শতাধিক অবৈধ দোকানে নির্মলতা হারাচ্ছে কিশোরগঞ্জের মুক্তমঞ্চ

সাজন আহম্মেদ পাপন, কিশোরগঞ্জ 
প্রকাশ : ২১ জুলাই ২০২৩, ১১: ৫৯

নির্মল হাওয়ায় আনন্দময় সময় কাটানোর উল্লেখ্যযোগ্য একটি স্থান হলো কিশোরগঞ্জের নরসুন্দা লেকসিটির গুরুদয়াল মুক্তমঞ্চ। নগরজীবনের ক্লান্তি এড়াতে মুক্তমঞ্চের আশপাশের এলাকাজুড়ে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাজারো লোক ভিড় করে। এ জনসমাগমকে পুঁজি করে প্রভাবশালী মহলের ছত্রচ্ছায়ায় গড়ে উঠেছে রেস্তোরাঁসহ শতাধিক অবৈধ দোকান।

এসব দোকানপাটে বসা ও হাঁটার জায়গাও দখল হয়ে গেছে। পাশাপাশি দোকানপাটের বর্জ্য নদীসহ গুরুদয়াল সরকারি কলেজের মাঠে ফেলার কারণে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। নির্মল এলাকাটি হয়ে উঠছে অস্বাস্থ্যকর।

অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতা-কর্মী ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভার কিছু অসাধু কর্মচারী দৈনিক ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বিনিময়ে চুক্তিনামার মাধ্যমে এসব দোকান ভাড়া দিচ্ছেন। এ ছাড়া প্রতিটি দোকান স্থাপন করার সময় ৪০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। দোকান ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

দেখা গেছে, নরসুন্দা লেক সিটির মুক্তমঞ্চে গড়ে উঠেছে এসব দোকান। দর্শনার্থীদের বসার বেঞ্চগুলোও দোকানদারদের দখলে। দোকান থেকে কিছু না কিনলে এসব বেঞ্চে লোকজন বসতে পারেন না। পণ্যের দামও আদায় করা হয় দোকানমালিকদের ইচ্ছেমতো। পণ্যের মূল্য নিয়ে কথা বললেই অপমান-অপদস্থ হতে হয় দর্শনার্থীদের। এ ছাড়া প্রতিটি দোকানেই রয়েছে গ্যাস সিলিন্ডার। যেকোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। দোকানপাটের বর্জ্য কলেজমাঠ ও নদীতে ফেলায় ওই এলাকার পরিবেশ হুমকিতে রয়েছে।

এদিকে বখাটে কিশোর গ্যাংয়ের উপদ্রব যেন নিত্যসঙ্গী এই মুক্তমঞ্চে। পরিবার-পরিজন নিয়ে আসা দর্শনার্থীরা প্রায়ই ছিনতাই ও মারধরের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সন্ধ্যার পর বিভিন্ন অনৈতিক ও অসামাজিক কার্যকলাপের আখড়ায় পরিণত হয়েছে এ মুক্তমঞ্চ-সংলগ্ন এলাকাটি। আর এসব হচ্ছে গড়ে ওঠা অবৈধ দোকানপাট ঘিরে।

অবৈধ দোকান গড়ে ওঠায় সৌন্দর্য হারাচ্ছে কিশোরগঞ্জের নরসুন্দা লেকসিটির গুরুদয়াল মুক্তমঞ্চমুক্তমঞ্চে ঘুরতে আসা অনেকেই আজকের পত্রিকাকে জানান, এখানে তাঁরা আসেন একটু মুক্ত হাওয়া নিতে, কিন্তু অবৈধ দোকানপাটের কারণে নিজের মতো করে চলাচল করতে পারেন না। শিশুদের খেলাধুলার জন্য যে দোলনা, স্লিপার রয়েছে তাও দোকানপাটে ঘেরা। বসার বেঞ্চগুলো দোকানিরা দখল করে রেখেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন দোকানি বলেন, প্রতিদিন তাঁদের ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে ভাড়া দিতে হয়। মুক্তমঞ্চ শরীরচর্চা কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. আবু হাসান বাবুল বলেন, ‘সবুজের সমারোহ থাকার কথা ছিল মুক্তমঞ্চে, কিন্তু যেখানে-সেখানে দোকানপাট গড়ে ওঠায় সবুজের ছিটেফোঁটাও নেই। নির্মল হাওয়া আমরা পাই না। এ ছাড়া দোকানপাটের সব বর্জ্য নরসুন্দা নদীতে ফেলা হয়। এতে পুরো এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়ায়।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, গুরুদয়াল মুক্তমঞ্চে চিত্তবিনোদনের জন্য যথেষ্ট জায়গা ছিল, কিন্তু অবৈধ দোকানপাট গড়ে ওঠায় বসা ও হাঁটার জায়গাও দখল হয়ে গেছে। পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।

কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. পারভেজ মিয়া বলেন, ‘জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় প্রস্তাব রেখেছি আখড়া বাজার ব্রিজ থেকে গুরুদয়াল সরকারি কলেজের ব্রিজ পর্যন্ত আমাদের বুঝিয়ে দেওয়া হোক। এখন পর্যন্ত আমাকে তা বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। অথচ বিদ্যুৎ বিল, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিল পৌরসভাই পরিশোধ করে।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলে অবশ্যই এসব দোকান উচ্ছেদ করা হবে। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরাসরি সমুদ্রপথে বাণিজ্য সম্পর্কের ঐতিহাসিক যুগে বাংলাদেশ–পাকিস্তান, শঙ্কায় ভারত

হাসিনা ক্ষমতা ছাড়ার পর দেশ ‘মবের মুল্লুক’: সামিনা লুৎফা

বাংলাদেশের বন্দরে পাকিস্তানের কার্গো জাহাজ, ‘ঐতিহাসিক’ বলা হচ্ছে যে কারণে

পরশুরামে ছুরিকাঘাতে তরুণ নিহত

নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সংলাপ শুরু কাল, চলবে পুরো নভেম্বর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত