আসআদ শাহীন
লাইব্রেরি বা গ্রন্থাগার জ্ঞানের বাতিঘর। ইসলামের সোনালি যুগে মুসলমানরা কোরআন-হাদিস, ভাষা ও অন্যান্য জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে নিজেদের জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ করেন। এরপর গ্রিক, সংস্কৃত ও ফারসি জ্ঞানভান্ডার আরবিতে রূপান্তর করে বিশ্বজ্ঞানের আলোয় আলোকিত হন। সুতরাং জ্ঞানচর্চার প্রয়োজনে স্বাভাবিকভাবেই অসংখ্য সমৃদ্ধ লাইব্রেরি গড়ে ওঠে মুসলিম বিশ্বে। এখানে অতীতের বিখ্যাত কয়েকটি লাইব্রেরির কথা তুলে ধরা হলো—
বায়তুল হিকমাহ
বায়তুল হিকমাহ আনুমানিক ৭৮০-এর দশকে আব্বাসীয় খলিফা হারুন আল-রশিদ ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। খলিফা হারুন আল-রশিদের পর তাঁর পুত্র খলিফা মামুন আল-রশিদ বায়তুল হিকমাহকে সমৃদ্ধির নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেন এবং বিশ্বের বৃহত্তম গ্রন্থাগারে পরিণত করেন। এতে পর্যবেক্ষণাগার, বিজ্ঞান গবেষণাগার, অনুবাদ কেন্দ্র, মাদ্রাসা ও বড় হলরুম ছিল। খলিফা মামুন আল-রশিদ ভারত, মধ্য এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আরব, উত্তর আফ্রিকা এবং ইউরোপের খ্রিষ্টান, মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদি পণ্ডিত ও চিন্তাবিদদের বাগদাদে আসার এবং বায়তুল হিকমাহ থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বায়তুল হিকমাহ ৪৫০ বছর ধরে বিশ্বের বৃহত্তম গ্রন্থাগারের গৌরব অর্জন করেছিল এবং বর্তমান ব্রিটিশ লাইব্রেরির চেয়েও বড় ছিল।
শাহি লাইব্রেরি কর্ডোবা
কর্ডোবার শাহি লাইব্রেরি ছিল সেই সময়ের অন্যতম বড় লাইব্রেরি। এখানে ৪৪টি ক্যাটালগে বিভক্ত ৪ লাখ বই ছিল। লুবনা নামক একজন মুসলিম নারী এই লাইব্রেরির দায়িত্বে ছিলেন এবং তিনি বিশ্বের প্রথম মহিলা গ্রন্থাগারিক হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। ১৮ শতকের খ্রিষ্টান বুদ্ধিজীবী রেইনহার্ট ডজি লিখেছেন, মুসলিম আন্দালুসিয়ায় প্রত্যেক নাগরিক পড়তে ও লিখতে পারত। এটি সেই সময় ছিল, যখন ইউরোপের বাকি অংশে পুরোহিত ছাড়া কেউ পড়তে ও লিখতে পারত না। এখানেই ইবনে রুশদের মতো প্রতিভাধর দার্শনিকের জ্ঞানের যাত্রা শুরু হয়েছে। তিনি গ্রিক দার্শনিকদের ল্যাটিন পাণ্ডুলিপিগুলো আরবিতে অনুবাদ করেন।
আল-কারাউইয়ান লাইব্রেরি
বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার গৌরব অর্জন করেন ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ আল-ফিহরিয়া। তিনি কুরাইশ বংশোদ্ভূত ছিলেন; তবে তাঁর জন্ম তিউনিসিয়ায়। তিনি একজন ধনী বাবার মেয়ে ছিলেন। তিনি মরক্কো ভ্রমণে এসে এখানে বসবাস শুরু করেন। তাঁর বাবা ও স্বামী দুজনেই ইন্তেকাল করেন। ফাতিমা এবং তাঁর বোন মরিয়ম বাবার উত্তরাধিকার থেকে প্রাপ্ত সম্পদ শিক্ষা ও দাতব্য কাজে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নেন। মরিয়ম শহরে একটি বিশাল মসজিদ তৈরি করেন এবং ফাতিমা একটি বড় মাদ্রাসা এবং মাদ্রাসা সংযুক্ত লাইব্রেরি নির্মাণ শুরু করেন, যা ১৮ বছরে সম্পন্ন হয়।
কায়রো লাইব্রেরি
ফাতেমীয় খলিফা আবু মনসুর ১ হাজার খ্রিষ্টাব্দে কায়রোতে একটি বিশাল গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেন। লাইব্রেরিতে ৪০টি কক্ষ ছিল এবং ২ লাখ পাণ্ডুলিপি ও দুর্লভ নথিপত্র রাখা হয়েছিল। এই লাইব্রেরিতে গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যাবিষয়ক ৬ হাজার বই ছিল। তারিখে তাবারির ১ হাজার ২০০ কপি এবং পবিত্র কোরআনের ২ হাজার ৪০০ কপি এখানে মজুত ছিল। গ্রিক দার্শনিক টলেমি পৃথিবীর একটি গ্লোব তৈরি করেছিলেন, যা এই লাইব্রেরির বাইরে স্থাপন করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, গ্লোবটি এই লাইব্রেরির ১ হাজার ৪০০ বছর আগে তৈরি করা হয়েছিল।
সিরাজি লাইব্রেরি
পান্নাহ খসরু (ওয়াদুদ আল-দৌলা) ছিলেন বুইদ রাজবংশের আমির (৯৩৪-১০৬২ খ্রিষ্টাব্দ)। তিনি দশম শতাব্দীতে পারস্যের একজন শাসক ছিলেন। যিনি বাগদাদের আব্বাসীয় খিলাফতের অধীন হলেও স্বাধীনভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। তিনি ইস্পাহানে একটি হাসপাতাল এবং সিরাজে ইসলামের শুরু থেকে তাঁর সময় পর্যন্ত লেখা বইসহ একটি বিশাল গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেন। কথিত আছে, এই গ্রন্থাগারের কেবিনেটগুলো সোনার কারুকাজ দিয়ে সজ্জিত ছিল এবং শুধু নির্দিষ্ট কিছু স্কলারকে এখানে অধ্যয়নের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
সমরকন্দ ও বুখারার লাইব্রেরি
৭৫১ খ্রিষ্টাব্দে মধ্য এশিয়ায় প্রথম কাগজকল প্রতিষ্ঠিত হয়। বুখারা ও সমরকান্দেও মধ্যযুগে হাজার হাজার মাদ্রাসা ছিল এবং প্রতিটি মাদ্রাসায় একটি লাইব্রেরি সংযুক্ত ছিল। সামানির মুসলিম শাসক বুখারার সুলতান আমির নুহ ইবনে মনসুর (৯৭৬-৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দ) বুখারা, সমরকন্দ ও মাওয়ারাউন নাহারে (উজবেকিস্তান) ৪০০টির বেশি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটি সেই যুগ ছিল, যখন বই হাতে লেখা, কাগজ ও কালি ছিল দুর্লভ এবং ব্যয়বহুল। বিখ্যাত আলকেমিস্ট, চিকিৎসক ইবনে সিনা, সহি বুখারির রচয়িতা ইমাম বুখারি, আল-বিরুনিসহ হাজার হাজার আলেম ও বিজ্ঞানী এই গ্রন্থাগার দ্বারা ধন্য হয়েছেন। চেঙ্গিস খান এবং মঙ্গোলরা এই লাইব্রেরি ধ্বংস করেছিল।
লাইব্রেরি অব গজনি
সুলতান মাহমুদ গজনভী (৯৯৮-১০৩০ খ্রিষ্টাব্দ), যিনি ভারতে ১৭ বার আক্রমণ করেছিলেন। তিনি জ্ঞান ও সাহিত্যের একজন মহান ব্যক্তি ছিলেন। তিনি নিজ হাতে শাহি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেন, যা বিশ্বের অন্যতম সেরা হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। এই শাহি গ্রন্থাগারে লক্ষাধিক বই ছিল। বিখ্যাত কাব্যসংকলন ‘শাহনামা-ই ফিরদৌসী’ তাঁরই আদেশে কবি ফিরদৌসী (১০২০ খ্রিষ্টাব্দ) লিখেছিলেন। যদিও ফিরদৌসী আর্থিক কারণে রাগান্বিত হয়ে তাঁকে ব্যঙ্গও করেন। আল-বিরুনি এবং আল-ফারাবির মতো পণ্ডিতেরাও তাঁর দরবারে আসা-যাওয়া করতেন।
মুঘল রাজবংশের গ্রন্থাগার
ভারতে প্রথম মুঘল গ্রন্থাগারটি সম্রাট বাবর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। যখন তিনি লুধি সাম্রাজ্যের লাহোর প্রদেশের গভর্নর গাজী খানকে পরাজিত করেন, তখন তাঁর গ্রন্থাগারটি দখল করেন। হুমায়ুনও তাঁর ব্যক্তিগত লাইব্রেরি ‘শেরমন্ডল’ স্থাপন করেছিলেন, যেখান থেকে তিনি হোঁচট খেয়ে নিচে পড়ে মারা যান। বাদশা জালালুদ্দিন আকবর (১৫৪৩-১৬০৫ খ্রিষ্টাব্দ) নিজে নিরক্ষর ছিলেন, কিন্তু তিনি ৬৪ লাখ টাকা খরচ করে ফতেপুর সিক্রিতে একটি শাহি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেন। লাইব্রেরিটি আগ্রা দুর্গের বড় হলঘরে অবস্থিত ছিল। একইভাবে সম্রাট জাহাঙ্গীর ও আওরঙ্গজেব আলমগীরের গ্রন্থাগারগুলো ছিল দুর্লভ সংগ্রহে ঠাসা।
অটোমান গ্রেট লাইব্রেরি
ওসমানী আমলে একটি শিক্ষা বিভাগ ছিল, যা গ্রন্থাগারগুলোর বিষয়াবলি পর্যবেক্ষণ করত। বাগদাদ, দামেস্ক, ইস্তাম্বুল, কায়রো, মক্কা, জেরুজালেমসহ প্রতিটি শহরে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার বিদ্যমান ছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল তোপকাপি লাইব্রেরি, যাতে ১৪ হাজার অত্যন্ত দুর্লভ পাণ্ডুলিপি ছিল, যার মধ্যে পবিত্র কোরআনের কপি ছিল, যা হজরত উসমান (রা.)-এর শাসনামলে লেখা হয়েছিল। কনস্টান্টিনোপলের রাজপ্রাসাদের লাইব্রেরিতে লক্ষাধিক বই সংরক্ষিত ছিল।
লেখক: শিক্ষার্থী, উচ্চতর ইসলামি আইন গবেষণা বিভাগ, আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম।
লাইব্রেরি বা গ্রন্থাগার জ্ঞানের বাতিঘর। ইসলামের সোনালি যুগে মুসলমানরা কোরআন-হাদিস, ভাষা ও অন্যান্য জ্ঞানচর্চার মাধ্যমে নিজেদের জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ করেন। এরপর গ্রিক, সংস্কৃত ও ফারসি জ্ঞানভান্ডার আরবিতে রূপান্তর করে বিশ্বজ্ঞানের আলোয় আলোকিত হন। সুতরাং জ্ঞানচর্চার প্রয়োজনে স্বাভাবিকভাবেই অসংখ্য সমৃদ্ধ লাইব্রেরি গড়ে ওঠে মুসলিম বিশ্বে। এখানে অতীতের বিখ্যাত কয়েকটি লাইব্রেরির কথা তুলে ধরা হলো—
বায়তুল হিকমাহ
বায়তুল হিকমাহ আনুমানিক ৭৮০-এর দশকে আব্বাসীয় খলিফা হারুন আল-রশিদ ব্যক্তিগত গ্রন্থাগার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। খলিফা হারুন আল-রশিদের পর তাঁর পুত্র খলিফা মামুন আল-রশিদ বায়তুল হিকমাহকে সমৃদ্ধির নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেন এবং বিশ্বের বৃহত্তম গ্রন্থাগারে পরিণত করেন। এতে পর্যবেক্ষণাগার, বিজ্ঞান গবেষণাগার, অনুবাদ কেন্দ্র, মাদ্রাসা ও বড় হলরুম ছিল। খলিফা মামুন আল-রশিদ ভারত, মধ্য এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, আরব, উত্তর আফ্রিকা এবং ইউরোপের খ্রিষ্টান, মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদি পণ্ডিত ও চিন্তাবিদদের বাগদাদে আসার এবং বায়তুল হিকমাহ থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বায়তুল হিকমাহ ৪৫০ বছর ধরে বিশ্বের বৃহত্তম গ্রন্থাগারের গৌরব অর্জন করেছিল এবং বর্তমান ব্রিটিশ লাইব্রেরির চেয়েও বড় ছিল।
শাহি লাইব্রেরি কর্ডোবা
কর্ডোবার শাহি লাইব্রেরি ছিল সেই সময়ের অন্যতম বড় লাইব্রেরি। এখানে ৪৪টি ক্যাটালগে বিভক্ত ৪ লাখ বই ছিল। লুবনা নামক একজন মুসলিম নারী এই লাইব্রেরির দায়িত্বে ছিলেন এবং তিনি বিশ্বের প্রথম মহিলা গ্রন্থাগারিক হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। ১৮ শতকের খ্রিষ্টান বুদ্ধিজীবী রেইনহার্ট ডজি লিখেছেন, মুসলিম আন্দালুসিয়ায় প্রত্যেক নাগরিক পড়তে ও লিখতে পারত। এটি সেই সময় ছিল, যখন ইউরোপের বাকি অংশে পুরোহিত ছাড়া কেউ পড়তে ও লিখতে পারত না। এখানেই ইবনে রুশদের মতো প্রতিভাধর দার্শনিকের জ্ঞানের যাত্রা শুরু হয়েছে। তিনি গ্রিক দার্শনিকদের ল্যাটিন পাণ্ডুলিপিগুলো আরবিতে অনুবাদ করেন।
আল-কারাউইয়ান লাইব্রেরি
বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার গৌরব অর্জন করেন ফাতিমা বিনতে মুহাম্মদ আল-ফিহরিয়া। তিনি কুরাইশ বংশোদ্ভূত ছিলেন; তবে তাঁর জন্ম তিউনিসিয়ায়। তিনি একজন ধনী বাবার মেয়ে ছিলেন। তিনি মরক্কো ভ্রমণে এসে এখানে বসবাস শুরু করেন। তাঁর বাবা ও স্বামী দুজনেই ইন্তেকাল করেন। ফাতিমা এবং তাঁর বোন মরিয়ম বাবার উত্তরাধিকার থেকে প্রাপ্ত সম্পদ শিক্ষা ও দাতব্য কাজে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নেন। মরিয়ম শহরে একটি বিশাল মসজিদ তৈরি করেন এবং ফাতিমা একটি বড় মাদ্রাসা এবং মাদ্রাসা সংযুক্ত লাইব্রেরি নির্মাণ শুরু করেন, যা ১৮ বছরে সম্পন্ন হয়।
কায়রো লাইব্রেরি
ফাতেমীয় খলিফা আবু মনসুর ১ হাজার খ্রিষ্টাব্দে কায়রোতে একটি বিশাল গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেন। লাইব্রেরিতে ৪০টি কক্ষ ছিল এবং ২ লাখ পাণ্ডুলিপি ও দুর্লভ নথিপত্র রাখা হয়েছিল। এই লাইব্রেরিতে গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যাবিষয়ক ৬ হাজার বই ছিল। তারিখে তাবারির ১ হাজার ২০০ কপি এবং পবিত্র কোরআনের ২ হাজার ৪০০ কপি এখানে মজুত ছিল। গ্রিক দার্শনিক টলেমি পৃথিবীর একটি গ্লোব তৈরি করেছিলেন, যা এই লাইব্রেরির বাইরে স্থাপন করা হয়েছিল। উল্লেখ্য, গ্লোবটি এই লাইব্রেরির ১ হাজার ৪০০ বছর আগে তৈরি করা হয়েছিল।
সিরাজি লাইব্রেরি
পান্নাহ খসরু (ওয়াদুদ আল-দৌলা) ছিলেন বুইদ রাজবংশের আমির (৯৩৪-১০৬২ খ্রিষ্টাব্দ)। তিনি দশম শতাব্দীতে পারস্যের একজন শাসক ছিলেন। যিনি বাগদাদের আব্বাসীয় খিলাফতের অধীন হলেও স্বাধীনভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। তিনি ইস্পাহানে একটি হাসপাতাল এবং সিরাজে ইসলামের শুরু থেকে তাঁর সময় পর্যন্ত লেখা বইসহ একটি বিশাল গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেন। কথিত আছে, এই গ্রন্থাগারের কেবিনেটগুলো সোনার কারুকাজ দিয়ে সজ্জিত ছিল এবং শুধু নির্দিষ্ট কিছু স্কলারকে এখানে অধ্যয়নের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
সমরকন্দ ও বুখারার লাইব্রেরি
৭৫১ খ্রিষ্টাব্দে মধ্য এশিয়ায় প্রথম কাগজকল প্রতিষ্ঠিত হয়। বুখারা ও সমরকান্দেও মধ্যযুগে হাজার হাজার মাদ্রাসা ছিল এবং প্রতিটি মাদ্রাসায় একটি লাইব্রেরি সংযুক্ত ছিল। সামানির মুসলিম শাসক বুখারার সুলতান আমির নুহ ইবনে মনসুর (৯৭৬-৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দ) বুখারা, সমরকন্দ ও মাওয়ারাউন নাহারে (উজবেকিস্তান) ৪০০টির বেশি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটি সেই যুগ ছিল, যখন বই হাতে লেখা, কাগজ ও কালি ছিল দুর্লভ এবং ব্যয়বহুল। বিখ্যাত আলকেমিস্ট, চিকিৎসক ইবনে সিনা, সহি বুখারির রচয়িতা ইমাম বুখারি, আল-বিরুনিসহ হাজার হাজার আলেম ও বিজ্ঞানী এই গ্রন্থাগার দ্বারা ধন্য হয়েছেন। চেঙ্গিস খান এবং মঙ্গোলরা এই লাইব্রেরি ধ্বংস করেছিল।
লাইব্রেরি অব গজনি
সুলতান মাহমুদ গজনভী (৯৯৮-১০৩০ খ্রিষ্টাব্দ), যিনি ভারতে ১৭ বার আক্রমণ করেছিলেন। তিনি জ্ঞান ও সাহিত্যের একজন মহান ব্যক্তি ছিলেন। তিনি নিজ হাতে শাহি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেন, যা বিশ্বের অন্যতম সেরা হিসেবে বিবেচিত হয়েছিল। এই শাহি গ্রন্থাগারে লক্ষাধিক বই ছিল। বিখ্যাত কাব্যসংকলন ‘শাহনামা-ই ফিরদৌসী’ তাঁরই আদেশে কবি ফিরদৌসী (১০২০ খ্রিষ্টাব্দ) লিখেছিলেন। যদিও ফিরদৌসী আর্থিক কারণে রাগান্বিত হয়ে তাঁকে ব্যঙ্গও করেন। আল-বিরুনি এবং আল-ফারাবির মতো পণ্ডিতেরাও তাঁর দরবারে আসা-যাওয়া করতেন।
মুঘল রাজবংশের গ্রন্থাগার
ভারতে প্রথম মুঘল গ্রন্থাগারটি সম্রাট বাবর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। যখন তিনি লুধি সাম্রাজ্যের লাহোর প্রদেশের গভর্নর গাজী খানকে পরাজিত করেন, তখন তাঁর গ্রন্থাগারটি দখল করেন। হুমায়ুনও তাঁর ব্যক্তিগত লাইব্রেরি ‘শেরমন্ডল’ স্থাপন করেছিলেন, যেখান থেকে তিনি হোঁচট খেয়ে নিচে পড়ে মারা যান। বাদশা জালালুদ্দিন আকবর (১৫৪৩-১৬০৫ খ্রিষ্টাব্দ) নিজে নিরক্ষর ছিলেন, কিন্তু তিনি ৬৪ লাখ টাকা খরচ করে ফতেপুর সিক্রিতে একটি শাহি গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করেন। লাইব্রেরিটি আগ্রা দুর্গের বড় হলঘরে অবস্থিত ছিল। একইভাবে সম্রাট জাহাঙ্গীর ও আওরঙ্গজেব আলমগীরের গ্রন্থাগারগুলো ছিল দুর্লভ সংগ্রহে ঠাসা।
অটোমান গ্রেট লাইব্রেরি
ওসমানী আমলে একটি শিক্ষা বিভাগ ছিল, যা গ্রন্থাগারগুলোর বিষয়াবলি পর্যবেক্ষণ করত। বাগদাদ, দামেস্ক, ইস্তাম্বুল, কায়রো, মক্কা, জেরুজালেমসহ প্রতিটি শহরে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার বিদ্যমান ছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল তোপকাপি লাইব্রেরি, যাতে ১৪ হাজার অত্যন্ত দুর্লভ পাণ্ডুলিপি ছিল, যার মধ্যে পবিত্র কোরআনের কপি ছিল, যা হজরত উসমান (রা.)-এর শাসনামলে লেখা হয়েছিল। কনস্টান্টিনোপলের রাজপ্রাসাদের লাইব্রেরিতে লক্ষাধিক বই সংরক্ষিত ছিল।
লেখক: শিক্ষার্থী, উচ্চতর ইসলামি আইন গবেষণা বিভাগ, আল জামিয়া আল ইসলামিয়া পটিয়া, চট্টগ্রাম।
ওয়াজ মাহফিল গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের অংশ। আবহমানকাল থেকে বাঙালি মুসলিম সমাজে এটি প্রচলিত। ওয়াজের মঞ্চ থেকে মুসলমানদের আদর্শ মুসলমান হওয়ার দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। তাই এসব মাহফিল পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন হলে সমাজে নীতিনৈতিকতার চর্চা বাড়বে, অপরাধ প্রবণতা কমবে, সুন্দর ও কল্যাণময় সমাজ গড়ে তোলা সহজ হয়
২ ঘণ্টা আগেক্যালিগ্রাফি বা লিপিকলা মুসলিম সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ইসলামি লিপিকলার সূচনা মূলত পবিত্র কোরআনকে লিখিতরূপে সংরক্ষণ প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে শুরু হয়। এরপর মুসলিম অক্ষরশিল্পীরা এ শিল্পকে যুগে যুগে নান্দনিক সব অনুশীলনের মধ্য দিয়ে শিল্পকলার গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গে পরিণত করেন। এখানে মুসলিম লিপিকলার ৫
২ ঘণ্টা আগেপবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ তাআলা আগের যুগের নবীদের ঘটনা বর্ণনা করেছেন। তাতে দেখা যায়, নবীগণ বারবার বলেছেন, আমরা তোমাদের কাছে আল্লাহর পথে আহ্বান করার বিনিময়ে কোনো প্রতিদান চাই না।
২ ঘণ্টা আগেনাম নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ বা উপহাস করা গুনাহের কাজ। নাম বিকৃত করা, অসম্পূর্ণ নামে ডাকা কোনো মুমিনের কাজ নয়। কারণ প্রকৃত মুসলিমের কথা বা কাজে অন্য কেউ কষ্ট পেতে পারে না। কারও নাম নিয়ে বিদ্রূপ করা তাকে কষ্ট দেওয়ার নামান্তর। তাই এ কাজ থেকে বিরত থাকা জরুরি।
১ দিন আগে