অনলাইন ডেস্ক
হোয়াইট হাউস থেকে সতর্কতা, জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতের রায় কোনো কিছুই আমলে নিচ্ছে না ইসরায়েল সরকারের উগ্র ডানপন্থী মন্ত্রী–এমপিরা। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুসহ মন্ত্রী–এমপিদের আচরণ ও কথাবার্তায় মনে হচ্ছে, যুদ্ধের পরে গাজায় ইসরায়েলি বসতি নির্মাণ ঠেকানো যাবে না।
ইসরায়েলিদের গাজায় ‘পুনর্বাসনের’ দাবিতে গত রোববার রাতে জেরুজালেমে হাজার হাজার মানুষের একটি সমাবেশ হয়। সেই সমাবেশে হাজির ছিলেন নেতানিয়াহুর ডানপন্থী সরকারের মধ্যে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী। তাঁদের মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন–গভির এবং অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ। তাঁরা সেখানে জ্বালাময়ী বক্তৃতাও দিয়েছেন।
‘সেটেলমেন্ট ব্রিংস সিকিউরিটি’ শীর্ষক ওই সম্মেলনের নেতৃত্বে ছিল ডানপন্থী নাচালা সংগঠন, এরা ফিলিস্তিনের ভূমিতে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণের পক্ষে। যদিও সেটি আন্তর্জাতিক এবং মানবিক সংস্থাগুলো বহু আগেই অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে। সমাবেশটিতে ইসরায়েল সরকারকে গাজা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরের উত্তর অংশে বসতি পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
টানা ৩৮ বছর দখলে রাখার পর ২০০৫ সালে একতরফাভাবে এই অঞ্চল থেকে সরে আসে ইসরায়েল। এরপর গাজায় ইহুদিদের বসতিগুলো ভেঙে ফেলায়। গাজা ছিটমহলটি তখন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়লাভ করার পরে এবং সরকার গঠন নিয়ে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ফাতাহর সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর ২০০৭ সালে গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয় হামাস।
পশ্চিমের চাপে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘স্থায়ীভাবে গাজা দখল করার বা বেসামরিক লোকদের উচ্ছেদ কোনো ইচ্ছা ইসরায়েলের নেই’। তবে ইসরায়েল সরকারের কর্মকর্তাদের এখনকার আচরণে প্রধানমন্ত্রীর সেই অঙ্গীকার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর গাজা উপত্যকার ভবিষ্যৎ কেমন হবে সেটি নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে।
রোববার সম্মেলনস্থলের প্রবেশপথে একটি বিশাল মানচিত্র রাখা ছিল। মানচিত্রে গাজার উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত বসতি স্থাপনের এটি রূপরেখা তুলে ধরা হয়।
নাচালার পরিচালক দানিয়েলা ওয়েইস ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইসরায়েলি বসতি স্থাপন আন্দোলনের একজন সুপরিচিত নেতা। যুক্তরাষ্ট্রের এনবিসি নিউজকে তিনি বলেছেন, মানচিত্রটি এমন একটি ভবিষ্যতের কল্পনা যেখানে ‘সমস্ত (গাজা উপত্যকা ইসরায়েল রাষ্ট্রের একটি অংশ) ইসরায়েলকে দেখানো হয়েছে।’
গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, গাজায় আরবদের এটিই শেষ উপস্থিতি। এটাই তাদের শেষ! তাদের পরিবর্তে, অনেক, অনেক ইহুদি থাকবে সেখানে, যারা বসতিতে ফিরে আসবে, যারা নতুন বসতি তৈরি করবে।
সম্মেলনের মঞ্চে উঠে মন্ত্রী বেন-গভির নেতানিয়াহুকে ‘সাহসী’ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এখন সময় এসেছে গাজায় ইসরায়েলি বসতি গড়ে তোলার এবং ফিলিস্তিনিদের ছিটমহল ছেড়ে যেতে ‘উৎসাহিত’ করার।
অর্থমন্ত্রী স্মোত্রিচ বলেন, এই ঘটনা সম্পর্কে তাঁর ‘মিশ্র আবেগ’ আছে। ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের দিকে মনোনিবেশ করেছে। তবে তিনি মনে করেন, দেশ এখন একটি সন্ধিক্ষণে রয়েছে। সব এক করে ফেলা ছাড়া কোনো নিরাপত্তা নেই!
মন্ত্রীদের এসব বক্তব্যের সময় সামনের হাজার হাজার দর্শক শ্রোতা উল্লাসে ফেটে পড়ে। একপর্যায়ে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী আসন ছেড়ে সামনের সারিতে এসে উল্লাসে যোগ দেন এবং নাচতে থাকেন।
স্মোত্রিচ এবং বেন-গভির ছাড়াও নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির হেরিটেজ মন্ত্রী আমিহাই এলিয়াহু এবং পর্যটনমন্ত্রী হাইম কাৎজসহ আরও বেশ কয়েকজন রাজনীতিক সেই সমাবেশ অংশ নেন।
গত শুক্রবার আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) গাজায় গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে ইসরায়েলকে তার সক্ষমতায় সবকিছু ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়। এই রায় প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল সরকার। আর এরপরই এমন একটি সমাবেশের আয়োজন করল ইসরায়েলিরা।
গত ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের নির্বিচার বোমা হামলায় ২৬ হাজারে বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৬৪ হাজারের বেশি। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের মতে, আরও হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। তাঁরা নিহত হয়েছেন বলেই তাঁরা ধারণা করছেন।
ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র ও প্রবাসী মন্ত্রণালয় এক্স প্ল্যাটফর্মে ইসরায়েলিদের ওই সমাবেশের নিন্দা জানিয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক আদালতের রায়কে ‘স্পষ্ট চ্যালেঞ্জ’ এবং ফিলিস্তিনিদের জোর করে বাস্তুচ্যুত করতে উৎসাহিত করার শামিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ওই মামলার বাদী ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশটির অনুরোধ ছিল এই মুহূর্তে যুদ্ধবিরতির নির্দেশ দেওয়ার। কিন্তু জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতের এমন আদেশ দেওয়ার এখতিয়ার নেই।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ইসরায়েল সরকারের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নানা উসকানিমূলক বক্তব্য দেশটির বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা সেই বিষয়টিতে বারবার জোর দিয়েছে।
এদিকে রোববারের সমাবেশে মন্ত্রী স্মোত্রিচ এবং বেন-গভির আন্তর্জাতিক আদালতের রায়কে অবজ্ঞাসূচক এবং ‘গাজার বাইরে ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনের’ পক্ষে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাইডেন প্রশাসন এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া ‘বন্ধ’ করতে বারবার তাগিদ দিলেও ইসরায়েলি মন্ত্রীরা যে তাতে কর্ণপাত করছে না সেটি সেদিন স্পষ্ট হয়েছে।
স্মোত্রিচ এবং বেন–গভিরের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এই বক্তৃতাটি উসকানিমূলক এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীসহ ইসরায়েল সরকার বারবার এবং ধারাবাহিকভাবে আমাদের বলেছে যে, এ ধরনের বিবৃতি ইসরায়েলি সরকারের নীতিকে প্রতিফলিত করে না।’ মিলার বলেন, স্মোত্রিচ এবং বেন–গভিরকে ‘অবিলম্বে থামাতে হবে’।
ম্যাথিউ মিলার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে স্পষ্ট, ধারাবাহিক এবং দ্ব্যর্থহীন যে, গাজা হলো ফিলিস্তিনি ভূমি এবং এটি ফিলিস্তিনি ভূমিই থাকবে।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে ইসরায়েলি মন্ত্রীদের এই সমাবেশে উপস্থিতির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে।
যুদ্ধের শুরুতে নেতানিয়াহু বাইডেন প্রশাসনের সমর্থন জারি রাখার চেষ্টায় ভারসাম্যমূলক আচরণ করেছে। ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে ডানপন্থী সরকারের প্রধান হয়ে সেটি তিনি কতখানি পারছেন সেটিই এখন প্রশ্নবিদ্ধ। যেখানে ফিলিস্তিনে বসতি স্থাপনকারী চরমপন্থী রাজনীতিকদের ওপর ভর করে নেতানিয়াহু জোট সরকার গঠন করেছেন।
রোববারের সমাবেশে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করলেও সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদন অনুসারে, হিব্রু ইউনিভার্সিটির ডিসেম্বরের শুরুতে পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, অর্ধেকেরও বেশি ইসরায়েলি গাজা উপত্যকা দখল এবং ২০০৫ সালে গাজার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়ার পর সেখানে ভেঙে ফেলা ইহুদি বসতিগুলো পুনর্নির্মাণের বিপক্ষে।
১ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি লোকের এই সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৫৬ শতাংশ ইসরায়েলি বসতি স্থাপন নীতির বিরুদ্ধে, যেখানে ৩৩ শতাংশ পক্ষে রায় দিয়েছেন। আর ১১ শতাংশ এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীন।
মধ্যপন্থী বিরোধী দলীয় নেতা ইয়ার লাপিড এক্স প্ল্যাটফর্মে বলেছেন, রোববার ইসরায়েলি মন্ত্রীদের অংশগ্রহণ নেতানিয়াহু সরকারের জন্য ‘নতুন নীচতার’ প্রতিনিধিত্ব করে।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, এই ঘটনা গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্তির জন্য একটি চুক্তির জন্য সম্ভাব্য আলোচনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। সেই সঙ্গে ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে কারণ ইসরায়েল নিজেই গাজায় আক্রমণের জন্য আন্তর্জাতিক তদন্তের মুখোমুখি হচ্ছে।
রোববারে সমাবেশে মন্ত্রীদের অংশ নেওয়ার ঘটনায় ইসরায়েলের যুদ্ধ মন্ত্রিসভা থেকেও সমালোচনা এসেছে। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও সাবেক মিলিটারি চিফ অব স্টাফ গাদি আইসেনকোত বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারের ওই সমাবেশে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকে এবং বিশেষ করে নির্বাচিত কর্মকর্তারা—ইসরায়েলি সমাজে একটি বিস্তৃত জাতীয় ঐকমত্য এবং সংহতির সঙ্গে পদক্ষেপের গুরুত্ব সম্পর্কে গত বছরের ঘটনাবলি থেকে কিছুই শেখেননি।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণ লক্ষ্যগুলো—জিম্মিদের ফিরে আসা এবং হামাসের পরাজয়—অর্জনের জন্য মৌলিক পার্থক্যগুলোকে একপাশে রেখে এগুলোতে। আর অন্যরা এমন কাজের অবকাশ পান যা ইসরায়েলি সমাজকে বিভক্ত করে, সরকার এবং নির্বাচিতদের প্রতি বিদ্যমান আস্থার সংকট বাড়িয়ে তোলে।’
হোয়াইট হাউস থেকে সতর্কতা, জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতের রায় কোনো কিছুই আমলে নিচ্ছে না ইসরায়েল সরকারের উগ্র ডানপন্থী মন্ত্রী–এমপিরা। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুসহ মন্ত্রী–এমপিদের আচরণ ও কথাবার্তায় মনে হচ্ছে, যুদ্ধের পরে গাজায় ইসরায়েলি বসতি নির্মাণ ঠেকানো যাবে না।
ইসরায়েলিদের গাজায় ‘পুনর্বাসনের’ দাবিতে গত রোববার রাতে জেরুজালেমে হাজার হাজার মানুষের একটি সমাবেশ হয়। সেই সমাবেশে হাজির ছিলেন নেতানিয়াহুর ডানপন্থী সরকারের মধ্যে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী। তাঁদের মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন–গভির এবং অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ। তাঁরা সেখানে জ্বালাময়ী বক্তৃতাও দিয়েছেন।
‘সেটেলমেন্ট ব্রিংস সিকিউরিটি’ শীর্ষক ওই সম্মেলনের নেতৃত্বে ছিল ডানপন্থী নাচালা সংগঠন, এরা ফিলিস্তিনের ভূমিতে ইহুদি বসতি সম্প্রসারণের পক্ষে। যদিও সেটি আন্তর্জাতিক এবং মানবিক সংস্থাগুলো বহু আগেই অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে। সমাবেশটিতে ইসরায়েল সরকারকে গাজা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরের উত্তর অংশে বসতি পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
টানা ৩৮ বছর দখলে রাখার পর ২০০৫ সালে একতরফাভাবে এই অঞ্চল থেকে সরে আসে ইসরায়েল। এরপর গাজায় ইহুদিদের বসতিগুলো ভেঙে ফেলায়। গাজা ছিটমহলটি তখন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে ২০০৬ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়লাভ করার পরে এবং সরকার গঠন নিয়ে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ফাতাহর সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘাতের পর ২০০৭ সালে গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয় হামাস।
পশ্চিমের চাপে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘স্থায়ীভাবে গাজা দখল করার বা বেসামরিক লোকদের উচ্ছেদ কোনো ইচ্ছা ইসরায়েলের নেই’। তবে ইসরায়েল সরকারের কর্মকর্তাদের এখনকার আচরণে প্রধানমন্ত্রীর সেই অঙ্গীকার প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর গাজা উপত্যকার ভবিষ্যৎ কেমন হবে সেটি নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে।
রোববার সম্মেলনস্থলের প্রবেশপথে একটি বিশাল মানচিত্র রাখা ছিল। মানচিত্রে গাজার উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত বসতি স্থাপনের এটি রূপরেখা তুলে ধরা হয়।
নাচালার পরিচালক দানিয়েলা ওয়েইস ফিলিস্তিনি ভূমিতে ইসরায়েলি বসতি স্থাপন আন্দোলনের একজন সুপরিচিত নেতা। যুক্তরাষ্ট্রের এনবিসি নিউজকে তিনি বলেছেন, মানচিত্রটি এমন একটি ভবিষ্যতের কল্পনা যেখানে ‘সমস্ত (গাজা উপত্যকা ইসরায়েল রাষ্ট্রের একটি অংশ) ইসরায়েলকে দেখানো হয়েছে।’
গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার কথা উল্লেখ করেন তিনি বলেন, গাজায় আরবদের এটিই শেষ উপস্থিতি। এটাই তাদের শেষ! তাদের পরিবর্তে, অনেক, অনেক ইহুদি থাকবে সেখানে, যারা বসতিতে ফিরে আসবে, যারা নতুন বসতি তৈরি করবে।
সম্মেলনের মঞ্চে উঠে মন্ত্রী বেন-গভির নেতানিয়াহুকে ‘সাহসী’ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এখন সময় এসেছে গাজায় ইসরায়েলি বসতি গড়ে তোলার এবং ফিলিস্তিনিদের ছিটমহল ছেড়ে যেতে ‘উৎসাহিত’ করার।
অর্থমন্ত্রী স্মোত্রিচ বলেন, এই ঘটনা সম্পর্কে তাঁর ‘মিশ্র আবেগ’ আছে। ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের দিকে মনোনিবেশ করেছে। তবে তিনি মনে করেন, দেশ এখন একটি সন্ধিক্ষণে রয়েছে। সব এক করে ফেলা ছাড়া কোনো নিরাপত্তা নেই!
মন্ত্রীদের এসব বক্তব্যের সময় সামনের হাজার হাজার দর্শক শ্রোতা উল্লাসে ফেটে পড়ে। একপর্যায়ে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী আসন ছেড়ে সামনের সারিতে এসে উল্লাসে যোগ দেন এবং নাচতে থাকেন।
স্মোত্রিচ এবং বেন-গভির ছাড়াও নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির হেরিটেজ মন্ত্রী আমিহাই এলিয়াহু এবং পর্যটনমন্ত্রী হাইম কাৎজসহ আরও বেশ কয়েকজন রাজনীতিক সেই সমাবেশ অংশ নেন।
গত শুক্রবার আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) গাজায় গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে ইসরায়েলকে তার সক্ষমতায় সবকিছু ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়। এই রায় প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল সরকার। আর এরপরই এমন একটি সমাবেশের আয়োজন করল ইসরায়েলিরা।
গত ৭ অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলের নির্বিচার বোমা হামলায় ২৬ হাজারে বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৬৪ হাজারের বেশি। ফিলিস্তিনি কর্মকর্তাদের মতে, আরও হাজার হাজার মানুষ নিখোঁজ রয়েছেন। তাঁরা নিহত হয়েছেন বলেই তাঁরা ধারণা করছেন।
ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র ও প্রবাসী মন্ত্রণালয় এক্স প্ল্যাটফর্মে ইসরায়েলিদের ওই সমাবেশের নিন্দা জানিয়েছে। এটি আন্তর্জাতিক আদালতের রায়কে ‘স্পষ্ট চ্যালেঞ্জ’ এবং ফিলিস্তিনিদের জোর করে বাস্তুচ্যুত করতে উৎসাহিত করার শামিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ওই মামলার বাদী ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশটির অনুরোধ ছিল এই মুহূর্তে যুদ্ধবিরতির নির্দেশ দেওয়ার। কিন্তু জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতের এমন আদেশ দেওয়ার এখতিয়ার নেই।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই ইসরায়েল সরকারের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নানা উসকানিমূলক বক্তব্য দেশটির বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা সেই বিষয়টিতে বারবার জোর দিয়েছে।
এদিকে রোববারের সমাবেশে মন্ত্রী স্মোত্রিচ এবং বেন-গভির আন্তর্জাতিক আদালতের রায়কে অবজ্ঞাসূচক এবং ‘গাজার বাইরে ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনের’ পক্ষে যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বাইডেন প্রশাসন এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া ‘বন্ধ’ করতে বারবার তাগিদ দিলেও ইসরায়েলি মন্ত্রীরা যে তাতে কর্ণপাত করছে না সেটি সেদিন স্পষ্ট হয়েছে।
স্মোত্রিচ এবং বেন–গভিরের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এই বক্তৃতাটি উসকানিমূলক এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীসহ ইসরায়েল সরকার বারবার এবং ধারাবাহিকভাবে আমাদের বলেছে যে, এ ধরনের বিবৃতি ইসরায়েলি সরকারের নীতিকে প্রতিফলিত করে না।’ মিলার বলেন, স্মোত্রিচ এবং বেন–গভিরকে ‘অবিলম্বে থামাতে হবে’।
ম্যাথিউ মিলার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে স্পষ্ট, ধারাবাহিক এবং দ্ব্যর্থহীন যে, গাজা হলো ফিলিস্তিনি ভূমি এবং এটি ফিলিস্তিনি ভূমিই থাকবে।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে ইসরায়েলি মন্ত্রীদের এই সমাবেশে উপস্থিতির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে।
যুদ্ধের শুরুতে নেতানিয়াহু বাইডেন প্রশাসনের সমর্থন জারি রাখার চেষ্টায় ভারসাম্যমূলক আচরণ করেছে। ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে ডানপন্থী সরকারের প্রধান হয়ে সেটি তিনি কতখানি পারছেন সেটিই এখন প্রশ্নবিদ্ধ। যেখানে ফিলিস্তিনে বসতি স্থাপনকারী চরমপন্থী রাজনীতিকদের ওপর ভর করে নেতানিয়াহু জোট সরকার গঠন করেছেন।
রোববারের সমাবেশে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করলেও সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদন অনুসারে, হিব্রু ইউনিভার্সিটির ডিসেম্বরের শুরুতে পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, অর্ধেকেরও বেশি ইসরায়েলি গাজা উপত্যকা দখল এবং ২০০৫ সালে গাজার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়ার পর সেখানে ভেঙে ফেলা ইহুদি বসতিগুলো পুনর্নির্মাণের বিপক্ষে।
১ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি লোকের এই সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৫৬ শতাংশ ইসরায়েলি বসতি স্থাপন নীতির বিরুদ্ধে, যেখানে ৩৩ শতাংশ পক্ষে রায় দিয়েছেন। আর ১১ শতাংশ এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তহীন।
মধ্যপন্থী বিরোধী দলীয় নেতা ইয়ার লাপিড এক্স প্ল্যাটফর্মে বলেছেন, রোববার ইসরায়েলি মন্ত্রীদের অংশগ্রহণ নেতানিয়াহু সরকারের জন্য ‘নতুন নীচতার’ প্রতিনিধিত্ব করে।
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, এই ঘটনা গাজায় আটক জিম্মিদের মুক্তির জন্য একটি চুক্তির জন্য সম্ভাব্য আলোচনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। সেই সঙ্গে ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে কারণ ইসরায়েল নিজেই গাজায় আক্রমণের জন্য আন্তর্জাতিক তদন্তের মুখোমুখি হচ্ছে।
রোববারে সমাবেশে মন্ত্রীদের অংশ নেওয়ার ঘটনায় ইসরায়েলের যুদ্ধ মন্ত্রিসভা থেকেও সমালোচনা এসেছে। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্টে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও সাবেক মিলিটারি চিফ অব স্টাফ গাদি আইসেনকোত বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারের ওই সমাবেশে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকে এবং বিশেষ করে নির্বাচিত কর্মকর্তারা—ইসরায়েলি সমাজে একটি বিস্তৃত জাতীয় ঐকমত্য এবং সংহতির সঙ্গে পদক্ষেপের গুরুত্ব সম্পর্কে গত বছরের ঘটনাবলি থেকে কিছুই শেখেননি।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণ লক্ষ্যগুলো—জিম্মিদের ফিরে আসা এবং হামাসের পরাজয়—অর্জনের জন্য মৌলিক পার্থক্যগুলোকে একপাশে রেখে এগুলোতে। আর অন্যরা এমন কাজের অবকাশ পান যা ইসরায়েলি সমাজকে বিভক্ত করে, সরকার এবং নির্বাচিতদের প্রতি বিদ্যমান আস্থার সংকট বাড়িয়ে তোলে।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সব ধরনের ডিজিটাল মাধ্যম থেকে মুসলিমবিরোধী ভিডিও সরাতে ভারতের কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপিকে নির্দেশ দিয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি
৫ মিনিট আগেপ্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশ ফিজিতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছেন বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি কর্মী। এসব বাংলাদেশির অভিযোগ, তাদের সঙ্গে ন্যায়সংগত আচরণ করেনি ফিজিতে থাকা তাদের নিয়োগদাতারা। এই অবস্থায় দেশটির স্বরাষ্ট্র ও অভিবাসন
২৬ মিনিট আগেআসামের বরাক নদীর অববাহিকায় অবস্থিত যেসব জেলায় বাংলা ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যাধিক্য আছে সেই তিনটি জেলার একটি করিমগঞ্জ। জেলার নতুন নামকরণ করা প্রসঙ্গে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানান, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দৃষ্টিভঙ্গিকে সম্মান জানাতে এবং এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করতেই..
১ ঘণ্টা আগেনভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত তিন মাস দিল্লি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ে। বাকি সময়ও বাসযোগ্যতা কম থাকে। এটা কি এখনো দেশের রাজধানী হিসেবে থাকা উচিত—এমন প্রশ্ন তোলেন তিনি...
৩ ঘণ্টা আগে