ফ্যাক্টচেক ডেস্ক
মুঘল সম্রাট শাহজাহানের অমর কীর্তি তাজমহল। তাঁর নির্দেশেই প্রয়াত স্ত্রী মমতাজের স্মৃতিতে এই সৌধ নির্মিত হয়। দীর্ঘ ২২ বছরে ২০ হাজার শ্রমিক ও কারিগর মিলে ১৬৫৩ সালে তাজমহল নির্মাণকাজ শেষ করেন। এটাকে অতুলনীয় রাখতে অর্থাৎ একই ধরনের সৌধ নির্মাণ যাতে হয়, সে জন্য ওই কারিগরদের হাত বা হাতের আঙুল কেটে দেওয়া হয়—এমন একটি দাবি বহুল প্রচারিত।
ভারতীয় গণমাধ্যম তো বটেই, ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানেও তাজমহলের কারিগরদের হাত বা হাতের আঙুল কেটে দেওয়ার জনশ্রুতির উল্লেখ আছে। ২০০৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তাজমহলের ৩৫০ বছর পূর্তিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিষয়টির উল্লেখ করা হয়।
২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কাশী বিশ্বনাথ মন্দির উদ্বোধন করতে গিয়ে একই অনুষ্ঠানে মন্দিরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় নিয়োজিত কর্মীদের গায়ে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে সম্মান জানান। অনুষ্ঠানটি প্রচারের সময়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ এইটটিনের উপস্থাপক আমিশ দেবগন বলেন, ‘মন্দিরের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ওপর ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দিয়েছেন মোদি, আর শাহজাহান তাজমহল নির্মাতাদের হাত কেটে দিয়েছিলেন।’
আসলেই কি সম্রাট শাহজাহান তাজমহল শ্রমিক ও কারিগরদের হাতের আঙুল কেটে দিয়েছিলেন? এ দাবির পক্ষে ঐতিহাসিক কোনো প্রমাণ আছে?
১৯৭১ সালে ভারতের রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে প্রকাশিত জার্নাল অব হিস্ট্রিকাল রিসার্চের ১৪তম সংস্করণে ‘তাজমহল শ্রমিক ও কারিগরদের হাতের আঙুল কেটে ফেলার’ দাবিটিকে ‘শহুরে কিংবদন্তি বা রূপকথা’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
তাজমহলের ভ্রমণবিষয়ক ওয়েবসাইট ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়াতে তিনটি যুক্তির ওপর দাবিটিকে প্রচলিত ভুল হিসেবে প্রমাণ করা হয়।
প্রথমত, এত বিশালসংখ্যক মানুষের আঙুল কেটে ফেলা হলে তার প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ থাকত। কিন্তু এমন কোনো প্রমাণ নেই। দ্বিতীয়ত, তাজমহল নির্মাণের সমসাময়িক কোনো বই বা সে সময়ে ভারতে ভ্রমণ করা বিদেশি পর্যটকদের কাছ থেকেও এমন বর্ণনা পাওয়া যায় না। তৃতীয়ত, সম্রাট শাহজাহানের সময়কালকে মুঘল নির্মাণশৈলীর ‘সুবর্ণ সময়’ বলা হয়। তাঁর শাসনামলেই একের পর এক নির্মাণকাজ হয়েছে। তিনি কেবল তাজমহলই নয়, আগ্রায় মতি মসজিদ, দিল্লিতে লাল কেল্লা ও জামে মসজিদও নির্মাণ করেন; শাহজাহানাবাদ নামে একটি শহর প্রতিষ্ঠা করেন। আঙুল বা হাত কাটার মতো নৃশংসতা হলে একই ধরনের নির্মাণশৈলীর আরও স্থাপনার জন্য শ্রমিক পাওয়া কঠিন হতো। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। বরং এসব শ্রমিকের জন্য তাজমহলের কাছে (যা এখন তাজগঞ্জ নামে পরিচিত) বাড়ি তৈরি করে দিয়েছিলেন সম্রাট শাহজাহান।
দাবিটির সূত্রপাত তাহলে কোথায়? এ নিয়ে ওয়েবসাইটটি জানায়, বাস্তবে সম্রাট শাহজাহান তাজমহল শ্রমিক ও কারিগরদের সঙ্গে একটি নৈতিক চুক্তি করেছিলেন। এর আওতায় শ্রমিকেরা অন্য কোনো সম্রাটের অধীনে কাজ করার সুযোগ হারান। সেখান থেকেই ‘শ্রমিকদের হাত কেটে ফেলার’ প্রবাদ জনশ্রুত হয়।
ঐতিহাসিকভাবে তাজমহলের রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে খুদ্দাম ই রোজা কমিটি। এ কমিটির চেয়ারম্যান হাজি তাহের উদ্দিন তাহারের বক্তব্যের সঙ্গেও এ তথ্যের মিল পাওয়া যায়।
২০১৭ সালে ভারতের এক সংবাদমাধ্যম পত্রিকাকে তিনি বলেন, সম্রাট শাহজাহানের হাত কেটে ফেলার দাবিটি পুরোপুরি মিথ্যা। আসলে শ্রমিকদের সঙ্গে শাহজাহানের একটা চুক্তি হয়েছিল। এই চুক্তির অধীনে তিনি শ্রমিকদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন, তাঁরা আর কোথাও তাজমহল নির্মাণ করবেন না। এরপর যখনই কেউ ওই শ্রমিকদের তাজমহল তৈরির কথা জিজ্ঞেস করতেন, তাঁরা বলতেন যে ‘আমাদের হাত কেটে ফেলা হয়েছে’। তার পর থেকে এটি সত্য দাবি করে প্রচলিত হয়ে গেছে। চুক্তিটি ‘অ্যাগ্রিমেন্ট হ্যান্ডকাট’ নামে পরিচিত।
তিনি বলেন, প্রায় পৌনে ৪০০ বছরের ইতিহাসে ওই শ্রমিকদের কারও হাত কাটা হয়েছে—এমন কোনো দাবি প্রজন্মান্তরের কোনো পর্যায়ে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমন কিছু হলে বংশ পরম্পরায় কারও না কারও কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া যেত। শাহজাহানামা, আকবরনামা এবং দ্য গ্রেট মুঘল বইগুলোতে অ্যাগ্রিমেন্ট হ্যান্ডকাট সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
তাজমহলের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটেও এ দাবির পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
শ্রমিকদের হাত কেটে ফেলার বিষয়ে ভারতীয় ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব ভারতীয় ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান অল্ট নিউজকে বলেন, ‘এটি বিখ্যাত শহুরে কিংবদন্তি। এ দাবি সমর্থন করার পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই বা কোনো বিশ্বাসযোগ্য ইতিহাসবিদ এই দাবি করেননি। প্রসঙ্গত বলতে পারি, এই শহুরে কিংবদন্তির জন্ম সেই ষাটের দশকে। লোকমুখে এ কাহিনি শুনেছিলাম আমি।’
মুঘল সম্রাট আকবরের জীবনের ওপর লেখা ‘আল্লাহু আকবর: আউটস্ট্যান্ডিং দ্য গ্রেট মুঘল ইন টুডেস ইন্ডিয়া’র লেখক ও সাংবাদিক মনিমুগ্ধ এস শর্মা ২০১৭ সালে ভারতের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ায় ‘বাস্টিং দ্য তাজ ফেক নিউজ’ শিরোনামে প্রতিবেদন লেখেন।
সেখানে তিনি বলেন, তাজমহল নিয়ে আগ্রার স্থানীয় গাইড, অনেক ডানপন্থী ওয়েবসাইটে জনপ্রিয় গল্পের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তাতে দাবি করা হয়, তাজমহল নির্মাণ শেষে নেতৃস্থানীয় রাজমিস্ত্রিদের হাত কেটে নিতে সৈন্যদের নির্দেশ দেন শাহজাহান। যেন তাঁরা পরে কখনোই এই অবকাঠামো নকল করতে না পারেন।
এ দাবিকে বিদ্যমান তথ্য-প্রমাণের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হিসেবে তুলে ধরে করে তিনি বলেন, ‘তাজগঞ্জ নামে বিশাল বসতিটির অস্তিত্ব আজও আছে। রাজ্যের দূর-দূরান্তের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাজমহল নির্মাণে অংশ নেওয়া হাজারো রাজমিস্ত্রি, কারিগর ও অন্য শ্রমিকদের জন্য সম্রাট শাহজাহানই বসতিটি গড়ে তুলেছিলেন। ওই শ্রমিকদের বংশধররা আজও সেখানে বাস করেন এবং তাঁদের পূর্বপুরুষদের শিখিয়ে যাওয়া কাজ করছেন।
আরও একটি বিষয় হলো তাজমহল নির্মাণের পরপরই শাহজাহানের জন্য দিল্লিতে শাহজাহানাবাদ নামে নতুন সাম্রাজ্য শহর নির্মাণ করেন এই শ্রমিকেরা। তা নাহলে স্বল্প সময়ের মধ্যে বিপুলসংখ্যক রাজমিস্ত্রি ও কারিগরের দল খুঁজে বের করা প্রায় অসম্ভব।
সম্রাট শাহজাহানের শ্রমিকদের হাত কেটে ফেলার প্রচলিত দাবিটির ওপর ভিত্তি করে ২০১৭ সালে আমেরিকান নাট্যকার রাজিব জোসেফ গার্ডস অ্যাট দ্য তাজ নামে মঞ্চনাটক নির্মাণ করেন।
এ নাটকের পর্যালোচনা করে পাকিস্তানের কলাম লেখক ইরফান হোসাইন ডন পত্রিকায় সে সময় একটি কলাম লেখেন। সেখানে পুরো বিষয়টিকে জনপ্রিয় রূপকথা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সম্রাট শাহজাহান বা তাজমহল নির্মাণের সমসাময়িককালের কেউ এ দাবির সত্যতা নিশ্চিত করেনি।
সিদ্ধান্ত
তাজমহল সতেরো শতকে সম্রাট শাহজাহানের তৈরি অনন্য সৃষ্টি। এই তাজমহল ঘিরে প্রচলিত অনেক বিশ্বাসের মধ্যে অন্যতম হলো—তাজমহলের মতো দ্বিতীয় আর কোনো স্থাপনা শ্রমিক-কারিগরেরা যাতে নির্মাণ করতে না পারেন, সে জন্য তাঁদের হাত কেটে দিয়েছিলেন সম্রাট। তবে প্রচলিত এ বিশ্বাসের কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই; কেবল লোকমুখেই প্রচার হয়ে আসছে।
মুঘল সম্রাট শাহজাহানের অমর কীর্তি তাজমহল। তাঁর নির্দেশেই প্রয়াত স্ত্রী মমতাজের স্মৃতিতে এই সৌধ নির্মিত হয়। দীর্ঘ ২২ বছরে ২০ হাজার শ্রমিক ও কারিগর মিলে ১৬৫৩ সালে তাজমহল নির্মাণকাজ শেষ করেন। এটাকে অতুলনীয় রাখতে অর্থাৎ একই ধরনের সৌধ নির্মাণ যাতে হয়, সে জন্য ওই কারিগরদের হাত বা হাতের আঙুল কেটে দেওয়া হয়—এমন একটি দাবি বহুল প্রচারিত।
ভারতীয় গণমাধ্যম তো বটেই, ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানেও তাজমহলের কারিগরদের হাত বা হাতের আঙুল কেটে দেওয়ার জনশ্রুতির উল্লেখ আছে। ২০০৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তাজমহলের ৩৫০ বছর পূর্তিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বিষয়টির উল্লেখ করা হয়।
২০২১ সালের ১৩ ডিসেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কাশী বিশ্বনাথ মন্দির উদ্বোধন করতে গিয়ে একই অনুষ্ঠানে মন্দিরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতায় নিয়োজিত কর্মীদের গায়ে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে সম্মান জানান। অনুষ্ঠানটি প্রচারের সময়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ এইটটিনের উপস্থাপক আমিশ দেবগন বলেন, ‘মন্দিরের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের ওপর ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে দিয়েছেন মোদি, আর শাহজাহান তাজমহল নির্মাতাদের হাত কেটে দিয়েছিলেন।’
আসলেই কি সম্রাট শাহজাহান তাজমহল শ্রমিক ও কারিগরদের হাতের আঙুল কেটে দিয়েছিলেন? এ দাবির পক্ষে ঐতিহাসিক কোনো প্রমাণ আছে?
১৯৭১ সালে ভারতের রাঁচি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগ থেকে প্রকাশিত জার্নাল অব হিস্ট্রিকাল রিসার্চের ১৪তম সংস্করণে ‘তাজমহল শ্রমিক ও কারিগরদের হাতের আঙুল কেটে ফেলার’ দাবিটিকে ‘শহুরে কিংবদন্তি বা রূপকথা’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
তাজমহলের ভ্রমণবিষয়ক ওয়েবসাইট ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়াতে তিনটি যুক্তির ওপর দাবিটিকে প্রচলিত ভুল হিসেবে প্রমাণ করা হয়।
প্রথমত, এত বিশালসংখ্যক মানুষের আঙুল কেটে ফেলা হলে তার প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ থাকত। কিন্তু এমন কোনো প্রমাণ নেই। দ্বিতীয়ত, তাজমহল নির্মাণের সমসাময়িক কোনো বই বা সে সময়ে ভারতে ভ্রমণ করা বিদেশি পর্যটকদের কাছ থেকেও এমন বর্ণনা পাওয়া যায় না। তৃতীয়ত, সম্রাট শাহজাহানের সময়কালকে মুঘল নির্মাণশৈলীর ‘সুবর্ণ সময়’ বলা হয়। তাঁর শাসনামলেই একের পর এক নির্মাণকাজ হয়েছে। তিনি কেবল তাজমহলই নয়, আগ্রায় মতি মসজিদ, দিল্লিতে লাল কেল্লা ও জামে মসজিদও নির্মাণ করেন; শাহজাহানাবাদ নামে একটি শহর প্রতিষ্ঠা করেন। আঙুল বা হাত কাটার মতো নৃশংসতা হলে একই ধরনের নির্মাণশৈলীর আরও স্থাপনার জন্য শ্রমিক পাওয়া কঠিন হতো। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। বরং এসব শ্রমিকের জন্য তাজমহলের কাছে (যা এখন তাজগঞ্জ নামে পরিচিত) বাড়ি তৈরি করে দিয়েছিলেন সম্রাট শাহজাহান।
দাবিটির সূত্রপাত তাহলে কোথায়? এ নিয়ে ওয়েবসাইটটি জানায়, বাস্তবে সম্রাট শাহজাহান তাজমহল শ্রমিক ও কারিগরদের সঙ্গে একটি নৈতিক চুক্তি করেছিলেন। এর আওতায় শ্রমিকেরা অন্য কোনো সম্রাটের অধীনে কাজ করার সুযোগ হারান। সেখান থেকেই ‘শ্রমিকদের হাত কেটে ফেলার’ প্রবাদ জনশ্রুত হয়।
ঐতিহাসিকভাবে তাজমহলের রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে খুদ্দাম ই রোজা কমিটি। এ কমিটির চেয়ারম্যান হাজি তাহের উদ্দিন তাহারের বক্তব্যের সঙ্গেও এ তথ্যের মিল পাওয়া যায়।
২০১৭ সালে ভারতের এক সংবাদমাধ্যম পত্রিকাকে তিনি বলেন, সম্রাট শাহজাহানের হাত কেটে ফেলার দাবিটি পুরোপুরি মিথ্যা। আসলে শ্রমিকদের সঙ্গে শাহজাহানের একটা চুক্তি হয়েছিল। এই চুক্তির অধীনে তিনি শ্রমিকদের কাছ থেকে অঙ্গীকার নিয়েছিলেন, তাঁরা আর কোথাও তাজমহল নির্মাণ করবেন না। এরপর যখনই কেউ ওই শ্রমিকদের তাজমহল তৈরির কথা জিজ্ঞেস করতেন, তাঁরা বলতেন যে ‘আমাদের হাত কেটে ফেলা হয়েছে’। তার পর থেকে এটি সত্য দাবি করে প্রচলিত হয়ে গেছে। চুক্তিটি ‘অ্যাগ্রিমেন্ট হ্যান্ডকাট’ নামে পরিচিত।
তিনি বলেন, প্রায় পৌনে ৪০০ বছরের ইতিহাসে ওই শ্রমিকদের কারও হাত কাটা হয়েছে—এমন কোনো দাবি প্রজন্মান্তরের কোনো পর্যায়ে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমন কিছু হলে বংশ পরম্পরায় কারও না কারও কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া যেত। শাহজাহানামা, আকবরনামা এবং দ্য গ্রেট মুঘল বইগুলোতে অ্যাগ্রিমেন্ট হ্যান্ডকাট সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
তাজমহলের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটেও এ দাবির পক্ষে বা বিপক্ষে কোনো মন্তব্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
শ্রমিকদের হাত কেটে ফেলার বিষয়ে ভারতীয় ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিব ভারতীয় ফ্যাক্টচেকিং প্রতিষ্ঠান অল্ট নিউজকে বলেন, ‘এটি বিখ্যাত শহুরে কিংবদন্তি। এ দাবি সমর্থন করার পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই বা কোনো বিশ্বাসযোগ্য ইতিহাসবিদ এই দাবি করেননি। প্রসঙ্গত বলতে পারি, এই শহুরে কিংবদন্তির জন্ম সেই ষাটের দশকে। লোকমুখে এ কাহিনি শুনেছিলাম আমি।’
মুঘল সম্রাট আকবরের জীবনের ওপর লেখা ‘আল্লাহু আকবর: আউটস্ট্যান্ডিং দ্য গ্রেট মুঘল ইন টুডেস ইন্ডিয়া’র লেখক ও সাংবাদিক মনিমুগ্ধ এস শর্মা ২০১৭ সালে ভারতের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ায় ‘বাস্টিং দ্য তাজ ফেক নিউজ’ শিরোনামে প্রতিবেদন লেখেন।
সেখানে তিনি বলেন, তাজমহল নিয়ে আগ্রার স্থানীয় গাইড, অনেক ডানপন্থী ওয়েবসাইটে জনপ্রিয় গল্পের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তাতে দাবি করা হয়, তাজমহল নির্মাণ শেষে নেতৃস্থানীয় রাজমিস্ত্রিদের হাত কেটে নিতে সৈন্যদের নির্দেশ দেন শাহজাহান। যেন তাঁরা পরে কখনোই এই অবকাঠামো নকল করতে না পারেন।
এ দাবিকে বিদ্যমান তথ্য-প্রমাণের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হিসেবে তুলে ধরে করে তিনি বলেন, ‘তাজগঞ্জ নামে বিশাল বসতিটির অস্তিত্ব আজও আছে। রাজ্যের দূর-দূরান্তের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাজমহল নির্মাণে অংশ নেওয়া হাজারো রাজমিস্ত্রি, কারিগর ও অন্য শ্রমিকদের জন্য সম্রাট শাহজাহানই বসতিটি গড়ে তুলেছিলেন। ওই শ্রমিকদের বংশধররা আজও সেখানে বাস করেন এবং তাঁদের পূর্বপুরুষদের শিখিয়ে যাওয়া কাজ করছেন।
আরও একটি বিষয় হলো তাজমহল নির্মাণের পরপরই শাহজাহানের জন্য দিল্লিতে শাহজাহানাবাদ নামে নতুন সাম্রাজ্য শহর নির্মাণ করেন এই শ্রমিকেরা। তা নাহলে স্বল্প সময়ের মধ্যে বিপুলসংখ্যক রাজমিস্ত্রি ও কারিগরের দল খুঁজে বের করা প্রায় অসম্ভব।
সম্রাট শাহজাহানের শ্রমিকদের হাত কেটে ফেলার প্রচলিত দাবিটির ওপর ভিত্তি করে ২০১৭ সালে আমেরিকান নাট্যকার রাজিব জোসেফ গার্ডস অ্যাট দ্য তাজ নামে মঞ্চনাটক নির্মাণ করেন।
এ নাটকের পর্যালোচনা করে পাকিস্তানের কলাম লেখক ইরফান হোসাইন ডন পত্রিকায় সে সময় একটি কলাম লেখেন। সেখানে পুরো বিষয়টিকে জনপ্রিয় রূপকথা হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সম্রাট শাহজাহান বা তাজমহল নির্মাণের সমসাময়িককালের কেউ এ দাবির সত্যতা নিশ্চিত করেনি।
সিদ্ধান্ত
তাজমহল সতেরো শতকে সম্রাট শাহজাহানের তৈরি অনন্য সৃষ্টি। এই তাজমহল ঘিরে প্রচলিত অনেক বিশ্বাসের মধ্যে অন্যতম হলো—তাজমহলের মতো দ্বিতীয় আর কোনো স্থাপনা শ্রমিক-কারিগরেরা যাতে নির্মাণ করতে না পারেন, সে জন্য তাঁদের হাত কেটে দিয়েছিলেন সম্রাট। তবে প্রচলিত এ বিশ্বাসের কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই; কেবল লোকমুখেই প্রচার হয়ে আসছে।
বাংলাদেশে এক হিন্দু নারীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে দাবিতে মাইক্রোব্লগিং সাইট এক্সে ১৮ সেকেন্ডের ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে দেখা যাচ্ছে, রক্তাক্ত এক নারীকে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য কোথাও নিয়ে যাচ্ছেন। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) দীপক শর্মা নামের একটি ভারতীয় এক্স হ্যান্ডল থেকে ভিডিওটি টুইট করে দাবি করা হয়, ‘ভিড
১ দিন আগেআওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য সাবরিনা চৌধুরী নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় এমন দাবিতে স্ক্রিনশটটি পোস্ট করে লেখেন, ‘Sabnam Faria কিছুক্ষণ আগে একটা পোস্ট করলেন ৫ মিনিট পর ডিলিট করে দিলেন।’
২ দিন আগেএলিস থমাস নামের এক ওপেন সোর্স ইন্টেলিজেন্স গবেষকের বরাত দিয়ে জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে জানিয়েছে, ট্রাম্পকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতে সাহায্য করেছে এআই পরিচালিত বট নেটওয়ার্ক।
৩ দিন আগেগত বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) ‘প্রবাসী জীবন’ নামের একটি ফেসবুক পেজ থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। পোস্টটি আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক শেয়ার হয়েছে। রিয়েকশন পড়েছে ৪ হাজারের বেশি। ভিডিওটি দেখা হয়েছে ৪২ হাজার বার।
৩ দিন আগে