ডা. গুলজার হোসেন
হিমোফিলিয়া একটি অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণজনিত রোগ। এটি বংশগত রোগ, যা জিনের মাধ্যমে উত্তর প্রজন্মে পরিবাহিত হয়। বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১৩ কোটি শিশু জন্মগ্রহণ করে। এর মধ্যে ২০ হাজার শিশু হিমোফিলিয়া নিয়ে জন্মায়। বিশ্বে ১০ হাজারে একজন এই রোগে ভুগছে, যাদের ৭৫ শতাংশই সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত।
আজ বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস। প্রতিবছর ১৭ এপ্রিল হিমোফিলিয়া রোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী দিবসটি উদ্যাপন করা হয়। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে দিবসটি আজ নানা রকম কর্মসূচির মাধ্যমে উদ্যাপিত হচ্ছে।
আমাদের শরীরের কোথাও কেটে গেলে রক্তপাত হয়। শরীরের নিয়মেই বিশেষ প্রক্রিয়ায় এই রক্তপাত থেমেও যায়। রক্ত জমাট বাঁধতে কাজ করে প্লেটলেটসহ নানা রকম উপাদান। রক্ত জমাট বাঁধায় সমস্যার সৃষ্টি হলে, শরীরের কোথাও কেটে গেলে রক্তপাত সহজে বন্ধ হয় না। মেয়েরা সাধারণত এই রোগে আক্রান্ত হয় না, তবে রোগের বাহক হয়। এ রোগ ও এর প্রতিকার সম্পর্কে ধারণা থাকলে আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে অনাগত শিশুকে মুক্ত রাখা সম্ভব।
হিমোফিলিয়া কীভাবে হয়
আগেই বলেছি, হিমোফিলিয়া একটি বংশানুক্রমিক জিনগত রোগ। এই রোগে রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। তাই শরীরে কোথাও কেটে গেলে আর রক্তপাত বন্ধ হয় না। আমাদের শরীরের এক্স ক্রোমোজোমে এফ৮ ও এফ৯ নামক জিন থাকে, যা ফ্যাক্টর-৮ ও ফ্যাক্টর-৯ নামক প্রোটিন তৈরির কাজে জড়িত। শরীরের কোথাও কেটে গেলে রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে এই ফ্যাক্টরগুলো কাজ করে। এই প্রোটিন স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কম পরিমাণে থাকলে রক্ত জমাট বাঁধায় সমস্যা দেখা দেয়। কোথাও কেটে গেলে রক্তপাত সহজে বন্ধ হয় না। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় তখন এই রোগকে বলা হয় হিমোফিলিয়া। এই রোগ সাধারণত দুই ধরনের—হিমোফিলিয়া-এ ও হিমোফিলিয়া-বি। এ ছাড়া হিমোফিলিয়া-সি নামেও একধরনের রোগ আছে, যা খুবই বিরল।
রোগের লক্ষণ
অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ বা কেটে গেলে রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়াটাই হিমোফিলিয়ার মূল লক্ষণ। সাধারণত শিশু বয়সে এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়।
হিমোফিলিয়ার বংশগতি
সুতরাং প্রত্যেক হিমোফিলিয়া পুরুষ রোগী বিয়ে করতে পারবেন, তবে সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সাধারণত পুরুষেরাই এ রোগে আক্রান্ত হন এবং নারীরা এই রোগের বাহক। তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে নারীরাও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। বাবা রোগী ও মা বাহক হলে মেয়েরাও রোগী হতে পারে। তাই হিমোফিলিয়া রোগীর সঙ্গে নিকটাত্মীয়, যেমন খালাতো, মামাতো বা ফুপাতো বোনের বিয়ে হলে দুজনেই রোগী হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।
বাংলাদেশে হিমোফিলিয়া রোগীর সংখ্যা
বাংলাদেশে কতসংখ্যক হিমোফিলিয়া রোগী আছে, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে বিশ্ব জরিপে দেখা যায়, বিশ্বে প্রতি ১০ হাজারে একজন হিমোফিলিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। সেই হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার হওয়ার কথা। তবে দেশীয় এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আনুমানিক ৩ থেকে ৪ হাজার রোগী নিয়মিতভাবে চিকিৎসাসেবার আওতায় আছে।
আসলে বিশ্বের কোথাও এই রোগের সঠিক পরিসংখ্যান নেই। শুধু যারা চিকিৎসার আওতায় আসে, তাদের হিসাব থেকেই এই জরিপগুলো চালানো হয়।
হিমোফিলিয়ার চিকিৎসা
অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ থেকে সাবধান থাকাই এই রোগের প্রধান চিকিৎসা। তাই আক্রান্ত রোগীকে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলতে হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা, ক্রাইয়োপ্রেসিপিটেট পরিসঞ্চালন করতে হয়। ফ্যাক্টর-৮ ও ফ্যাক্টর-৯, যা এই রোগীদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি হয় না, সেগুলো ইনজেকশনের মাধ্যমে নিতে হয়। এসব ইনজেকশন অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ফলে হিমোফিলিয়া রোগের সঠিক চিকিৎসা বাংলাদেশের বেশির ভাগ রোগীরই নাগালের বাইরে। সঠিক চিকিৎসার অভাবে অনেক বাবা-মা অকালে তাঁদের সন্তান হারান।
হিমোফিলিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর সম্পূর্ণ নিরাময়ের জন্য জিন থেরাপির বিষয়টি গবেষণায় রয়েছে এবং উন্নত দেশগুলোতে জিন থেরাপি সফলভাবে সম্পন্ন করা হচ্ছে। কিন্তু স্বল্প উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এখনো জিন থেরাপি চালু হয়নি।
লেখক: রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাক
হিমোফিলিয়া একটি অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণজনিত রোগ। এটি বংশগত রোগ, যা জিনের মাধ্যমে উত্তর প্রজন্মে পরিবাহিত হয়। বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ১৩ কোটি শিশু জন্মগ্রহণ করে। এর মধ্যে ২০ হাজার শিশু হিমোফিলিয়া নিয়ে জন্মায়। বিশ্বে ১০ হাজারে একজন এই রোগে ভুগছে, যাদের ৭৫ শতাংশই সঠিক চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত।
আজ বিশ্ব হিমোফিলিয়া দিবস। প্রতিবছর ১৭ এপ্রিল হিমোফিলিয়া রোগ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশ্বব্যাপী দিবসটি উদ্যাপন করা হয়। বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে দিবসটি আজ নানা রকম কর্মসূচির মাধ্যমে উদ্যাপিত হচ্ছে।
আমাদের শরীরের কোথাও কেটে গেলে রক্তপাত হয়। শরীরের নিয়মেই বিশেষ প্রক্রিয়ায় এই রক্তপাত থেমেও যায়। রক্ত জমাট বাঁধতে কাজ করে প্লেটলেটসহ নানা রকম উপাদান। রক্ত জমাট বাঁধায় সমস্যার সৃষ্টি হলে, শরীরের কোথাও কেটে গেলে রক্তপাত সহজে বন্ধ হয় না। মেয়েরা সাধারণত এই রোগে আক্রান্ত হয় না, তবে রোগের বাহক হয়। এ রোগ ও এর প্রতিকার সম্পর্কে ধারণা থাকলে আক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে অনাগত শিশুকে মুক্ত রাখা সম্ভব।
হিমোফিলিয়া কীভাবে হয়
আগেই বলেছি, হিমোফিলিয়া একটি বংশানুক্রমিক জিনগত রোগ। এই রোগে রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। তাই শরীরে কোথাও কেটে গেলে আর রক্তপাত বন্ধ হয় না। আমাদের শরীরের এক্স ক্রোমোজোমে এফ৮ ও এফ৯ নামক জিন থাকে, যা ফ্যাক্টর-৮ ও ফ্যাক্টর-৯ নামক প্রোটিন তৈরির কাজে জড়িত। শরীরের কোথাও কেটে গেলে রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে এই ফ্যাক্টরগুলো কাজ করে। এই প্রোটিন স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে কম পরিমাণে থাকলে রক্ত জমাট বাঁধায় সমস্যা দেখা দেয়। কোথাও কেটে গেলে রক্তপাত সহজে বন্ধ হয় না। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় তখন এই রোগকে বলা হয় হিমোফিলিয়া। এই রোগ সাধারণত দুই ধরনের—হিমোফিলিয়া-এ ও হিমোফিলিয়া-বি। এ ছাড়া হিমোফিলিয়া-সি নামেও একধরনের রোগ আছে, যা খুবই বিরল।
রোগের লক্ষণ
অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ বা কেটে গেলে রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়াটাই হিমোফিলিয়ার মূল লক্ষণ। সাধারণত শিশু বয়সে এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়।
হিমোফিলিয়ার বংশগতি
সুতরাং প্রত্যেক হিমোফিলিয়া পুরুষ রোগী বিয়ে করতে পারবেন, তবে সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সাধারণত পুরুষেরাই এ রোগে আক্রান্ত হন এবং নারীরা এই রোগের বাহক। তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে নারীরাও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। বাবা রোগী ও মা বাহক হলে মেয়েরাও রোগী হতে পারে। তাই হিমোফিলিয়া রোগীর সঙ্গে নিকটাত্মীয়, যেমন খালাতো, মামাতো বা ফুপাতো বোনের বিয়ে হলে দুজনেই রোগী হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন।
বাংলাদেশে হিমোফিলিয়া রোগীর সংখ্যা
বাংলাদেশে কতসংখ্যক হিমোফিলিয়া রোগী আছে, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে বিশ্ব জরিপে দেখা যায়, বিশ্বে প্রতি ১০ হাজারে একজন হিমোফিলিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। সেই হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ১৭ হাজার হওয়ার কথা। তবে দেশীয় এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আনুমানিক ৩ থেকে ৪ হাজার রোগী নিয়মিতভাবে চিকিৎসাসেবার আওতায় আছে।
আসলে বিশ্বের কোথাও এই রোগের সঠিক পরিসংখ্যান নেই। শুধু যারা চিকিৎসার আওতায় আসে, তাদের হিসাব থেকেই এই জরিপগুলো চালানো হয়।
হিমোফিলিয়ার চিকিৎসা
অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ থেকে সাবধান থাকাই এই রোগের প্রধান চিকিৎসা। তাই আক্রান্ত রোগীকে নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলতে হয়। প্রয়োজন অনুযায়ী ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা, ক্রাইয়োপ্রেসিপিটেট পরিসঞ্চালন করতে হয়। ফ্যাক্টর-৮ ও ফ্যাক্টর-৯, যা এই রোগীদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি হয় না, সেগুলো ইনজেকশনের মাধ্যমে নিতে হয়। এসব ইনজেকশন অত্যন্ত ব্যয়বহুল। ফলে হিমোফিলিয়া রোগের সঠিক চিকিৎসা বাংলাদেশের বেশির ভাগ রোগীরই নাগালের বাইরে। সঠিক চিকিৎসার অভাবে অনেক বাবা-মা অকালে তাঁদের সন্তান হারান।
হিমোফিলিয়া রোগে আক্রান্ত রোগীর সম্পূর্ণ নিরাময়ের জন্য জিন থেরাপির বিষয়টি গবেষণায় রয়েছে এবং উন্নত দেশগুলোতে জিন থেরাপি সফলভাবে সম্পন্ন করা হচ্ছে। কিন্তু স্বল্প উন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে এখনো জিন থেরাপি চালু হয়নি।
লেখক: রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাক
শীত এসে গেছে। এ ঋতুতে আবহাওয়া দীর্ঘ সময়ের জন্য বদলে যায়। ফলে এর প্রভাব পড়ে শরীরের ওপর। শীতের নেতিবাচক প্রভাব কমাতে শক্তিশালী করে তুলতে হবে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা।
৩ ঘণ্টা আগে‘যব কই বাত বিগার যায়ে...’ বরেণ্য ভারতীয় সংগীতশিল্পী কুমার শানুর এই গান ক্যানসার রোগ উপশমের জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে বাজানো হয়। মূলত রোগ উপশমের জন্য মিউজিক থেরাপি এখন পৃথিবীতে স্বীকৃত একটি পদ্ধতি। সংগীতের মতো শিল্পকর্মও মানুষের মস্তিষ্কে বিভিন্ন ধরনের অনুভূতির সৃষ্টি করে। অনেক গবেষণায় উঠে এসেছে, এমন অভ
৩ ঘণ্টা আগেবয়স বাড়ার সঙ্গে জীবনের সঙ্গী হয় বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যা। পুরুষের প্রোস্টেট সমস্যা তেমনই একটি। এ সমস্যার রয়েছে প্রাকৃতিক সমাধান।
৩ ঘণ্টা আগেজ্বর, শরীরে ব্যথা এবং ক্লান্তি ফ্লুর সাধারণ লক্ষণ। এগুলো হলে বুঝতে হবে, আপনি ফ্লুতে আক্রান্ত। সাধারণত ফ্লু প্রাণঘাতী নয়। তবে কখনো কখনো বিশেষ কোনো কারণে এটি বেশি হয়ে গেলে হাসপাতালে যেতে হতে পারে। ফ্লুর সংক্রমণের সঙ্গে নিউমোনিয়া হলে সেটি আর সাধারণ থাকে না। তখন হাসপাতালে যেতে হয়।
৩ ঘণ্টা আগে