ড. সেলিম রায়হান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)’-এর নির্বাহী পরিচালক। মূল্যস্ফীতি বাড়ার কারণ, জনমানুষের জীবনযাপনে এর প্রতিক্রিয়া এবং সমাধানের উপায় নিয়ে তাঁর সঙ্গে আজকের পত্রিকার মাসুদ রানা কথা বলেছেন।
আজকের পত্রিকা: মূল্যস্ফীতি এখন প্রায় এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর কারণ কী?
সেলিম রায়হান: উচ্চ মূল্যস্ফীতিটা আমরা লম্বা সময় ধরে দেখছি। গত বছরের প্রথম দিক থেকে এটা শুরু হয়েছে। রপরধারাবাহিকভাবে চলছে। এখন যে জায়গায় এটা দাঁড়িয়েছে, এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ।আমি মনে করি, মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল, যে সময়ে যে উদ্যোগগুলো নেওয়া দরকার ছিল, যথাসময়ে সেই উদ্যোগ না নেওয়ার ফল আমরা আজ দেখতে পাচ্ছি। তবে এটা ঠিক, মূল্যস্ফীতির ট্রিগার যদি আমরা বলি অবশ্যই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সামগ্রিকভাবে একটা প্রভাব ফেলেছিল। কিন্তু এত দিন পর এসে মূল্যস্ফীতির জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করলে আমার মনে হয় ব্যাপারটা যৌক্তিক হবে না। এরপর দুই দফায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। আমরা জানি, জ্বালানি তেল দেশের অর্থনীতিতে মোটামুটি সব খাতেই ব্যবহৃত হয়। যখন জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যায়, তখন অন্য খাতেও দাম বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখে।
আমি তিনটি বিষয়ের কথা বলব, যেখানে আমাদের ঘাটতি রয়েছে। এই তিনটি বিষয়েই নীতিনির্ধারণে ও বাস্তবায়নে ঘাটতি আছে। প্রথমত, মুদ্রানীতিতে নতুন মনিটরিং পলিসি করার আগপর্যন্ত ৬-৯ শতাংশ সুদের হার যে আমরা চালিয়ে গেলাম, এটি আসলে কোনোভাবেই বাজার অর্থনীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। আমরা যে দেশগুলোর সঙ্গে নিজেদের তুলনা করি, তারা উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে কখনোই সুদের হার নির্ধারণ করেনি। এ রকম সময়ে মূল্যস্ফীতি যখন আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিতে পৌঁছে গেছে, তখন তারা মুদ্রানীতিকে সঠিকভাবে ব্যবহারের চেষ্টা করেছে। তারা সুদের হার বাড়িয়ে দিয়ে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে, সেটা বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক একেবারেই করতে পারেনি।
সুতরাং আমরা বলতে পারি, এখন আমরা যে মূল্যস্ফীতির চিত্রটা দেখছি, সেটা দীর্ঘ সময়ের এবং সঠিক নীতিনির্ধারণ প্রয়োগ করতে না পারার একটা ফল। একই সময়ে সরকার কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটা বড় পরিমাণ ঋণ নিয়েছে এবং সেই ঋণ বাজারে নতুন করে মুদ্রা সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারে বেশ কয়েক বছর ধরে সরকার একটি পলিসি নিয়েছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটিকে স্থিতিশীল রাখার পথ অনুসরণ করছে। কিন্তু প্রয়োজনে যখন অবমূল্যায়ন দরকার, তখন সেটা করা হয়নি। অথচ খুব অল্প সময়ের মধ্যে টাকার ২৫-৩০ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে। এটি কিন্তু মূল্যস্ফীতিকে বাড়িয়ে দিয়েছে, আমদানি পণ্য যেগুলো আছে, সেগুলোর দাম বেড়ে গেছে এবং ডলারের বিপরীতে টাকায় দাম বেড়ে গেছে।
দ্বিতীয়ত, সরকারের রাজস্বনীতির মাধ্যমে এই সংকটকালে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আমদানি পণ্যের ওপর বিভিন্ন ধরনের করছাড় দেওয়া উচিত ছিল। আমদানি পণ্যের দাম বৈশ্বিক বাজারে যখন বেড়েছে, টাকার যখন ২৫-৩০ শতাংশ অবনমন হয়েছে, তখন আমদানির অনেক পণ্যের ওপর সরকার একই হারে কর রেখে দিয়েছে। সেই করটা কিন্তু নতুনভাবে দেশের ভেতর অনেক পণ্যের দাম বাড়াতে সাহায্য করেছে। আমি মনে করি, রাজস্বনীতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন জায়গায় কর সমন্বয় করে এবং করছাড় দিয়ে হলেও দেশের বাজারে আমদানি পণ্যের একটা সহনীয় মূল্য বজায় রাখার পরিস্থিতি যদি সৃষ্টি করা যেত, সেই জায়গায় সিদ্ধান্ত নিতে আমরা সাফল্য দেখতে পাইনি।
তৃতীয় বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হলো সামগ্রিক বাজার ব্যবস্থাপনা। এখানে একধরনের নৈরাজ্য চলছে। ব্যবসায়ীদের একটি অংশ এ রকম সংকটের সময় বাড়তি সুযোগ নেওয়ার জন্য সাময়িক সরবরাহ-সংকট সৃষ্টি করে পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে, যেগুলোর কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। কেন পণ্যের দাম এভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, এর কোনো জবাব তাদের কাছে নেই। এ রকম বাজার অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে সে রকম কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
আজকের পত্রিকা: শ্রীলঙ্কা মূল্যস্ফীতি দ্রুতই এক অঙ্কে নামিয়ে আনল। বাংলাদেশ মূল্যস্ফীতিই সামাল দিতে পারছে না। ঘাটতিটা কোথায়?
সেলিম রায়হান: ঘাটতির বড় দিক হলো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে উদ্যোগগুলো নেওয়া দরকার ছিল, সেগুলো আমরা সময়মতো নিতে পারিনি। গত বছর বা আগের বছর শ্রীলঙ্কার যে চিত্রটা আমরা দেখেছি, ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে তারা পড়েছিল। কিন্তু তারা সেই কঠিন অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে পারছে। তার একটা বড় কারণ, এই সংকটকালে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পেরেছে। মুদ্রানীতি বা সুদের হার, বিশেষ করে মুদ্রার সরবরাহ সংকোচন—এ বিষয়ে কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটা শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে পেরেছে; বিশেষ করে সুদের এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বাধীনভাবে ভূমিকা পালন করেছে। আমি মনে করি, শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক যথাসময়ে যথার্থ পদক্ষেপ নিতে পেরেছে বলে তারা একটা স্বাভাবিক জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছে। বিপরীতে, বাংলাদেশ কিন্তু যথাসময়ে যথার্থ পদক্ষেপ নিতে পারেনি। মুদ্রানীতি, সুদের হার এবং সরকারকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীন ভূমিকা অনুপস্থিত। এ ছাড়া রাজস্বনীতি এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সাফল্য আনেনি।
আজকের পত্রিকা: অনেক দিন ধরে সাধারণ মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা মূল্যস্ফীতি। এতে জীবনযাপনের খরচ বেড়ে গেছে, কমেছে প্রকৃত আয়। সমাধানের উপায় কী?
সেলিম রায়হান: আশা করি, সরকার এ বিষয়গুলো যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। আসলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই এই মুহূর্তে সরকারের সবচেয়ে অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। দরকারি পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিতে প্রয়োজনে আমদানি করতে হবে এবং আমি যে মুদ্রানীতির কথা বললাম, সেখানে সার্বিকভাবে সুদের হার বাড়ানোর প্রয়োজন আছে। আমাদের রাজস্বনীতির কোনো কোনো জায়গায় কর কমিয়ে হলেও আমদানি পণ্যের দাম দেশের বাজারে কমিয়ে দিতে হবে। এরপর নজর দিতে হবে বাজার ব্যবস্থাপনার দিকে। যেসব ব্যবসায়ী পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বাড়িয়ে দেন, তাঁদের মোকাবিলা করার জন্য আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে হবে। পাশাপাশি ওই সব পণ্য সরাসরি আমদানি করে দেশের বাজার স্বাভাবিক রাখতে হবে।
আপনি দেখবেন, সরকার যখন পেঁয়াজ আমদানি করার কথা বলে, তখন কিন্তু এটার দাম কিছুটা কমেছিল। আবার ডিমের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জায়গায় যদি অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি, সে ক্ষেত্রে সরাসরি আমদানি করে এসব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তবে এককভাবে কোনো সংস্থার পক্ষে বা এককভাবে কোনো নীতি প্রয়োগ করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন সঠিক মুদ্রানীতি, রাজস্বনীতি এবং বাজার ব্যবস্থাপনার সমন্বিত উদ্যোগ।
আজকের পত্রিকা: আপনার কি মনে হয়, নীতিনির্ধারকেরা অর্থনীতির এই সংকট থেকে মুক্তি পেতে কোনো চিন্তাভাবনা করছেন?
সেলিম রায়হান: আমি মনে করি, তাঁদের সে ধরনের চিন্তাভাবনা আছে। কিন্তু বিষয়টা শুধু চিন্তাভাবনার নয়। কথা হলো, যে চিন্তাগুলো করা হয়, সেগুলোকে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয় কি না। অপরদিকে নীতিনির্ধারকেরা চিন্তাভাবনার সময় সমস্যাগুলোকে আন্তরিকতার সঙ্গে অনুধাবন করছেন কি না। মুদ্রানীতি, রাজস্বনীতি এবং বাজার ব্যবস্থাপনার সমন্বিত উদ্যোগ—এসব কথা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি। অথচ বাস্তবে তার প্রয়োগ দেখছি না।
পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে দরকার বাজার তদারকি ও তথ্যের অবাধ প্রবাহ; অর্থাৎ কী পরিমাণ ভোগ্যপণ্য দরকার এবং কী পরিমাণ আমদানি করতে হবে। এর সঠিক পরিসংখ্যান থাকতে হবে সরকারের কাছে। তাহলে অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফার সুযোগ সহজে নিতে পারবেন না। পাইকারি ও খুচরা পর্যায় থেকে স্থানীয় বাজার পর্যন্ত তদারকি ও তথ্যের অবাধ প্রবাহের প্রয়োজন। এ ছাড়া প্রয়োজন সরকারের যে দপ্তরগুলোর বাজার দেখভাল করার কথা, যেমন প্রতিযোগিতা কমিশন, তাদের শক্তিশালী করা।
আজকের পত্রিকা: মূল্যস্ফীতি এখন প্রায় এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর কারণ কী?
সেলিম রায়হান: উচ্চ মূল্যস্ফীতিটা আমরা লম্বা সময় ধরে দেখছি। গত বছরের প্রথম দিক থেকে এটা শুরু হয়েছে। রপরধারাবাহিকভাবে চলছে। এখন যে জায়গায় এটা দাঁড়িয়েছে, এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ।আমি মনে করি, মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য যেসব পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল, যে সময়ে যে উদ্যোগগুলো নেওয়া দরকার ছিল, যথাসময়ে সেই উদ্যোগ না নেওয়ার ফল আমরা আজ দেখতে পাচ্ছি। তবে এটা ঠিক, মূল্যস্ফীতির ট্রিগার যদি আমরা বলি অবশ্যই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সামগ্রিকভাবে একটা প্রভাব ফেলেছিল। কিন্তু এত দিন পর এসে মূল্যস্ফীতির জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করলে আমার মনে হয় ব্যাপারটা যৌক্তিক হবে না। এরপর দুই দফায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। আমরা জানি, জ্বালানি তেল দেশের অর্থনীতিতে মোটামুটি সব খাতেই ব্যবহৃত হয়। যখন জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যায়, তখন অন্য খাতেও দাম বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখে।
আমি তিনটি বিষয়ের কথা বলব, যেখানে আমাদের ঘাটতি রয়েছে। এই তিনটি বিষয়েই নীতিনির্ধারণে ও বাস্তবায়নে ঘাটতি আছে। প্রথমত, মুদ্রানীতিতে নতুন মনিটরিং পলিসি করার আগপর্যন্ত ৬-৯ শতাংশ সুদের হার যে আমরা চালিয়ে গেলাম, এটি আসলে কোনোভাবেই বাজার অর্থনীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। আমরা যে দেশগুলোর সঙ্গে নিজেদের তুলনা করি, তারা উচ্চ মূল্যস্ফীতির সময়ে কখনোই সুদের হার নির্ধারণ করেনি। এ রকম সময়ে মূল্যস্ফীতি যখন আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিতে পৌঁছে গেছে, তখন তারা মুদ্রানীতিকে সঠিকভাবে ব্যবহারের চেষ্টা করেছে। তারা সুদের হার বাড়িয়ে দিয়ে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে, সেটা বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক একেবারেই করতে পারেনি।
সুতরাং আমরা বলতে পারি, এখন আমরা যে মূল্যস্ফীতির চিত্রটা দেখছি, সেটা দীর্ঘ সময়ের এবং সঠিক নীতিনির্ধারণ প্রয়োগ করতে না পারার একটা ফল। একই সময়ে সরকার কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটা বড় পরিমাণ ঋণ নিয়েছে এবং সেই ঋণ বাজারে নতুন করে মুদ্রা সরবরাহ বাড়িয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারে বেশ কয়েক বছর ধরে সরকার একটি পলিসি নিয়েছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক এটিকে স্থিতিশীল রাখার পথ অনুসরণ করছে। কিন্তু প্রয়োজনে যখন অবমূল্যায়ন দরকার, তখন সেটা করা হয়নি। অথচ খুব অল্প সময়ের মধ্যে টাকার ২৫-৩০ শতাংশ অবমূল্যায়ন হয়েছে। এটি কিন্তু মূল্যস্ফীতিকে বাড়িয়ে দিয়েছে, আমদানি পণ্য যেগুলো আছে, সেগুলোর দাম বেড়ে গেছে এবং ডলারের বিপরীতে টাকায় দাম বেড়ে গেছে।
দ্বিতীয়ত, সরকারের রাজস্বনীতির মাধ্যমে এই সংকটকালে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আমদানি পণ্যের ওপর বিভিন্ন ধরনের করছাড় দেওয়া উচিত ছিল। আমদানি পণ্যের দাম বৈশ্বিক বাজারে যখন বেড়েছে, টাকার যখন ২৫-৩০ শতাংশ অবনমন হয়েছে, তখন আমদানির অনেক পণ্যের ওপর সরকার একই হারে কর রেখে দিয়েছে। সেই করটা কিন্তু নতুনভাবে দেশের ভেতর অনেক পণ্যের দাম বাড়াতে সাহায্য করেছে। আমি মনে করি, রাজস্বনীতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন জায়গায় কর সমন্বয় করে এবং করছাড় দিয়ে হলেও দেশের বাজারে আমদানি পণ্যের একটা সহনীয় মূল্য বজায় রাখার পরিস্থিতি যদি সৃষ্টি করা যেত, সেই জায়গায় সিদ্ধান্ত নিতে আমরা সাফল্য দেখতে পাইনি।
তৃতীয় বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সেটি হলো সামগ্রিক বাজার ব্যবস্থাপনা। এখানে একধরনের নৈরাজ্য চলছে। ব্যবসায়ীদের একটি অংশ এ রকম সংকটের সময় বাড়তি সুযোগ নেওয়ার জন্য সাময়িক সরবরাহ-সংকট সৃষ্টি করে পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বাড়িয়ে দিচ্ছে, যেগুলোর কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। কেন পণ্যের দাম এভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, এর কোনো জবাব তাদের কাছে নেই। এ রকম বাজার অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে সে রকম কার্যকর ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি।
আজকের পত্রিকা: শ্রীলঙ্কা মূল্যস্ফীতি দ্রুতই এক অঙ্কে নামিয়ে আনল। বাংলাদেশ মূল্যস্ফীতিই সামাল দিতে পারছে না। ঘাটতিটা কোথায়?
সেলিম রায়হান: ঘাটতির বড় দিক হলো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে উদ্যোগগুলো নেওয়া দরকার ছিল, সেগুলো আমরা সময়মতো নিতে পারিনি। গত বছর বা আগের বছর শ্রীলঙ্কার যে চিত্রটা আমরা দেখেছি, ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে তারা পড়েছিল। কিন্তু তারা সেই কঠিন অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে পারছে। তার একটা বড় কারণ, এই সংকটকালে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বাধীনভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করতে পেরেছে। মুদ্রানীতি বা সুদের হার, বিশেষ করে মুদ্রার সরবরাহ সংকোচন—এ বিষয়ে কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটা শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে পেরেছে; বিশেষ করে সুদের এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বাধীনভাবে ভূমিকা পালন করেছে। আমি মনে করি, শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক যথাসময়ে যথার্থ পদক্ষেপ নিতে পেরেছে বলে তারা একটা স্বাভাবিক জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছে। বিপরীতে, বাংলাদেশ কিন্তু যথাসময়ে যথার্থ পদক্ষেপ নিতে পারেনি। মুদ্রানীতি, সুদের হার এবং সরকারকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীন ভূমিকা অনুপস্থিত। এ ছাড়া রাজস্বনীতি এবং বাজার ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সাফল্য আনেনি।
আজকের পত্রিকা: অনেক দিন ধরে সাধারণ মানুষের সবচেয়ে বড় সমস্যা মূল্যস্ফীতি। এতে জীবনযাপনের খরচ বেড়ে গেছে, কমেছে প্রকৃত আয়। সমাধানের উপায় কী?
সেলিম রায়হান: আশা করি, সরকার এ বিষয়গুলো যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। আসলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই এই মুহূর্তে সরকারের সবচেয়ে অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। দরকারি পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিতে প্রয়োজনে আমদানি করতে হবে এবং আমি যে মুদ্রানীতির কথা বললাম, সেখানে সার্বিকভাবে সুদের হার বাড়ানোর প্রয়োজন আছে। আমাদের রাজস্বনীতির কোনো কোনো জায়গায় কর কমিয়ে হলেও আমদানি পণ্যের দাম দেশের বাজারে কমিয়ে দিতে হবে। এরপর নজর দিতে হবে বাজার ব্যবস্থাপনার দিকে। যেসব ব্যবসায়ী পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বাড়িয়ে দেন, তাঁদের মোকাবিলা করার জন্য আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে হবে। পাশাপাশি ওই সব পণ্য সরাসরি আমদানি করে দেশের বাজার স্বাভাবিক রাখতে হবে।
আপনি দেখবেন, সরকার যখন পেঁয়াজ আমদানি করার কথা বলে, তখন কিন্তু এটার দাম কিছুটা কমেছিল। আবার ডিমের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের জায়গায় যদি অসাধু ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি, সে ক্ষেত্রে সরাসরি আমদানি করে এসব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তবে এককভাবে কোনো সংস্থার পক্ষে বা এককভাবে কোনো নীতি প্রয়োগ করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন সঠিক মুদ্রানীতি, রাজস্বনীতি এবং বাজার ব্যবস্থাপনার সমন্বিত উদ্যোগ।
আজকের পত্রিকা: আপনার কি মনে হয়, নীতিনির্ধারকেরা অর্থনীতির এই সংকট থেকে মুক্তি পেতে কোনো চিন্তাভাবনা করছেন?
সেলিম রায়হান: আমি মনে করি, তাঁদের সে ধরনের চিন্তাভাবনা আছে। কিন্তু বিষয়টা শুধু চিন্তাভাবনার নয়। কথা হলো, যে চিন্তাগুলো করা হয়, সেগুলোকে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয় কি না। অপরদিকে নীতিনির্ধারকেরা চিন্তাভাবনার সময় সমস্যাগুলোকে আন্তরিকতার সঙ্গে অনুধাবন করছেন কি না। মুদ্রানীতি, রাজস্বনীতি এবং বাজার ব্যবস্থাপনার সমন্বিত উদ্যোগ—এসব কথা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছি। অথচ বাস্তবে তার প্রয়োগ দেখছি না।
পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে দরকার বাজার তদারকি ও তথ্যের অবাধ প্রবাহ; অর্থাৎ কী পরিমাণ ভোগ্যপণ্য দরকার এবং কী পরিমাণ আমদানি করতে হবে। এর সঠিক পরিসংখ্যান থাকতে হবে সরকারের কাছে। তাহলে অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফার সুযোগ সহজে নিতে পারবেন না। পাইকারি ও খুচরা পর্যায় থেকে স্থানীয় বাজার পর্যন্ত তদারকি ও তথ্যের অবাধ প্রবাহের প্রয়োজন। এ ছাড়া প্রয়োজন সরকারের যে দপ্তরগুলোর বাজার দেখভাল করার কথা, যেমন প্রতিযোগিতা কমিশন, তাদের শক্তিশালী করা।
ইউনিক গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাখাওয়াত হোসেন। পর্যটনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি মনজুরুল ইসলাম।
০৩ অক্টোবর ২০২৪বাংলাদেশের হিন্দু, বৌদ্ধ, সুফি এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে কোনো বিভাজনমূলক এজেন্ডায় রাজনীতির দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহৃত না হওয়ার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা দৃঢ়ভাবে কোনো সাম্প্রদায়িক ফাঁদে আটকা পড়তে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করি। কোনোভাবেই তা হতে দেওয়া যাবে না।
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪‘আমি এটাকে ঠিক রাজনৈতিক ভাবাদর্শ বলব না। আমি এটাকে বলব, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া, সেটা আমার পারিবারিক শিক্ষা। আমাদের ঘরের ডাইনিং টেবিল থেকে শুরু করে যেকোনো ক্ষেত্রে প্রয়োজনে পরিবারের বড়দের সাথে আমরা দ্বিমত পোষণ করতে পেরেছি। ছোট থেকে বড়, কারও কোনো কথা বা কাজ ভুল মনে হলে সেটাকে আমরা তার প্রতি স
৩১ আগস্ট ২০২৪একেক মানুষ বেছে নেন একেক পেশা। তাঁদের মধ্যে কারও কারও পেশা একটু ভিন্ন ধরনের। যেমন—মো. মুনসুর আলী ওরফে মন্টু খলিফা। বাপ-দাদার পেশাকে ভালোবেসে শিশুদের খতনা করানো বা হাজামের কাজ বেছে নিয়েছেন পেশা হিসেবে। জীবনে পার করেছেন প্রায় ৮৫ বছর। জানিয়েছেন গত ৬০ বছরে ২ লাখের বেশি শিশুর মুসলমানি বা সুন্নতে খতনা দিয়
৩০ মার্চ ২০২৪