মোজাহিদুল ইসলাম, ঢাকা
ভোটে জিতলেও ক্ষমতা গ্রহণ করতে প্রায় আড়াই মাস বাকি যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। তবে গতকাল বুধবার বিজয় ভাষণে সরকার কেমন হবে, তার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। ভাষণে উঠে এসেছে যুদ্ধ বন্ধের কথা। উঠে এসেছে কঠোর অভিবাসন নীতির কথাও। এতে ট্রাম্প মোটামুটি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, মার্কিন নীতির খোলনলচে বদলে দেবেন তিনি।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই যুদ্ধ বন্ধের ঘোষণা ইউক্রেন যুদ্ধে যেভাবে প্রভাব ফেলবে, গাজা যুদ্ধে সেই প্রভাব ফেলবে না। অর্থাৎ ফিলিস্তিনিদের জন্য খুব একটা সুখবর নেই ট্রাম্পের জয়ে। এদিকে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বদলে যাওয়া, ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্কে অস্বস্তি, ভারত ও চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কে অস্বস্তির ইঙ্গিতও দিয়েছেন বিশ্লেষকেরা।
গতকাল ট্রাম্প তাঁর বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষত সারিয়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি এ-ও বলেছেন, তাঁর আমল হবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বর্ণযুগ। বললেন, ‘আমরা আমাদের সীমান্ত নিয়ে সব সমস্যার সমাধান করব।’
কঠোর হবে অভিবাসন নীতি
ট্রাম্প তাঁর ভাষণে অবৈধ অভিবাসনের বিষয়ে কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা শিগগির সীমান্ত একেবারে বন্ধ করব।’ এ প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সরকারের নীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অভিবাসী ঢোকার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি দ্রুত খারাপের দিকে গেছে। অবৈধভাবে যারা প্রবেশ করেছে, তাদের বের করে দেওয়া হবে।
অবৈধ অভিবাসন নিয়ে বরাবরই সরব ছিলেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছিল, ট্রাম্প লাখ লাখ মানুষকে ফিরিয়ে দেবেন তাদের নিজ দেশে। এর অর্থ হলো, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলবে। মেক্সিকো সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া আরও দীর্ঘ হবে।
যুদ্ধে বন্ধের ইঙ্গিত
অভিবাসনের পরই ট্রাম্পের বক্তব্যে আসে যুদ্ধ প্রসঙ্গ। যুক্তরাষ্ট্রের কী কী সম্পদ আছে, সেসব ফিরিস্তি দিতে গিয়ে সামরিক বাহিনীর প্রসঙ্গ টানেন। বলেন, ‘আমাদের শক্তিশালী সামরিক বাহিনী আছে। আমার (আগের) চার বছরে সামরিক বাহিনী ব্যবহার করিনি। ওই সময়ে কোনো যুদ্ধ ছিল না। আমি যুদ্ধ বন্ধ করতে যাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, সেই সময় শুধু আইএসের (জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট) বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই বাহিনী ব্যবহার করা হয়েছিল।
বিশ্লেষকদের মতে, এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যের লেবানন-গাজা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতি ইঙ্গিত করেন।
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের ইঙ্গিত, ন্যাটো দুর্বল হতে পারে
এবিসি নিউজের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় ফিরে আসায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি বড় রদবদল হতে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর ব্যাপক সামরিক ও আর্থিক সহায়তা যাচ্ছে ইউক্রেনে। এ কারণেই রাশিয়াকে ঠেকিয়ে রাখতে পারছে ভলোদিমির জেলেনস্কির দেশ। অথচ ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্যই নয়।
এদিকে ন্যাটোর সবচেয়ে বড় আর্থিক জোগানদাতা যুক্তরাষ্ট্র। আর ট্রাম্প বারবার এই জোট নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, জোটের অন্য দেশগুলোর যে পরিমাণ তহবিল সরবরাহ করা উচিত, তারা তা দেয় না। অর্থাৎ ট্রাম্প এবার ক্ষমতায় বসলে ন্যাটোয় হয় মার্কিন অর্থায়ন কমবে, না হয় অন্য সদস্যরা তহবিল সরবরাহ বাড়াতে বাধ্য হবে।
ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গ এলেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির প্রসঙ্গ আসে। এবিসি বলছে, ট্রাম্প-পুতিনের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। ট্রাম্প এটা স্বীকারও করেছেন। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সিএনএনকে ২০২৩ সালের মে মাসে ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন, ‘যুদ্ধে রুশ-ইউক্রেনীয়—সবাই মরছে। এই মৃত্যু বন্ধ করতে চাই। আমি এটা করব। এটা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে করতে পারব।’ এ জন্য পুতিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে বসার ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি।
বিবিসির বিশ্লেষণ বলছে, গত মে মাসে ট্রাম্পের সাবেক দুই নিরাপত্তা উপদেষ্টা এক গবেষণা প্রবন্ধে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়া। তবে একই সঙ্গে জেলেনস্কি যাতে পুতিনের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসেন, সেটাও নিশ্চিত করা উচিত।
গাজার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
২০১৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। আব্রাহাম অ্যাকর্ড বাস্তবায়ন করে মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করা হয়েছিল। বিবিসি বলছে, এর মধ্য দিয়ে তিনি খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সমর্থন পেয়েছেন। তবে ফিলিস্তিনের কোনো সুবিধা হয়নি। ফিলিস্তিনিরা ট্রাম্পকে বর্জন করেছিল। এদিকে বাইডেনের ইসরায়েল নীতির কারণে ফিলিস্তিনিদের পরিণতি হয়েছে আরও ভয়ংকর। যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রে মারা পড়েছে তারা। ফলে ট্রাম্প কিংবা বাইডেন—কেউই ফিলিস্তিনিদের ভাগ্যবদলের পথে হাঁটেননি।
এবার ট্রাম্প যুদ্ধ থামানোর কথা বলছেন। নির্বাচনের আগে তিনি দাবি করেছেন, তিনি ক্ষমতায় থাকলে হামাস ইসরায়েলে আক্রমণ করত না। কারণ, তিনি ইরানের ওপর আরও চাপ দিতেন। ধারণা করা হচ্ছে, এবার তিনি তা-ই করবেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ইরানের ওপর চাপ প্রয়োগ করলে তা যুদ্ধে আরও বেশি প্রভাব ফেলবে। এতে যুদ্ধ আরও তীব্র হতে পারে।
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হোয়াইট হাউসের ইতিহাসে ইসরায়েলের সবচেয়ে ভালো বন্ধু ট্রাম্প। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, ট্রাম্পের আমলে তিনি আসলে সবই করতে পারবেন। তবে বিবিসি বলছে, ট্রাম্পের এমন নীতির কারণে মধ্যপ্রাচ্য আরও অস্থিতিশীল হতে পারে।
জলবায়ু তহবিলে বাজে প্রভাব
ট্রাম্প সব সময় জলবায়ু পরিবর্তনকে অগ্রাহ্য করেছেন। এ নিয়ে প্রচারকে ‘মিথ্যা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন বিভিন্ন সময়। তাঁর আমলে ঐতিহাসিক প্যারিস চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এবারের নির্বাচনী প্রচারেও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে তিনি একই কথা বলেছেন। তিনি প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় গেলে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে করা আইন বাতিল করবেন।
ইউরোপ-চীনের স্বস্তি-অস্বস্তি
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে কাছের মিত্র ইউরোপ। ট্রাম্পের আগের আমল পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বিভিন্ন ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ঠোকাঠুকি লেগে ছিল তাঁর প্রশাসনের। একসময় ন্যাটোর ভবিষ্যৎ নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এবারও সেই শঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া ইউরোপীয় পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। ফলে ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন দেখা দেওয়ার শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এই সময়ের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী বিবেচনা করা হয় চীনকে। বাইডেন প্রশাসন চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জটিলতর করেছে। এর জেরে তাইওয়ানের ওপর দিয়ে মহড়াও চালিয়েছে চীন। এখন তাইওয়ান ইস্যুতে চীন হয়তো খানিকটা স্বস্তি পাবে। তাইওয়ান ইস্যুতে মার্কিন বাহিনীকে ব্যবহার করে চীনকে হুমকি না দেওয়ার কথা বলেছেন ট্রাম্প। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘চীনের সি চিন পিং আমাকে সম্মান করেন এবং তিনি জানেন, আমি পাগলাটে।’
রয়টার্স বলছে, তবে চীনের জন্য দুঃসংবাদ হবে শুল্ক। এই শুল্কযুদ্ধ এর আগেও দেখেছে বিশ্ব। ট্রাম্প আবারও বাণিজ্যযুদ্ধের সেই পথে হাঁটার ঘোষণা দিয়েছেন।
বাণিজ্যে ভারতে অস্বস্তি
বাইডেন সরকারকে নিয়ে খানিকটা অস্বস্তিতে ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার। রাশিয়াকে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের অভিযোগে সম্প্রতি ভারতের ১৯ প্রতিষ্ঠান ও দুই ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। এদিকে মোদি-ট্রাম্পের বন্ধুত্বের নজিরও আছে। সেটা ব্যক্তিগত পর্যায়ে কিংবা রাজনৈতিক সম্পর্ক খানিকটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ার আভাস পেতেই গতকাল তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মোদি। তবে বাণিজ্য ইস্যুতে ভারতের জন্য খুব বেশি সুখবর নেই। ‘সবার আগে আমেরিকা’ নীতির কারণে অন্যান্য দেশের মতো ভারতীয় পণ্যেও শুল্ক বাড়বে। খোদ ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভিও এ নিয়ে শঙ্কা জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে ভারতীয়দের সুবিধাও কমে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে গণমাধ্যমটি।
ভোটে জিতলেও ক্ষমতা গ্রহণ করতে প্রায় আড়াই মাস বাকি যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। তবে গতকাল বুধবার বিজয় ভাষণে সরকার কেমন হবে, তার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। ভাষণে উঠে এসেছে যুদ্ধ বন্ধের কথা। উঠে এসেছে কঠোর অভিবাসন নীতির কথাও। এতে ট্রাম্প মোটামুটি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, মার্কিন নীতির খোলনলচে বদলে দেবেন তিনি।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ট্রাম্পের এই যুদ্ধ বন্ধের ঘোষণা ইউক্রেন যুদ্ধে যেভাবে প্রভাব ফেলবে, গাজা যুদ্ধে সেই প্রভাব ফেলবে না। অর্থাৎ ফিলিস্তিনিদের জন্য খুব একটা সুখবর নেই ট্রাম্পের জয়ে। এদিকে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান বদলে যাওয়া, ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্কে অস্বস্তি, ভারত ও চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্কে অস্বস্তির ইঙ্গিতও দিয়েছেন বিশ্লেষকেরা।
গতকাল ট্রাম্প তাঁর বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষত সারিয়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি এ-ও বলেছেন, তাঁর আমল হবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বর্ণযুগ। বললেন, ‘আমরা আমাদের সীমান্ত নিয়ে সব সমস্যার সমাধান করব।’
কঠোর হবে অভিবাসন নীতি
ট্রাম্প তাঁর ভাষণে অবৈধ অভিবাসনের বিষয়ে কঠোর হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা শিগগির সীমান্ত একেবারে বন্ধ করব।’ এ প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সরকারের নীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অভিবাসী ঢোকার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি দ্রুত খারাপের দিকে গেছে। অবৈধভাবে যারা প্রবেশ করেছে, তাদের বের করে দেওয়া হবে।
অবৈধ অভিবাসন নিয়ে বরাবরই সরব ছিলেন ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছিল, ট্রাম্প লাখ লাখ মানুষকে ফিরিয়ে দেবেন তাদের নিজ দেশে। এর অর্থ হলো, যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলবে। মেক্সিকো সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া আরও দীর্ঘ হবে।
যুদ্ধে বন্ধের ইঙ্গিত
অভিবাসনের পরই ট্রাম্পের বক্তব্যে আসে যুদ্ধ প্রসঙ্গ। যুক্তরাষ্ট্রের কী কী সম্পদ আছে, সেসব ফিরিস্তি দিতে গিয়ে সামরিক বাহিনীর প্রসঙ্গ টানেন। বলেন, ‘আমাদের শক্তিশালী সামরিক বাহিনী আছে। আমার (আগের) চার বছরে সামরিক বাহিনী ব্যবহার করিনি। ওই সময়ে কোনো যুদ্ধ ছিল না। আমি যুদ্ধ বন্ধ করতে যাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, সেই সময় শুধু আইএসের (জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট) বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই বাহিনী ব্যবহার করা হয়েছিল।
বিশ্লেষকদের মতে, এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যের লেবানন-গাজা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রতি ইঙ্গিত করেন।
ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের ইঙ্গিত, ন্যাটো দুর্বল হতে পারে
এবিসি নিউজের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় ফিরে আসায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি বড় রদবদল হতে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে ইউক্রেন যুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর ব্যাপক সামরিক ও আর্থিক সহায়তা যাচ্ছে ইউক্রেনে। এ কারণেই রাশিয়াকে ঠেকিয়ে রাখতে পারছে ভলোদিমির জেলেনস্কির দেশ। অথচ ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্যই নয়।
এদিকে ন্যাটোর সবচেয়ে বড় আর্থিক জোগানদাতা যুক্তরাষ্ট্র। আর ট্রাম্প বারবার এই জোট নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, জোটের অন্য দেশগুলোর যে পরিমাণ তহবিল সরবরাহ করা উচিত, তারা তা দেয় না। অর্থাৎ ট্রাম্প এবার ক্ষমতায় বসলে ন্যাটোয় হয় মার্কিন অর্থায়ন কমবে, না হয় অন্য সদস্যরা তহবিল সরবরাহ বাড়াতে বাধ্য হবে।
ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গ এলেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির প্রসঙ্গ আসে। এবিসি বলছে, ট্রাম্প-পুতিনের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। ট্রাম্প এটা স্বীকারও করেছেন। তবে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে সিএনএনকে ২০২৩ সালের মে মাসে ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন, ‘যুদ্ধে রুশ-ইউক্রেনীয়—সবাই মরছে। এই মৃত্যু বন্ধ করতে চাই। আমি এটা করব। এটা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে করতে পারব।’ এ জন্য পুতিন ও জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে বসার ঘোষণাও দিয়েছিলেন তিনি।
বিবিসির বিশ্লেষণ বলছে, গত মে মাসে ট্রাম্পের সাবেক দুই নিরাপত্তা উপদেষ্টা এক গবেষণা প্রবন্ধে লিখেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে ইউক্রেনকে অস্ত্র দেওয়া। তবে একই সঙ্গে জেলেনস্কি যাতে পুতিনের সঙ্গে শান্তি আলোচনায় বসেন, সেটাও নিশ্চিত করা উচিত।
গাজার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত
২০১৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর ট্রাম্প জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। আব্রাহাম অ্যাকর্ড বাস্তবায়ন করে মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিক করা হয়েছিল। বিবিসি বলছে, এর মধ্য দিয়ে তিনি খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সমর্থন পেয়েছেন। তবে ফিলিস্তিনের কোনো সুবিধা হয়নি। ফিলিস্তিনিরা ট্রাম্পকে বর্জন করেছিল। এদিকে বাইডেনের ইসরায়েল নীতির কারণে ফিলিস্তিনিদের পরিণতি হয়েছে আরও ভয়ংকর। যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রে মারা পড়েছে তারা। ফলে ট্রাম্প কিংবা বাইডেন—কেউই ফিলিস্তিনিদের ভাগ্যবদলের পথে হাঁটেননি।
এবার ট্রাম্প যুদ্ধ থামানোর কথা বলছেন। নির্বাচনের আগে তিনি দাবি করেছেন, তিনি ক্ষমতায় থাকলে হামাস ইসরায়েলে আক্রমণ করত না। কারণ, তিনি ইরানের ওপর আরও চাপ দিতেন। ধারণা করা হচ্ছে, এবার তিনি তা-ই করবেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম পলিটিকোর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ইরানের ওপর চাপ প্রয়োগ করলে তা যুদ্ধে আরও বেশি প্রভাব ফেলবে। এতে যুদ্ধ আরও তীব্র হতে পারে।
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হোয়াইট হাউসের ইতিহাসে ইসরায়েলের সবচেয়ে ভালো বন্ধু ট্রাম্প। তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, ট্রাম্পের আমলে তিনি আসলে সবই করতে পারবেন। তবে বিবিসি বলছে, ট্রাম্পের এমন নীতির কারণে মধ্যপ্রাচ্য আরও অস্থিতিশীল হতে পারে।
জলবায়ু তহবিলে বাজে প্রভাব
ট্রাম্প সব সময় জলবায়ু পরিবর্তনকে অগ্রাহ্য করেছেন। এ নিয়ে প্রচারকে ‘মিথ্যা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন বিভিন্ন সময়। তাঁর আমলে ঐতিহাসিক প্যারিস চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এবারের নির্বাচনী প্রচারেও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে তিনি একই কথা বলেছেন। তিনি প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন, ক্ষমতায় গেলে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে করা আইন বাতিল করবেন।
ইউরোপ-চীনের স্বস্তি-অস্বস্তি
যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে কাছের মিত্র ইউরোপ। ট্রাম্পের আগের আমল পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, বিভিন্ন ইস্যুতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ঠোকাঠুকি লেগে ছিল তাঁর প্রশাসনের। একসময় ন্যাটোর ভবিষ্যৎ নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এবারও সেই শঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া ইউরোপীয় পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। ফলে ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন দেখা দেওয়ার শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের এই সময়ের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী বিবেচনা করা হয় চীনকে। বাইডেন প্রশাসন চীনের সঙ্গে সম্পর্ক জটিলতর করেছে। এর জেরে তাইওয়ানের ওপর দিয়ে মহড়াও চালিয়েছে চীন। এখন তাইওয়ান ইস্যুতে চীন হয়তো খানিকটা স্বস্তি পাবে। তাইওয়ান ইস্যুতে মার্কিন বাহিনীকে ব্যবহার করে চীনকে হুমকি না দেওয়ার কথা বলেছেন ট্রাম্প। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘চীনের সি চিন পিং আমাকে সম্মান করেন এবং তিনি জানেন, আমি পাগলাটে।’
রয়টার্স বলছে, তবে চীনের জন্য দুঃসংবাদ হবে শুল্ক। এই শুল্কযুদ্ধ এর আগেও দেখেছে বিশ্ব। ট্রাম্প আবারও বাণিজ্যযুদ্ধের সেই পথে হাঁটার ঘোষণা দিয়েছেন।
বাণিজ্যে ভারতে অস্বস্তি
বাইডেন সরকারকে নিয়ে খানিকটা অস্বস্তিতে ছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার। রাশিয়াকে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহের অভিযোগে সম্প্রতি ভারতের ১৯ প্রতিষ্ঠান ও দুই ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। এদিকে মোদি-ট্রাম্পের বন্ধুত্বের নজিরও আছে। সেটা ব্যক্তিগত পর্যায়ে কিংবা রাজনৈতিক সম্পর্ক খানিকটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ার আভাস পেতেই গতকাল তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন মোদি। তবে বাণিজ্য ইস্যুতে ভারতের জন্য খুব বেশি সুখবর নেই। ‘সবার আগে আমেরিকা’ নীতির কারণে অন্যান্য দেশের মতো ভারতীয় পণ্যেও শুল্ক বাড়বে। খোদ ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভিও এ নিয়ে শঙ্কা জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমবাজারে ভারতীয়দের সুবিধাও কমে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে গণমাধ্যমটি।
তুলসী গ্যাবার্ডকে মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান হিসেবে বেছে নিয়েছেন সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিবিসি এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে। তুলসী গ্যাবার্ড কে? নিয়োগ পেলে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হওয়া প্রথম হিন্দু নারী। সাবেক এই মার্কিন সেনা একসময় রাজনীতি করেছ
৮ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এক দিন পর থেকেই আভাস পাওয়া যাচ্ছিল, এবার মার্কিন আইনসভা কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণও যাচ্ছে রিপাবলিকানদের হাতে। শেষমেশ তা-ই হলো। গত বুধবার মার্কিন গণমাধ্যমগুলো নিশ্চিত করেছে, এই হাউসের নিয়ন্ত্রণও পেল নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের
৯ ঘণ্টা আগেহিজাব আইন অমান্যকারীদের মানসিক রোগী হিসেবে বিবেচনার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। এমন নারীদের জন্য ‘মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্র’ চালুর ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার। ইরানের নারী ও পরিবার বিভাগের নীতি ও অনৈতিকতা প্রতিরোধ দপ্তরের প্রধান মেহরি তালেবি দারেস্তানি গত মঙ্গলবার এ ঘোষণা দেন।
১১ ঘণ্টা আগেজনগণের ভোটাধিকার হরণ, অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার ও সংবিধানের ২৬তম সংশোধনী পাসের প্রতিবাদে ২৪ নভেম্বর (বুধবার) দেশব্যাপী ‘চূড়ান্ত’ বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন কারান্তরীণ পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) তাঁর মুক্তি ও নির্বাচনে কথিত কারচুপির বিরুদ্ধে বিক্ষ
১৩ ঘণ্টা আগে