১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার সার্কুলার প্রকাশিত হয়েছে। ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আবেদন করা যাবে। ২০২৪ সালের মার্চ মাসে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হতে পারে। শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা ও নিয়োগের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ তুলে ধরেছেন ৩৫তম বিসিএসের শিক্ষা ক্যাডার প্রাপ্ত গাজী মিজানুর রহমান।
- শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ক্যাটাগরি ৩ টি: কলেজ পর্যায়, স্কুল পর্যায় ও স্কুল পর্যায়-২।
- কলেজ পর্যায়ের জন্য অনার্স লাগে; অথবা ডিগ্রি + মাস্টার্স সমমানের ফাজিল ও কামিল। বেতন গ্রেড ৯ম। বেসিক ২২,০০০ টাকা শুরুতে।
- স্কুল পর্যায় মানে সহকারী শিক্ষক বা ইবতেদায়ি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক। এই পদে ডিগ্রি বা ফাজিল পাস হলেই চলে। অথবা অনার্স হলেও চলবে। তবে কিছু সাবজেক্টে ৩ বছর বা ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা হলেও চলে। আবার কিছু বিষয়ের ক্ষেত্রে যেকোনো বিষয়ে অনার্স বা ডিগ্রি করার পর ১ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা করলেও আবেদন করতে পারবেন, যে বিষয়ে ডিপ্লোমা করেছেন সেই বিষয়ে। যেমন আইসিটি, কৃষি শিক্ষা, শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের সহকারী শিক্ষক পদে। বেতন গ্রেড ১০ম অথবা ১১ তম যাঁদের বিএড ডিগ্রি আছে, তাঁরা ১০ গ্রেডে বেতন পাবেন। অর্থাৎ বেসিক ১৬,০০০ টাকা। যাঁদের বিএড নেই, তাঁরা ১১তম গ্রেডে বেতন পাবেন। অর্থাৎ বেসিক ১২,৫০০ টাকা।
- স্কুল পর্যায়-২: জুনিয়র শিক্ষক (বাংলা ও ইংরেজি বিষয়ে), বা জুনিয়র মৌলভি, জুনিয়র কারি ইবতেদায়ি মাদ্রাসার জন্য। এইচএসসি পাস করেই এই পদে আবেদন করা যায়। বেতন গ্রেড ১৬তম। অর্থাৎ, চাকরির শুরুতে বেসিক বেতন পাবেন ৯,৩০০ টাকা।
- শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলিমিনারির প্রশ্ন প্রতিটি ক্যাটাগরির জন্য একই রকম হয়। অর্থাৎ, কলেজ পর্যায়ের সবার জন্য একই প্রশ্ন, স্কুল পর্যায়ের সবার জন্য একই প্রশ্ন ও স্কুল পর্যায়-২-এর সবার জন্য একই প্রশ্ন। এই ক্ষেত্রে বাংলা, ইংরেজি, সাধারণ জ্ঞান ও গণিত ২৫টি করে মোট ১০০ নম্বরের এমসিকিউ প্রশ্ন হবে। সময় ১ ঘণ্টা। প্রতিটি সঠিক উত্তরের জন্য ১ নম্বর করে পাবে এবং প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ করে কাটা যাবে প্রাপ্ত নম্বর থেকে। প্রিলিতে পাস হলো ১০০ নম্বরের মধ্যে ৪০ শতাংশ, অর্থাৎ ৪০ নম্বর পেলেই প্রিলিমিনারি পাস।
- প্রিলিতে উত্তীর্ণদের নিয়ে লিখিত হয় ১০০ নম্বরের। লিখিত পরীক্ষার সময় ৩ ঘণ্টা। এই ক্ষেত্রে যে বিষয়ের শিক্ষক হওয়ার জন্য আবেদন করেছিল, সেই বিষয়ের ওপর ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হবে। পরীক্ষা কর্তৃপক্ষ তাদের চাহিদা অনুযায়ী বিধি মোতাবেক প্রতিটি বিষয়ে নির্দিষ্টসংখ্যক প্রার্থীকে উত্তীর্ণ হওয়ার সুযোগ দিয়ে থাকেন এবং পরে ভাইভার জন্য কল করবেন।
- ভাইভা হয় ২০ নম্বরের। এর মধ্যে ১২ নম্বর শিক্ষাজীবনে অর্জিত সনদ তথা সার্টিফিকেটের ওপর। বাকি ৮ নম্বর ভাইভা বোর্ডে কর্মক্ষমতার ওপর নির্ভর করে। তবে এই উভয় ক্ষেত্রে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। অর্থাৎ, সার্টিফিকেটসমূহের ১২ নম্বরের মাঝে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ এবং ভাইভা বোর্ডের ৮ নম্বরের মাঝে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে।
- লিখিত ১০০ ও ভাইভার ২০, মোট ১২০ নম্বরের পর জাতীয় মেধাতালিকা প্রণীত হয় বিষয়ভিত্তিক আলাদাভাবে। এই ক্ষেত্রে প্রিলিমিনারির কোনো নম্বর যুক্ত হয় না।
- জাতীয় মেধাতালিকায় স্থানপ্রাপ্তদের জন্য অর্থাৎ শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভায় উত্তীর্ণদের জন্য গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ।
- গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হওয়ার পর তিন বিভাগের বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষকেরা নিজেদের কাঙ্ক্ষিত পদের বিপরীতে শূন্য পদ থাকা সাপেক্ষে এমপিওভুক্ত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদন করে। এই ক্ষেত্রে আবেদন এক হাজার টাকা। একজন প্রার্থী সাধারণত ৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শূন্য পদে আবেদন করতে পারেন।
- নিজেদের পছন্দের পদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় মেধাতালিকা অনুযায়ী ম্যাচ করলে এনটিআরসিএ থেকে সরাসরি নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। এই ক্ষেত্রে কোনো তদবির বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটির আশীর্বাদের প্রয়োজন হয় না ২০১৫ সাল থেকে।
- প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় বই: কলেজ পর্যায়, স্কুল পর্যায় ও স্কুল পর্যায়-২-এর প্রিলিমিনারির প্রস্তুতির জন্য ‘শিক্ষক নিবন্ধন Analysis’ বইটি পড়তে পারেন। লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য বিগত সালের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন ও এনটিআরসিএ কর্তৃক প্রদত্ত লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস অনুযায়ী এইচএসসি, অনার্স/ডিগ্রির এবং ক্ষেত্র বিশেষে নবম-দশম শ্রেণির বই থেকে সংশ্লিষ্ট বিষয় নিজে নোট করে পড়লে বেশি ভালো ফল পাওয়া যায়। এ ছাড়া বাজারে বিভিন্ন প্রকাশনীর বই পাওয়া যায়। সেগুলোও দেখা যেতে পারে। তবে এই ক্ষেত্রে নিজে নোট করে পড়লে বেশি নম্বর পাওয়ার সুযোগ থাকে। ভাইভার প্রস্তুতি জন্য নিজের অনার্স/ডিগ্রি ও মাস্টার্সের বইগুলো ও বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ এবং সমসাময়িক বিষয়গুলো জানলেই চলে।
- পরীক্ষা কোথায় অনুষ্ঠিত হয়? প্রিলিমিনারি পরীক্ষা সারা দেশে ২২টি শহরে অনুষ্ঠিত হয়। সে ক্ষেত্রে ৮টি বিভাগীয় শহরে ৮টি শহর ছাড়াও ১৪টি জেলা শহরে অনুষ্ঠিত হয়। বাকি জেলাগুলো হলো গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, নোয়াখালী, রাঙামাটি, বগুড়া, পাবনা, নওগাঁ, যশোর, কুষ্টিয়া, পটুয়াখালী, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, জামালপুর জেলায়। তবে লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় কেবল ৮টি বিভাগীয় শহরে। ভাইভা অনুষ্ঠিত হয় শুধু এনটিআরসিএসের ঢাকার প্রধান কার্যালয়, রেড ক্রিসেন্ট বোরাক টাওয়ার, ইস্কাটন গার্ডেন রোড, রমনা, ঢাকা-১০০০।
- একজন প্রার্থী মোট কতটি পদে আবেদন করতে পারবেন? শিক্ষক নিবন্ধন নিয়োগ পরীক্ষায় প্রার্থীর তিনটি বিভাগেই আবেদন করার সুযোগ থাকলে সর্বোচ্চ দুটি বিভাগে আবেদন করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে স্কুল পর্যায় ও স্কুল পর্যায়-২-এর যেকোনো একটি এবং কলেজ পর্যায়ে। প্রতিটি ক্যাটাগরিতে কেবল একটি করে পদে আবেদন করা যাবে। তবে মনে রাখতে হবে, কেউ চাইলেও স্কুল পর্যায় ও স্কুল পর্যায়-২ উভয় বিভাগে আবেদন করতে পারবেন না, আবেদন করলেও লাভ হবে না। কারণ, স্কুল পর্যায় ও স্কুল পর্যায়-২ বিভাগের পরীক্ষা একই দিন ও সময়ে অনুষ্ঠিত হয়।
তবে কলেজ পর্যায়ের পরীক্ষা পরের দিন অনুষ্ঠিত হয়। অথবা কখনো কখনো স্কুল পর্যায় ও স্কুল পর্যায়-২-এর পরীক্ষা সকালবেলা অনুষ্ঠিত হলে কলেজ পর্যায়ের পরীক্ষা বিকেলেও অনুষ্ঠিত হতে পারে সেটা এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অনুষ্ঠিত হয়। তবে কখনো স্কুল পর্যায় ও স্কুল পর্যায়-২-এর সময়ের সঙ্গে কলেজ পর্যায়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় না।