বাংলাদেশের ইনস্যুরেন্স সেক্টর বেশ বড় হলেও যারা এই ইনস্যুরেন্সের পেছনের হিসাব-নিকাশগুলো করে থাকেন, তাঁদের সংখ্যা নিতান্তই কম। আর যাঁরা এই কাজগুলো করে থাকেন, তাঁদের অ্যাকচুয়ারি বলা হয়। অ্যাকচুয়ারিরা গণিত ও পরিসংখ্যানের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের গণিত অর্থনৈতিক ঝুঁকি এবং অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা নিয়ে কাজ করেন।
শুধু বিমা নয়, অ্যাকচুয়ারিরা স্বাস্থ্য খাত থেকে শুরু করে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং, ডেটা সায়েন্স, জলবায়ু খাতসহ নানা জায়গায় কাজ করে থাকেন। পৃথিবীর ১০টি সবচেয়ে বেশি বেতনভুক্ত পেশার মধ্যে ১টি হলো অ্যাকচুয়ারি প্রফেশনালস।
তবে বাংলাদেশে প্রফেশনাল অ্যাকচুয়ারির সংখ্যা খুবই কম। অ্যাসোসিয়েট আছেন অল্প কয়েকজন এবং ফেলো অ্যাকচুয়ারির সংখ্যা মাত্র দুই। তাই কাজের অনেক সুযোগ থাকলেও অনেকেরই এই ডিগ্রি সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকায় এটাকে কাজে লাগাতে পারছেন না। তা ছাড়া এই ডিগ্রির জন্য পরীক্ষা ও পড়াশোনা বাবদ আপনার চার-পাঁচ লাখ টাকা লাগবে। তাই খরচের কথা চিন্তা করেও অনেকেই এই ডিগ্রি নিতে অনীহা প্রকাশ করেন।
বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে বিশ্বমানের ভবিষ্যৎ অ্যাকচুয়ারিদের খুঁজে বের করতে প্রতিবছর মেটলাইফ বাংলাদেশ প্রফেশনাল অ্যাকচুয়ারিয়াল স্টাডি স্কলারশিপ (পাস) দিয়ে থাকে। তবে কতজনকে এই স্কলারশিপ দেওয়া হবে, তা নিয়ে কোনো ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। যাঁরা স্ট্যান্ডার্ড নম্বরের থেকে বেশি পাবেন, তাঁদেরই দেওয়া হবে। যেমন ২০২৪ সালে ১৬ জন এই স্কলারশিপ পেলেও, ২০২৩ সালে ৪ জন পেয়েছিলেন।
সুযোগ-সুবিধা
এর আওতায় বৃত্তিপ্রাপ্তদের রেজিস্ট্রেশন ও পরীক্ষার ফি থেকে শুরু করে, বই ও ফিন্যান্সিয়াল ক্যালকুলেটর কেনার খরচও দেওয়া হয়। এ ছাড়া সার্টিফাইড অ্যাকচুয়ারিদের থেকে মেন্টরশিপ তো থাকছেই।
বছরে দুইবার পরীক্ষা হয়—এপ্রিল ও সেপ্টেম্বরে। প্রতিবারে একটি করে, অর্থাৎ বছরে দুইটা কোর্সের পরীক্ষা দিয়ে দিতে হবে। প্রথমবারেই পাস করতে পারলে ৩০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। তবে প্রথমবার পাস করতে না পারলে দ্বিতীয় বার পরীক্ষা দেওয়ার সময় ৫০ শতাংশ রেজিস্ট্রেশন ফি মেটলাইফ দিয়ে দেবে। পাস করার পর বাকি ৫০ শতাংশ এবং ২০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে।আবেদনের যোগ্যতা
■ স্নাতকপড়ুয়া হতে হবে।
■ যেকোনো বিভাগের শিক্ষার্থী হতে পারবেন।
■ গণিত, অর্থনীতি ও পরিসংখ্যানে অনেক ভালো দখল থাকতে হবে।
■ ভালো রেজাল্ট থাকতে হবে।
■ অ্যানালাইটিকাল দক্ষতা থাকতে হবে।
■ ইনভেস্টমেন্ট সম্পর্কিত সহশিক্ষা কার্যক্রম বা শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে আগ্রহ থাকা ভালো।
আবেদনের প্রক্রিয়া
প্রতিবছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে মেটলাইফ বাংলাদেশ পাস স্কলারশিপের সার্কুলার দিয়ে থাকে। সেখানে গিয়ে নিজের সিভি জমা দিতে হয়। সিভি দেখে বাছাই করা শিক্ষার্থীদের লিখিত পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়। তবে লিখিত পরীক্ষার আগে একটি সেমিনারের আয়োজন করা হয়, যেখানে অ্যাকচুয়ারি নিয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেদের নানান প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারবেন। লিখিত পরীক্ষার পর ভাইভা হয়। আর ভাইভায় যাঁরা টিকে যান, তাঁরাই এই বৃত্তির জন্য নির্বাচিত হন। বৃত্তি পাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের একই সঙ্গে ইনস্টিটিউট অ্যান্ড ফ্যাকাল্টি অব অ্যাকচুয়ারি ও ইউনিভার্সিটির পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে।
লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় যা যা আসে
এইচএসসি বা এ লেভেল স্ট্যান্ডার্ড সাধারণ গণিত, উচ্চতর গণিত ও পরিসংখ্যান থেকে প্রশ্ন এসে থাকে। পাশাপাশি ইংরেজি ও অ্যানালাইটিকস থেকেও প্রশ্ন করা হয়। কিছু প্রশ্ন থাকে পরিস্থিতিনির্ভর। যেমন একটি ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইসিসের কথা উল্লেখ করে বলল, এমন পরিস্থিতিতে তুমি কেমন সিদ্ধান্ত নেবে। কিংবা সাম্প্রতিক সময়ে তোমার পড়া একটি খবর নিয়ে লেখো, যেখানে এই খবরের পেছনের কারণ, প্রভাব ও সমাধানও বলা থাকবে। মৌখিক পরীক্ষায় আপনি আসলেই অ্যাকচুয়ারি সম্পর্কে জানেন কি না এবং হিসাব-নিকাশ করতে পছন্দ করেন কি না, এগুলো খুব গুরুত্বসহকারে দেখা হয়। কারণ ধৈর্য ছাড়া এই ডিগ্রি কোনোভাবেই নেওয়া সম্ভব নয়।
অনুলিখন: মুসাররাত আবির