিচের ফালি, হালকা জিরা ও স্বাদমতো লবণ দিয়েও রান্না করে ফেলা যায় অমৃতসম কাঁচকি মাছ। আর পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, লবণ, তেলে মেখে হাত ধোয়া পানিতে রান্না করা মৌরালা মাছের চচ্চড়ি কেউ যদি না খেয়ে থাকেন, তাহলে বাঙালি স্বাদ নিয়ে তাঁর কথা না বলাই ভালো।
কতভাবে ছোট মাছ খাওয়া হয় এ দেশে তার কোনো হিসাব নেই। সম্ভবও নয় সে হিসাব বের করা। তার আগে বলে নিই, ছোট মাছ কোনগুলো। মৌরালা বা মলা, ডানকিনে, পুঁটি, কাঁচকি, খলশে, কুঁচো চিংড়ি, দেশি চাঁদা—সাধারণত এগুলোই ছোট মাছ হিসেবে পরিচিত। এ মাছগুলো খাওয়া যায় ভাজি করে, চচ্চড়ি করে, অন্য কোনো সবজির সঙ্গে মিশিয়ে কিংবা খই অথবা বেসনের সঙ্গে মিশিয়ে বড়া বানিয়ে। যে রেসিপিতেই আপনি রাঁধুন না কেন, ছোট মাছ উতরে যাবে। তবে হ্যাঁ, ভুলেও এতে আদা আর রসুন দেবেন না। তাতে স্বাদ পাবেন না।
যে বিষয়টি বলে রাখা ভালো, সেটি হলো, প্রতিটি খাবারের একটি করে সেট মেন্যু থাকে। তার সঙ্গে মিলিয়ে না খেলে পুরো স্বাদ পাওয়া যায় না কোনো খাবারের। যেমন, চায়ের সঙ্গে বিস্কুট, পরোটার সঙ্গে ভুনা মাংস কিংবা লুচির সঙ্গে পাঁচফোড়নে রান্না করা সবজি অথবা পায়েস কিংবা পানের সঙ্গে চুন-সুপারি, বিরিয়ানির সঙ্গে ঢাকাই বোরহানি। জুটি ধরেই চলে সব। নইলে স্বাদে মেলে না। ছোট মাছ হলো সম্পর্কে শ্যালিকার মতো। সব ধরনের খুনসুটি চলে তার সঙ্গে। শুক্তো, মুগের ডাল, খেসারির ডালের বড়া আর ঘণ্টর মতো নিরামিষ পদের পাশে ছাঁকা তেলে ভাজা মলা মাছ রেখে দিন। একটা দারুণ কম্বিনেশন তৈরি হবে। কিংবা শুধুই সরু করে কাটা আলু দিয়ে কাঁচকি মাছের তরকারির সঙ্গে ঘন মসুর ডাল। ব্যস, আর কিছুর দরকার নেই।
উত্তরবঙ্গের সিগনেচার খাবার প্যালকা। অনেক রকম শাকের মিশেলে বানানো হয় এটি। প্যালকার সঙ্গে খেসারির ডালের বড়া, ছোট ছোট আলু ভাজা আর পুঁটি অথবা ডানকিনে মাছের কড়কড়ে ভাজা। একবার যদি খেয়ে থাকেন জিবে লেগে থাকবে বহুকাল। মহেশচন্দ্র রায় তাঁর বিখ্যাত ভাওয়াইয়া গান ‘কানিছাত গাড়িনু আকাশি আকালি’তে এক অনির্বচনীয় রেসিপির কথা বলেছেন ডানকিনে বা ডাইরকা মাছ ভাজার।
‘শাইল ডাইরকা মাছোতে জ্বালা আকালি
থুস থুস করিয়া দিইম পিঁয়াজ ফালি
ফাইক করি ছাঁচি তেল উহাতে ঢালিয়া
তুলিম মচো মচো রে বন্ধুয়া
খাইবেন হোশেশোসে…’
মহেশচন্দ্র রায় বলছেন, শাইল ডাইরকা, অর্থাৎ বড় বড় ডানকিনে মাছ, জ্বালা আকালি মানে কচি মরিচ আর মিহি করে কাটা পেঁয়াজের ফালিতে মেখে নিয়ে ছাঁচি তেল, অর্থাৎ কাঠের ঘানিতে ভাঙানো সরষের তেলে মচ মচ করে ভেজে বন্ধুকে খেতে দেব। বন্ধু তা খাবে আমন ধানের ভাতের সঙ্গে প্যালকা দিয়ে।
আষাঢ় শেষ। শ্রাবণও শেষের দিকে। সময়টা এখন ছোট মাছের। সময়টা এখন পুণ্যবানমানুষদের।
দিগন্তবিস্তৃত ধানখেতের মাথার ওপর নীল আকাশে উঁকি দেবে সাদা মেঘ। শরৎকাল বলে ভুল হতে পারে। ভুল ভাঙলে দেখতে পাবেন, মেঘের ভেলা সূর্যের আলোয় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে হয়ে উঠছে গোলাপি কিংবা লাল। বুঝবেন, আপনি শরতের সাদা মেঘ নয়, দেখছেন তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
২ দিন আগেকোনো কিছু ওপর থেকে নিচে পড়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে। স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে আমরা সবাই এ বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলোতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্র কাজ করে না। অর্থাৎ সেসব জায়গায় কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। যেতে চান সেই সব জায়গায়?
২ দিন আগেশীত, বসন্ত আর বর্ষায় বাংলার নীল নদ সারির রূপ বদলে ফেলে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে দক্ষ মাঝিরাও ভয়ে ভয়ে বইঠা চালান। আর শীতে সারি নদীর নীল পানি দেয় অপার্থিব জগতের খোঁজ। নদীটি ধরে কিছুদূর উজান বাইলেই পাওয়া যাবে লালাখাল জিরো পয়েন্ট।
২ দিন আগেভ্রমণকালে রোগবালাই থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী না হলে ভ্রমণের আনন্দ মাঠে মারা যেতে পারে। ভ্রমণের সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেছে নিতে পারেন কিছু উপায়।
২ দিন আগে