মামুনুর রশীদ, নাট্যব্যক্তিত্ব
প্রাচীন কোনো যুদ্ধের ছবি, তা কোনো শিল্পীর হাতে আঁকা অথবা চলচ্চিত্র হোক না কেন, আমরা দেখতে পাই শিশু, নারী ও প্রবীণদের অসহায় আর্তি। আজও দেশে দেশে যখন শত্রুর আক্রমণ হয়, তখনো একই চিত্র। ইরাক যুদ্ধে, ইউক্রেন যুদ্ধেও অসহায় শিশু, নারী, বৃদ্ধদের ছবি বারবার সভ্য মানুষ ও মানবতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এবার গাজার যুদ্ধে অসংখ্য শিশুর রক্তাক্ত দেহও আমরা দেখেছি এবং বারবার প্রশ্ন করেছি—এই সভ্যতার মূল্য কোথায়?
কিন্তু এটাও ঠিক, কিছু কিছু দেশে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তার জন্য প্রবল আন্দোলন চলছে। কোনো কোনো সরকার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এগিয়েও আসছে। নতুন আইনও প্রণয়ন করা হচ্ছে। কিন্তু এত কিছুর পরও শিশুশ্রম বন্ধ করা যাচ্ছে না কেন, সে এক বিরাট প্রশ্ন। আবারও সামাজিক নিরাপত্তার কথা আসে। সমাজে যদি বড় অসাম্য তৈরি হয়, তাহলে এই সমস্যার সমাধান হবে কীভাবে? ভয়াবহ দারিদ্র্য যেখানে একটা প্রান্তিক সমাজ নির্মাণ করছে, সেখানে শিশুশ্রম বন্ধ হবে কীভাবে? আর যেখানে বৈষম্য দিনে দিনে বেড়েই চলেছে।
এখন সমস্যা হচ্ছে প্রবীণদের নিয়ে। একটা বয়স পার হওয়ার পর প্রবীণদের নানা শারীরিক সমস্যা তৈরি হতে থাকে। তারুণ্য অতিক্রম হওয়ার পর থেকেই চোখের সমস্যা শুরু হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিশুদেরই চশমা পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়। একবার একটা আন্তস্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট দেখতে গিয়েছিলাম। স্কুলগুলো বড়লোকদের ইংরেজি স্কুল। ছেলেগুলোর কেউ কেউ বেশ হৃষ্টপুষ্ট, কিন্তু চোখে চশমা। ২২ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে ১৬ জনেরই চোখে চশমা। কারও কারও বেশ পুরু চশমা। প্রবীণদের ক্ষেত্রে এটা খুবই স্বাভাবিক। একটা বয়সে চোখে ছানি পড়বেই, যতই তিনি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হোন না কেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে এই রোগের চিকিৎসা একেবারেই অপ্রতুল। বিভিন্ন সংস্থা, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও চক্ষু চিকিৎসকবৃন্দ বিনা মূল্যে এই রোগের চিকিৎসা করে থাকেন। যেহেতু এই চিকিৎসায় অস্ত্রোপচার ও লেন্স লাগে, সে জন্য বিষয়টি ব্যয়সাপেক্ষ।
সম্প্রতি আমি বাংলাদেশের একটি প্রান্তিক জেলা পঞ্চগড়ে গিয়েছিলাম এমনই এক চক্ষুশিবিরে। বেসরকারি সংস্থা, ব্যক্তির অনুদান, সহযোগী কিছু সংস্থার যৌথ উদ্যোগে শিবিরটি পরিচালিত হয়েছে। এই জেলায় এমনিতেই চিকিৎসাব্যবস্থা একেবারে অপ্রতুল, তার ওপর এই শিবিরের সাংগঠনিক কার্যক্রমও সহজ নয়। ‘রিক’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা কয়েক বছর ধরে এই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানের আরও একটি কার্যক্রম আছে, তা হলো প্রবীণদের জন্য।
পশ্চিমা দেশগুলোতে বহু আগে থেকেই প্রবীণদের জন্য ‘ওল্ড মেন’স হোম’-এর কার্যক্রম চলছে। সেখানে প্রবীণদের থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা ও বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। পশ্চিমা আদলে এ দেশেও সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কিছু বৃদ্ধাশ্রম গড়ে উঠছিল, কিন্তু সেগুলো একেবারেই কার্যকর হয়নি। কারণটা সাংস্কৃতিক। বহু শতাব্দী ধরেই প্রবীণেরা পরিবারের সঙ্গে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। প্রতিটি পরিবারের বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিদের সঙ্গে বসবাস করে থাকেন। তাদের জীবনের আনন্দ-বেদনার সঙ্গে একাকার হয়ে থাকার মধ্যেই তাঁদের দিন যাপন। অসুখ-বিসুখে তাঁরা সে জন্যই অসহায় বোধ করেন না। বিত্তহীনদের মধ্যে অবশ্য বৃদ্ধ বাবা-মা একপর্যায়ে বোঝা হয়ে গেলেও সন্তানেরা কখনোই তাঁদের ত্যাগ করতে চান না। কখনো হয়তো অনাহারে, বিনা চিকিৎসায় ওই বিপন্ন বৃদ্ধদের মৃত্যু ঘটে থাকে। যাঁরা বিত্তবান তাঁদের জন্যও বৃদ্ধাশ্রম হয়েছে। সেগুলোতে একটা বিলাসী জীবন হয়তো পাওয়া যাবে, কিন্তু ওই বৃদ্ধ বাবা কিংবা মা অথবা দুজনেই স্বজনদের স্পর্শহীন হয়ে বেদনায় দিন কাটান।
‘রিক’ প্রতিষ্ঠানটি প্রবীণদের জন্য একটা ভিন্ন পথ খুঁজে বের করেছে। প্রবীণেরা তাঁদের বাড়িতেই থাকেন, কিন্তু তাঁদের দিন কাটানো, বিনোদন, পাঠাভ্যাসের জন্য লাইব্রেরি, চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা—এসব করে দিয়ে পরিবারের সঙ্গে বসবাসের একটা সুযোগ তৈরি করেছে। একধরনের ক্লাবের মাধ্যমে প্রবীণ-প্রবীণাদের মধ্যে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করছে।
শুনেছি, চীন দেশে এ ধরনের ক্লাব এবং প্রয়োজনে আবাসিক ব্যবস্থাও রয়েছে। সেখানে প্রবীণ-প্রবীণাদের সম্পর্ক এমন একটা অবস্থায় চলে যায় যে তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিরা আনন্দের সঙ্গে ধুমধাম করে এই সম্পর্ক মেনে নেয়। নিজস্ব সংস্কৃতির মধ্যে থেকে প্রবীণদের শেষ বয়সের জীবনটাকে আনন্দময় করার প্রচেষ্টার দায়িত্ব অবশ্যই রাষ্ট্রকে নিতে হবে। কিন্তু এ ব্যাপারে জনসচেতনতার কথাটিও গুরুত্বপূর্ণ।
খুশবন্ত সিংয়ের একটি ছোট উপন্যাস আছে, ‘দ্য সানসেট ক্লাব’—দিল্লির লোদি গার্ডেনের এক কোনায় অশীতিপর তিন বন্ধুর দিন যাপনের এক আখ্যান। তাঁরা সকালে এখানে মিলিত হন। তাঁদের অতীত জীবনের সাফল্য, ব্যর্থতা, পারিবারিক জীবন, গোপন কথা—এসব নিয়ে প্রবল আড্ডা হয়। এই আড্ডাই তাঁদের জীবনীশক্তি। তাঁদের শারীরিক অসুস্থতাও আছে, আছে পারিবারিক কিছু অসুখ। তবু এমনি করেই তাঁদের দিন যায়, রাত যায়। একে একে তাঁরা একসময় বিদায়ও নেন। দিল্লির জনজীবনের চিত্রটাও এখান থেকে পাওয়া যায়।
গ্রামে যেসব ক্লাবের কথা বলেছি, তাদের আবার বড় বিনোদন খেলাধুলা। একটা ফুটবল টুর্নামেন্টও দেখেছিলাম—প্রবীণ বনাম তরুণ। জার্সি পরে দুই দল বিশ্বকাপের স্টাইলে মাঠে নামলেন। দু-চারবার প্রবীণেরা আহত হয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে তরুণেরা তাঁদের সেবায় লেগে গেলেন। ওই দিন প্রবীণেরা জয়ী হয়েছিলেন। সে কী আনন্দ! মানুষের বাঁচার প্রধান প্রণোদনা হচ্ছে আনন্দ। এই আনন্দে যদি প্রবীণেরা থাকতে পারেন, তাহলে অন্য কিছু তাঁদের কাছে তুচ্ছ।
আমাদের রাষ্ট্র অপ্রতুল হলেও বয়স্কদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করেছে। পশ্চিমা দেশগুলোতে চারজন কর্মক্ষম তরুণের ট্যাক্সের টাকায় একজন প্রবীণের বার্ধক্যকালীন ভাতার ব্যবস্থা হয়। এখন সব দেশেই প্রবীণদের জন্য নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা হচ্ছে। সেসব সুযোগ গ্রহণের জন্য তেমন সচেতনতা অবশ্য সৃষ্টি হয়নি। সরকারের অপচয়ের খাতগুলো কমিয়ে এদিকে নজর দেওয়া অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করি।
নারী, শিশু ও প্রবীণদের কথা বলছিলাম। ব্যাপকসংখ্যক এই জনগোষ্ঠীর কথা কে ভাববে? প্রাথমিকভাবে এ দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্রের সংবিধানে এই নিশ্চয়তা দেওয়া আছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যবস্থাও আছে। কিন্তু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবহেলার কারণে সেই ব্যবস্থা কার্যকর হয় না। এর মধ্যে ঢুকে যায় ‘চাটার দল’, অর্থ লুণ্ঠনকারীর দল। সব ব্যবস্থাই আছে, কিন্তু মানুষ সেই অধিকারের জায়গায় পৌঁছাতে পারে না। এর জন্য প্রয়োজন নাগরিকদের সোচ্চার হওয়া; একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং তার সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতির অপেক্ষায় রইলাম।
প্রাচীন কোনো যুদ্ধের ছবি, তা কোনো শিল্পীর হাতে আঁকা অথবা চলচ্চিত্র হোক না কেন, আমরা দেখতে পাই শিশু, নারী ও প্রবীণদের অসহায় আর্তি। আজও দেশে দেশে যখন শত্রুর আক্রমণ হয়, তখনো একই চিত্র। ইরাক যুদ্ধে, ইউক্রেন যুদ্ধেও অসহায় শিশু, নারী, বৃদ্ধদের ছবি বারবার সভ্য মানুষ ও মানবতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। এবার গাজার যুদ্ধে অসংখ্য শিশুর রক্তাক্ত দেহও আমরা দেখেছি এবং বারবার প্রশ্ন করেছি—এই সভ্যতার মূল্য কোথায়?
কিন্তু এটাও ঠিক, কিছু কিছু দেশে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তার জন্য প্রবল আন্দোলন চলছে। কোনো কোনো সরকার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এগিয়েও আসছে। নতুন আইনও প্রণয়ন করা হচ্ছে। কিন্তু এত কিছুর পরও শিশুশ্রম বন্ধ করা যাচ্ছে না কেন, সে এক বিরাট প্রশ্ন। আবারও সামাজিক নিরাপত্তার কথা আসে। সমাজে যদি বড় অসাম্য তৈরি হয়, তাহলে এই সমস্যার সমাধান হবে কীভাবে? ভয়াবহ দারিদ্র্য যেখানে একটা প্রান্তিক সমাজ নির্মাণ করছে, সেখানে শিশুশ্রম বন্ধ হবে কীভাবে? আর যেখানে বৈষম্য দিনে দিনে বেড়েই চলেছে।
এখন সমস্যা হচ্ছে প্রবীণদের নিয়ে। একটা বয়স পার হওয়ার পর প্রবীণদের নানা শারীরিক সমস্যা তৈরি হতে থাকে। তারুণ্য অতিক্রম হওয়ার পর থেকেই চোখের সমস্যা শুরু হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে শিশুদেরই চশমা পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়। একবার একটা আন্তস্কুল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট দেখতে গিয়েছিলাম। স্কুলগুলো বড়লোকদের ইংরেজি স্কুল। ছেলেগুলোর কেউ কেউ বেশ হৃষ্টপুষ্ট, কিন্তু চোখে চশমা। ২২ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে ১৬ জনেরই চোখে চশমা। কারও কারও বেশ পুরু চশমা। প্রবীণদের ক্ষেত্রে এটা খুবই স্বাভাবিক। একটা বয়সে চোখে ছানি পড়বেই, যতই তিনি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হোন না কেন। রাষ্ট্রীয়ভাবে এই রোগের চিকিৎসা একেবারেই অপ্রতুল। বিভিন্ন সংস্থা, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও চক্ষু চিকিৎসকবৃন্দ বিনা মূল্যে এই রোগের চিকিৎসা করে থাকেন। যেহেতু এই চিকিৎসায় অস্ত্রোপচার ও লেন্স লাগে, সে জন্য বিষয়টি ব্যয়সাপেক্ষ।
সম্প্রতি আমি বাংলাদেশের একটি প্রান্তিক জেলা পঞ্চগড়ে গিয়েছিলাম এমনই এক চক্ষুশিবিরে। বেসরকারি সংস্থা, ব্যক্তির অনুদান, সহযোগী কিছু সংস্থার যৌথ উদ্যোগে শিবিরটি পরিচালিত হয়েছে। এই জেলায় এমনিতেই চিকিৎসাব্যবস্থা একেবারে অপ্রতুল, তার ওপর এই শিবিরের সাংগঠনিক কার্যক্রমও সহজ নয়। ‘রিক’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা কয়েক বছর ধরে এই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানের আরও একটি কার্যক্রম আছে, তা হলো প্রবীণদের জন্য।
পশ্চিমা দেশগুলোতে বহু আগে থেকেই প্রবীণদের জন্য ‘ওল্ড মেন’স হোম’-এর কার্যক্রম চলছে। সেখানে প্রবীণদের থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা ও বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে। পশ্চিমা আদলে এ দেশেও সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কিছু বৃদ্ধাশ্রম গড়ে উঠছিল, কিন্তু সেগুলো একেবারেই কার্যকর হয়নি। কারণটা সাংস্কৃতিক। বহু শতাব্দী ধরেই প্রবীণেরা পরিবারের সঙ্গে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। প্রতিটি পরিবারের বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিদের সঙ্গে বসবাস করে থাকেন। তাদের জীবনের আনন্দ-বেদনার সঙ্গে একাকার হয়ে থাকার মধ্যেই তাঁদের দিন যাপন। অসুখ-বিসুখে তাঁরা সে জন্যই অসহায় বোধ করেন না। বিত্তহীনদের মধ্যে অবশ্য বৃদ্ধ বাবা-মা একপর্যায়ে বোঝা হয়ে গেলেও সন্তানেরা কখনোই তাঁদের ত্যাগ করতে চান না। কখনো হয়তো অনাহারে, বিনা চিকিৎসায় ওই বিপন্ন বৃদ্ধদের মৃত্যু ঘটে থাকে। যাঁরা বিত্তবান তাঁদের জন্যও বৃদ্ধাশ্রম হয়েছে। সেগুলোতে একটা বিলাসী জীবন হয়তো পাওয়া যাবে, কিন্তু ওই বৃদ্ধ বাবা কিংবা মা অথবা দুজনেই স্বজনদের স্পর্শহীন হয়ে বেদনায় দিন কাটান।
‘রিক’ প্রতিষ্ঠানটি প্রবীণদের জন্য একটা ভিন্ন পথ খুঁজে বের করেছে। প্রবীণেরা তাঁদের বাড়িতেই থাকেন, কিন্তু তাঁদের দিন কাটানো, বিনোদন, পাঠাভ্যাসের জন্য লাইব্রেরি, চিকিৎসার জন্য ব্যবস্থা—এসব করে দিয়ে পরিবারের সঙ্গে বসবাসের একটা সুযোগ তৈরি করেছে। একধরনের ক্লাবের মাধ্যমে প্রবীণ-প্রবীণাদের মধ্যে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করছে।
শুনেছি, চীন দেশে এ ধরনের ক্লাব এবং প্রয়োজনে আবাসিক ব্যবস্থাও রয়েছে। সেখানে প্রবীণ-প্রবীণাদের সম্পর্ক এমন একটা অবস্থায় চলে যায় যে তাঁরা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের ছেলেমেয়ে, নাতি-নাতনিরা আনন্দের সঙ্গে ধুমধাম করে এই সম্পর্ক মেনে নেয়। নিজস্ব সংস্কৃতির মধ্যে থেকে প্রবীণদের শেষ বয়সের জীবনটাকে আনন্দময় করার প্রচেষ্টার দায়িত্ব অবশ্যই রাষ্ট্রকে নিতে হবে। কিন্তু এ ব্যাপারে জনসচেতনতার কথাটিও গুরুত্বপূর্ণ।
খুশবন্ত সিংয়ের একটি ছোট উপন্যাস আছে, ‘দ্য সানসেট ক্লাব’—দিল্লির লোদি গার্ডেনের এক কোনায় অশীতিপর তিন বন্ধুর দিন যাপনের এক আখ্যান। তাঁরা সকালে এখানে মিলিত হন। তাঁদের অতীত জীবনের সাফল্য, ব্যর্থতা, পারিবারিক জীবন, গোপন কথা—এসব নিয়ে প্রবল আড্ডা হয়। এই আড্ডাই তাঁদের জীবনীশক্তি। তাঁদের শারীরিক অসুস্থতাও আছে, আছে পারিবারিক কিছু অসুখ। তবু এমনি করেই তাঁদের দিন যায়, রাত যায়। একে একে তাঁরা একসময় বিদায়ও নেন। দিল্লির জনজীবনের চিত্রটাও এখান থেকে পাওয়া যায়।
গ্রামে যেসব ক্লাবের কথা বলেছি, তাদের আবার বড় বিনোদন খেলাধুলা। একটা ফুটবল টুর্নামেন্টও দেখেছিলাম—প্রবীণ বনাম তরুণ। জার্সি পরে দুই দল বিশ্বকাপের স্টাইলে মাঠে নামলেন। দু-চারবার প্রবীণেরা আহত হয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে তরুণেরা তাঁদের সেবায় লেগে গেলেন। ওই দিন প্রবীণেরা জয়ী হয়েছিলেন। সে কী আনন্দ! মানুষের বাঁচার প্রধান প্রণোদনা হচ্ছে আনন্দ। এই আনন্দে যদি প্রবীণেরা থাকতে পারেন, তাহলে অন্য কিছু তাঁদের কাছে তুচ্ছ।
আমাদের রাষ্ট্র অপ্রতুল হলেও বয়স্কদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করেছে। পশ্চিমা দেশগুলোতে চারজন কর্মক্ষম তরুণের ট্যাক্সের টাকায় একজন প্রবীণের বার্ধক্যকালীন ভাতার ব্যবস্থা হয়। এখন সব দেশেই প্রবীণদের জন্য নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা হচ্ছে। সেসব সুযোগ গ্রহণের জন্য তেমন সচেতনতা অবশ্য সৃষ্টি হয়নি। সরকারের অপচয়ের খাতগুলো কমিয়ে এদিকে নজর দেওয়া অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করি।
নারী, শিশু ও প্রবীণদের কথা বলছিলাম। ব্যাপকসংখ্যক এই জনগোষ্ঠীর কথা কে ভাববে? প্রাথমিকভাবে এ দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্রের সংবিধানে এই নিশ্চয়তা দেওয়া আছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যবস্থাও আছে। কিন্তু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবহেলার কারণে সেই ব্যবস্থা কার্যকর হয় না। এর মধ্যে ঢুকে যায় ‘চাটার দল’, অর্থ লুণ্ঠনকারীর দল। সব ব্যবস্থাই আছে, কিন্তু মানুষ সেই অধিকারের জায়গায় পৌঁছাতে পারে না। এর জন্য প্রয়োজন নাগরিকদের সোচ্চার হওয়া; একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং তার সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতির অপেক্ষায় রইলাম।
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে