রাশিয়াকে মিসাইল দিতে অস্ত্র কারখানা সম্প্রসারণ করছে উত্তর কোরিয়া

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৯: ৪৮
ফেব্রুয়ারি ১১ প্ল্যান্ট নামে পরিচিত অস্ত্র কারখানা সম্প্রসারণ করছে উত্তর কোরিয়া। ছবি: স্যাটেলাইট

উত্তর কোরিয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র তৈরির কারখানা সম্প্রসারণ করছে বলে ধারণা করছেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থার বিশেষজ্ঞরা। স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, এই কারখানায় এমন একটি স্বল্প-পাল্লার মিসাইল তৈরি হয় যা রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধে ব্যবহার করছে।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।

ফেব্রুয়ারি ১১ প্ল্যান্ট নামে পরিচিত অস্ত্র কারখানাটি উত্তর কোরিয়ার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র কারখানা। এটি উত্তর কোরিয়ার পূর্ব উপকূলের হামহুং শহরে অবস্থিত রিওংসং মেশিন কমপ্লেক্সের অন্তর্গত।

যুক্তরাষ্ট্রের জেমস মার্টিন সেন্টার ফর ননপ্রলিফারেশন স্টাডিজের (সিএনএস) সহকারী গবেষক স্যাম লেয়ার জানিয়েছেন, এটি একমাত্র স্থাপনা যেখানে হওয়াসং-১১ ক্লাসের সলিড-ফুয়েল ব্যালিস্টিক মিসাইল তৈরি করা হয়। পশ্চিমা বিশ্বে এটি কেএন-২৩ নামে পরিচিত।

ইউক্রেন কর্মকর্তাদের দাবি, রুশ বাহিনী এই মিসাইল ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে।

চলতি বছরের অক্টোবরে প্ল্যানেট ল্যাবসের তোলা স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, কারখানার ভেতরে নতুন একটি অ্যাসেম্বলি বিল্ডিং নির্মাণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি কর্মীদের জন্য নতুন একটি আবাসিক ভবনও নির্মাণাধীন।

সিএনএসের বিশ্লেষকদের মতে, কারখানার ভূগর্ভস্থ প্রবেশপথগুলোতেও উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। একটি পুরোনো ক্রেন সরিয়ে প্রবেশপথ খুলে দেওয়া হয়েছে, যা ইঙ্গিত করে যে এই স্থাপনার কার্যক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে। যেটি আগের চিত্রগুলোতে দেখা যায়নি।

নতুন ভবনটি আগের ভবনের চেয়ে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ আকারের বলে ধারণা করা হচ্ছে। গবেষক স্যাম লেয়ার বলেন, ‘আমরা মনে করছি, এই কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা ব্যাপকভাবে বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।’

তবে রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়া বরাবরই ইউক্রেন যুদ্ধে অস্ত্র সরবরাহের বিষয়টি অস্বীকার করে আসছে। এই দুই দেশের মধ্যে সামরিক সম্পর্ক সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ২০২৩ সালের জুনে একটি দ্বিপক্ষীয় সামরিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

২০২৩ সালে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, কিম জং উন হামহুংয়ের এই কারখানা পরিদর্শন করছেন। চিত্রগুলোতে কেএন-২৩ মিসাইলের টেইল কিট এবং নোজ কন তৈরি হতে দেখা যায়।

লেয়ার জানান, রিওংসং মেশিন কমপ্লেক্স অতীতে ট্যাংকের চাকা থেকে শুরু করে রকেট মোটরের কেসিং পর্যন্ত নানা ধরনের সামরিক সরঞ্জাম তৈরি করেছে।

এই সম্প্রসারণের বিষয়টি রাশিয়া এবং উত্তর কোরিয়ার অস্ত্র সম্পর্ক নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলছে।

এ বিষয়ে উত্তর কোরিয়ার জাতিসংঘ মিশন রয়টার্সের প্রশ্নের উত্তর দেয়নি।

উত্তর কোরিয়ার কেএন-২৩ মিসাইল ২০১৯ সালের মে মাসে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে উৎক্ষেপণ করা হয়। মিসাইলটি অনেক নিচু দিয়ে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে আঘাত হানতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য এটি রাশিয়ার জন্য অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।

ফেব্রুয়ারি ১১ প্ল্যান্ট নামে পরিচিত অস্ত্র কারখানা সম্প্রসারণ করছে উত্তর কোরিয়া। ছবি: স্যাটেলাইট
ফেব্রুয়ারি ১১ প্ল্যান্ট নামে পরিচিত অস্ত্র কারখানা সম্প্রসারণ করছে উত্তর কোরিয়া। ছবি: স্যাটেলাইট

রাশিয়া ইউক্রেনে হামলার পর থেকে কয়েক হাজার মিসাইল নিক্ষেপ করেছে। স্যাম লেয়ার বলেছেন, উত্তর কোরিয়া থেকে অতিরিক্ত সরবরাহ পেলে রাশিয়ার নিজস্ব উৎপাদন ব্যবস্থার ওপর চাপ কমবে।

উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা কেসিএনএ জানিয়েছে, হামহুংয়ে অবস্থিত রিওংসং মেশিন কমপ্লেক্সে নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে চলছে। প্রতিষ্ঠানটি এ বছর আধুনিকায়নের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে উৎপাদন স্থাপনা পুনর্গঠন এবং মেশিন ও স্টিল কাস্টিং ওয়ার্কশপে সরঞ্জাম স্থাপনের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার এসআই অ্যানালিটিকস কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহাজ্যে স্যাটেলাইট চিত্র বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারি ১১ প্ল্যান্টের কাছে নতুন নির্মাণকাজ চলছে। সোমবার প্রকাশিত এক রিপোর্টে প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, লোডিং এরিয়ার কাছাকাছি কিছু নির্মাণ ভবিষ্যতের কার্যক্রম স্যাটেলাইটের নজর থেকে আড়াল করার জন্য পরিকল্পিত হতে পারে।

রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সাইটটির চারপাশে প্রচুর নির্মাণ সামগ্রী, যানবাহন এবং খোলা-ছাদযুক্ত মালবাহী ট্রেনের উপস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে কাজ দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে।

কেসিএনএর রিপোর্টে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে ইঙ্গিত দিয়ে বলা হয়েছে, কারখানাটি ব্যালিস্টিক মিসাইল তৈরির কাজ করে। যদিও সরাসরি কেএন-২৩ মিসাইলের নাম উল্লেখ করা হয়নি।

এই নির্মাণকাজ ও অস্ত্র উৎপাদন উত্তর কোরিয়া-রাশিয়ার সামরিক সহযোগিতার আরও এক বড় প্রমাণ। এটি একই সঙ্গে বিশ্ব নিরাপত্তা নিয়ে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত