মাহমুদুল হাসান সুনান খান
সমাজ ও মানুষের ওপর ধর্মের প্রভাব অনস্বীকার্য। ধর্ম মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক এবং সামাজিক জীবনকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। মাওলানা রুমির দেশ তুরস্কের সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক জীবনকেও বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করেছে ইসলামধর্ম। বিশেষ করে রমজানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সংস্কৃতি তুর্কিদের জীবনকে বর্ণিল করেছে।
তুর্কি সমাজে পবিত্র রমজান মাস এক ব্যতিক্রমী মুহূর্ত। অবশ্য, রমজান সব মুসলমানদের জন্যই বিশেষ সময়। তবে তুর্কিরা রমজানকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অতিথি হিসেবে বিবেচনা করে। তাই দেখা যায়, প্রতি বছর রমজান মাস ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তুরস্কের সাধারণ মানুষ আনন্দে বিমোহিত হয়ে ওঠে। সব বয়সের মানুষ নতুন প্রেরণায় জেগে ওঠে। শিশু থেকে বুড়ো—সকলেই মিলেমিশে তাদের ঘরবাড়ি, বাগান, আঙিনা, পথঘাট পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করতে শুরু করে।
রমজান উপলক্ষে আগেকার সময়ে উসমানি আমলে যেমন খাদ্যপণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হতো, এখনো সেই রীতি বলবৎ করেছে। রমজানের আগে সরকারের পক্ষ থেকে পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। রমজানের আগে থেকেই শহর–নগরের বাজারগুলো জমে ওঠে বেশ।
গ্রামের লোকজন রমজানের আগে জড়ো হয়। সেখানে নারীরা ময়দা দিয়ে আশ নামের এক ধরনের কেক তৈরি করে নিয়ে আসে। রমজান মাসজুড়ে বিভিন্ন জাতের মিষ্টান্ন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান প্রস্তুত রাখে তারা। রমজানের অধিকাংশ খাবারই বাড়িতে রান্না করা হয়। এসব তারা পাড়া–মহল্লার মসজিদগুলোতে দল বেঁধে বিতরণ করে।
রমজানের আগে মসজিদগুলোও পরিষ্কার করা হয়। এতে স্থানীয় লোকজন অংশ নেয়। এতে সমাজের সর্বস্তরের লোকজনকে কাজ করতে দেখা যায়। ধনী–গরিব, মালিক–শ্রমিকের কোনো পার্থক্য করা হয় না। এসব কাজে দূর–দুরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসে। মসজিদের জানালা, দরজা এবং বাতিগুলো মুছে সাফ–সুতরা করা হয়। কার্পেট ও পাটি উঠিয়ে পরিষ্কার করা হয়।
রমজানে তুর্কি সমাজের আবহ পুরোটা বদলে যায়। মসজিদগুলোতে দেখা যায় মুসল্লিদের ভিড়। সব বয়সের মানুষের উৎসাহপূর্ণ অংশগ্রহণ মসজিদগুলোর আঙিনায় আনন্দের মেলা বসে। সেখানে তরুণ–তরুণীরা খাবার–পানীয় বিতরণ করে। শিশুরা ছোটাছুটি করে। মুয়াজ্জিন মসজিদের ভেতর থেকে মাহিয়া কবিতা পাঠ করেন। প্রাপ্তবয়স্করা একে অন্যকে মিষ্টান্ন বিতরণ করে। এভাবেই প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে মাহে রমজানের প্রতিটি রজনী।
যুগে–যুগে রমজানকে ঘিরে তুরস্কে গড়ে উঠেছে অনেক ঐতিহ্য। এসব তুরস্কের সাহিত্য–সংস্কৃতিকেও করেছে কালোত্তীর্ণ। এসব রীতিনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এসবের কারণে তুর্কিরা বছরজুড়ে নিজেদের সামাজিক সংহিতর মজবুত বাঁধন তৈরি করতে সক্ষম হয়। এ ছাড়া জাকাত–ফিতরার রীতিও তুরস্কের গুরুত্বপূর্ণ রমজান ঐতিহ্য।
মাহে রমজানের আরেকটি তুর্কি সংস্কৃতি হলো, মাসব্যাপী মসজিদে মসজিদে, পাড়া–মহল্লায় এবং বাড়িতে–বাড়িতে পবিত্র কোরআন শোনানোর অনুষ্ঠান—মুকাবেলা। যেখানে একটি দল কোরআন তিলাওয়াত করে আর বাড়ির সবাই অত্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে তা শ্রবণ করে। বাড়ির নারীরা তিলাওয়াতকারীদের জন্য নানা ধরনের মিষ্টান্ন তৈরি করে।
সাহরির সময় ঢোল বাজিয়ে সুরেলা কবিতা পাঠ করে মানুষকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলা তুর্কিদের আরেকটি সাংস্কৃতিক উপাদান। ইফতারে টেবিলে ধনী–দরিদ্র ও শত্রু–মিত্রের পরিচয় ভুলে এক প্রাণ হওয়ার দৃষ্টান্তও এখানে বেশ প্রচলিত।
‘ইফতার’ শব্দটি তুর্কি সাহিত্যে বিশেষ করে লোক কবিতায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিয়েছে। ইফতারের দাওয়াত ও ইফতারের টেবিল নিয়ে শতাধিক কবিতা তুর্কিদের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে। এর মধ্যে সুফি কবি মাওলানা জালালুদ্দিন রুমির কিছু কবিতা চিরায়ত বিশ্বসাহিত্যে স্থান করে নিয়েছে। জীবনের দীর্ঘ সময় তিনি তুরস্কের কোনিয়ায় অতিবাহিত করেন। মৃত্যুর পর সেখানেই চিরশায়িত হন। রুমি বলেন,
প্রভুর কাছে পৌঁছানোর সবচেয়ে সোজা পথ হলো
জবান এসো, জপ করো, পাখির মতো কিচিরমিচির শব্দে
জপ করতে করতে গলা শুকিয়ে গেলে প্রভুর ডাকে সাড়া দাও
রমজানকে স্বাগত জানাও
প্রেমের পেয়ালা পান করো, তৃষ্ণা মেটাও...
লেখক: শিক্ষার্থী, ইবনে হালদুন ইউনিভার্সিটি, ইস্তাম্বুল, তুরস্ক।
সমাজ ও মানুষের ওপর ধর্মের প্রভাব অনস্বীকার্য। ধর্ম মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক এবং সামাজিক জীবনকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। মাওলানা রুমির দেশ তুরস্কের সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক জীবনকেও বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করেছে ইসলামধর্ম। বিশেষ করে রমজানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সংস্কৃতি তুর্কিদের জীবনকে বর্ণিল করেছে।
তুর্কি সমাজে পবিত্র রমজান মাস এক ব্যতিক্রমী মুহূর্ত। অবশ্য, রমজান সব মুসলমানদের জন্যই বিশেষ সময়। তবে তুর্কিরা রমজানকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অতিথি হিসেবে বিবেচনা করে। তাই দেখা যায়, প্রতি বছর রমজান মাস ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে তুরস্কের সাধারণ মানুষ আনন্দে বিমোহিত হয়ে ওঠে। সব বয়সের মানুষ নতুন প্রেরণায় জেগে ওঠে। শিশু থেকে বুড়ো—সকলেই মিলেমিশে তাদের ঘরবাড়ি, বাগান, আঙিনা, পথঘাট পরিষ্কার–পরিচ্ছন্ন করতে শুরু করে।
রমজান উপলক্ষে আগেকার সময়ে উসমানি আমলে যেমন খাদ্যপণ্যের মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হতো, এখনো সেই রীতি বলবৎ করেছে। রমজানের আগে সরকারের পক্ষ থেকে পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। রমজানের আগে থেকেই শহর–নগরের বাজারগুলো জমে ওঠে বেশ।
গ্রামের লোকজন রমজানের আগে জড়ো হয়। সেখানে নারীরা ময়দা দিয়ে আশ নামের এক ধরনের কেক তৈরি করে নিয়ে আসে। রমজান মাসজুড়ে বিভিন্ন জাতের মিষ্টান্ন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান প্রস্তুত রাখে তারা। রমজানের অধিকাংশ খাবারই বাড়িতে রান্না করা হয়। এসব তারা পাড়া–মহল্লার মসজিদগুলোতে দল বেঁধে বিতরণ করে।
রমজানের আগে মসজিদগুলোও পরিষ্কার করা হয়। এতে স্থানীয় লোকজন অংশ নেয়। এতে সমাজের সর্বস্তরের লোকজনকে কাজ করতে দেখা যায়। ধনী–গরিব, মালিক–শ্রমিকের কোনো পার্থক্য করা হয় না। এসব কাজে দূর–দুরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসে। মসজিদের জানালা, দরজা এবং বাতিগুলো মুছে সাফ–সুতরা করা হয়। কার্পেট ও পাটি উঠিয়ে পরিষ্কার করা হয়।
রমজানে তুর্কি সমাজের আবহ পুরোটা বদলে যায়। মসজিদগুলোতে দেখা যায় মুসল্লিদের ভিড়। সব বয়সের মানুষের উৎসাহপূর্ণ অংশগ্রহণ মসজিদগুলোর আঙিনায় আনন্দের মেলা বসে। সেখানে তরুণ–তরুণীরা খাবার–পানীয় বিতরণ করে। শিশুরা ছোটাছুটি করে। মুয়াজ্জিন মসজিদের ভেতর থেকে মাহিয়া কবিতা পাঠ করেন। প্রাপ্তবয়স্করা একে অন্যকে মিষ্টান্ন বিতরণ করে। এভাবেই প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে মাহে রমজানের প্রতিটি রজনী।
যুগে–যুগে রমজানকে ঘিরে তুরস্কে গড়ে উঠেছে অনেক ঐতিহ্য। এসব তুরস্কের সাহিত্য–সংস্কৃতিকেও করেছে কালোত্তীর্ণ। এসব রীতিনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, এসবের কারণে তুর্কিরা বছরজুড়ে নিজেদের সামাজিক সংহিতর মজবুত বাঁধন তৈরি করতে সক্ষম হয়। এ ছাড়া জাকাত–ফিতরার রীতিও তুরস্কের গুরুত্বপূর্ণ রমজান ঐতিহ্য।
মাহে রমজানের আরেকটি তুর্কি সংস্কৃতি হলো, মাসব্যাপী মসজিদে মসজিদে, পাড়া–মহল্লায় এবং বাড়িতে–বাড়িতে পবিত্র কোরআন শোনানোর অনুষ্ঠান—মুকাবেলা। যেখানে একটি দল কোরআন তিলাওয়াত করে আর বাড়ির সবাই অত্যন্ত মনোযোগের সঙ্গে তা শ্রবণ করে। বাড়ির নারীরা তিলাওয়াতকারীদের জন্য নানা ধরনের মিষ্টান্ন তৈরি করে।
সাহরির সময় ঢোল বাজিয়ে সুরেলা কবিতা পাঠ করে মানুষকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলা তুর্কিদের আরেকটি সাংস্কৃতিক উপাদান। ইফতারে টেবিলে ধনী–দরিদ্র ও শত্রু–মিত্রের পরিচয় ভুলে এক প্রাণ হওয়ার দৃষ্টান্তও এখানে বেশ প্রচলিত।
‘ইফতার’ শব্দটি তুর্কি সাহিত্যে বিশেষ করে লোক কবিতায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিয়েছে। ইফতারের দাওয়াত ও ইফতারের টেবিল নিয়ে শতাধিক কবিতা তুর্কিদের মধ্যে প্রচলিত রয়েছে। এর মধ্যে সুফি কবি মাওলানা জালালুদ্দিন রুমির কিছু কবিতা চিরায়ত বিশ্বসাহিত্যে স্থান করে নিয়েছে। জীবনের দীর্ঘ সময় তিনি তুরস্কের কোনিয়ায় অতিবাহিত করেন। মৃত্যুর পর সেখানেই চিরশায়িত হন। রুমি বলেন,
প্রভুর কাছে পৌঁছানোর সবচেয়ে সোজা পথ হলো
জবান এসো, জপ করো, পাখির মতো কিচিরমিচির শব্দে
জপ করতে করতে গলা শুকিয়ে গেলে প্রভুর ডাকে সাড়া দাও
রমজানকে স্বাগত জানাও
প্রেমের পেয়ালা পান করো, তৃষ্ণা মেটাও...
লেখক: শিক্ষার্থী, ইবনে হালদুন ইউনিভার্সিটি, ইস্তাম্বুল, তুরস্ক।
ওয়াজ মাহফিল গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। আবহমানকাল থেকে বাঙালি মুসলিম সমাজে এটি প্রচলিত। ওয়াজের মঞ্চ থেকে মুসলমানদের আদর্শ মুসলমান হওয়ার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। তাই এসব মাহফিল পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন হলে সমাজে নীতিনৈতিকতার চর্চা বাড়বে, অপরাধ প্রবণতা কমবে, সুন্দর ও কল্যাণময় সমাজ গড়ে তোলা সহজ হয়
৫ ঘণ্টা আগেক্যালিগ্রাফি বা লিপিকলা মুসলিম সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামি লিপিকলার সূচনা মূলত পবিত্র কোরআনকে লিখিতরূপে সংরক্ষণ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এরপর মুসলিম অক্ষরশিল্পীরা এ শিল্পকে যুগে যুগে নান্দনিক সব অনুশীলনের মধ্য দিয়ে শিল্পকলার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গে পরিণত করেন। এখানে মুসলিম লিপিকলার ৫
৫ ঘণ্টা আগেপবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তাআলা আগের যুগের নবীদের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তাতে দেখা যায়, নবীগণ বারবার বলেছেন, আমরা তোমাদের কাছে আল্লাহর পথে আহ্বান করার বিনিময়ে কোনো প্রতিদান চাই না।
৫ ঘণ্টা আগেনাম নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ বা উপহাস করা গুনাহের কাজ। নাম বিকৃত করা, অসম্পূর্ণ নামে ডাকা কোনো মুমিনের কাজ নয়। কারণ প্রকৃত মুসলিমের কথা বা কাজে অন্য কেউ কষ্ট পেতে পারে না। কারও নাম নিয়ে বিদ্রূপ করা তাকে কষ্ট দেওয়ার নামান্তর। তাই এ কাজ থেকে বিরত থাকা জরুরি।
১ দিন আগে