স্বপ্না রেজা
ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা মুসলমানদের দুটি বড় উৎসব। বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবে মুসলমানদের অবস্থান। ফলে এ দুটি ধর্মীয় উৎসব ঘিরে গোটা দেশই যেন ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠে, উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা এ দুটি উৎসবকে কেন্দ্র করে সারা বছরের মুনাফা বা লাভ ঘরে তুলতে নানান পরিকল্পনা ও কৌশল অবলম্বন করে থাকেন এবং পরিকল্পনামাফিক কাজও করেন। আবার বাড়তি আয় নীতিবহির্ভূত কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে করে বসেন কেউ কেউ এবং সেটা ঈদকে কেন্দ্র করেই। ঈদ যেমন আনন্দের, তেমনি কষ্টেরও। একশ্রেণির মানুষের কারণে ঈদ কারও কারও জীবনে সীমাহীন দুঃখ বয়ে আনে, যে দুঃখ লাঘবের কোনো উপায় থাকে না।
সড়ক দুর্ঘটনা প্রায় প্রতিদিনের ঘটনা। এতে প্রতিদিন প্রাণহানি ঘটছে। কোনোভাবেই সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা যাচ্ছে না। বহু আয়োজন, বরাদ্দ, আনুষ্ঠানিকতার পরও সংশ্লিষ্টরা তা রোধ করতে পারছেন না। ঈদের সময় সড়ক দুর্ঘটনা যেন লাগামছাড়া হয়। ঈদ মানেই যাত্রী ও তার স্বজনদের কাছে একটা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ পর্যন্ত নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব না হয়।
যখন লেখাটা লিখছি, তখন একটা সংবাদনির্ভর টিভি চ্যানেলের সংবাদে বলা হলো, এই ঈদে ৯২টা সড়ক দুর্ঘটনায় ৯৫ জন প্রাণ হারিয়েছে এবং আহত হয়েছে শতাধিক। প্রতি ঈদে এমন সংবাদ শুনতে হয়, শোনাটা বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং প্রতি ঈদেই কোনো না কোনো পরিবারে স্বজন হারানোর আহাজারি চলে, চলে মাতম। মা, বাবা, স্বজন, প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপনের স্বপ্ন নিয়ে, ঈদকে আরও আনন্দময় করে তোলার জন্য যারা যাত্রা শুরু করেও শেষ অবধি পৌঁছাতে পারে না, বেপরোয়া সড়ক দুর্ঘটনায় পথে পড়ে থাকে রক্তাক্ত লাশ হয়ে, তাদের জন্য কার কী ভাবনা, জানা নেই।
স্থানীয় ও জেলা প্রশাসন থেকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের কথা শোনা যায়। ২০-২৫ হাজার টাকা দিয়ে এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর সঙ্গে সমঝোতা বা সমবেদনা কতটুকু যায়, তা সম্ভবত গভীর দৃষ্টিতে দেখা হয় না। এমন দুর্ঘটনায় যিনি প্রিয়জন বা স্বজন হারান, তাঁর কাছে ২০-২৫ হাজার টাকা স্বজন হারানোর কষ্টের চেয়েও মর্মান্তিক ও দুঃখজনক। অনেকে এটাকে অসম্মানজনকও মনে করেন। কারণ হিসেবে তাঁরা মনে করেন, জীবনের মূল্য এভাবে পরিশোধ করা যায় না, করাটা ঠিক নয়। বরং সড়ক দুর্ঘটনা রোধের ওপর জোর দেওয়া উচিত সংশ্লিষ্টদের। যা হোক, সড়ক দুর্ঘটনা যেন না ঘটে, সেটাই সবার প্রত্যাশা। কেউই চান না তাঁর প্রিয়জন এভাবে প্রাণ হারাক। এমন দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনে যে তদন্ত হয়, তা-ও গতানুগতিক ও দায়সারা। তাই দুর্ঘটনা রোধে কঠোর কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায় না। ফলে প্রতি ঈদে একই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে।
লেখার শুরুতে উল্লেখ করেছিলাম, ব্যবসায়ীরা ঈদকে কেন্দ্র করে বেশ বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। পরিবহন ব্যবসায়ীরা তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। যেহেতু ঈদে বাড়ি যাওয়ার প্রবণতা সাধারণ মানুষের মধ্য বেশি থাকে, ফলে এই প্রবণতাকে ব্যবসায়ীরা হাতছাড়া করেন না। বেশি রুটে, কয়েক দফায় তারা যাত্রী সংগ্রহ করে অল্প টাকা বেতন দিয়ে অদক্ষ পরিবহনচালক দ্বারা গাড়ি চালানোর কাজটি সারেন, যে চালক হয়তো জানেনই না গাড়ি চালনার বিধিসমূহ। যাঁরা সড়ক দুর্ঘটনা রোধে, তথা নিরাপদ সড়কের জন্য দায়িত্বশীল, তাঁরা কখনো দেখেছেন কি না যে ঈদের সময় পরিবহন মালিকেরা কাকে দিয়ে তাঁর গাড়িটি চালিয়ে নিচ্ছেন, তার যোগ্যতা ও দক্ষতাইবা কী? এখানে সংশ্লিষ্টদের কঠোর মনিটরিং দরকার।
আমরা তো বহুবার শুনেছি, গাড়ির ফিটনেস ও পরিবহনচালকের প্রকৃত লাইসেন্স থাকা এবং সড়কে চলাচলের বিধি অনুসরণই হলো সড়ক দুর্ঘটনা রোধের উপায়। তাহলে কেন এই বিষয়গুলোকে নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না, প্রশ্ন কিন্তু এসে যায়। যুগ যুগ ধরে সংশ্লিষ্টরা তবে কি ব্যর্থ? নাকি প্রতিবছর ঈদে এমন মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য কাউকে না কাউকে অপেক্ষা করতে বলছে কর্তৃপক্ষ? আনন্দটা দুঃখে পরিণত হতে দিতে কে চায়? কেউই না, দুঃখটা যদি হয় স্বজন হারানোর।
টিভি চ্যানেলের আরেকটি সংবাদ দৃষ্টি কেড়ে নিল। কিশোর গ্যাংয়ের চারজন সদস্য তাদের আরেকজন সদস্যকে গলা কেটে হত্যা করেছে। ঘটনাটি স্বপ্নধারা মডেল টাউনে সংঘটিত হয়েছে। শাওন নামের একজন সিএনজি অটোচালককে তার অপর চারজন বন্ধু হত্যা করে। নৃশংসভাবে দেহ থেকে মস্তক বিচ্ছিন্ন করা হয়। এমন হত্যার পেছনের কারণ হলো, ঈদ আনন্দের জন্য শাওনের অটোরিকশা ছিনতাই করা। একই গ্যাংয়ের সদস্য, উপরন্তু বন্ধু, কোনো কিছুই হত্যা থেকে বিরত রাখেনি তাদের। বলা যায়, অপরাধমূলক কাজে এরা সংঘবদ্ধভাবে জড়িত হলেও প্রকৃতার্থে প্রত্যেকেই কঠিনভাবে স্বতন্ত্র অপরাধী হয়ে ওঠে। মানসিক ও সামাজিকভাবে এরা সুস্থ পথে হাঁটে না। এদের গডফাদার থাকে, যাদের প্ররোচনায়, নির্দেশনায় এরা জীবন যাপন করে।
কিশোর গ্যাং নতুন কোনো সংকট নয়। বহুদিন ধরে এদের অবস্থান প্রায় প্রতিটি এলাকায়, মহল্লায়। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কাছে এই গ্যাং সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য থাকলেও গ্যাংয়ের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হচ্ছে না। বরং দিনে দিনে আরও গ্যাং সৃষ্টি হচ্ছে। এরা এতটাই বেপরোয়া ও দুর্ধর্ষ যে, হত্যাকাণ্ড ঘটাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত হয় না। সমাজের কিশোর ও তরুণ শ্রেণি যে এভাবে অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে, বিপথগামী হয়ে উঠছে, তার প্রতিকারের জন্য কী করা হচ্ছে? দু-একজনকে আটক করতে দেখা যায়। হয়তো বিচার প্রক্রিয়ায় নেওয়াও হয়। কিন্তু গ্যাংয়ের সদস্য কমে না, দিনে দিনে বাড়ে। এই বাড়ার প্রবণতা ও কারণ নিয়ে জুতসই ও যথার্থ বিশ্লেষণ, বিবেচনা, গুরুত্ব আরোপ জরুরি।
ঈদকে কেন্দ্র করে বিপথগামী তরুণেরা চাঁদাবাজি শুরু করে দেয়। আর এই চাঁদার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে মারামারি, খুনোখুনি হয়। সেই সঙ্গে চলে আধিপত্য নিয়ে লড়াই। যত দূর জানা যায়, পুলিশ প্রশাসনের কাছে স্থানীয়ভাবে সব ধরনের তথ্য থাকে। তারা জানে যে এলাকার কোন ছেলেটি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কারও কারও অভিমত, এলাকায় কোনো নৃশংস ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত পুলিশ তৎপর হয় না। আবার কারও মতে, স্থানীয় রাজনীতি ও পুলিশ প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাং নানান অপরাধ সংঘটিত করে। নতুবা কেন এই কিশোর গ্যাংকে নির্মূল করা সম্ভব হবে না? টাকার লেনদেন চলে বলে তাঁরা ধারণা করে থাকেন। আর ঈদ সন্নিকট হলে তো কথাই নেই। টাকার চাহিদা তীব্রতর হয়ে ওঠে।
উল্লিখিত কারণে ঈদ আনন্দের না হয়ে নিরানন্দ হয়ে আসে কারও কারও জীবনে। প্রায় প্রতিবছরে একই চিত্র, একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। দুঃখজনক ঘটনার অবসান হচ্ছে না। অথচ প্রতিটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক ঘটনা প্রতিকারের জন্য থাকেন দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ। তাঁদের দায়িত্বের জবাবদিহি নেওয়া ও কাজ মনিটরিং করা হলে ঈদ সবার জীবনে আনন্দময় হয়ে উঠবে নিশ্চিত।
লেখক: স্বপ্না রেজা, কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা মুসলমানদের দুটি বড় উৎসব। বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবে মুসলমানদের অবস্থান। ফলে এ দুটি ধর্মীয় উৎসব ঘিরে গোটা দেশই যেন ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠে, উৎসবমুখর হয়ে ওঠে। বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা এ দুটি উৎসবকে কেন্দ্র করে সারা বছরের মুনাফা বা লাভ ঘরে তুলতে নানান পরিকল্পনা ও কৌশল অবলম্বন করে থাকেন এবং পরিকল্পনামাফিক কাজও করেন। আবার বাড়তি আয় নীতিবহির্ভূত কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে করে বসেন কেউ কেউ এবং সেটা ঈদকে কেন্দ্র করেই। ঈদ যেমন আনন্দের, তেমনি কষ্টেরও। একশ্রেণির মানুষের কারণে ঈদ কারও কারও জীবনে সীমাহীন দুঃখ বয়ে আনে, যে দুঃখ লাঘবের কোনো উপায় থাকে না।
সড়ক দুর্ঘটনা প্রায় প্রতিদিনের ঘটনা। এতে প্রতিদিন প্রাণহানি ঘটছে। কোনোভাবেই সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা যাচ্ছে না। বহু আয়োজন, বরাদ্দ, আনুষ্ঠানিকতার পরও সংশ্লিষ্টরা তা রোধ করতে পারছেন না। ঈদের সময় সড়ক দুর্ঘটনা যেন লাগামছাড়া হয়। ঈদ মানেই যাত্রী ও তার স্বজনদের কাছে একটা দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায় ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ পর্যন্ত নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব না হয়।
যখন লেখাটা লিখছি, তখন একটা সংবাদনির্ভর টিভি চ্যানেলের সংবাদে বলা হলো, এই ঈদে ৯২টা সড়ক দুর্ঘটনায় ৯৫ জন প্রাণ হারিয়েছে এবং আহত হয়েছে শতাধিক। প্রতি ঈদে এমন সংবাদ শুনতে হয়, শোনাটা বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং প্রতি ঈদেই কোনো না কোনো পরিবারে স্বজন হারানোর আহাজারি চলে, চলে মাতম। মা, বাবা, স্বজন, প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপনের স্বপ্ন নিয়ে, ঈদকে আরও আনন্দময় করে তোলার জন্য যারা যাত্রা শুরু করেও শেষ অবধি পৌঁছাতে পারে না, বেপরোয়া সড়ক দুর্ঘটনায় পথে পড়ে থাকে রক্তাক্ত লাশ হয়ে, তাদের জন্য কার কী ভাবনা, জানা নেই।
স্থানীয় ও জেলা প্রশাসন থেকে ক্ষতিপূরণ প্রদানের কথা শোনা যায়। ২০-২৫ হাজার টাকা দিয়ে এমন মর্মান্তিক মৃত্যুর সঙ্গে সমঝোতা বা সমবেদনা কতটুকু যায়, তা সম্ভবত গভীর দৃষ্টিতে দেখা হয় না। এমন দুর্ঘটনায় যিনি প্রিয়জন বা স্বজন হারান, তাঁর কাছে ২০-২৫ হাজার টাকা স্বজন হারানোর কষ্টের চেয়েও মর্মান্তিক ও দুঃখজনক। অনেকে এটাকে অসম্মানজনকও মনে করেন। কারণ হিসেবে তাঁরা মনে করেন, জীবনের মূল্য এভাবে পরিশোধ করা যায় না, করাটা ঠিক নয়। বরং সড়ক দুর্ঘটনা রোধের ওপর জোর দেওয়া উচিত সংশ্লিষ্টদের। যা হোক, সড়ক দুর্ঘটনা যেন না ঘটে, সেটাই সবার প্রত্যাশা। কেউই চান না তাঁর প্রিয়জন এভাবে প্রাণ হারাক। এমন দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনে যে তদন্ত হয়, তা-ও গতানুগতিক ও দায়সারা। তাই দুর্ঘটনা রোধে কঠোর কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায় না। ফলে প্রতি ঈদে একই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে।
লেখার শুরুতে উল্লেখ করেছিলাম, ব্যবসায়ীরা ঈদকে কেন্দ্র করে বেশ বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। পরিবহন ব্যবসায়ীরা তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য। যেহেতু ঈদে বাড়ি যাওয়ার প্রবণতা সাধারণ মানুষের মধ্য বেশি থাকে, ফলে এই প্রবণতাকে ব্যবসায়ীরা হাতছাড়া করেন না। বেশি রুটে, কয়েক দফায় তারা যাত্রী সংগ্রহ করে অল্প টাকা বেতন দিয়ে অদক্ষ পরিবহনচালক দ্বারা গাড়ি চালানোর কাজটি সারেন, যে চালক হয়তো জানেনই না গাড়ি চালনার বিধিসমূহ। যাঁরা সড়ক দুর্ঘটনা রোধে, তথা নিরাপদ সড়কের জন্য দায়িত্বশীল, তাঁরা কখনো দেখেছেন কি না যে ঈদের সময় পরিবহন মালিকেরা কাকে দিয়ে তাঁর গাড়িটি চালিয়ে নিচ্ছেন, তার যোগ্যতা ও দক্ষতাইবা কী? এখানে সংশ্লিষ্টদের কঠোর মনিটরিং দরকার।
আমরা তো বহুবার শুনেছি, গাড়ির ফিটনেস ও পরিবহনচালকের প্রকৃত লাইসেন্স থাকা এবং সড়কে চলাচলের বিধি অনুসরণই হলো সড়ক দুর্ঘটনা রোধের উপায়। তাহলে কেন এই বিষয়গুলোকে নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না, প্রশ্ন কিন্তু এসে যায়। যুগ যুগ ধরে সংশ্লিষ্টরা তবে কি ব্যর্থ? নাকি প্রতিবছর ঈদে এমন মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য কাউকে না কাউকে অপেক্ষা করতে বলছে কর্তৃপক্ষ? আনন্দটা দুঃখে পরিণত হতে দিতে কে চায়? কেউই না, দুঃখটা যদি হয় স্বজন হারানোর।
টিভি চ্যানেলের আরেকটি সংবাদ দৃষ্টি কেড়ে নিল। কিশোর গ্যাংয়ের চারজন সদস্য তাদের আরেকজন সদস্যকে গলা কেটে হত্যা করেছে। ঘটনাটি স্বপ্নধারা মডেল টাউনে সংঘটিত হয়েছে। শাওন নামের একজন সিএনজি অটোচালককে তার অপর চারজন বন্ধু হত্যা করে। নৃশংসভাবে দেহ থেকে মস্তক বিচ্ছিন্ন করা হয়। এমন হত্যার পেছনের কারণ হলো, ঈদ আনন্দের জন্য শাওনের অটোরিকশা ছিনতাই করা। একই গ্যাংয়ের সদস্য, উপরন্তু বন্ধু, কোনো কিছুই হত্যা থেকে বিরত রাখেনি তাদের। বলা যায়, অপরাধমূলক কাজে এরা সংঘবদ্ধভাবে জড়িত হলেও প্রকৃতার্থে প্রত্যেকেই কঠিনভাবে স্বতন্ত্র অপরাধী হয়ে ওঠে। মানসিক ও সামাজিকভাবে এরা সুস্থ পথে হাঁটে না। এদের গডফাদার থাকে, যাদের প্ররোচনায়, নির্দেশনায় এরা জীবন যাপন করে।
কিশোর গ্যাং নতুন কোনো সংকট নয়। বহুদিন ধরে এদের অবস্থান প্রায় প্রতিটি এলাকায়, মহল্লায়। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের কাছে এই গ্যাং সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য থাকলেও গ্যাংয়ের অস্তিত্ব বিলুপ্ত হচ্ছে না। বরং দিনে দিনে আরও গ্যাং সৃষ্টি হচ্ছে। এরা এতটাই বেপরোয়া ও দুর্ধর্ষ যে, হত্যাকাণ্ড ঘটাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত হয় না। সমাজের কিশোর ও তরুণ শ্রেণি যে এভাবে অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে, বিপথগামী হয়ে উঠছে, তার প্রতিকারের জন্য কী করা হচ্ছে? দু-একজনকে আটক করতে দেখা যায়। হয়তো বিচার প্রক্রিয়ায় নেওয়াও হয়। কিন্তু গ্যাংয়ের সদস্য কমে না, দিনে দিনে বাড়ে। এই বাড়ার প্রবণতা ও কারণ নিয়ে জুতসই ও যথার্থ বিশ্লেষণ, বিবেচনা, গুরুত্ব আরোপ জরুরি।
ঈদকে কেন্দ্র করে বিপথগামী তরুণেরা চাঁদাবাজি শুরু করে দেয়। আর এই চাঁদার ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে মারামারি, খুনোখুনি হয়। সেই সঙ্গে চলে আধিপত্য নিয়ে লড়াই। যত দূর জানা যায়, পুলিশ প্রশাসনের কাছে স্থানীয়ভাবে সব ধরনের তথ্য থাকে। তারা জানে যে এলাকার কোন ছেলেটি বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কারও কারও অভিমত, এলাকায় কোনো নৃশংস ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত পুলিশ তৎপর হয় না। আবার কারও মতে, স্থানীয় রাজনীতি ও পুলিশ প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাং নানান অপরাধ সংঘটিত করে। নতুবা কেন এই কিশোর গ্যাংকে নির্মূল করা সম্ভব হবে না? টাকার লেনদেন চলে বলে তাঁরা ধারণা করে থাকেন। আর ঈদ সন্নিকট হলে তো কথাই নেই। টাকার চাহিদা তীব্রতর হয়ে ওঠে।
উল্লিখিত কারণে ঈদ আনন্দের না হয়ে নিরানন্দ হয়ে আসে কারও কারও জীবনে। প্রায় প্রতিবছরে একই চিত্র, একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। দুঃখজনক ঘটনার অবসান হচ্ছে না। অথচ প্রতিটি অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক ঘটনা প্রতিকারের জন্য থাকেন দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ। তাঁদের দায়িত্বের জবাবদিহি নেওয়া ও কাজ মনিটরিং করা হলে ঈদ সবার জীবনে আনন্দময় হয়ে উঠবে নিশ্চিত।
লেখক: স্বপ্না রেজা, কথাসাহিত্যিক ও কলাম লেখক
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২১ ঘণ্টা আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে