অধ্যাপক ডা. সানজিদা শাহরিয়া
ভালোবাসা মানুষের জীবনের এমন একটি মৌলিক আবেগ যেটা শরীরের ওপরও প্রভাব বিস্তার করে। দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক রক্ষার মূলমন্ত্র হলো পারস্পরিক অঙ্গীকার, একই ধরনের মূল্যবোধ, খোলামেলা আলাপ, আপস, ভালোবাসা এবং কখনোই হাল ছেড়ে না দেওয়া। ভালোবাসা বা প্রেম শৈলীর বিভিন্ন ধরন আছে। মানুষের বিভিন্ন ধরনের মনোভাবের ওপর ভিত্তি করে রোমান্টিক ভালোবাসাকে ছয়টি গঠনশৈলীতে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে তিনটি প্রাইমারি বা মুখ্য এবং তিনটি সেকেন্ডারি। সেকেন্ডারি তৈরি হয়েছে দুটো প্রাইমারির মিশ্রণের ফলে।
প্রাইমারি বা মুখ্য ভালোবাসা
১. ইরোস (অনুরাগী, রোমান্টিক ভালোবাসা): এতে তীব্র মানসিক ও শারীরিক আবেগ থাকে।
২. লুডুস (কৌতুকপূর্ণ, দুষ্ট–মিষ্টি ভালোবাসা): এটা সেই মানুষদের জন্য প্রযোজ্য যাঁরা ভালোবাসাকে খেলা হিসেবে দেখেন এবং নির্দিষ্ট মুহূর্তকে তাঁরা গুরুত্ব দেন কিন্তু অঙ্গীকারবদ্ধ হন না।
৩. স্টোরজ (বন্ধুত্বপূর্ণ, মমতাময় ভালোবাসা): এখানে পরস্পরের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব ও আবেগ থেকে। এখানে বন্ধুত্বপূর্ণ অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ চূড়ান্ত এবং জীবনসঙ্গী দুজন একই ধরনের আগ্রহ ও অঙ্গীকারবদ্ধ সম্পর্ক চর্চা করেন।
সেকেন্ডারি ভালোবাসা
১. ম্যানিয়া বা আবেশী বা আসক্তির পর্যায়ে ভালোবাসা: এটি ইরোস ও লুডুসের সমন্বয়ে তৈরি হয়। এ ধরনের ভালোবাসায় মানুষ আধিপত্যবাদী, অবসেসিভ আচরণ করে এবং জীবনসঙ্গীর প্রতি অন্য কেউ আগ্রহ দেখালে বা জীবন সঙ্গী অন্য কারও সঙ্গে কথা বললে ঈর্ষান্বিত হয়।
২. প্রাগমা বা বাস্তবসম্মত, যুক্তিসংগত ভালোবাসা: এ ধরনের ভালোবাসা তৈরি হয় স্টোরজ ও লুডুসের সমন্বয়ে। দুজন মানুষ বাস্তবতার নিরিখে যৌক্তিক বিশ্লেষণে প্রেমে পড়েন এবং দুজন দুজনের সঙ্গী নির্বাচন করার ক্ষেত্রে পারস্পরিক বিশ্বাস ও একই উদ্দেশ্যকে বিবেচনায় রাখেন।
৩. আগাপে বা পরোপকারী, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা: এটি তৈরি হয় ইরোস ও স্টোরজ মিলে। এ ধরনের ভালোবাসায় মানুষ নিঃস্বার্থভাবে নিজেকে উজাড় করে জীবনসঙ্গীকে ভালোবাসেন এবং জীবনসঙ্গীর জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকেন।
ছোটবেলা থেকে বেড়ে ওঠার ধাপে ধাপে সিনেমা, গল্পের বই থেকে যে রোমান্টিকতা আমরা শিখি সেটা খুব সহজ গল্প। আমরা কল্পনা করি, কোনো এক অনাগত দিনে হাজার মানুষের মধ্যে হাজার মানুষের ভিড়ে আমাদের সোলমেটের সঙ্গে আমাদের চোখাচোখি হবে।
পলকে বুকের রক্ত ছলকে উঠবে। দম আটকে যাবে। ব্যাকগ্রাউন্ডে বেহালা বাজবে। দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরব। তারপর বিয়ে হবে। বিয়ের পরে সন্তান হবে। এরপরের পুরো ঘটনাটি এক কথায় শেষ করে দেওয়া হয় যে, সুখে শান্তিতে বাকি জীবনটি কাটবে। রূপকথার বইয়ের শেষ লাইনেও এ রকমই থাকে— দে লিভড হ্যাপিলি আফটার।
কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের ভালোবাসার পরের গল্পটি এ রকম নয়। এখানে ভালোবাসার সঙ্গে বিভ্রান্তি আছে, হৃদয়ভাঙার বেদনা আছে, পারিবারিক চাপ আছে। কারণ বাস্তব রূপকথা নয়। প্রেমের পাঁচটি পর্যায়ের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে অধিকাংশ সম্পর্কই অধিকাংশ ক্ষেত্রে তৃতীয় পর্যায়ে এসে ভেঙে যায়। এই পাঁচটি পর্যায় হলো,
প্রেমে পড়া: প্রেমে পড়া চমৎকার অনুভূতি। এতে আসক্তি আছে। প্রেমে পড়লে আমাদের শরীরে প্রচুর হরমোন দিয়ে আমরা প্লাবিত হই। এগুলোর মধ্যে আছে ডোপামিন, অক্সিটোসিন, সেরোটোনিন, টেস্টোস্টেরন, ইস্ট্রোজেন। কিন্তু আসল কথা হলো, প্রেমে পড়া প্রকৃতিরই একটি চালাকি যেখানে মানুষ তার প্রজাতির বংশবিস্তার করার অবচেতন উদ্দেশ্যে একজন আরেকজনের সঙ্গে মিলিত হয়। ফলে আমাদের মনে আশা, স্বপ্ন পল্লবিত হয় এবং সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগে। ঠিক এই জায়গাটাই খেয়াল করা প্রয়োজন। কারণ যেখানে স্বপ্ন থাকে সেখানে স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনাও থাকতে পারে। ফলে সচেতনতা প্রয়োজন।
যুগল: আমি থেকে আমরায় পরিণত হওয়ার সূচনা। এই পর্যায়ে দুটো আলাদা মানুষ ধীরে ধীরে যুগল রূপে আবির্ভূত হন। ভালোবাসা ধীরে গভীর হয়। দাম্পত্য জীবন শুরু হয়। এই যুগল স্রোতে ভাসা আনন্দময়। ধীরে ধীরে বন্ধন দৃঢ় হয়। পথ পরিক্রমায় কখনো সন্তান আসে। সম্পর্কে উষ্ণতা থাকে। সঙ্গী দূরে থাকলেও অনুভব করা যায় যে সে পাশে আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়, ‘এত ভালোবাসি, এত যারে চাই,/ মনে হয় না তো সে যে কাছে নাই,…।’
মোহভঙ্গ: রূপকথার বইতে বা রোমান্টিক উপন্যাসে কখনো মোহভঙ্গের মনস্তত্ত্ব ব্যাখ্যা করা হয় না। দেখা যায়, মানুষ এক বা একাধিকবার রোমান্টিক সম্পর্কে মোহভঙ্গ তথা স্বপ্ন ভঙ্গের শিকার হয়। এই পর্যায়ে এসে খারাপ লাগা শুরু হয়। আমরা অবাক হয়ে ভাবি, এই কি সেই স্বপ্নের মানুষ যাকে চেয়েছিলাম? এখন যাকে দেখছি তার সঙ্গে তো আমি প্রেমে পড়ি নাই!
যেকোনো বয়সেই মোহভঙ্গের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে মধ্য বয়সে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটতে দেখা যায়। এই সময় আমরা খিটখিটে হয়ে যাই, রাগ করি, তীব্র বেদনায় জর্জরিত হই এবং কখনো কখনো নিজেকে সরিয়ে ফেলি। প্রচণ্ডভাবে কাজে মন দিয়ে ফেলি যাতে এই মোহ ভঙ্গের সম্পর্ক থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারি। কিন্তু অতৃপ্তি পুঞ্জীভূত হতেই থাকে।
মোহভঙ্গের ফলে মানুষের দুটো প্রতিক্রিয়া হয়। প্রথমটি হলো বেদনা এবং দ্বিতীয়টি হলো অস্বস্তি। নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে বেদনা ক্রমশ ফিকে হয়ে যায়। সময় যত গড়ায় ততই প্রাক্তনের উপস্থিতি মুছে যেতে থাকে, নতুনের উপস্থিতি গাঢ় হতে থাকে। এর পরেই আসে মানুষের চতুর্থ পর্যায়।
সত্যিকারের ভালোবাসার ঠিকানা: মনস্তাত্ত্বিকভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে ৯০ শতাংশ বর্তমান আন্তঃসম্পর্কের দ্বন্দ্বের মূল শেকড় অতীতে প্রথিত। কাজেই নিজের চোখে আয়না ধরে অতীতের ভুলগুলো শুধরে নিতে হবে। এ সময় নিজের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে অন্যের সীমাবদ্ধতাকে সম্মান জানাতে হবে। পারস্পরিক সীমাবদ্ধতা গ্রহণের সঙ্গে সম্পর্কে আসে মর্যাদা। একটা সম্পর্কে ভালোবাসার থেকেও মর্যাদার প্রয়োজন অনেক বেশি। যার কারণে শুধু ভালোবাসা দিয়ে সম্পর্ক টিকে না সম্পর্ক টিকতে প্রয়োজন পরস্পরকে সম্মান করার প্রবণতা।
আমরা করব জয়: দুজনের যৌথ শক্তিতে পৃথিবীকে মোকাবিলা করার পর্যায় এটি। দুজনেই জানেন যে পৃথিবী সহজ নয়, সেখানে যুদ্ধ আছে, দ্বন্দ্ব আছে, সহিংসতা আছে। অস্তিত্ব টেকানোর লড়াই ভয়ংকর। তারপরও দুটো মানুষ যখন যূথবদ্ধ হয়ে কমরেডশিপ অঙ্গীকারে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে তখন মনুষ্যত্বের বিজয়গাথা রচিত হয়। কাজেই জীবনসঙ্গীর সঙ্গে শান্তি ও স্বস্তির সন্ধি খুবই প্রয়োজন।
তবে আমরা যদি দুটো মানুষের মধ্যে পারস্পরিক পার্থক্য ও দ্বন্দ্বকে সরিয়ে দীর্ঘস্থায়ী ভালোবাসার রাজ্য খুঁজে পেতে পারি তাহলে আমাদের এই যুগল পথ চলা আমাদের শিখিয়ে দেবে পৃথিবীর যাবতীয় প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে কীভাবে লড়াই করতে হয়। কারণ দিন শেষে, আমরা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল।
লেখক: চিকিৎসক, কাউন্সেলর, সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার, ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার বিডি
ভালোবাসা মানুষের জীবনের এমন একটি মৌলিক আবেগ যেটা শরীরের ওপরও প্রভাব বিস্তার করে। দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক রক্ষার মূলমন্ত্র হলো পারস্পরিক অঙ্গীকার, একই ধরনের মূল্যবোধ, খোলামেলা আলাপ, আপস, ভালোবাসা এবং কখনোই হাল ছেড়ে না দেওয়া। ভালোবাসা বা প্রেম শৈলীর বিভিন্ন ধরন আছে। মানুষের বিভিন্ন ধরনের মনোভাবের ওপর ভিত্তি করে রোমান্টিক ভালোবাসাকে ছয়টি গঠনশৈলীতে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে তিনটি প্রাইমারি বা মুখ্য এবং তিনটি সেকেন্ডারি। সেকেন্ডারি তৈরি হয়েছে দুটো প্রাইমারির মিশ্রণের ফলে।
প্রাইমারি বা মুখ্য ভালোবাসা
১. ইরোস (অনুরাগী, রোমান্টিক ভালোবাসা): এতে তীব্র মানসিক ও শারীরিক আবেগ থাকে।
২. লুডুস (কৌতুকপূর্ণ, দুষ্ট–মিষ্টি ভালোবাসা): এটা সেই মানুষদের জন্য প্রযোজ্য যাঁরা ভালোবাসাকে খেলা হিসেবে দেখেন এবং নির্দিষ্ট মুহূর্তকে তাঁরা গুরুত্ব দেন কিন্তু অঙ্গীকারবদ্ধ হন না।
৩. স্টোরজ (বন্ধুত্বপূর্ণ, মমতাময় ভালোবাসা): এখানে পরস্পরের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব ও আবেগ থেকে। এখানে বন্ধুত্বপূর্ণ অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ চূড়ান্ত এবং জীবনসঙ্গী দুজন একই ধরনের আগ্রহ ও অঙ্গীকারবদ্ধ সম্পর্ক চর্চা করেন।
সেকেন্ডারি ভালোবাসা
১. ম্যানিয়া বা আবেশী বা আসক্তির পর্যায়ে ভালোবাসা: এটি ইরোস ও লুডুসের সমন্বয়ে তৈরি হয়। এ ধরনের ভালোবাসায় মানুষ আধিপত্যবাদী, অবসেসিভ আচরণ করে এবং জীবনসঙ্গীর প্রতি অন্য কেউ আগ্রহ দেখালে বা জীবন সঙ্গী অন্য কারও সঙ্গে কথা বললে ঈর্ষান্বিত হয়।
২. প্রাগমা বা বাস্তবসম্মত, যুক্তিসংগত ভালোবাসা: এ ধরনের ভালোবাসা তৈরি হয় স্টোরজ ও লুডুসের সমন্বয়ে। দুজন মানুষ বাস্তবতার নিরিখে যৌক্তিক বিশ্লেষণে প্রেমে পড়েন এবং দুজন দুজনের সঙ্গী নির্বাচন করার ক্ষেত্রে পারস্পরিক বিশ্বাস ও একই উদ্দেশ্যকে বিবেচনায় রাখেন।
৩. আগাপে বা পরোপকারী, নিঃস্বার্থ ভালোবাসা: এটি তৈরি হয় ইরোস ও স্টোরজ মিলে। এ ধরনের ভালোবাসায় মানুষ নিঃস্বার্থভাবে নিজেকে উজাড় করে জীবনসঙ্গীকে ভালোবাসেন এবং জীবনসঙ্গীর জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত থাকেন।
ছোটবেলা থেকে বেড়ে ওঠার ধাপে ধাপে সিনেমা, গল্পের বই থেকে যে রোমান্টিকতা আমরা শিখি সেটা খুব সহজ গল্প। আমরা কল্পনা করি, কোনো এক অনাগত দিনে হাজার মানুষের মধ্যে হাজার মানুষের ভিড়ে আমাদের সোলমেটের সঙ্গে আমাদের চোখাচোখি হবে।
পলকে বুকের রক্ত ছলকে উঠবে। দম আটকে যাবে। ব্যাকগ্রাউন্ডে বেহালা বাজবে। দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরব। তারপর বিয়ে হবে। বিয়ের পরে সন্তান হবে। এরপরের পুরো ঘটনাটি এক কথায় শেষ করে দেওয়া হয় যে, সুখে শান্তিতে বাকি জীবনটি কাটবে। রূপকথার বইয়ের শেষ লাইনেও এ রকমই থাকে— দে লিভড হ্যাপিলি আফটার।
কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক জীবনের ভালোবাসার পরের গল্পটি এ রকম নয়। এখানে ভালোবাসার সঙ্গে বিভ্রান্তি আছে, হৃদয়ভাঙার বেদনা আছে, পারিবারিক চাপ আছে। কারণ বাস্তব রূপকথা নয়। প্রেমের পাঁচটি পর্যায়ের কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে অধিকাংশ সম্পর্কই অধিকাংশ ক্ষেত্রে তৃতীয় পর্যায়ে এসে ভেঙে যায়। এই পাঁচটি পর্যায় হলো,
প্রেমে পড়া: প্রেমে পড়া চমৎকার অনুভূতি। এতে আসক্তি আছে। প্রেমে পড়লে আমাদের শরীরে প্রচুর হরমোন দিয়ে আমরা প্লাবিত হই। এগুলোর মধ্যে আছে ডোপামিন, অক্সিটোসিন, সেরোটোনিন, টেস্টোস্টেরন, ইস্ট্রোজেন। কিন্তু আসল কথা হলো, প্রেমে পড়া প্রকৃতিরই একটি চালাকি যেখানে মানুষ তার প্রজাতির বংশবিস্তার করার অবচেতন উদ্দেশ্যে একজন আরেকজনের সঙ্গে মিলিত হয়। ফলে আমাদের মনে আশা, স্বপ্ন পল্লবিত হয় এবং সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগে। ঠিক এই জায়গাটাই খেয়াল করা প্রয়োজন। কারণ যেখানে স্বপ্ন থাকে সেখানে স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনাও থাকতে পারে। ফলে সচেতনতা প্রয়োজন।
যুগল: আমি থেকে আমরায় পরিণত হওয়ার সূচনা। এই পর্যায়ে দুটো আলাদা মানুষ ধীরে ধীরে যুগল রূপে আবির্ভূত হন। ভালোবাসা ধীরে গভীর হয়। দাম্পত্য জীবন শুরু হয়। এই যুগল স্রোতে ভাসা আনন্দময়। ধীরে ধীরে বন্ধন দৃঢ় হয়। পথ পরিক্রমায় কখনো সন্তান আসে। সম্পর্কে উষ্ণতা থাকে। সঙ্গী দূরে থাকলেও অনুভব করা যায় যে সে পাশে আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়, ‘এত ভালোবাসি, এত যারে চাই,/ মনে হয় না তো সে যে কাছে নাই,…।’
মোহভঙ্গ: রূপকথার বইতে বা রোমান্টিক উপন্যাসে কখনো মোহভঙ্গের মনস্তত্ত্ব ব্যাখ্যা করা হয় না। দেখা যায়, মানুষ এক বা একাধিকবার রোমান্টিক সম্পর্কে মোহভঙ্গ তথা স্বপ্ন ভঙ্গের শিকার হয়। এই পর্যায়ে এসে খারাপ লাগা শুরু হয়। আমরা অবাক হয়ে ভাবি, এই কি সেই স্বপ্নের মানুষ যাকে চেয়েছিলাম? এখন যাকে দেখছি তার সঙ্গে তো আমি প্রেমে পড়ি নাই!
যেকোনো বয়সেই মোহভঙ্গের ঘটনা ঘটতে পারে। তবে মধ্য বয়সে এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটতে দেখা যায়। এই সময় আমরা খিটখিটে হয়ে যাই, রাগ করি, তীব্র বেদনায় জর্জরিত হই এবং কখনো কখনো নিজেকে সরিয়ে ফেলি। প্রচণ্ডভাবে কাজে মন দিয়ে ফেলি যাতে এই মোহ ভঙ্গের সম্পর্ক থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে পারি। কিন্তু অতৃপ্তি পুঞ্জীভূত হতেই থাকে।
মোহভঙ্গের ফলে মানুষের দুটো প্রতিক্রিয়া হয়। প্রথমটি হলো বেদনা এবং দ্বিতীয়টি হলো অস্বস্তি। নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে বেদনা ক্রমশ ফিকে হয়ে যায়। সময় যত গড়ায় ততই প্রাক্তনের উপস্থিতি মুছে যেতে থাকে, নতুনের উপস্থিতি গাঢ় হতে থাকে। এর পরেই আসে মানুষের চতুর্থ পর্যায়।
সত্যিকারের ভালোবাসার ঠিকানা: মনস্তাত্ত্বিকভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে ৯০ শতাংশ বর্তমান আন্তঃসম্পর্কের দ্বন্দ্বের মূল শেকড় অতীতে প্রথিত। কাজেই নিজের চোখে আয়না ধরে অতীতের ভুলগুলো শুধরে নিতে হবে। এ সময় নিজের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে অন্যের সীমাবদ্ধতাকে সম্মান জানাতে হবে। পারস্পরিক সীমাবদ্ধতা গ্রহণের সঙ্গে সম্পর্কে আসে মর্যাদা। একটা সম্পর্কে ভালোবাসার থেকেও মর্যাদার প্রয়োজন অনেক বেশি। যার কারণে শুধু ভালোবাসা দিয়ে সম্পর্ক টিকে না সম্পর্ক টিকতে প্রয়োজন পরস্পরকে সম্মান করার প্রবণতা।
আমরা করব জয়: দুজনের যৌথ শক্তিতে পৃথিবীকে মোকাবিলা করার পর্যায় এটি। দুজনেই জানেন যে পৃথিবী সহজ নয়, সেখানে যুদ্ধ আছে, দ্বন্দ্ব আছে, সহিংসতা আছে। অস্তিত্ব টেকানোর লড়াই ভয়ংকর। তারপরও দুটো মানুষ যখন যূথবদ্ধ হয়ে কমরেডশিপ অঙ্গীকারে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে তখন মনুষ্যত্বের বিজয়গাথা রচিত হয়। কাজেই জীবনসঙ্গীর সঙ্গে শান্তি ও স্বস্তির সন্ধি খুবই প্রয়োজন।
তবে আমরা যদি দুটো মানুষের মধ্যে পারস্পরিক পার্থক্য ও দ্বন্দ্বকে সরিয়ে দীর্ঘস্থায়ী ভালোবাসার রাজ্য খুঁজে পেতে পারি তাহলে আমাদের এই যুগল পথ চলা আমাদের শিখিয়ে দেবে পৃথিবীর যাবতীয় প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে কীভাবে লড়াই করতে হয়। কারণ দিন শেষে, আমরা একে অপরের ওপর নির্ভরশীল।
লেখক: চিকিৎসক, কাউন্সেলর, সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার, ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার বিডি
দিগন্তবিস্তৃত ধানখেতের মাথার ওপর নীল আকাশে উঁকি দেবে সাদা মেঘ। শরৎকাল বলে ভুল হতে পারে। ভুল ভাঙলে দেখতে পাবেন, মেঘের ভেলা সূর্যের আলোয় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে হয়ে উঠছে গোলাপি কিংবা লাল। বুঝবেন, আপনি শরতের সাদা মেঘ নয়, দেখছেন তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
১ দিন আগেকোনো কিছু ওপর থেকে নিচে পড়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে। স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে আমরা সবাই এ বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলোতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্র কাজ করে না। অর্থাৎ সেসব জায়গায় কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। যেতে চান সেই সব জায়গায়?
১ দিন আগেশীত, বসন্ত আর বর্ষায় বাংলার নীল নদ সারির রূপ বদলে ফেলে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে দক্ষ মাঝিরাও ভয়ে ভয়ে বইঠা চালান। আর শীতে সারি নদীর নীল পানি দেয় অপার্থিব জগতের খোঁজ। নদীটি ধরে কিছুদূর উজান বাইলেই পাওয়া যাবে লালাখাল জিরো পয়েন্ট।
১ দিন আগেভ্রমণকালে রোগবালাই থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী না হলে ভ্রমণের আনন্দ মাঠে মারা যেতে পারে। ভ্রমণের সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেছে নিতে পারেন কিছু উপায়।
১ দিন আগে