সানজিদা সামরিন
আপনার কাছে ভালো থাকার মানে কী?
আজমেরী হক বাঁধন: ভালো থাকার জন্য শারীরিকভাবে সুস্থ থাকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর বাইরে আমি যেভাবে থাকতে চাই এবং যেমন করে আমার জীবনটাকে যাপন করতে চাই, সেভাবে যদি থাকতে পারি, তখন বলা যায়—ভালো আছি। যখন মাথায় অনেক নতুন চিন্তা খেলা করে, তখন অনেক ভালো লাগে। তবে আশপাশে যখন নিপীড়নের ঘটনা চোখে পড়ে, অসংগতি দেখি, তখন ভালো থাকতে পারি না।
ভালো থাকার জন্য কী কী করেন?
বাঁধন: ভালো থাকার জন্য নিজের শরীরের সুস্থতার ওপর নজর দিয়েছি। নিয়মিত ব্যায়াম করি, যা আমার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য দুটোই ভালো রাখে। একটা সময় আমার ওজন বেড়ে গিয়েছিল, যা আমার স্বাস্থ্যের জন্য ইতিবাচক ছিল না। সেদিক থেকে ওজন নিয়ন্ত্রণে এনেছি। মন ভালো রাখতে সিনেমা দেখি, বই পড়ি, ঘুরে বেড়াই। কেউ শুনুক বা না শুনুক আমার যেটা ভালো লাগছে না, সেটা এখন অকপটে বলি, আগে যা বলতাম না। এটা আমাকে এক ধরনের মুক্তি দেয়, ভালো লাগাও দেয়। কারণ মানুষ হিসেবে আমার অধিকার রয়েছে, যে বিষয়টা আমার ভালো লাগছে না, তা নির্দ্বিধায় বলার।
নিজেকে কতটা ভালোবাসেন?
বাঁধন: নিজেকে ভালোবাসতে পারা তো একটা অভ্যাসের ব্যাপার। দুঃখজনক যে, এ ব্যাপারটা আমাদের মধ্য়ে গড়ে তোলাই হয় না। আমাদের সমাজে এখনো যখন একটা মেয়ে বলে, ‘আমি নিজেকে ভালোবাসি’, তখন আশপাশের সবাই ধরে নেয় মেয়েটা বুঝি স্বার্থপর; কেবল নিজেকে নিয়েই ভাবে। ৩৪ বছর বয়স পর্যন্ত আমি আমার ভালো লাগা, ইচ্ছে বা নিজের ওপর কখনো ফোকাস করিনি। এককথায় প্রাধান্য দিইনি। সমাজের তথাকথিত আদর্শ নারীরা যা যা চিন্তা করেন বা যা করেন, সবার জন্য আমিও সেই অনুযায়ী সব করতাম। এখন আমার বয়স ৩৮ বছর। চার বছর ধরে যখন আমি নিজেকে মানুষ হিসেবে উপলব্ধি করতে শুরু করেছি, তখন মনে হয়েছে নিজেকে ভালোবাসাটা খুব জরুরি।
জীবনের অনুপ্রেরণা কে?
বাঁধন: সেভাবে আলাদা করে কারও কথা বলতে পারছি না। যুগে যুগে সমাজে পরিবর্তন এনেছেন—এমন মানুষের জীবনের গল্প বা তাঁদের মুভমেন্ট আমাকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে অনুপ্রাণিত করে যাচ্ছে। আমি মনে করি, প্রতিটি মানুষের জীবনকৌশল ও লক্ষ্য আলাদা হবে এবং তাদের মুভমেন্টও আলাদা হবে। তবে হ্যাঁ, ছোটবেলায় খুব বেশি মাদার তেরেসার ভক্ত ছিলাম। তিনি যে তাঁর জীবনের সবটুকু দিয়ে মানুষের সেবা করতে পেরেছেন, এ ব্যাপারটা আমাকে ভীষণ অনুপ্রাণিত করত।
নিজেকে ভালোবাসতে পারা তো একটা অভ্যাসের ব্যাপার
—আজমেরী হক বাঁধন
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের নারীদের কাছে প্রত্যাশা কী?
বাঁধন: আমি এ দেশের নাগরিক। এই সমাজে বাস করি। সুতরাং নারীদের কাছে নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে আশা করি যে, সংবিধানে যেভাবে লেখা আছে ‘নারী-পুরুষ সমান’, সেভাবে সমমর্যাদা ও সমঅধিকার রাষ্ট্রীয়ভাবে, ধর্মীয়ভাবে, সামাজিকভাবে ও পারিবারিকভাবে যাতে নিশ্চিত করা হয়। সমঅধিকারের ব্যাপারটা এ দেশে বিভিন্নভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। যেখানে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নারী, বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী, মাননীয় স্পিকার নারী। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও নারীরা অনেক বড় বড় অবস্থানে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। কিন্তু এরপরও আমাদের সমাজে নারীরা পদে পদে নিপীড়িত। বলা বাহুল্য, সমাজের কাঠামোগত কারণেই নারীরা তাদের স্বাধীনতা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত। এখনো পারিবারিক সম্পত্তিতে ছেলেসন্তান ও মেয়েসন্তানের সমঅধিকার নেই। এমনকি প্রতিষ্ঠানগুলোয় এখনো বেতনের ক্ষেত্রে বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়। এককথায় কোনো নারীকে সফল হতে হলে শেকল ভেঙে বেরিয়ে আসতে হয়। একজন পুরুষের যদি শেকল ভাঙার প্রশ্ন না থাকে, তাহলে নারীর কেন থাকবে?
বহির্বিশ্বের নারীদের জীবনযাপনের সঙ্গে বাংলাদেশের নারীদের পার্থক্য কী? আর কতটা পথ পেরোলে উত্তরণ মিলবে?
বাঁধন: পুরো বিশ্বেই কিন্তু নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত। আমাদের এখানে নারীরা এক ধরনের নির্যাতনের শিকার বা একভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। কিন্তু বহির্বিশ্বেও নানা ধরনের বৈষম্য রয়েছে। হ্যাঁ, কিছু কিছু দেশ অনেক বেশি এগিয়ে গেছে বলে সেখানকার নারীরা অনেক বেশি অগ্রসর হতে পেরেছে। কিন্তু আমাদের এখানে সংগ্রামটা এখনো চলছে। যে যার জীবনে যেখান থেকে পারছে করছে। এখানে এখনো তো সন্তান কখন নেবে, এই সিদ্ধান্তটাও নারীরা নিজে নিতে পারে না। পরিবার ও সমাজ এই সিদ্ধান্তটাও নারীর ওপর চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করে। সন্তান জন্ম দেওয়াটাই বড় কথা নয়, নারী যে মা হওয়ার একটা অপার ক্ষমতা রাখে এবং এই মা হওয়ার জন্য যে একজন নারীর বিরাট মানসিক প্রস্তুতির প্রয়োজন, এটাও উপলব্ধি করার সুযোগ নেই। ফলে নারীর মুক্তি তো আসলে নারীর একার চেষ্টায় হবে না। যেহেতু আমরা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের শৃঙ্খলে আবদ্ধ। এই শৃঙ্খল সবাইকে মিলে ভাঙতে হবে। সেখানে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হবে।
নারীদের কাছে নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে আশা করি যে, সংবিধানে যেভাবে লেখা আছে ‘নারী-পুরুষ সমান’, সেভাবে সমমর্যাদা ও সমঅধিকার রাষ্ট্রীয়ভাবে, ধর্মীয়ভাবে, সামাজিকভাবে ও পারিবারিকভাবে যাতে নিশ্চিত করা হয়
—আজমেরী হক বাঁধন
ছবি: সংগৃহীত
ব্যক্তিগত জীবনে এত সংগ্রামের পর ক্যারিয়ারে এত সফল। কীভাবে সব সামলেছেন?
বাঁধন: একমাত্র আমিই আমার পাশে ছিলাম। ক্যারিয়ারে সফল হওয়ার পর আমি সবাইকে পাশে পেয়েছি, এর আগে নয়। এতে করে আমি যেমন অনেক শক্ত হতে পেরেছি; আবার একাকিত্ববোধও হয়েছে। তবে আমি জানি, আমার জন্য আমিই যথেষ্ট। আমি বিশ্বাস করি প্রতিটি মানুষের সবচেয়ে বড় বন্ধু আসলে সে নিজেই। একজন মানুষ নিজেই কেবল পারে তার জীবনকে পরিবর্তন করতে।
নিজের সফলতা কীভাবে উপভোগ করেন?
বাঁধন: আমার সবচেয়ে বেশি যা ভালো লাগে তা হলো, আমার মেয়ে তার মাকে হেরে যেতে দেখে না। তার কাছে তার মা ‘হিরো’। অসংখ্য নারীর কাছে আমি হিরো; এ ব্যাপারটা আমার ভালো লাগে। আমার ছোট ভাই আর কাজিনরা যখন আমাকে বলে, ‘তুমি তো আমাদের হিরো’, তখন সত্য়িই আমার খুব ভালো লাগে।
রেহানা মরিয়ম নূরের পর ব্যস্ততা কী নিয়ে?
বাঁধন: গত মাসে ভারতীয় চলচ্চিত্রকার বিশাল ভরদ্বাজের সিনেমা ‘খুফিয়া’-এর শুটিং করে এলাম। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সে ‘খুফিয়া’ মুক্তি পাবে। দেশে অ্যাপেলবক্স প্রোডাকশনের একটা সিনেমা করার কথা। শুটিংয়ের তারিখ ঠিক ছিল; কিন্তু বিভিন্ন কারণে পিছিয়ে পড়ে। কাজ শুরু হলে ব্যস্ত হয়ে পড়ব। এখন স্যামসাংয়ের একটা প্রমোশনের কাজ করছি, আর ইশো ব্র্যান্ডের অ্যাম্বাসেডর হয়েছি। এর বাইরে কোনো কাজের চাপ নিচ্ছি না। অভিনয়েই মূল ফোকাস রাখতে চাই।
কী ধরনের চরিত্রে কাজ করতে ভালো লাগে?
বাঁধন: যেখানে আমার নিজেকে ভেঙে নতুন কিছু করার সুযোগ থাকে—এমন চরিত্রে কাজ করে স্বস্তি পাই।
ওয়েব সিরিজে সম্প্রতি কাজ করার ইচ্ছে আছে?
বাঁধন: তেমন চরিত্র পেলে আমি নাটকও করতে চাই। চরিত্রের ওপর ফোকাস করে তবেই কাজ করব। আশানুরূপ গল্প ও চরিত্র মিললে ওয়েব সিরিজ অবশ্যই করব।
একমাত্র আমিই আমার পাশে ছিলাম। ক্যারিয়ারে সফল হওয়ার পর আমি সবাইকে পাশে পেয়েছি, এর আগে নয়
—আজমেরী হক বাঁধন
ছবি: সংগৃহীত
মাতৃত্বকে কীভাবে উপভোগ করেন?
বাঁধন: আমার সন্তানের জন্মের পর আমি আমার ভেতরে একধরনের শক্তি অনুভব করেছি। আমি আমার মাতৃত্বকে অনেক উপভোগ করেছি, করি। আবার অনেক চাপের মুখেও পড়েছি। আমাদের দেশে মাতৃত্ব ব্যাপারটাকে চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি, উপভোগ করার সুযোগ কম। যেহেতু আমি সিঙ্গেল মাদার, আবার মিডিয়ায় কাজ করি, ফলে আমি মা হিসেবে কতটুকু ব্যর্থ, সেই হিসাবটাই বেশি চলে আশপাশে। মা হিসেবে আমার জায়গা থেকে সন্তানের সঙ্গে আমার সময়টা আমি খুব উপভোগ করি। আমার জীবনে একটা সময় পর আমার সন্তান ছাড়া আর কিছুই ছিল না। ফলে আমার পুরো পৃথিবী আমার মেয়েকে ঘিরেই ছিল। ওর বেড়ে ওঠার সঙ্গে আমিও যে পূর্ণাঙ্গ একজন মানুষ হয়ে উঠছি, এ ব্যাপারটা আমি খুব উপভোগ করি।
সন্তানকে নিয়ে ভাবনা কী?
বাঁধন: আমাদের প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে আমরা সন্তানকে নিজের সম্পত্তি মনে করি। সন্তানকে সিদ্ধান্ত নিতে শেখানো হয় না। মনে করা হয় যে, অভিভাবকই বুঝি সবচেয়ে ভালো বোঝেন। যার কারণে সন্তান বড় হয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। একা একা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেও দ্বিধাগ্রস্ত থাকে। আমার জীবন থেকে উপলব্ধি করেছি যে, আমার সঙ্গে যা হয়েছে, তা যদি আমার মেয়ের সঙ্গেও রিপিট করি, তাহলে এই বৃত্ত ভাঙবে না, চলতেই থাকবে। আমি চর্চা করার চেষ্টা করছি যে, আমার মাধ্যমে আমার সন্তান পৃথিবীতে এসেছে। মা হিসেবে আমার দায়িত্ব তাকে সঠিক পথ দেখানো, যাতে সে ভালো মানুষ হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু বাকিটা আমার সন্তানই নির্ধারণ করবে যে, সে জীবনে কী করতে চায়।
আপনার কাছে ভালো থাকার মানে কী?
আজমেরী হক বাঁধন: ভালো থাকার জন্য শারীরিকভাবে সুস্থ থাকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর বাইরে আমি যেভাবে থাকতে চাই এবং যেমন করে আমার জীবনটাকে যাপন করতে চাই, সেভাবে যদি থাকতে পারি, তখন বলা যায়—ভালো আছি। যখন মাথায় অনেক নতুন চিন্তা খেলা করে, তখন অনেক ভালো লাগে। তবে আশপাশে যখন নিপীড়নের ঘটনা চোখে পড়ে, অসংগতি দেখি, তখন ভালো থাকতে পারি না।
ভালো থাকার জন্য কী কী করেন?
বাঁধন: ভালো থাকার জন্য নিজের শরীরের সুস্থতার ওপর নজর দিয়েছি। নিয়মিত ব্যায়াম করি, যা আমার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য দুটোই ভালো রাখে। একটা সময় আমার ওজন বেড়ে গিয়েছিল, যা আমার স্বাস্থ্যের জন্য ইতিবাচক ছিল না। সেদিক থেকে ওজন নিয়ন্ত্রণে এনেছি। মন ভালো রাখতে সিনেমা দেখি, বই পড়ি, ঘুরে বেড়াই। কেউ শুনুক বা না শুনুক আমার যেটা ভালো লাগছে না, সেটা এখন অকপটে বলি, আগে যা বলতাম না। এটা আমাকে এক ধরনের মুক্তি দেয়, ভালো লাগাও দেয়। কারণ মানুষ হিসেবে আমার অধিকার রয়েছে, যে বিষয়টা আমার ভালো লাগছে না, তা নির্দ্বিধায় বলার।
নিজেকে কতটা ভালোবাসেন?
বাঁধন: নিজেকে ভালোবাসতে পারা তো একটা অভ্যাসের ব্যাপার। দুঃখজনক যে, এ ব্যাপারটা আমাদের মধ্য়ে গড়ে তোলাই হয় না। আমাদের সমাজে এখনো যখন একটা মেয়ে বলে, ‘আমি নিজেকে ভালোবাসি’, তখন আশপাশের সবাই ধরে নেয় মেয়েটা বুঝি স্বার্থপর; কেবল নিজেকে নিয়েই ভাবে। ৩৪ বছর বয়স পর্যন্ত আমি আমার ভালো লাগা, ইচ্ছে বা নিজের ওপর কখনো ফোকাস করিনি। এককথায় প্রাধান্য দিইনি। সমাজের তথাকথিত আদর্শ নারীরা যা যা চিন্তা করেন বা যা করেন, সবার জন্য আমিও সেই অনুযায়ী সব করতাম। এখন আমার বয়স ৩৮ বছর। চার বছর ধরে যখন আমি নিজেকে মানুষ হিসেবে উপলব্ধি করতে শুরু করেছি, তখন মনে হয়েছে নিজেকে ভালোবাসাটা খুব জরুরি।
জীবনের অনুপ্রেরণা কে?
বাঁধন: সেভাবে আলাদা করে কারও কথা বলতে পারছি না। যুগে যুগে সমাজে পরিবর্তন এনেছেন—এমন মানুষের জীবনের গল্প বা তাঁদের মুভমেন্ট আমাকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে অনুপ্রাণিত করে যাচ্ছে। আমি মনে করি, প্রতিটি মানুষের জীবনকৌশল ও লক্ষ্য আলাদা হবে এবং তাদের মুভমেন্টও আলাদা হবে। তবে হ্যাঁ, ছোটবেলায় খুব বেশি মাদার তেরেসার ভক্ত ছিলাম। তিনি যে তাঁর জীবনের সবটুকু দিয়ে মানুষের সেবা করতে পেরেছেন, এ ব্যাপারটা আমাকে ভীষণ অনুপ্রাণিত করত।
নিজেকে ভালোবাসতে পারা তো একটা অভ্যাসের ব্যাপার
—আজমেরী হক বাঁধন
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের নারীদের কাছে প্রত্যাশা কী?
বাঁধন: আমি এ দেশের নাগরিক। এই সমাজে বাস করি। সুতরাং নারীদের কাছে নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে আশা করি যে, সংবিধানে যেভাবে লেখা আছে ‘নারী-পুরুষ সমান’, সেভাবে সমমর্যাদা ও সমঅধিকার রাষ্ট্রীয়ভাবে, ধর্মীয়ভাবে, সামাজিকভাবে ও পারিবারিকভাবে যাতে নিশ্চিত করা হয়। সমঅধিকারের ব্যাপারটা এ দেশে বিভিন্নভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। যেখানে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নারী, বিরোধীদলীয় নেত্রী নারী, মাননীয় স্পিকার নারী। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও নারীরা অনেক বড় বড় অবস্থানে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। কিন্তু এরপরও আমাদের সমাজে নারীরা পদে পদে নিপীড়িত। বলা বাহুল্য, সমাজের কাঠামোগত কারণেই নারীরা তাদের স্বাধীনতা ও অধিকার থেকে বঞ্চিত। এখনো পারিবারিক সম্পত্তিতে ছেলেসন্তান ও মেয়েসন্তানের সমঅধিকার নেই। এমনকি প্রতিষ্ঠানগুলোয় এখনো বেতনের ক্ষেত্রে বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়। এককথায় কোনো নারীকে সফল হতে হলে শেকল ভেঙে বেরিয়ে আসতে হয়। একজন পুরুষের যদি শেকল ভাঙার প্রশ্ন না থাকে, তাহলে নারীর কেন থাকবে?
বহির্বিশ্বের নারীদের জীবনযাপনের সঙ্গে বাংলাদেশের নারীদের পার্থক্য কী? আর কতটা পথ পেরোলে উত্তরণ মিলবে?
বাঁধন: পুরো বিশ্বেই কিন্তু নারীরা বিভিন্নভাবে নির্যাতিত। আমাদের এখানে নারীরা এক ধরনের নির্যাতনের শিকার বা একভাবে বঞ্চিত হচ্ছে। কিন্তু বহির্বিশ্বেও নানা ধরনের বৈষম্য রয়েছে। হ্যাঁ, কিছু কিছু দেশ অনেক বেশি এগিয়ে গেছে বলে সেখানকার নারীরা অনেক বেশি অগ্রসর হতে পেরেছে। কিন্তু আমাদের এখানে সংগ্রামটা এখনো চলছে। যে যার জীবনে যেখান থেকে পারছে করছে। এখানে এখনো তো সন্তান কখন নেবে, এই সিদ্ধান্তটাও নারীরা নিজে নিতে পারে না। পরিবার ও সমাজ এই সিদ্ধান্তটাও নারীর ওপর চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করে। সন্তান জন্ম দেওয়াটাই বড় কথা নয়, নারী যে মা হওয়ার একটা অপার ক্ষমতা রাখে এবং এই মা হওয়ার জন্য যে একজন নারীর বিরাট মানসিক প্রস্তুতির প্রয়োজন, এটাও উপলব্ধি করার সুযোগ নেই। ফলে নারীর মুক্তি তো আসলে নারীর একার চেষ্টায় হবে না। যেহেতু আমরা পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের শৃঙ্খলে আবদ্ধ। এই শৃঙ্খল সবাইকে মিলে ভাঙতে হবে। সেখানে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকেই এগিয়ে আসতে হবে।
নারীদের কাছে নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে আশা করি যে, সংবিধানে যেভাবে লেখা আছে ‘নারী-পুরুষ সমান’, সেভাবে সমমর্যাদা ও সমঅধিকার রাষ্ট্রীয়ভাবে, ধর্মীয়ভাবে, সামাজিকভাবে ও পারিবারিকভাবে যাতে নিশ্চিত করা হয়
—আজমেরী হক বাঁধন
ছবি: সংগৃহীত
ব্যক্তিগত জীবনে এত সংগ্রামের পর ক্যারিয়ারে এত সফল। কীভাবে সব সামলেছেন?
বাঁধন: একমাত্র আমিই আমার পাশে ছিলাম। ক্যারিয়ারে সফল হওয়ার পর আমি সবাইকে পাশে পেয়েছি, এর আগে নয়। এতে করে আমি যেমন অনেক শক্ত হতে পেরেছি; আবার একাকিত্ববোধও হয়েছে। তবে আমি জানি, আমার জন্য আমিই যথেষ্ট। আমি বিশ্বাস করি প্রতিটি মানুষের সবচেয়ে বড় বন্ধু আসলে সে নিজেই। একজন মানুষ নিজেই কেবল পারে তার জীবনকে পরিবর্তন করতে।
নিজের সফলতা কীভাবে উপভোগ করেন?
বাঁধন: আমার সবচেয়ে বেশি যা ভালো লাগে তা হলো, আমার মেয়ে তার মাকে হেরে যেতে দেখে না। তার কাছে তার মা ‘হিরো’। অসংখ্য নারীর কাছে আমি হিরো; এ ব্যাপারটা আমার ভালো লাগে। আমার ছোট ভাই আর কাজিনরা যখন আমাকে বলে, ‘তুমি তো আমাদের হিরো’, তখন সত্য়িই আমার খুব ভালো লাগে।
রেহানা মরিয়ম নূরের পর ব্যস্ততা কী নিয়ে?
বাঁধন: গত মাসে ভারতীয় চলচ্চিত্রকার বিশাল ভরদ্বাজের সিনেমা ‘খুফিয়া’-এর শুটিং করে এলাম। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সে ‘খুফিয়া’ মুক্তি পাবে। দেশে অ্যাপেলবক্স প্রোডাকশনের একটা সিনেমা করার কথা। শুটিংয়ের তারিখ ঠিক ছিল; কিন্তু বিভিন্ন কারণে পিছিয়ে পড়ে। কাজ শুরু হলে ব্যস্ত হয়ে পড়ব। এখন স্যামসাংয়ের একটা প্রমোশনের কাজ করছি, আর ইশো ব্র্যান্ডের অ্যাম্বাসেডর হয়েছি। এর বাইরে কোনো কাজের চাপ নিচ্ছি না। অভিনয়েই মূল ফোকাস রাখতে চাই।
কী ধরনের চরিত্রে কাজ করতে ভালো লাগে?
বাঁধন: যেখানে আমার নিজেকে ভেঙে নতুন কিছু করার সুযোগ থাকে—এমন চরিত্রে কাজ করে স্বস্তি পাই।
ওয়েব সিরিজে সম্প্রতি কাজ করার ইচ্ছে আছে?
বাঁধন: তেমন চরিত্র পেলে আমি নাটকও করতে চাই। চরিত্রের ওপর ফোকাস করে তবেই কাজ করব। আশানুরূপ গল্প ও চরিত্র মিললে ওয়েব সিরিজ অবশ্যই করব।
একমাত্র আমিই আমার পাশে ছিলাম। ক্যারিয়ারে সফল হওয়ার পর আমি সবাইকে পাশে পেয়েছি, এর আগে নয়
—আজমেরী হক বাঁধন
ছবি: সংগৃহীত
মাতৃত্বকে কীভাবে উপভোগ করেন?
বাঁধন: আমার সন্তানের জন্মের পর আমি আমার ভেতরে একধরনের শক্তি অনুভব করেছি। আমি আমার মাতৃত্বকে অনেক উপভোগ করেছি, করি। আবার অনেক চাপের মুখেও পড়েছি। আমাদের দেশে মাতৃত্ব ব্যাপারটাকে চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা অনেক বেশি, উপভোগ করার সুযোগ কম। যেহেতু আমি সিঙ্গেল মাদার, আবার মিডিয়ায় কাজ করি, ফলে আমি মা হিসেবে কতটুকু ব্যর্থ, সেই হিসাবটাই বেশি চলে আশপাশে। মা হিসেবে আমার জায়গা থেকে সন্তানের সঙ্গে আমার সময়টা আমি খুব উপভোগ করি। আমার জীবনে একটা সময় পর আমার সন্তান ছাড়া আর কিছুই ছিল না। ফলে আমার পুরো পৃথিবী আমার মেয়েকে ঘিরেই ছিল। ওর বেড়ে ওঠার সঙ্গে আমিও যে পূর্ণাঙ্গ একজন মানুষ হয়ে উঠছি, এ ব্যাপারটা আমি খুব উপভোগ করি।
সন্তানকে নিয়ে ভাবনা কী?
বাঁধন: আমাদের প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে আমরা সন্তানকে নিজের সম্পত্তি মনে করি। সন্তানকে সিদ্ধান্ত নিতে শেখানো হয় না। মনে করা হয় যে, অভিভাবকই বুঝি সবচেয়ে ভালো বোঝেন। যার কারণে সন্তান বড় হয়ে যাওয়ার পর বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়। একা একা জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেও দ্বিধাগ্রস্ত থাকে। আমার জীবন থেকে উপলব্ধি করেছি যে, আমার সঙ্গে যা হয়েছে, তা যদি আমার মেয়ের সঙ্গেও রিপিট করি, তাহলে এই বৃত্ত ভাঙবে না, চলতেই থাকবে। আমি চর্চা করার চেষ্টা করছি যে, আমার মাধ্যমে আমার সন্তান পৃথিবীতে এসেছে। মা হিসেবে আমার দায়িত্ব তাকে সঠিক পথ দেখানো, যাতে সে ভালো মানুষ হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু বাকিটা আমার সন্তানই নির্ধারণ করবে যে, সে জীবনে কী করতে চায়।
ইউনিক গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাখাওয়াত হোসেন। পর্যটনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি মনজুরুল ইসলাম।
০৩ অক্টোবর ২০২৪বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, সুফি এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে কোনো বিভাজনমূলক এজেন্ডায় রাজনীতির দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহৃত না হওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা দৃঢ়ভাবে কোনো সাম্প্রদায়িক ফাঁদে আটকা পড়তে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করি। কোনোভাবেই তা হতে দেওয়া যাবে না।
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪‘আমি এটাকে ঠিক রাজনৈতিক ভাবাদর্শ বলব না। আমি এটাকে বলব, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া, সেটা আমার পারিবারিক শিক্ষা। আমাদের ঘরের ডাইনিং টেবিল থেকে শুরু করে যেকোনো ক্ষেত্রে প্রয়োজনে পরিবারের বড়দের সাথে আমরা দ্বিমত পোষণ করতে পেরেছি। ছোট থেকে বড়, কারও কোনো কথা বা কাজ ভুল মনে হলে সেটাকে আমরা তার প্রতি স
৩১ আগস্ট ২০২৪একেক মানুষ বেছে নেন একেক পেশা। তাঁদের মধ্যে কারও কারও পেশা একটু ভিন্ন ধরনের। যেমন—মো. মুনসুর আলী ওরফে মন্টু খলিফা। বাপ-দাদার পেশাকে ভালোবেসে শিশুদের খতনা করানো বা হাজামের কাজ বেছে নিয়েছেন পেশা হিসেবে। জীবনে পার করেছেন প্রায় ৮৫ বছর। জানিয়েছেন গত ৬০ বছরে ২ লাখের বেশি শিশুর মুসলমানি বা সুন্নতে খতনা দিয়
৩০ মার্চ ২০২৪