রজত কান্তি রায়, ঢাকা
নতুন সকাল। নতুন আলো। নতুন বছর। স্বাগত ১৪২৯।আজ গ্রীষ্মের তুখোড় দিনের শুরু। সেই সঙ্গে শুরু নতুন বছরের। মাত্র গতকালই শেষ হয়েছে বসন্ত। কিন্তু রঙের খেলা শেষ হয়নি। গাছে গাছে নতুন পাতায় রঙের বিভিন্ন স্তর—কোনোটা গাঢ়, কোনোটা ফিকে। এই গাঢ় কিংবা ফিকে রং বৈচিত্র্যের এক আশ্চর্য প্রতীক।
কৃষিভিত্তিক সাংস্কৃতিক কাঠামোর ওপর গড়ে ওঠা আমাদের নাগরিক সমাজে আজ সাজ সাজ রব। মেলায়, ফ্যাশনে, খাদ্যে বৈশাখের এই পয়লা দিন শতভাগ বাঙালি। আজকের সকাল শুরু হবে পান্তা খেয়ে। আজকের স্বাদ কোরকের রাজা ইলিশ। পাত ভরে আজ ঝালে-ঝোলে-অম্বলে বাঙালি রসনার আয়োজন। আজকের ফ্যাশনে থাকবে বাঙালিয়ানার ছাপ, অঙ্গে শোভা বাড়াবে শাড়ি ও পাঞ্জাবি। সাদা আর লাল এই দুটি রং আমাদের নতুন বছরের প্রতিনিধিত্ব করে। আজ চারদিকে থাকবে তারই উপস্থিতি। আজ প্রাণে প্রাণ মিলবে মেলায়, আজ ভুভুজেলা নয়, বাজবে ভেঁপু। সন্ধ্যার মুখে সেখানে খাওয়া হবে গুড়ের জিলাপি। বাঙালির আদি মিষ্টিগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এই একুশ শতকে আমরা যাকে ‘গ্রামীণ’ বলে জানি, তার গণ্ডি পেরিয়ে এই একটি মাত্র উৎসব নাগরিক হয়ে উঠতে পেরেছে আমাদের সব সীমাবদ্ধতা ছিন্ন করে।
বদলের বৈশাখে স্বাগতম
সর্বজনীন হয়ে ওঠা এ উৎসবের শরীরে লেগে আছে শত শত বছরের ইতিহাস। সে ইতিহাসের পাতায় যেমন লেখা আছে রাজা বিক্রমাদিত্যের নাম, তেমনি আছে নেপালের রাজা সন পো কিংবা মোগল সম্রাট আকবরের নাম। সে ইতিহাসে যেমন আছে বৈশাখ, তেমনি আছে অঘ্রান মাসের নাম। ফলে বাংলা নতুন বছরের ইতিহাস বেশ জটিল। প্রাচীনপন্থী পণ্ডিতেরা বলেন, অঘ্রান বা অগ্রহায়ণ মাসটি এখন বাংলা ক্যালেন্ডারের অষ্টম মাস হলেও এককালে এটি ছিল বাংলা বছরের শুরুর মাস। অগ্র অর্থ আগে বা শুরু আর হায়ন অর্থ বছর। ‘অগ্রহায়ণ’ শব্দটির আরেকটি অর্থ হলো, বছরের যে সময় শ্রেষ্ঠ ব্রীহি উৎপন্ন হয়। ব্রীহি মানে ফসল। বাংলার মূল ফসল যেহেতু ধান, তাই বাংলায় ব্রীহির সমার্থক হয়ে গেছে ধান। বছরের যে সময় প্রধান ফসল উৎপন্ন হয়, সে সময়েই তো নতুন বছর হওয়ার কথা। এটাও তা-ই ছিল। কিন্তু বহু বছর পর মোগল সম্রাট আকবর বৈশাখে প্রবর্তন করেন ফসলি সন, যা মূলত খাজনা আদায়ের জন্য নির্ধারণ করা হয়। পরে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো বাঙালিরাও সেটিই পালন করে থাকে প্রতিবছর।
বদলের বৈশাখে আরও অনেক চমক আছে। প্রাচীন ভারত উপমহাদেশ শুধু নয়, এই আধুনিক সময়েও ভারতের ‘বিভিন্ন প্রান্তে কৃষিভিত্তিক, ইতরযানী যেসব অব্দ প্রচলিত আছে, তার সবই পয়লা বৈশাখেই শুরু হয়। যেমন, উত্তর ভারতের বৈশাখী, আসামের রঙ্গালি বিহু, তামিলনাড়ুর পুথাণ্ডু, কেরালার ভিশু, ওডিশার বিষুব-সংক্রান্তি, মিথিলার জুড় শীতল এবং বাংলার পয়লা বৈশাখ। উল্লেখ্য, তিব্বতি বর্ষারম্ভও পয়লা বৈশাখেই পালিত হয়। মোগল ব্যবস্থার ‘ফসলি সন’ বা হিজরি সালের বর্ষারম্ভের সঙ্গে একে কোনোভাবেই যুক্ত করা যায় না।’
সে জন্যই বলছি, বদলের বৈশাখের ইতিহাস বেশ জটিল ও বর্ণিল। এ জন্যই সম্ভবত এ উৎসবের কোথাও পান্তা-ইলিশের সুগন্ধ, কোথাও কৃষিজীবনের প্রথা পালনের ঘটা, তো কোথাও লাল-সাদার যুগলবন্দী আর কলহাস্যে উচ্ছ্বসিত উদ্দাম তারুণ্য। তবে এ কথা ঠিক, নতুন বছর পালনের ইতিহাস আর্যদের দান নয়। এ গল্প এই ভূমিতে গড়ে ওঠা মানুষের।
তারুণ্যের উৎসবে
উৎসব যতই প্রাচীন হোক, তরুণেরা থাকে বলেই সেটি শত বছরেও তার যৌবন ধরে রাখে। তারুণ্য মানেই রং। তারুণ্য মানেই প্রাণ। এই রং আর প্রাণ আছে বলে আমাদের নতুন বছরের দিনটি বর্ণময়। বর্ণে-গন্ধে-ছন্দে-গীতিতে তারাই মাতিয়ে তোলে উৎসবগুলো। আর তাদের রাঙিয়ে তুলতে থাকে হরেক আয়োজন। সে আয়োজনে তরুণেরাই রাজা।
করোনাহীন উৎসব
করোনাভাইরাস পৃথিবী থেকে নির্মূল হয়নি। কিন্তু মানুষের প্রচেষ্টার কাছে তার প্রকোপ কমেছে। দুই বছর পর এবার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে উৎসব করবে। করোনার মরণ ছোবল থেকে আমরা যারা এখনো বেঁচে আছি, তাদের জীবনে আরও একটা নতুন বছর দেখার সুযোগ ঘটে গেল। এও সত্যি আশ্চর্যের বিষয়। রং ছড়িয়ে এ জীবন উপভোগ করা দরকার। আজ রং ছড়িয়ে যাক প্রাণ থেকে প্রাণে। সুর ছড়িয়ে যাক কণ্ঠ থেকে কণ্ঠে। কোটি কণ্ঠে ধ্বনিত হোক, শুভ নববর্ষ।
নতুন সকাল। নতুন আলো। নতুন বছর। স্বাগত ১৪২৯।আজ গ্রীষ্মের তুখোড় দিনের শুরু। সেই সঙ্গে শুরু নতুন বছরের। মাত্র গতকালই শেষ হয়েছে বসন্ত। কিন্তু রঙের খেলা শেষ হয়নি। গাছে গাছে নতুন পাতায় রঙের বিভিন্ন স্তর—কোনোটা গাঢ়, কোনোটা ফিকে। এই গাঢ় কিংবা ফিকে রং বৈচিত্র্যের এক আশ্চর্য প্রতীক।
কৃষিভিত্তিক সাংস্কৃতিক কাঠামোর ওপর গড়ে ওঠা আমাদের নাগরিক সমাজে আজ সাজ সাজ রব। মেলায়, ফ্যাশনে, খাদ্যে বৈশাখের এই পয়লা দিন শতভাগ বাঙালি। আজকের সকাল শুরু হবে পান্তা খেয়ে। আজকের স্বাদ কোরকের রাজা ইলিশ। পাত ভরে আজ ঝালে-ঝোলে-অম্বলে বাঙালি রসনার আয়োজন। আজকের ফ্যাশনে থাকবে বাঙালিয়ানার ছাপ, অঙ্গে শোভা বাড়াবে শাড়ি ও পাঞ্জাবি। সাদা আর লাল এই দুটি রং আমাদের নতুন বছরের প্রতিনিধিত্ব করে। আজ চারদিকে থাকবে তারই উপস্থিতি। আজ প্রাণে প্রাণ মিলবে মেলায়, আজ ভুভুজেলা নয়, বাজবে ভেঁপু। সন্ধ্যার মুখে সেখানে খাওয়া হবে গুড়ের জিলাপি। বাঙালির আদি মিষ্টিগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। এই একুশ শতকে আমরা যাকে ‘গ্রামীণ’ বলে জানি, তার গণ্ডি পেরিয়ে এই একটি মাত্র উৎসব নাগরিক হয়ে উঠতে পেরেছে আমাদের সব সীমাবদ্ধতা ছিন্ন করে।
বদলের বৈশাখে স্বাগতম
সর্বজনীন হয়ে ওঠা এ উৎসবের শরীরে লেগে আছে শত শত বছরের ইতিহাস। সে ইতিহাসের পাতায় যেমন লেখা আছে রাজা বিক্রমাদিত্যের নাম, তেমনি আছে নেপালের রাজা সন পো কিংবা মোগল সম্রাট আকবরের নাম। সে ইতিহাসে যেমন আছে বৈশাখ, তেমনি আছে অঘ্রান মাসের নাম। ফলে বাংলা নতুন বছরের ইতিহাস বেশ জটিল। প্রাচীনপন্থী পণ্ডিতেরা বলেন, অঘ্রান বা অগ্রহায়ণ মাসটি এখন বাংলা ক্যালেন্ডারের অষ্টম মাস হলেও এককালে এটি ছিল বাংলা বছরের শুরুর মাস। অগ্র অর্থ আগে বা শুরু আর হায়ন অর্থ বছর। ‘অগ্রহায়ণ’ শব্দটির আরেকটি অর্থ হলো, বছরের যে সময় শ্রেষ্ঠ ব্রীহি উৎপন্ন হয়। ব্রীহি মানে ফসল। বাংলার মূল ফসল যেহেতু ধান, তাই বাংলায় ব্রীহির সমার্থক হয়ে গেছে ধান। বছরের যে সময় প্রধান ফসল উৎপন্ন হয়, সে সময়েই তো নতুন বছর হওয়ার কথা। এটাও তা-ই ছিল। কিন্তু বহু বছর পর মোগল সম্রাট আকবর বৈশাখে প্রবর্তন করেন ফসলি সন, যা মূলত খাজনা আদায়ের জন্য নির্ধারণ করা হয়। পরে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো বাঙালিরাও সেটিই পালন করে থাকে প্রতিবছর।
বদলের বৈশাখে আরও অনেক চমক আছে। প্রাচীন ভারত উপমহাদেশ শুধু নয়, এই আধুনিক সময়েও ভারতের ‘বিভিন্ন প্রান্তে কৃষিভিত্তিক, ইতরযানী যেসব অব্দ প্রচলিত আছে, তার সবই পয়লা বৈশাখেই শুরু হয়। যেমন, উত্তর ভারতের বৈশাখী, আসামের রঙ্গালি বিহু, তামিলনাড়ুর পুথাণ্ডু, কেরালার ভিশু, ওডিশার বিষুব-সংক্রান্তি, মিথিলার জুড় শীতল এবং বাংলার পয়লা বৈশাখ। উল্লেখ্য, তিব্বতি বর্ষারম্ভও পয়লা বৈশাখেই পালিত হয়। মোগল ব্যবস্থার ‘ফসলি সন’ বা হিজরি সালের বর্ষারম্ভের সঙ্গে একে কোনোভাবেই যুক্ত করা যায় না।’
সে জন্যই বলছি, বদলের বৈশাখের ইতিহাস বেশ জটিল ও বর্ণিল। এ জন্যই সম্ভবত এ উৎসবের কোথাও পান্তা-ইলিশের সুগন্ধ, কোথাও কৃষিজীবনের প্রথা পালনের ঘটা, তো কোথাও লাল-সাদার যুগলবন্দী আর কলহাস্যে উচ্ছ্বসিত উদ্দাম তারুণ্য। তবে এ কথা ঠিক, নতুন বছর পালনের ইতিহাস আর্যদের দান নয়। এ গল্প এই ভূমিতে গড়ে ওঠা মানুষের।
তারুণ্যের উৎসবে
উৎসব যতই প্রাচীন হোক, তরুণেরা থাকে বলেই সেটি শত বছরেও তার যৌবন ধরে রাখে। তারুণ্য মানেই রং। তারুণ্য মানেই প্রাণ। এই রং আর প্রাণ আছে বলে আমাদের নতুন বছরের দিনটি বর্ণময়। বর্ণে-গন্ধে-ছন্দে-গীতিতে তারাই মাতিয়ে তোলে উৎসবগুলো। আর তাদের রাঙিয়ে তুলতে থাকে হরেক আয়োজন। সে আয়োজনে তরুণেরাই রাজা।
করোনাহীন উৎসব
করোনাভাইরাস পৃথিবী থেকে নির্মূল হয়নি। কিন্তু মানুষের প্রচেষ্টার কাছে তার প্রকোপ কমেছে। দুই বছর পর এবার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে উৎসব করবে। করোনার মরণ ছোবল থেকে আমরা যারা এখনো বেঁচে আছি, তাদের জীবনে আরও একটা নতুন বছর দেখার সুযোগ ঘটে গেল। এও সত্যি আশ্চর্যের বিষয়। রং ছড়িয়ে এ জীবন উপভোগ করা দরকার। আজ রং ছড়িয়ে যাক প্রাণ থেকে প্রাণে। সুর ছড়িয়ে যাক কণ্ঠ থেকে কণ্ঠে। কোটি কণ্ঠে ধ্বনিত হোক, শুভ নববর্ষ।
দিগন্তবিস্তৃত ধানখেতের মাথার ওপর নীল আকাশে উঁকি দেবে সাদা মেঘ। শরৎকাল বলে ভুল হতে পারে। ভুল ভাঙলে দেখতে পাবেন, মেঘের ভেলা সূর্যের আলোয় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে হয়ে উঠছে গোলাপি কিংবা লাল। বুঝবেন, আপনি শরতের সাদা মেঘ নয়, দেখছেন তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
২ দিন আগেকোনো কিছু ওপর থেকে নিচে পড়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে। স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে আমরা সবাই এ বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলোতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্র কাজ করে না। অর্থাৎ সেসব জায়গায় কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। যেতে চান সেই সব জায়গায়?
২ দিন আগেশীত, বসন্ত আর বর্ষায় বাংলার নীল নদ সারির রূপ বদলে ফেলে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে দক্ষ মাঝিরাও ভয়ে ভয়ে বইঠা চালান। আর শীতে সারি নদীর নীল পানি দেয় অপার্থিব জগতের খোঁজ। নদীটি ধরে কিছুদূর উজান বাইলেই পাওয়া যাবে লালাখাল জিরো পয়েন্ট।
২ দিন আগেভ্রমণকালে রোগবালাই থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী না হলে ভ্রমণের আনন্দ মাঠে মারা যেতে পারে। ভ্রমণের সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেছে নিতে পারেন কিছু উপায়।
২ দিন আগে