ইউক্রেনে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়ে যাবে রাশিয়া: পুতিন

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯: ৩৯
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯: ৫০
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন জানিয়েছেন, তাঁর দেশ ইউক্রেনে নতুন হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়ে যাবে। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তাঁর দেশ ইউক্রেনের রণক্ষেত্রে নতুন হাইপারসনিক ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে যাবে। অর্থাৎ, রাশিয়া ইউক্রেনে এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়ে যাবে। রাশিয়ার কাছে এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রের পর্যাপ্ত মজুত আছে। এদিকে, ইউক্রেন জানিয়েছে, রাশিয়ার এই অস্ত্র মোকাবিলায় তারা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরিতে কাজ শুরু করেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

গতকাল শুক্রবার পুতিন এ মন্তব্য করেন। তিনি এমন এক সময়ে এই মন্তব্য করলেন, যার মাত্র এক দিন আগে রাশিয়া প্রথমবারের মতো ইউক্রেনে মাঝারি পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে। পুতিন জানান, মার্কিন ব্যালিস্টিক ও ব্রিটিশ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় ইউক্রেনের হামলার প্রতিক্রিয়ায় এই হামলা চালানো হয়েছে।

টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে পুতিন এই ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে একটি সফল পরীক্ষা হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, আরও পরীক্ষার পরিকল্পনা আছে রাশিয়ার। তিনি বলেন, ‘আমরা এসব পরীক্ষা চালিয়ে যাব, পরিস্থিতি এবং রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য তৈরি হুমকির ধরনের ওপর নির্ভর করে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রয়োগ করব। এ ধরনের অস্ত্রের যথেষ্ট মজুত আমাদের আছে।’

এদিকে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, নতুন হুমকি মোকাবিলায় পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করছে কিয়েভ। জেলেনস্কি এই বক্তব্য দিলেও রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার আশঙ্কায় ইউক্রেনের পার্লামেন্ট অধিবেশন বাতিল করা হয়েছে। কিয়েভে রাশিয়ার আঘাতের আশঙ্কায় কিছু বিদেশি দূতাবাস সাময়িকভাবে কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে।

ইউক্রেনের আইনপ্রণেতা মিকিতা পোতুরায়েভ বলেন, ‘কিয়েভের নির্দিষ্ট এলাকায় বাণিজ্যিক অফিস ও এনজিওগুলোর কার্যক্রম সীমিত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের হুমকির বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।’ আরেক আইনপ্রণেতা ওলেক্সি গনচারেঙ্কো এই সিদ্ধান্তকে ‘হাস্যকর’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এটি কিয়েভে আরও আতঙ্ক ছড়িয়েছে এবং পুতিনেরই সুবিধা হয়েছে।’ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানিয়েছে, তাদের কার্যক্রম স্বাভাবিক আছে।

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার পুতিন বলেন, রুশ বাহিনী ইউক্রেনে নতুন একটি মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালিয়েছে। এটি ইউক্রেনের মার্কিন ও ব্রিটিশ তৈরি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ লক্ষ্যবস্তুতে হামলার জবাব।

ক্রেমলিনের দাবি, নতুন ওরেশনিক ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভের পশ্চিমা মিত্রদের সতর্ক বার্তা যে, রাশিয়া ‘উন্মত্ত’ কর্মকাণ্ডের জবাব দিতে প্রস্তুত। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, যুক্তরাষ্ট্রকে আগাম সতর্ক করার বাধ্যবাধকতা রাশিয়ার নেই। তবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ৩০ মিনিট আগে তাদের জানানো হয়েছে।

ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, এই ক্ষেপণাস্ত্র ১৫ মিনিট উড়ে মাক-১১ এর বেশি গতিবেগে (অর্থাৎ, শব্দের গতির চেয়ে ১১ গুণ বেশি। প্রতি ঘণ্টায় সাড়ে ১৩ হাজার কিলোমিটারের বেশি) পৌঁছায়। এতে ছয়টি ওয়ারহেড ছিল।

পেসকভ বলেছেন, পুতিন সংলাপের জন্য প্রস্তুত থাকলেও বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন উত্তেজনা বাড়ানোর পথে এগোচ্ছেন। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে দূর পাল্লার আর্মি ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম (এটিএসিএমএস) ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে, যা দিয়ে কিয়েভ রাশিয়ার অভ্যন্তরে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে।

গতকাল শুক্রবার রাতে এক ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, নতুন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়া উত্তেজনা বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার পক্ষ থেকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী এরই মধ্যে নতুন আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে মিত্রদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন, যা নতুন হুমকি থেকে জীবন রক্ষা করবে।’

জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘যখন কেউ সন্ত্রাসের জন্য অন্য দেশের ভূমি ব্যবহার করে এবং সেই সঙ্গে নতুন ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালায়, তখন এটি স্পষ্টতই আন্তর্জাতিক অপরাধ।’ এ সময় তিনি ইউক্রেনীয়দের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমাদের সতর্ক থাকতে হবে, কারণ কমরেড পুতিন আমাদের ভয় দেখানোর চেষ্টা চালিয়ে যাবেন। এ পদ্ধতিতেই তিনি তাঁর ক্ষমতা গড়ে তুলেছেন।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত