তামাকুমন্ডী লেন বণিক সমিতির সভাপতি মো. আবু তালেব। তামাকুমন্ডী লেন, চট্টগ্রামের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ও বড় ব্যবসায়ী সংগঠন। এখানে প্রায় ১৪ হাজার দোকানে কাজ করেন লক্ষাধিক শ্রমিক–কর্মচারী। করোনায় এখানে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৯৬ হাজার কোটি টাকা। বিস্তারিত বলেছেন আজকের পত্রিকাকে।
প্রশ্ন: তামাকুমন্ডী লেন বণিক সমিতির অধীনে বর্তমানে কতটি মার্কেট ও দোকানপাট আছে? কর্মচারীর সংখ্যা কত?
আবু তালেব: এখন এখানে মার্কেটের সংখ্যা ১১০। ছোট–বড় মিলে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৪ হাজার। দোকানমালিক, শ্রমিক, কর্মচারী মিলে লক্ষাধিক লোক প্রতিদিন এখানে কাজ করেন। এটি চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী সমিতি এবং বাংলাদেশের প্রথম পাঁচটি সমিতির একটি। এখানকার এক বর্গকিলোমিটার এলাকায় পোশাক, স্বর্ণ, কসমেটিকস, চামড়া, ইলেকট্রনিকস, বইসহ সব ধরনের পণ্যই পাওয়া যায়।
প্রশ্ন: করোনায় আপনাদের ব্যবসায় কী প্রভাব পড়েছে?
আবু তালেব: তামাকুমন্ডী লেনের ব্যবসায়ীদের এমন কষ্ট আর দেখিনি। আমাদের এখানে প্রতিদিন অন্তত ২০০ কোটি টাকার লেনদেন হতো। এ মার্কেটের সঙ্গে আমদানিকারক, মধ্যস্বত্বভোগী, পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা জড়িত। ক্রেতাদের পাশাপাশি খুচরা বিক্রেতারাও আসেন বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে। পাইকারি দরে পণ্য কিনে নিয়ে যান। আমদানিকারকেরা এখানকার ব্যবসায়ীদের ওপর নির্ভরশীল। যদি প্রতিদিন ২০০ কোটি টাকাও ধরি, মাসে অন্তত ৬ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। গত ১৬–১৭ মাস দোকানপাট বন্ধ। মাঝখানে গেল রমজানে একটু সুযোগ পেয়েছিলাম। ১৬ মাসে অন্তত ৯৬ হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে আমাদের।
প্রশ্ন: ব্যবসায়ীদের কী অবস্থা?
আবু তালেব: ক্ষুদ্র কেউ কেউ দোকান ছেড়ে দিয়েছেন। এখানকার শ্রমিক–কর্মচারীদেরও একই অবস্থা। মাঝারি ও বড় ব্যবসায়ীরা কর্মচারী ছাঁটাই করেছেন, কেউ লোন নিয়ে দোকানখরচ, ভাড়া, পারিবারিক খরচ মেটাচ্ছেন। এভাবে কতদিন? গত দুই বছর আমরা যেসব পণ্য কিনেছি, তার বেশির ভাগের গুণাগুণ, মেয়াদ নষ্ট হওয়ার পথে। কাপড়ের বেলায় হাল আমলের ফ্যাশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। দুই বছর আগে যেসব পোশাক কিনেছি, তা আর চলবে না।
প্রশ্ন: প্রণোদনা পেয়েছেন?
আবু তালেব: প্রণোদনার জন্য অনেক জায়গায় গেছি। কিন্তু কোথাও পাইনি। বারবার বলার পরও কেন পাইনি জানি না? কোনো কোনো ব্যবসায়ী ব্যাংকঋণও পাননি। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তাঁরা দোকানপাট ছেড়ে দিয়েছেন। এখন আমরা প্রতিদিন দোকানমালিকদের থেকে ফোন পাই, চাপে থাকি। বাধ্য হয়ে মার্কেটমালিকদের সঙ্গে কথা বলে গত বছর ৪০–৫০ শতাংশ ভাড়া মওকুফ করেছি। এবারও করতে পারি কি না দেখছি। কারণ অনেক দোকানদার দোকান খুলতেই পারেননি।
প্রশ্ন: সরকারের কাছে দাবি কী?
আবু তালেব: দাবি দ্রুত টিকার ব্যবস্থা করুন। এভাবে লকডাউন দিলে জীবিকার মাধ্যম শেষ হয়ে যাবে। আমরা আর পারছি না। আর যাতে লকডাউন দেওয়া না হয়।