সানজিদা কাওছার ঋতু, ঢাকা
ইউটিউবে সবচেয়ে বেশিবার দেখা ভিডিওগুলোর একটি হচ্ছে ‘বেবি শার্ক’। শিশুদের জন্য তৈরি দুই মিনিটের এ ভিডিও ২০১৬ সালের ১৮ জুন ইউটিউবে পোস্ট করার পরই বিলবোর্ড হট ১০০–এর তালিকায় জায়গা করে নেয়। এরপর একের পর এক জনপ্রিয় শিল্পীদের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে এ গানটি। স্ট্যাটিস্টার তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি পর্যন্ত এ গানটি ইউটিউবে দেখা হয়েছে মোট ১৩ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন বার!
মূলত শিশুদের জন্য তৈরি করা হলেও এ গানটি মা–বাবার ওপরও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। শিশুরা যতবার এ গান শুনতে চায়, তাদের সঙ্গে মা–বাবাদেরও এ গান শুনতে হয়। বারবার এ গান শুনে মা–বাবার বিরক্তি এসে গেলেও শিশুদের সাধ মেটে না!
শিশুরা কেন এ গান বারবার শুনতে চায়, তা নিয়ে বৈজ্ঞানিক কিছু ব্যাখ্যা বের করেছে অনলাইন ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেইলি বিস্ট।
এ গানটির কথা পুনরাবৃত্তিমূলক। এর সহজ সুর ও কথা সহজেই মুখস্থ হয়ে যায় এবং এটি গাওয়াও সহজ। সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের থর্নটন স্কুল অব মিউজিকের সহযোগী অধ্যাপক বিয়াট্রিজ ইলারি শিশুদের সংগীত নিয়ে ব্যাপকভাবে অধ্যয়ন করেছেন। তিনি বলেন, শিশুদের শব্দভান্ডার অত্যন্ত সীমিত হয়। তাই কোনো শব্দের বারবার পুনরাবৃত্তি করলে তারা সহজ শব্দগুলো মনে রাখতে পারে। প্রাপ্তবয়স্করাও এ গান একবার শুনলে গুণগুণ করতে থাকেন।
ভ্যালোরি সালিমপুর একজন স্নায়ু বৈজ্ঞানিক পরামর্শক এবং মন্ট্রিল নিউরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের একজন গবেষক। তিনি মানব মস্তিষ্ক কেন এবং কীভাবে সংগীত প্রক্রিয়া করে তা নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁর গবেষণায় শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় সুরগুলো মস্তিষ্কের ডোপামিনার্জিক সিস্টেমে তীব্র আনন্দের অনুভূতি তৈরি করতে পারে। মস্তিষ্কের এ ব্যবস্থা থেকেই আনন্দ, সন্তোষ ও পুরস্কারের অনুভূতি উৎসারিত হয়।
সালিমপুর বলেন, ‘ডোপামিন নিঃসরণ ধারণা তৈরি এবং পরিণতি মূল্যায়নের ওপর নির্ভর করে। যখন কোনো কিছু আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে ভালো হয় তখন ডোপামিন ক্ষরিত হয় এবং এর ফলে সুখানুভূতির সৃষ্টি হয়।’
সালিমপুরের গবেষণায় দেখা গেছে, ডোপামিনার্জিক সিস্টেম সুপিরিয়র টেম্পোরাল গাইরাসের সঙ্গে মিলে কাজ করে। মস্তিষ্কের এ অংশটি এমন একটি অঞ্চল যা কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা সমস্ত শব্দ সম্পর্কে তথ্য সংরক্ষণ করে। এ শব্দ–স্মৃতিগুলোর মধ্যে শিশুর নিজের শোনা, বাবা–মায়ের শোনা এবং স্কুলে সহপাঠীদের শোনা গান অন্তর্ভুক্ত থাকে। শব্দের সঙ্গে এ সম্পর্কগুলো কোনো ব্যক্তি কোন বিষয়ে আনন্দ পাবে এবং কোন কারণে তার ডোপামিন ক্ষরিত হবে মস্তিষ্ককে সেটির পূর্বানুমান করতে সাহায্য করে।
সালিমপুর বলেন, ‘কোনো সংগীত যদি খুব বেশি অনুমানযোগ্য এবং পুনরাবৃত্তিমূলক হয় তবে ডোপামিনের নিঃসরণ হবে না।’ সালিমপুর তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, তাঁর দুই বছর বয়সী সন্তান ঘুম থেকে উঠেই জিজ্ঞেস করে, ‘বেবি শার্ক কোথায়?’ তাহলে কোন ধরনের সংগীত মানুষকে আকর্ষণ করে, সে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি যখন কোনো সংগীত শুনতে যাচ্ছেন, তখন সেটির শব্দ বিন্যাস সম্পর্কে একেবারেই পূর্বানুমান করতে না পারলে সেটিতে তাঁর জন্য কোনো সুখকর চমক থাকে না।’
‘বেবি শার্ক’ গানটি শিশুদের কাছে আকর্ষণীয় হওয়ার আরও একটি কারণ হলো, গানটি পরিবার ও প্রাণী নিয়ে। শিশুদের গান রচনার একটি সাধারণ উপাদান হলো প্রাণীদের নাম। ‘বেবি শার্ক’ গানটি শুরু হয় গল্পের মূল চরিত্রকে উপস্থাপনের মাধ্যমে। এ গানটির মূল চরিত্রগুলো হলো—বেবি শার্ক, মা শার্ক, বাবা শার্ক, গ্র্যান্ডমা শার্ক ও গ্র্যান্ডপা শার্ক। শিশুদের জন্য এ শব্দগুলো বেশ পরিচিত। প্রত্যেক পরিবারের সদস্যদের নাম গানে চারবার ও একই সুরে বলায় তা শিশুর স্মৃতিতে সহজে গেঁথে যাচ্ছে। এতে তাদের গল্প শোনার আগ্রহ ও প্রত্যেক চরিত্রের সঙ্গে পরিচিতি আরও দৃঢ় হয়।
সালিমপুর বলেন, ‘গানের কথা সহজ মনে হলেও এ শব্দগুলোই মূলত শিশুকে গানটির প্রতি আকৃষ্ট করে। বেবি, ড্যাডি, মামি, গ্র্যান্ডপা, গ্র্যান্ডমা—এ শব্দগুলোর সঙ্গে শিশু বেশি সংযোগ বোধ করে। এই সংযুক্তি বোধ সংগীতের সঙ্গে একটি বন্ধন তৈরি করতে সাহায্য করে। এ মানুষগুলোর সঙ্গেই শিশুর বেশি ইতিবাচক সম্পর্ক থাকে, যার ফলে শিশুর মস্তিষ্কের আবেগ ও পুরস্কার ব্যবস্থা প্রভাবিত হয়।’
এখানে ইলারি যোগ করেন, ‘শিশু ও প্রাপ্তবয়স্করা এ গানের কথাগুলো নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে পারেন এবং গান নতুন করে সাজাতে পারেন এবং অসংখ্যবার এ গান দেখতে পারেন।’
সালিমপুর বলেন, ‘গানের নাম “বেবি শার্ক” দিয়েই এর জনপ্রিয়তার কারণ বোঝা যায়। শিশুরা নিজেদের বেবি ও প্রাণী হিসেবে প্রকাশ করতে পছন্দ করে বেশি। শার্ক বা হাঙর, প্রাণী হিসেবে তাদের কাছে বেশ মজার। শিশু মনে এটি ভয়েরও সঞ্চার করতে পারে। এই গান তাদের প্রাণীর সঙ্গে যেমন সম্পৃক্ত করে তেমন হাঙরকে তুলনামূলকভাবে কম ভীতিকর হিসেবেও উপস্থাপন করে।’
শিশুদের গানে গানে গল্প শোনানোর জন্য এর লয় খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই গানের গতি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। ভ্যালোরি বলেন, ‘এই গানের তাল, মাত্রা ও লয়ের কারণে এটি বেশ সক্রিয় মনে হয়। ভিডিওতে মাছগুলো দৌড়ে পালানোর সময় “রান অ্যাওয়ে ডু ডু ডু (পালিয়ে যাও) ” কথায় গানটির গতি বেড়ে যায়। আবার যখন “সেফ অ্যাট লাস্ট (অবশেষে নিরাপদ) ” বলা হয়, তখন গানটি তুলনামূলক ধীর লয়ে গাওয়া হয়। শিশুরা গানটির সক্রিয় অংশ অভিনয় করে দেখাতে পছন্দ করে।’
সালিমপুর বলেন, ‘আনন্দ ও আবিষ্কারের আদিম এ অনুভূতিটির কারণে যেসব প্রাপ্তবয়স্কের সন্তান নেই তাঁরাও এ গানটি শুনতে পছন্দ করেন।’
ক্রমে গানটি দ্রুত লয়ে গাওয়ার কারণে শিশুরা গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাচতে বাধ্য হয়। দ্রুত লয়ের সুরের সঙ্গে বড় ছোট সবাই তাল মেলাতে পছন্দ করে। এ কারণে পপ মিউজিকে ও ক্লাবে এ ধরনের সুরের গান বাজানো হয়। দ্রুত লয়ের গান আমাদের মস্তিষ্কের আদি কোষ ও অন্যান্য প্রাচীন ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে। এ ছাড়া এ ধরনের গান ডোপামিন নিঃসরণে সাহায্য করে।
আরেকটি তত্ত্ব হলো, শিশুর হৃৎস্পন্দন সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে দ্রুত হয়। হৃৎস্পন্দনের সঙ্গে মিলে যায় এমন লয়ের সংগীত তারা পছন্দ করে।
সংগীতের বিট বিন্যাসের সঙ্গে দেহের নড়াচড়ার মিলও অত্যন্ত আনন্দদায়ক হতে পারে। কারণ, এতে মস্তিষ্কের অনুমান ক্রিয়া জড়িত থাকে। তাই অপরিচিত গানের তুলনায় পরিচিত গানের সঙ্গে নাচ বেশি আনন্দদায়ক মনে হয়। যোগ করেন ইলারি সালিমপুর।
শিশুদের জন্য এ গানটি যে শুধু শ্রুতিমধুর তাই নয়; এর দৃশ্যায়নও বেশ আকর্ষণীয়। বেবি শার্ক গানটিতে অডিও ও ভিডিওর চমৎকার সংমিশ্রণ ঘটানো হয়েছে।
ইলারি বলেন, শিশুদের গানে দৃশ্যায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারা শুধু গান শোনে না, তারা গান দেখেও এবং এর সঙ্গে অভিনয়ও করে। উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার, সহজ নাচ ও গ্রিন স্ক্রিনের ব্যবহার গানটিকে শিশুদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
২০১৫ সালে গানটির যে সংস্করণ বেরিয়েছিল তাতে কেবল অ্যানিমেশন ও মানুষের মতো দেখতে চরিত্র ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে ২০১৬ সালে ভাইরাল হওয়া সংস্করণটিতে শিশুদের এ গান শুনে এর তালে তালে নাচতেও দেখানো হয়। এ দৃশ্যের মধ্যে শিশুরা নিজেকে খুঁজে পায়।
একটি শিশু সন্তানের মা হিসেবে ইলারি বলেন, ‘আমরা জানি, শিশুরা অন্য শিশুকে স্ক্রিনে দেখতে পছন্দ করে। তারা স্ক্রিনে দেখা শিশুদের অনুকরণ করতে পছন্দ করে।’
প্রাপ্তবয়স্কদের কাছে এ গানে কার্টুনের মতো পরিবেশে নাচতে থাকা শিশুদের আদুরে মনে হলেও, শিশুদের অবিকশিত মস্তিষ্কে বড় বড় চোখ, জ্যামিতিক আকৃতি, রঙিন সমুদ্র ও বন্ধুভাবাপন্ন হাঙর বেশ আকর্ষণীয় মনে হয়।
আর প্রাপ্তবয়স্কদের এ গান পছন্দ করার একটি কারণ হলো, এটি তাদের ছোটবেলার কথা মনে করিয়ে দেয়। এটি তাদের ওই এক সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়, যখন তারা রাজনীতি ও দায়িত্বের ভারে নুয়ে ছিল না।
সালিমপুর বলেন, তাঁর দুই বছর বয়সী সন্তানও ঘুম থেকে উঠেই সবার আগে বেবি শার্ক গান শুনতে চায়। আর তাঁর চিকিৎসক স্বামীও সারা দিন এ গানই গুণগুণ করতে থাকেন। এমনকি হাসপাতালের নার্সেরাও এখন এ গান গুনগুন শুরু করেছেন!
ইউটিউবে সবচেয়ে বেশিবার দেখা ভিডিওগুলোর একটি হচ্ছে ‘বেবি শার্ক’। শিশুদের জন্য তৈরি দুই মিনিটের এ ভিডিও ২০১৬ সালের ১৮ জুন ইউটিউবে পোস্ট করার পরই বিলবোর্ড হট ১০০–এর তালিকায় জায়গা করে নেয়। এরপর একের পর এক জনপ্রিয় শিল্পীদের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে এ গানটি। স্ট্যাটিস্টার তথ্য অনুযায়ী, গত জানুয়ারি পর্যন্ত এ গানটি ইউটিউবে দেখা হয়েছে মোট ১৩ দশমিক ৯৩ বিলিয়ন বার!
মূলত শিশুদের জন্য তৈরি করা হলেও এ গানটি মা–বাবার ওপরও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। শিশুরা যতবার এ গান শুনতে চায়, তাদের সঙ্গে মা–বাবাদেরও এ গান শুনতে হয়। বারবার এ গান শুনে মা–বাবার বিরক্তি এসে গেলেও শিশুদের সাধ মেটে না!
শিশুরা কেন এ গান বারবার শুনতে চায়, তা নিয়ে বৈজ্ঞানিক কিছু ব্যাখ্যা বের করেছে অনলাইন ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডেইলি বিস্ট।
এ গানটির কথা পুনরাবৃত্তিমূলক। এর সহজ সুর ও কথা সহজেই মুখস্থ হয়ে যায় এবং এটি গাওয়াও সহজ। সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের থর্নটন স্কুল অব মিউজিকের সহযোগী অধ্যাপক বিয়াট্রিজ ইলারি শিশুদের সংগীত নিয়ে ব্যাপকভাবে অধ্যয়ন করেছেন। তিনি বলেন, শিশুদের শব্দভান্ডার অত্যন্ত সীমিত হয়। তাই কোনো শব্দের বারবার পুনরাবৃত্তি করলে তারা সহজ শব্দগুলো মনে রাখতে পারে। প্রাপ্তবয়স্করাও এ গান একবার শুনলে গুণগুণ করতে থাকেন।
ভ্যালোরি সালিমপুর একজন স্নায়ু বৈজ্ঞানিক পরামর্শক এবং মন্ট্রিল নিউরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের একজন গবেষক। তিনি মানব মস্তিষ্ক কেন এবং কীভাবে সংগীত প্রক্রিয়া করে তা নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁর গবেষণায় শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় সুরগুলো মস্তিষ্কের ডোপামিনার্জিক সিস্টেমে তীব্র আনন্দের অনুভূতি তৈরি করতে পারে। মস্তিষ্কের এ ব্যবস্থা থেকেই আনন্দ, সন্তোষ ও পুরস্কারের অনুভূতি উৎসারিত হয়।
সালিমপুর বলেন, ‘ডোপামিন নিঃসরণ ধারণা তৈরি এবং পরিণতি মূল্যায়নের ওপর নির্ভর করে। যখন কোনো কিছু আমাদের প্রত্যাশার চেয়ে ভালো হয় তখন ডোপামিন ক্ষরিত হয় এবং এর ফলে সুখানুভূতির সৃষ্টি হয়।’
সালিমপুরের গবেষণায় দেখা গেছে, ডোপামিনার্জিক সিস্টেম সুপিরিয়র টেম্পোরাল গাইরাসের সঙ্গে মিলে কাজ করে। মস্তিষ্কের এ অংশটি এমন একটি অঞ্চল যা কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা সমস্ত শব্দ সম্পর্কে তথ্য সংরক্ষণ করে। এ শব্দ–স্মৃতিগুলোর মধ্যে শিশুর নিজের শোনা, বাবা–মায়ের শোনা এবং স্কুলে সহপাঠীদের শোনা গান অন্তর্ভুক্ত থাকে। শব্দের সঙ্গে এ সম্পর্কগুলো কোনো ব্যক্তি কোন বিষয়ে আনন্দ পাবে এবং কোন কারণে তার ডোপামিন ক্ষরিত হবে মস্তিষ্ককে সেটির পূর্বানুমান করতে সাহায্য করে।
সালিমপুর বলেন, ‘কোনো সংগীত যদি খুব বেশি অনুমানযোগ্য এবং পুনরাবৃত্তিমূলক হয় তবে ডোপামিনের নিঃসরণ হবে না।’ সালিমপুর তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, তাঁর দুই বছর বয়সী সন্তান ঘুম থেকে উঠেই জিজ্ঞেস করে, ‘বেবি শার্ক কোথায়?’ তাহলে কোন ধরনের সংগীত মানুষকে আকর্ষণ করে, সে প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি যখন কোনো সংগীত শুনতে যাচ্ছেন, তখন সেটির শব্দ বিন্যাস সম্পর্কে একেবারেই পূর্বানুমান করতে না পারলে সেটিতে তাঁর জন্য কোনো সুখকর চমক থাকে না।’
‘বেবি শার্ক’ গানটি শিশুদের কাছে আকর্ষণীয় হওয়ার আরও একটি কারণ হলো, গানটি পরিবার ও প্রাণী নিয়ে। শিশুদের গান রচনার একটি সাধারণ উপাদান হলো প্রাণীদের নাম। ‘বেবি শার্ক’ গানটি শুরু হয় গল্পের মূল চরিত্রকে উপস্থাপনের মাধ্যমে। এ গানটির মূল চরিত্রগুলো হলো—বেবি শার্ক, মা শার্ক, বাবা শার্ক, গ্র্যান্ডমা শার্ক ও গ্র্যান্ডপা শার্ক। শিশুদের জন্য এ শব্দগুলো বেশ পরিচিত। প্রত্যেক পরিবারের সদস্যদের নাম গানে চারবার ও একই সুরে বলায় তা শিশুর স্মৃতিতে সহজে গেঁথে যাচ্ছে। এতে তাদের গল্প শোনার আগ্রহ ও প্রত্যেক চরিত্রের সঙ্গে পরিচিতি আরও দৃঢ় হয়।
সালিমপুর বলেন, ‘গানের কথা সহজ মনে হলেও এ শব্দগুলোই মূলত শিশুকে গানটির প্রতি আকৃষ্ট করে। বেবি, ড্যাডি, মামি, গ্র্যান্ডপা, গ্র্যান্ডমা—এ শব্দগুলোর সঙ্গে শিশু বেশি সংযোগ বোধ করে। এই সংযুক্তি বোধ সংগীতের সঙ্গে একটি বন্ধন তৈরি করতে সাহায্য করে। এ মানুষগুলোর সঙ্গেই শিশুর বেশি ইতিবাচক সম্পর্ক থাকে, যার ফলে শিশুর মস্তিষ্কের আবেগ ও পুরস্কার ব্যবস্থা প্রভাবিত হয়।’
এখানে ইলারি যোগ করেন, ‘শিশু ও প্রাপ্তবয়স্করা এ গানের কথাগুলো নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে পারেন এবং গান নতুন করে সাজাতে পারেন এবং অসংখ্যবার এ গান দেখতে পারেন।’
সালিমপুর বলেন, ‘গানের নাম “বেবি শার্ক” দিয়েই এর জনপ্রিয়তার কারণ বোঝা যায়। শিশুরা নিজেদের বেবি ও প্রাণী হিসেবে প্রকাশ করতে পছন্দ করে বেশি। শার্ক বা হাঙর, প্রাণী হিসেবে তাদের কাছে বেশ মজার। শিশু মনে এটি ভয়েরও সঞ্চার করতে পারে। এই গান তাদের প্রাণীর সঙ্গে যেমন সম্পৃক্ত করে তেমন হাঙরকে তুলনামূলকভাবে কম ভীতিকর হিসেবেও উপস্থাপন করে।’
শিশুদের গানে গানে গল্প শোনানোর জন্য এর লয় খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই গানের গতি ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। ভ্যালোরি বলেন, ‘এই গানের তাল, মাত্রা ও লয়ের কারণে এটি বেশ সক্রিয় মনে হয়। ভিডিওতে মাছগুলো দৌড়ে পালানোর সময় “রান অ্যাওয়ে ডু ডু ডু (পালিয়ে যাও) ” কথায় গানটির গতি বেড়ে যায়। আবার যখন “সেফ অ্যাট লাস্ট (অবশেষে নিরাপদ) ” বলা হয়, তখন গানটি তুলনামূলক ধীর লয়ে গাওয়া হয়। শিশুরা গানটির সক্রিয় অংশ অভিনয় করে দেখাতে পছন্দ করে।’
সালিমপুর বলেন, ‘আনন্দ ও আবিষ্কারের আদিম এ অনুভূতিটির কারণে যেসব প্রাপ্তবয়স্কের সন্তান নেই তাঁরাও এ গানটি শুনতে পছন্দ করেন।’
ক্রমে গানটি দ্রুত লয়ে গাওয়ার কারণে শিশুরা গানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নাচতে বাধ্য হয়। দ্রুত লয়ের সুরের সঙ্গে বড় ছোট সবাই তাল মেলাতে পছন্দ করে। এ কারণে পপ মিউজিকে ও ক্লাবে এ ধরনের সুরের গান বাজানো হয়। দ্রুত লয়ের গান আমাদের মস্তিষ্কের আদি কোষ ও অন্যান্য প্রাচীন ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে। এ ছাড়া এ ধরনের গান ডোপামিন নিঃসরণে সাহায্য করে।
আরেকটি তত্ত্ব হলো, শিশুর হৃৎস্পন্দন সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের চেয়ে দ্রুত হয়। হৃৎস্পন্দনের সঙ্গে মিলে যায় এমন লয়ের সংগীত তারা পছন্দ করে।
সংগীতের বিট বিন্যাসের সঙ্গে দেহের নড়াচড়ার মিলও অত্যন্ত আনন্দদায়ক হতে পারে। কারণ, এতে মস্তিষ্কের অনুমান ক্রিয়া জড়িত থাকে। তাই অপরিচিত গানের তুলনায় পরিচিত গানের সঙ্গে নাচ বেশি আনন্দদায়ক মনে হয়। যোগ করেন ইলারি সালিমপুর।
শিশুদের জন্য এ গানটি যে শুধু শ্রুতিমধুর তাই নয়; এর দৃশ্যায়নও বেশ আকর্ষণীয়। বেবি শার্ক গানটিতে অডিও ও ভিডিওর চমৎকার সংমিশ্রণ ঘটানো হয়েছে।
ইলারি বলেন, শিশুদের গানে দৃশ্যায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তারা শুধু গান শোনে না, তারা গান দেখেও এবং এর সঙ্গে অভিনয়ও করে। উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার, সহজ নাচ ও গ্রিন স্ক্রিনের ব্যবহার গানটিকে শিশুদের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
২০১৫ সালে গানটির যে সংস্করণ বেরিয়েছিল তাতে কেবল অ্যানিমেশন ও মানুষের মতো দেখতে চরিত্র ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে ২০১৬ সালে ভাইরাল হওয়া সংস্করণটিতে শিশুদের এ গান শুনে এর তালে তালে নাচতেও দেখানো হয়। এ দৃশ্যের মধ্যে শিশুরা নিজেকে খুঁজে পায়।
একটি শিশু সন্তানের মা হিসেবে ইলারি বলেন, ‘আমরা জানি, শিশুরা অন্য শিশুকে স্ক্রিনে দেখতে পছন্দ করে। তারা স্ক্রিনে দেখা শিশুদের অনুকরণ করতে পছন্দ করে।’
প্রাপ্তবয়স্কদের কাছে এ গানে কার্টুনের মতো পরিবেশে নাচতে থাকা শিশুদের আদুরে মনে হলেও, শিশুদের অবিকশিত মস্তিষ্কে বড় বড় চোখ, জ্যামিতিক আকৃতি, রঙিন সমুদ্র ও বন্ধুভাবাপন্ন হাঙর বেশ আকর্ষণীয় মনে হয়।
আর প্রাপ্তবয়স্কদের এ গান পছন্দ করার একটি কারণ হলো, এটি তাদের ছোটবেলার কথা মনে করিয়ে দেয়। এটি তাদের ওই এক সময়ের কথা মনে করিয়ে দেয়, যখন তারা রাজনীতি ও দায়িত্বের ভারে নুয়ে ছিল না।
সালিমপুর বলেন, তাঁর দুই বছর বয়সী সন্তানও ঘুম থেকে উঠেই সবার আগে বেবি শার্ক গান শুনতে চায়। আর তাঁর চিকিৎসক স্বামীও সারা দিন এ গানই গুণগুণ করতে থাকেন। এমনকি হাসপাতালের নার্সেরাও এখন এ গান গুনগুন শুরু করেছেন!
দিগন্তবিস্তৃত ধানখেতের মাথার ওপর নীল আকাশে উঁকি দেবে সাদা মেঘ। শরৎকাল বলে ভুল হতে পারে। ভুল ভাঙলে দেখতে পাবেন, মেঘের ভেলা সূর্যের আলোয় ক্ষণে ক্ষণে রং বদলে হয়ে উঠছে গোলাপি কিংবা লাল। বুঝবেন, আপনি শরতের সাদা মেঘ নয়, দেখছেন তুষারে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘা।
১ দিন আগেকোনো কিছু ওপর থেকে নিচে পড়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে। স্কুলের পদার্থবিজ্ঞান বইয়ে আমরা সবাই এ বিষয়ে পড়েছি। কিন্তু এমন কিছু জায়গা আছে, যেগুলোতে স্যার আইজ্যাক নিউটনের সূত্র কাজ করে না। অর্থাৎ সেসব জায়গায় কোনো মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নেই। যেতে চান সেই সব জায়গায়?
১ দিন আগেশীত, বসন্ত আর বর্ষায় বাংলার নীল নদ সারির রূপ বদলে ফেলে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢল নামলে দক্ষ মাঝিরাও ভয়ে ভয়ে বইঠা চালান। আর শীতে সারি নদীর নীল পানি দেয় অপার্থিব জগতের খোঁজ। নদীটি ধরে কিছুদূর উজান বাইলেই পাওয়া যাবে লালাখাল জিরো পয়েন্ট।
১ দিন আগেভ্রমণকালে রোগবালাই থেকে দূরে থাকার বিকল্প নেই। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা শক্তিশালী না হলে ভ্রমণের আনন্দ মাঠে মারা যেতে পারে। ভ্রমণের সময় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেছে নিতে পারেন কিছু উপায়।
১ দিন আগে