আত্মহত্যার চেষ্টাকে ‘অপরাধ’ গণ্য করা অসাংবিধানিক: কেনিয়ার হাইকোর্ট

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০০: ২৪
Thumbnail image
নাইরোবির একটি মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র। ছবি: এএফপি

আত্মহত্যার চেষ্টাকে অপরাধ গণ্য করার আইন বাতিল ঘোষণা করেছে কেনিয়ার আদালত। বৃহস্পতিবার (৯ জানুয়ারি) দেশটির হাইকোর্টের বিচারক লরেন্স মুগাম্বি এই যুগান্তকারী রায় দেন। তিনি রায় ঘোষণার সময় বলেন, ‘দণ্ডবিধির ২২৬ ধারা সংবিধানে বর্ণিত সর্বোচ্চ মানের স্বাস্থ্য অধিকারের পরিপন্থী। এই ধারা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের শাস্তি দেয়, যে সমস্যাগুলোর ওপর তাঁদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।’

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কেনিয়ার সংবিধানের ৪৩ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী একজন ব্যক্তির ‘সর্বোচ্চ মানের স্বাস্থ্য সেবা’ পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু ফৌজদারি আইনের ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি আত্মহত্যার চেষ্টা করলে তিনি অপরাধী সাব্যস্ত হবেন এবং এর জন্য দুই বছরের কারাদণ্ড, জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন।’ এই অপরাধের জন্য বিচারের সর্বনিম্ন বয়স আট বছর নির্ধারণ করা ছিল।

মুগাম্বি রায়ে বলেন, ‘আমার মতে, দণ্ডবিধির ২২৬ ধারা সংবিধানের ২৭ নং অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন করে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে, যা একজন নাগরিকের সর্বোচ্চ মানের স্বাস্থ্য সেবার অধিকারের ক্ষেত্রে বৈষম্য। এটি অসাংবিধানিক। এই বিষয়টি আত্মহত্যার চেষ্টা করা ব্যক্তিকে অসম্মানিত ও লজ্জিত করে। এমন চেষ্টা সাধারণত তাঁদের মনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে।’

কেনিয়া ন্যাশনাল কমিশন অন হিউম্যান রাইটস (কেএনসিএইচআর) ও কেনিয়া সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের করা একটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এই রায় দেয় দেশটির হাইকোর্ট। এ দুটি সংগঠন দাবি করেছিল, আত্মহত্যার ঘটনায় প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, ‘অনির্ণীত এবং চিকিৎসাহীন বিরল মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। সেই সঙ্গে মানসিক অক্ষমতা, যা আত্মহত্যার চিন্তার জন্ম দেয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে।’

কেএনসিএইচআর এক বিবৃতিতে এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, ব্যক্তি, সম্প্রদায়, সংস্থা ও সরকারের মধ্যে আলোচনার ফল আজকের এই রায়। এর মাধ্যমে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা অপমান বা বৈষম্যের ভয় না করে তাঁদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারবেন এবং প্রয়োজনমতো সহায়তা চাইতে পারবেন।

২০২৪ সালের মার্চে কেনিয়ার মানসিক স্বাস্থ্য হাসপাতালের শীর্ষ কর্মকর্তারা সংসদকে এই আইনটি বাতিল করার অনুরোধ করেন। মাথারি ন্যাশনাল টিচিং অ্যান্ড রেফারেল হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. জুলিয়াস ওগাতো বলেন, ‘ইনসুলিনের অভাবজনিত কারণে যেমন ডায়াবেটিস হয়, তেমনি মানসিক অসুস্থতা মস্তিষ্কের ভারসাম্যহীনতার ফল। এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে, আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতি সহানুভূতি ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা করা উচিত।’

কেনিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আত্মহত্যা প্রতিরোধ কৌশল বিভাগের তথ্য অনুসারে, ২০২১–২৬ সময়ে দেশটিতে আত্মহত্যার হার প্রতি ১ লাখে ১১ জন। সে হিসাবে কেনিয়ায় প্রতিদিন গড়ে চারজন আত্মহত্যা করেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ৭ লাখের বেশি মানুষ আত্মহত্যায় করেন। যার প্রায় ৭০ শতাংশই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত