লস অ্যাঞ্জেলেসের ভয়াবহ দাবানলের তদন্ত চলছে, সর্বশেষ যা জানা গেল

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৯: ২৮
Thumbnail image
ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানলে জ্বলছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস। ছবি: এএফপি

লস অ্যাঞ্জেলেসে ভয়াবহ দাবানলে এখন পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। হাজার হাজার বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভস্মীভূত হয়েছে। তদন্তকারীরা এই বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে কাজ করছেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, লস অ্যাঞ্জেলেসের পাহাড়বেষ্টিত পিয়েদ্রা মোরাদা ড্রাইভের একটি বাড়ির পেছন থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। এই বাড়ি ঘন জঙ্গলে ঘেরা একটি উপত্যকার ওপর অবস্থিত।

প্যাসিফিক প্যালিসেইডস নামে পরিচিত এই অঞ্চলে জেমি লি কার্টিস ও বিলি ক্রিস্টালের মতো হলিউড তারকারা বাস করতেন। কিন্তু এখন আর কিছুই নেই এখানে। প্যালিসেইডস ও ইটন দাবানলে প্রায় ১৩ হাজার একর এলাকা পুড়ে ছাই হয়েছে। পানির তীব্র সংকটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছেন অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা। পুরো ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০ হাজারের বেশি বাড়িঘর।

ন্যাশনাল ফায়ার প্রোটেকশন অ্যাসোসিয়েশনের (এনএফপিএ) তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে বেশির ভাগ সময় বজ্রপাত থেকে দাবানলের সূত্রপাত হয়। তবে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এবার প্যাসিফিক প্যালিসেইডস বা ইস্ট লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির ইটন এলাকায় বজ্রপাতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। আগুন লাগার আরও সম্ভাব্য দুটি কারণ থাকতে পারে। তদন্তকারীরা জানান, কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে এই আগুন লাগাতে পারেন অথবা বৈদ্যুতিক লাইনের সমস্যা থেকেও আগুন লাগতে পারে।

ফ্লোরিডার সায়েন্টিফিক ফায়ার অ্যানালাইসিস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক জন লেনটিনি। তিনি ১৯৯১ সালের ওকল্যান্ড হিলস ফায়ারসহ ক্যালিফোর্নিয়ার বড় বড় আগুনের ঘটনার তদন্ত করেছেন। লেনটিনি বলেন, ‘এই আগুন একসময় ছোট ছিল। কোথা থেকে আগুনের সূত্রপাত হলো, তদন্তকারীদের বিষয়টি আগে খুঁজে বের করতে হবে। তাহলেই এর কারণ জানা যাবে।’

তবে এখন পর্যন্ত কোনো দাবানলের ক্ষেত্রে ইচ্ছাকৃত আগুন লাগানোর প্রমাণ বা বৈদ্যুতিক লাইনের সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

ক্যালিফোর্নিয়া পাবলিক ইউটিলিটিস কমিশনের (সিপিইউসি) যোগাযোগ বিভাগের পরিচালক টেরি প্রসপার বলেন, ‘কোনো সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান যখন অগ্নিকাণ্ডে তাদের সরঞ্জামের সম্ভাব্য সংশ্লিষ্টতার কথা জানতে পারে, তখন তারা সিপিইউসিকে রিপোর্ট করতে বাধ্য। এরপর সিপিইউসির কর্মীরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখেন, আইন লঙ্ঘিত হয়েছে কি না।’

২০১৭ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসে অন্যতম বড় দাবানল ‘থমাস ফায়ার’ দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া এডিসনের একটি বৈদ্যুতিক লাইনের আগুন থেকে সৃষ্টি হয়েছিল। ওই আগুনে দুজনের মৃত্যু হয় এবং ১ হাজার ১৪০ বর্গকিলোমিটার এলাকা পুড়ে যায়।

শুক্রবার, দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এডিসন সিপিইউসিকে ইটন ফায়ারের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানলে তাদের প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে নিয়ম মেনে তারা প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

আগুনের সম্ভাব্য অন্যান্য কারণের মধ্যে ময়লা পোড়ানো, আতশবাজি এবং দুর্ঘটনাও রয়েছে। ২০২১ সালে এক দম্পতির বাচ্চার ‘লৈঙ্গিক প্রকাশ’ অনুষ্ঠানের সময় আতশবাজি থেকে সৃষ্ট আগুনে প্রায় ৯০ বর্গকিলোমিটার এলাকা পুড়ে যায়, পাঁচটি বাড়ি ধ্বংস হয় এবং একজন ফায়ার সার্ভিস কর্মীর মৃত্যু হয়।

ইটন ও প্যাসিফিক প্যালিসেইডসের দাবানলের আগুন শুক্রবার পর্যন্ত জ্বলছিল। তবে ওই এলাকার হাওয়া কিছুটা কমে এলেও বৃষ্টি না থাকায় এখনো শুকনো এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ছে।

জন লেনটিনি বলেন, ‘আগুনের জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে নিজে থেকেই আগুন নিভে যাবে। এর আগ পর্যন্ত এই আগুন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত