ইশতিয়াক হাসান
এখন এভারেস্ট জয়ে নতুন নতুন সব রেকর্ড তৈরি হচ্ছে। তবে একটা সময় পর্যন্ত পর্বতারোহীদের প্রাণান্তকর চেষ্টার পরও পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়াটি জয় করাই সম্ভব হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত ১৯৫৩ সালের ২৯ মে প্রথম মানুষ হিসেবে পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়াটিতে পা রাখেন এডমন্ড হিলারি ও শেরপা তেনজিং নোরগে। আজ পুরোনো ইতিহাস টেনে আনার কারণ ২০০৮ সালের এই দিনে অর্থাৎ ১১ জানুয়ারি পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন স্যার এডমন্ড হিলারি।
মৌচাষি হিলারি
নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে জন্ম এডমন্ড হিলারির, সালটা ১৯১৯। পেশায় ছিলেন মৌচাষি। তবে পর্বতারোহণে আগ্রহ শুরু হয়েছিল স্কুলে পড়ার সময়ই। গ্রীষ্মে করতেন মৌচাষ, শীতে চষে বেড়াতেন নিউজিল্যান্ডের পর্বতগুলোয়। তারপর আল্পস এবং হিমালয়ের একের পর এক চূড়া জয় করে প্রস্তুত হয়ে ওঠেন এভারেস্টের চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য। আর সেটা ছিল বিশাল এক চ্যালেঞ্জ। ১৯২০ থেকে ১৯৫২ সালের মধ্যে তিব্বত ও নেপালে অবস্থিত পর্বতটি জয়ের ৭টি বড় অভিযান ব্যর্থ হয়।
ভয়ংকর পথ
হিমালয়ের সবচেয়ে উঁচু এই পর্বত জয়ে হিলারিদের অভিযানের শুরু ১৯৫৩ সালের মার্চের ১০ তারিখ। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল স্যার জন হান্ট নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ১৪ অভিযাত্রী, ৩৬ শেরপা এবং মালামাল বহন করা ৩৬০ জন কুলির। হিলারি, তেনজিংসহ দলের বাকি সদস্যরা নেপালের কাঠমাণ্ডু থেকে যাত্রা শুরু করেন। ১২ হাজার ফুটের বেশি উচ্চতায় বেজ ক্যাম্প স্থাপন করলেন তাঁরা। এখান থেকে পর্বতের ওপরের দিকে ওঠেন তাঁরা। তবে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এভারেস্ট জয়ের চূড়ান্ত চেষ্টায় অংশ নিতে পারেন কেবল দলটির দুই সদস্য—এডমন্ড হিলারি এবং তেনজিং নোরগে।
দুজনেই গায়ে চাপিয়েছেন আট প্রস্থ পোশাক, হাতে দস্তানা। পিঠে ৪০ পাউন্ডের অক্সিজেন ট্যাংক। উচ্চতার কারণে বাতাস এখানে অনেক হালকা। মানে এখানে অক্সিজেনের ঘাটতি আছে। কিন্তু পর্বতারোহীদের বেঁচে থাকার জন্য বাড়তি অক্সিজেন দরকার, অন্তত ২৫ হাজার ফুট উচ্চতায়। অনেকে এই উচ্চতাকে এভারেস্টের ডেথ জোনের শুরু বলে উল্লেখ করেন।
হিলারি এবং তেনজিং চূড়ায় পৌঁছাতে যাত্রা শুরু করলেন। আগের মতোই কোমরে বাঁধা দড়ি তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। সরু, কয়েক ফুট চওড়া একটি শৈলশিরা ধরে ওপরে উঠছেন দুই পর্বতারোহী। নরম তুষার এই চলাকে আরও কঠিন করে তুলেছে। এক সময় নরম তুষারের রাজ্য শেষ হলো। এর জায়গা নিল তুলনামূলক শক্ত বরফ। বরফে পা ফেলে একটু নিশ্চিন্তে এগোতে পারছেন দুজনে। তবে ঝুঁকি ছিল তখনো। তাঁদের ডানে বরফের মোচড়ানো কার্নিশ, পাশ থেকেই পর্বতের কিনারা খাড়া নেমে গেছে ৮ হাজার ফুট। বামে সংকীর্ণ পাথুরে তাক।
২৯ মে। সকাল ৬টা ৩০ মিনিট। হিলারি তেনজিং নোরগেকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘সব ঠিক আছে তো?’ সঙ্গে সঙ্গে উত্তর পেলেন, ‘হ্যাঁ, ঠিক আছে।’ আর মাত্র ১ হাজার ১০০ ফুট, তারপরই ইতিহাসের অংশ হয়ে যাবেন তাঁরা।
বড় বাধা
বরফ ভেঙে এগোনোর সময় হিলারির নিশ্বাস নিতে রীতিমতো কষ্ট হচ্ছে। অক্সিজেনের নলের ভেতর বরফ জমতে শুরু করেছে যে। একটু পরপরই নল পরিষ্কার করছেন দুজনেই। দুই অভিযাত্রী এক সময় চল্লিশ ফুট উঁচু একটা পাথরের দেয়ালের সামনে চলে এলেন। হিলারি জুতার স্পাইক ব্যবহার করে পাথরের দেয়াল এবং একটা তাকের মাঝখান দিয়ে উঠতে শুরু করলেন। দেয়ালের ওপর পৌঁছে তেনজিংকে দড়ি ধরে টেনে ওপরে তুললেন। আবার শুরু হলো বরফ ভেঙে পাহাড়ের ওপর ওঠা।
একেবারে ওপরে
কয়েক ঘণ্টা পার হয়ে গেল। চলার গতি ধীর হয়ে এসেছে। ধৈর্যের শেষ সীমায় যেন পৌঁছে গেছেন তাঁরা। তবে ঢাল বেয়ে শেষ অংশটা পেরিয়ে হঠাৎই পৌঁছে গেলেন একেবারে ওপরে, শিখরে। তাঁরা এখন এভারেস্টের চূড়ায়।
দুজন মানুষ পরস্পরকে আলিঙ্গন করলেন, একে অপরের হাত ধরে ঝাঁকাতে লাগলেন পাগলের মতো। পনেরো মিনিট পর এভারেস্টের চূড়ার মনোমুগ্ধকর, রাজকীয় দৃশ্যকে বিদায় জানিয়ে নিচে নামতে শুরু করলেন দুজনে। তখনো বিশ্বাস হচ্ছে না এমন এক জায়গায় গিয়েছেন, যেখানে তাঁদের আগে কেউ পৌঁছাতে পারেনি। এমন দৃশ্য দেখেছেন, যা আগে কেউ দেখেনি।
হিলারি-তেনজিং এভারেস্ট জয়ের পর ৪ হাজারের মতো পর্বতারোহী সর্বোচ্চ চূড়াটিতে (২৯,০৩১. ৬৯ ফুট) পৌঁছান। তবে পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়াটি যে অজেয় নয় তা প্রমাণ করেন স্যার এডমন্ড হিলারি আর তেনজিং নোরগেই। তাই পর্বতারোহীসহ সব রোমাঞ্চপ্রেমীর মনেই অমর হয়ে আছেন তাঁরা।
নেপালের সাধারণ মানুষের কল্যাণে
এভারেস্টজয় রাতারাতি বিশ্বজুড়ে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দিল হিলারিকে। অন্য পর্বতারোহীদের সঙ্গে ব্রিটেনে পৌঁছতেই রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ নাইট উপাধিতে ভূষিত করলেন এডমন্ড হিলারিকে। ১৯৫৮ সালে দক্ষিণ মেরু অভিযানে যান হিলারি। জয় করলেন উত্তর মেরুও। আরও বিভিন্ন পর্বত অভিযানে নেতৃত্ব দিলেও যত দিন গড়াতে লাগল নেপালের সাধারণ মানুষের কল্যাণই হয়ে উঠল তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। ষাটের দশকে নেপালে বেশ কিছু ক্লিনিক, হাসপাতালের পাশাপাশি ১৭টি বিদ্যালয় স্থাপনে বড় ভূমিকা রাখলেন হিলারি। তাঁর প্রতিষ্ঠিত অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিমালয়ান ট্রাস্টের মাধ্যমে কাজটি করেন তিনি।
এ সময় এ উন্নয়নকাজগুলো সহজে করার জন্য দুটি এয়ারস্ট্রিপ স্থাপন করা হয়। এর ফলাফল হিসেবে নেপালের প্রত্যন্ত এলাকায় পর্যটক ও পর্বতারোহণে আগ্রহীদের চাপ অপ্রত্যাশিতরকম বেড়ে যায়। পর্বতারোহীদের জ্বালানির জোগান দিতে গিয়ে নির্বিচারে জঙ্গলের গাছ কাটতে শুরু করল নেপালিরা। বিষয়টি নজর এড়াল না স্যার এডমন্ড হিলারির। তিনি নেপাল সরকারকে চাপ দিলেন জঙ্গল রক্ষায় আইন পাশ ও এভারেস্টের আশপাশের এলাকাকে ন্যাশনাল পার্ক বা জাতীয় উদ্যান ঘোষণার জন্য। নিজের জনপ্রিয়তা ও প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে নিউজিল্যান্ড সরকারকেও রাজি করালেন এ বিষয়ে সব ধরনের সাহায্য করতে।
হিলারির বই
এদিকে সফল এভারেস্ট অভিযানের পর হিলারি ও স্যার জন হান্ট অভিযান নিয়ে তাঁদের অভিজ্ঞতাকে বন্দী করলেন দুই মলাটের মধ্যে, দ্য অ্যাসসেন্ট অব এভারেস্ট নামে। বইটি ইংল্যান্ডে এ নামে প্রকাশিত হলেও যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশ পেল দ্য কনকোয়েস্ট অব এভারেস্ট নামে। স্যার এডমন্ড হিলারির আত্মজীবনী নাথিং ভেনচার, নাথিং উইন বের হয় ১৯৭৫ সালে। ১৯৭৭ সালে হিমালয়ে গঙ্গা নদীর উৎস পর্যন্ত এক অভিযান চালান হিলারি। এই অভিযান নিয়ে তাঁর বই ফ্রম দ্য ওশান টু দ্য স্কাই প্রকাশ পায় ১৯৭৯ সালে।
চিরবিদায়
তবে এর মধ্যে ব্যক্তিগত জীবনে বড় বিপর্যয় নেমে আসে হিলারির। ১৯৭৫ সালে তাঁর স্ত্রী লুইজি এবং মেয়ে বেলিন্দা নেপালে প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত হন। ফাফলু গ্রামে হিলারির সঙ্গে দেখা করতে আসছিলেন তাঁরা। সেখানে হাসপাতাল তৈরি কাজ করছিলেন হিলারি। জীবনের বাকিটা সময় নেপালি জনসাধারণের উপকারে বিভিন্ন কাজ ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করে যান হিলারি। টাইম ম্যাগাজিন বিশ শতকের সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী ১০০ মানুষের মধ্যে একজন হিসেবে তাঁকে নির্বাচিত করে। দেশের, নেপালের ও সারা পৃথিবীতে তাঁর ভক্তদের শোকে স্তব্ধ করে দিয়ে নিউজিল্যান্ডে নিজ বাড়িতে ২০০৮ সালের এই দিনে মানে জানুয়ারির ১১ তারিখ মৃত্যুবরণ করেন স্যার এডমন্ড হিলারি।
তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিন, অ্যাচিভমেন্ট ডট অর্গ, উইকিপিডিয়া
এখন এভারেস্ট জয়ে নতুন নতুন সব রেকর্ড তৈরি হচ্ছে। তবে একটা সময় পর্যন্ত পর্বতারোহীদের প্রাণান্তকর চেষ্টার পরও পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়াটি জয় করাই সম্ভব হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত ১৯৫৩ সালের ২৯ মে প্রথম মানুষ হিসেবে পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়াটিতে পা রাখেন এডমন্ড হিলারি ও শেরপা তেনজিং নোরগে। আজ পুরোনো ইতিহাস টেনে আনার কারণ ২০০৮ সালের এই দিনে অর্থাৎ ১১ জানুয়ারি পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন স্যার এডমন্ড হিলারি।
মৌচাষি হিলারি
নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডে জন্ম এডমন্ড হিলারির, সালটা ১৯১৯। পেশায় ছিলেন মৌচাষি। তবে পর্বতারোহণে আগ্রহ শুরু হয়েছিল স্কুলে পড়ার সময়ই। গ্রীষ্মে করতেন মৌচাষ, শীতে চষে বেড়াতেন নিউজিল্যান্ডের পর্বতগুলোয়। তারপর আল্পস এবং হিমালয়ের একের পর এক চূড়া জয় করে প্রস্তুত হয়ে ওঠেন এভারেস্টের চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্য। আর সেটা ছিল বিশাল এক চ্যালেঞ্জ। ১৯২০ থেকে ১৯৫২ সালের মধ্যে তিব্বত ও নেপালে অবস্থিত পর্বতটি জয়ের ৭টি বড় অভিযান ব্যর্থ হয়।
ভয়ংকর পথ
হিমালয়ের সবচেয়ে উঁচু এই পর্বত জয়ে হিলারিদের অভিযানের শুরু ১৯৫৩ সালের মার্চের ১০ তারিখ। ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল স্যার জন হান্ট নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ১৪ অভিযাত্রী, ৩৬ শেরপা এবং মালামাল বহন করা ৩৬০ জন কুলির। হিলারি, তেনজিংসহ দলের বাকি সদস্যরা নেপালের কাঠমাণ্ডু থেকে যাত্রা শুরু করেন। ১২ হাজার ফুটের বেশি উচ্চতায় বেজ ক্যাম্প স্থাপন করলেন তাঁরা। এখান থেকে পর্বতের ওপরের দিকে ওঠেন তাঁরা। তবে নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে এভারেস্ট জয়ের চূড়ান্ত চেষ্টায় অংশ নিতে পারেন কেবল দলটির দুই সদস্য—এডমন্ড হিলারি এবং তেনজিং নোরগে।
দুজনেই গায়ে চাপিয়েছেন আট প্রস্থ পোশাক, হাতে দস্তানা। পিঠে ৪০ পাউন্ডের অক্সিজেন ট্যাংক। উচ্চতার কারণে বাতাস এখানে অনেক হালকা। মানে এখানে অক্সিজেনের ঘাটতি আছে। কিন্তু পর্বতারোহীদের বেঁচে থাকার জন্য বাড়তি অক্সিজেন দরকার, অন্তত ২৫ হাজার ফুট উচ্চতায়। অনেকে এই উচ্চতাকে এভারেস্টের ডেথ জোনের শুরু বলে উল্লেখ করেন।
হিলারি এবং তেনজিং চূড়ায় পৌঁছাতে যাত্রা শুরু করলেন। আগের মতোই কোমরে বাঁধা দড়ি তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করেছে। সরু, কয়েক ফুট চওড়া একটি শৈলশিরা ধরে ওপরে উঠছেন দুই পর্বতারোহী। নরম তুষার এই চলাকে আরও কঠিন করে তুলেছে। এক সময় নরম তুষারের রাজ্য শেষ হলো। এর জায়গা নিল তুলনামূলক শক্ত বরফ। বরফে পা ফেলে একটু নিশ্চিন্তে এগোতে পারছেন দুজনে। তবে ঝুঁকি ছিল তখনো। তাঁদের ডানে বরফের মোচড়ানো কার্নিশ, পাশ থেকেই পর্বতের কিনারা খাড়া নেমে গেছে ৮ হাজার ফুট। বামে সংকীর্ণ পাথুরে তাক।
২৯ মে। সকাল ৬টা ৩০ মিনিট। হিলারি তেনজিং নোরগেকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘সব ঠিক আছে তো?’ সঙ্গে সঙ্গে উত্তর পেলেন, ‘হ্যাঁ, ঠিক আছে।’ আর মাত্র ১ হাজার ১০০ ফুট, তারপরই ইতিহাসের অংশ হয়ে যাবেন তাঁরা।
বড় বাধা
বরফ ভেঙে এগোনোর সময় হিলারির নিশ্বাস নিতে রীতিমতো কষ্ট হচ্ছে। অক্সিজেনের নলের ভেতর বরফ জমতে শুরু করেছে যে। একটু পরপরই নল পরিষ্কার করছেন দুজনেই। দুই অভিযাত্রী এক সময় চল্লিশ ফুট উঁচু একটা পাথরের দেয়ালের সামনে চলে এলেন। হিলারি জুতার স্পাইক ব্যবহার করে পাথরের দেয়াল এবং একটা তাকের মাঝখান দিয়ে উঠতে শুরু করলেন। দেয়ালের ওপর পৌঁছে তেনজিংকে দড়ি ধরে টেনে ওপরে তুললেন। আবার শুরু হলো বরফ ভেঙে পাহাড়ের ওপর ওঠা।
একেবারে ওপরে
কয়েক ঘণ্টা পার হয়ে গেল। চলার গতি ধীর হয়ে এসেছে। ধৈর্যের শেষ সীমায় যেন পৌঁছে গেছেন তাঁরা। তবে ঢাল বেয়ে শেষ অংশটা পেরিয়ে হঠাৎই পৌঁছে গেলেন একেবারে ওপরে, শিখরে। তাঁরা এখন এভারেস্টের চূড়ায়।
দুজন মানুষ পরস্পরকে আলিঙ্গন করলেন, একে অপরের হাত ধরে ঝাঁকাতে লাগলেন পাগলের মতো। পনেরো মিনিট পর এভারেস্টের চূড়ার মনোমুগ্ধকর, রাজকীয় দৃশ্যকে বিদায় জানিয়ে নিচে নামতে শুরু করলেন দুজনে। তখনো বিশ্বাস হচ্ছে না এমন এক জায়গায় গিয়েছেন, যেখানে তাঁদের আগে কেউ পৌঁছাতে পারেনি। এমন দৃশ্য দেখেছেন, যা আগে কেউ দেখেনি।
হিলারি-তেনজিং এভারেস্ট জয়ের পর ৪ হাজারের মতো পর্বতারোহী সর্বোচ্চ চূড়াটিতে (২৯,০৩১. ৬৯ ফুট) পৌঁছান। তবে পৃথিবীর সর্বোচ্চ চূড়াটি যে অজেয় নয় তা প্রমাণ করেন স্যার এডমন্ড হিলারি আর তেনজিং নোরগেই। তাই পর্বতারোহীসহ সব রোমাঞ্চপ্রেমীর মনেই অমর হয়ে আছেন তাঁরা।
নেপালের সাধারণ মানুষের কল্যাণে
এভারেস্টজয় রাতারাতি বিশ্বজুড়ে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দিল হিলারিকে। অন্য পর্বতারোহীদের সঙ্গে ব্রিটেনে পৌঁছতেই রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ নাইট উপাধিতে ভূষিত করলেন এডমন্ড হিলারিকে। ১৯৫৮ সালে দক্ষিণ মেরু অভিযানে যান হিলারি। জয় করলেন উত্তর মেরুও। আরও বিভিন্ন পর্বত অভিযানে নেতৃত্ব দিলেও যত দিন গড়াতে লাগল নেপালের সাধারণ মানুষের কল্যাণই হয়ে উঠল তাঁর ধ্যান-জ্ঞান। ষাটের দশকে নেপালে বেশ কিছু ক্লিনিক, হাসপাতালের পাশাপাশি ১৭টি বিদ্যালয় স্থাপনে বড় ভূমিকা রাখলেন হিলারি। তাঁর প্রতিষ্ঠিত অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিমালয়ান ট্রাস্টের মাধ্যমে কাজটি করেন তিনি।
এ সময় এ উন্নয়নকাজগুলো সহজে করার জন্য দুটি এয়ারস্ট্রিপ স্থাপন করা হয়। এর ফলাফল হিসেবে নেপালের প্রত্যন্ত এলাকায় পর্যটক ও পর্বতারোহণে আগ্রহীদের চাপ অপ্রত্যাশিতরকম বেড়ে যায়। পর্বতারোহীদের জ্বালানির জোগান দিতে গিয়ে নির্বিচারে জঙ্গলের গাছ কাটতে শুরু করল নেপালিরা। বিষয়টি নজর এড়াল না স্যার এডমন্ড হিলারির। তিনি নেপাল সরকারকে চাপ দিলেন জঙ্গল রক্ষায় আইন পাশ ও এভারেস্টের আশপাশের এলাকাকে ন্যাশনাল পার্ক বা জাতীয় উদ্যান ঘোষণার জন্য। নিজের জনপ্রিয়তা ও প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে নিউজিল্যান্ড সরকারকেও রাজি করালেন এ বিষয়ে সব ধরনের সাহায্য করতে।
হিলারির বই
এদিকে সফল এভারেস্ট অভিযানের পর হিলারি ও স্যার জন হান্ট অভিযান নিয়ে তাঁদের অভিজ্ঞতাকে বন্দী করলেন দুই মলাটের মধ্যে, দ্য অ্যাসসেন্ট অব এভারেস্ট নামে। বইটি ইংল্যান্ডে এ নামে প্রকাশিত হলেও যুক্তরাষ্ট্রে প্রকাশ পেল দ্য কনকোয়েস্ট অব এভারেস্ট নামে। স্যার এডমন্ড হিলারির আত্মজীবনী নাথিং ভেনচার, নাথিং উইন বের হয় ১৯৭৫ সালে। ১৯৭৭ সালে হিমালয়ে গঙ্গা নদীর উৎস পর্যন্ত এক অভিযান চালান হিলারি। এই অভিযান নিয়ে তাঁর বই ফ্রম দ্য ওশান টু দ্য স্কাই প্রকাশ পায় ১৯৭৯ সালে।
চিরবিদায়
তবে এর মধ্যে ব্যক্তিগত জীবনে বড় বিপর্যয় নেমে আসে হিলারির। ১৯৭৫ সালে তাঁর স্ত্রী লুইজি এবং মেয়ে বেলিন্দা নেপালে প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত হন। ফাফলু গ্রামে হিলারির সঙ্গে দেখা করতে আসছিলেন তাঁরা। সেখানে হাসপাতাল তৈরি কাজ করছিলেন হিলারি। জীবনের বাকিটা সময় নেপালি জনসাধারণের উপকারে বিভিন্ন কাজ ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করে যান হিলারি। টাইম ম্যাগাজিন বিশ শতকের সবচেয়ে প্রভাব বিস্তারকারী ১০০ মানুষের মধ্যে একজন হিসেবে তাঁকে নির্বাচিত করে। দেশের, নেপালের ও সারা পৃথিবীতে তাঁর ভক্তদের শোকে স্তব্ধ করে দিয়ে নিউজিল্যান্ডে নিজ বাড়িতে ২০০৮ সালের এই দিনে মানে জানুয়ারির ১১ তারিখ মৃত্যুবরণ করেন স্যার এডমন্ড হিলারি।
তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ওয়ার্ল্ড ম্যাগাজিন, অ্যাচিভমেন্ট ডট অর্গ, উইকিপিডিয়া
উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন আত্মঘাতী ড্রোনের ব্যাপক উৎপাদন শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁর মতে, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে এমন ড্রোনের ব্যবহার বাড়ার প্রেক্ষাপটে সামরিক মতবাদেও দ্রুত পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। আজ শুক্রবার উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ—এর বরাত দিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদ
২০ মিনিট আগেযুক্তরাষ্ট্রে কুখ্যাত ৯ / ১১ এর মতো আরেকটি ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা করছিল এক মার্কিন যুবক। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মার্কিন বিচার বিভাগ গতকাল বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের হিউস্টনের বাসিন্দা আনাস সাইদের (২৮) বিরুদ্ধে ইসলামিক স্টেট (আইএসআইএস) সন্ত্রাসীদের
১ ঘণ্টা আগেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, তিনি রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়রকে স্বাস্থ্য ও মানবসেবা মন্ত্রণালয়ের (এইচএইচএস) প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেবেন। তিনি বলেছেন, সাবেক এই ডেমোক্র্যাট নেতা (কেনেডি জুনিয়র) এই পদে থেকে ‘ক্ষতিকর রাসায়নিক ও দূষণ থেকে সবার সুরক্ষা নিশ্চিত ক
৩ ঘণ্টা আগেস্বাধীনতা যুদ্ধের পর এই প্রথম কোনো পাকিস্তানি মালবাহী জাহাজ বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়েছে। গতকাল বুধবার পাকিস্তানের করাচি থেকে ছেড়ে আসা জাহাজটি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে ভেড়ে। নানা কারণেই পাকিস্তানি মালবাহী জাহাজটির বাংলাদেশের বন্দরে ভেড়ার বিষয়টিকে ঐতিহাসিক বলা হচ্ছে। আর এই ঐতিহাসিক বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্
৩ ঘণ্টা আগে