ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেদ্ধ ডিমের খোসা ছাড়ানোর একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, ডিমটি প্লাস্টিকের। ভিডিওতে খোসা ছাড়ানোর পর চাপ দিয়ে দেখিয়ে এক নারী বলছেন, ডিমটি ফাটছে না, টোপ খেয়ে যাচ্ছে এবং রাবারের মতো লম্বা হচ্ছে। এভাবে নকল ডিম চেনা যায়।
লাইফস্টাইল অব খাদিজা নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ২৬ নভেম্বর ভিডিওটি প্রচার করা হয়। ভিডিওটি আজ রোববার (৩ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ ৫৪ হাজার বার দেখা হয়েছে। প্রতিক্রিয়া পড়েছে প্রায় ১ হাজার ৬০০টি। শেয়ার হয়েছে ৫০-এর বেশি বার।
ভিডিওটি দেখুন এখানে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাজারে প্লাস্টিকের ডিম বলতে আসলে কিছু নেই। এটি মানুষের মাঝে প্রচলিত ধারণামাত্র!
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে ভারতের খাদ্যনিরাপত্তা ও মান নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের (এফএসএসএআই) ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালে দেওয়া একটি নির্দেশনা খুঁজে পাওয়া যায়। ‘ডিমের গুণমান এবং নিরাপত্তা; প্লাস্টিকের ডিম সম্পর্কে প্রচলিত ধারণার অবসান’ শীর্ষক এই নির্দেশনায় প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ভোক্তারা নকল বা প্লাস্টিকের ডিম নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। প্লাস্টিকের ডিম বা কৃত্রিম ডিমের ধারণাটির কোনো ভিত্তি নেই। প্রকৃতপক্ষে এমন কোনো প্রযুক্তি নেই, যা পুরোপুরি একটি প্রাকৃতিক ডিমের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ আরেকটি কৃত্রিম ডিম তৈরি করতে পারে।
প্রকৃতপক্ষে ডিমের গুণমান এবং চেহারা বেশির ভাগই নির্ভর করে ডিমকে কীভাবে ও কতক্ষণ সংরক্ষণ করা হয় তার ওপর। সাধারণত, রেফ্রিজারেটরের ঠান্ডা তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে খেলে ডিমের গুণমান সর্বোত্তম থাকে। আর কক্ষ তাপমাত্রায় রাখা হলে, ডিমের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে; যা ডিমের গন্ধ, গঠন এবং চেহারায় পার্থক্য আনে।
নির্দেশনায় প্রতিষ্ঠানটি আরও বলে, যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা না হলে ডিমকে প্লাস্টিকের মতো মনে হতে পারে। তাই ডিম কীভাবে ও কতক্ষণ সংরক্ষণ করা হয়, সেটি ডিমের গুণগত মান নিশ্চিতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ডিম বাইরের উচ্চ তাপমাত্রায় এক দিনে যতটা গুণ হারায়, ফ্রিজে রাখলে ততটা গুণ হারাতে সময় লাগে ৪ থেকে ৫ দিন।
কক্ষ তাপমাত্রায় রাখা ডিম পাখির পেট থেকে বের হওয়ার পর ১০-১২ দিন পর্যন্ত সতেজ থাকে। তবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ডিমের শেলফ-লাইফ বা সতেজ থাকার সময় কমে যায়। এই জীবনকাল রক্ষায় সদ্য পাড়া ডিম হিমায়িত সংরক্ষণাগারে রাখতে হবে অথবা ডিমের খোসা বিশেষ করে ডিমের খোসার বায়ু প্রকোষ্ঠগুলো অনুমোদিত তেল দিয়ে বন্ধ করতে হবে।
এ ছাড়া বিভিন্ন তাপমাত্রায় ডিম যখন পরিবহন ও সংরক্ষণ করা হয়, তখনো ডিমের খোসার এই বায়ু প্রকোষ্ঠসহ ডিমের অভ্যন্তরে নানা পরিবর্তন হতে পারে। ফলে ডিম ভাঙার পরে এটিকে প্লাস্টিকের ডিম বা কৃত্রিম ডিম বলে মনে হতে পারে।
প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত বিভিন্ন ভিডিও নিয়ে একটি প্রেস নোট প্রকাশ করে। এতে এফএসএসএআইয়ের প্রধান নির্বাহী পবন আগরওয়াল বলেন, ‘সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্লাস্টিকের ডিম এবং প্লাস্টিকের চালের বিষয়ে মিথ্যা ভীতি প্রচার করা হচ্ছে, যা দেশের খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তার জন্য ভালো নয়।’
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষও ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই দেশের বাজারে নকল বা কৃত্রিম ডিমের উপস্থিতি সম্পর্কে জনমনে সৃষ্ট বিভ্রান্তি দূরীকরণে একটি গণবিজ্ঞপ্তি দেয়। তাতে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক, ভাইবার ইত্যাদি) বাংলাদেশে নকল ডিমের উপস্থিতি সম্পর্কে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশিত বা প্রচারিত হয়েছে। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে নিশ্চিত হয়েছে, প্রতিবেদনগুলোতে বর্ণিত তথ্য-উপাত্ত ও মতামতগুলো বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা যথাযথ তথ্যপ্রমাণ সমর্থিত নয়। বাংলাদেশের কোথাও কোনো নকল বা কৃত্রিম ডিমের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ভারতে পাখি নিয়ে গবেষণাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল অ্যাভিয়ান রিসার্চ ইনস্টিটিউট মুরগির মাংস ও ডিম নিয়ে প্রচলিত বিভিন্ন ধারণা খণ্ডন করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে প্লাস্টিকের ডিম সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্লাস্টিকের ডিমের ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। গ্রীষ্মকালে মাঝে মাঝে ডিমের খোসা কার্বোনেটের অভাবে খুব দুর্বল এবং পাতলা হয়ে যায়। কারণ, গ্রীষ্মকালে ডিম পাড়া পাখিদের খাওয়ার পরিমাণ কমে যায়, ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্যালসিয়াম গ্রহণও কমে যায়। ক্যালসিয়াম কার্বোনেট ডিমের খোসা গঠনের প্রধান উপাদান। তাই গরমকালে ডিমের চেহারা ও খোসার পরিবর্তন দেখা যায়। সব অত্যাবশ্যক পুষ্টি সংযুক্ত করে কৃত্রিম বা প্লাস্টিকের ডিম তৈরি করা বাস্তবিকভাবে সম্ভব নয়। এরপরেও যদি কেউ বানায়, তা হবে ব্যয়বহুল এবং ব্যবসার জন্য কোনোভাবেই লাভজন করা সম্ভব নয়।
প্লাস্টিকের ডিম তৈরি আদৌ লাভজনক কি না, এমন তথ্য অনুসন্ধানে বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক যুগান্তরে রাগিব হাসান নামে এক ব্যক্তির ২০১৯ সালে লেখা লাইফস্টাইল বা জীবনধারা-সম্পর্কিত এক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। তাতে তিনি লেখেন, বাংলাদেশের বাজারে একটা ডিমের দাম ৮ টাকার মতো (বর্তমান মূল্য ১০ টাকার বেশি)। এখন ভেবে দেখুন, একটা নকল ডিম বানাতে যা লাগে, সেটা কয়েক হাজার মাইল দূরে চীন থেকে বাংলাদেশে রপ্তানি করার খরচসহ ৮ টাকার কমে কি দেওয়া সম্ভব? দোকানদার আপনার কাছে ৮ টাকায় একটা ডিম বেচলে অবশ্যই লাভ রেখে বিক্রি করছে। কাজেই তাঁর কেনা দাম ৮ টাকার অনেক কম। তাই হিসাবটা কি মেলে? দুনিয়ার সব ডিম ব্যবসায়ী কি অনেক টাকা লস দিয়ে নকল ডিম বিক্রি করবে, যেখানে আসল ডিম সস্তায় মুরগির কাছ থেকে পাওয়া যায়?
প্রসঙ্গত, এবারই প্রথম নয়, এর আগেও বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্লাস্টিকের ডিম নিয়ে গুজব ছড়িয়েছে। এসব গুজবের মধ্যে প্লাস্টিকের ডিম তৈরির ভিডিও দাবি করে বেশ কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। কোথাও কোথাও দাবি করা হয়েছে, চীন থেকে এসব প্লাস্টিকের ডিম বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এমন এক ভিডিও নিয়ে ফ্রান্সভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফ্রান্স২৪ চীনা সংবাদমাধ্যম জিফাং ডেইলির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে জানায়, ভিডিওতে দেখানো ডিমগুলো কোনো কৃত্রিম বা প্লাস্টিকের ডিম নয়। এগুলো আসলে স্লাইম, শিশুদের একজাতীয় খেলনা। সাদা ও হলুদ উপকরণ ব্যবহার করে ডিমের মতো গঠন দিয়ে এসব খেলনা তৈরি করা হয়। এই খেলনা পরে প্লাস্টিকের খোসায় রাখা হয়, যা দেখতে ডিমের মতো লাগে।
এমন একটি ভিডিওর মাধ্যমে চলতি বছরের শুরুতে ভারতে প্লাস্টিকের ডিম তৈরির গুজব ছড়ানো হয়; যা নিয়ে ভারতের স্বাস্থ্যবিষয়ক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান দ্য হেলদি ইন্ডিয়ান প্রজেক্ট জিফাং ডেইলির একই প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানায়, ভিডিওটি মূলত ডিমসদৃশ খেলনা তৈরির।
শ্রীলঙ্কাতেও গত সেপ্টেম্বরে প্লাস্টিকের ডিম পাওয়ার দাবি ছড়িয়ে পড়ে। পরে আন্তর্জাতিক ফ্যাক্টচেকিং নেটওয়ার্ক (আইএফসিএন) স্বীকৃত দেশটির ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্ট ক্রিসেন্দো শ্রীলঙ্কা একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে জানায়, যে ডিমগুলোকে প্লাস্টিকের বলে দাবি করা হচ্ছে, সেগুলো আসল ডিমই, প্লাস্টিক বা কৃত্রিম ডিম নয়। মূলত ডিমগুলো সেদ্ধ করার পরে দীর্ঘক্ষণ ফ্রিজে রেখে দেওয়া হয়েছিল। ফলে ডিমগুলো স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ভিন্ন ধর্ম দেখায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিমসদৃশ খেলনা তৈরির ভিডিওকে প্লাস্টিকের ডিম তৈরির ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
সিদ্ধান্ত
ওপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট, প্লাস্টিকের ডিম বলতে আসলে কিছু নেই; বরং ডিম সংরক্ষণ পদ্ধতির ভিন্নতার কারণে ডিমের গঠন ও খোসায় ভিন্নতা দেখা যায়। এ ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় প্লাস্টিকের ডিম তৈরির যেসব ভিডিও দেখা যায়, সেগুলো মূলত শিশুদের খেলনা তৈরির দৃশ্য।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেদ্ধ ডিমের খোসা ছাড়ানোর একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হচ্ছে, ডিমটি প্লাস্টিকের। ভিডিওতে খোসা ছাড়ানোর পর চাপ দিয়ে দেখিয়ে এক নারী বলছেন, ডিমটি ফাটছে না, টোপ খেয়ে যাচ্ছে এবং রাবারের মতো লম্বা হচ্ছে। এভাবে নকল ডিম চেনা যায়।
লাইফস্টাইল অব খাদিজা নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ২৬ নভেম্বর ভিডিওটি প্রচার করা হয়। ভিডিওটি আজ রোববার (৩ ডিসেম্বর) বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ ৫৪ হাজার বার দেখা হয়েছে। প্রতিক্রিয়া পড়েছে প্রায় ১ হাজার ৬০০টি। শেয়ার হয়েছে ৫০-এর বেশি বার।
ভিডিওটি দেখুন এখানে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাজারে প্লাস্টিকের ডিম বলতে আসলে কিছু নেই। এটি মানুষের মাঝে প্রচলিত ধারণামাত্র!
কি-ওয়ার্ড অনুসন্ধানে ভারতের খাদ্যনিরাপত্তা ও মান নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের (এফএসএসএআই) ওয়েবসাইটে ২০১৮ সালে দেওয়া একটি নির্দেশনা খুঁজে পাওয়া যায়। ‘ডিমের গুণমান এবং নিরাপত্তা; প্লাস্টিকের ডিম সম্পর্কে প্রচলিত ধারণার অবসান’ শীর্ষক এই নির্দেশনায় প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ভোক্তারা নকল বা প্লাস্টিকের ডিম নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। প্লাস্টিকের ডিম বা কৃত্রিম ডিমের ধারণাটির কোনো ভিত্তি নেই। প্রকৃতপক্ষে এমন কোনো প্রযুক্তি নেই, যা পুরোপুরি একটি প্রাকৃতিক ডিমের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ আরেকটি কৃত্রিম ডিম তৈরি করতে পারে।
প্রকৃতপক্ষে ডিমের গুণমান এবং চেহারা বেশির ভাগই নির্ভর করে ডিমকে কীভাবে ও কতক্ষণ সংরক্ষণ করা হয় তার ওপর। সাধারণত, রেফ্রিজারেটরের ঠান্ডা তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে খেলে ডিমের গুণমান সর্বোত্তম থাকে। আর কক্ষ তাপমাত্রায় রাখা হলে, ডিমের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন ঘটে; যা ডিমের গন্ধ, গঠন এবং চেহারায় পার্থক্য আনে।
নির্দেশনায় প্রতিষ্ঠানটি আরও বলে, যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা না হলে ডিমকে প্লাস্টিকের মতো মনে হতে পারে। তাই ডিম কীভাবে ও কতক্ষণ সংরক্ষণ করা হয়, সেটি ডিমের গুণগত মান নিশ্চিতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ডিম বাইরের উচ্চ তাপমাত্রায় এক দিনে যতটা গুণ হারায়, ফ্রিজে রাখলে ততটা গুণ হারাতে সময় লাগে ৪ থেকে ৫ দিন।
কক্ষ তাপমাত্রায় রাখা ডিম পাখির পেট থেকে বের হওয়ার পর ১০-১২ দিন পর্যন্ত সতেজ থাকে। তবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ডিমের শেলফ-লাইফ বা সতেজ থাকার সময় কমে যায়। এই জীবনকাল রক্ষায় সদ্য পাড়া ডিম হিমায়িত সংরক্ষণাগারে রাখতে হবে অথবা ডিমের খোসা বিশেষ করে ডিমের খোসার বায়ু প্রকোষ্ঠগুলো অনুমোদিত তেল দিয়ে বন্ধ করতে হবে।
এ ছাড়া বিভিন্ন তাপমাত্রায় ডিম যখন পরিবহন ও সংরক্ষণ করা হয়, তখনো ডিমের খোসার এই বায়ু প্রকোষ্ঠসহ ডিমের অভ্যন্তরে নানা পরিবর্তন হতে পারে। ফলে ডিম ভাঙার পরে এটিকে প্লাস্টিকের ডিম বা কৃত্রিম ডিম বলে মনে হতে পারে।
প্রতিষ্ঠানটি ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর খাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত বিভিন্ন ভিডিও নিয়ে একটি প্রেস নোট প্রকাশ করে। এতে এফএসএসএআইয়ের প্রধান নির্বাহী পবন আগরওয়াল বলেন, ‘সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্লাস্টিকের ডিম এবং প্লাস্টিকের চালের বিষয়ে মিথ্যা ভীতি প্রচার করা হচ্ছে, যা দেশের খাদ্য ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তার জন্য ভালো নয়।’
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষও ২০১৭ সালের ২৫ জুলাই দেশের বাজারে নকল বা কৃত্রিম ডিমের উপস্থিতি সম্পর্কে জনমনে সৃষ্ট বিভ্রান্তি দূরীকরণে একটি গণবিজ্ঞপ্তি দেয়। তাতে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক, ভাইবার ইত্যাদি) বাংলাদেশে নকল ডিমের উপস্থিতি সম্পর্কে বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রকাশিত বা প্রচারিত হয়েছে। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে নিশ্চিত হয়েছে, প্রতিবেদনগুলোতে বর্ণিত তথ্য-উপাত্ত ও মতামতগুলো বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা যথাযথ তথ্যপ্রমাণ সমর্থিত নয়। বাংলাদেশের কোথাও কোনো নকল বা কৃত্রিম ডিমের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
ভারতে পাখি নিয়ে গবেষণাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল অ্যাভিয়ান রিসার্চ ইনস্টিটিউট মুরগির মাংস ও ডিম নিয়ে প্রচলিত বিভিন্ন ধারণা খণ্ডন করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে প্লাস্টিকের ডিম সম্পর্কে বলা হয়েছে, প্লাস্টিকের ডিমের ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। গ্রীষ্মকালে মাঝে মাঝে ডিমের খোসা কার্বোনেটের অভাবে খুব দুর্বল এবং পাতলা হয়ে যায়। কারণ, গ্রীষ্মকালে ডিম পাড়া পাখিদের খাওয়ার পরিমাণ কমে যায়, ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্যালসিয়াম গ্রহণও কমে যায়। ক্যালসিয়াম কার্বোনেট ডিমের খোসা গঠনের প্রধান উপাদান। তাই গরমকালে ডিমের চেহারা ও খোসার পরিবর্তন দেখা যায়। সব অত্যাবশ্যক পুষ্টি সংযুক্ত করে কৃত্রিম বা প্লাস্টিকের ডিম তৈরি করা বাস্তবিকভাবে সম্ভব নয়। এরপরেও যদি কেউ বানায়, তা হবে ব্যয়বহুল এবং ব্যবসার জন্য কোনোভাবেই লাভজন করা সম্ভব নয়।
প্লাস্টিকের ডিম তৈরি আদৌ লাভজনক কি না, এমন তথ্য অনুসন্ধানে বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক যুগান্তরে রাগিব হাসান নামে এক ব্যক্তির ২০১৯ সালে লেখা লাইফস্টাইল বা জীবনধারা-সম্পর্কিত এক প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। তাতে তিনি লেখেন, বাংলাদেশের বাজারে একটা ডিমের দাম ৮ টাকার মতো (বর্তমান মূল্য ১০ টাকার বেশি)। এখন ভেবে দেখুন, একটা নকল ডিম বানাতে যা লাগে, সেটা কয়েক হাজার মাইল দূরে চীন থেকে বাংলাদেশে রপ্তানি করার খরচসহ ৮ টাকার কমে কি দেওয়া সম্ভব? দোকানদার আপনার কাছে ৮ টাকায় একটা ডিম বেচলে অবশ্যই লাভ রেখে বিক্রি করছে। কাজেই তাঁর কেনা দাম ৮ টাকার অনেক কম। তাই হিসাবটা কি মেলে? দুনিয়ার সব ডিম ব্যবসায়ী কি অনেক টাকা লস দিয়ে নকল ডিম বিক্রি করবে, যেখানে আসল ডিম সস্তায় মুরগির কাছ থেকে পাওয়া যায়?
প্রসঙ্গত, এবারই প্রথম নয়, এর আগেও বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্লাস্টিকের ডিম নিয়ে গুজব ছড়িয়েছে। এসব গুজবের মধ্যে প্লাস্টিকের ডিম তৈরির ভিডিও দাবি করে বেশ কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। কোথাও কোথাও দাবি করা হয়েছে, চীন থেকে এসব প্লাস্টিকের ডিম বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এমন এক ভিডিও নিয়ে ফ্রান্সভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফ্রান্স২৪ চীনা সংবাদমাধ্যম জিফাং ডেইলির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে জানায়, ভিডিওতে দেখানো ডিমগুলো কোনো কৃত্রিম বা প্লাস্টিকের ডিম নয়। এগুলো আসলে স্লাইম, শিশুদের একজাতীয় খেলনা। সাদা ও হলুদ উপকরণ ব্যবহার করে ডিমের মতো গঠন দিয়ে এসব খেলনা তৈরি করা হয়। এই খেলনা পরে প্লাস্টিকের খোসায় রাখা হয়, যা দেখতে ডিমের মতো লাগে।
এমন একটি ভিডিওর মাধ্যমে চলতি বছরের শুরুতে ভারতে প্লাস্টিকের ডিম তৈরির গুজব ছড়ানো হয়; যা নিয়ে ভারতের স্বাস্থ্যবিষয়ক ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান দ্য হেলদি ইন্ডিয়ান প্রজেক্ট জিফাং ডেইলির একই প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানায়, ভিডিওটি মূলত ডিমসদৃশ খেলনা তৈরির।
শ্রীলঙ্কাতেও গত সেপ্টেম্বরে প্লাস্টিকের ডিম পাওয়ার দাবি ছড়িয়ে পড়ে। পরে আন্তর্জাতিক ফ্যাক্টচেকিং নেটওয়ার্ক (আইএফসিএন) স্বীকৃত দেশটির ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান ফ্যাক্ট ক্রিসেন্দো শ্রীলঙ্কা একটি ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদনে জানায়, যে ডিমগুলোকে প্লাস্টিকের বলে দাবি করা হচ্ছে, সেগুলো আসল ডিমই, প্লাস্টিক বা কৃত্রিম ডিম নয়। মূলত ডিমগুলো সেদ্ধ করার পরে দীর্ঘক্ষণ ফ্রিজে রেখে দেওয়া হয়েছিল। ফলে ডিমগুলো স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ভিন্ন ধর্ম দেখায়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিমসদৃশ খেলনা তৈরির ভিডিওকে প্লাস্টিকের ডিম তৈরির ভিডিও দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
সিদ্ধান্ত
ওপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট, প্লাস্টিকের ডিম বলতে আসলে কিছু নেই; বরং ডিম সংরক্ষণ পদ্ধতির ভিন্নতার কারণে ডিমের গঠন ও খোসায় ভিন্নতা দেখা যায়। এ ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় প্লাস্টিকের ডিম তৈরির যেসব ভিডিও দেখা যায়, সেগুলো মূলত শিশুদের খেলনা তৈরির দৃশ্য।
বাংলাদেশে এক হিন্দু নারীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে দাবিতে মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্সে ১৮ সেকেন্ডের ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে দেখা যাচ্ছে, রক্তাক্ত এক নারীকে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য কোথাও নিয়ে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দীপক শর্মা নামের একটি ভারতীয় এক্স হ্যান্ডল থেকে ভিডিওটি টুইট করে দাবি করা হয়, ‘ভিড
৩ দিন আগেআওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য সাবরিনা চৌধুরী নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় এমন দাবিতে স্ক্রিনশটটি পোস্ট করে লেখেন, ‘Sabnam Faria কিছুক্ষণ আগে একটা পোস্ট করলেন ৫ মিনিট পর ডিলিট করে দিলেন।’
৪ দিন আগেএলিস থমাস নামের এক ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স গবেষকের বরাত দিয়ে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে, ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে সাহায্য করেছে এআই পরিচালিত বট নেটওয়ার্ক।
৫ দিন আগেগত বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) ‘প্রবাসী জীবন’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। পোস্টটি আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক শেয়ার হয়েছে। রিয়েকশন পড়েছে ৪ হাজারের বেশি। ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৪২ হাজার বার।
৫ দিন আগে