সেলিম জাহান
সময়ের বৃক্ষ থেকে আরও একটি পত্র ঝরে যাবে এক দিনের মধ্যেই, যবনিকাপাত হবে ২০২৩ সালের। শুরু হবে নতুন বছর, ২০২৪। পৃথিবীর ও বৃহত্তর মানবজীবনের পথপরিক্রমায় ৩৬৫ দিন নিশ্চিতভাবে পরমাণুসম ক্ষুদ্র, একটি দেশ বা সমাজের সার্বিক বিবর্তনেও একটি বছর তেমন কিছু নয়, একজন ব্যক্তিমানুষের পুরো জীবনবলয়েও হয়তো একটি বছরের সামগ্রিক গুরুত্ব তেমন একটা বড় নয়, তবু প্রতিটি বছরই তার নিজস্ব তাৎপর্যে ভাস্বর যেমন পুরো পৃথিবীর জন্য, তেমনি একটি দেশ বা সমাজের জন্য এবং সেই সঙ্গে একজন ব্যক্তিমানুষের জন্য।
এই যে ১৯৬৯ সাল। মানুষ প্রথম চাঁদে পা রাখল—ইতিহাস সৃষ্টি হয়ে গেল সারা পৃথিবী আর মানবসভ্যতার জন্য। আর কোনো বছর এই অভূতপূর্ব অর্জনের ওপরে দাবি রাখতে পারবে না–ওটা শুধু ১৯৬৯-এর। তেমনি ১৯৮৯–বার্লিন দেয়ালের পতন। পূর্ব আর পশ্চিম জার্মানি মিলে অখণ্ড জার্মানি হয়ে গেল। অন্য কোনো বছর চিহ্নিত হবে না এ অভাবিত ঘটনার জন্য–ওটা ১৯৮৯-এর। তেমনি প্রতিটি ব্যক্তিমানুষের জীবনেও কোনো কোনো বছর হিরণ্ময় স্মৃতি হয়ে থাকে– সুখের কারণে অথবা ধূসর পর্দা হয়ে থাকে–‘পাতার নিচে, ছাতার মতো’ পরম ব্যাপ্ত দুঃখময় স্মৃতির কারণে।
প্রায়ই বহু মানুষকে বছরের শেষে বলতে শুনি, ‘হায়, আরও একটা বছর ঝরে গেল জীবন থেকে’। এই উক্তির সঙ্গে বেরিয়ে আসে বুকভাঙা দীর্ঘশ্বাস। কেউ কেউ আবার এমনও বলেন, ‘মৃত্যুর দিকে আরও এক পা এগোলাম’। এসব মানুষের জন্য চলে যাওয়া বছর একটি ক্ষয়।
আমার জন্য শেষ হয়ে যাওয়া বছর একটি প্রাপ্তি। আমি ভাবি, ‘জীবন ভারী সুন্দর। ভাগ্যিস, বিগত বছরটা পেয়েছিলাম জীবনে। নইলে এত সব নতুন মানুষের দেখা পেতাম কি আমার জীবনে। নতুন করে জানা হতো কি পুরোনো মানুষদের। যেতে পারতাম কি নতুন নতুন জায়গায়। জানতে পারতাম কি, যা ছিল অজানা? কতটা দিয়ে গেল আমাকে পুরোনো বছরটা!’
শেষ হয়ে এল ২০২৩। পৃথিবীতে কত বদল হয়েছে এ বছরে, ঘটেছে কত পরিবর্তন নানান দেশে, সমাজে। ওই সব পরিবর্তন নিয়ে অনেকের মতো ভাবি, ব্যাখ্যা খুঁজি, জানি যে এসবের প্রভাব আমার জীবনেও পড়বে। কিন্তু বাইরের বৃহত্তর পৃথিবীর পরিবর্তনে যতটা আন্দোলিত হই, ততটাই হই আমার নিজস্ব পৃথিবীর বদলে।
এর কারণ হয়তো নানাবিধ—বাইরের পৃথিবীর পরিবর্তন যেমন অনেক সময় নৈর্ব্যক্তিক দূরের জিনিস বলে মনে হয়, আমার পৃথিবীর বদলগুলোও আমার ধরাছোঁয়ার মধ্যে বাস্তব বিষয় বলে মনে হয়; বাইরের পৃথিবীর ঘটনাগুলো বুদ্ধিবৃত্তি দিয়ে অনুধাবন করতে পারি, আমার পৃথিবীর জিনিসগুলো হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে পারি। তাই যেকোনো বছরকে আমি যেমনি দেখি বাইরের বৃহত্তর জগতের পরিপ্রেক্ষিতে, তেমনি দেখি আমার পৃথিবীর আরশিতে।
বাইরের বৃহত্তর জগতের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের বিশ্বের দিকে যখন তাকাই, তখন পাঁচটি কথা আমার মনে হয়। এক. গত কয় বছরের কোভিড অতিমারির পরে ২০২৩ সালকে আমার মনে হয়েছে একটি স্বাভাবিক বছর। ২০২২ সালেও মানুষের কোভিড-উদ্বিগ্নতা পুরোপুরি কেটেছিল বলে আমার মনে হয়নি। ২০২৩ সালে পৃথিবী অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। যদিও এর মধ্যে পৃথিবীর ওলট-পালট হয়েছে হয়েছে জীবনযাত্রায়, অর্থনীতিতে, আমার বোধ-উপলব্ধিতে। না, ওই পুরোনো পৃথিবী আমরা আর ফিরে পাব না, কিন্তু গত কয় বছরের অস্থির পৃথিবী অনেকটাই স্থির হয়ে এসেছে। ২০২৪ সালের শুরুতেই প্রার্থনা করি, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যেন এমন সময় পার করতে না হয়।
দুই. কোভিডের কারণে খোলনলচে বদলে দেওয়া পৃথিবীর অর্থনীতি বর্তমান সময়ে বড় নড়বড়ে হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে মিশেছে ইউক্রেনের যুদ্ধ। এ দুয়ের কারণে ২০২৩ সালের বিশ্বের নানান দেশে প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে গেছে, কর্মহীনতা বেড়েছে, জ্বালানি এবং খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমে গেছে নানান অর্থনীতিতে। মূল্যস্ফীতি কুরে কুরে খাচ্ছে সাধারণ মানুষের জীবন। বাংলাদেশও এর ব্যত্যয় নয়।
তিন. ২০২৩ সালে সারা পৃথিবীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনেক বেড়ে গেছে। বড় বড় ভূমিকম্প ঘটেছে পৃথিবীর নানান দেশে। বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস ভাসিয়ে নিয়ে গেছে নগর-গ্রাম, বন-অগ্নি পুড়িয়ে দিয়েছে অরণ্য ও জনপদ। পৃথিবীর বর্ধিত তাপমাত্রা আমাদের জীবনকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের জীবনের এক ভয়াবহ বাস্তবতা। এবং ২০২৪ সালে এর প্রকোপ আরও বেড়ে যাবে।
চার. বর্ধিত অসমতা ২০২৩ সালের বিশ্বের মূল এক অন্তরায় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। অসমতা বেড়েছে দেশে-দেশে, সমাজে-সমাজে, অঞ্চলে-অঞ্চলে, গোষ্ঠীতে-গোষ্ঠীতে, মানুষে-মানুষে। আজকের পৃথিবীতে ৮ জন শীর্ষ ধনকুবেরের যে সম্পদ রয়েছে, তা বিশ্বের নিচের দিকের ৫০ শতাংশ মানুষের সম্পদের সমান। অন্য কথায়, এক একজন ধনকুবের বিশ্বের ৪৩ কোটি ৫০ লাখ মানুষের সমান।
তেমনিভাবে ধনী-দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে অসমতা বেড়েছে—ফলাফলে এবং সুযোগে। দেশের মধ্যে অঞ্চলে-অঞ্চলে, গোষ্ঠীতে-গোষ্ঠীতে বৈষম্য বড়ই দৃশ্যমান। আগামী দিনগুলো তো এ অসমতা, এ বৈষম্য আরও বাড়লে তার অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী।
পাঁচ. সংঘাত ও সন্ত্রাস আজকের বিশ্বের ব্যতিক্রম হওয়ার পরিবর্তে নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত অক্টোবরে ফিলিস্তিনের ওপরে ইসরায়েলি নগ্ন আক্রমণই তার জ্বলন্ত প্রমাণ। হামাস যদি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হয়, তাহলে ইসরায়েল একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। ইদানীং ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করার যে ঘৃণ্য কাজে রাষ্ট্রটি ব্যাপৃত হয়েছে, তা মানবতাবিরোধী, মানবাধিকারের বিপক্ষে। হামাস দমনের নামে ইসরায়েল ২১ হাজারের ওপরে নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলোর এ পুরো ঘটনার উপেক্ষা, নিষ্ক্রিয়তা এবং জাতিসংঘের মতো বিশ্ব সংস্থার সীমাবদ্ধতা নতুন করে ভাবনার জন্ম দিচ্ছে যে, বিশ্বকাঠামো আর ব্যবস্থার খোলনলচে বদলে দেওয়ার সময় এসেছে। চূড়ান্ত বিচারে, আমরা একটি অসম ও অস্থিতিশীল বিশ্বে বসবাস করছি।
ব্যক্তিগত বলয়ে, কী নিয়ে আমার পৃথিবী? আমার অতি প্রিয়জনেরা, আমার কাজ, আমার পারিপার্শ্বিকতা—এই নিয়েই তো আমার পৃথিবী। আমার পৃথিবী আমাকে ধারণ করে আছে এবং আমিও আমার পৃথিবীকে ধারণ করে আছি। তাই আমার পৃথিবী আমার ধর্মও বটে, কারণ যা আমাকে ধারণ করে আছে আর আমি যা ধারণ করে আছি, তাই তো আমার ধর্ম।
২০২৩ সালে কোনো জীবনকে আমি ছুঁতে পেরেছি কি না, জানি না, কিন্তু বহু মানুষের শ্রদ্ধা, মমতা, শুভকামনা আমার জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে। অবয়ব পত্রেই তো তার স্বাক্ষর মেলে। তার বাইরে আমার অতি প্রিয়জনেরা আমার সব সীমাবদ্ধতা, দুর্বলতা, অক্ষমতা সত্ত্বেও আমাকে নিঃশর্তভাবে ভালোবেসেছেন, মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন, ক্ষমা করেছেন আমার সব অপূর্ণতাকে।
সবার কাছে ঋণ আমার অনেক। কিন্তু কোনো কোনো ঋণ মানুষকে রিক্ত করে না, তাকে সমৃদ্ধ করে। তাই ঋণ শোধ করার কথা ভাবি না, কারণ কোনো কোনো ঋণ শোধ হবার নয়, আর সব ঋণ শোধ করাও যায় না এক জীবনে। ২০২৪-কে বলতে ইচ্ছে হয়, ‘যা পেয়েছি, তা’ও থাক, যা পাইনি তা’ও, যা কখনও চাই নি, তা’ই মোরে দাও’। জয়তু: ২০২৪।
লেখক: সেলিম জাহান, ভূতপূর্ব পরিচালক, মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর ও দারিদ্র্য বিমোচন বিভাগ, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
সময়ের বৃক্ষ থেকে আরও একটি পত্র ঝরে যাবে এক দিনের মধ্যেই, যবনিকাপাত হবে ২০২৩ সালের। শুরু হবে নতুন বছর, ২০২৪। পৃথিবীর ও বৃহত্তর মানবজীবনের পথপরিক্রমায় ৩৬৫ দিন নিশ্চিতভাবে পরমাণুসম ক্ষুদ্র, একটি দেশ বা সমাজের সার্বিক বিবর্তনেও একটি বছর তেমন কিছু নয়, একজন ব্যক্তিমানুষের পুরো জীবনবলয়েও হয়তো একটি বছরের সামগ্রিক গুরুত্ব তেমন একটা বড় নয়, তবু প্রতিটি বছরই তার নিজস্ব তাৎপর্যে ভাস্বর যেমন পুরো পৃথিবীর জন্য, তেমনি একটি দেশ বা সমাজের জন্য এবং সেই সঙ্গে একজন ব্যক্তিমানুষের জন্য।
এই যে ১৯৬৯ সাল। মানুষ প্রথম চাঁদে পা রাখল—ইতিহাস সৃষ্টি হয়ে গেল সারা পৃথিবী আর মানবসভ্যতার জন্য। আর কোনো বছর এই অভূতপূর্ব অর্জনের ওপরে দাবি রাখতে পারবে না–ওটা শুধু ১৯৬৯-এর। তেমনি ১৯৮৯–বার্লিন দেয়ালের পতন। পূর্ব আর পশ্চিম জার্মানি মিলে অখণ্ড জার্মানি হয়ে গেল। অন্য কোনো বছর চিহ্নিত হবে না এ অভাবিত ঘটনার জন্য–ওটা ১৯৮৯-এর। তেমনি প্রতিটি ব্যক্তিমানুষের জীবনেও কোনো কোনো বছর হিরণ্ময় স্মৃতি হয়ে থাকে– সুখের কারণে অথবা ধূসর পর্দা হয়ে থাকে–‘পাতার নিচে, ছাতার মতো’ পরম ব্যাপ্ত দুঃখময় স্মৃতির কারণে।
প্রায়ই বহু মানুষকে বছরের শেষে বলতে শুনি, ‘হায়, আরও একটা বছর ঝরে গেল জীবন থেকে’। এই উক্তির সঙ্গে বেরিয়ে আসে বুকভাঙা দীর্ঘশ্বাস। কেউ কেউ আবার এমনও বলেন, ‘মৃত্যুর দিকে আরও এক পা এগোলাম’। এসব মানুষের জন্য চলে যাওয়া বছর একটি ক্ষয়।
আমার জন্য শেষ হয়ে যাওয়া বছর একটি প্রাপ্তি। আমি ভাবি, ‘জীবন ভারী সুন্দর। ভাগ্যিস, বিগত বছরটা পেয়েছিলাম জীবনে। নইলে এত সব নতুন মানুষের দেখা পেতাম কি আমার জীবনে। নতুন করে জানা হতো কি পুরোনো মানুষদের। যেতে পারতাম কি নতুন নতুন জায়গায়। জানতে পারতাম কি, যা ছিল অজানা? কতটা দিয়ে গেল আমাকে পুরোনো বছরটা!’
শেষ হয়ে এল ২০২৩। পৃথিবীতে কত বদল হয়েছে এ বছরে, ঘটেছে কত পরিবর্তন নানান দেশে, সমাজে। ওই সব পরিবর্তন নিয়ে অনেকের মতো ভাবি, ব্যাখ্যা খুঁজি, জানি যে এসবের প্রভাব আমার জীবনেও পড়বে। কিন্তু বাইরের বৃহত্তর পৃথিবীর পরিবর্তনে যতটা আন্দোলিত হই, ততটাই হই আমার নিজস্ব পৃথিবীর বদলে।
এর কারণ হয়তো নানাবিধ—বাইরের পৃথিবীর পরিবর্তন যেমন অনেক সময় নৈর্ব্যক্তিক দূরের জিনিস বলে মনে হয়, আমার পৃথিবীর বদলগুলোও আমার ধরাছোঁয়ার মধ্যে বাস্তব বিষয় বলে মনে হয়; বাইরের পৃথিবীর ঘটনাগুলো বুদ্ধিবৃত্তি দিয়ে অনুধাবন করতে পারি, আমার পৃথিবীর জিনিসগুলো হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে পারি। তাই যেকোনো বছরকে আমি যেমনি দেখি বাইরের বৃহত্তর জগতের পরিপ্রেক্ষিতে, তেমনি দেখি আমার পৃথিবীর আরশিতে।
বাইরের বৃহত্তর জগতের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের বিশ্বের দিকে যখন তাকাই, তখন পাঁচটি কথা আমার মনে হয়। এক. গত কয় বছরের কোভিড অতিমারির পরে ২০২৩ সালকে আমার মনে হয়েছে একটি স্বাভাবিক বছর। ২০২২ সালেও মানুষের কোভিড-উদ্বিগ্নতা পুরোপুরি কেটেছিল বলে আমার মনে হয়নি। ২০২৩ সালে পৃথিবী অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে। যদিও এর মধ্যে পৃথিবীর ওলট-পালট হয়েছে হয়েছে জীবনযাত্রায়, অর্থনীতিতে, আমার বোধ-উপলব্ধিতে। না, ওই পুরোনো পৃথিবী আমরা আর ফিরে পাব না, কিন্তু গত কয় বছরের অস্থির পৃথিবী অনেকটাই স্থির হয়ে এসেছে। ২০২৪ সালের শুরুতেই প্রার্থনা করি, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যেন এমন সময় পার করতে না হয়।
দুই. কোভিডের কারণে খোলনলচে বদলে দেওয়া পৃথিবীর অর্থনীতি বর্তমান সময়ে বড় নড়বড়ে হয়ে গেছে। সেই সঙ্গে মিশেছে ইউক্রেনের যুদ্ধ। এ দুয়ের কারণে ২০২৩ সালের বিশ্বের নানান দেশে প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে গেছে, কর্মহীনতা বেড়েছে, জ্বালানি এবং খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি পেয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমে গেছে নানান অর্থনীতিতে। মূল্যস্ফীতি কুরে কুরে খাচ্ছে সাধারণ মানুষের জীবন। বাংলাদেশও এর ব্যত্যয় নয়।
তিন. ২০২৩ সালে সারা পৃথিবীতে প্রাকৃতিক দুর্যোগ অনেক বেড়ে গেছে। বড় বড় ভূমিকম্প ঘটেছে পৃথিবীর নানান দেশে। বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস ভাসিয়ে নিয়ে গেছে নগর-গ্রাম, বন-অগ্নি পুড়িয়ে দিয়েছে অরণ্য ও জনপদ। পৃথিবীর বর্ধিত তাপমাত্রা আমাদের জীবনকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের জীবনের এক ভয়াবহ বাস্তবতা। এবং ২০২৪ সালে এর প্রকোপ আরও বেড়ে যাবে।
চার. বর্ধিত অসমতা ২০২৩ সালের বিশ্বের মূল এক অন্তরায় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। অসমতা বেড়েছে দেশে-দেশে, সমাজে-সমাজে, অঞ্চলে-অঞ্চলে, গোষ্ঠীতে-গোষ্ঠীতে, মানুষে-মানুষে। আজকের পৃথিবীতে ৮ জন শীর্ষ ধনকুবেরের যে সম্পদ রয়েছে, তা বিশ্বের নিচের দিকের ৫০ শতাংশ মানুষের সম্পদের সমান। অন্য কথায়, এক একজন ধনকুবের বিশ্বের ৪৩ কোটি ৫০ লাখ মানুষের সমান।
তেমনিভাবে ধনী-দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে অসমতা বেড়েছে—ফলাফলে এবং সুযোগে। দেশের মধ্যে অঞ্চলে-অঞ্চলে, গোষ্ঠীতে-গোষ্ঠীতে বৈষম্য বড়ই দৃশ্যমান। আগামী দিনগুলো তো এ অসমতা, এ বৈষম্য আরও বাড়লে তার অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী।
পাঁচ. সংঘাত ও সন্ত্রাস আজকের বিশ্বের ব্যতিক্রম হওয়ার পরিবর্তে নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত অক্টোবরে ফিলিস্তিনের ওপরে ইসরায়েলি নগ্ন আক্রমণই তার জ্বলন্ত প্রমাণ। হামাস যদি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হয়, তাহলে ইসরায়েল একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র। ইদানীং ফিলিস্তিনিদের নিশ্চিহ্ন করার যে ঘৃণ্য কাজে রাষ্ট্রটি ব্যাপৃত হয়েছে, তা মানবতাবিরোধী, মানবাধিকারের বিপক্ষে। হামাস দমনের নামে ইসরায়েল ২১ হাজারের ওপরে নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলোর এ পুরো ঘটনার উপেক্ষা, নিষ্ক্রিয়তা এবং জাতিসংঘের মতো বিশ্ব সংস্থার সীমাবদ্ধতা নতুন করে ভাবনার জন্ম দিচ্ছে যে, বিশ্বকাঠামো আর ব্যবস্থার খোলনলচে বদলে দেওয়ার সময় এসেছে। চূড়ান্ত বিচারে, আমরা একটি অসম ও অস্থিতিশীল বিশ্বে বসবাস করছি।
ব্যক্তিগত বলয়ে, কী নিয়ে আমার পৃথিবী? আমার অতি প্রিয়জনেরা, আমার কাজ, আমার পারিপার্শ্বিকতা—এই নিয়েই তো আমার পৃথিবী। আমার পৃথিবী আমাকে ধারণ করে আছে এবং আমিও আমার পৃথিবীকে ধারণ করে আছি। তাই আমার পৃথিবী আমার ধর্মও বটে, কারণ যা আমাকে ধারণ করে আছে আর আমি যা ধারণ করে আছি, তাই তো আমার ধর্ম।
২০২৩ সালে কোনো জীবনকে আমি ছুঁতে পেরেছি কি না, জানি না, কিন্তু বহু মানুষের শ্রদ্ধা, মমতা, শুভকামনা আমার জীবনকে সমৃদ্ধ করেছে। অবয়ব পত্রেই তো তার স্বাক্ষর মেলে। তার বাইরে আমার অতি প্রিয়জনেরা আমার সব সীমাবদ্ধতা, দুর্বলতা, অক্ষমতা সত্ত্বেও আমাকে নিঃশর্তভাবে ভালোবেসেছেন, মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন, ক্ষমা করেছেন আমার সব অপূর্ণতাকে।
সবার কাছে ঋণ আমার অনেক। কিন্তু কোনো কোনো ঋণ মানুষকে রিক্ত করে না, তাকে সমৃদ্ধ করে। তাই ঋণ শোধ করার কথা ভাবি না, কারণ কোনো কোনো ঋণ শোধ হবার নয়, আর সব ঋণ শোধ করাও যায় না এক জীবনে। ২০২৪-কে বলতে ইচ্ছে হয়, ‘যা পেয়েছি, তা’ও থাক, যা পাইনি তা’ও, যা কখনও চাই নি, তা’ই মোরে দাও’। জয়তু: ২০২৪।
লেখক: সেলিম জাহান, ভূতপূর্ব পরিচালক, মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন দপ্তর ও দারিদ্র্য বিমোচন বিভাগ, জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে