বিশ্বকে শব্দহীন নির্মাণযন্ত্রের পথ দেখাল নরওয়ের অসলো

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২২: ৩৯
আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ২২: ৪২
Thumbnail image
ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

পাশেই একটি ভারী নির্মাণযন্ত্র চলছিল। তারপরও কথা বলার সময় গলার স্বর উঁচু করার প্রয়োজন হয়নি তাফসির আলির। কারণ ওই নির্মাণযন্ত্র থেকে তেমন কোনো আওয়াজই বের হচ্ছিল না। যন্ত্রটি চলছিল গম্ভীরভাবে।

নির্মাণ ব্যবস্থাপক তাফসির আলি জানান, এমন শান্ত বৈদ্যুতিক যন্ত্রগুলো অসলো শহরের কেন্দ্রস্থলে কাজ করাকে অনেক সহজ করে তুলেছে। শব্দ না হওয়ায় প্রতিবেশীরাও বেশ খুশি থাকেন। তিনি বলেন, ‘যদি শব্দ কম হয়, অভিযোগও কম আসে।’

শুক্রবার এক প্রতিবেদনে গার্ডিয়ান জানিয়েছে, নরওয়ের রাজধানী অসলো শহরের রাস্তাগুলো এখন ক্রমেই আরও শান্ত হয়ে উঠছে। কারণ শহরটিতে কর্তৃপক্ষের পরিচালিত নির্মাণ প্রকল্পগুলোতে শব্দযুক্ত ও দূষণকারী যন্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গত ১ জানুয়ারি থেকে কার্যকর করা এই উদ্যোগটি বিশ্বে এই প্রথমবারের মতো নেওয়া হয়েছে।

এই উদ্যোগের বিষয়ে অসলো শহরের নগর পরিবেশ সংস্থার প্রকৌশলী ইনগ্রিড কিয়ের সালমি বলেন, ‘আমরা শতভাগ অর্জন করতে পারব না। কারণ সব বৈদ্যুতিক যন্ত্র বাজারে নেই। কিন্তু আমরা খুব কাছাকাছি পৌঁছে যাব।’

যে কোনো শহরে শুধু শব্দ নয়, বায়ুদূষণেরও একটি বড় উৎস নির্মাণ খাত। দূষণ ঠেকাতে অসলো শহর জীবাশ্ম জ্বালানি চালিত যন্ত্রগুলো বদলে সম্প্রতি বায়োফুয়েল ব্যবহার শুরু করলেও এখন তা ব্যাটারি চালিত যন্ত্রে পরিবর্তিত হচ্ছে।

২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, সেই বছর অসলো শহরের নির্মাণ প্রকল্পগুলোর ৯৮ শতাংশই পরিচালিত হয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানি ছাড়া। সেবার ৭৫ শতাংশ প্রকল্প বায়োফুয়েলে এবং ২৫ শতাংশ বৈদ্যুতিক যন্ত্র ব্যবহার করে পরিচালিত হয়েছে। তবে ২০২৪ সালের অক্টোবরে এই শহরে যতগুলো প্রকল্প চলছিল, তার দুই-তৃতীয়াংশই পরিচালিত হয়েছে বৈদ্যুতিক শক্তিতে। আর বাকি এক-তৃতীয়াংশ পরিচালিত হয়েছে বায়োডিজেলে।

প্রকৌশলী ইনগ্রিড কিয়ের সালমি বলেন, ‘অসলো শহরের উদ্যোগ নির্মাণশিল্পে বৈদ্যুতিক যন্ত্রের উন্নয়নকে উৎসাহিত করেছে। ফলে অন্য শহরগুলোও এসব ব্যবহার করতে পারবে। আমরা অনেক প্রোটোটাইপ এবং কাস্টমাইজড যন্ত্র ব্যবহার করেছি, যা এই প্রযুক্তিকে উন্নত করেছে।’

নরওয়েতে বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যবহার এখন খুবই স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। তবে নির্মাণ যন্ত্রের ক্ষেত্রে এখনো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে। দেশটির নির্মাণ ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কন্ট্রাক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের স্টিন মারি হাউগেন বলেন, ‘এই মুহূর্তে সব নির্মাণযন্ত্র নিঃসরণমুক্ত করা খরচ সাশ্রয়ী নয়। ইউরোপের খুব কম দেশই এ ধরনের যন্ত্রের উন্নয়নে জোর দিচ্ছে। ফলে এ ধরনের যন্ত্রের বাজারও সীমিত।’

নির্মাণ ব্যবস্থাপক তাফসির আলি ও প্রকৌশলী ইনগ্রিড কিয়ের সালমি। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
নির্মাণ ব্যবস্থাপক তাফসির আলি ও প্রকৌশলী ইনগ্রিড কিয়ের সালমি। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

তবে নরওয়ে এবং হাতেগোনা দু-একটি দেশ এই খরচ বহন করে নির্মাণ যন্ত্রকে আরও সাশ্রয়ী এবং আকর্ষণীয় করে তুলছে। কারণ চাহিদা তৈরি হওয়ার ফলে নির্মাতারা নতুন বৈদ্যুতিক যন্ত্র তৈরিতে আরও উৎসাহিত হচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈদ্যুতিক যন্ত্রের সম্প্রসারণে উচ্চমূল্য একটি বড় বাধা। তবে দীর্ঘ মেয়াদে এটি জ্বালানি খরচ কমাবে এবং নির্মাণ প্রকল্পের সামগ্রিক খরচ তেমন বাড়াবে না।

প্রকল্প ব্যবস্থাপক লার্স ওলাভ বলেন, ‘যদি কাছাকাছি একটি স্কুল থাকে, নির্মাণ চললেও পড়াশোনায় কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না। জীবন স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকবে।’

নরওয়ের অসলো ছাড়াও সুইডেনের স্টকহোম এবং নেদারল্যান্ডসের শহরগুলো নির্মাণ খাতকে পরিবেশবান্ধব করার উদ্যোগ নিয়েছে। ভলভো কনস্ট্রাকশন ইকুইপমেন্টের জনসংযোগ প্রধান তোরা লেইফল্যান্ড বলেন, ‘আমাদের আরও অসলো এবং স্টকহোমের মতো উদ্যোগ প্রয়োজন। সংখ্যাটি এখনো অনেক কম।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত