রাজন কুমার
ভাগনার বিদ্রোহ ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতিষ্ঠান এবং রাশিয়ায় শক্তির নতুন একটি ভরকেন্দ্রের মধ্যকার দ্বন্দ্বকে সামনে এনেছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার লড়াইয়ে ভাগনার গ্রুপের (ভাড়াটে সৈন্যদের নিয়ে গঠিত একটি বেসরকারি সেনাবাহিনী) নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোঝিনকে উচ্চমার্গে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ২৪ জুনের ঘটনায় সেটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলা যায়। ওই দিন প্রিগোঝিন পুতিনের শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করেন এবং তাঁর বাহিনীকে মস্কো অভিমুখে অভিযানে প্রবল শক্তি প্রদর্শনের নির্দেশ দেন। তিনি দক্ষিণের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণও নেন, যার মধ্যে একটি হচ্ছে রোস্তভ-অন-দন, যা কিনা একটি সামরিক ঘাঁটি এবং এখান থেকেই ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করেছিল রাশিয়া।
এ ঘটনার পর প্রেসিডেন্ট পুতিন দ্রুত জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি সশস্ত্র এই বিদ্রোহকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ হিসেবে অভিহিত করে এর নিন্দা জানান এবং কঠোর শাস্তি দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। এরপর অনেক নাটকীয়তার পর বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় দুই পক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রিগোঝিন রাশিয়া ছেড়ে বেলারুশে আশ্রয় নেবেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে সব অভিযোগ তুলে নেওয়া হবে। এ ছাড়া চুক্তিতে সম্ভবত রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্ব সংস্কারের অঙ্গীকার করা হয়েছে।
পুরো ঘটনাটি কয়েকটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন উত্থাপন করে। কেন প্রিগোঝিন একটি সশস্ত্র আক্রমণ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যখন সাফল্যের সম্ভাবনা কম ছিল? এবং তারপর কোন বিষয়টি তাঁকে আলোচনার টেবিলে আসতে পরিচালিত করেছিল? কেন পুতিন একজন ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে নিন্দা করা ব্যক্তিকে বিদায় করার পরিবর্তে বিকল্প প্রস্তাব করেছিলেন? এবং সবশেষ প্রশ্ন হচ্ছে, পুতিনের শাসন কি সত্যিই হুমকির মুখে?
সংকটের শুরু হয় যখন প্রিগোঝিন একটি শিবিরে হামলা চালিয়ে ভাগনার বাহিনীর অনেক যোদ্ধাকে হত্যার জন্য রুশ সামরিক বাহিনীকে অভিযুক্ত করেন। ক্রেমলিন নিছক উসকানি হিসেবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে। তবে প্রিগোঝিনের এই অভিযোগ ভাগনার গ্রুপ ও রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল। এর আগে অনেক অনুষ্ঠানে প্রিগোঝিন রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং সেনাপ্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভকে অযোগ্য বলে অভিহিত করেন এবং ইউক্রেন যুদ্ধে ভুল ব্যবস্থাপনার জন্য তাদের সমালোচনা করেন।
ক্রেমলিন এটা সহ্য করেছিল, কারণ ভাগনার গ্রুপের ভাড়াটে সৈন্যরা ইউক্রেন যুদ্ধে ভালো ভূমিকা পালন করেছিল, যার মধ্যে গত মাসে বাখমুত দখলও ছিল। কিন্তু এবার প্রিগোঝিন তার সীমারেখা অতিক্রম করেছেন এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সম্ভবত রাশিয়ায় জনগণকে প্রভাবিত করার প্রয়াসে তিনি এটা করেছেন। তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে ন্যাটো আক্রমণের প্রচার এবং রাশিয়াকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগ করেন। নিজেদের পরম বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তির কাছ থেকে আসা এ ধরনের বিবৃতি মস্কোয় শঙ্কা জাগায়।
সন্দেহজনক অতীত সত্ত্বেও প্রিগোঝিন রুশ জনগণের কাছে একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছিলেন। যদিও সরকারি গণমাধ্যম খুব কমই প্রিগোঝিনকে দেখিয়েছে, তবে তাঁর ভিডিওগুলো সামাজিক মাধ্যমে, বিশেষ করে একটি টেলিগ্রাম চ্যানেলে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। কয়েক সপ্তাহ আগে রাশিয়ান পাবলিক রিসার্চ সেন্টার পরিচালিত একটি জরিপে তিনি রাশিয়ার সবচেয়ে বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের তালিকায় পঞ্চম স্থানে ছিলেন। সেই তালিকায় তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুর ওপরে ছিলেন। দুই সপ্তাহ আগে তিনি সম্মানজনক সেন্ট পিটার্সবার্গ ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক ফোরামে ‘বছরের ট্রেন্ডসেটার’ হিসেবে প্রশংসাও পেয়েছেন। প্রেসিডেন্ট পুতিনও সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন।
প্রিগোঝিনের জনপ্রিয়তা এবং তাঁর প্রতিষ্ঠানবিরোধী বিস্ফোরক কথাবার্তা পুতিনের জন্য ব্যাপক উদ্বেগের কারণ হয়ে ওঠে। তিনি তাঁর শাসনকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতাসহ একটি প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি কেন্দ্রের উত্থানের আশঙ্কা করেছিলেন। ফলস্বরূপ, রুশ বাহিনী ভাগনার গ্রুপ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নেয় এবং সম্ভবত তাদের ওপর আক্রমণও চালায়। সম্ভবত ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ভয়ে এবং অন্য কোনো উপায় না পেয়ে প্রিগোঝিন লড়াই করার এবং রাশিয়ান জনমতকে সংহত করার সিদ্ধান্ত নেন। অভ্যুত্থানের চেষ্টা ছিল এই কৌশলেরই একটি অংশ।
আলোচনা ও প্রিগোঝিনের রাশিয়া ছেড়ে চলে যাওয়ার বিষয়টি সাময়িকভাবে উভয় পক্ষের সমস্যার সমাধান করেছে। একজন যুদ্ধনায়ককে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ক্রেমলিনকে দোষারোপ করা হবে না এবং বেলারুশে বসবাসকারী প্রিগোঝিন সরাসরি পুতিনের শাসনের জন্য হুমকি হবেন না। রাশিয়ায় এটি খুব সাধারণ বিষয়, যেসব অভিজাত পুতিনের প্রতি অনুগত, তাঁরা দেশের বাইরে থাকেন। এদিকে প্রিগোঝিনকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আখ্যায়িত করায় পশ্চিমা দেশগুলো তাঁর বিকল্প নয়।
রাশিয়ার ক্রনি বা আপসকামী পুঁজিবাদের অন্ধকার দিকের একটি দুর্দান্ত উদাহরণ হচ্ছেন প্রিগোঝিন। শৈশবে এক অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়ে বেশ কয়েক বছর জেল খেটেছিলেন তিনি। ১৯৯০-এর দশকে সেন্ট পিটার্সবার্গে তিনি তাঁর ক্যাটারিং ব্যবসা শুরু করেছিলেন। তিনি ২০১৪ সালে ব্যক্তিগত সামরিক ব্যবসা শুরু করেন। তাঁর প্রথম প্রধান দায়িত্ব ছিল ক্রিমিয়ায়, যেখানে তিনি রসদ সরবরাহ করেছিলেন এবং রুশ বাহিনীর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে কাজ করেছিলেন।
ব্যক্তিগত সেনাবাহিনী থাকার সুবিধা ছিল যে তা কোনো নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে আবদ্ধ ছিল না। এটি দায়মুক্তির সঙ্গে কাজ করেছিল এবং অনেকে বিশ্বাস করে যে ভাগনারের যোদ্ধারা গোপন অভিযানে নিযুক্ত ছিল। যখন রাশিয়া ২০১৫ সালে সিরিয়ায় হামলা চালিয়েছিল, তখন ভাগনারের ভাড়াটে সেনারা রুশ বাহিনীর সঙ্গে একযোগে লড়াই করেছিল এবং তাদের লজিস্টিক সহায়তা দেয়। মস্কোর আশীর্বাদে গ্রুপটি মালি ও সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে তার ঘাঁটি গাড়ে। প্রিগোঝিনের মোট সম্পদ ১০০ কোটি ডলার বলে অনুমান করা হয়।
যুদ্ধের ময়দানে প্রিগোঝিনের সাফল্য তাঁকে উদ্ধত করে তোলে, বিশেষ করে যখন রুশ সেনাবাহিনী সংগ্রাম করছিল। তিনি নিজেকে রাশিয়ার ত্রাণকর্তা এবং তাঁর ভাড়াটে সেনাবাহিনীকে একটি অপরিহার্য শক্তি হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করেছিলেন। তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা বেড়ে গিয়েছিল এবং তিনি সরকারের একটি উচ্চপদ পাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
ভাগনারের বিদ্রোহ থামানো হয়েছে, তবে এতে অনেক ক্ষতি হয়েছে। সেনাবাহিনী ও সমাজের ওপর পুতিনের নিয়ন্ত্রণ ক্রমান্বয়ে সূক্ষ্ম তদন্তের আওতায় আসবে। প্রিগোঝিনকে নিরাপদ প্রস্থানের প্রস্তাব দিয়ে পুতিন বাস্তবসম্মত বিকল্পটি ব্যবহার করেছেন। যাই হোক, ইউক্রেন যুদ্ধের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রিগোঝিন যে প্রশ্নগুলো উত্থাপন করেছিলেন, তার উত্তর পাওয়া যায়নি।
ভাগনার বিদ্রোহ রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ্যে এনেছে। নিজের প্রেসিডেন্সির ২৩ বছরে পুতিন কখনোই এ ধরনের সংকটের মুখোমুখি হননি—ফ্রাংকেনস্টাইনের মতো তাঁর পরিণতি হতে যাচ্ছিল। পুতিনের শাসনকে প্রথমবারের মতো সরু সুতার ওপর ঝুলে আছে বলে বলে মনে হচ্ছিল এবং রাশিয়ার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়েছিল। এ ঘটনা অবশ্যই ইউক্রেনে যুদ্ধরত রুশ বাহিনীকে হতাশ করেছে।
রাশিয়ার ইতিহাস যদি কোনো শিক্ষা দেয়, সেটা হচ্ছে শর্ষের মধ্যেই ভূত থাকে, অর্থাৎ চ্যালেঞ্জটা আসে নিজ দেশের ভেতর থেকেই। ১৯৯১ সালে গর্বাচেভের সময়কালে রাশিয়াসহ সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে দেওয়ার লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেওয়া বরিস ইয়েলৎসিনও ছিলেন একজন ভেতরের লোক। রাশিয়া অবশ্য আপাতত এ ধরনের সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে না।
রাজন কুমার, শিক্ষক, স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়
(ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সাংবাদিক ও কলাম লেখক রোকেয়া রহমান)
ভাগনার বিদ্রোহ ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতিষ্ঠান এবং রাশিয়ায় শক্তির নতুন একটি ভরকেন্দ্রের মধ্যকার দ্বন্দ্বকে সামনে এনেছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার লড়াইয়ে ভাগনার গ্রুপের (ভাড়াটে সৈন্যদের নিয়ে গঠিত একটি বেসরকারি সেনাবাহিনী) নেতা ইয়েভগেনি প্রিগোঝিনকে উচ্চমার্গে নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ২৪ জুনের ঘটনায় সেটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলা যায়। ওই দিন প্রিগোঝিন পুতিনের শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করেন এবং তাঁর বাহিনীকে মস্কো অভিমুখে অভিযানে প্রবল শক্তি প্রদর্শনের নির্দেশ দেন। তিনি দক্ষিণের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণও নেন, যার মধ্যে একটি হচ্ছে রোস্তভ-অন-দন, যা কিনা একটি সামরিক ঘাঁটি এবং এখান থেকেই ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করেছিল রাশিয়া।
এ ঘটনার পর প্রেসিডেন্ট পুতিন দ্রুত জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। ভাষণে তিনি সশস্ত্র এই বিদ্রোহকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ হিসেবে অভিহিত করে এর নিন্দা জানান এবং কঠোর শাস্তি দেওয়ার অঙ্গীকার করেন। এরপর অনেক নাটকীয়তার পর বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় দুই পক্ষের মধ্যে একটি চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রিগোঝিন রাশিয়া ছেড়ে বেলারুশে আশ্রয় নেবেন এবং তাঁর বিরুদ্ধে সব অভিযোগ তুলে নেওয়া হবে। এ ছাড়া চুক্তিতে সম্ভবত রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্ব সংস্কারের অঙ্গীকার করা হয়েছে।
পুরো ঘটনাটি কয়েকটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন উত্থাপন করে। কেন প্রিগোঝিন একটি সশস্ত্র আক্রমণ চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, যখন সাফল্যের সম্ভাবনা কম ছিল? এবং তারপর কোন বিষয়টি তাঁকে আলোচনার টেবিলে আসতে পরিচালিত করেছিল? কেন পুতিন একজন ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে নিন্দা করা ব্যক্তিকে বিদায় করার পরিবর্তে বিকল্প প্রস্তাব করেছিলেন? এবং সবশেষ প্রশ্ন হচ্ছে, পুতিনের শাসন কি সত্যিই হুমকির মুখে?
সংকটের শুরু হয় যখন প্রিগোঝিন একটি শিবিরে হামলা চালিয়ে ভাগনার বাহিনীর অনেক যোদ্ধাকে হত্যার জন্য রুশ সামরিক বাহিনীকে অভিযুক্ত করেন। ক্রেমলিন নিছক উসকানি হিসেবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে। তবে প্রিগোঝিনের এই অভিযোগ ভাগনার গ্রুপ ও রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছিল। এর আগে অনেক অনুষ্ঠানে প্রিগোঝিন রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং সেনাপ্রধান ভ্যালেরি গেরাসিমভকে অযোগ্য বলে অভিহিত করেন এবং ইউক্রেন যুদ্ধে ভুল ব্যবস্থাপনার জন্য তাদের সমালোচনা করেন।
ক্রেমলিন এটা সহ্য করেছিল, কারণ ভাগনার গ্রুপের ভাড়াটে সৈন্যরা ইউক্রেন যুদ্ধে ভালো ভূমিকা পালন করেছিল, যার মধ্যে গত মাসে বাখমুত দখলও ছিল। কিন্তু এবার প্রিগোঝিন তার সীমারেখা অতিক্রম করেছেন এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। সম্ভবত রাশিয়ায় জনগণকে প্রভাবিত করার প্রয়াসে তিনি এটা করেছেন। তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে ন্যাটো আক্রমণের প্রচার এবং রাশিয়াকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগ করেন। নিজেদের পরম বিশ্বাসযোগ্য ব্যক্তির কাছ থেকে আসা এ ধরনের বিবৃতি মস্কোয় শঙ্কা জাগায়।
সন্দেহজনক অতীত সত্ত্বেও প্রিগোঝিন রুশ জনগণের কাছে একজন বিশ্বস্ত ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছিলেন। যদিও সরকারি গণমাধ্যম খুব কমই প্রিগোঝিনকে দেখিয়েছে, তবে তাঁর ভিডিওগুলো সামাজিক মাধ্যমে, বিশেষ করে একটি টেলিগ্রাম চ্যানেলে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়। কয়েক সপ্তাহ আগে রাশিয়ান পাবলিক রিসার্চ সেন্টার পরিচালিত একটি জরিপে তিনি রাশিয়ার সবচেয়ে বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের তালিকায় পঞ্চম স্থানে ছিলেন। সেই তালিকায় তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগুর ওপরে ছিলেন। দুই সপ্তাহ আগে তিনি সম্মানজনক সেন্ট পিটার্সবার্গ ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিক ফোরামে ‘বছরের ট্রেন্ডসেটার’ হিসেবে প্রশংসাও পেয়েছেন। প্রেসিডেন্ট পুতিনও সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন।
প্রিগোঝিনের জনপ্রিয়তা এবং তাঁর প্রতিষ্ঠানবিরোধী বিস্ফোরক কথাবার্তা পুতিনের জন্য ব্যাপক উদ্বেগের কারণ হয়ে ওঠে। তিনি তাঁর শাসনকে চ্যালেঞ্জ করার ক্ষমতাসহ একটি প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি কেন্দ্রের উত্থানের আশঙ্কা করেছিলেন। ফলস্বরূপ, রুশ বাহিনী ভাগনার গ্রুপ থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নেয় এবং সম্ভবত তাদের ওপর আক্রমণও চালায়। সম্ভবত ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ভয়ে এবং অন্য কোনো উপায় না পেয়ে প্রিগোঝিন লড়াই করার এবং রাশিয়ান জনমতকে সংহত করার সিদ্ধান্ত নেন। অভ্যুত্থানের চেষ্টা ছিল এই কৌশলেরই একটি অংশ।
আলোচনা ও প্রিগোঝিনের রাশিয়া ছেড়ে চলে যাওয়ার বিষয়টি সাময়িকভাবে উভয় পক্ষের সমস্যার সমাধান করেছে। একজন যুদ্ধনায়ককে সরিয়ে দেওয়ার জন্য ক্রেমলিনকে দোষারোপ করা হবে না এবং বেলারুশে বসবাসকারী প্রিগোঝিন সরাসরি পুতিনের শাসনের জন্য হুমকি হবেন না। রাশিয়ায় এটি খুব সাধারণ বিষয়, যেসব অভিজাত পুতিনের প্রতি অনুগত, তাঁরা দেশের বাইরে থাকেন। এদিকে প্রিগোঝিনকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আখ্যায়িত করায় পশ্চিমা দেশগুলো তাঁর বিকল্প নয়।
রাশিয়ার ক্রনি বা আপসকামী পুঁজিবাদের অন্ধকার দিকের একটি দুর্দান্ত উদাহরণ হচ্ছেন প্রিগোঝিন। শৈশবে এক অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়ে বেশ কয়েক বছর জেল খেটেছিলেন তিনি। ১৯৯০-এর দশকে সেন্ট পিটার্সবার্গে তিনি তাঁর ক্যাটারিং ব্যবসা শুরু করেছিলেন। তিনি ২০১৪ সালে ব্যক্তিগত সামরিক ব্যবসা শুরু করেন। তাঁর প্রথম প্রধান দায়িত্ব ছিল ক্রিমিয়ায়, যেখানে তিনি রসদ সরবরাহ করেছিলেন এবং রুশ বাহিনীর সঙ্গে অনানুষ্ঠানিকভাবে কাজ করেছিলেন।
ব্যক্তিগত সেনাবাহিনী থাকার সুবিধা ছিল যে তা কোনো নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে আবদ্ধ ছিল না। এটি দায়মুক্তির সঙ্গে কাজ করেছিল এবং অনেকে বিশ্বাস করে যে ভাগনারের যোদ্ধারা গোপন অভিযানে নিযুক্ত ছিল। যখন রাশিয়া ২০১৫ সালে সিরিয়ায় হামলা চালিয়েছিল, তখন ভাগনারের ভাড়াটে সেনারা রুশ বাহিনীর সঙ্গে একযোগে লড়াই করেছিল এবং তাদের লজিস্টিক সহায়তা দেয়। মস্কোর আশীর্বাদে গ্রুপটি মালি ও সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে তার ঘাঁটি গাড়ে। প্রিগোঝিনের মোট সম্পদ ১০০ কোটি ডলার বলে অনুমান করা হয়।
যুদ্ধের ময়দানে প্রিগোঝিনের সাফল্য তাঁকে উদ্ধত করে তোলে, বিশেষ করে যখন রুশ সেনাবাহিনী সংগ্রাম করছিল। তিনি নিজেকে রাশিয়ার ত্রাণকর্তা এবং তাঁর ভাড়াটে সেনাবাহিনীকে একটি অপরিহার্য শক্তি হিসেবে বিবেচনা করতে শুরু করেছিলেন। তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা বেড়ে গিয়েছিল এবং তিনি সরকারের একটি উচ্চপদ পাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
ভাগনারের বিদ্রোহ থামানো হয়েছে, তবে এতে অনেক ক্ষতি হয়েছে। সেনাবাহিনী ও সমাজের ওপর পুতিনের নিয়ন্ত্রণ ক্রমান্বয়ে সূক্ষ্ম তদন্তের আওতায় আসবে। প্রিগোঝিনকে নিরাপদ প্রস্থানের প্রস্তাব দিয়ে পুতিন বাস্তবসম্মত বিকল্পটি ব্যবহার করেছেন। যাই হোক, ইউক্রেন যুদ্ধের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রিগোঝিন যে প্রশ্নগুলো উত্থাপন করেছিলেন, তার উত্তর পাওয়া যায়নি।
ভাগনার বিদ্রোহ রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের বিষয়টি প্রকাশ্যে এনেছে। নিজের প্রেসিডেন্সির ২৩ বছরে পুতিন কখনোই এ ধরনের সংকটের মুখোমুখি হননি—ফ্রাংকেনস্টাইনের মতো তাঁর পরিণতি হতে যাচ্ছিল। পুতিনের শাসনকে প্রথমবারের মতো সরু সুতার ওপর ঝুলে আছে বলে বলে মনে হচ্ছিল এবং রাশিয়ার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়েছিল। এ ঘটনা অবশ্যই ইউক্রেনে যুদ্ধরত রুশ বাহিনীকে হতাশ করেছে।
রাশিয়ার ইতিহাস যদি কোনো শিক্ষা দেয়, সেটা হচ্ছে শর্ষের মধ্যেই ভূত থাকে, অর্থাৎ চ্যালেঞ্জটা আসে নিজ দেশের ভেতর থেকেই। ১৯৯১ সালে গর্বাচেভের সময়কালে রাশিয়াসহ সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে দেওয়ার লড়াইয়ে নেতৃত্ব দেওয়া বরিস ইয়েলৎসিনও ছিলেন একজন ভেতরের লোক। রাশিয়া অবশ্য আপাতত এ ধরনের সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে না।
রাজন কুমার, শিক্ষক, স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ, জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়
(ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত লেখাটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন সাংবাদিক ও কলাম লেখক রোকেয়া রহমান)
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
২ দিন আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৫ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৫ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৯ দিন আগে