অনলাইন ডেস্ক
আগে থেকে বলে না দিয়ে এটিকে নির্ঘাত একটি বানোয়াট থ্রিলার গল্প বলেই মনে হবে। কিন্তু এটি সত্য। এটি এমন এক লোকের গল্প যার হৃদয়ে কিশোর বয়সেই গেঁথে গিয়েছিল উগ্রবাদ, তিনি বোমা তৈরিতে ছিলেন সিদ্ধহস্ত, চৌকস অস্ত্র ব্যবসায়ী, গোপন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সহায়তাকারী। কোনো এক নিকষ কালো রাতে নিখোঁজ হওয়ার আগে টানা দুই দশক পশ্চিমের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের ঘুম হারাম করেছিলেন তিনি। মাঝ ভূমধ্যসাগরে এক জাহাজ থেকে মাঝরাতে উধাও হয়ে যান তিনি। এটি এখনো এক অমীমাংসিত রহস্য।
১৯৭০ এবং ১৯৮০–এর দশককে অনেকে বলেন ‘সন্ত্রাসবাদের স্বর্ণযুগ’। এই সময়টাতে পশ্চিমা নিরাপত্তা সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সহিংস চরমপন্থীদের মধ্যে চলছিল ছায়াযুদ্ধ। এর মধ্যে সবচেয়ে রহস্যময় ব্যক্তিত্ব ছিলেন ব্রুনো ব্রেগেট। এই ব্যক্তিই বলতে গেলে ওই সময়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেন। নতুন একটি বইয়ে সে গল্পই উঠে এসেছে।
ব্রেগেট ১৯৯৫ সালে নিখোঁজ হওয়ার পরবর্তী বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। সিআইএর এজেন্ট হয়ে হাজার হাজার ডলার কামিয়েছেন। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কাজ করেছেন ফরাসি গোয়েন্দা বাহিনীর হয়েও।
বিস্তারিত গল্পটি বলার আগে ব্রুনো ব্রেগেটের পরিচয় দেওয়া যাক। ব্রুনোই প্রথম কোনো ইউরোপীয় যিনি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ইউরোপে তাঁকে স্রেফ ভয়ংকর সন্ত্রাসী হিসেবেই দেখা হয়। সন্ত্রাসের দায়ে ফ্রান্স এবং ইসরায়েলে তিনি দুবার দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তবে ১৯৯৫ সালে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান।
সুইস ইতিহাসবিদ এবং রাজনৈতিক সহিংসতা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আদ্রিয়ান হ্যানি বহু বছর ধরে ব্রেগেটের অজানা তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করছেন। বিপুল পরিমাণ গোপন নথি এবং মূল সাক্ষীদের সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে তিনি একটি বই লিখেছেন। আদ্রিয়ান হ্যানি বলছেন, ‘সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় ব্রেগেটের উপস্থিতি রয়েছে। তাঁর গল্প আমাদের সেই সময়ের সহিংসতা এবং চরমপন্থা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেয়। সেই সময় এবং আজকের উভয় ক্ষেত্রেই র্যাডিক্যালাইজেশনের প্রক্রিয়া বুঝতে সাহায্য করে।’
কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী ইলিচ রামিরেজ সানচেজ। তিনি ‘কার্লোস দ্য জ্যাকেল’ নামেই বেশি পরিচিত। সানচেজের সহযোগী ছিলেন ব্রেগেট। নিখোঁজ হওয়ার পর মূলত যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হয়ে কাজ করেছেন। সিআইএর পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি করেছেন। ১৯৯৪ সালে ফরাসি গোয়েন্দাদের হাতে ধরিয়ে দেন তাঁরই এক সময়ের বস কার্লোসকে। এই কাজ করে তিনি প্রচুর অর্থ কামিয়েছিলেন।
ব্রেগেটের মতো ব্যক্তিকে এজেন্ট নিয়োগের ঘটনা সিআইএর নৈতিকতার চর্চা নিয়েও প্রশ্ন তোলার সুযোগ করে দিয়েছে। যেখানে ব্রেগেট সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য ইসরায়েল এবং ফ্রান্সে দুবার দোষী সাব্যস্ত এবং মার্কিন সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত মিউনিখের একটি গণতন্ত্রপন্থী রেডিও স্টেশনে বোমা হামলার জন্য দায়ী বলে অভিযোগ রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সাংবাদিক এবং সিআইএর ইতিহাসের পুরস্কার বিজয়ী লেখক টিম ওয়েইনার বলেন, ‘সিআইএ এসব ক্ষেত্রে খুব কমই নীতি নৈতিকতার ধার ধারে।’
ওয়েইনার দ্য গার্ডিয়ানের অবজারভার ম্যাগাজিনকে বলেন, এজেন্ট শনাক্ত, নিয়োগ ও পরিচালনার জন্য বিদেশে সিআইএর কর্মকর্তারা থাকেন। একাধিক সিআইএ কর্মকর্তা আমাকে বলেছেন: ‘দাতব্য কাজ করতে চান এমন লোক দিয়ে তো আপনি একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের তথ্য পাবেন না!’
ব্রেগেটের বেড়ে ওঠার গল্পটি অন্যরকম। ১৯৫০ সালে ইতালীয়-ভাষী সুইজারল্যান্ডের একটি মনোরম শহরে (আলপাইন) তাঁর জন্ম। ১৯৬০–এর দশকের শেষের দিকে উগ্রবাদের প্রভাব তাঁর ওপর পড়ে। বিভিন্ন প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিলে যাওয়ার কারণে প্রায়ই স্কুল কামাই করতেন।
১৯৬৭ সালে বলিভিয়ায় নিহত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের আইকন চে গুয়েভারা এবং মাও সেতুং-এর লেখাজোখা পড়তেন নিয়মিত। পশ্চিমের অন্য তরুণদের মতো, ভিয়েতনাম যুদ্ধ তাঁকেও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের (পিএফএলপি) মতো দলগুলোকে বিশ্ব সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের অগ্রদূত হিসেবে দেখতেন তিনি।
১৯৬৮ সালে আন্তর্জাতিক বিমানে একের পর এক আক্রমণ শুরু করে পিএফএলপি। এই সময় এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। ১৯৬৯ সালে জুরিখ বিমানবন্দরে একটি ইসরায়েলি যাত্রীবাহী জেট ধ্বংস চেষ্টার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এই গ্রুপের তিন সদস্যের বিচার শুরু হয়। বলতে গেলে ব্রেগেটের চরমপন্থার দিকে যাত্রার এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।
কিছুদিন পরে ব্রেগেট সুইজারল্যান্ডে আরব সংগঠনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে পিএফএলপিতে যোগদানের আগ্রহের কথা জানান। এরপর প্রশিক্ষণের জন্য লেবাননে যান। কিন্তু তাঁর প্রথম মিশনই ব্যর্থ হয়। ১৯৭০ সালের জুনে হাইফা বন্দরে তাঁকে বিস্ফোরকসহ আটক করা হয়। তেল আবিবের একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁর।
১৫ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার পর, ব্রেগেট পরবর্তী সাত বছর কারাগারেই কাটিয়েছেন। সহযোগিতার শর্তে দণ্ড কমানোর প্রস্তাব দিলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু এরপরে জ্যঁ পল সার্ত্রে এবং গুন্টার গ্রাসসহ পশ্চিমা বামপন্থী চিন্তাবিদ, লেখক এবং কর্মীদের দাবির মুখে ব্রেগেটকে ক্ষমা করা হয়।
হ্যানি বলেন, ‘এটা খুব আশ্চর্যের ব্যাপার যে, তিনি তখনো এতটা একগুঁয়ে ছিলেন। কারণ ২৫ বছর পরে তিনিই বিশ্বাসঘাতকতা করে সিআইএর সঙ্গে হাত মেলান। অথচ ওই সময় পিএফএলপির প্রতি সম্পূর্ণ অনুগত ছিলেন। এতে বোঝা যায়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছেন।’
১৯৭৭ সালে ব্রেগেট একটি বই প্রকাশ করেন। কিন্তু শিগগিরই আবার গোপন অপারেশনে ফিরে যান। কার্লোস দ্য জ্যাকেলের আহ্বানে সাড়া দিয়ে একাধিক বড় আক্রমণ এবং গোলাগুলির ঘটনায় নাম উঠে আসার পর রীতিমতো আন্তর্জাতিক সেলিব্রিটিতে পরিণত হন ব্রেগেট।
এর চার বছর পর ব্রেগেট রেডিও ফ্রি ইউরোপের অফিসে বোমা হামলা করেন। গণতন্ত্রপন্থী এই নেটওয়ার্ক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী স্নায়ুযুদ্ধের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। হামলায় ছয়জন আহত এবং স্টেশনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। রোমানিয়ার তৎকালীন স্বৈরশাসক নিকোলাই কৌসেস্কুর গুপ্তচর বাহিনীর সহায়তায় এ হামলা পরিচালিত হয়। কার্লোস দ্য জ্যাকেল এবং তাঁর নতুন সংগঠনকে ঘাঁটি, অস্ত্র এবং পাসপোর্ট সরবরাহ করেছিল কৌসেস্কুর গুপ্তচর বাহিনী।
এরপর আরও খারাপ সময় আসতে থাকে। কার্লোস তাঁর তরুণ জার্মান গার্লফ্রেন্ডকে ব্রেগেটের সঙ্গে প্যারিস দূতাবাসে বোমা হামলার জন্য পাঠান। ধনী উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে নিরাপত্তার নামে চাঁদাবাজি ছিল উদ্দেশ্য। শ্যাম্পস এলিসির কাছে গাড়িতে বিস্ফোরকসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তাঁরা। তাঁদের কারাগারে পাঠানো হলে মুক্ত করার জন্য কার্লোস আক্রমণ চালান। এতে ১১ জন নিহত এবং বহুজন আহত হন।
১৯৮৫ সালে মুক্তির পর ব্রেগেট কার্লোসের হয়ে কাজ চালিয়ে যান। অন্যান্য চরমপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বা অস্ত্র চুক্তির মধ্যস্থতা করতে পশ্চিম ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণ করেন।
হ্যানির বইয়ে বলা হচ্ছে, এই সময়েই ব্রেগেট একদিন সুইজারল্যান্ডের বার্নে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন এবং সিআইএর হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করার প্রস্তাব দেন।
হ্যানি বইয়ে লিখেছেন, ‘তাঁর (ব্রেগেট) টাকার দরকার ছিল। একটা স্থিতিশীল আয়ের উৎস খুঁজছিলেন। জীবনে স্থিতিশীলতা চেয়েছিলেন। সংগঠনের মধ্যে নিজের অবস্থান এবং তাঁর সঙ্গে আচরণ—এসব নিয়ে তিনি ভাবিত ছিলেন। এ ছাড়া, ১৯৯১ সালের শেষ বসন্তে কার্লোস তাঁর সংগঠনকে সারা বিশ্বে প্রসারিত করছিলেন। ফলে বিচ্ছিন্নতাও বাড়ছিল। অনেক দেরি করে ফেলার আগেই এখান থেকে বেরোতে চেয়েছিলেন ব্রেগেট।’
ব্রেগেটকে এজেন্ট নিয়োগ করার ব্যাপারে সিআইএর ভেতর থেকে কোনো বাধা ছিল—নথিপত্রে এমন কোনো প্রমাণ নেই। হ্যানি বলেন, ১৯৯০–এর দশকের গোড়ার দিকে সিআইএ চাপের মধ্যে ছিল। তারা একটি নতুন মিশনে নেমেছিল: ব্রেগেটের পুরোনো সশস্ত্র কমরেডদের কীভাবে ঠেকানো যায়।
ওয়েইনার বলেন, ‘সোভিয়েত সাম্রাজ্যের পতন সিআইএর প্রতি ডাইনোসরের ওপর উল্কাপাতের মতো প্রভাব ফেলেছিল। অনেকে বলাবলি শুরু করেছিলেন: তাহলে আর সিআইএ রেখে লাভ কী? এবং উত্তরটি ছিল: এটি (সিআইএর কাজ) সন্ত্রাসবাদ, মাদক বিরোধী অভিযান… ভালুক (রাশিয়া) মারা গেছে কিন্তু সেখানে তো একটি জঙ্গল রয়ে গেছে যা সাপে পূর্ণ!
ব্রেগেটের প্রস্তাব সিআইএ লুফে নেয়। তাকে মাসিক ৩ হাজার ডলার চুক্তিতে কাজ দেয়। তাঁকে একটি কোড নাম দেওয়া হয়— FDBONUS/1। হোটেলে কয়েক সপ্তাহব্যাপী বৈঠকের পর, ব্রেগেট সিআইএকে কার্লোস দ্য জ্যাকেল এবং তাঁর সংগঠনের পাশাপাশি অনেক চরম বামপন্থী গোষ্ঠী সম্পর্কে প্রচুর তথ্য দেন।
পরবর্তী চার বছর ব্রেগেট সিআইএকে অনেক তথ্য সরবরাহ করেছেন বলেই ধরে নেওয়া যায়। সম্ভবত পরোক্ষভাবে ফরাসি গোয়েন্দা অভিযানের মূল উপাদানগুলো তিনিই সরবরাহ করেছিলেন। ১৯৯৪ সালে খার্তুমের একটি ক্লিনিক থেকে কার্লোসকে আটকের পেছনে তাঁর দেওয়া তথ্যগুলোই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
ব্রেগেটের রহস্য অবশ্য অমীমাংসিতই রয়ে গেছে। ১৯৯৫ সালে চরমপন্থী থেকে সিআইএ এজেন্টে রূপান্তরিত ব্রেগেট গ্রিস থেকে ইতালিমুখী একটি ফেরিতে ওঠেন। এরপর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তিনি কি আত্মহত্যা করেছেন? তাঁকে কি খুন করা হয়েছিল? নাকি তিনি কোনো মিথ্যা পরিচয়ে নতুন জীবন শুরু করেছিলেন?
ইতিহাসবিদ হ্যানি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এটি (পক্ষ পরিবর্তন) তাঁর অনেক শত্রুর মধ্যে একটি ছিল। আমি বিশ্বাস করি না যে তিনি এখনো বেঁচে আছেন, যদিও এটি অসম্ভবও নয়। তাঁর জীবন ছিল একটি অসাধারণ একান্ত ব্যক্তিগত অভিযাত্রা … কিন্তু আমি মনে করি, এটি তখনই শেষ হয়ে গেছে (যখন তিনি ফেরিতে পা রেখেছিলেন)।’
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জাহাঙ্গীর আলম
আগে থেকে বলে না দিয়ে এটিকে নির্ঘাত একটি বানোয়াট থ্রিলার গল্প বলেই মনে হবে। কিন্তু এটি সত্য। এটি এমন এক লোকের গল্প যার হৃদয়ে কিশোর বয়সেই গেঁথে গিয়েছিল উগ্রবাদ, তিনি বোমা তৈরিতে ছিলেন সিদ্ধহস্ত, চৌকস অস্ত্র ব্যবসায়ী, গোপন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সহায়তাকারী। কোনো এক নিকষ কালো রাতে নিখোঁজ হওয়ার আগে টানা দুই দশক পশ্চিমের নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের ঘুম হারাম করেছিলেন তিনি। মাঝ ভূমধ্যসাগরে এক জাহাজ থেকে মাঝরাতে উধাও হয়ে যান তিনি। এটি এখনো এক অমীমাংসিত রহস্য।
১৯৭০ এবং ১৯৮০–এর দশককে অনেকে বলেন ‘সন্ত্রাসবাদের স্বর্ণযুগ’। এই সময়টাতে পশ্চিমা নিরাপত্তা সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক সহিংস চরমপন্থীদের মধ্যে চলছিল ছায়াযুদ্ধ। এর মধ্যে সবচেয়ে রহস্যময় ব্যক্তিত্ব ছিলেন ব্রুনো ব্রেগেট। এই ব্যক্তিই বলতে গেলে ওই সময়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেন। নতুন একটি বইয়ে সে গল্পই উঠে এসেছে।
ব্রেগেট ১৯৯৫ সালে নিখোঁজ হওয়ার পরবর্তী বছরগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন। সিআইএর এজেন্ট হয়ে হাজার হাজার ডলার কামিয়েছেন। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কাজ করেছেন ফরাসি গোয়েন্দা বাহিনীর হয়েও।
বিস্তারিত গল্পটি বলার আগে ব্রুনো ব্রেগেটের পরিচয় দেওয়া যাক। ব্রুনোই প্রথম কোনো ইউরোপীয় যিনি ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ইউরোপে তাঁকে স্রেফ ভয়ংকর সন্ত্রাসী হিসেবেই দেখা হয়। সন্ত্রাসের দায়ে ফ্রান্স এবং ইসরায়েলে তিনি দুবার দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তবে ১৯৯৫ সালে হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান।
সুইস ইতিহাসবিদ এবং রাজনৈতিক সহিংসতা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ আদ্রিয়ান হ্যানি বহু বছর ধরে ব্রেগেটের অজানা তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করছেন। বিপুল পরিমাণ গোপন নথি এবং মূল সাক্ষীদের সাক্ষাৎকারের ওপর ভিত্তি করে তিনি একটি বই লিখেছেন। আদ্রিয়ান হ্যানি বলছেন, ‘সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনায় ব্রেগেটের উপস্থিতি রয়েছে। তাঁর গল্প আমাদের সেই সময়ের সহিংসতা এবং চরমপন্থা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেয়। সেই সময় এবং আজকের উভয় ক্ষেত্রেই র্যাডিক্যালাইজেশনের প্রক্রিয়া বুঝতে সাহায্য করে।’
কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী ইলিচ রামিরেজ সানচেজ। তিনি ‘কার্লোস দ্য জ্যাকেল’ নামেই বেশি পরিচিত। সানচেজের সহযোগী ছিলেন ব্রেগেট। নিখোঁজ হওয়ার পর মূলত যুক্তরাষ্ট্র সরকারের হয়ে কাজ করেছেন। সিআইএর পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি করেছেন। ১৯৯৪ সালে ফরাসি গোয়েন্দাদের হাতে ধরিয়ে দেন তাঁরই এক সময়ের বস কার্লোসকে। এই কাজ করে তিনি প্রচুর অর্থ কামিয়েছিলেন।
ব্রেগেটের মতো ব্যক্তিকে এজেন্ট নিয়োগের ঘটনা সিআইএর নৈতিকতার চর্চা নিয়েও প্রশ্ন তোলার সুযোগ করে দিয়েছে। যেখানে ব্রেগেট সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য ইসরায়েল এবং ফ্রান্সে দুবার দোষী সাব্যস্ত এবং মার্কিন সরকারের অর্থায়নে পরিচালিত মিউনিখের একটি গণতন্ত্রপন্থী রেডিও স্টেশনে বোমা হামলার জন্য দায়ী বলে অভিযোগ রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সাংবাদিক এবং সিআইএর ইতিহাসের পুরস্কার বিজয়ী লেখক টিম ওয়েইনার বলেন, ‘সিআইএ এসব ক্ষেত্রে খুব কমই নীতি নৈতিকতার ধার ধারে।’
ওয়েইনার দ্য গার্ডিয়ানের অবজারভার ম্যাগাজিনকে বলেন, এজেন্ট শনাক্ত, নিয়োগ ও পরিচালনার জন্য বিদেশে সিআইএর কর্মকর্তারা থাকেন। একাধিক সিআইএ কর্মকর্তা আমাকে বলেছেন: ‘দাতব্য কাজ করতে চান এমন লোক দিয়ে তো আপনি একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের তথ্য পাবেন না!’
ব্রেগেটের বেড়ে ওঠার গল্পটি অন্যরকম। ১৯৫০ সালে ইতালীয়-ভাষী সুইজারল্যান্ডের একটি মনোরম শহরে (আলপাইন) তাঁর জন্ম। ১৯৬০–এর দশকের শেষের দিকে উগ্রবাদের প্রভাব তাঁর ওপর পড়ে। বিভিন্ন প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিলে যাওয়ার কারণে প্রায়ই স্কুল কামাই করতেন।
১৯৬৭ সালে বলিভিয়ায় নিহত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের আইকন চে গুয়েভারা এবং মাও সেতুং-এর লেখাজোখা পড়তেন নিয়মিত। পশ্চিমের অন্য তরুণদের মতো, ভিয়েতনাম যুদ্ধ তাঁকেও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের (পিএফএলপি) মতো দলগুলোকে বিশ্ব সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের অগ্রদূত হিসেবে দেখতেন তিনি।
১৯৬৮ সালে আন্তর্জাতিক বিমানে একের পর এক আক্রমণ শুরু করে পিএফএলপি। এই সময় এ নিয়ে বিশ্বব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়। ১৯৬৯ সালে জুরিখ বিমানবন্দরে একটি ইসরায়েলি যাত্রীবাহী জেট ধ্বংস চেষ্টার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে এই গ্রুপের তিন সদস্যের বিচার শুরু হয়। বলতে গেলে ব্রেগেটের চরমপন্থার দিকে যাত্রার এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।
কিছুদিন পরে ব্রেগেট সুইজারল্যান্ডে আরব সংগঠনগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে পিএফএলপিতে যোগদানের আগ্রহের কথা জানান। এরপর প্রশিক্ষণের জন্য লেবাননে যান। কিন্তু তাঁর প্রথম মিশনই ব্যর্থ হয়। ১৯৭০ সালের জুনে হাইফা বন্দরে তাঁকে বিস্ফোরকসহ আটক করা হয়। তেল আবিবের একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁর।
১৫ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার পর, ব্রেগেট পরবর্তী সাত বছর কারাগারেই কাটিয়েছেন। সহযোগিতার শর্তে দণ্ড কমানোর প্রস্তাব দিলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু এরপরে জ্যঁ পল সার্ত্রে এবং গুন্টার গ্রাসসহ পশ্চিমা বামপন্থী চিন্তাবিদ, লেখক এবং কর্মীদের দাবির মুখে ব্রেগেটকে ক্ষমা করা হয়।
হ্যানি বলেন, ‘এটা খুব আশ্চর্যের ব্যাপার যে, তিনি তখনো এতটা একগুঁয়ে ছিলেন। কারণ ২৫ বছর পরে তিনিই বিশ্বাসঘাতকতা করে সিআইএর সঙ্গে হাত মেলান। অথচ ওই সময় পিএফএলপির প্রতি সম্পূর্ণ অনুগত ছিলেন। এতে বোঝা যায়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছেন।’
১৯৭৭ সালে ব্রেগেট একটি বই প্রকাশ করেন। কিন্তু শিগগিরই আবার গোপন অপারেশনে ফিরে যান। কার্লোস দ্য জ্যাকেলের আহ্বানে সাড়া দিয়ে একাধিক বড় আক্রমণ এবং গোলাগুলির ঘটনায় নাম উঠে আসার পর রীতিমতো আন্তর্জাতিক সেলিব্রিটিতে পরিণত হন ব্রেগেট।
এর চার বছর পর ব্রেগেট রেডিও ফ্রি ইউরোপের অফিসে বোমা হামলা করেন। গণতন্ত্রপন্থী এই নেটওয়ার্ক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী স্নায়ুযুদ্ধের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। হামলায় ছয়জন আহত এবং স্টেশনের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। রোমানিয়ার তৎকালীন স্বৈরশাসক নিকোলাই কৌসেস্কুর গুপ্তচর বাহিনীর সহায়তায় এ হামলা পরিচালিত হয়। কার্লোস দ্য জ্যাকেল এবং তাঁর নতুন সংগঠনকে ঘাঁটি, অস্ত্র এবং পাসপোর্ট সরবরাহ করেছিল কৌসেস্কুর গুপ্তচর বাহিনী।
এরপর আরও খারাপ সময় আসতে থাকে। কার্লোস তাঁর তরুণ জার্মান গার্লফ্রেন্ডকে ব্রেগেটের সঙ্গে প্যারিস দূতাবাসে বোমা হামলার জন্য পাঠান। ধনী উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে নিরাপত্তার নামে চাঁদাবাজি ছিল উদ্দেশ্য। শ্যাম্পস এলিসির কাছে গাড়িতে বিস্ফোরকসহ পুলিশের হাতে ধরা পড়েন তাঁরা। তাঁদের কারাগারে পাঠানো হলে মুক্ত করার জন্য কার্লোস আক্রমণ চালান। এতে ১১ জন নিহত এবং বহুজন আহত হন।
১৯৮৫ সালে মুক্তির পর ব্রেগেট কার্লোসের হয়ে কাজ চালিয়ে যান। অন্যান্য চরমপন্থী গোষ্ঠীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বা অস্ত্র চুক্তির মধ্যস্থতা করতে পশ্চিম ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্য ভ্রমণ করেন।
হ্যানির বইয়ে বলা হচ্ছে, এই সময়েই ব্রেগেট একদিন সুইজারল্যান্ডের বার্নে মার্কিন দূতাবাসে প্রবেশ করেন এবং সিআইএর হয়ে গুপ্তচরবৃত্তি করার প্রস্তাব দেন।
হ্যানি বইয়ে লিখেছেন, ‘তাঁর (ব্রেগেট) টাকার দরকার ছিল। একটা স্থিতিশীল আয়ের উৎস খুঁজছিলেন। জীবনে স্থিতিশীলতা চেয়েছিলেন। সংগঠনের মধ্যে নিজের অবস্থান এবং তাঁর সঙ্গে আচরণ—এসব নিয়ে তিনি ভাবিত ছিলেন। এ ছাড়া, ১৯৯১ সালের শেষ বসন্তে কার্লোস তাঁর সংগঠনকে সারা বিশ্বে প্রসারিত করছিলেন। ফলে বিচ্ছিন্নতাও বাড়ছিল। অনেক দেরি করে ফেলার আগেই এখান থেকে বেরোতে চেয়েছিলেন ব্রেগেট।’
ব্রেগেটকে এজেন্ট নিয়োগ করার ব্যাপারে সিআইএর ভেতর থেকে কোনো বাধা ছিল—নথিপত্রে এমন কোনো প্রমাণ নেই। হ্যানি বলেন, ১৯৯০–এর দশকের গোড়ার দিকে সিআইএ চাপের মধ্যে ছিল। তারা একটি নতুন মিশনে নেমেছিল: ব্রেগেটের পুরোনো সশস্ত্র কমরেডদের কীভাবে ঠেকানো যায়।
ওয়েইনার বলেন, ‘সোভিয়েত সাম্রাজ্যের পতন সিআইএর প্রতি ডাইনোসরের ওপর উল্কাপাতের মতো প্রভাব ফেলেছিল। অনেকে বলাবলি শুরু করেছিলেন: তাহলে আর সিআইএ রেখে লাভ কী? এবং উত্তরটি ছিল: এটি (সিআইএর কাজ) সন্ত্রাসবাদ, মাদক বিরোধী অভিযান… ভালুক (রাশিয়া) মারা গেছে কিন্তু সেখানে তো একটি জঙ্গল রয়ে গেছে যা সাপে পূর্ণ!
ব্রেগেটের প্রস্তাব সিআইএ লুফে নেয়। তাকে মাসিক ৩ হাজার ডলার চুক্তিতে কাজ দেয়। তাঁকে একটি কোড নাম দেওয়া হয়— FDBONUS/1। হোটেলে কয়েক সপ্তাহব্যাপী বৈঠকের পর, ব্রেগেট সিআইএকে কার্লোস দ্য জ্যাকেল এবং তাঁর সংগঠনের পাশাপাশি অনেক চরম বামপন্থী গোষ্ঠী সম্পর্কে প্রচুর তথ্য দেন।
পরবর্তী চার বছর ব্রেগেট সিআইএকে অনেক তথ্য সরবরাহ করেছেন বলেই ধরে নেওয়া যায়। সম্ভবত পরোক্ষভাবে ফরাসি গোয়েন্দা অভিযানের মূল উপাদানগুলো তিনিই সরবরাহ করেছিলেন। ১৯৯৪ সালে খার্তুমের একটি ক্লিনিক থেকে কার্লোসকে আটকের পেছনে তাঁর দেওয়া তথ্যগুলোই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
ব্রেগেটের রহস্য অবশ্য অমীমাংসিতই রয়ে গেছে। ১৯৯৫ সালে চরমপন্থী থেকে সিআইএ এজেন্টে রূপান্তরিত ব্রেগেট গ্রিস থেকে ইতালিমুখী একটি ফেরিতে ওঠেন। এরপর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তিনি কি আত্মহত্যা করেছেন? তাঁকে কি খুন করা হয়েছিল? নাকি তিনি কোনো মিথ্যা পরিচয়ে নতুন জীবন শুরু করেছিলেন?
ইতিহাসবিদ হ্যানি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, এটি (পক্ষ পরিবর্তন) তাঁর অনেক শত্রুর মধ্যে একটি ছিল। আমি বিশ্বাস করি না যে তিনি এখনো বেঁচে আছেন, যদিও এটি অসম্ভবও নয়। তাঁর জীবন ছিল একটি অসাধারণ একান্ত ব্যক্তিগত অভিযাত্রা … কিন্তু আমি মনে করি, এটি তখনই শেষ হয়ে গেছে (যখন তিনি ফেরিতে পা রেখেছিলেন)।’
দ্য গার্ডিয়ান থেকে অনুবাদ করেছেন জাহাঙ্গীর আলম
স্বাধীনতা যুদ্ধের পর এই প্রথম কোনো পাকিস্তানি মালবাহী জাহাজ বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়েছে। গতকাল বুধবার পাকিস্তানের করাচি থেকে ছেড়ে আসা জাহাজটি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে ভেড়ে। নানা কারণেই পাকিস্তানি মালবাহী জাহাজটির বাংলাদেশের বন্দরে ভেড়ার বিষয়টিকে ঐতিহাসিক বলা হচ্ছে। আর এই ঐতিহাসিক বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্
১৯ মিনিট আগেতুলসী গ্যাবার্ডকে মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান হিসেবে বেছে নিয়েছেন সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিবিসি এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে। তুলসী গ্যাবার্ড কে? নিয়োগ পেলে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে জাতীয় গোয়েন্দা পরিচালক হওয়া প্রথম হিন্দু নারী। সাবেক এই মার্কিন সেনা একসময় রাজনীতি করেছ
৯ ঘণ্টা আগেযুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের এক দিন পর থেকেই আভাস পাওয়া যাচ্ছিল, এবার মার্কিন আইনসভা কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের নিয়ন্ত্রণও যাচ্ছে রিপাবলিকানদের হাতে। শেষমেশ তা-ই হলো। গত বুধবার মার্কিন গণমাধ্যমগুলো নিশ্চিত করেছে, এই হাউসের নিয়ন্ত্রণও পেল নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের
৯ ঘণ্টা আগেহিজাব আইন অমান্যকারীদের মানসিক রোগী হিসেবে বিবেচনার ঘোষণা দিয়েছে ইরান। এমন নারীদের জন্য ‘মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্র’ চালুর ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার। ইরানের নারী ও পরিবার বিভাগের নীতি ও অনৈতিকতা প্রতিরোধ দপ্তরের প্রধান মেহরি তালেবি দারেস্তানি গত মঙ্গলবার এ ঘোষণা দেন।
১১ ঘণ্টা আগে