ফিলিস্তিনের গাজায় হামলার ক্ষেত্রে কারও কথাই শুনছেন না ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে সম্প্রতি ত্রাণকর্মীদের ওপর হামলার পর থেকে আন্তর্জাতিক মহলের চাপের মুখে পড়েছেন তিনি। অবশেষে গাজায় আরও বেশি মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর সুযোগ করে দিতে নতুন দুটি পথ খোলার ঘোষণা দিয়েছে ইসরায়েল।

গত সোমবার গাজার দেইর আল-বালাহ এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দাতব্য সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিউসিকে) ত্রাণকর্মীদের ওপর বিমান হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। এতে প্রাণ যায় সাতজনের। এরপর থেকেই পশ্চিমা বিশ্বের কড়া সমালোচনার মুখে পড়ে ইসরায়েল। এই হামলার পর নেতানিয়াহু বলেছেন, এ ঘটনা ভুলবশত হয়েছে। তবে এরপর থামেনি আন্তর্জাতিক মহল। কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ এ ঘটনার তদন্ত দাবি করেছে। হামলার পর ইসরায়েল বাধ্য হয়ে কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করেছে। তবে ডব্লিউসিকের প্রতিষ্ঠাতা জোসে আন্দ্রেজ বলেছেন, এর নিরপেক্ষ তদন্তও চেয়েছেন তিনি।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, এ পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার নেতানিয়াহুর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই ফোনালাপে গাজায় ত্রাণকর্মী ও বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা দিতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য নেতানিয়াহুকে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

হোয়াইট হাউস বলেছে, বাইডেন ও নেতানিয়াহুর মধ্যে টেলিফোনে ৩০ মিনিট আলোচনা হয়েছে। বাইডেন নেতানিয়াহুকে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষিত রাখতে, মানুষের কষ্ট কমাতে ও ত্রাণকর্মীদের নিরাপত্তার জন্য ইসরায়েলকে বিশেষ, সুনির্দিষ্ট ও পরিমিত পদক্ষেপ ঘোষণা করতে হবে। এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করতে হবে। হোয়াইট হাউস আরও বলেছে, ইসরায়েল এসব ক্ষেত্রে কতটা পদক্ষেপ নিয়েছে, তার ওপর মার্কিন নীতি নির্ভর করছে।

এদিকে নেতানিয়াহুকে আলটিমেটাম দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের জন্য নতুন দুটি পথ খোলার ঘোষণা দেয় ইসরায়েল। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রথমবারের মতো গাজার উত্তরাঞ্চলের ইরেজ গেট সাময়িকভাবে খুলে দেওয়া হবে। আশদোদ বন্দরও খুলে দেওয়া হবে। এ ছাড়া কেরেম শালোম ক্রসিং দিয়ে জর্ডান থেকে আরও বেশি ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।

ধারণা করা হচ্ছে, ফোনালাপে করিডরগুলো পুনরায় খোলার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেছেন বাইডেন। মূলত ইসরায়েল সরকারকে আলটিমেটাম দিয়ে বাইডেন বলেছেন, বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি রোধে এবং ত্রাণকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দৃঢ় পদক্ষেপ নিন, না হয় গাজা সম্পর্কে মার্কিন নীতি পরিবর্তন হবে।

বার্তা সংস্থা এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জার্মানি ঘোষণা দিয়েছে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ত্রাণ প্রবেশে ইসরায়েলের কোনো বাধা মানবে না তারা। গতকাল সামাজিক প্ল্যাটফর্ম ফেসবুকে জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানালেনা বেয়ারবক বলেছেন, গাজায় ত্রাণ প্রবেশে ইসরায়েলের আর কোনো অজুহাত শুনবে না জার্মানি।