আইন বিষয়ে অধ্যয়নরত অধিকাংশ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন থাকে সহকারী জজ হওয়া। তাই বিজেএস প্রস্তুতির পাশাপাশি আবেদন হতে হবে নির্ভুলভাবে। বিজেএস পরীক্ষার প্রস্তুতি ও আবেদন সম্পর্কে নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে পরামর্শ দিয়েছেন ১৬তম বিজেএসে সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত মো. লিমন হোসেন।
বিজেএস পরীক্ষার ক্ষেত্রে এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার মূল সনদপত্র অনুযায়ী বয়স অনধিক ৩২ বছর হতে হবে। প্রার্থীর শিক্ষাগত যোগ্যতার ক্ষেত্রে আইন বিষয়ে চার বছর মেয়াদি স্নাতক (সম্মান) বা কোনো স্বীকৃত বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে তিন বছর মেয়াদি স্নাতকসহ স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী হতে হবে। তবে শর্ত থাকে যে উক্ত ব্যক্তিকে আইন বিষয়ে স্নাতক বা স্নাতক (সম্মান) বা ক্ষেত্রমত, আইন বিষয়ে স্নাতকোত্তর স্তরে দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএ প্রাপ্ত হতে হবে।
পরীক্ষার ধরন ও পাস নম্বর
সহকারী জজ নিয়োগের উদ্দেশ্য বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন তিনটি ধাপ তথা প্রিলিমিনারি, লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থী বাছাই করে থাকে।
■ এমসিকিউ পরীক্ষা: পরীক্ষায় মোট ১০০টি এমসিকিউ থাকবে। প্রতিটি এমসিকিউয়ের মান হবে ১ নম্বর। তবে প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য ০.২৫ নম্বর কর্তন করা হবে। সব প্রার্থীকেই লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য প্রাক্ যোগ্যতা হিসেবে এই প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। ন্যূনতম পাস নম্বর ৫০। প্রাথমিক পরীক্ষায় সাধারণ বাংলা, সাধারণ ইংরেজি, বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়সমূহ, সাধারণ গণিত, দৈনন্দিন বিজ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা এবং আইন বিষয়ের ওপর প্রশ্ন করা হবে। প্রাথমিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর কোনো প্রার্থীর লিখিত বা মৌখিক পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের সঙ্গে যোগ হবে না।
■ লিখিত পরীক্ষা: প্রাথমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। মোট ১০০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। লিখিত পরীক্ষার বিষয়সমূহে গড়ে ৫০ শতাংশ নম্বর পেলে একজন পরীক্ষার্থী লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন বলে গণ্য হবেন। আর কেউ কোনো বিষয়ে ৩০ শতাংশের কম নম্বর পেলে লিখিত পরীক্ষায় অকৃতকার্য বলে গণ্য হবেন।
■ মৌখিক পরীক্ষা: লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের ১০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। মৌখিক পরীক্ষার পাস নম্বর ৫০।
প্রস্তুতি পরামর্শ
প্রিলিমিনারি: পরীক্ষার মানবণ্টন সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে। মানবণ্টন সম্পর্কে ধারণা না থাকলে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে বুঝতে পারবেন না। আইন অংশে ৬০ জেনারেল অংশে ৪০-প্রিলিমিনারিতে ১০০ নম্বরের প্রশ্ন দুটো ভাগে বিভক্ত থাকে।
■ জুডিশিয়ারির প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় যতগুলো আইন পড়তে হয়, তার মধ্যে সিপিসি, সিআরপিসি, পেনাল কোড, সাক্ষ্য আইন পড়তে যে সময় লাগবে বাকি সব আইন পড়তে সেই সময় লাগবে বা তার চেয়ে কম সময় লাগতে পারে। তাই নম্বরের দিকে তাকালে দেখা যাচ্ছে যে চারটি বিষয়ে ১২ থেকে ১৫ নম্বরের প্রশ্ন হয়ে থাকে। বাকি আইনের প্রশ্নগুলো হয় অন্যান্য আইনগুলো থেকে, যেগুলো আয়ত্ত করা তুলনামূলক সহজ। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, কোন বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। তবে এটা ভাবলে হবে না যে ওই ৪টি আইন পড়তে হবে না। কিন্তু কোন বিষয়গুলো অল্প পড়ে অধিক নম্বর পাওয়া যাবে সেটা বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
■ অন্যদিকে জেনারেল অংশের জন্য প্রিলিমিনারিতে চারটি ভাগে মোট ৪০টি প্রশ্ন থাকে। বাংলা সাহিত্য ও বাংলা ব্যাকরণে ১০ নম্বর, ইংরেজি ১০ নম্বর, গণিত ও বিজ্ঞান ১০ নম্বর ও সাধারণ জ্ঞান ১০ নম্বর। বাংলা সাহিত্যের জন্য ‘সাহিত্য জিজ্ঞাসা’ বইটি পড়া যেতে পারে। আর ব্যাকরণের জন্য নবম-দশম শ্রেণির বাংলা ভাষার ব্যাকরণ (পুরোনো) বইটি। বাংলার জন্য এ দুটো বই যথেষ্ট। সাধারণ জ্ঞানের জন্য দৈনন্দিন দেশ-বিদেশে কোথায় কী ঘটছে সেসব বিষয়ে একটু নজর রাখা এবং বাজারে প্রচলিত বই পড়লেই হবে। ইংরেজির ক্ষেত্রে গ্রামারের পাশাপাশি সাহিত্যটা ভালো করে পড়তে হবে। লিখিত পরীক্ষায় ৫ নম্বরের প্রশ্ন হয় ইংরেজি থেকে। প্রিলির জন্য আলাদা করে ইংরেজি গ্রামার না পড়লেও চলবে। তবে গণিত ও বিজ্ঞানের জন্য প্রতিদিন চর্চা করতে হবে, যেটা লিখিত পরীক্ষায় কাজে দেবে। বিজ্ঞান ও গণিতের জন্য অষ্টম ও দশম শ্রেণির বোর্ড বই পড়লেই যথেষ্ট।
■ লিখিত পরীক্ষা: বিজেএসে লিখিত পরীক্ষা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এখানে দশটি পরীক্ষা দিতে হয়। প্রতিটি পরীক্ষায় পূর্ণমান ১০০, অর্থাৎ মোট ১০০০ নম্বরের পরীক্ষা। যার মধ্যে জেনারেল অংশ থেকে ৪০০ এবং আইন অংশ থেকে ৬০০ নম্বর বণ্টন হয়।
■ সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং বিষয় হলো, মানসিকভাবে শক্ত থেকে ভালোভাবে একটানা দশটি পরীক্ষা শেষ করা। অনেকেই হাল ছেড়ে দিয়ে কোনোরকম পরীক্ষাগুলো শেষ করেন, যার কারণে তাঁদের পরের পরীক্ষাগুলো খারাপ হয়।
অনুলিখন: শাহ বিলিয়া জুলফিকার