যুদ্ধের ইতিহাসে প্রথম আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ল রাশিয়া

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৭: ৪৪
আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১৯: ১২
রাশিয়ার তৈরি রুবেজ আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সম্ভাব্য ছবি। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়া ইউক্রেনে এবার আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (আইসিবিএম) দিয়ে হামলা করেছে। আজ বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের বিমানবাহিনী এ তথ্য জানিয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধে এই প্রথম এমন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করল। ইউক্রেন রাশিয়ায় মার্কিন নির্মিত এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলার পরপরই মস্কো এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালাল। বিশ্লেষকেরা বলছেন, পারমাণবিক অস্ত্র বহনে সক্ষম ক্ষেপণাস্ত্রের সামরিক ব্যবহার এই প্রথম।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার এই আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার কিয়েভ ও পশ্চিমা বিশ্বের প্রতি এক কড়া বার্তা। এ ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র সাধারণত পারমাণবিক অস্ত্র বহনের জন্য তৈরি করা হয়েছিল এবং এগুলো কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম।

ইউক্রেনের দাবি, রাশিয়ার এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার ৩৩ মাস ধরে চলমান যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার নতুন দিক নির্দেশ করছে। কারণ, চলতি সপ্তাহে ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের নির্মিত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার ভেতরে লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে। সেই হামলার পর মস্কো হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিল, এমন হামলাকে তারা বড় ধরনের উত্তেজনা বৃদ্ধি হিসেবে দেখবে।

ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনী এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এই আইসিবিএমটি রাশিয়ার আস্ত্রাখান অঞ্চল থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। এটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের দিনিপ্রো শহরের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। তবে ক্ষেপণাস্ত্রটি পারমাণবিক অস্ত্রবাহী ছিল কি না, তা নিশ্চিত করা যায়নি।

ইউক্রেনের সংবাদমাধ্যম ইউক্রেইনস্কা প্রাভদার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাশিয়ার এই আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রটি ছিল আরএস-২৬ রুবেজ সিরিজের। এটি সলিড ফুয়েল বা কঠিন জ্বালানি দিয়ে চালিত। এই ক্ষেপণাস্ত্র ৫ হাজার ৮০০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে পারে। রাশিয়া ২০১২ সালে এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রথম সফলভাবে পরীক্ষা করে। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১২ মিটার এবং ওজন ৩৬ টন। এটি ৮০০ কেজি ওজনের পারমাণবিক ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম।

দিনিপ্রো শহরের গভর্নর সের্হি লিসাক জানিয়েছেন, এই হামলায় একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং দুজন আহত হয়েছেন।

ইউক্রেনের বিমানবাহিনী আরও জানিয়েছে, আইসিবিএম দিয়ে হামলার পাশাপাশি রাশিয়া এই হামলায় কিনঝাল হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং সাতটি কেএইচ-১০১ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রও ব্যবহার করেছে। এর মধ্যে ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভূপাতিত করেছে।

রাশিয়ার এই হামলার বিষয়টিকে আমলে নিয়ে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ সংস্থা ডিফেন্স এক্সপ্রেস প্রশ্ন তুলেছে, এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে আগে থেকে জানানো হয়েছিল কি না। সাধারণত এমন ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার আগে তথ্য জানানো হয়, যাতে ভুলবশত প্রতিপক্ষের পাল্টা হামলা না ঘটে।

জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ গবেষণা সংস্থার বিশেষজ্ঞ আন্দ্রেই বাকলিতস্কি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘যদি সত্যি হয়ে থাকে, এটি হবে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্রের সামরিক ব্যবহার।’ জার্মান নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ উলরিখ কুহন লিখেছেন, ‘আজ রাশিয়া প্রথমবারের মতো একটি আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে বলে মনে হচ্ছে। এটি সরাসরি দিনিপ্রোর বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেছে।’

এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রের নির্মিত এটিএসিএমএস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ইউক্রেন এ সপ্তাহে রাশিয়ায় হামলা চালায়। তার আগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দেশ আক্রান্ত হলে প্রয়োজনে পারমাণবিক হামলা চালানোর শর্ত শিথিল করেছেন।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শাসনামল শেষ হওয়ার আগেই রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়ই রণক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী অবস্থানে যেতে চাইছে। কারণ, নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে কীভাবে তা করবেন, তা জানাননি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত