ইসমাইল সাদী
আপনি বিরানব্বই বছর পূর্ণ করে তিরানব্বইতে পদার্পণ করলেন। একটা দীর্ঘ জীবন কাটালেন। যদি মূল্যায়ন করতে বলি, এই ভ্রমণটা কেমন ছিল? প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব যদি মেলাতে বলি, কী বলবেন?
আহমদ রফিক: জীবন বড় বিচিত্র এবং বহুমাত্রিক। কেউ বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে না, জীবন নিয়ে তিনি শতভাগ সন্তুষ্ট বা আনন্দিত। আমার শুভানুধ্যায়ীদের ধারণা, আমি পঞ্চাশ বছরের একটা চমকপ্রদ দাম্পত্য জীবন কাটিয়ে গেলাম এবং সামগ্রিকভাবে একটা সফল সাহিত্যিক জীবন কাটিয়েছি। আমি এই ধারণার সঙ্গে একমত নই। কারণ, দীর্ঘ জীবনে আমি ভালোমন্দ, তেতো-মিঠে, মানুষের আচরণে বৈসাদৃশ্য, ভালো এবং খারাপ, অপমান থেকে আরম্ভ করে স্নেহ-মমতা-ভালোবাসা সবই পেয়েছি। বলতে পারো, একটা মিশ্র প্রাপ্তির জীবন আমার।
যদি এভাবে জিজ্ঞেস করি, অতৃপ্তি না তৃপ্তির পাল্লা ভারী?
আহমদ রফিক: আমার শেষ বই, আমার আত্মজীবনীর নামটা দিয়েছি, ‘দুই মৃত্যুর মাঝখানে নান্দনিক একাকিত্বে’। অর্থাৎ আমি সারাটা জীবন একাকী কাটিয়ে গেলাম।
এই নিয়ে কি অতৃপ্তি আছে?
আহমদ রফিক: অবশ্যই আছে।
কী রকম? কিছুটা কি বলা যায়?
আহমদ রফিক: এটা বললে ব্যক্তিগত জীবন এসে যায়। সেটা আমি বলতে চাই না। কিছুটা বললে, একজনকে সম্পৃক্ত করতে হয়। সেটা আমি করতে চাই না। তবু বলব, একটা প্রত্যাশা ছিল, ভালোবেসে গ্রামীণ তরুণীকে বিয়ে করলাম। তাঁর জন্য অনেক কিছু করলাম। তাঁর কিছু শপথ ছিল যৌথভাবে আমার সঙ্গে। আমি আমার দিক থেকে সেই শপথ পুরোপুরি পালন করেছি। এ ব্যাপারে বলতে আমার কোনো দ্বিধা নেই। কিন্তু সে পারেনি। এটা আমার জন্য একটা হতাশার দিক ছিল। ওর কতগুলো পারিবারিক সমস্যা ছিল। আমার ধারণা, সেই সমস্যাগুলোর কারণে পারেনি।
লেখক হিসেবে খ্যাতিপ্রাপ্তি এবং বৈষয়িক প্রাপ্তি—কোনটাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন আপনি?
আহমদ রফিক: লেখক হিসেবে নিজের তৃপ্তির কথাই বলতে হয়। বিশ্ববিদ্যায়ের অধ্যাপকদের একটা বলয় থাকে, অন্য ঘরানাদের একটা বলয় থাকে। আমি সব বলয়ের বাইরের লেখক। আমি যেহেতু মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিলাম, কাজেই আমাকে সাহিত্য জগতে ঢুকতে অনেক দরজা ভাঙতে হয়েছে। সেটা আমার জন্য সুখকর ছিল না। কিন্তু আমি সফলভাবে সেটা করতে পেরেছি। পেরেছি বলে সারা জীবন সাহিত্যকর্মের জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক সম্মাননা, অনেক পদক, অনেক কিছু পেয়েছি। সেগুলোকে যদি তৃপ্তি হিসেবে ধরো, অবশ্যই তৃপ্তির; খ্যাতির কথা যদি বলো, তাহলে খ্যাতির। তবে আমি পূর্ববাংলার সাহিত্যকে যা দিয়েছি, সেই তুলনায় প্রাপ্তিটা নগণ্য।
আপনি বলতে চাইছেন, মেডিকেলপডুয়া না হয়ে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হতেন, তাহলে খ্যাতির চূড়ায় উঠতেন?
আহমদ রফিক: অবশ্যই খ্যাতি অনেক বেশি হতো। আমি কিন্তু ভর্তি হতে চেয়েছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সুযোগ পেয়েছিলাম কেমিস্ট্রিতে অনার্স পড়ার। ফজলুল হক হলের আবাসিক ছাত্র হিসেবে দরখাস্ত করেছিলাম। কিন্তু আমি যেহেতু তদবিরে অভ্যস্ত নই, পছন্দও করি না, তাই আমাকে সুযোগ দেওয়া হলো না। অথচ আমার এসএসসি এবং এইচএসসিতে যে রেজাল্ট, তাতে অনায়াসে তারা আমাকে আবাসিক ছাত্র হিসেবে ভর্তির সুযোগ দিতে পারত। তা না করে অনাবাসিক ছাত্র হিসেবে আমার দরখাস্ত গ্রহণ করেছিল। সুযোগ পেলে আমার গ্রহণযোগ্যতা বিদ্বৎসমাজে আরও বেশি হতো। এই অন্যায়ের কথা আমি বিশদভাবে উল্লেখ করেছি আত্মজীবনীতে। তবু আমি বিশ্বাস করি, আমি বেঁচে থাকব আমার সাহিত্যের জন্য। কারণ, আমি যতটুকু দিয়েছি, সেখানে এতটুকু গলদ নেই; তা আন্তরিকতায় পরিপূর্ণ।
ভাষা আন্দোলনে যুক্ততার কারণে ঢাকা মেডিকেলে ছাত্রত্ব সম্পন্ন করতে পারেননি। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল আপনার বিরুদ্ধে।
আহমদ রফিক: দেখো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হতে পারলে চার বছরেই আমার শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে যেতে পারত। কিন্তু ঢাকা মেডিকেলে চার বছরের কোর্স করে ইন্টার্ন করতে দেওয়া হলো না বলে আমার পেশাজীবন ধ্বংস হয়ে গেল। বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ শেষ করতে পারলে যেকোনো এরিয়াতে পেশাজীবন বেছে নিতে আমার সমস্যা হতো না। সে জন্যই আমি ঘটনায় খুব বিশ্বাস করি। ঘটনাই মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে। বড় ভাই আমার জন্য করেছেন বহু কিছু। একবার আমাকে মক্তবে ভর্তি করিয়ে দিলেন। আরবি-উর্দু পড়ে দেড়টা বছর নষ্ট হলো। এর কারণে আমি অন্যদের থেকে পিছিয়ে পড়লাম। এভাবে সারা জীবন আমি লক্ষ করেছি, ঘটনা যেন আমাকে টেনে পেছনের দিকে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। আর আমি চেষ্টা করেছি, ঘটনার মুখোমুখি হয়ে তাকে প্রতিহত করতে। একটা বিপরীত স্রোতে গতিশীল থেকেছি সারাটা জীবন। নইলে মেডিকেল কলেজে কারও নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলো না, আমার নামেই হলো—ইস্কান্দার মির্জার গভর্নরশিপের ৯২-ক ধারায়। দেড় বছর নিজের খরচও নিজেকে জোগাতে হয়েছে। কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। না পরিবার, না কোনো স্বজন। আত্মগোপনে থাকতে হলো। আমার দল একবার আমার খবরও নেয়নি, কোনো আশ্রয়ের ব্যবস্থাও করেনি।
আপনার কি মনে হয়, জীবনের এই বেলায় এসেও আপনাকে বিপরীত স্রোতে যেতে হচ্ছে?
আহমদ রফিক: সেটাই মনে হয়। সে জন্য খুব অনুভব করি, দু-চারজন ছাড়া আমার শুভানুধ্যায়ী ঘনিষ্ঠজন যাঁরা ছিলেন, আমার এই অসহনীয় সময়টাতে কেউ খবর নেয় না। ঘটনা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আমাকে, দেখো। কয়েক বছর আগে, বিখ্যাত চক্ষু বিশেষজ্ঞ আমার ঘনিষ্ঠজন ডা. মতিনের কাছে গিয়েছিলাম চোখ দেখাতে। সে মনোযোগ দিয়ে দেখেনি। দেখলে আমার এই সর্বনাশটা হতো না। তখনই ধরা পড়তে পারত গ্লুকোমা। চোখটার চিকিৎসা করার সুযোগ পেতাম। এটাও কিন্তু ঘটনার বিড়ম্বনা। ফলে ক্যাটারাক্ট অপারেশনের মতো একটা সাধারণ অপারেশন করতে গিয়ে আমার ভালো চোখটা নষ্ট হলো। আরেকটা চোখ উপসর্গহীন গ্লুকোমাতে প্রায় নষ্ট। সবারই ব্যথা হয়, কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। আমার ক্ষেত্রে কিছুই হলো না। ফলে নষ্ট না হওয়া পর্যন্ত আমি ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সুযোগ পেলাম না। একের পর এক ঘটনাই আমাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। আর জীবনের এই সময়ে, দু-চারজন ছাড়া সব শুভানুধ্যায়ী একে একে সরে গেছে। আমি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলাম। তবু অনেক ঘনিষ্ঠজন গত এক বছরেও একটিবারও ফোন করে খোঁজ নেয়নি।
এগুলোকে কি ভাগ্য বলবেন?
আহমদ রফিক: আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করি না। আমি মনে করি, প্রত্যেক মানুষকে ঘটনাই নিয়ন্ত্রণ করে। কখনো তা অনুকূল, কখনো প্রতিকূল। আমার বেলায় প্রতিকূলটা হয়েছে বেশি। মাত্র কয়েকটা ঘটনা বললাম। আরও অনেক ঘটনা আছে আমার জীবনে, যার জন্য আমি ক্রমাগত পিছিয়ে পড়েছি। আমার মেধা ছিল বলে উতরে গেছি। তা না হলে ম্যাট্রিকে ৮১ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাস করতাম না। ইন্টারমিডিয়েটেও প্রায় একই রেজাল্ট। তা সত্ত্বেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হল প্রশাসন কী অন্যায়টা আমার সঙ্গে করল! অথচ অনেক দুর্বল ছাত্রও হলে আবাসিক ছাত্র হিসেবে সুযোগ পেয়েছিল। আমি তদবির করিনি, এটাই ছিল দোষ।
আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েননি। কিন্তু আপনি তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসহ তরুণ অধ্যাপকদের নিয়ে রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্র নামে একটি ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আপনি বলেছেন, তাঁদের আপনি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন নানাভাবে। তারা তো এখন নিজ নিজ পেশায় সুপ্রতিষ্ঠিত। তাঁদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন এখন?
আহমদ রফিক: দু-একজন ছাড়া তাদের কারও উপস্থিতি তো আমি অনুভব করি না। যাদের জন্য অনেক বেশি করেছি, কলকাতার সাহিত্যমহলে আমি পরিচিত করিয়েছি, তাদের নিয়ে গেছি এখান থেকে রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্রের অনুষ্ঠানের সুবাদে, প্রবন্ধ পড়ার জন্য, আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য। আমি চেয়েছি তারা কিছুটা পরিচিত হোক। তরুণদের বিরাট একটা অভিযোগ ছিল প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিক সম্পর্কে। কেউ তরুণদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয় না, প্রমোট করে না। কেউ আমাদের পাত্তা দেয় না। আমি কিন্তু সেই কাজটা করেছি। কত তরুণের বইয়ের ভূমিকা লিখে দিয়েছি, কতজনের বইয়ের রিভিউ লিখেছি, তার হিসাব নেই। কাজেই আমার সম্পর্কে তরুণেরা বলতে পারবে না, আমি তাদের জন্য কিছু করিনি। তাদের জন্য আমার দুয়ার সব সময় খোলা ছিল। তরুণদের উৎসাহিত করা এবং তাদের সামনে এগিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আমি তাদের কাউকে বিমুখ করিনি। এখানে আমার আত্মতৃপ্তির ব্যাপারটি আছে।
গত দুই বছর আপনি শারীরিকভাবে বয়সজনিত নানা ধরনের সংকট অতিক্রম করছেন। মাঝখানে একটা দুর্ঘটনা ঘটল। পড়ে গিয়ে কোমরের হাড় ভেঙে গেল। এই সংকটকালে আপনার শুভানুধ্যায়ীরা নিশ্চয়ই আপনার পাশে ছিলেন?
আহমদ রফিক: তাদের কেউ কদাচিৎ ফোন করেছে। অধিকাংশই কোনো খবরও নেয়নি। শুধু পরবর্তী জীবনের পরিচিতদের চার-পাঁচজনকে এ বিপদে পাশে পেয়েছি। এর মধ্যে তুমি, নাদিয়া, সাকন, রাসেল ছাড়া কাউকে তেমন পাশে পাইনি।
ছানি অপারেশনের পর আপনার দৃষ্টিশক্তি ক্ষয়ে আসছে। চিকিৎসকদের ভাষায় একটা ডিজেনারেশন শুরু হয়েছে। আপনার লেখালেখিও বন্ধ। পত্রিকায় কলাম লেখা এবং বই লেখা ছিল আপনার জীবিকা নির্বাহের অবলম্বন। সেগুলো বন্ধ। আপনার তো সঞ্চয় খুব একটা আছে বলে জানি না। কী চিন্তা করছেন?
আহমদ রফিক: আমি ভাবিনি, এত দীর্ঘ সময় বাঁচব। আমাদের বৃহত্তর পরিবারে সত্তর-আশি বছরের ওপরে কেউ যায়নি। ফলে রিটায়ার করার পর হাতে যখন টাকাপয়সা এসেছে, অনেক ছাত্রকে সাহায্য করেছি। বিবিএ, এমবিএ পড়ার টাকা জুগিয়েছি আমি। অনেককে লাখ লাখ টাকাও সাহায্য করেছি। কেউ জানে না। বৈষয়িক বিষয়ে আমার বরাবরই ছিল উদাসীনতা। আমি কখনো উন্নত ক্যারিয়ারের চিন্তাও করিনি। সারা জীবন অনিশ্চয়তাকে সঙ্গে করে নিয়েই চলেছি। আমি হয়তো মধুসূদন বা নজরুলের মতো টাকা হাতে এলেই ওড়াইনি; কিন্তু সঞ্চয় থেকেও অবৈষয়িক খাতে খরচ করেছি বেশ। যেমন সঞ্চয় ভেঙে ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্র-গবেষণা বৃত্তির জন্য ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করে দিলাম দশ লক্ষ টাকা দিয়ে। এগুলো দিয়ে আমার ব্যক্তিগত কোনো লাভ হয়নি। ওরা বিষয়টা একটু প্রচারও করেনি। ফলে কেউ জানেও না। আজকে আসাদুজ্জামান নূর, রামেন্দু মজুমদার—এরা চেষ্টা করছে আমার জন্য টাকাপয়সা সংগ্রহের। বৈষয়িক হলে আজ এই অবস্থা হতো না।
শতাধিক গ্রন্থের লেখক আপনি। লেখালেখিই আপনার পেশা। আপনার প্রকাশকদের কতটা পাশে পেলেন এই অসময়ে?
আহমদ রফিক: দু-একজন ছাড়া অধিকাংশ প্রকাশককেই পাশে পাইনি। এমন প্রকাশকও আছে, অনেক অনুরোধ করে পাণ্ডুলিপি নিয়েছে, বই প্রকাশ করেছে, একাধিক সংস্করণ করেছে। কিন্তু একটি টাকাও দেয়নি রয়্যালটি বাবদ।
উপার্জন বন্ধ। আপনি যদি আমাদের মাঝে আরও কয়েক বছর থাকেন, সে ক্ষেত্রে আপনার ভবিষ্যৎ কীভাবে কাটবে?
আহমদ রফিক: আমার ভবিষ্যৎ পুরোই অন্ধকার। আমি জানি না, কীভাবে চলবে? এখন যা আছে, তা দিয়ে বছরখানেক চলবে। শরীরের যা অবস্থা, তাতে আর এক বছর বেঁচে নাও থাকতে পারি।
এরপর? সে ক্ষেত্রে আপনি কি চান রাষ্ট্র আপনার পাশে দাঁড়াক?
আহমদ রফিক: আমি তো সারা জীবন সরকারের সমালোচনা করেছি, যা সত্য তা-ই লিখে গেছি। যে জন্য কোনো দলই আমাকে হয়তো পছন্দ করে না। এটা তো একজন বুদ্ধিজীবীর জন্য সঠিক অবস্থান। তাই রাষ্ট্র কি আমার পাশে দাঁড়াবে?
কিন্তু মতাদর্শের সঙ্গে না মিললেও তো রাষ্ট্র তো অনেক সময় বুদ্ধিজীবী বা সংস্কৃতিসেবীদের পাশে দাঁড়ায়। আপনার জন্য রাষ্ট্র থেকে সে রকম ব্যবস্থা নিলে আপনার গ্রহণ করতে সমস্যা আছে?
আহমদ রফিক: যদি শর্তহীন ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমার পাশে দাঁড়ায়, সে ক্ষেত্রে আমার কোনো আপত্তি থাকবে না। এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলি। ত্রিশের দশকের কমিউনিস্ট আর্থার কুচলার দম্পতি স্বেচ্ছায় মৃত্যুর অধিকার নিয়ে একটা দাবি তুলেছিলেন। টার্মিনাল কেসে ক্যানসার রোগী অসম্ভব যন্ত্রণায় ভোগে। তাদের ক্ষেত্রে মেডিকেলে এথিকসে বলতে চাইছিল, কেউ যদি চায়, তিনি এই যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে থাকতে চান না। তাদের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছায় মৃত্যুর আইনি অধিকার দেওয়া হোক। এটা নিয়ে আমি লিখেছিও একসময়। আমিও মনে করি, যেকোনো সভ্য নাগরিক যদি মনে করে, জীবনযাপনের নানা জটিলতার মধ্যে সে আর বাঁচতে চায় না, তাকে সেই অধিকারটা দেওয়া উচিত। তবে বিশ্বের কোথাও সম্ভবত এ নিয়ে কোনো আইন হয়নি। অবশ্য আর্থার কুচলার দম্পতি, জাপানি সাহিত্যিক কাওয়াবাতা স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করেছেন। এ রকম বেশ কিছু দৃষ্টান্ত আছে।
আপনি বিরানব্বই বছর পূর্ণ করে তিরানব্বইতে পদার্পণ করলেন। একটা দীর্ঘ জীবন কাটালেন। যদি মূল্যায়ন করতে বলি, এই ভ্রমণটা কেমন ছিল? প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব যদি মেলাতে বলি, কী বলবেন?
আহমদ রফিক: জীবন বড় বিচিত্র এবং বহুমাত্রিক। কেউ বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে না, জীবন নিয়ে তিনি শতভাগ সন্তুষ্ট বা আনন্দিত। আমার শুভানুধ্যায়ীদের ধারণা, আমি পঞ্চাশ বছরের একটা চমকপ্রদ দাম্পত্য জীবন কাটিয়ে গেলাম এবং সামগ্রিকভাবে একটা সফল সাহিত্যিক জীবন কাটিয়েছি। আমি এই ধারণার সঙ্গে একমত নই। কারণ, দীর্ঘ জীবনে আমি ভালোমন্দ, তেতো-মিঠে, মানুষের আচরণে বৈসাদৃশ্য, ভালো এবং খারাপ, অপমান থেকে আরম্ভ করে স্নেহ-মমতা-ভালোবাসা সবই পেয়েছি। বলতে পারো, একটা মিশ্র প্রাপ্তির জীবন আমার।
যদি এভাবে জিজ্ঞেস করি, অতৃপ্তি না তৃপ্তির পাল্লা ভারী?
আহমদ রফিক: আমার শেষ বই, আমার আত্মজীবনীর নামটা দিয়েছি, ‘দুই মৃত্যুর মাঝখানে নান্দনিক একাকিত্বে’। অর্থাৎ আমি সারাটা জীবন একাকী কাটিয়ে গেলাম।
এই নিয়ে কি অতৃপ্তি আছে?
আহমদ রফিক: অবশ্যই আছে।
কী রকম? কিছুটা কি বলা যায়?
আহমদ রফিক: এটা বললে ব্যক্তিগত জীবন এসে যায়। সেটা আমি বলতে চাই না। কিছুটা বললে, একজনকে সম্পৃক্ত করতে হয়। সেটা আমি করতে চাই না। তবু বলব, একটা প্রত্যাশা ছিল, ভালোবেসে গ্রামীণ তরুণীকে বিয়ে করলাম। তাঁর জন্য অনেক কিছু করলাম। তাঁর কিছু শপথ ছিল যৌথভাবে আমার সঙ্গে। আমি আমার দিক থেকে সেই শপথ পুরোপুরি পালন করেছি। এ ব্যাপারে বলতে আমার কোনো দ্বিধা নেই। কিন্তু সে পারেনি। এটা আমার জন্য একটা হতাশার দিক ছিল। ওর কতগুলো পারিবারিক সমস্যা ছিল। আমার ধারণা, সেই সমস্যাগুলোর কারণে পারেনি।
লেখক হিসেবে খ্যাতিপ্রাপ্তি এবং বৈষয়িক প্রাপ্তি—কোনটাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন আপনি?
আহমদ রফিক: লেখক হিসেবে নিজের তৃপ্তির কথাই বলতে হয়। বিশ্ববিদ্যায়ের অধ্যাপকদের একটা বলয় থাকে, অন্য ঘরানাদের একটা বলয় থাকে। আমি সব বলয়ের বাইরের লেখক। আমি যেহেতু মেডিকেল কলেজের ছাত্র ছিলাম, কাজেই আমাকে সাহিত্য জগতে ঢুকতে অনেক দরজা ভাঙতে হয়েছে। সেটা আমার জন্য সুখকর ছিল না। কিন্তু আমি সফলভাবে সেটা করতে পেরেছি। পেরেছি বলে সারা জীবন সাহিত্যকর্মের জন্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে অনেক সম্মাননা, অনেক পদক, অনেক কিছু পেয়েছি। সেগুলোকে যদি তৃপ্তি হিসেবে ধরো, অবশ্যই তৃপ্তির; খ্যাতির কথা যদি বলো, তাহলে খ্যাতির। তবে আমি পূর্ববাংলার সাহিত্যকে যা দিয়েছি, সেই তুলনায় প্রাপ্তিটা নগণ্য।
আপনি বলতে চাইছেন, মেডিকেলপডুয়া না হয়ে যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হতেন, তাহলে খ্যাতির চূড়ায় উঠতেন?
আহমদ রফিক: অবশ্যই খ্যাতি অনেক বেশি হতো। আমি কিন্তু ভর্তি হতে চেয়েছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সুযোগ পেয়েছিলাম কেমিস্ট্রিতে অনার্স পড়ার। ফজলুল হক হলের আবাসিক ছাত্র হিসেবে দরখাস্ত করেছিলাম। কিন্তু আমি যেহেতু তদবিরে অভ্যস্ত নই, পছন্দও করি না, তাই আমাকে সুযোগ দেওয়া হলো না। অথচ আমার এসএসসি এবং এইচএসসিতে যে রেজাল্ট, তাতে অনায়াসে তারা আমাকে আবাসিক ছাত্র হিসেবে ভর্তির সুযোগ দিতে পারত। তা না করে অনাবাসিক ছাত্র হিসেবে আমার দরখাস্ত গ্রহণ করেছিল। সুযোগ পেলে আমার গ্রহণযোগ্যতা বিদ্বৎসমাজে আরও বেশি হতো। এই অন্যায়ের কথা আমি বিশদভাবে উল্লেখ করেছি আত্মজীবনীতে। তবু আমি বিশ্বাস করি, আমি বেঁচে থাকব আমার সাহিত্যের জন্য। কারণ, আমি যতটুকু দিয়েছি, সেখানে এতটুকু গলদ নেই; তা আন্তরিকতায় পরিপূর্ণ।
ভাষা আন্দোলনে যুক্ততার কারণে ঢাকা মেডিকেলে ছাত্রত্ব সম্পন্ন করতে পারেননি। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল আপনার বিরুদ্ধে।
আহমদ রফিক: দেখো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হতে পারলে চার বছরেই আমার শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে যেতে পারত। কিন্তু ঢাকা মেডিকেলে চার বছরের কোর্স করে ইন্টার্ন করতে দেওয়া হলো না বলে আমার পেশাজীবন ধ্বংস হয়ে গেল। বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ শেষ করতে পারলে যেকোনো এরিয়াতে পেশাজীবন বেছে নিতে আমার সমস্যা হতো না। সে জন্যই আমি ঘটনায় খুব বিশ্বাস করি। ঘটনাই মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে। বড় ভাই আমার জন্য করেছেন বহু কিছু। একবার আমাকে মক্তবে ভর্তি করিয়ে দিলেন। আরবি-উর্দু পড়ে দেড়টা বছর নষ্ট হলো। এর কারণে আমি অন্যদের থেকে পিছিয়ে পড়লাম। এভাবে সারা জীবন আমি লক্ষ করেছি, ঘটনা যেন আমাকে টেনে পেছনের দিকে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। আর আমি চেষ্টা করেছি, ঘটনার মুখোমুখি হয়ে তাকে প্রতিহত করতে। একটা বিপরীত স্রোতে গতিশীল থেকেছি সারাটা জীবন। নইলে মেডিকেল কলেজে কারও নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলো না, আমার নামেই হলো—ইস্কান্দার মির্জার গভর্নরশিপের ৯২-ক ধারায়। দেড় বছর নিজের খরচও নিজেকে জোগাতে হয়েছে। কেউ পাশে দাঁড়ায়নি। না পরিবার, না কোনো স্বজন। আত্মগোপনে থাকতে হলো। আমার দল একবার আমার খবরও নেয়নি, কোনো আশ্রয়ের ব্যবস্থাও করেনি।
আপনার কি মনে হয়, জীবনের এই বেলায় এসেও আপনাকে বিপরীত স্রোতে যেতে হচ্ছে?
আহমদ রফিক: সেটাই মনে হয়। সে জন্য খুব অনুভব করি, দু-চারজন ছাড়া আমার শুভানুধ্যায়ী ঘনিষ্ঠজন যাঁরা ছিলেন, আমার এই অসহনীয় সময়টাতে কেউ খবর নেয় না। ঘটনা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আমাকে, দেখো। কয়েক বছর আগে, বিখ্যাত চক্ষু বিশেষজ্ঞ আমার ঘনিষ্ঠজন ডা. মতিনের কাছে গিয়েছিলাম চোখ দেখাতে। সে মনোযোগ দিয়ে দেখেনি। দেখলে আমার এই সর্বনাশটা হতো না। তখনই ধরা পড়তে পারত গ্লুকোমা। চোখটার চিকিৎসা করার সুযোগ পেতাম। এটাও কিন্তু ঘটনার বিড়ম্বনা। ফলে ক্যাটারাক্ট অপারেশনের মতো একটা সাধারণ অপারেশন করতে গিয়ে আমার ভালো চোখটা নষ্ট হলো। আরেকটা চোখ উপসর্গহীন গ্লুকোমাতে প্রায় নষ্ট। সবারই ব্যথা হয়, কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। আমার ক্ষেত্রে কিছুই হলো না। ফলে নষ্ট না হওয়া পর্যন্ত আমি ডাক্তারের কাছে যাওয়ার সুযোগ পেলাম না। একের পর এক ঘটনাই আমাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে। আর জীবনের এই সময়ে, দু-চারজন ছাড়া সব শুভানুধ্যায়ী একে একে সরে গেছে। আমি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলাম। তবু অনেক ঘনিষ্ঠজন গত এক বছরেও একটিবারও ফোন করে খোঁজ নেয়নি।
এগুলোকে কি ভাগ্য বলবেন?
আহমদ রফিক: আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করি না। আমি মনে করি, প্রত্যেক মানুষকে ঘটনাই নিয়ন্ত্রণ করে। কখনো তা অনুকূল, কখনো প্রতিকূল। আমার বেলায় প্রতিকূলটা হয়েছে বেশি। মাত্র কয়েকটা ঘটনা বললাম। আরও অনেক ঘটনা আছে আমার জীবনে, যার জন্য আমি ক্রমাগত পিছিয়ে পড়েছি। আমার মেধা ছিল বলে উতরে গেছি। তা না হলে ম্যাট্রিকে ৮১ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাস করতাম না। ইন্টারমিডিয়েটেও প্রায় একই রেজাল্ট। তা সত্ত্বেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হল প্রশাসন কী অন্যায়টা আমার সঙ্গে করল! অথচ অনেক দুর্বল ছাত্রও হলে আবাসিক ছাত্র হিসেবে সুযোগ পেয়েছিল। আমি তদবির করিনি, এটাই ছিল দোষ।
আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েননি। কিন্তু আপনি তো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসহ তরুণ অধ্যাপকদের নিয়ে রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্র নামে একটি ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আপনি বলেছেন, তাঁদের আপনি পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন নানাভাবে। তারা তো এখন নিজ নিজ পেশায় সুপ্রতিষ্ঠিত। তাঁদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন এখন?
আহমদ রফিক: দু-একজন ছাড়া তাদের কারও উপস্থিতি তো আমি অনুভব করি না। যাদের জন্য অনেক বেশি করেছি, কলকাতার সাহিত্যমহলে আমি পরিচিত করিয়েছি, তাদের নিয়ে গেছি এখান থেকে রবীন্দ্রচর্চা কেন্দ্রের অনুষ্ঠানের সুবাদে, প্রবন্ধ পড়ার জন্য, আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য। আমি চেয়েছি তারা কিছুটা পরিচিত হোক। তরুণদের বিরাট একটা অভিযোগ ছিল প্রতিষ্ঠিত সাহিত্যিক সম্পর্কে। কেউ তরুণদের পৃষ্ঠপোষকতা দেয় না, প্রমোট করে না। কেউ আমাদের পাত্তা দেয় না। আমি কিন্তু সেই কাজটা করেছি। কত তরুণের বইয়ের ভূমিকা লিখে দিয়েছি, কতজনের বইয়ের রিভিউ লিখেছি, তার হিসাব নেই। কাজেই আমার সম্পর্কে তরুণেরা বলতে পারবে না, আমি তাদের জন্য কিছু করিনি। তাদের জন্য আমার দুয়ার সব সময় খোলা ছিল। তরুণদের উৎসাহিত করা এবং তাদের সামনে এগিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আমি তাদের কাউকে বিমুখ করিনি। এখানে আমার আত্মতৃপ্তির ব্যাপারটি আছে।
গত দুই বছর আপনি শারীরিকভাবে বয়সজনিত নানা ধরনের সংকট অতিক্রম করছেন। মাঝখানে একটা দুর্ঘটনা ঘটল। পড়ে গিয়ে কোমরের হাড় ভেঙে গেল। এই সংকটকালে আপনার শুভানুধ্যায়ীরা নিশ্চয়ই আপনার পাশে ছিলেন?
আহমদ রফিক: তাদের কেউ কদাচিৎ ফোন করেছে। অধিকাংশই কোনো খবরও নেয়নি। শুধু পরবর্তী জীবনের পরিচিতদের চার-পাঁচজনকে এ বিপদে পাশে পেয়েছি। এর মধ্যে তুমি, নাদিয়া, সাকন, রাসেল ছাড়া কাউকে তেমন পাশে পাইনি।
ছানি অপারেশনের পর আপনার দৃষ্টিশক্তি ক্ষয়ে আসছে। চিকিৎসকদের ভাষায় একটা ডিজেনারেশন শুরু হয়েছে। আপনার লেখালেখিও বন্ধ। পত্রিকায় কলাম লেখা এবং বই লেখা ছিল আপনার জীবিকা নির্বাহের অবলম্বন। সেগুলো বন্ধ। আপনার তো সঞ্চয় খুব একটা আছে বলে জানি না। কী চিন্তা করছেন?
আহমদ রফিক: আমি ভাবিনি, এত দীর্ঘ সময় বাঁচব। আমাদের বৃহত্তর পরিবারে সত্তর-আশি বছরের ওপরে কেউ যায়নি। ফলে রিটায়ার করার পর হাতে যখন টাকাপয়সা এসেছে, অনেক ছাত্রকে সাহায্য করেছি। বিবিএ, এমবিএ পড়ার টাকা জুগিয়েছি আমি। অনেককে লাখ লাখ টাকাও সাহায্য করেছি। কেউ জানে না। বৈষয়িক বিষয়ে আমার বরাবরই ছিল উদাসীনতা। আমি কখনো উন্নত ক্যারিয়ারের চিন্তাও করিনি। সারা জীবন অনিশ্চয়তাকে সঙ্গে করে নিয়েই চলেছি। আমি হয়তো মধুসূদন বা নজরুলের মতো টাকা হাতে এলেই ওড়াইনি; কিন্তু সঞ্চয় থেকেও অবৈষয়িক খাতে খরচ করেছি বেশ। যেমন সঞ্চয় ভেঙে ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্র-গবেষণা বৃত্তির জন্য ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করে দিলাম দশ লক্ষ টাকা দিয়ে। এগুলো দিয়ে আমার ব্যক্তিগত কোনো লাভ হয়নি। ওরা বিষয়টা একটু প্রচারও করেনি। ফলে কেউ জানেও না। আজকে আসাদুজ্জামান নূর, রামেন্দু মজুমদার—এরা চেষ্টা করছে আমার জন্য টাকাপয়সা সংগ্রহের। বৈষয়িক হলে আজ এই অবস্থা হতো না।
শতাধিক গ্রন্থের লেখক আপনি। লেখালেখিই আপনার পেশা। আপনার প্রকাশকদের কতটা পাশে পেলেন এই অসময়ে?
আহমদ রফিক: দু-একজন ছাড়া অধিকাংশ প্রকাশককেই পাশে পাইনি। এমন প্রকাশকও আছে, অনেক অনুরোধ করে পাণ্ডুলিপি নিয়েছে, বই প্রকাশ করেছে, একাধিক সংস্করণ করেছে। কিন্তু একটি টাকাও দেয়নি রয়্যালটি বাবদ।
উপার্জন বন্ধ। আপনি যদি আমাদের মাঝে আরও কয়েক বছর থাকেন, সে ক্ষেত্রে আপনার ভবিষ্যৎ কীভাবে কাটবে?
আহমদ রফিক: আমার ভবিষ্যৎ পুরোই অন্ধকার। আমি জানি না, কীভাবে চলবে? এখন যা আছে, তা দিয়ে বছরখানেক চলবে। শরীরের যা অবস্থা, তাতে আর এক বছর বেঁচে নাও থাকতে পারি।
এরপর? সে ক্ষেত্রে আপনি কি চান রাষ্ট্র আপনার পাশে দাঁড়াক?
আহমদ রফিক: আমি তো সারা জীবন সরকারের সমালোচনা করেছি, যা সত্য তা-ই লিখে গেছি। যে জন্য কোনো দলই আমাকে হয়তো পছন্দ করে না। এটা তো একজন বুদ্ধিজীবীর জন্য সঠিক অবস্থান। তাই রাষ্ট্র কি আমার পাশে দাঁড়াবে?
কিন্তু মতাদর্শের সঙ্গে না মিললেও তো রাষ্ট্র তো অনেক সময় বুদ্ধিজীবী বা সংস্কৃতিসেবীদের পাশে দাঁড়ায়। আপনার জন্য রাষ্ট্র থেকে সে রকম ব্যবস্থা নিলে আপনার গ্রহণ করতে সমস্যা আছে?
আহমদ রফিক: যদি শর্তহীন ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে আমার পাশে দাঁড়ায়, সে ক্ষেত্রে আমার কোনো আপত্তি থাকবে না। এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলি। ত্রিশের দশকের কমিউনিস্ট আর্থার কুচলার দম্পতি স্বেচ্ছায় মৃত্যুর অধিকার নিয়ে একটা দাবি তুলেছিলেন। টার্মিনাল কেসে ক্যানসার রোগী অসম্ভব যন্ত্রণায় ভোগে। তাদের ক্ষেত্রে মেডিকেলে এথিকসে বলতে চাইছিল, কেউ যদি চায়, তিনি এই যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে থাকতে চান না। তাদের ক্ষেত্রে স্বেচ্ছায় মৃত্যুর আইনি অধিকার দেওয়া হোক। এটা নিয়ে আমি লিখেছিও একসময়। আমিও মনে করি, যেকোনো সভ্য নাগরিক যদি মনে করে, জীবনযাপনের নানা জটিলতার মধ্যে সে আর বাঁচতে চায় না, তাকে সেই অধিকারটা দেওয়া উচিত। তবে বিশ্বের কোথাও সম্ভবত এ নিয়ে কোনো আইন হয়নি। অবশ্য আর্থার কুচলার দম্পতি, জাপানি সাহিত্যিক কাওয়াবাতা স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করেছেন। এ রকম বেশ কিছু দৃষ্টান্ত আছে।
ইউনিক গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাখাওয়াত হোসেন। পর্যটনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি মনজুরুল ইসলাম।
০৩ অক্টোবর ২০২৪বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, সুফি এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে কোনো বিভাজনমূলক এজেন্ডায় রাজনীতির দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহৃত না হওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা দৃঢ়ভাবে কোনো সাম্প্রদায়িক ফাঁদে আটকা পড়তে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করি। কোনোভাবেই তা হতে দেওয়া যাবে না।
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪‘আমি এটাকে ঠিক রাজনৈতিক ভাবাদর্শ বলব না। আমি এটাকে বলব, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া, সেটা আমার পারিবারিক শিক্ষা। আমাদের ঘরের ডাইনিং টেবিল থেকে শুরু করে যেকোনো ক্ষেত্রে প্রয়োজনে পরিবারের বড়দের সাথে আমরা দ্বিমত পোষণ করতে পেরেছি। ছোট থেকে বড়, কারও কোনো কথা বা কাজ ভুল মনে হলে সেটাকে আমরা তার প্রতি স
৩১ আগস্ট ২০২৪একেক মানুষ বেছে নেন একেক পেশা। তাঁদের মধ্যে কারও কারও পেশা একটু ভিন্ন ধরনের। যেমন—মো. মুনসুর আলী ওরফে মন্টু খলিফা। বাপ-দাদার পেশাকে ভালোবেসে শিশুদের খতনা করানো বা হাজামের কাজ বেছে নিয়েছেন পেশা হিসেবে। জীবনে পার করেছেন প্রায় ৮৫ বছর। জানিয়েছেন গত ৬০ বছরে ২ লাখের বেশি শিশুর মুসলমানি বা সুন্নতে খতনা দিয়
৩০ মার্চ ২০২৪