ডা. সাজেদুল ইসলাম নাহিম
আজ ১৪ জুন, বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। নিরাপদ রক্ত নিশ্চিত করা এবং স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের উৎসাহ দিতেই বিশ্বজুড়ে ২০০৪ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এবার দিবসটি ‘গিভ ব্লাড গিভ প্লাজমা শেয়ার লাইফ শেয়ার অফেন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হচ্ছে। এ বছর বিশ্ব রক্তদাতা দিবসের আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানের আয়োজক আলজেরিয়া। বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে এই দিবস। দেশে রক্তের চাহিদা পূরণে স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে থাকছে নানা কর্মসূচি।
প্রতিবছর বাংলাদেশ ৮-১০ লাখ ব্যাগ রক্তের চাহিদা রয়েছে। এর একটা বড় অংশ পূরণ করে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন, সন্ধানী, রেড ক্রিসেন্টসহ বেসরকারি সংস্থা। এর মধ্যে ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে দুই দশকের যাত্রায় কোয়ান্টাম গড়েছে ৪ লাখ ৭৪ হাজার স্বেচ্ছা রক্তদাতার সুসংগঠিত ডোনার পুল। আর জীবন বাঁচানোর জন্য এ পর্যন্ত সরবরাহ করেছে ১৫ লক্ষাধিক ইউনিট রক্ত ও রক্তের উপাদান। ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি, মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি।’ গোবিন্দ হালদারের লেখা ও আপেল মাহমুদের সুরে একটি বিখ্যাত গানের কথা। বাঙালি বীরের জাতি, সেটার অনেক প্রমাণ আছে। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ প্রমাণ করেছে সে লড়তে জানে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বুকের রক্ত দিতে পারে। জীবনের জন্য প্রয়োজন রক্তের। রক্তের সংকটে সাধারণত যারা ভোগে, তারা আমাদেরই স্বজন, ভাইবোন।
প্রতিদিন আমাদের যে পরিমাণ রক্তের প্রয়োজন, সেটা পর্যাপ্ত পাওয়া যায় না। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার বা স্বেচ্ছায় রক্তদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে গেলে দেখা যায় রক্তের জন্য হাহাকার। হয়তো ২৪ ঘণ্টায় প্রয়োজন ২০০ ব্যাগের, সরবরাহ আছে ১৫০ ব্যাগের। অর্থাৎ আরও ৫০ জন রক্ত পাবেন না। অপারেশন ছাড়াও থেলাসামিয়া রোগসহ বিভিন্ন কারণে শরীরে রক্তের ঘাটতি হতে পারে। এ সময় প্রয়োজন বিশুদ্ধ রক্ত।
আর প্রয়োজনীয় রক্ত না পাওয়া মানে মৃত্যুর ঝুঁকি। অবাক করা বিষয়, ১৬ থেকে ১৮ কোটি মানুষের আমাদের দেশে একসময় বেশির ভাগ রক্তই আসত পেশাদার রক্ত বিক্রেতা ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে। তবে এখন স্বেচ্ছা রক্তদান প্রতিষ্ঠান থেকেই বেশির ভাগ রক্ত আসে। তার পরও ঘাটতি অনেক বেশি। আর পেশাদার রক্ত বিক্রেতাদের অধিকাংশই সিফিলিস, হেপাটাইটিস-বি বা এইডসসহ নানা রোগে আক্রান্ত। ফলে এই দূষিত রক্ত পরিসঞ্চালিত হয়ে রক্তগ্রহীতা আক্রান্ত হন দুরারোগ্য ব্যাধিতে। প্রয়োজনের সময়ে রক্ত পাওয়া এবং দূষিত রক্তের অভিশাপ থেকে মুমূর্ষু মানুষকে রক্ষা করার জন্যই প্রয়োজন নিরাপদ ও সুস্থ রক্তের।
এর জন্য প্রয়োজন সচেতন তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসা। কারণ স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে যেকোনো সুস্থ মানুষ নিজের কোনো ক্ষতি না করেই একজন মুমূর্ষু মানুষকে বাঁচাতে পারে।
আমাদের দেশে বছরে ৮ থেকে থেকে ১০ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। এই রক্তের অভাবে অনেক ক্ষেত্রে মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসা শুরু করা যায় না।
কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত রোগীর ডায়ালাইসিস করার পরও রক্তের অভাবে দুশ্চিন্তায় ভোগে ভুক্তভোগী রোগীর পরিবার। অসহনীয় শারীরিক যন্ত্রণা সহ্য করে অপেক্ষা করতে থাকে এক ব্যাগ রক্তের জন্য।
যখনই খবর পান রক্ত পাওয়া গেছে, তখন প্রাণ ভরে তাঁর জন্য দোয়া করেন। স্বেচ্ছা রক্তদাতারা হলেন মানুষের জীবন বাঁচানোর আন্দোলনের দূত।
ভালো কাজে মানুষ সব সময় অন্যকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়। বন্ধু রক্ত দিচ্ছেন দেখে তাঁর অন্য বন্ধুরাও রক্ত দিতে উদ্বুদ্ধ হন।
রক্তদান একটি মানবিক দায়বদ্ধতা, সামাজিক অঙ্গীকার। যিনি যে পেশায়ই থাকুন না কেন, সমাজের জন্য তার কিছু না কিছু করার আছে। এক ব্যাগ রক্তদানের মাধ্যমেও তিনি পালন করতে পারেন সামাজিক অঙ্গীকার।
একবার অন্তত ভাবুন, আপনার রক্তে বেঁচে উঠছে একটি অসহায় শিশু, একজন মৃত্যুপথযাত্রী মানুষ। সেই মুহূর্তে আপনার যে মানসিক তৃপ্তি, তাকে কখনোই অন্য কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনা করা সম্ভব নয়।
রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। রক্তদানের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরের মধ্যে অবস্থিত ‘বোন ম্যারো’ নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। দান করার দুই সপ্তাহের মধ্যেই নতুন রক্ত কণিকা জন্ম হয়ে এই ঘাটতি পূরণ করে।
আর প্রাকৃতিক নিয়মেই যেহেতু প্রতি চার মাস পর পর আমাদের শরীরের রেড সেল বদলায়, তাই বছরে তিনবার রক্ত দিলে শরীরের লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা আরো বেড়ে যায়।
ইংল্যান্ডে মেডিকেল পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নিয়মিত স্বেচ্ছা রক্তদাতারা দুরারোগ্য রোগব্যাধি থেকে প্রায়ই মুক্ত থাকেন। রক্তদাতার হৃদ্রোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও অনেক কম।
রক্তদান ধর্মীয় দিক থেকেও অত্যন্ত পুণ্য বা সওয়াবের কাজ। এটি এমন একটি দান, যার তাৎপর্য সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের সুরা মায়েদার ৩২ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘একজন মানুষের জীবন রক্ষা করা সমগ্র মানব জাতির জীবন রক্ষা করার মতো মহান কাজ।’
ঋগ্বেদে বলা হয়েছে, ‘নিঃশর্ত দানের জন্য রয়েছে চমৎকার পুরস্কার। তারা লাভ করে আশীর্বাদধন্য দীর্ঘজীবন ও অমরত্ব।’ আসলে সব ধর্মেই রক্তদানকে উৎসাহিত করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি বড় ইবাদত।
অনেকে নানা অজুহাতে রক্ত দিতে চান না। কারও সুঁইয়ের ভয়, কেউ অসুস্থ বা দুর্বল হওয়ার ভয়। কেউ ভাবেন, রক্ত দিলে হয়তো শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বে, দুর্বলতায় ভুগবে বা বড় কোনো ক্ষতি হবে তার। তা ছাড়া অনেকে ভাবেন, রক্ত যদি দিতেই হয়, তো সেটা যেন পরিবারের সদস্য, নিকটাত্মীয় বা বন্ধুর জরুরি প্রয়োজনে দেওয়া হয়, বাইরের মানুষকে নয়। এখন বাস্তবতা হচ্ছে, রক্ত দেওয়া হোক বা না হোক, নির্দিষ্ট একটা সময়ের ব্যবধানে তা এমনিই বদলে যায়। যেমন—রক্তের প্রধান তিন উপাদানের একটি অনুচক্রিকার আয়ু ৮-৯ দিন, শ্বেতকণিকার আয়ু ১৩-২০ দিন এবং লোহিত কণিকার আয়ু ১২০ দিন। নির্দিষ্ট এ সময় পর কণিকাগুলো নিজে নিজেই লিম্ফিটিক সিস্টেমের ভেতরে ধ্বংস হয়ে যায়।
রক্তদানের মাধ্যমে রক্তদাতার বরং উপকার হয়। রক্ত দেওয়ার সময় তার অনেকগুলো টেস্ট করা হয়। তার একটা ফ্রি মেডিকেল চেকআপ হয়ে যায়। যতবার রক্ত দেবে, ততবার ফ্রি মেডিকেল চেকআপ হয়ে যায়। রক্ত দেওয়ার আগে তার পালস দেখা হয়, ব্লাড প্রেশার দেখা হয় এবং রক্তের অনেকগুলো টেস্ট করা হয়। এর মাধ্যমে যদি তার কোনো অসুস্থতা থাকে, সেটা সে জানতে পারে এবং সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা নিতে পারে। এটা তার একটা বাড়তি লাভ।
এ ছাড়া যাঁরা নিয়মিত রক্ত দান করেন, তাঁদের হার্ট ডিজিস কম হয়। যেমন হার্টের এরিথমিয়া, হার্ট অ্যাটাক—এগুলো কমে যায়। কারণ রক্তদানের মাধ্যমে শরীর থেকে অতিরিক্ত আয়রন চলে যায়। অতিরিক্ত আয়রনের জন্য হার্টের ওপর একটা এফেক্ট পড়ে। এ ছাড়া রক্তে মাত্রাতিরিক্ত লৌহ শরীরের ব্লাড ভ্যাসেল স্ট্রিক্ট করে, এ থেকে তার স্ট্রোক হতে পারে। নিয়মিত রক্ত দান করলে স্ট্রোকের আশঙ্কা ৮৮ শতাংশ কমে যায়। এ ছাড়া রক্ত দেওয়ার মাধ্যমে ওবেসিটির পেসেন্টরাও উপকৃত হতে পারেন।
এ ছাড়া দেখা যাচ্ছে, রক্তে যদি আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকে, সেগুলো লিভারে জমা হয়, যা পরবর্তী সময়ে হেমোক্রোমাটোসিস সৃষ্টি করে। এখান থেকে লিভার সিরোসিস হয়। এমনকি ক্যানসারও হতে পারে। অতএব রক্ত দান করলে অনেকের ক্যানসার ঝুঁকি কমে যায়। যিনি রক্ত দিচ্ছেন, তার শরীরে ৬০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে রক্ত পূরণ হয়ে যায়।
অর্থাৎ, আমরা দাতা ছিলাম, এক মহান জাতি ছিলাম, আমাদের এক মহান ইতিহাস ছিল। ফলে সমৃদ্ধ অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে আমরা উন্নত মানবিক সম্পন্ন সুস্থ মানুষ হিসেবে পরিচয় অর্জন করব। মনে রাখতে হবে, দাতা কখনো গরিব হতে পারে না।
লেখক: এমবিবিএস (ইউএসটিসি), সিসিডি (বারডেম), পিজিটি (মেডিসিন)
আজ ১৪ জুন, বিশ্ব রক্তদাতা দিবস। নিরাপদ রক্ত নিশ্চিত করা এবং স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের উৎসাহ দিতেই বিশ্বজুড়ে ২০০৪ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এবার দিবসটি ‘গিভ ব্লাড গিভ প্লাজমা শেয়ার লাইফ শেয়ার অফেন’ প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হচ্ছে। এ বছর বিশ্ব রক্তদাতা দিবসের আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানের আয়োজক আলজেরিয়া। বাংলাদেশেও নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে এই দিবস। দেশে রক্তের চাহিদা পূরণে স্বেচ্ছা রক্তদাতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে থাকছে নানা কর্মসূচি।
প্রতিবছর বাংলাদেশ ৮-১০ লাখ ব্যাগ রক্তের চাহিদা রয়েছে। এর একটা বড় অংশ পূরণ করে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন, সন্ধানী, রেড ক্রিসেন্টসহ বেসরকারি সংস্থা। এর মধ্যে ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে দুই দশকের যাত্রায় কোয়ান্টাম গড়েছে ৪ লাখ ৭৪ হাজার স্বেচ্ছা রক্তদাতার সুসংগঠিত ডোনার পুল। আর জীবন বাঁচানোর জন্য এ পর্যন্ত সরবরাহ করেছে ১৫ লক্ষাধিক ইউনিট রক্ত ও রক্তের উপাদান। ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি, মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি।’ গোবিন্দ হালদারের লেখা ও আপেল মাহমুদের সুরে একটি বিখ্যাত গানের কথা। বাঙালি বীরের জাতি, সেটার অনেক প্রমাণ আছে। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ প্রমাণ করেছে সে লড়তে জানে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে বুকের রক্ত দিতে পারে। জীবনের জন্য প্রয়োজন রক্তের। রক্তের সংকটে সাধারণত যারা ভোগে, তারা আমাদেরই স্বজন, ভাইবোন।
প্রতিদিন আমাদের যে পরিমাণ রক্তের প্রয়োজন, সেটা পর্যাপ্ত পাওয়া যায় না। হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার বা স্বেচ্ছায় রক্তদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে গেলে দেখা যায় রক্তের জন্য হাহাকার। হয়তো ২৪ ঘণ্টায় প্রয়োজন ২০০ ব্যাগের, সরবরাহ আছে ১৫০ ব্যাগের। অর্থাৎ আরও ৫০ জন রক্ত পাবেন না। অপারেশন ছাড়াও থেলাসামিয়া রোগসহ বিভিন্ন কারণে শরীরে রক্তের ঘাটতি হতে পারে। এ সময় প্রয়োজন বিশুদ্ধ রক্ত।
আর প্রয়োজনীয় রক্ত না পাওয়া মানে মৃত্যুর ঝুঁকি। অবাক করা বিষয়, ১৬ থেকে ১৮ কোটি মানুষের আমাদের দেশে একসময় বেশির ভাগ রক্তই আসত পেশাদার রক্ত বিক্রেতা ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে। তবে এখন স্বেচ্ছা রক্তদান প্রতিষ্ঠান থেকেই বেশির ভাগ রক্ত আসে। তার পরও ঘাটতি অনেক বেশি। আর পেশাদার রক্ত বিক্রেতাদের অধিকাংশই সিফিলিস, হেপাটাইটিস-বি বা এইডসসহ নানা রোগে আক্রান্ত। ফলে এই দূষিত রক্ত পরিসঞ্চালিত হয়ে রক্তগ্রহীতা আক্রান্ত হন দুরারোগ্য ব্যাধিতে। প্রয়োজনের সময়ে রক্ত পাওয়া এবং দূষিত রক্তের অভিশাপ থেকে মুমূর্ষু মানুষকে রক্ষা করার জন্যই প্রয়োজন নিরাপদ ও সুস্থ রক্তের।
এর জন্য প্রয়োজন সচেতন তরুণ সমাজকে এগিয়ে আসা। কারণ স্বেচ্ছায় রক্তদানের মাধ্যমে যেকোনো সুস্থ মানুষ নিজের কোনো ক্ষতি না করেই একজন মুমূর্ষু মানুষকে বাঁচাতে পারে।
আমাদের দেশে বছরে ৮ থেকে থেকে ১০ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। এই রক্তের অভাবে অনেক ক্ষেত্রে মুমূর্ষু রোগীর চিকিৎসা শুরু করা যায় না।
কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত রোগীর ডায়ালাইসিস করার পরও রক্তের অভাবে দুশ্চিন্তায় ভোগে ভুক্তভোগী রোগীর পরিবার। অসহনীয় শারীরিক যন্ত্রণা সহ্য করে অপেক্ষা করতে থাকে এক ব্যাগ রক্তের জন্য।
যখনই খবর পান রক্ত পাওয়া গেছে, তখন প্রাণ ভরে তাঁর জন্য দোয়া করেন। স্বেচ্ছা রক্তদাতারা হলেন মানুষের জীবন বাঁচানোর আন্দোলনের দূত।
ভালো কাজে মানুষ সব সময় অন্যকে দেখে উদ্বুদ্ধ হয়। বন্ধু রক্ত দিচ্ছেন দেখে তাঁর অন্য বন্ধুরাও রক্ত দিতে উদ্বুদ্ধ হন।
রক্তদান একটি মানবিক দায়বদ্ধতা, সামাজিক অঙ্গীকার। যিনি যে পেশায়ই থাকুন না কেন, সমাজের জন্য তার কিছু না কিছু করার আছে। এক ব্যাগ রক্তদানের মাধ্যমেও তিনি পালন করতে পারেন সামাজিক অঙ্গীকার।
একবার অন্তত ভাবুন, আপনার রক্তে বেঁচে উঠছে একটি অসহায় শিশু, একজন মৃত্যুপথযাত্রী মানুষ। সেই মুহূর্তে আপনার যে মানসিক তৃপ্তি, তাকে কখনোই অন্য কোনো কিছুর সঙ্গে তুলনা করা সম্ভব নয়।
রক্তদান স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। রক্তদানের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরের মধ্যে অবস্থিত ‘বোন ম্যারো’ নতুন কণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়। দান করার দুই সপ্তাহের মধ্যেই নতুন রক্ত কণিকা জন্ম হয়ে এই ঘাটতি পূরণ করে।
আর প্রাকৃতিক নিয়মেই যেহেতু প্রতি চার মাস পর পর আমাদের শরীরের রেড সেল বদলায়, তাই বছরে তিনবার রক্ত দিলে শরীরের লোহিত কণিকাগুলোর প্রাণবন্ততা আরো বেড়ে যায়।
ইংল্যান্ডে মেডিকেল পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, নিয়মিত স্বেচ্ছা রক্তদাতারা দুরারোগ্য রোগব্যাধি থেকে প্রায়ই মুক্ত থাকেন। রক্তদাতার হৃদ্রোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও অনেক কম।
রক্তদান ধর্মীয় দিক থেকেও অত্যন্ত পুণ্য বা সওয়াবের কাজ। এটি এমন একটি দান, যার তাৎপর্য সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের সুরা মায়েদার ৩২ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘একজন মানুষের জীবন রক্ষা করা সমগ্র মানব জাতির জীবন রক্ষা করার মতো মহান কাজ।’
ঋগ্বেদে বলা হয়েছে, ‘নিঃশর্ত দানের জন্য রয়েছে চমৎকার পুরস্কার। তারা লাভ করে আশীর্বাদধন্য দীর্ঘজীবন ও অমরত্ব।’ আসলে সব ধর্মেই রক্তদানকে উৎসাহিত করা হয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি বড় ইবাদত।
অনেকে নানা অজুহাতে রক্ত দিতে চান না। কারও সুঁইয়ের ভয়, কেউ অসুস্থ বা দুর্বল হওয়ার ভয়। কেউ ভাবেন, রক্ত দিলে হয়তো শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বে, দুর্বলতায় ভুগবে বা বড় কোনো ক্ষতি হবে তার। তা ছাড়া অনেকে ভাবেন, রক্ত যদি দিতেই হয়, তো সেটা যেন পরিবারের সদস্য, নিকটাত্মীয় বা বন্ধুর জরুরি প্রয়োজনে দেওয়া হয়, বাইরের মানুষকে নয়। এখন বাস্তবতা হচ্ছে, রক্ত দেওয়া হোক বা না হোক, নির্দিষ্ট একটা সময়ের ব্যবধানে তা এমনিই বদলে যায়। যেমন—রক্তের প্রধান তিন উপাদানের একটি অনুচক্রিকার আয়ু ৮-৯ দিন, শ্বেতকণিকার আয়ু ১৩-২০ দিন এবং লোহিত কণিকার আয়ু ১২০ দিন। নির্দিষ্ট এ সময় পর কণিকাগুলো নিজে নিজেই লিম্ফিটিক সিস্টেমের ভেতরে ধ্বংস হয়ে যায়।
রক্তদানের মাধ্যমে রক্তদাতার বরং উপকার হয়। রক্ত দেওয়ার সময় তার অনেকগুলো টেস্ট করা হয়। তার একটা ফ্রি মেডিকেল চেকআপ হয়ে যায়। যতবার রক্ত দেবে, ততবার ফ্রি মেডিকেল চেকআপ হয়ে যায়। রক্ত দেওয়ার আগে তার পালস দেখা হয়, ব্লাড প্রেশার দেখা হয় এবং রক্তের অনেকগুলো টেস্ট করা হয়। এর মাধ্যমে যদি তার কোনো অসুস্থতা থাকে, সেটা সে জানতে পারে এবং সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা নিতে পারে। এটা তার একটা বাড়তি লাভ।
এ ছাড়া যাঁরা নিয়মিত রক্ত দান করেন, তাঁদের হার্ট ডিজিস কম হয়। যেমন হার্টের এরিথমিয়া, হার্ট অ্যাটাক—এগুলো কমে যায়। কারণ রক্তদানের মাধ্যমে শরীর থেকে অতিরিক্ত আয়রন চলে যায়। অতিরিক্ত আয়রনের জন্য হার্টের ওপর একটা এফেক্ট পড়ে। এ ছাড়া রক্তে মাত্রাতিরিক্ত লৌহ শরীরের ব্লাড ভ্যাসেল স্ট্রিক্ট করে, এ থেকে তার স্ট্রোক হতে পারে। নিয়মিত রক্ত দান করলে স্ট্রোকের আশঙ্কা ৮৮ শতাংশ কমে যায়। এ ছাড়া রক্ত দেওয়ার মাধ্যমে ওবেসিটির পেসেন্টরাও উপকৃত হতে পারেন।
এ ছাড়া দেখা যাচ্ছে, রক্তে যদি আয়রনের পরিমাণ বেশি থাকে, সেগুলো লিভারে জমা হয়, যা পরবর্তী সময়ে হেমোক্রোমাটোসিস সৃষ্টি করে। এখান থেকে লিভার সিরোসিস হয়। এমনকি ক্যানসারও হতে পারে। অতএব রক্ত দান করলে অনেকের ক্যানসার ঝুঁকি কমে যায়। যিনি রক্ত দিচ্ছেন, তার শরীরে ৬০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে রক্ত পূরণ হয়ে যায়।
অর্থাৎ, আমরা দাতা ছিলাম, এক মহান জাতি ছিলাম, আমাদের এক মহান ইতিহাস ছিল। ফলে সমৃদ্ধ অর্থনীতির সঙ্গে সঙ্গে আমরা উন্নত মানবিক সম্পন্ন সুস্থ মানুষ হিসেবে পরিচয় অর্জন করব। মনে রাখতে হবে, দাতা কখনো গরিব হতে পারে না।
লেখক: এমবিবিএস (ইউএসটিসি), সিসিডি (বারডেম), পিজিটি (মেডিসিন)
অ্যাজমা বা হাঁপানিতে আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে শিশুদের স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এক গবেষণায় এমন তথ্য জানা যায়।
২১ ঘণ্টা আগেবিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্যগত অসমতা ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। চারটি দেশে ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা মিলিয়ে বৈশ্বিক ডায়াবেটিসের অর্ধেকেরও বেশি। ২০২২ সালে ভারতে ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা ২১ কোটি ২০ লাখ, যা বৈশ্বিক হিসাবের চার ভাগের এক ভাগ।
১ দিন আগেশারীরিক পুনর্বাসন চিকিৎসার গুরুত্ব তুলে ধরতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) আজ বুধবার ‘আন্তর্জাতিক শারীরিক পুনর্বাসন চিকিৎসা (পিএমআর) দিবস ২০২৪’ উদযাপিত হয়েছে। বাংলাদেশ সোসাইটি অফ ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন (বিএসপিএমআর) এবং বিএসএমএমইউ-এর ফিজিক্যাল মেডিসিন এন্ড
২ দিন আগেস্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম এবং ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত ছাত্র-জনতার চিকিৎসা ব্যবস্থা পরিদর্শন করেছেন।
২ দিন আগে