মানসিক চাপ বা স্ট্রেস মানুষের জীবনে অন্যতম একটি সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। কর্মক্ষেত্রের চাপ, ব্যক্তিগত জীবনের সমস্যাসহ নানাবিধ কারণে মানুষ প্রায়ই স্ট্রেসের মুখোমুখি হয়। স্ট্রেস যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে তা ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর চরম নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই পরিস্থিতিতে স্ট্রেস কমিয়ে জীবনের স্বাভাবিক গতিশীলতা বজায় রাখার জন্য কিছু কৌশল এবং পদ্ধতি জানা অত্যন্ত জরুরি। স্ট্রেস মোকাবিলার জন্য একটি কার্যকরী মডেল ‘৪ এ’স মডেল’। এই মডেলে স্ট্রেস কমানোর জন্য চলুন জেনে নেওয়া যাক চারটি কার্যকরী ফ্রেমওয়ার্ক।
৪ এ’স মডেল: স্ট্রেস ব্যবস্থাপনার চারটি কৌশল
- অবয়েড (Avoid): আপনার জীবনের এমন কিছু বিষয় বা পরিস্থিতি আছে, যেগুলো থেকে স্ট্রেস আসে। সেগুলো চিহ্নিত করুন এবং এড়িয়ে চলুন। যেমন অতিরিক্ত কাজের চাপ নিতে ‘না’ বলা বা এমন কোনো অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে দূরে থাকা।
- অল্টার (Alter): যখন কোনো পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব হয় না, তখন চেষ্টা করুন সেই পরিস্থিতি পরিবর্তন করার। উদাহরণস্বরূপ, কোনো কাজে নিজেকে বেশি চাপ দিতে না দিয়ে তা অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি করা বা কৌশলগতভাবে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো।
- অ্যাডাপ্ট (Adapt): অনেক সময় পরিস্থিতি পরিবর্তন করা যায় না। কিন্তু আপনি কীভাবে সেই পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়া দেখাবেন, তা পরিবর্তন করা যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কোনো সমস্যা নিয়ে অন্যভাবে চিন্তা করা বা সমস্যা পুনর্গঠিত করে দেখা।
- অ্যাকসেপ্ট (Accept): কিছু চাপের মুহূর্ত অবশ্যম্ভাবী। এ ধরনের পরিস্থিতিতে গ্রহণযোগ্যতা জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, একজন বন্ধুকে ক্ষমা করা বা যা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, তা মেনে নেওয়া।
স্ট্রেস কমানোর জন্য চারটি কার্যকরী ফ্রেমওয়ার্ক
- বক্স ব্রিদিং (Box Breathing): এটি একটি শ্বাস-প্রশ্বাসের কৌশল। যেখানে চারটি ধাপ অনুসরণ করা হয়। যেমন শ্বাস নেওয়া, ধরে রাখা, শ্বাস ছাড়া এবং আবার ধরে রাখা। এ কৌশলটি স্নায়ুতন্ত্রকে শান্ত এবং ফোকাস উন্নত করে।
- মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন: বর্তমান মুহূর্তে উপস্থিত থেকে নিজেকে চিন্তাগুলোর সঙ্গে মেলাতে সাহায্য করে। কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে এই চিন্তাগুলোকে গ্রহণ করা শিখুন, যা স্ট্রেস কমাতে সাহায্য এবং মানসিক সুস্থতা উন্নত করে।
- প্রোগ্রেসিভ মাসল রিলাক্সেশন (PMR): এই কৌশল শরীরের বিভিন্ন পেশিগোষ্ঠীর ওপর ফোকাস করে। এতে শারীরিক টান কমে আসে এবং স্ট্রেস হ্রাস পায়।
- কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT): এই পদ্ধতিতে নেতিবাচক চিন্তাগুলো চিহ্নিত এবং সেগুলোর পরিবর্তে ইতিবাচক চিন্তা প্রতিস্থাপন করা হয়। এটি চিন্তাধারার মানসিকতা উন্নত করে এবং স্ট্রেস কমায়।
স্ট্রেস কমানোর এসব পদ্ধতি বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করলে আপনি সহজেই মানসিক চাপ মোকাবিলা করতে পারবেন এবং নিজের জীবনে মানসিক শান্তি বজায় রাখতে সক্ষম হবেন।
অ্যাডাম গ্রাহামের সূত্রমতে, এই পদ্ধতিগুলোর সূচনা করেছেন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অ্যাডাম গ্রাহাম। তাঁর সুপারিশ করা কৌশলগুলো যদি সঠিকভাবে পালন করা যায়, তাহলে স্ট্রেস ব্যবস্থাপনা ও মানসিক উন্নতিতে তা বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারে।