কুষ্টিয়ায় বরজে আগুন: পোড়া মাটিতে ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন চাষিরা

দেবাশীষ দত্ত, কুষ্টিয়া
প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৪, ০৯: ০৭
আপডেট : ২০ মার্চ ২০২৪, ১০: ১৫

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নে গত সপ্তাহের ভয়াবহ আগুনে পানের বরজ, ফসলি জমি ও ঘরবাড়ি পুড়ে যাওয়ার আতঙ্কের ছাপ এখনো স্পষ্ট পাঁচ গ্রামের বাসিন্দাদের চোখেমুখে। তারপরও পোড়া মাটিতে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন তাঁরা। বিশেষ করে পানচাষিরা পুড়ে যাওয়া বাঁশ-পাটকাঠি সরিয়ে নতুন করে বরজ তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। চাষিরা নতুন করে পান চাষে সহজ শর্তে ঋণ সুবিধার দাবি জানিয়েছেন।

১০ মার্চ বেলা ১১টার দিকে রায়টা পাথরঘাট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে তা পাঁচ গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট, পুলিশ ও গ্রামবাসীর চেষ্টায় সাড়ে ৫ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এর মধ্যে হাজারো হেক্টর বরজ পুড়ে যায়। এর সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকেরা বেকার হয়ে পড়েন। পান ঘিরে গড়ে ওঠা কুচিয়ামোড়া হাট এখন পানশূন্য।

গতকাল মঙ্গলবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেকে নতুন করে বরজ প্রস্তুত করতে পোড়া বাঁশ ও খুঁটি সরিয়ে নিচ্ছেন এবং নতুন বাঁশ ও খড় দিয়ে ছাউনি দিচ্ছেন। রায়টার চাষি রুহুল আমীন বলেন, ‘আমার এক বিঘা জমিতে বরজ ছিল। আগুনে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখন নতুনভাবে করতে হলে অনেক টাকা প্রয়োজন। এ অবস্থায় এনজিওগুলো ঋণ দিতেও নানা জটিলতা সৃষ্টি করছে।’

মেঘনাপাড়ার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক শাহজাহান আলী জানান, নতুন করে বরজ তৈরিতে প্রয়োজন হচ্ছে বাঁশ, পাটকাঠি, সুতা, তার, বাতা ও খড়। সুযোগ বুঝে এসবের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যে পাটকাটি ছিল ৩৩০ টাকা মণ, তা এখন কিনতে হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। বরজ দাঁড় করাতে তাঁর এখন কমপক্ষে ১ লাখ টাকা খরচ হবে, কিন্তু হাতে কোনো টাকা নেই। এমন অবস্থায় সরকারি সহযোগিতায় দ্রুত ঋণের ব্যবস্থা হলে তাঁদের ঘুরে দাঁড়ানোর কাজটি সহজ হবে। 

১৪ মার্চ আগুনে পোড়া এলাকা পরিদর্শনে আসেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা। এ সময় কৃষকেরা ত্রাণের চাল নয়, বিনা সুদে ঋণের দাবি জানান। ১৬ মার্চ ঘটনাস্থলে যান সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ ও কামারুল আরেফিন। হানিফ কৃষি কার্ডের মাধ্যমে পানচাষিদের ৪ শতাংশ সুদে ঋণসহায়তার ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেন।  

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ভেড়ামারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আকাশ কুমার কুন্ডু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কৃষিঋণের জন্য আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের একটি তালিকা কৃষি ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। ব্যাংক ও এনজিওগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ঋণ দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া যেসব ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না, তাঁদের ৬ মাস সময় দেওয়ার জন্যও বলা হয়েছে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত