ডায়াবেটিসের ওষুধ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়: গবেষণা

অনলাইন ডেস্ক    
প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩: ২৪
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩: ২৮
টাইপ ২ ডায়াবেটিসের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসার ওষুধ হলো—মেটফরমিন। ছবি: ড্রাগ টার্গেট রিভিউ

ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ব্যবহৃত প্রচলিত ওষুধগুলো হৃদ্‌রোগের উচ্চ ঝুঁকির সঙ্গে সম্পর্কিত বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা। টাইপ ২ ডায়াবেটিসের চিকিৎসায় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত সালফোনাইলিউরিয়া এবং বেসাল ইনসুলিন নামের দুটি ওষুধ হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, হৃৎপিণ্ডের বিকলতার মতো গুরুতর হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় এই তথ্য জানানো হয়েছে।

গবেষণাটি পরিচালিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা। টাইপ ২ ডায়াবেটিসের কার্যকর ও নিরাপদ ওষুধের বাইরে অন্য কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি বাছাইয়ের সময় সতর্ক থাকার প্রয়োজনীয়তার কথা এই গবেষণা বলা হয়েছে।

অধিকাংশ রোগীর জন্য টাইপ ২ ডায়াবেটিসের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসার ওষুধ হলো—মেটফরমিন। এই ওষুধ রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। তবে যখন মেটফরমিন যথেষ্ট কার্যকরী না হয় বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, তখন চিকিৎসকেরা প্রায়ই অন্য ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেন।

সবচেয়ে সাধারণভাবে নির্বাচিত ওষুধগুলোর মধ্যে রয়েছে সালফোনাইলিউরিয়া এবং বেসাল ইনসুলিন। একত্রে এই ওষুধগুলো যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় পর্যায়ের চিকিৎসা প্রয়োজন এমন ৬০ শতাংশ এরও বেশি রোগীকে সেবনের পরামর্শ দেওয়া হয়।

জামা নেটওয়ার্ক ওপেন এ প্রকাশিত গবেষণায় টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ১ লাখ ৩২ হাজার ৭৩৭ রোগীর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে, যারা দ্বিতীয় পর্যায়ের চিকিৎসা শুরু করেছিলেন। এই গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল—দ্বিতীয় পর্যায়ে চিকিৎসায় ব্যবহৃত ছয়টি প্রধান ডায়াবেটিস ওষুধের সঙ্গে হৃদ্‌রোগের সম্পর্ক ফলাফল তুলনা করা।

গবেষণায় দেখা যায় যে, সালফোনাইলিউরিয়া এবং বেসাল ইনসুলিন নতুন ওষুধ, যেমন ডিপিপি–৪ ইনহিবিটরের তুলনায় হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি অনেক বেশি বাড়িয়ে দেয়।

সালফোনাইলিউরিয়া গ্রহণ করা রোগীদের হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের মতো ঝুঁকি ৩৬ শতাংশ বেড়ে গিয়েছিল। বেসাল ইনসুলিন ব্যবহারের রোগীদের জন্য এই ঝুঁকি আরও বেশি ছিল, যার ফলে তাদের হৃদ্‌রোগের ক্ষতির সম্ভাবনা দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল।

গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৩৭ জন দুই বছর ধরে বেসাল ইনসুলিন গ্রহণ করেছেন। তাদের মধ্যে অন্তত একজন গুরুতর হৃদ্‌রোগজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হন। অন্যদিকে সালফোনাইলিউরিয়া ব্যবহারের জন্য এই সংখ্যা ছিল ১০৩ জন রোগী।

গবেষণাটি ম্যাথিউ ও’ব্রায়ানের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। গবেষণার লেখকেরা দ্বিতীয়-পর্যায়ের ডায়াবেটিস ওষুধগুলোর ব্যবস্থাপত্র পুনঃ মূল্যায়নের আহ্বান জানিয়েছেন। তারা পরামর্শ দিয়েছেন যে, চিকিৎসকদের জিএলপি–১ আগোনিস্ট (যেমন, লিরাগ্লুটাইড), এসজিএলটি–২ ইনহিবিটার (যেমন: এমপাগ্লিফ্লোজিন), বা ডিপিপি–৪ ইনহিবিটার (যেমন, সিটাগ্লিপটিন) এর মতো নতুন ওষুধের শ্রেণি বিবেচনা করা উচিত।

এই নতুন ওষুধগুলো হৃদরোগ সম্পর্কিত সমস্যার ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করবে। তবে এগুলো সালফোনাইলিউরিয়ার তুলনায় অনেক বেশি ব্যয়বহুল। পুরোনো ওষুধগুলো এখনো ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হওয়ার এটি একটি প্রধান কারণ।

স্বাস্থ্যসেবায় খরচ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে এই গবেষণা জোর দিয়ে বলেছে, রোগী ও চিকিৎসকদের সস্তা ওষুধ এবং তাদের দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকির মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রাখতে হবে।

রোগীদের সালফোনাইলিউরিয়া এবং বেসাল ইনসুলিনের সঙ্গে সম্পর্কিত হৃদ্‌রোগের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে জানানো উচিত। বিশেষত যদি তাদের আগে থেকেই হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি থাকে।

গবেষণার ফলাফলগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, টাইপ ২ ডায়াবেটিস চিকিৎসা পদ্ধতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের প্রয়োজন।

নতুন ওষুধগুলো প্রাথমিকভাবে বেশি ব্যয়বহুল হতে পারে। তবে এগুলো দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা, যেমন হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক কমিয়ে রোগীর স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে এবং শেষমেষ সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবার খরচও কমাতে পারে।

রোগী এবং চিকিৎসকদের একসঙ্গে কাজ করে এমন চিকিৎসা পদ্ধতি নির্বাচন করতে হবে যা কার্যকারিতা, নিরাপত্তা এবং খরচের মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রাখে। এদিকে নিরাপদ এবং নতুন ওষুধগুলো যেন বেশি সহজলভ্য হয়, সে জন্য গবেষণা এবং নীতিগত পরিবর্তনগুলো সাহায্য করতে পারে। বিশেষত তাদের জন্য যারা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

তথ্যসূত্র: নোরিডজ

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত