রজত কান্তি রায়
গোলাম রাব্বী। কাছের মানুষদের কাছে তিনি রাব্বী হিসেবে পরিচিত। এই মুহূর্তে যে কজন সংবাদ উপস্থাপক জনপ্রিয়তার তুঙ্গে, তাঁদের মধ্যে তিনি একজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে পড়াকালীন টেলিভিশনে কাজ করতে শুরু করেন। সেটা ২০১০ সাল। সেই থেকে প্রায় এক যুগ ধরে দেশের জনপ্রিয় সংবাদভিত্তিক টিভি চ্যানেল সময় টিভিতে নিয়মিত সংবাদ উপস্থাপনা করছেন। এ বিষয়ে দেশ-বিদেশে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি। সংবাদ ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স-ভিত্তিক অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় নিত্যনতুন নান্দনিকতা যুক্ত করায় তাঁর সংবাদপাঠ উপভোগের এক অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
‘আজকের পত্রিকা’র সঙ্গে এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে গোলাম রাব্বী জানিয়েছেন তাঁর কাজের কথা, স্বপ্নের কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রজত কান্তি রায়।
আজকের পত্রিকা: আপনি সংবাদের কঠিন সব বিষয়কেও সহজ ও বৈচিত্র্যময় করে মানুষের কাছে পৌঁছে দেন। কীভাবে সম্ভব হলো কঠিন কাজটিকে এমন মজার ছলে তুলে ধরা?
গোলাম রাব্বী: আমি আসলে প্যাশনেটলি নিউজ অ্যাংকর। পেশাটা আমার ভালো লাগে। ধরুন আমি কোনো কারণে ভালো বোধ করছি না, কিন্তু আমি নিউজে বসলেই দেখি আমার ভালো লাগা শুরু হয়ে গেছে। তার মানে, নিউজ আমার কাছে একটা হিলিং ম্যাটেরিয়ালস। এতেই কারও বুঝতে বাকি থাকবে না যে, আমি নিউজের সময়টুকু কতটা উপভোগ করি। নিউজের সঙ্গে কতটা এনগেইজড থাকি। দেখা যায়, কখনো নিউজ দেখছি তো কখনো নিউজ নিয়ে ভাবছি। পাশাপাশি সব সময় নিউজের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করি। নিউজের টপিক নিয়ে একপ্রকার গবেষণা করি—কেন এই শব্দটি হলো, কেন এই শব্দটি হলো না? এই শব্দটা এভাবে না বলে এভাবে বললে কেমন হয়? একই সঙ্গে আমি যেহেতু মানুষকে সংবাদ জানাই, তাই চিন্তা থাকে কীভাবে তথ্যটি সবাই ধরতে ও বুঝতে পারবে। বলতে পারেন, ঘটনাটি সহজ করে বোঝাতে গিয়েই হয়তো আজকের এই অবস্থান তৈরি হয়ে যাওয়া।
আজকের পত্রিকা: ছোটবেলা থেকেই কি ভাবনা ছিল একদিন সংবাদপাঠক হবেন টেলিভিশনে?
গোলাম রাব্বী: ব্যাপারটা একদমই ওরকম নয়। তবে ছোটবেলার একটা ঘটনা প্রায়ই মনে পড়ে—দেখতাম, বাবা খুব খবর শুনতেন। এমনকি তখন বাসায় টেলিভিশনও ছিল না। রেডিও ছিল। নানা সময়ে যখন ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতো, বিশেষ করে ওই দিনগুলোতে বাবা মনোযোগ দিয়ে খবর শুনতেন। আশপাশের সবাইকে জানাতেন। একদিন বাবার সঙ্গে খবর শুনছি; হঠাৎ বাবা বলে উঠলেন, ‘এমন খবরপাঠক হতে পারবা?’ বাবা তখন ওরকম গুরুত্ব দিয়ে বলেননি। আর আমিও সিরিয়াসলি নিইনি কথাটাকে। কিন্তু কেন জানি আমার মনের গহিনে কথাটা আজও বাজে। কীভাবে যে বিষয়টা সত্যি হয়ে উঠল, মিলে গেল; তা ভাবনায় এলেই খুব ভালো লাগে।
ওই যে বাবার সঙ্গে রেডিও শোনা। পাশাপাশি পছন্দের খেলা ক্রিকেটের ধারাভাষ্য শোনার পাগল ছিলাম। যেহেতু বাসায় টেলিভিশন ছিল না, রেডিওতেই নানা কিছু শুনতাম। তখন থেকেই উচ্চারণের কৌশল, কথা বলা ও ভয়েসের নানা রূপ-ঢং খুব টানত আমায়। সেটা হোক আবৃত্তি, গুণী মানুষের কথা বলা কিংবা অনুষ্ঠান উপস্থাপনা। তত দিনে বুঝতে পারলাম, গলার স্বরের এই খেলাটা আমায় বেঁধে ফেলছে। শেখা বলতে গেলে, ওই থেকেই শুরু; যা আজও চলছে। এটা ঠিক যে, তখন ভাবনায়ও ছিল না এত বড় পরিসরে কখনো কাজ করা হবে। আর একদিন সবার পছন্দের তালিকায় উঠে আসব। এখনো সবকিছু স্বপ্নের মতোই লাগে।
আজকের পত্রিকা: দেশে তো অনেকেই খবর পড়েন। অনেক দিন ধরে ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে। সে ক্ষেত্রে আপনার মতো প্রতিদিনকার ভিন্নতা অন্যদের মধ্যে কমই দেখা যায়। এই যে বিশেষ কিছু আয়ত্ত করার ব্যাপারটা নিজের মধ্যে এল কীভাবে?
গোলাম রাব্বী: একেবারেই নিজে নিজে। যেকোনো আলোচনা, টকশো, কথিকা, গানের কথা বা যেকোনো ধরনের সাউন্ড থেকে আমি শিখি। যেমন ধরেন, আমি মুভি দেখলেও মুভির কাহিনি বা অভিনয়ের চেয়ে ভয়েসের থ্রোয়িংটা বা প্রেজেন্টেশনের ঢংটা আমায় বেশি টানে। সেখান থেকেই শব্দ ও প্রেজেন্টেশনকে প্রতিদিন নিত্যনতুন স্টাইল দেওয়ার চেষ্টা করি। এমনও হয়েছে, গল্প-কবিতা বা যেকোনো কিছু পড়তে পড়তে গলা ব্যথা করে ফেলতাম। রেডিওতে বাংলা হোক, ইংরেজি হোক, শুনতে শুনতে কান ব্যথা করে ফেলতাম। তা হোক দেশীয় বা বিদেশি। এমনকি বিশ্বের প্রতিটি দেশের নেতৃত্বস্থানীয় রেডিও-টিভি ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমি শুনেছি বা দেখেছি। সব জায়গা থেকেই কোনটি ভালো, কোনটি গ্রহণ করব তা নিয়ে ভাবতাম। এভাবেই আসলে একসময় নিজস্ব একটা স্বকীয়তা তৈরি হয়ে গেল।
আজকের পত্রিকা: পরপর দুই দিন খবর দেখলেও এক দিন থেকে অন্য দিন ভিন্নতা পাওয়া যায়। কীভাবে সম্ভব?
গোলাম রাব্বী: এর জন্য সংবাদের ভেতরে ঢুকতে হবে। দেখুন, প্রতিদিনই কিন্তু নতুন ঘটনা, নতুন তথ্য। মানে নতুন কিছু। তাই আমার চিন্তায় এল, যদি আমি প্রতিদিন নতুন রূপে-ছন্দে না আসি, তাহলে আবেদনটা কমে যাবে। যেমন—আমরা কিন্তু ম্যাড়মেড়ে বা একঘেয়ে টাইপের কিছু বেশিক্ষণ ধরে রাখি না। সব সময় আমি নিজে শ্রোতা হিসেবে চিন্তা করি। বের করে আনি, কোন সংবাদ আমি কীভাবে শুনতে চাই। এমনকি খবর পড়ার সময়ও কান খাঁড়া করে শুনি। আর সেটা করতে গিয়ে ভিউয়ার্সের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠা।
আরেকটি কথা, আগে বলা হতো দুঃখের খবর দুঃখ-দুঃখ ভাব আর আনন্দের খবরে হাসির ভাব আনতে হবে। এই দুটি স্টাইল দিয়ে এখন আর চলে না। এখন হচ্ছে ন্যানো সেকেন্ডের যুগ, সবাই বেশ আপডেট। প্রতিমুহূর্তে বিশ্ব পরিবর্তন হচ্ছে। আমি তো মনে করি, প্রতিটা শব্দের মধ্যে আলাদা কথা আছে, আলাদা ব্যঞ্জনা আছে। এই নতুনত্ব ও বাস্তবতানির্ভর ভয়েস বা ফিল আনাটাতেই হয়তো মানুষের কাছে আপন লাগছে।
আজকের পত্রিকা: যারা আপনার মতো এই পেশায় আসতে চায়, তাদের জন্য পরামর্শ কী?
গোলাম রাব্বী: প্রথমত বলব, প্যাশন থাকতে হবে। পেশাটা চ্যালেঞ্জিং। আপনাকে যেকোনো সময় ডাকতে পারে, যেকোনো সময় খবর পড়তে হতে পারে। একটানা ৮ ঘণ্টা, ১২ ঘণ্টা নিউজ পড়া বা কাজ করতে হতে পারে। আরেটা জিনিস, শুদ্ধ ও সুন্দর করে পাঠ করার পাশাপাশি নিউজে বুদ্ধি, বিবেচনা, সাধারণ জ্ঞান অনেক কিছু নির্ভর করে। ইন্টারনেটে সার্চ করলে নিউজ ও অ্যাংকরিং নিয়ে ডকুমেন্টস পাবেন; সেগুলো দেখতে পারেন। তারপর নিউজ পড়তে হবে, দেখতে হবে, শিখতে হবে। সময়-সুযোগ থাকলে উপস্থাপনা ও নিউজ নিয়ে কোর্সও করা যেতে পারে।
আজকের পত্রিকা: নিউজ প্রেজেন্টার হতে গেলে চর্চা বা প্র্যাকটিস কীভাবে করবে? আবার অনেকে নতুন মানুষ নিলেও কেউ আবার অভিজ্ঞতা চায়। সে ক্ষেত্রে কী করা যায়?
গোলাম রাব্বী: আসলে এখন চর্চার সুযোগও কিন্তু অনেক। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় থাকলে ক্রিয়েটিভ, ভলান্টিয়ার ও কালচারাল বিভিন্ন ক্লাবে যুক্ত হতে পারেন। ডিবেট করতে পারেন, লেখালিখি করতে পারেন। প্রিন্ট, অনলাইনসহ বহু গণমাধ্যমে কলাম, ফিচার লিখতে পারেন। ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল খুলেও কিছু করা যেতে পারে। মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে করে নিজেকে ডেভেলপ করা যায়।
আজকের পত্রিকা: এই ক্যারিয়ারে আপনি অনেক বছর আছেন। মজার অভিজ্ঞতাও নিশ্চয়ই অনেক আছে?
গোলাম রাব্বী: এটা একটা চ্যালেঞ্জিং জব সত্যি। দায়িত্বশীলও বটে। তবে পেশাটাই এমন মজার যে রাজনীতি-অর্থনীতি ও সমাজের নানা দুঃখ-দুর্দশার গুরুগম্ভীর বিষয়ের সঙ্গে যেমন থাকতে হয়; তেমনি মজার, বৈচিত্র্যময়, খেলা-সাংস্কৃতিক নানা অর্জন-গর্জনের খবরও পড়তে হয়। নোরা ফাতেহির খবর যেমন পড়তে হয়, তেমনি আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল; ভারত-পাকিস্তানের দ্বৈরথ নিয়েও পড়তে হয়। এই যে ক্ষণে ক্ষণে হাজারো খবর ও তথ্যের ভিন্নতা ও বৈচিত্র্য, সেটা আমাকে খুব মজা দেয়।
পাশাপাশি প্রতিদিনই মজার অভিজ্ঞতা আছে। সেটা যেমন পড়তে গিয়ে হয় আবার নিউজের বাইরেও হয়। কেউ দেখলে বলে, আপনাকে চেনা চেনা লাগে। অনেকে হাত ধরে বুঝতে চায়, অনুভব করতে চায় আমি স্বাভাবিক মানুষ কী না! আবার ধরুন সিএনজি অটোরিকশা বা রিকশায় উঠছি; হয়তো কারও সঙ্গে কথা বলছি, বারবার পেছনে তাকাচ্ছে। তার মানে, ভয়েস শুনে চিনতে পারছে। একপর্যায়ে বলে ফেলে, নিউজে আপনাকে দেখছি। এ রকম হাজারো অভিজ্ঞতা আছে। এমনও হয়, অনেক সময় পাঠাও বা উবারে যাচ্ছি। কিন্তু ড্রাইভারের পছন্দের উপস্থাপক চেনার পর আর ভাড়াই নিতে চাইছে না। এ রকম অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে।
আজকের পত্রিকা: সংবাদ উপস্থাপনায় নতুন আর কী করা যায় বা অ্যাংকরিং নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী আপনার?
গোলাম রাব্বী: সংবাদ উপস্থাপনা নিয়ে প্রতিদিন নতুন ও নান্দনিক যা করি, তা তো সবাই স্ক্রিনে দেখবে। প্রতিক্ষণে তা ফিল করবে। আর নিউ মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ার এই পরিবর্তনের যুগে নিউজের ডিজিটালাইজেশন নিয়ে বহু কিছু করার স্বপ্ন আছে।
গোলাম রাব্বী। কাছের মানুষদের কাছে তিনি রাব্বী হিসেবে পরিচিত। এই মুহূর্তে যে কজন সংবাদ উপস্থাপক জনপ্রিয়তার তুঙ্গে, তাঁদের মধ্যে তিনি একজন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে পড়াকালীন টেলিভিশনে কাজ করতে শুরু করেন। সেটা ২০১০ সাল। সেই থেকে প্রায় এক যুগ ধরে দেশের জনপ্রিয় সংবাদভিত্তিক টিভি চ্যানেল সময় টিভিতে নিয়মিত সংবাদ উপস্থাপনা করছেন। এ বিষয়ে দেশ-বিদেশে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তিনি। সংবাদ ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স-ভিত্তিক অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় নিত্যনতুন নান্দনিকতা যুক্ত করায় তাঁর সংবাদপাঠ উপভোগের এক অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
‘আজকের পত্রিকা’র সঙ্গে এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে গোলাম রাব্বী জানিয়েছেন তাঁর কাজের কথা, স্বপ্নের কথা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রজত কান্তি রায়।
আজকের পত্রিকা: আপনি সংবাদের কঠিন সব বিষয়কেও সহজ ও বৈচিত্র্যময় করে মানুষের কাছে পৌঁছে দেন। কীভাবে সম্ভব হলো কঠিন কাজটিকে এমন মজার ছলে তুলে ধরা?
গোলাম রাব্বী: আমি আসলে প্যাশনেটলি নিউজ অ্যাংকর। পেশাটা আমার ভালো লাগে। ধরুন আমি কোনো কারণে ভালো বোধ করছি না, কিন্তু আমি নিউজে বসলেই দেখি আমার ভালো লাগা শুরু হয়ে গেছে। তার মানে, নিউজ আমার কাছে একটা হিলিং ম্যাটেরিয়ালস। এতেই কারও বুঝতে বাকি থাকবে না যে, আমি নিউজের সময়টুকু কতটা উপভোগ করি। নিউজের সঙ্গে কতটা এনগেইজড থাকি। দেখা যায়, কখনো নিউজ দেখছি তো কখনো নিউজ নিয়ে ভাবছি। পাশাপাশি সব সময় নিউজের ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করি। নিউজের টপিক নিয়ে একপ্রকার গবেষণা করি—কেন এই শব্দটি হলো, কেন এই শব্দটি হলো না? এই শব্দটা এভাবে না বলে এভাবে বললে কেমন হয়? একই সঙ্গে আমি যেহেতু মানুষকে সংবাদ জানাই, তাই চিন্তা থাকে কীভাবে তথ্যটি সবাই ধরতে ও বুঝতে পারবে। বলতে পারেন, ঘটনাটি সহজ করে বোঝাতে গিয়েই হয়তো আজকের এই অবস্থান তৈরি হয়ে যাওয়া।
আজকের পত্রিকা: ছোটবেলা থেকেই কি ভাবনা ছিল একদিন সংবাদপাঠক হবেন টেলিভিশনে?
গোলাম রাব্বী: ব্যাপারটা একদমই ওরকম নয়। তবে ছোটবেলার একটা ঘটনা প্রায়ই মনে পড়ে—দেখতাম, বাবা খুব খবর শুনতেন। এমনকি তখন বাসায় টেলিভিশনও ছিল না। রেডিও ছিল। নানা সময়ে যখন ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতো, বিশেষ করে ওই দিনগুলোতে বাবা মনোযোগ দিয়ে খবর শুনতেন। আশপাশের সবাইকে জানাতেন। একদিন বাবার সঙ্গে খবর শুনছি; হঠাৎ বাবা বলে উঠলেন, ‘এমন খবরপাঠক হতে পারবা?’ বাবা তখন ওরকম গুরুত্ব দিয়ে বলেননি। আর আমিও সিরিয়াসলি নিইনি কথাটাকে। কিন্তু কেন জানি আমার মনের গহিনে কথাটা আজও বাজে। কীভাবে যে বিষয়টা সত্যি হয়ে উঠল, মিলে গেল; তা ভাবনায় এলেই খুব ভালো লাগে।
ওই যে বাবার সঙ্গে রেডিও শোনা। পাশাপাশি পছন্দের খেলা ক্রিকেটের ধারাভাষ্য শোনার পাগল ছিলাম। যেহেতু বাসায় টেলিভিশন ছিল না, রেডিওতেই নানা কিছু শুনতাম। তখন থেকেই উচ্চারণের কৌশল, কথা বলা ও ভয়েসের নানা রূপ-ঢং খুব টানত আমায়। সেটা হোক আবৃত্তি, গুণী মানুষের কথা বলা কিংবা অনুষ্ঠান উপস্থাপনা। তত দিনে বুঝতে পারলাম, গলার স্বরের এই খেলাটা আমায় বেঁধে ফেলছে। শেখা বলতে গেলে, ওই থেকেই শুরু; যা আজও চলছে। এটা ঠিক যে, তখন ভাবনায়ও ছিল না এত বড় পরিসরে কখনো কাজ করা হবে। আর একদিন সবার পছন্দের তালিকায় উঠে আসব। এখনো সবকিছু স্বপ্নের মতোই লাগে।
আজকের পত্রিকা: দেশে তো অনেকেই খবর পড়েন। অনেক দিন ধরে ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছে। সে ক্ষেত্রে আপনার মতো প্রতিদিনকার ভিন্নতা অন্যদের মধ্যে কমই দেখা যায়। এই যে বিশেষ কিছু আয়ত্ত করার ব্যাপারটা নিজের মধ্যে এল কীভাবে?
গোলাম রাব্বী: একেবারেই নিজে নিজে। যেকোনো আলোচনা, টকশো, কথিকা, গানের কথা বা যেকোনো ধরনের সাউন্ড থেকে আমি শিখি। যেমন ধরেন, আমি মুভি দেখলেও মুভির কাহিনি বা অভিনয়ের চেয়ে ভয়েসের থ্রোয়িংটা বা প্রেজেন্টেশনের ঢংটা আমায় বেশি টানে। সেখান থেকেই শব্দ ও প্রেজেন্টেশনকে প্রতিদিন নিত্যনতুন স্টাইল দেওয়ার চেষ্টা করি। এমনও হয়েছে, গল্প-কবিতা বা যেকোনো কিছু পড়তে পড়তে গলা ব্যথা করে ফেলতাম। রেডিওতে বাংলা হোক, ইংরেজি হোক, শুনতে শুনতে কান ব্যথা করে ফেলতাম। তা হোক দেশীয় বা বিদেশি। এমনকি বিশ্বের প্রতিটি দেশের নেতৃত্বস্থানীয় রেডিও-টিভি ঘণ্টার পর ঘণ্টা আমি শুনেছি বা দেখেছি। সব জায়গা থেকেই কোনটি ভালো, কোনটি গ্রহণ করব তা নিয়ে ভাবতাম। এভাবেই আসলে একসময় নিজস্ব একটা স্বকীয়তা তৈরি হয়ে গেল।
আজকের পত্রিকা: পরপর দুই দিন খবর দেখলেও এক দিন থেকে অন্য দিন ভিন্নতা পাওয়া যায়। কীভাবে সম্ভব?
গোলাম রাব্বী: এর জন্য সংবাদের ভেতরে ঢুকতে হবে। দেখুন, প্রতিদিনই কিন্তু নতুন ঘটনা, নতুন তথ্য। মানে নতুন কিছু। তাই আমার চিন্তায় এল, যদি আমি প্রতিদিন নতুন রূপে-ছন্দে না আসি, তাহলে আবেদনটা কমে যাবে। যেমন—আমরা কিন্তু ম্যাড়মেড়ে বা একঘেয়ে টাইপের কিছু বেশিক্ষণ ধরে রাখি না। সব সময় আমি নিজে শ্রোতা হিসেবে চিন্তা করি। বের করে আনি, কোন সংবাদ আমি কীভাবে শুনতে চাই। এমনকি খবর পড়ার সময়ও কান খাঁড়া করে শুনি। আর সেটা করতে গিয়ে ভিউয়ার্সের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠা।
আরেকটি কথা, আগে বলা হতো দুঃখের খবর দুঃখ-দুঃখ ভাব আর আনন্দের খবরে হাসির ভাব আনতে হবে। এই দুটি স্টাইল দিয়ে এখন আর চলে না। এখন হচ্ছে ন্যানো সেকেন্ডের যুগ, সবাই বেশ আপডেট। প্রতিমুহূর্তে বিশ্ব পরিবর্তন হচ্ছে। আমি তো মনে করি, প্রতিটা শব্দের মধ্যে আলাদা কথা আছে, আলাদা ব্যঞ্জনা আছে। এই নতুনত্ব ও বাস্তবতানির্ভর ভয়েস বা ফিল আনাটাতেই হয়তো মানুষের কাছে আপন লাগছে।
আজকের পত্রিকা: যারা আপনার মতো এই পেশায় আসতে চায়, তাদের জন্য পরামর্শ কী?
গোলাম রাব্বী: প্রথমত বলব, প্যাশন থাকতে হবে। পেশাটা চ্যালেঞ্জিং। আপনাকে যেকোনো সময় ডাকতে পারে, যেকোনো সময় খবর পড়তে হতে পারে। একটানা ৮ ঘণ্টা, ১২ ঘণ্টা নিউজ পড়া বা কাজ করতে হতে পারে। আরেটা জিনিস, শুদ্ধ ও সুন্দর করে পাঠ করার পাশাপাশি নিউজে বুদ্ধি, বিবেচনা, সাধারণ জ্ঞান অনেক কিছু নির্ভর করে। ইন্টারনেটে সার্চ করলে নিউজ ও অ্যাংকরিং নিয়ে ডকুমেন্টস পাবেন; সেগুলো দেখতে পারেন। তারপর নিউজ পড়তে হবে, দেখতে হবে, শিখতে হবে। সময়-সুযোগ থাকলে উপস্থাপনা ও নিউজ নিয়ে কোর্সও করা যেতে পারে।
আজকের পত্রিকা: নিউজ প্রেজেন্টার হতে গেলে চর্চা বা প্র্যাকটিস কীভাবে করবে? আবার অনেকে নতুন মানুষ নিলেও কেউ আবার অভিজ্ঞতা চায়। সে ক্ষেত্রে কী করা যায়?
গোলাম রাব্বী: আসলে এখন চর্চার সুযোগও কিন্তু অনেক। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় থাকলে ক্রিয়েটিভ, ভলান্টিয়ার ও কালচারাল বিভিন্ন ক্লাবে যুক্ত হতে পারেন। ডিবেট করতে পারেন, লেখালিখি করতে পারেন। প্রিন্ট, অনলাইনসহ বহু গণমাধ্যমে কলাম, ফিচার লিখতে পারেন। ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল খুলেও কিছু করা যেতে পারে। মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে করে নিজেকে ডেভেলপ করা যায়।
আজকের পত্রিকা: এই ক্যারিয়ারে আপনি অনেক বছর আছেন। মজার অভিজ্ঞতাও নিশ্চয়ই অনেক আছে?
গোলাম রাব্বী: এটা একটা চ্যালেঞ্জিং জব সত্যি। দায়িত্বশীলও বটে। তবে পেশাটাই এমন মজার যে রাজনীতি-অর্থনীতি ও সমাজের নানা দুঃখ-দুর্দশার গুরুগম্ভীর বিষয়ের সঙ্গে যেমন থাকতে হয়; তেমনি মজার, বৈচিত্র্যময়, খেলা-সাংস্কৃতিক নানা অর্জন-গর্জনের খবরও পড়তে হয়। নোরা ফাতেহির খবর যেমন পড়তে হয়, তেমনি আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল; ভারত-পাকিস্তানের দ্বৈরথ নিয়েও পড়তে হয়। এই যে ক্ষণে ক্ষণে হাজারো খবর ও তথ্যের ভিন্নতা ও বৈচিত্র্য, সেটা আমাকে খুব মজা দেয়।
পাশাপাশি প্রতিদিনই মজার অভিজ্ঞতা আছে। সেটা যেমন পড়তে গিয়ে হয় আবার নিউজের বাইরেও হয়। কেউ দেখলে বলে, আপনাকে চেনা চেনা লাগে। অনেকে হাত ধরে বুঝতে চায়, অনুভব করতে চায় আমি স্বাভাবিক মানুষ কী না! আবার ধরুন সিএনজি অটোরিকশা বা রিকশায় উঠছি; হয়তো কারও সঙ্গে কথা বলছি, বারবার পেছনে তাকাচ্ছে। তার মানে, ভয়েস শুনে চিনতে পারছে। একপর্যায়ে বলে ফেলে, নিউজে আপনাকে দেখছি। এ রকম হাজারো অভিজ্ঞতা আছে। এমনও হয়, অনেক সময় পাঠাও বা উবারে যাচ্ছি। কিন্তু ড্রাইভারের পছন্দের উপস্থাপক চেনার পর আর ভাড়াই নিতে চাইছে না। এ রকম অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে।
আজকের পত্রিকা: সংবাদ উপস্থাপনায় নতুন আর কী করা যায় বা অ্যাংকরিং নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী আপনার?
গোলাম রাব্বী: সংবাদ উপস্থাপনা নিয়ে প্রতিদিন নতুন ও নান্দনিক যা করি, তা তো সবাই স্ক্রিনে দেখবে। প্রতিক্ষণে তা ফিল করবে। আর নিউ মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ার এই পরিবর্তনের যুগে নিউজের ডিজিটালাইজেশন নিয়ে বহু কিছু করার স্বপ্ন আছে।
ইউনিক গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাখাওয়াত হোসেন। পর্যটনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি মনজুরুল ইসলাম।
০৩ অক্টোবর ২০২৪বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, সুফি এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে কোনো বিভাজনমূলক এজেন্ডায় রাজনীতির দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহৃত না হওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা দৃঢ়ভাবে কোনো সাম্প্রদায়িক ফাঁদে আটকা পড়তে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করি। কোনোভাবেই তা হতে দেওয়া যাবে না।
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪‘আমি এটাকে ঠিক রাজনৈতিক ভাবাদর্শ বলব না। আমি এটাকে বলব, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া, সেটা আমার পারিবারিক শিক্ষা। আমাদের ঘরের ডাইনিং টেবিল থেকে শুরু করে যেকোনো ক্ষেত্রে প্রয়োজনে পরিবারের বড়দের সাথে আমরা দ্বিমত পোষণ করতে পেরেছি। ছোট থেকে বড়, কারও কোনো কথা বা কাজ ভুল মনে হলে সেটাকে আমরা তার প্রতি স
৩১ আগস্ট ২০২৪একেক মানুষ বেছে নেন একেক পেশা। তাঁদের মধ্যে কারও কারও পেশা একটু ভিন্ন ধরনের। যেমন—মো. মুনসুর আলী ওরফে মন্টু খলিফা। বাপ-দাদার পেশাকে ভালোবেসে শিশুদের খতনা করানো বা হাজামের কাজ বেছে নিয়েছেন পেশা হিসেবে। জীবনে পার করেছেন প্রায় ৮৫ বছর। জানিয়েছেন গত ৬০ বছরে ২ লাখের বেশি শিশুর মুসলমানি বা সুন্নতে খতনা দিয়
৩০ মার্চ ২০২৪