অনলাইন ডেস্ক
তিনবার বিশ্ব হেভিওয়েট শিরোপাজয়ী তিনি। ১৯৯৯ সালে বিবিসি তাঁকে স্পোর্টস পারসোন্যালিটি অব দ্য সেঞ্চুরি বা শত বছরের সেরা ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে ঘোষণা করে। বক্সিং রিংয়ের ভেতরে ও বাইরে দুর্দমনীয় সাহস তাঁকে মানুষের মনে অমর করে রেখেছে। কিংবদন্তি মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী ১৯৪২ সালের এই দিনে জন্ম নেন।
পেশাদার খেলোয়াড়িজীবনের প্রথম দিককার গল্প। প্রথম বিশ্ব হেভিওয়েট শিরোপার লড়াইয়ে নামার আগে অন্য এক যুদ্ধে নামলেন আলী। প্রতিপক্ষ সনি লিস্টনকে খেপিয়ে তোলার লড়াই। আর এটা করার জন্য রীতিমতো একটি বাস কিনে ফেললেন আলী। তারপর ওটা চালিয়ে চলে এলেন জন্ম শহর লুইসভিলে। বাসটি কমলা, নীল, সবুজ, হলুদ, লাল রঙে রাঙিয়ে তুললেন আলীর সাইনবোর্ড শিল্পী বাবা। বাসের এক পাশে লেখা হলো সবচেয়ে ‘বর্ণাঢ্য যোদ্ধা: ক্যাসিয়াস ক্লে’ (তখন তাঁর নাম ছিল ক্যাসিয়াস ক্লে), অপর পাশে ‘সনি লিস্টন ইজ গ্রেট বাট হি উইল ফল ইন এইট’।
বিগ রেড নামের সেই গাড়িতে চেপে আলী ঘুরে বেড়াতে লাগলেন দেশের নানা প্রান্তে। লিস্টনের পতনের ভবিষ্যৎবাণী করে পাঠ করে বেড়ালেন একের পর এক কবিতা। এরপর পদে পদে লিস্টনকে উত্ত্যক্ত করতে লাগলেন। এক জুয়ার আসরে লিস্টনের ওপর চড়াও পর্যন্ত হলেন। বিগ রেডে চেপে একদিন তাঁর বাড়িতে হাজির হলেন। পরে পুলিশ এসে শান্ত করল পরিস্থিতি। এমনই আত্মবিশ্বাসী, সাহসী আর একগুঁয়ে ছিলেন আলী। রিংয়ের লড়াইয়ে নামার আগেই প্রতিপক্ষের সঙ্গে নামতেন মনস্তাত্ত্বিক এক লড়াইয়ে। বক্সিং রিংয়ে প্রজাপতির মতো ভেসে বেড়াতেন, প্রতিপক্ষের শরীরে মৌমাছির হুলের মতো জ্বালা ধরিয়ে দিত তাঁর ঘুষি। প্রতিপক্ষকে সব সময় ব্যতিব্যস্ত করে রাখত তাঁর হাত আর চঞ্চল পা দুটি। তাই মোহাম্মদ আলী সবার চেয়ে আলাদা।
আমেরিকার কেনটাকির লুইসভিলে জন্ম নেন আলী। তাঁর বাবার নাম ক্যাসিয়াস মার্সেলাস ক্লে সিনিয়র। তাঁর নামেই তখন আলীর নাম রাখা হয় ক্যাসিয়াস মার্সেলাস ক্লে জুনিয়র। মায়ের নাম ওডেসা গ্রেডি ক্লে।
প্রথম তাঁকে মুষ্টিযুদ্ধে নিয়ে আসেন পুলিশ ও মুষ্টিযুদ্ধ প্রশিক্ষক জো ই মার্টিন। সাইকেল চুরি যাওয়ায় রাগে ফুঁসতে থাকা ১২ বছরে বালক আলীর মুখোমুখি হন তিনি। তখনই তাঁর নজর কাড়েন আলী।
মোহাম্মদ আলী ১৯৫৪ সালে প্রথম অপেশাদার বক্সিং প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। পরে ছয়বার কেনটাকি গোল্ডেন গ্লাভস, দুবার জাতীয় গোল্ডেন গ্লাভস জেতেন। ১৯৬০ সালে রোমের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে মুষ্টিযুদ্ধ প্রতিযোগিতায় লাইট হেভিওয়েট বিভাগে স্বর্ণপদক জেতেন।
১৯৬০ সালের ২৯ অক্টোবর পেশাদার বক্সিং প্রতিযোগিতায় আলী প্রথমবারের মতো অংশ নেন। ৬ রাউন্ডে পরাজিত করেন টানি হানসাকারকে। ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত ১৯-০ জয়ের রেকর্ড করেন আলী। এর মধ্যে ১৫টি নকআউটে জয়।
১৯৬৪ সালে ছয় রাউন্ডের মাথায় সনি লিস্টনকে পরাজিত করে বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নেন ২২ বছরের আলী। চমকে দেন সবাইকে। ওই বছরই নেশনস অব ইসলামে যোগ দেন, নিজের নাম রাখেন মোহাম্মদ আলী। ১৯৭৫ সালে তিনি সুন্নি ইসলামের অনুসারীতে পরিণত হন। পরের তিনটি বছর একের পর এক জয়ে বক্সিং জগতে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করে নিলেন আলী। ১৯৬৫ সালের ২৫ মে আবার লিস্টনের সঙ্গে লড়েন আলী। এবার প্রথম রাউন্ডেই নকআউট করেন তাঁকে। পরে হারালেন ফ্লয়েড প্যাটার্সন, হেনরি কুপার, ব্রায়ান লন্ডন প্রমুখকে। ১৯৬৬ সালের ১৪ নভেম্বর ক্লেভারল্যান্ড উইলিয়ামসকে হারালেন তৃতীয় রাউন্ডের মাথায়। এ সময়ের মধ্যে ১০০টির বেশি ঘুষি মারেন আলী।
১৯৬৭ সালের ২৮ এপ্রিল মোহাম্মদ আলীকে আমেরিকার সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্তির জন্য ডাকা হয়। তখন ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য ডাকা হচ্ছিল জনসাধারণকে। আলী ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানালেন। এতে তাঁর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান খেতাব কেড়ে নেওয়া হয়। মুষ্টিযুদ্ধ করার সনদ বাতিল হয় আলীর। জীবনের সেরা সময়ে চার বছর কোনো ধরনের বক্সিং প্রতিযোগিতায় নামতে পারেননি। তবে ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিষয়ে নিজের মতামতে সব সময় অটল ছিলেন আলী।
বক্সিং জগতে ফিরে ১৯৭১ সালে জো ফ্রেজিয়ারকে চ্যালেঞ্জ জানান আলী। তাঁর অবর্তমানে নতুন হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হন ফ্রেজিয়ার। ‘ফাইট অব দ্য সেঞ্চুরি’ নামে ওই লড়াইয়ে পরাজিত হন আলী।
১৯৭৪ সালের অক্টোবরে আলী চ্যালেঞ্জ জানান জর্জ ফোরম্যানকে। তখন তিনি বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন। প্রতিযোগিতাটি পরিচিতি পায় রাম্বল ইন দ্য জাঙ্গল নামে, এটি হয় আফ্রিকার জায়ারে (বর্তমান রিপাবলিক অব কঙ্গো)। অষ্টম রাউন্ডে ফোরম্যানকে নকআউট করে বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপ পুনরুদ্ধার করলেন আলী।
পরের আড়াই বছরে খ্যাতির চূড়ায় ছিলেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আলী। প্রতিপক্ষ দাঁড়াতেই পারছিলেন না তাঁর সামনে। ১৯৭৫ সালের অক্টোবরে স্মরণীয় আরেক লড়াইয়ে নামেন আলী। ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলার ৯ মাইল দূরে মুখোমুখি হন জো ফ্রেজিয়ারের। ‘থ্রিলা ইন ম্যানিলা’ নামে পরিচিত লড়াইটিতে ১৪ রাউন্ডের মাথায় জেতেন আলী।
১৯৭৮ সালে লিয়ন স্পিংকস নামে তুলনামূলক অনভিজ্ঞ এক মুষ্টিযোদ্ধার কাছে হেভিওয়েট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেতাব হারান। অবশ্য সাত মাস পরে ওই বছরই স্পিংকসকে হারিয়ে প্রথম মুষ্টিযোদ্ধা হিসেবে তিনবার বিশ্ব হেভিওয়েট শিরোপা জিতলেন। ১৯৮১ সালের পেশাদার মুষ্টিযোদ্ধা হিসেবে শেষ লড়াইয়ে ট্রেভর বারবিকের কাছে পরাজিত হন।
পেশাদার মুষ্টিযুদ্ধে আলী ৬১টি লড়াইয়ে অংশ নিয়ে ৫৬ টিতে জেতেন। এটি তাঁকে মুষ্টিযোদ্ধার ইতিহাসে সেরাদের কাতারে রাখবে অনায়াসে। তবে এ ধরনের রেকর্ড নামকরা আরও কোনো কোনো মুষ্টিযোদ্ধারও ছিল। তবে যাঁদের বিরুদ্ধে লড়েছেন তাঁদের যোগ্যতা এবং নিজের সেরা সময়ে যেভাবে প্রতিপক্ষের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছেন তা তাঁকে মানুষের কাছে অমর করে রেখেছে। তাঁর দ্রুতগতি, চঞ্চল পা আর ঘুষি দেওয়ার দক্ষতার জুড়ি মেলা ভার। তবে ভক্তরা এর চেয়েও বেশি মনে রাখবেন বক্সিং রিং এবং এর বাইরে তাঁর দুর্দমনীয় সাহসের জন্য।
পরের দিকে আলীর ক্ষিপ্ততা কমে আসছিল। জড়ানো কণ্ঠস্বর, নড়াচড়ায় ধীরগতিসহ পারকিনসনের বিভিন্ন লক্ষণ দেখা যেতে থাকে। তাঁকে যখন বলা হয় তিনি রোগটির জন্য বক্সিংকে দায়ী করেন, তখন বলেন বক্সিং না করলে এত বিখ্যাত হতেন না। অবসরের পর পারকিনসন নিয়েই মানুষের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করেন।
আলী বাংলাদেশেও এসেছিলেন। ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাঁচ দিনের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন কিংবদন্তি এই মুষ্টিযোদ্ধা।
১৯৯৯ সালে বিবিসি পাঠকদের ভোটে ১০০ বছরের সেরা ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে ঘোষণা করে তাঁকে। মোহাম্মদ আলীর মুষ্টিযোদ্ধা হিসেবে সেরা সময়টি (১৯৬৪-১৯৭৪) নিয়ে ২০০১ সালে মুক্তি পায় চলচ্চিত্র ‘আলী’। তাঁর জীবনের গল্প উঠে আসে ২০১৪ সালের তথ্যচিত্র ‘আই এম আলী’তে। পরে ধারাবাহিক তথ্যচিত্র ‘হোয়াট’স মাই নেম’ (২০১৯) ও ‘মোহাম্মদ আলী’ (২০২১) নির্মিত হয় তাঁকে নিয়ে। ২০০৫ সালে তাঁকে দেওয়া হয় প্রেসিডেনসিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম পদক।
২০১৬ সালের ৩ জুন ৭৪ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার স্কটসডেলের মারা যান তিনি।
সূত্র. দ্য গ্রেটেস্ট, মাই অওন স্টোরি: মোহাম্মদ আলী, ব্রিটানিকা উইকিপিডিয়া
তিনবার বিশ্ব হেভিওয়েট শিরোপাজয়ী তিনি। ১৯৯৯ সালে বিবিসি তাঁকে স্পোর্টস পারসোন্যালিটি অব দ্য সেঞ্চুরি বা শত বছরের সেরা ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে ঘোষণা করে। বক্সিং রিংয়ের ভেতরে ও বাইরে দুর্দমনীয় সাহস তাঁকে মানুষের মনে অমর করে রেখেছে। কিংবদন্তি মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী ১৯৪২ সালের এই দিনে জন্ম নেন।
পেশাদার খেলোয়াড়িজীবনের প্রথম দিককার গল্প। প্রথম বিশ্ব হেভিওয়েট শিরোপার লড়াইয়ে নামার আগে অন্য এক যুদ্ধে নামলেন আলী। প্রতিপক্ষ সনি লিস্টনকে খেপিয়ে তোলার লড়াই। আর এটা করার জন্য রীতিমতো একটি বাস কিনে ফেললেন আলী। তারপর ওটা চালিয়ে চলে এলেন জন্ম শহর লুইসভিলে। বাসটি কমলা, নীল, সবুজ, হলুদ, লাল রঙে রাঙিয়ে তুললেন আলীর সাইনবোর্ড শিল্পী বাবা। বাসের এক পাশে লেখা হলো সবচেয়ে ‘বর্ণাঢ্য যোদ্ধা: ক্যাসিয়াস ক্লে’ (তখন তাঁর নাম ছিল ক্যাসিয়াস ক্লে), অপর পাশে ‘সনি লিস্টন ইজ গ্রেট বাট হি উইল ফল ইন এইট’।
বিগ রেড নামের সেই গাড়িতে চেপে আলী ঘুরে বেড়াতে লাগলেন দেশের নানা প্রান্তে। লিস্টনের পতনের ভবিষ্যৎবাণী করে পাঠ করে বেড়ালেন একের পর এক কবিতা। এরপর পদে পদে লিস্টনকে উত্ত্যক্ত করতে লাগলেন। এক জুয়ার আসরে লিস্টনের ওপর চড়াও পর্যন্ত হলেন। বিগ রেডে চেপে একদিন তাঁর বাড়িতে হাজির হলেন। পরে পুলিশ এসে শান্ত করল পরিস্থিতি। এমনই আত্মবিশ্বাসী, সাহসী আর একগুঁয়ে ছিলেন আলী। রিংয়ের লড়াইয়ে নামার আগেই প্রতিপক্ষের সঙ্গে নামতেন মনস্তাত্ত্বিক এক লড়াইয়ে। বক্সিং রিংয়ে প্রজাপতির মতো ভেসে বেড়াতেন, প্রতিপক্ষের শরীরে মৌমাছির হুলের মতো জ্বালা ধরিয়ে দিত তাঁর ঘুষি। প্রতিপক্ষকে সব সময় ব্যতিব্যস্ত করে রাখত তাঁর হাত আর চঞ্চল পা দুটি। তাই মোহাম্মদ আলী সবার চেয়ে আলাদা।
আমেরিকার কেনটাকির লুইসভিলে জন্ম নেন আলী। তাঁর বাবার নাম ক্যাসিয়াস মার্সেলাস ক্লে সিনিয়র। তাঁর নামেই তখন আলীর নাম রাখা হয় ক্যাসিয়াস মার্সেলাস ক্লে জুনিয়র। মায়ের নাম ওডেসা গ্রেডি ক্লে।
প্রথম তাঁকে মুষ্টিযুদ্ধে নিয়ে আসেন পুলিশ ও মুষ্টিযুদ্ধ প্রশিক্ষক জো ই মার্টিন। সাইকেল চুরি যাওয়ায় রাগে ফুঁসতে থাকা ১২ বছরে বালক আলীর মুখোমুখি হন তিনি। তখনই তাঁর নজর কাড়েন আলী।
মোহাম্মদ আলী ১৯৫৪ সালে প্রথম অপেশাদার বক্সিং প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। পরে ছয়বার কেনটাকি গোল্ডেন গ্লাভস, দুবার জাতীয় গোল্ডেন গ্লাভস জেতেন। ১৯৬০ সালে রোমের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে মুষ্টিযুদ্ধ প্রতিযোগিতায় লাইট হেভিওয়েট বিভাগে স্বর্ণপদক জেতেন।
১৯৬০ সালের ২৯ অক্টোবর পেশাদার বক্সিং প্রতিযোগিতায় আলী প্রথমবারের মতো অংশ নেন। ৬ রাউন্ডে পরাজিত করেন টানি হানসাকারকে। ১৯৬০ সাল থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত ১৯-০ জয়ের রেকর্ড করেন আলী। এর মধ্যে ১৫টি নকআউটে জয়।
১৯৬৪ সালে ছয় রাউন্ডের মাথায় সনি লিস্টনকে পরাজিত করে বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নেন ২২ বছরের আলী। চমকে দেন সবাইকে। ওই বছরই নেশনস অব ইসলামে যোগ দেন, নিজের নাম রাখেন মোহাম্মদ আলী। ১৯৭৫ সালে তিনি সুন্নি ইসলামের অনুসারীতে পরিণত হন। পরের তিনটি বছর একের পর এক জয়ে বক্সিং জগতে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করে নিলেন আলী। ১৯৬৫ সালের ২৫ মে আবার লিস্টনের সঙ্গে লড়েন আলী। এবার প্রথম রাউন্ডেই নকআউট করেন তাঁকে। পরে হারালেন ফ্লয়েড প্যাটার্সন, হেনরি কুপার, ব্রায়ান লন্ডন প্রমুখকে। ১৯৬৬ সালের ১৪ নভেম্বর ক্লেভারল্যান্ড উইলিয়ামসকে হারালেন তৃতীয় রাউন্ডের মাথায়। এ সময়ের মধ্যে ১০০টির বেশি ঘুষি মারেন আলী।
১৯৬৭ সালের ২৮ এপ্রিল মোহাম্মদ আলীকে আমেরিকার সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্তির জন্য ডাকা হয়। তখন ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য ডাকা হচ্ছিল জনসাধারণকে। আলী ভিয়েতনাম যুদ্ধে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানালেন। এতে তাঁর বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান খেতাব কেড়ে নেওয়া হয়। মুষ্টিযুদ্ধ করার সনদ বাতিল হয় আলীর। জীবনের সেরা সময়ে চার বছর কোনো ধরনের বক্সিং প্রতিযোগিতায় নামতে পারেননি। তবে ভিয়েতনাম যুদ্ধের বিষয়ে নিজের মতামতে সব সময় অটল ছিলেন আলী।
বক্সিং জগতে ফিরে ১৯৭১ সালে জো ফ্রেজিয়ারকে চ্যালেঞ্জ জানান আলী। তাঁর অবর্তমানে নতুন হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন হন ফ্রেজিয়ার। ‘ফাইট অব দ্য সেঞ্চুরি’ নামে ওই লড়াইয়ে পরাজিত হন আলী।
১৯৭৪ সালের অক্টোবরে আলী চ্যালেঞ্জ জানান জর্জ ফোরম্যানকে। তখন তিনি বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ন। প্রতিযোগিতাটি পরিচিতি পায় রাম্বল ইন দ্য জাঙ্গল নামে, এটি হয় আফ্রিকার জায়ারে (বর্তমান রিপাবলিক অব কঙ্গো)। অষ্টম রাউন্ডে ফোরম্যানকে নকআউট করে বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপ পুনরুদ্ধার করলেন আলী।
পরের আড়াই বছরে খ্যাতির চূড়ায় ছিলেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আলী। প্রতিপক্ষ দাঁড়াতেই পারছিলেন না তাঁর সামনে। ১৯৭৫ সালের অক্টোবরে স্মরণীয় আরেক লড়াইয়ে নামেন আলী। ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলার ৯ মাইল দূরে মুখোমুখি হন জো ফ্রেজিয়ারের। ‘থ্রিলা ইন ম্যানিলা’ নামে পরিচিত লড়াইটিতে ১৪ রাউন্ডের মাথায় জেতেন আলী।
১৯৭৮ সালে লিয়ন স্পিংকস নামে তুলনামূলক অনভিজ্ঞ এক মুষ্টিযোদ্ধার কাছে হেভিওয়েট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের খেতাব হারান। অবশ্য সাত মাস পরে ওই বছরই স্পিংকসকে হারিয়ে প্রথম মুষ্টিযোদ্ধা হিসেবে তিনবার বিশ্ব হেভিওয়েট শিরোপা জিতলেন। ১৯৮১ সালের পেশাদার মুষ্টিযোদ্ধা হিসেবে শেষ লড়াইয়ে ট্রেভর বারবিকের কাছে পরাজিত হন।
পেশাদার মুষ্টিযুদ্ধে আলী ৬১টি লড়াইয়ে অংশ নিয়ে ৫৬ টিতে জেতেন। এটি তাঁকে মুষ্টিযোদ্ধার ইতিহাসে সেরাদের কাতারে রাখবে অনায়াসে। তবে এ ধরনের রেকর্ড নামকরা আরও কোনো কোনো মুষ্টিযোদ্ধারও ছিল। তবে যাঁদের বিরুদ্ধে লড়েছেন তাঁদের যোগ্যতা এবং নিজের সেরা সময়ে যেভাবে প্রতিপক্ষের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছেন তা তাঁকে মানুষের কাছে অমর করে রেখেছে। তাঁর দ্রুতগতি, চঞ্চল পা আর ঘুষি দেওয়ার দক্ষতার জুড়ি মেলা ভার। তবে ভক্তরা এর চেয়েও বেশি মনে রাখবেন বক্সিং রিং এবং এর বাইরে তাঁর দুর্দমনীয় সাহসের জন্য।
পরের দিকে আলীর ক্ষিপ্ততা কমে আসছিল। জড়ানো কণ্ঠস্বর, নড়াচড়ায় ধীরগতিসহ পারকিনসনের বিভিন্ন লক্ষণ দেখা যেতে থাকে। তাঁকে যখন বলা হয় তিনি রোগটির জন্য বক্সিংকে দায়ী করেন, তখন বলেন বক্সিং না করলে এত বিখ্যাত হতেন না। অবসরের পর পারকিনসন নিয়েই মানুষের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করেন।
আলী বাংলাদেশেও এসেছিলেন। ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাঁচ দিনের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন কিংবদন্তি এই মুষ্টিযোদ্ধা।
১৯৯৯ সালে বিবিসি পাঠকদের ভোটে ১০০ বছরের সেরা ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব হিসেবে ঘোষণা করে তাঁকে। মোহাম্মদ আলীর মুষ্টিযোদ্ধা হিসেবে সেরা সময়টি (১৯৬৪-১৯৭৪) নিয়ে ২০০১ সালে মুক্তি পায় চলচ্চিত্র ‘আলী’। তাঁর জীবনের গল্প উঠে আসে ২০১৪ সালের তথ্যচিত্র ‘আই এম আলী’তে। পরে ধারাবাহিক তথ্যচিত্র ‘হোয়াট’স মাই নেম’ (২০১৯) ও ‘মোহাম্মদ আলী’ (২০২১) নির্মিত হয় তাঁকে নিয়ে। ২০০৫ সালে তাঁকে দেওয়া হয় প্রেসিডেনসিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম পদক।
২০১৬ সালের ৩ জুন ৭৪ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনার স্কটসডেলের মারা যান তিনি।
সূত্র. দ্য গ্রেটেস্ট, মাই অওন স্টোরি: মোহাম্মদ আলী, ব্রিটানিকা উইকিপিডিয়া
দিগন্তবিস্তৃত ধানখেতের মাথার ওপর নীল আকাশে উঁকি দেবে সাদা মেঘ। শরৎকাল বলে ভুল হতে পারে। ভুল ভাঙলে দেখতে পাবেন, মেঘের ভেলা সূর্যের আলোয় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে হয়ে উঠছে গোলাপি কিংবা লাল। বুঝবেন, আপনি শরতের সাদা মেঘ নয়, দেখছেন তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
১ দিন আগেকোনো কিছু ওপর থেকে নিচে পড়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে। স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে আমরা সবাই এ বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলোতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্র কাজ করে না। অর্থাৎ সেসব জায়গায় কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। যেতে চান সেই সব জায়গায়?
১ দিন আগেশীত, বসন্ত আর বর্ষায় বাংলার নীল নদ সারির রূপ বদলে ফেলে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে দক্ষ মাঝিরাও ভয়ে ভয়ে বইঠা চালান। আর শীতে সারি নদীর নীল পানি দেয় অপার্থিব জগতের খোঁজ। নদীটি ধরে কিছুদূর উজান বাইলেই পাওয়া যাবে লালাখাল জিরো পয়েন্ট।
১ দিন আগেভ্রমণকালে রোগবালাই থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী না হলে ভ্রমণের আনন্দ মাঠে মারা যেতে পারে। ভ্রমণের সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেছে নিতে পারেন কিছু উপায়।
১ দিন আগে