রজত কান্তি রায়
মডেলিং শুরুর প্রথম দিকের গল্প শুনতে চাই?
সৈয়দ রুমা: ২০০২ থেকে মডেলিং শুরু করি। আমার এক কাজিন বাইরে থাকে। সে মডেলিং করত। আমার মডেলিংয়ের ব্যাপারে কোনো আগ্রহ ছিল না। ভেবেছিলাম হয়তো-বা পুলিশ হব, ডক্টর হব। আমি ছেলেদের মতোই খেলাধুলা করতাম, হাঁটাচলা করতাম। আমার বড় বোনের মডেলিংয়ে খুব আগ্রহ ছিল। আমার কাজিন একদিন এসে বলল, ‘তোমরা মডেলিং করবা?’ তখন আমার বড়বোন বলল, ‘হ্যাঁ, করব।’
সে সময় পাবলিক লাইব্রেরিতে, জাদুঘরে, চীনমৈত্রীতে শো হতো। ফার্স্ট শো করলাম। আর কিছু রাশিয়ান কালচারাল সেন্টারে শো ছিল। প্রথম দিকে শো-এর সময় খুব প্যারা লাগত। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একটা শো-এর জন্য বসে থাকা! আমার জন্য কমফোর্টেবল ছিল না। তারপর, ধীরে ধীরে আগ্রহ বেড়ে গেল। আমাকে আমার বোন পুশ করেছে। আমার বোন তার পরীক্ষার জন্য মডেলিং অফ করে দিছে। আমি সব সময় বলতাম—এটা আমার শখ। তবে আমি কখন যে একে পেশা হিসেবে নিয়েছি, তা হয়তো নিজেও জানি না। ২০০৫-এ যখন নেসক্যাফে, সানসিল্কের বিলবোর্ড করি, তখন আগ্রহটা বাড়ে। আমি বাংলাদেশি মডেল হয়ে ইন্টারন্যাশনাল কাজ করেছি। কাজ করতে করতে ধীরে ধীরে আগ্রহ বাড়ে। মিডিয়ার শুরু কাজিনের মাধ্যমে। গ্রুমিংও তাই। এখন তো অনেক গ্রুমিং স্কুল আছে। আমার নিজেরও আছে। আমি দুই জায়গায় ক্লাসও নিই। ওই সময়ে এটা ছিল না। আমরা এক মাস রিহার্সাল করতাম। এক মাস ধরে হাঁটা শেখানো হতো। এমনও হয়েছে, শো-এর আগের দিন শো বাতিল হয়ে গেছে।
কেন?
সৈয়দ রুমা: অনেক কারণ ছিল। আর তখন কী কী কারণে শো বন্ধ হয়, তা আমরা বুঝিনি। ছোট ছিলাম অনেক। এখন কারণ জিজ্ঞেস করতে পারি। হয়তো হলের কোনো সমস্যা, স্পনসরের সমস্যা—এসব।
তার মানে ২০০২ থেকে শুরু...
সৈয়দ রুমা: হ্যাঁ, ২০০২ থেকে বেসিক শুরু। পেশা হিসেবে নিয়েছি ২০০৫ সাল থেকে। আমার বেসিক র্যাম্প।
কোন কোন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেছেন?
সৈয়দ রুমা: মোটামুটি সব ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করেছি। আড়ং, এক্সটেসি, ট্রেন্ডস, অনেকগুলোতে। টিভিসি অনেকগুলো করেছি। শো তো অসংখ্য। মুভিতে দুইটা আইটেম সং করেছি। ‘গেম’ মুভিতে আইটেম সং করেছি, আর ‘ইউ টার্ন’ মুভিতে আইটেম সং করেছি। আর এখন আমি আমার শপ ‘আর বাই রুমা’ নিয়ে ব্যস্ত। কোরিওগ্রাফি নিয়ে ব্যস্ত।
এখন তো র্যাম্পিং করছেন না?
সৈয়দ রুমা: মাঝে মাঝে করা হয়। তবে সব সময় শো করাই।
কোরিওগ্রাফার হিসেবে আপনি কত দিন কাজ করছেন?
সৈয়দ রুমা: ৬-৭ বছরের ওপরে।
আমি কয়েকজন মডেলের সঙ্গে কথা বলেছি। একটা পর্যায়ের পর সবাই কোরিওগ্রাফির দিকে চলে যান। সবাই একটা পর্যায়ে ইনস্টিটিউট খুলছেন। ২০০২ এবং ২০২১ অনেকটা সময়। কী মনে হয়, ইন্ডাস্ট্রি কি পজিটিভ দিকে যাচ্ছে, নাকি আগের মতোই থেকে যাচ্ছে?
সৈয়দ রুমা: প্রশ্নটা খুব ক্রিটিক্যাল। আমরা যখন কাজ শুরু করেছি, আমাদের মধ্যে প্যাশন ছিল। কাজের প্রতি সম্মান ছিল। নতুন জেনারেশনের মধ্যে এই জিনিসগুলোর অভাব। যতই গ্রুমিং হোক, আমার মনে হয় কমিটমেন্টের, সেন্সের অভাব। কিছু একটা অভাব আছেই। আমি নিজেও ক্লাসে বলি—তুমি মানুষকে সম্মান দিলে মানুষ তোমাকে সম্মান দেবে।
আমি আমার জীবনে অনেক ফ্যামিলি প্রোগ্রামে যাইনি। আমি আমার মামার বিয়েতে যাইনি। জাপানে শো করতে গিয়েছিলাম। ফ্যামিলির কাজিনদের অনেক প্রোগ্রামেই আমি অ্যাটেন্ড করতে পারিনি। অনেক মজা করতে পারিনি, যা আমার ফ্যামিলি করে। আমাদের ফ্যামিলির মানুষেরা বাসার অনুষ্ঠানেও খুব মজা করে। কিন্তু সেখানে আমি থাকতে পারি না। আমার নিজের বোনের এনগেজমেন্টের সময় আমি থাকতে পারিনি। সারা রাত আমি কাজ করেছি। কিন্তু ভোরে উঠে শো করতে যেতে হয়েছে। তারপরও কাজটাকে আমি অগুরুত্বপূর্ণ ভাবিনি। আমার বাবা নেই। অনেক দায়িত্ব থাকে আসলে। অনুষ্ঠানের মিষ্টিটা সবার বাসায় পাঠানোর জন্যও লোক লাগে। আমার মা, বোন—ওরা কতটাই-বা করবে। আমি থাকলে হেল্প হবে। সেই জিনিসগুলো আমি করতে পারিনি।
এখনকার ছেলেমেয়েরা শো-এর আগের দিন বলে দেয় যে, আমার একটা কাজ আছে বা অন্য কাজ আছে। আমার সময়ে একটা ছোট শো ছিল। এই শো-এর বুকিং আগে থেকেই দেওয়া ছিল। ওই সময়ে আড়ং ফ্যাশন উইকও চলছিল। কিন্তু আমরা ৮-১০ জন শুধুমাত্র কমিটমেন্টের কারণে আড়ংয়ের শো বাদ দিয়ে ছোট শোটাই করেছি। এই জিনিসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এখন সেটা নেই বলছেন?
সৈয়দ রুমা: এখন মানুষ খুব সহজেই সবকিছু পেয়ে যাচ্ছে। আমাদের সময় আমরা একটা শোয়ের জন্য এক মাস গ্রুমিং করতাম। এখন অল্প সময় গ্রুমিং-রিহার্সাল করেই ওরা শো করে ফেলছে। আগে বিলবোর্ড করব, ম্যাগাজিনের কভার করব—এটা স্বপ্ন ছিল। আগে যেকোনো পত্রিকায় সেলিব্রিটিরা কাজ করত। আর এখন সবাই করতে পারে। সহজভাবে সব পেয়ে যাচ্ছে। আর তাই এমন প্রবলেম হচ্ছে।
আপনি যাদের গ্রুমিং করাচ্ছেন, আপনার কাছে যারা আসছে, তাঁদের ক্ষেত্রেও কি আপনি এটা দেখছেন?
সৈয়দ রুমা: আমার গ্রুমিং হলো দু-তিন মাস। তারপর আমি তাদের ছেড়ে দিই। আমার সামনে হয়তো তারা নরমাল থাকবে। বাইরে গিয়ে তারা এমন করতে পারে। কারণ, আমি ফটোগ্রাফি করতে গিয়ে, অন্য কাজ করতে গিয়ে এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হই। একটা কাজ যখন হয়, তখন তার সঙ্গে পুরো একটা টিম থাকে। একজন যদি কমিটমেন্ট ব্রেক করে, তখন সবাইকে ঝামেলায় পড়তে হয়। পুরো শোটা ধ্বংস হয়ে যায়। আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশের বড় বড় শোগুলা আমি করি। বড় শোগুলোতে ৬০ থেকে ৭০ জন মডেল নিয়ে কাজ করি। একেকটা সিকোয়েন্সে মডেল থাকে ২০/২২ জন। র্যাম্প থাকে অনেক বড়। ১০০, ১৫০ ফুট—এ রকম। আমার এমনও হয়েছে, শোয়ের দিন ১০৩ ডিগ্রি জ্বর। বমি হচ্ছে। তাও আমি মেকআপ করেছি, শো করেছি। ধরুন, কারও পারলার ওপেনিং। আমি তো হুটহাট শো বাতিল করতে পারি না। তাঁকে বিপদে ফেলতে পারি না। এমন প্যাশন যদি থাকে, তাহলে মিডিয়া আগাবে। আমাদের দেশ থেকে অনেক মডেল দেশের বাইরে গিয়ে কাজ করছে। আমি নিজেও বাইরে অনেক শো করে এসেছি। অনেক ভালো ভালো ডিজাইনার বাড়ছে দেশে। লিংক বাড়ছে। যদি আমরা অ্যাকটিভ থাকি, আর যদি মডেলিং এজেন্সি থাকে, তাহলে আগাবেই। আমার অবজেকশন একটা আছে। একটা মেয়ে জিনস আর টপস পরে থাকলে তাকে মডেল বলা হয়। কোনো আইডি নাই তার। সবাই কিন্তু মডেল না। এখন তো ফেসবুকে সবাই ছবি দেয়। সবাই তো মডেল না। তাদের ট্যাগ লাগানো হয় যে, তারা মডেল। আমাদের মডেলদের একটা গ্রুপ আছে। আমরা চাই একটা এজেন্সি হোক। মডেলদের একটা আইডি থাকা দরকার, পরিচিতিমূলক কিছু থাকা দরকার। আমি খুব হতাশ হই যখন কোনো কিছু ঘটলে বলা হয়, এটা মডেল করেছে। এত বছর ধরে মডেলিং করি, আমি চিনিই না তাকে। ওদের জন্য আমাদের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।
মডেল এজেন্সি নিয়ে কি আপনারা কাজ করছেন? এটা কি খুব দ্রুতই হবে বলে মনে হয়?
সৈয়দ রুমা: হ্যাঁ, কাজ করছি। ইনশা আল্লাহ দ্রুত হবে। আমরা নিজেই সাফার করছি। প্রত্যেকেই তাদের ফ্যামিলি নিয়ে থাকি। কোনো কিছু বাইরে ঘটলে আমরা বিব্রত হই। মানুষ ফোন দেয়। তখন খুব খারাপ লাগে। যাদের নাম আসছে, ওরা তো মডেল না। আমি নিজেই ওদের চিনি না।
আমাদের মডেল ইন্ডাস্ট্রি খুব কম দিনের নয়। ৩০ বছর তো হবেই। টেলিভিশনেরও কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় আছে। আপনাদের হলো না কেন?
সৈয়দ রুমা: আমরা অনেকেই অনেকবার উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু হয়ে ওঠে নাই। আগে কোনো র্যাম্প টিভিতে দেখানো হতো না। এখন আগের চেয়ে বেশি শো হচ্ছে। টিভিতে দেখানো হচ্ছে। আগে মানুষজন র্যাম্প মডেলদের চিনত না। এখন চেনে। আগে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার বিষয়গুলো হয়তো অতটা গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হয়নি। কিন্তু এখন ভাবা হচ্ছে। এ জন্য আমরা কয়েকজন কাজ করে যাচ্ছি।
আপনি বিদেশে গেছেন, অনেক শো করেছেন। মডেলিং জগতের অনেক স্তরের মানুষের সঙ্গে আপনার পরিচয় হয়েছে। অন্য দেশের সঙ্গে আমাদের পার্থক্যটা আসলে কী?
সৈয়দ রুমা: পার্থক্যটা অনেক বেশি। ওরা অনেক বেশি ডেডিকেটেড। ওরা খুব টাইম মেইনটেইন করে। ভোর ৫/৬টায় মেকআপ শেষ করে, ৮টার মধ্যে সেটে থাকতে বললে ওরা তাই করে। আমাদের এদিকের প্রবলেম হলো, টাইম ডিলে করা। আমাদের দেশে ট্রাফিক অনেক বেশি থাকে। ওদের কাজ করার ধরনটা অন্যরকম। আমাদের দেশে এখন বড় বড় শো হচ্ছে, যা আগে হতো না। পাকিস্তানে একটা শো করেছি, সেখানে দেখলাম একেকজন মডেলের পেছনে একেকজন মেকআপ আর্টিস্ট। সবার কাপড় পরা থেকে শুরু করে সবকিছুর জন্য একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট থাকবেই। আগে আমাদের দেশে ছিল ১০ জন মেকআপ আর্টিস্ট, ২০ জন মডেল। এখন কিন্তু পরিবর্তন এসেছে। বাইরের দেশের ওরা আগে থেকে অনেক বেশি উন্নত। আর আমরা উন্নত হচ্ছি। আমাদের মডেলিং ইন্ডাস্ট্রি অনেক বেশি আগাতো যদি লকডাউন না হতো। আমরা ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে এত ভালো করে কাজ শুরু করেছি, মার্চের ২৬ তারিখের পর লকডাউন পড়ল। আমরা ২৩ তারিখ পর্যন্ত বলছিলাম, এবার বাংলাদেশ আসলেই কাজ করে ফাটায়া দিবে। লকডাউন হওয়াতে পিছিয়ে গেছি। কারও হাতে টাকা নেই, কাজ নেই। অনেক ডাউন হয়ে গেছে। এটা কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে।
পাকিস্তান গেছেন আপনি। কেমন দেখলেন?
সৈয়দ রুমা: অনেক আগে গেছি তো। খুব একটা মনে নেই। বাংলাদেশ থেকে আমি, ইমি আপু, শাওন আপু গিয়েছিলাম। ঘোরাঘুরি করেছি। বিচেও গিয়েছি। তবে আমাদের দেশের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতটা অনেক বেশি সুন্দর। অনেক বড়। ওখানে যেমন উট চলে, অনেক বড় বড় পাহাড়। মানুষজনকেও ফ্রেন্ডলি মনে হয়েছে। পাকিস্তানের মানুষ খুব শপিং করতে ভালোবাসে। জিনিসপত্র কম দামে পাওয়া যায়। আমাদের দেশে যেমন অনেক দাম।
ঢাকা কি খুব এক্সপেনসিভ শহর?
সৈয়দ রুমা: হ্যাঁ। এক্সপেনসিভ শহর। রেস্টুরেন্টে খেতে বসলেও ১২০০-১৫০০ এর নিচে খেতে পারি না। ইন্ডিয়া, পাকিস্তান ও মালয়েশিয়ায় ৩০০ টাকার মধ্যে খাওয়া যায়। কলকাতায় ১৫০ টাকায় মানুষ বিরিয়ানি খেতে পারে। ফুল ফ্যামিলি ভালো রেস্টুরেন্টে খেতে পারে ২০০০ টাকার মধ্যে। আর এখানে ফুল ফ্যামিলি নিয়ে খেতে গেলে ৫০০০ টাকা লাগবেই। আমরা ফ্যামিলির সবাই মিলে একটা চায়নিজ রেস্টুরেন্টে বসছিলাম। ১২,০০০ টাকা বিল আসছে।
পুরান ঢাকা আর এর বাইরের ঢাকার মধ্যে পার্থক্য কী?
সৈয়দ রুমা: কোনো পার্থক্য নাই। একই। সবারই সংস্কৃতি আছে। তবে পুরান ঢাকার মানুষের মধ্যে একতা আছে। আমার বাবা যখন মারা যায়, তখন আমার বাসায় চাচা ছিল না। পুরুষ কেউ ছিল না। আমরা সবাই মহিলা। কাফন কোথায় পাওয়া যায়, গোসল কোথায় দেওয়া হয়, কবর কোথায় হবে—এসব আমরা জানি না। সব করেছে এলাকার মানুষ। কোনো মানুষ অসুস্থ হলে আশপাশের কাউকে ডাকা লাগে না। অন্য মানুষ নিয়ে চলে যায় হাসপাতালে। একতাটা অন্যরকম। পুরান ঢাকায় কোনো বাসায় রান্না হয়নি, কেউ না খেয়ে আছে—এমন হয় না কখনো। পুরান ঢাকার বাইরের ঢাকায় কেউ অসুস্থ হলেও, মারা গেলেও পাশের ফ্ল্যাটের কেউ জানে না। এ ক্ষেত্রে পুরান ঢাকার মানুষের মধ্যে একতা অনেক বেশি। ওরা বুক দিলে কখনো পিঠ দিবে না। আর একবার পিঠ দিলে বুক দিবে না।
র্যাম্পের বাইরে আর কী করছেন?
সৈয়দ রুমা: আমার একটা শপ আছে ‘আর বাই রুমা’ নামে। এখন অনলাইনে চলছে কাজ। এ ছাড়া ডেইলি সান পত্রিকায় আছি। ওখানে আছি ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে। দীর্ঘ ১০ বছর ধরেই আছি ওখানে। আমি আমার লাইফে ফ্যামিলির পর মিডিয়াকে সময় দিয়েছি। মরার আগ পর্যন্ত মিডিয়াকে ছাড়তে চাই না।
কেন আপনি সংবাদপত্রে গেলেন?
সৈয়দ রুমা: আমার একটা ফ্রেন্ড ছিল রুবেল নামে। ওদিকের একটা ফটোশুট করার কথা ছিল। তখন বসুন্ধরায় নতুন ছিল। উইকলি ওদের পেপারের সঙ্গে যে সাপ্লিমেন্ট বের হয়, ওইটার ফটোশুট আমি করাতাম। ফটোশুট করতে গিয়ে আমি সবকিছু করছিলাম। তখন ওরা আমাকে বলল, তুমি যেহেতু সব কর, মডেলরা তোমার কথা শোনে, তাহলে তুমি জয়েন কর। তখন আমি জয়েন করতে চাইনি। ওরা আমাকে বলল, ‘তোমাকে অফিস করতে হবে না। মাসে চারটা শুট। তুমি একদিনে কর আর চার দিনে কর সেটা তোমার ওপর নির্ভর করছে। তারপর আমি শুরু করি। খুব ভালোভাবে কাজ হচ্ছিল। ম্যাগাজিনটা বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব বিক্রি হয়ে যায়।’
দেখা যায়, যারা মডেলিং করেন তাঁরা এক সময় সিনেমায় যান, টেলিভিশন মিডিয়ায় যান। আপনি গেছেন সংবাদপত্রে। টেলিভিশনে কি কাজ করেছেন?
সৈয়দ রুমা: কয়েকটা নাটকে কাজ করেছি। ১০/১২টার মতো হবে। র্যাম্পে ‘কাট’ শব্দটা থাকে না। হাঁটছি তো হাঁটছি। বাধা দেওয়ার কেউ নাই। কিন্তু নাটকে অভিনয়ের ক্ষেত্রে ‘কাট’ শব্দটা থাকে। কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে যদি ‘কাট’ শব্দটা থাকে, তাহলে কিন্তু কথা বলা যায় না। ‘কাট’ শব্দটা আমার পছন্দ না।
কিন্তু ফিল্মে তো আইটেম সং করলেন।
সৈয়দ রুমা: কারণ, ওখানে কাট শব্দটা থাকে না। কথা বলারও সুযোগ ছিল না। যেহেতু আমার উচ্চারণের সমস্যা আছে বলে আমি মনে করি, আমার কাছে মনে হয়, আমি উচ্চারণটা খুব বাজেভাবে করি। এই বিষয়ে আমার কমতি আছে। আর আইটেম সং-এ নাচলে কথা বলতে হয় না। জাস্ট নাচতে হয়।
এক্সপেরিয়েন্স কেমন?
সৈয়দ রুমা: খুব ভালো। আমি নাচ-গান পছন্দ করি। খুব ভালো লেগেছে।
আমরা আসলে বাংলা সিনেমাটাও কম দেখি।
সৈয়দ রুমা: আমার কাছে মনে হয় বাংলা সিনেমার প্রবলেম হচ্ছে টেকনিক্যাল। আমার আইটেম সং-এর সময় আমি অনেক বাইন্ডিংস দিয়েছি। এভাবে না ওভাবে। এডিটিংয়ের সময় আমি দেখব। অনেক সুন্দর সুন্দর বাংলা সিনেমা কিন্তু আছে। আমাদের মাথায় চিন্তা-ভাবনা একটা হয়ে গেছে যে, রিকশাওয়ালাদের জন্য সিনেমা বানাচ্ছি। এভাবে বিষয়টা হেয় হয়ে গেছে। তাই আমরা বাংলা সিনেমা দেখিই না। আমার মনে হয়, সবার পয়েন্ট অব ভিউ যদি এক রাখা হয়, তাহলে বিষয়টা ঠিক হয়ে যাবে।
এখন তো সিনেমা অনেক ভালো হচ্ছে। অনেক সিনেমা আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাচ্ছে। সিনেমার অফার পেলে করবেন কি?
সৈয়দ রুমা: যদি মুভি আমার টাইপ হয়, তাহলে সত্যিই আমি করব। যদি আর্ট মুভি হয়, তাহলে করব। এখন তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে মুভি হচ্ছে। যদি ওরকম কিছু হয়, তাহলে আমি করব। ভালো স্ক্রিপ্ট পেলে অবশ্যই করব।
আপনার কি মনে হচ্ছে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি আগাচ্ছে?
সৈয়দ রুমা: আগাচ্ছে। অনেক সিনেপ্লেক্স হচ্ছে। মানুষ না গেলে এত সিনেপ্লেক্স হতো না। আগে হলের অবস্থাও খুব খারাপ ছিল। এখন হলগুলো অনেক সুন্দর হচ্ছে। ফ্যামিলি নিয়ে যাওয়ার মতো পরিবেশ হচ্ছে। মুভি ভালো হচ্ছে। আমাদের চিন্তাধারা পরিবর্তন আনতে হবে। নতুন নতুন অনেক ডিরেক্টর আসছে। ওরা চায় ইন্ডাস্ট্রিকে ওঠাতে। টাকা কামানো ওদের মূল উদ্দেশ্য নয়। আমাদের উদ্দেশ্য ইন্ডাস্ট্রিকে ওঠানো। ইন্ডাস্ট্রি উঠলে টাকা এমনিতেই আসবে। এখন এফডিসি নতুন হচ্ছে। আগে কেমন ছিল। আর এখন কত নতুন হচ্ছে। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মানুষদের মধ্যে ইউনিটি হচ্ছে।
তার মানে আপনি খুব আশাবাদী?
সৈয়দ রুমা: হ্যাঁ, আমি খুব আশাবাদী। যদি আমার সুযোগ থাকত, আমি অর্ডার দিলে যদি সবাই মানত, তাহলে আমি মিডিয়াকে অনেক দূর নিয়ে যেতাম। নাটক, সিনেমা, র্যাম্প যাই হোক, আমি সব কটাকে চেঞ্জ করতাম। একটা শর্ত দিয়ে দিতাম এই টাইপ একটা মুভি প্রতি সপ্তাহে লাগবে। শুক্রবারে যেন হাউসফুল থাকে। যেন ফ্যামিলি নিয়ে সবাই দেখে। স্টার জলসা, জি নিউজ—ওসব কেন দেখবে মানুষ! তাহলে বাংলাদেশিরা কী করল? এখানে কি কম ডিরেক্টর, প্রডিউসার আছে? না তো। উদ্যোগ নেওয়ার মানুষ কম।
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আপনার আশা অনেক। র্যাম্প ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কি আপনি একইভাবে আশাবাদী?
সৈয়দ রুমা: আমি জানি এই জিনিসটা হয়ে যাবে। আমি নিজেই যদি চার-পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলি, তাহলে হয়তো হয়ে যাবে। এটা আমরা করব। যেহেতু আমরা উদ্যোগ নিয়েছি—করব।
আপনার র্যাম্প জীবনের স্মরণীয় ঘটনা কী?
সৈয়দ রুমা: ওরকম আকর্ষণীয় কিছু ঘটেনি। তবে আমার কাছে প্রতিটা শো, হোক সেটা বড় কিংবা ছোট ব্র্যান্ডের—সবগুলোই স্মৃতিময়। আমি মাইন্ড ওরকম সেট করেই রেখেছিলাম। প্রতিটা শো আমি যখন সফল করতে পারি—আমার কাছে ওইটাই স্মৃতি।
আপনাকে ধন্যবাদ।
সৈয়দ রুমা: ওয়েলকাম।
মডেলিং শুরুর প্রথম দিকের গল্প শুনতে চাই?
সৈয়দ রুমা: ২০০২ থেকে মডেলিং শুরু করি। আমার এক কাজিন বাইরে থাকে। সে মডেলিং করত। আমার মডেলিংয়ের ব্যাপারে কোনো আগ্রহ ছিল না। ভেবেছিলাম হয়তো-বা পুলিশ হব, ডক্টর হব। আমি ছেলেদের মতোই খেলাধুলা করতাম, হাঁটাচলা করতাম। আমার বড় বোনের মডেলিংয়ে খুব আগ্রহ ছিল। আমার কাজিন একদিন এসে বলল, ‘তোমরা মডেলিং করবা?’ তখন আমার বড়বোন বলল, ‘হ্যাঁ, করব।’
সে সময় পাবলিক লাইব্রেরিতে, জাদুঘরে, চীনমৈত্রীতে শো হতো। ফার্স্ট শো করলাম। আর কিছু রাশিয়ান কালচারাল সেন্টারে শো ছিল। প্রথম দিকে শো-এর সময় খুব প্যারা লাগত। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত একটা শো-এর জন্য বসে থাকা! আমার জন্য কমফোর্টেবল ছিল না। তারপর, ধীরে ধীরে আগ্রহ বেড়ে গেল। আমাকে আমার বোন পুশ করেছে। আমার বোন তার পরীক্ষার জন্য মডেলিং অফ করে দিছে। আমি সব সময় বলতাম—এটা আমার শখ। তবে আমি কখন যে একে পেশা হিসেবে নিয়েছি, তা হয়তো নিজেও জানি না। ২০০৫-এ যখন নেসক্যাফে, সানসিল্কের বিলবোর্ড করি, তখন আগ্রহটা বাড়ে। আমি বাংলাদেশি মডেল হয়ে ইন্টারন্যাশনাল কাজ করেছি। কাজ করতে করতে ধীরে ধীরে আগ্রহ বাড়ে। মিডিয়ার শুরু কাজিনের মাধ্যমে। গ্রুমিংও তাই। এখন তো অনেক গ্রুমিং স্কুল আছে। আমার নিজেরও আছে। আমি দুই জায়গায় ক্লাসও নিই। ওই সময়ে এটা ছিল না। আমরা এক মাস রিহার্সাল করতাম। এক মাস ধরে হাঁটা শেখানো হতো। এমনও হয়েছে, শো-এর আগের দিন শো বাতিল হয়ে গেছে।
কেন?
সৈয়দ রুমা: অনেক কারণ ছিল। আর তখন কী কী কারণে শো বন্ধ হয়, তা আমরা বুঝিনি। ছোট ছিলাম অনেক। এখন কারণ জিজ্ঞেস করতে পারি। হয়তো হলের কোনো সমস্যা, স্পনসরের সমস্যা—এসব।
তার মানে ২০০২ থেকে শুরু...
সৈয়দ রুমা: হ্যাঁ, ২০০২ থেকে বেসিক শুরু। পেশা হিসেবে নিয়েছি ২০০৫ সাল থেকে। আমার বেসিক র্যাম্প।
কোন কোন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেছেন?
সৈয়দ রুমা: মোটামুটি সব ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করেছি। আড়ং, এক্সটেসি, ট্রেন্ডস, অনেকগুলোতে। টিভিসি অনেকগুলো করেছি। শো তো অসংখ্য। মুভিতে দুইটা আইটেম সং করেছি। ‘গেম’ মুভিতে আইটেম সং করেছি, আর ‘ইউ টার্ন’ মুভিতে আইটেম সং করেছি। আর এখন আমি আমার শপ ‘আর বাই রুমা’ নিয়ে ব্যস্ত। কোরিওগ্রাফি নিয়ে ব্যস্ত।
এখন তো র্যাম্পিং করছেন না?
সৈয়দ রুমা: মাঝে মাঝে করা হয়। তবে সব সময় শো করাই।
কোরিওগ্রাফার হিসেবে আপনি কত দিন কাজ করছেন?
সৈয়দ রুমা: ৬-৭ বছরের ওপরে।
আমি কয়েকজন মডেলের সঙ্গে কথা বলেছি। একটা পর্যায়ের পর সবাই কোরিওগ্রাফির দিকে চলে যান। সবাই একটা পর্যায়ে ইনস্টিটিউট খুলছেন। ২০০২ এবং ২০২১ অনেকটা সময়। কী মনে হয়, ইন্ডাস্ট্রি কি পজিটিভ দিকে যাচ্ছে, নাকি আগের মতোই থেকে যাচ্ছে?
সৈয়দ রুমা: প্রশ্নটা খুব ক্রিটিক্যাল। আমরা যখন কাজ শুরু করেছি, আমাদের মধ্যে প্যাশন ছিল। কাজের প্রতি সম্মান ছিল। নতুন জেনারেশনের মধ্যে এই জিনিসগুলোর অভাব। যতই গ্রুমিং হোক, আমার মনে হয় কমিটমেন্টের, সেন্সের অভাব। কিছু একটা অভাব আছেই। আমি নিজেও ক্লাসে বলি—তুমি মানুষকে সম্মান দিলে মানুষ তোমাকে সম্মান দেবে।
আমি আমার জীবনে অনেক ফ্যামিলি প্রোগ্রামে যাইনি। আমি আমার মামার বিয়েতে যাইনি। জাপানে শো করতে গিয়েছিলাম। ফ্যামিলির কাজিনদের অনেক প্রোগ্রামেই আমি অ্যাটেন্ড করতে পারিনি। অনেক মজা করতে পারিনি, যা আমার ফ্যামিলি করে। আমাদের ফ্যামিলির মানুষেরা বাসার অনুষ্ঠানেও খুব মজা করে। কিন্তু সেখানে আমি থাকতে পারি না। আমার নিজের বোনের এনগেজমেন্টের সময় আমি থাকতে পারিনি। সারা রাত আমি কাজ করেছি। কিন্তু ভোরে উঠে শো করতে যেতে হয়েছে। তারপরও কাজটাকে আমি অগুরুত্বপূর্ণ ভাবিনি। আমার বাবা নেই। অনেক দায়িত্ব থাকে আসলে। অনুষ্ঠানের মিষ্টিটা সবার বাসায় পাঠানোর জন্যও লোক লাগে। আমার মা, বোন—ওরা কতটাই-বা করবে। আমি থাকলে হেল্প হবে। সেই জিনিসগুলো আমি করতে পারিনি।
এখনকার ছেলেমেয়েরা শো-এর আগের দিন বলে দেয় যে, আমার একটা কাজ আছে বা অন্য কাজ আছে। আমার সময়ে একটা ছোট শো ছিল। এই শো-এর বুকিং আগে থেকেই দেওয়া ছিল। ওই সময়ে আড়ং ফ্যাশন উইকও চলছিল। কিন্তু আমরা ৮-১০ জন শুধুমাত্র কমিটমেন্টের কারণে আড়ংয়ের শো বাদ দিয়ে ছোট শোটাই করেছি। এই জিনিসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
এখন সেটা নেই বলছেন?
সৈয়দ রুমা: এখন মানুষ খুব সহজেই সবকিছু পেয়ে যাচ্ছে। আমাদের সময় আমরা একটা শোয়ের জন্য এক মাস গ্রুমিং করতাম। এখন অল্প সময় গ্রুমিং-রিহার্সাল করেই ওরা শো করে ফেলছে। আগে বিলবোর্ড করব, ম্যাগাজিনের কভার করব—এটা স্বপ্ন ছিল। আগে যেকোনো পত্রিকায় সেলিব্রিটিরা কাজ করত। আর এখন সবাই করতে পারে। সহজভাবে সব পেয়ে যাচ্ছে। আর তাই এমন প্রবলেম হচ্ছে।
আপনি যাদের গ্রুমিং করাচ্ছেন, আপনার কাছে যারা আসছে, তাঁদের ক্ষেত্রেও কি আপনি এটা দেখছেন?
সৈয়দ রুমা: আমার গ্রুমিং হলো দু-তিন মাস। তারপর আমি তাদের ছেড়ে দিই। আমার সামনে হয়তো তারা নরমাল থাকবে। বাইরে গিয়ে তারা এমন করতে পারে। কারণ, আমি ফটোগ্রাফি করতে গিয়ে, অন্য কাজ করতে গিয়ে এই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হই। একটা কাজ যখন হয়, তখন তার সঙ্গে পুরো একটা টিম থাকে। একজন যদি কমিটমেন্ট ব্রেক করে, তখন সবাইকে ঝামেলায় পড়তে হয়। পুরো শোটা ধ্বংস হয়ে যায়। আল্লাহর রহমতে বাংলাদেশের বড় বড় শোগুলা আমি করি। বড় শোগুলোতে ৬০ থেকে ৭০ জন মডেল নিয়ে কাজ করি। একেকটা সিকোয়েন্সে মডেল থাকে ২০/২২ জন। র্যাম্প থাকে অনেক বড়। ১০০, ১৫০ ফুট—এ রকম। আমার এমনও হয়েছে, শোয়ের দিন ১০৩ ডিগ্রি জ্বর। বমি হচ্ছে। তাও আমি মেকআপ করেছি, শো করেছি। ধরুন, কারও পারলার ওপেনিং। আমি তো হুটহাট শো বাতিল করতে পারি না। তাঁকে বিপদে ফেলতে পারি না। এমন প্যাশন যদি থাকে, তাহলে মিডিয়া আগাবে। আমাদের দেশ থেকে অনেক মডেল দেশের বাইরে গিয়ে কাজ করছে। আমি নিজেও বাইরে অনেক শো করে এসেছি। অনেক ভালো ভালো ডিজাইনার বাড়ছে দেশে। লিংক বাড়ছে। যদি আমরা অ্যাকটিভ থাকি, আর যদি মডেলিং এজেন্সি থাকে, তাহলে আগাবেই। আমার অবজেকশন একটা আছে। একটা মেয়ে জিনস আর টপস পরে থাকলে তাকে মডেল বলা হয়। কোনো আইডি নাই তার। সবাই কিন্তু মডেল না। এখন তো ফেসবুকে সবাই ছবি দেয়। সবাই তো মডেল না। তাদের ট্যাগ লাগানো হয় যে, তারা মডেল। আমাদের মডেলদের একটা গ্রুপ আছে। আমরা চাই একটা এজেন্সি হোক। মডেলদের একটা আইডি থাকা দরকার, পরিচিতিমূলক কিছু থাকা দরকার। আমি খুব হতাশ হই যখন কোনো কিছু ঘটলে বলা হয়, এটা মডেল করেছে। এত বছর ধরে মডেলিং করি, আমি চিনিই না তাকে। ওদের জন্য আমাদের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।
মডেল এজেন্সি নিয়ে কি আপনারা কাজ করছেন? এটা কি খুব দ্রুতই হবে বলে মনে হয়?
সৈয়দ রুমা: হ্যাঁ, কাজ করছি। ইনশা আল্লাহ দ্রুত হবে। আমরা নিজেই সাফার করছি। প্রত্যেকেই তাদের ফ্যামিলি নিয়ে থাকি। কোনো কিছু বাইরে ঘটলে আমরা বিব্রত হই। মানুষ ফোন দেয়। তখন খুব খারাপ লাগে। যাদের নাম আসছে, ওরা তো মডেল না। আমি নিজেই ওদের চিনি না।
আমাদের মডেল ইন্ডাস্ট্রি খুব কম দিনের নয়। ৩০ বছর তো হবেই। টেলিভিশনেরও কিছু প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় আছে। আপনাদের হলো না কেন?
সৈয়দ রুমা: আমরা অনেকেই অনেকবার উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু হয়ে ওঠে নাই। আগে কোনো র্যাম্প টিভিতে দেখানো হতো না। এখন আগের চেয়ে বেশি শো হচ্ছে। টিভিতে দেখানো হচ্ছে। আগে মানুষজন র্যাম্প মডেলদের চিনত না। এখন চেনে। আগে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার বিষয়গুলো হয়তো অতটা গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হয়নি। কিন্তু এখন ভাবা হচ্ছে। এ জন্য আমরা কয়েকজন কাজ করে যাচ্ছি।
আপনি বিদেশে গেছেন, অনেক শো করেছেন। মডেলিং জগতের অনেক স্তরের মানুষের সঙ্গে আপনার পরিচয় হয়েছে। অন্য দেশের সঙ্গে আমাদের পার্থক্যটা আসলে কী?
সৈয়দ রুমা: পার্থক্যটা অনেক বেশি। ওরা অনেক বেশি ডেডিকেটেড। ওরা খুব টাইম মেইনটেইন করে। ভোর ৫/৬টায় মেকআপ শেষ করে, ৮টার মধ্যে সেটে থাকতে বললে ওরা তাই করে। আমাদের এদিকের প্রবলেম হলো, টাইম ডিলে করা। আমাদের দেশে ট্রাফিক অনেক বেশি থাকে। ওদের কাজ করার ধরনটা অন্যরকম। আমাদের দেশে এখন বড় বড় শো হচ্ছে, যা আগে হতো না। পাকিস্তানে একটা শো করেছি, সেখানে দেখলাম একেকজন মডেলের পেছনে একেকজন মেকআপ আর্টিস্ট। সবার কাপড় পরা থেকে শুরু করে সবকিছুর জন্য একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট থাকবেই। আগে আমাদের দেশে ছিল ১০ জন মেকআপ আর্টিস্ট, ২০ জন মডেল। এখন কিন্তু পরিবর্তন এসেছে। বাইরের দেশের ওরা আগে থেকে অনেক বেশি উন্নত। আর আমরা উন্নত হচ্ছি। আমাদের মডেলিং ইন্ডাস্ট্রি অনেক বেশি আগাতো যদি লকডাউন না হতো। আমরা ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে এত ভালো করে কাজ শুরু করেছি, মার্চের ২৬ তারিখের পর লকডাউন পড়ল। আমরা ২৩ তারিখ পর্যন্ত বলছিলাম, এবার বাংলাদেশ আসলেই কাজ করে ফাটায়া দিবে। লকডাউন হওয়াতে পিছিয়ে গেছি। কারও হাতে টাকা নেই, কাজ নেই। অনেক ডাউন হয়ে গেছে। এটা কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে।
পাকিস্তান গেছেন আপনি। কেমন দেখলেন?
সৈয়দ রুমা: অনেক আগে গেছি তো। খুব একটা মনে নেই। বাংলাদেশ থেকে আমি, ইমি আপু, শাওন আপু গিয়েছিলাম। ঘোরাঘুরি করেছি। বিচেও গিয়েছি। তবে আমাদের দেশের কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতটা অনেক বেশি সুন্দর। অনেক বড়। ওখানে যেমন উট চলে, অনেক বড় বড় পাহাড়। মানুষজনকেও ফ্রেন্ডলি মনে হয়েছে। পাকিস্তানের মানুষ খুব শপিং করতে ভালোবাসে। জিনিসপত্র কম দামে পাওয়া যায়। আমাদের দেশে যেমন অনেক দাম।
ঢাকা কি খুব এক্সপেনসিভ শহর?
সৈয়দ রুমা: হ্যাঁ। এক্সপেনসিভ শহর। রেস্টুরেন্টে খেতে বসলেও ১২০০-১৫০০ এর নিচে খেতে পারি না। ইন্ডিয়া, পাকিস্তান ও মালয়েশিয়ায় ৩০০ টাকার মধ্যে খাওয়া যায়। কলকাতায় ১৫০ টাকায় মানুষ বিরিয়ানি খেতে পারে। ফুল ফ্যামিলি ভালো রেস্টুরেন্টে খেতে পারে ২০০০ টাকার মধ্যে। আর এখানে ফুল ফ্যামিলি নিয়ে খেতে গেলে ৫০০০ টাকা লাগবেই। আমরা ফ্যামিলির সবাই মিলে একটা চায়নিজ রেস্টুরেন্টে বসছিলাম। ১২,০০০ টাকা বিল আসছে।
পুরান ঢাকা আর এর বাইরের ঢাকার মধ্যে পার্থক্য কী?
সৈয়দ রুমা: কোনো পার্থক্য নাই। একই। সবারই সংস্কৃতি আছে। তবে পুরান ঢাকার মানুষের মধ্যে একতা আছে। আমার বাবা যখন মারা যায়, তখন আমার বাসায় চাচা ছিল না। পুরুষ কেউ ছিল না। আমরা সবাই মহিলা। কাফন কোথায় পাওয়া যায়, গোসল কোথায় দেওয়া হয়, কবর কোথায় হবে—এসব আমরা জানি না। সব করেছে এলাকার মানুষ। কোনো মানুষ অসুস্থ হলে আশপাশের কাউকে ডাকা লাগে না। অন্য মানুষ নিয়ে চলে যায় হাসপাতালে। একতাটা অন্যরকম। পুরান ঢাকায় কোনো বাসায় রান্না হয়নি, কেউ না খেয়ে আছে—এমন হয় না কখনো। পুরান ঢাকার বাইরের ঢাকায় কেউ অসুস্থ হলেও, মারা গেলেও পাশের ফ্ল্যাটের কেউ জানে না। এ ক্ষেত্রে পুরান ঢাকার মানুষের মধ্যে একতা অনেক বেশি। ওরা বুক দিলে কখনো পিঠ দিবে না। আর একবার পিঠ দিলে বুক দিবে না।
র্যাম্পের বাইরে আর কী করছেন?
সৈয়দ রুমা: আমার একটা শপ আছে ‘আর বাই রুমা’ নামে। এখন অনলাইনে চলছে কাজ। এ ছাড়া ডেইলি সান পত্রিকায় আছি। ওখানে আছি ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে। দীর্ঘ ১০ বছর ধরেই আছি ওখানে। আমি আমার লাইফে ফ্যামিলির পর মিডিয়াকে সময় দিয়েছি। মরার আগ পর্যন্ত মিডিয়াকে ছাড়তে চাই না।
কেন আপনি সংবাদপত্রে গেলেন?
সৈয়দ রুমা: আমার একটা ফ্রেন্ড ছিল রুবেল নামে। ওদিকের একটা ফটোশুট করার কথা ছিল। তখন বসুন্ধরায় নতুন ছিল। উইকলি ওদের পেপারের সঙ্গে যে সাপ্লিমেন্ট বের হয়, ওইটার ফটোশুট আমি করাতাম। ফটোশুট করতে গিয়ে আমি সবকিছু করছিলাম। তখন ওরা আমাকে বলল, তুমি যেহেতু সব কর, মডেলরা তোমার কথা শোনে, তাহলে তুমি জয়েন কর। তখন আমি জয়েন করতে চাইনি। ওরা আমাকে বলল, ‘তোমাকে অফিস করতে হবে না। মাসে চারটা শুট। তুমি একদিনে কর আর চার দিনে কর সেটা তোমার ওপর নির্ভর করছে। তারপর আমি শুরু করি। খুব ভালোভাবে কাজ হচ্ছিল। ম্যাগাজিনটা বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব বিক্রি হয়ে যায়।’
দেখা যায়, যারা মডেলিং করেন তাঁরা এক সময় সিনেমায় যান, টেলিভিশন মিডিয়ায় যান। আপনি গেছেন সংবাদপত্রে। টেলিভিশনে কি কাজ করেছেন?
সৈয়দ রুমা: কয়েকটা নাটকে কাজ করেছি। ১০/১২টার মতো হবে। র্যাম্পে ‘কাট’ শব্দটা থাকে না। হাঁটছি তো হাঁটছি। বাধা দেওয়ার কেউ নাই। কিন্তু নাটকে অভিনয়ের ক্ষেত্রে ‘কাট’ শব্দটা থাকে। কথা বলার ফাঁকে ফাঁকে যদি ‘কাট’ শব্দটা থাকে, তাহলে কিন্তু কথা বলা যায় না। ‘কাট’ শব্দটা আমার পছন্দ না।
কিন্তু ফিল্মে তো আইটেম সং করলেন।
সৈয়দ রুমা: কারণ, ওখানে কাট শব্দটা থাকে না। কথা বলারও সুযোগ ছিল না। যেহেতু আমার উচ্চারণের সমস্যা আছে বলে আমি মনে করি, আমার কাছে মনে হয়, আমি উচ্চারণটা খুব বাজেভাবে করি। এই বিষয়ে আমার কমতি আছে। আর আইটেম সং-এ নাচলে কথা বলতে হয় না। জাস্ট নাচতে হয়।
এক্সপেরিয়েন্স কেমন?
সৈয়দ রুমা: খুব ভালো। আমি নাচ-গান পছন্দ করি। খুব ভালো লেগেছে।
আমরা আসলে বাংলা সিনেমাটাও কম দেখি।
সৈয়দ রুমা: আমার কাছে মনে হয় বাংলা সিনেমার প্রবলেম হচ্ছে টেকনিক্যাল। আমার আইটেম সং-এর সময় আমি অনেক বাইন্ডিংস দিয়েছি। এভাবে না ওভাবে। এডিটিংয়ের সময় আমি দেখব। অনেক সুন্দর সুন্দর বাংলা সিনেমা কিন্তু আছে। আমাদের মাথায় চিন্তা-ভাবনা একটা হয়ে গেছে যে, রিকশাওয়ালাদের জন্য সিনেমা বানাচ্ছি। এভাবে বিষয়টা হেয় হয়ে গেছে। তাই আমরা বাংলা সিনেমা দেখিই না। আমার মনে হয়, সবার পয়েন্ট অব ভিউ যদি এক রাখা হয়, তাহলে বিষয়টা ঠিক হয়ে যাবে।
এখন তো সিনেমা অনেক ভালো হচ্ছে। অনেক সিনেমা আন্তর্জাতিক পুরস্কার পাচ্ছে। সিনেমার অফার পেলে করবেন কি?
সৈয়দ রুমা: যদি মুভি আমার টাইপ হয়, তাহলে সত্যিই আমি করব। যদি আর্ট মুভি হয়, তাহলে করব। এখন তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে মুভি হচ্ছে। যদি ওরকম কিছু হয়, তাহলে আমি করব। ভালো স্ক্রিপ্ট পেলে অবশ্যই করব।
আপনার কি মনে হচ্ছে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি আগাচ্ছে?
সৈয়দ রুমা: আগাচ্ছে। অনেক সিনেপ্লেক্স হচ্ছে। মানুষ না গেলে এত সিনেপ্লেক্স হতো না। আগে হলের অবস্থাও খুব খারাপ ছিল। এখন হলগুলো অনেক সুন্দর হচ্ছে। ফ্যামিলি নিয়ে যাওয়ার মতো পরিবেশ হচ্ছে। মুভি ভালো হচ্ছে। আমাদের চিন্তাধারা পরিবর্তন আনতে হবে। নতুন নতুন অনেক ডিরেক্টর আসছে। ওরা চায় ইন্ডাস্ট্রিকে ওঠাতে। টাকা কামানো ওদের মূল উদ্দেশ্য নয়। আমাদের উদ্দেশ্য ইন্ডাস্ট্রিকে ওঠানো। ইন্ডাস্ট্রি উঠলে টাকা এমনিতেই আসবে। এখন এফডিসি নতুন হচ্ছে। আগে কেমন ছিল। আর এখন কত নতুন হচ্ছে। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মানুষদের মধ্যে ইউনিটি হচ্ছে।
তার মানে আপনি খুব আশাবাদী?
সৈয়দ রুমা: হ্যাঁ, আমি খুব আশাবাদী। যদি আমার সুযোগ থাকত, আমি অর্ডার দিলে যদি সবাই মানত, তাহলে আমি মিডিয়াকে অনেক দূর নিয়ে যেতাম। নাটক, সিনেমা, র্যাম্প যাই হোক, আমি সব কটাকে চেঞ্জ করতাম। একটা শর্ত দিয়ে দিতাম এই টাইপ একটা মুভি প্রতি সপ্তাহে লাগবে। শুক্রবারে যেন হাউসফুল থাকে। যেন ফ্যামিলি নিয়ে সবাই দেখে। স্টার জলসা, জি নিউজ—ওসব কেন দেখবে মানুষ! তাহলে বাংলাদেশিরা কী করল? এখানে কি কম ডিরেক্টর, প্রডিউসার আছে? না তো। উদ্যোগ নেওয়ার মানুষ কম।
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে আপনার আশা অনেক। র্যাম্প ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে কি আপনি একইভাবে আশাবাদী?
সৈয়দ রুমা: আমি জানি এই জিনিসটা হয়ে যাবে। আমি নিজেই যদি চার-পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলি, তাহলে হয়তো হয়ে যাবে। এটা আমরা করব। যেহেতু আমরা উদ্যোগ নিয়েছি—করব।
আপনার র্যাম্প জীবনের স্মরণীয় ঘটনা কী?
সৈয়দ রুমা: ওরকম আকর্ষণীয় কিছু ঘটেনি। তবে আমার কাছে প্রতিটা শো, হোক সেটা বড় কিংবা ছোট ব্র্যান্ডের—সবগুলোই স্মৃতিময়। আমি মাইন্ড ওরকম সেট করেই রেখেছিলাম। প্রতিটা শো আমি যখন সফল করতে পারি—আমার কাছে ওইটাই স্মৃতি।
আপনাকে ধন্যবাদ।
সৈয়দ রুমা: ওয়েলকাম।
ইউনিক গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাখাওয়াত হোসেন। পর্যটনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি মনজুরুল ইসলাম।
০৩ অক্টোবর ২০২৪বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, সুফি এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে কোনো বিভাজনমূলক এজেন্ডায় রাজনীতির দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহৃত না হওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা দৃঢ়ভাবে কোনো সাম্প্রদায়িক ফাঁদে আটকা পড়তে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করি। কোনোভাবেই তা হতে দেওয়া যাবে না।
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪‘আমি এটাকে ঠিক রাজনৈতিক ভাবাদর্শ বলব না। আমি এটাকে বলব, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া, সেটা আমার পারিবারিক শিক্ষা। আমাদের ঘরের ডাইনিং টেবিল থেকে শুরু করে যেকোনো ক্ষেত্রে প্রয়োজনে পরিবারের বড়দের সাথে আমরা দ্বিমত পোষণ করতে পেরেছি। ছোট থেকে বড়, কারও কোনো কথা বা কাজ ভুল মনে হলে সেটাকে আমরা তার প্রতি স
৩১ আগস্ট ২০২৪একেক মানুষ বেছে নেন একেক পেশা। তাঁদের মধ্যে কারও কারও পেশা একটু ভিন্ন ধরনের। যেমন—মো. মুনসুর আলী ওরফে মন্টু খলিফা। বাপ-দাদার পেশাকে ভালোবেসে শিশুদের খতনা করানো বা হাজামের কাজ বেছে নিয়েছেন পেশা হিসেবে। জীবনে পার করেছেন প্রায় ৮৫ বছর। জানিয়েছেন গত ৬০ বছরে ২ লাখের বেশি শিশুর মুসলমানি বা সুন্নতে খতনা দিয়
৩০ মার্চ ২০২৪