পোল্যান্ডে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটিতে হামলা যেকোনো সময়: রাশিয়া

অনলাইন ডেস্ক    
প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০১: ৫১
পোল্যান্ডে ন্যাটোর ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি। যেখানে মার্কিন অ্যাজিস অ্যাশোর মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম মোতায়েন করা হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

পোল্যান্ডে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ঘাঁটি ‘পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকি বাড়ানোর’ কারণ হতে পারে বলে সতর্ক করেছে রাশিয়া। পাশাপাশি বলেছে, এই ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি এখন রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। অর্থাৎ, রাশিয়া প্রয়োজন মনে করলে যেকোনো সময় এই ঘাঁটিতে হামলা চালাতে পারে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, বাল্টিক সাগরের কাছে পোল্যান্ডের রেজিকোভো শহরে অবস্থিত এই নতুন ঘাঁটি গত সপ্তাহে উদ্বোধন করা হয়। এটি ন্যাটোর রাশিয়াবিরোধী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অংশ। এই বিষয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভেরিফায়েড এক্স হ্যান্ডেল থেকে শেয়ার করা এক পোস্টে মস্কো এই হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এ ছাড়া রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভাও একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন।

জাখারোভা বলেছেন, ‘এই পদক্ষেপ (নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি চালু) যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোটের পক্ষ থেকে কৌশলগত ক্ষেত্রে উসকানিমূলক এবং গভীরভাবে অস্থিতিশীল কার্যক্রমের ধারাবাহিকতার অংশ। এটি কৌশলগত স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত করে, কৌশলগত ঝুঁকি বাড়ায় এবং পরিণতিতে পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকির মাত্রা বাড়িয়ে তোলে।’

ন্যাটোর হয়ে যুক্তরাষ্ট্র পোল্যান্ডে এমন এক সময়ে এই ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি চালু করল যখন রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ অন্যদিকে মোড় নিয়েছে। ন্যাটো পোল্যান্ডের এই নতুন ঘাঁটিতে অ্যাজিস অ্যাশোর মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেমের (এএএমডিএস) নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছে। এই বিষয়ে পোল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদা বলেছেন, ‘এই ঘাঁটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতে পেরে আমি আনন্দিত। এটি, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর মতোই, বিশ্বে স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা রক্ষা করবে।’

পোল্যান্ড ১৯৯৯ সালে ন্যাটোতে যোগ দেয়। এ বছর সুইডেন ন্যাটোর সর্বশেষ সদস্য হয়েছে। এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়া—এই তিনটি বাল্টিক রাষ্ট্রও ন্যাটোর অংশ এবং একই সঙ্গে দেশগুলোর সঙ্গে রাশিয়ার স্থলসীমান্ত আছে।

এদিকে, ইউক্রেনকে রাশিয়ার গভীরে হামলার জন্য দূরপাল্লার এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে হোয়াইট হাউস এই সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছিল। এ ছাড়া, যুক্তরাজ্যের তৈরি স্টর্ম শ্যাডো ক্রুজ মিসাইল প্রথমবারের মতো রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছে ইউক্রেন। যুক্তরাষ্ট্র অনুমতি দেওয়ার পরপরই ইউক্রেন রাশিয়ায় এসব ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালিয়েছে।

এদিকে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন যেসব দেশের অস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার ভূখণ্ডে হামলা চালাচ্ছে, তাদের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার অধিকার মস্কোর আছে। এটি লন্ডন ও ওয়াশিংটনের প্রতি প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি বলে মনে করা হচ্ছে। তবে কেবল হুমকি দিয়েই ক্ষান্ত থাকেনি রাশিয়া। দেশটি ইউক্রেনে বিশ্বের যুদ্ধের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলাও চালিয়েছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা মূলত কিয়েভ ও পশ্চিমা বিশ্বকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া যে, প্রয়োজন হলে রাশিয়া যেকোনো কঠোর পদক্ষেপের দিকে যেতে পারে।

রাশিয়া ন্যাটোর পূর্বমুখী (রুশ সীমান্তের কাছাকাছি চলে আসা) সম্প্রসারণকে তাদের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি হিসেবে দেখে। মস্কোর দাবি, ১৯৮৯ সালে বার্লিন দেয়ালের পতনের পর যুক্তরাষ্ট্র তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে ন্যাটোকে পূর্ব দিকে না বাড়ানোর মৌখিক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।

১৯৯০ সালে জার্মানিকে ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত করার সময় সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট মিখাইল গর্বাচেভ ও তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস বেকারের মধ্যে এই আলোচনা হয়েছিল। ব্রিটিশ থিংক ট্যাংক চ্যাথাম হাউসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র পরে ওই অবস্থান থেকে সরে আসে।

এর ভিত্তি হিসেবে জার্মানির তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হান্স-ডিটরিশ গেনশারের ১৯৯০ সালের এক বক্তব্য উল্লেখ করা হয়। তিনি বলেছিলেন, ‘ওয়ারশ চুক্তিভুক্ত দেশগুলোতে যাই ঘটুক না কেন, ন্যাটোর ভূখণ্ড পূর্ব দিকে সম্প্রসারিত হবে না, অর্থাৎ সোভিয়েত ইউনিয়নের সীমানার কাছে যাবে না।’ এটি সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের আগে বলা হয়েছিল।

মিখাইল গর্বাচেভ অবশ্য কোনো কোনো সাক্ষাৎকারে এই মৌখিক ‘সমঝোতার’ কথা স্বীকার করেছেন, আবার কিছু ক্ষেত্রে তা অস্বীকারও করেছেন। তবে রাশিয়া এই বিষয়টিকে ইউক্রেন যুদ্ধে তাদের অবস্থান ন্যায্যতা দেওয়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।

২০১৮ সালে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ সেন্ট পিটার্সবার্গ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে বলেন, ‘আমার মনে হয়, গত ২০ বছরে আমরা ন্যাটোর যে প্রতিশ্রুতিগুলো নিয়েছিলাম, তা পুরোপুরি রক্ষা করতে পারিনি। এটি কিছু আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে, যা যথেষ্ট যৌক্তিক। রাশিয়া সঠিকভাবেই যে আস্থা আশা করেছিল, তা আমরা দিতে পারিনি।’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর অনেক বিশ্লেষক যুক্তি দিয়েছেন, ন্যাটোর সম্প্রসারণই এই সংঘাতের একটি কারণ।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত