আসিফ
একবিংশ শতাব্দীতে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে অনেক দেশ। এতে অসংখ্য শিশু ও মানুষের মৃত্যু ঘটছে। ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, ডেঙ্গুসহ মরণব্যাধি রোগের আক্রমণ বাড়ছে। কেন এসব হচ্ছে? কেন এ রকম মানুষ তৈরি হলো, যারা পৃথিবীবাসীর জন্য বিপদ ডেকে আনছে? তাহলে আমাদের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আসলে কী শেখাচ্ছে?
এক শ বছর আগে আইনস্টাইন বলেছেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাজ কোনো শিক্ষার্থীকে জ্ঞানী করে তোলা নয়, সমাজের সঙ্গে সমন্বয় ও সমঝোতা করে চলার মানসিকতা নিয়ে বড় করে তোলা।’ আবার জগদীশচন্দ্র বসু বলেছেন, ‘সবার একজন হয়ে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।’ তাহলে সমাজ থেকে সহমর্মিতা, সহনশীলতা, নমনীয়তা মানুষের মধ্য থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে কেন?
১৯৯৮ সালের আগস্ট মাসের ঘটনা। প্রচণ্ড বর্ষণ শুরু হয়েছে। কোনোভাবেই বৃষ্টি থামছে না। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বড় আকারের একটা বন্যার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছিল। এ সময়ই আইনস্টাইনের তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে ‘সময়ের প্রহেলিকা’ শিরোনামে একটি বক্তৃতা ঢাকা পরমাণু শক্তি কমিশনের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। সেই সময় আমার এক শুভানুধ্যায়ী বন্ধু মাহমুদ হোসেন শাহীনের অনুরোধে বিজ্ঞান লেখক আবদূল্লাহ আল-মুতীকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়।
সেই মোতাবেক খ্যাতনামা এই বিজ্ঞান লেখকের বাসায় এক দুপুরে যাওয়া হয়। বাসায় যাওয়ার পর তাঁর আন্তরিকতার অভাব ছিল না।
সচিব পর্যায়ে চাকরি করার পরও তাঁর রুমে কোনো বিলাসিতার আড়ম্বরতা চোখে পড়েনি। বই দিয়ে ঠাসা মাঝারি আকৃতির একটি রুম। সেখানেই বসার ব্যবস্থা। পড়াশোনা, সে-সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা নিয়ে থাকতেই ভালোবাসেন তা বোঝা গেল। কুশলাদি জানার পর তাঁর জীবনের নানা অভিজ্ঞতার কথা বলতে থাকলেন; বিশেষ করে পত্র-পত্রিকায় লেখা ও টিভি অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পাঠক শ্রোতাদের নানা প্রতিক্রিয়া। এ রকম একটা প্রাসঙ্গিক জায়গা ধরে বন্ধু মাহমুদ হোসেন শাহীন বলে উঠলেন, ‘আচ্ছা স্যার, তাহলে তো পাবলিক অনুষ্ঠানগুলোও খুব জরুরি।’ তিনি বললেন, ‘অবশ্যই। তবে এটি অথেনটিক হতে হবে।’
কিন্তু এই অথেনটিকের বিচার করবে কে? বই পড়া, ডকুমেন্টারি দেখা এবং সে-সম্পর্কে আলোচনা করাও তো একধরনের মুক্তভাবে জ্ঞানচর্চার একটা পথ হতে পারে। এটা শুধু কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা করবেন, এমন তো কোনো কথা হতে পারে না। যে কেউ তো তা করতে পারেন। তা না হলে জ্ঞানের বিস্তার ঘটবে কেমন করে, গণমুখী চর্চাই বা হবে কেমন করে?
তা ছাড়া স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কি শুধু শিক্ষার্থীদের পড়াবেন এবং ডিগ্রি প্রদান করবেন? জ্ঞানচর্চার সঙ্গে যুক্ত হবেন না, সমাজের অন্যান্য প্রবাহের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া ঘটাবেন না?
লেখা বা কথা বলার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত কৌতূহল জাগানো আর আলোচনার সূত্রপাত ঘটানো। সেটা কোন পথে বিস্তার ঘটাবে, আলোচনার প্রকৃতিই তা বলে দিতে পারে। আর অন্যান্য মাধ্যমে জ্ঞানচর্চা যুক্ত হলে সেটা কতটা সংগতিপূর্ণ হবে, তারও একটা যাচাইকরণ প্রক্রিয়া দেখার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। এভাবে সঠিকপথে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে। তাই এর জন্যও একটা পেশাদারি থাকা উচিত।
পৃথিবীতে একসময় প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানচর্চা ছিল না। ক্রমে ক্রমে অপ্রাতিষ্ঠানিক লোকজ ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে এটি গড়ে উঠেছিল। প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা অর্জিত জ্ঞানকে কাঠামো দিয়েছিল, ধাপে ধাপে এগোনোর শক্তি দিয়েছিল। এটা ডকুমেন্টেশন এবং সংরক্ষণের সুবিধা সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু নতুন নতুন চিন্তা ও ধারণার উদ্ভব ঘটাতে গিয়ে প্রাতিষ্ঠানিকতার পাশাপাশি অপ্রাতিষ্ঠানিক চর্চাকে বন্ধ করতে বলেনি। এটা বন্ধ হলে একটা পর্যায়ে নতুন চিন্তার উদ্ভব ও বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে এবং একই গোলকধাঁধায় ধাক্কা খাবে। এ জন্য কৌতূহল সৃষ্টি এবং বারবার পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সঠিক পথ ধরে সত্যকে উদ্ঘাটন করা উচিত। এটা কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতি বা নিয়ম মেনে হতে পারে না। তাই প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উচিত নিজস্ব চর্চার পাশাপাশি অপ্রাতিষ্ঠানিক চর্চার সংযোগ সেতু তৈরি করা। এটা সহনশীলতা, নমনীয়তার পাশাপাশি বোঝাপড়ার বিস্তার ঘটাবে। আবদূল্লাহ আল-মুতী যে স্বগতোক্তি করলেন, তা অবশ্য ঠিক। ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও তিনি এসেছিলেন বক্তৃতা অনুষ্ঠানে এবং উৎফুল্ল চিত্তে বিদায় নিয়েছিলেন।
প্লেটোর একাডেমি ছিল পৃথিবীর প্রথম দিকের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম। আর পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ছিল আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগার। যদিও সেগুলো বর্তমানের মতো কাঠামোগত প্রতিষ্ঠান ছিল না। আর পৃথিবীর ইতিহাসে এ রকম অপ্রাতিষ্ঠানিক অভিজ্ঞতা থেকে জ্ঞানের বিস্তার ঘটতে শুরু করে। যৌথতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানগুলো চলত। পরে ব্যক্তিমালিকানার ধারণা উদ্ভাবের পর বিশেষ করে জ্ঞানীদের মধ্যেও জীবন যাপনের জন্য অর্থের প্রয়োজন অনুভূত হয়। সে কারণে তাঁদের মধ্যে বেঁচে থাকার জন্য একটা আর্থিক ব্যাপার দরকার হয়ে পড়ে। তবে তাদের সরাসরি লাভ-ক্ষতির হিসাবের মধ্যে থাকা উচিত নয়, তাতে বাজে প্রভাব দেখা দিতে পারে। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাজকে দীর্ঘমেয়াদি সুফলের বিবেচনায় রাখা দরকার। কিন্তু এগুলো আমাদের সমাজে পালিত হয়নি।
পাওয়া-না পাওয়ার টানাপোড়েনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মানুষগুলো বিপথগামী যে হয়ে পড়েছেন, তা তাঁরা নিজেরাও জানেন না। ফলে একধরনের দীর্ঘস্থায়ী সাংস্কৃতিক দূষণ তৈরি হয়েছে। বিষয়টা এতই স্বাভাবিক হয়ে গেছে যে শিক্ষা ও বাণিজ্যের পার্থক্যও তাঁদের কাছে অনুভূত হয় না।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, বিংশ শতাব্দীর আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপারটা এতটা কেন্দ্রীভূতরূপে ছিল না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জ্ঞানী লোকেরা নিজেরাই নিজেদের রক্ষায় অধিকতর সচেষ্ট ছিলেন। সামগ্রিকতার রক্ষায় প্রাতিষ্ঠানিক পাহারাদারির দরকার পড়ত না। কেননা তাঁরা প্রাতিষ্ঠানিকতার পাশাপাশি অপ্রাতিষ্ঠানিক, অর্থাৎ সামাজিক মূল্যবোধ বিকাশের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন; বিশেষ করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যেই গবেষণাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কেন্দ্রীভূত প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেখা দিতে শুরু করে। এ সময়েই বাড়তে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক। অর্থের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে প্রবেশ করতে থাকে ব্যবসায়িক চিন্তার ব্যাপক প্রভাব, যাকে বহুজাতিক সংস্কৃতিও বলা যায়। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অনিয়ম হতো না, এমন নয়। তবে দুই নম্বরিটা ছিল প্রধানত সুলভে সম্মান পাওয়ার উপায়। কিন্তু বহুজাতিক নৈতিকতার সরাসরি প্রভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়ে লাভ-ক্ষতির নির্মম হিসাব ঢুকে পড়ে। যার এখন বাড়-বাড়ন্ত অবস্থা, সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
ফলে দেশে তো সেই অর্থে গবেষণামূলক বিজ্ঞান পত্রিকা নেই বললেই চলে। তা ছাড়া শীর্ষ পর্যায়ের ‘নেচার’ ও ‘সায়েন্স’-এর মতো পত্রিকাগুলোতে ছাপানো গবেষণাপত্র দেখলেই বোঝা যায় বেশির ভাগেরই কোনো ফলোআপ নেই। ছাপা হয় আর হারিয়ে যায়। কেউ আর মনে রাখে না।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মানের পত্রিকাগুলোতে ভুল স্বীকার করে গবেষণাপত্র প্রত্যাহারের ঘটনা অহরহ ঘটছে। একাডেমি থেকে সামাজিক প্রবাহ বা অপ্রাতিষ্ঠানিক চর্চা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় বিজ্ঞানকে আত্মোপলব্ধির জায়গায় নিতে পারছে না। নিচ্ছে কৌশল এবং লাভ-ক্ষতির জায়গা থেকে। সরাসরি লাভ-ক্ষতির কথা বিবেচনা না করে ব্রিটিশরা তাদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছিল বেশ কিছু দিন আগেও। সে জায়গাটাও এখন পড়তির দিকে। আর আমাদের দেশ তো সে রকম জায়গায় আসতেই পারেনি।
অথচ শিক্ষা মানে জীবনকে মহা বৈশ্বিক দৃষ্টিতে দেখার প্রণোদনা, মানুষের প্রতি মানুষের মমতা আর বৈচিত্র্যময় বিশাল কর্মক্ষেত্র। যেখানে সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটবে। তারই প্রতিফলন আজকের পৃথিবীতে দেখার কথা ছিল। কিন্তু শিক্ষায় কখনো এ কথাগুলো সেভাবে বলা হয়নি বা বলতে দেওয়া হয়নি। সবকিছু নেওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ উল্টো অর্থে। বিজ্ঞান সব সময় দেখিয়েছে বিশ্বজগতের সবকিছু কী প্রবলভাবে সম্পর্কযুক্ত। আর আমরা নিয়েছি কৌশল ও ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠার উপায় হিসেবে। তাহলে বিশ্বের কাছ থেকে মানবিকতা, সহমর্মিতা কেন আশা করব?
আসিফ, বিজ্ঞান বক্তা ও সম্পাদক, মহাবৃত্ত
একবিংশ শতাব্দীতে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছে অনেক দেশ। এতে অসংখ্য শিশু ও মানুষের মৃত্যু ঘটছে। ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, ডেঙ্গুসহ মরণব্যাধি রোগের আক্রমণ বাড়ছে। কেন এসব হচ্ছে? কেন এ রকম মানুষ তৈরি হলো, যারা পৃথিবীবাসীর জন্য বিপদ ডেকে আনছে? তাহলে আমাদের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আসলে কী শেখাচ্ছে?
এক শ বছর আগে আইনস্টাইন বলেছেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কাজ কোনো শিক্ষার্থীকে জ্ঞানী করে তোলা নয়, সমাজের সঙ্গে সমন্বয় ও সমঝোতা করে চলার মানসিকতা নিয়ে বড় করে তোলা।’ আবার জগদীশচন্দ্র বসু বলেছেন, ‘সবার একজন হয়ে সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।’ তাহলে সমাজ থেকে সহমর্মিতা, সহনশীলতা, নমনীয়তা মানুষের মধ্য থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে কেন?
১৯৯৮ সালের আগস্ট মাসের ঘটনা। প্রচণ্ড বর্ষণ শুরু হয়েছে। কোনোভাবেই বৃষ্টি থামছে না। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। বড় আকারের একটা বন্যার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছিল। এ সময়ই আইনস্টাইনের তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে ‘সময়ের প্রহেলিকা’ শিরোনামে একটি বক্তৃতা ঢাকা পরমাণু শক্তি কমিশনের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়। সেই সময় আমার এক শুভানুধ্যায়ী বন্ধু মাহমুদ হোসেন শাহীনের অনুরোধে বিজ্ঞান লেখক আবদূল্লাহ আল-মুতীকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানোর সিদ্ধান্ত হয়।
সেই মোতাবেক খ্যাতনামা এই বিজ্ঞান লেখকের বাসায় এক দুপুরে যাওয়া হয়। বাসায় যাওয়ার পর তাঁর আন্তরিকতার অভাব ছিল না।
সচিব পর্যায়ে চাকরি করার পরও তাঁর রুমে কোনো বিলাসিতার আড়ম্বরতা চোখে পড়েনি। বই দিয়ে ঠাসা মাঝারি আকৃতির একটি রুম। সেখানেই বসার ব্যবস্থা। পড়াশোনা, সে-সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা নিয়ে থাকতেই ভালোবাসেন তা বোঝা গেল। কুশলাদি জানার পর তাঁর জীবনের নানা অভিজ্ঞতার কথা বলতে থাকলেন; বিশেষ করে পত্র-পত্রিকায় লেখা ও টিভি অনুষ্ঠানে তাঁর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পাঠক শ্রোতাদের নানা প্রতিক্রিয়া। এ রকম একটা প্রাসঙ্গিক জায়গা ধরে বন্ধু মাহমুদ হোসেন শাহীন বলে উঠলেন, ‘আচ্ছা স্যার, তাহলে তো পাবলিক অনুষ্ঠানগুলোও খুব জরুরি।’ তিনি বললেন, ‘অবশ্যই। তবে এটি অথেনটিক হতে হবে।’
কিন্তু এই অথেনটিকের বিচার করবে কে? বই পড়া, ডকুমেন্টারি দেখা এবং সে-সম্পর্কে আলোচনা করাও তো একধরনের মুক্তভাবে জ্ঞানচর্চার একটা পথ হতে পারে। এটা শুধু কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা করবেন, এমন তো কোনো কথা হতে পারে না। যে কেউ তো তা করতে পারেন। তা না হলে জ্ঞানের বিস্তার ঘটবে কেমন করে, গণমুখী চর্চাই বা হবে কেমন করে?
তা ছাড়া স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা কি শুধু শিক্ষার্থীদের পড়াবেন এবং ডিগ্রি প্রদান করবেন? জ্ঞানচর্চার সঙ্গে যুক্ত হবেন না, সমাজের অন্যান্য প্রবাহের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া ঘটাবেন না?
লেখা বা কথা বলার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত কৌতূহল জাগানো আর আলোচনার সূত্রপাত ঘটানো। সেটা কোন পথে বিস্তার ঘটাবে, আলোচনার প্রকৃতিই তা বলে দিতে পারে। আর অন্যান্য মাধ্যমে জ্ঞানচর্চা যুক্ত হলে সেটা কতটা সংগতিপূর্ণ হবে, তারও একটা যাচাইকরণ প্রক্রিয়া দেখার সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। এভাবে সঠিকপথে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে। তাই এর জন্যও একটা পেশাদারি থাকা উচিত।
পৃথিবীতে একসময় প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানচর্চা ছিল না। ক্রমে ক্রমে অপ্রাতিষ্ঠানিক লোকজ ঐতিহ্যকে ভিত্তি করে এটি গড়ে উঠেছিল। প্রাতিষ্ঠানিক চর্চা অর্জিত জ্ঞানকে কাঠামো দিয়েছিল, ধাপে ধাপে এগোনোর শক্তি দিয়েছিল। এটা ডকুমেন্টেশন এবং সংরক্ষণের সুবিধা সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু নতুন নতুন চিন্তা ও ধারণার উদ্ভব ঘটাতে গিয়ে প্রাতিষ্ঠানিকতার পাশাপাশি অপ্রাতিষ্ঠানিক চর্চাকে বন্ধ করতে বলেনি। এটা বন্ধ হলে একটা পর্যায়ে নতুন চিন্তার উদ্ভব ও বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে এবং একই গোলকধাঁধায় ধাক্কা খাবে। এ জন্য কৌতূহল সৃষ্টি এবং বারবার পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সঠিক পথ ধরে সত্যকে উদ্ঘাটন করা উচিত। এটা কোনো নির্দিষ্ট পদ্ধতি বা নিয়ম মেনে হতে পারে না। তাই প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উচিত নিজস্ব চর্চার পাশাপাশি অপ্রাতিষ্ঠানিক চর্চার সংযোগ সেতু তৈরি করা। এটা সহনশীলতা, নমনীয়তার পাশাপাশি বোঝাপড়ার বিস্তার ঘটাবে। আবদূল্লাহ আল-মুতী যে স্বগতোক্তি করলেন, তা অবশ্য ঠিক। ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও তিনি এসেছিলেন বক্তৃতা অনুষ্ঠানে এবং উৎফুল্ল চিত্তে বিদায় নিয়েছিলেন।
প্লেটোর একাডেমি ছিল পৃথিবীর প্রথম দিকের কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম। আর পৃথিবীর প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ছিল আলেকজান্দ্রিয়া গ্রন্থাগার। যদিও সেগুলো বর্তমানের মতো কাঠামোগত প্রতিষ্ঠান ছিল না। আর পৃথিবীর ইতিহাসে এ রকম অপ্রাতিষ্ঠানিক অভিজ্ঞতা থেকে জ্ঞানের বিস্তার ঘটতে শুরু করে। যৌথতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠানগুলো চলত। পরে ব্যক্তিমালিকানার ধারণা উদ্ভাবের পর বিশেষ করে জ্ঞানীদের মধ্যেও জীবন যাপনের জন্য অর্থের প্রয়োজন অনুভূত হয়। সে কারণে তাঁদের মধ্যে বেঁচে থাকার জন্য একটা আর্থিক ব্যাপার দরকার হয়ে পড়ে। তবে তাদের সরাসরি লাভ-ক্ষতির হিসাবের মধ্যে থাকা উচিত নয়, তাতে বাজে প্রভাব দেখা দিতে পারে। আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাজকে দীর্ঘমেয়াদি সুফলের বিবেচনায় রাখা দরকার। কিন্তু এগুলো আমাদের সমাজে পালিত হয়নি।
পাওয়া-না পাওয়ার টানাপোড়েনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মানুষগুলো বিপথগামী যে হয়ে পড়েছেন, তা তাঁরা নিজেরাও জানেন না। ফলে একধরনের দীর্ঘস্থায়ী সাংস্কৃতিক দূষণ তৈরি হয়েছে। বিষয়টা এতই স্বাভাবিক হয়ে গেছে যে শিক্ষা ও বাণিজ্যের পার্থক্যও তাঁদের কাছে অনুভূত হয় না।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, বিংশ শতাব্দীর আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাপারটা এতটা কেন্দ্রীভূতরূপে ছিল না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জ্ঞানী লোকেরা নিজেরাই নিজেদের রক্ষায় অধিকতর সচেষ্ট ছিলেন। সামগ্রিকতার রক্ষায় প্রাতিষ্ঠানিক পাহারাদারির দরকার পড়ত না। কেননা তাঁরা প্রাতিষ্ঠানিকতার পাশাপাশি অপ্রাতিষ্ঠানিক, অর্থাৎ সামাজিক মূল্যবোধ বিকাশের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন; বিশেষ করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যেই গবেষণাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে কেন্দ্রীভূত প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেখা দিতে শুরু করে। এ সময়েই বাড়তে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক। অর্থের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে প্রবেশ করতে থাকে ব্যবসায়িক চিন্তার ব্যাপক প্রভাব, যাকে বহুজাতিক সংস্কৃতিও বলা যায়। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অনিয়ম হতো না, এমন নয়। তবে দুই নম্বরিটা ছিল প্রধানত সুলভে সম্মান পাওয়ার উপায়। কিন্তু বহুজাতিক নৈতিকতার সরাসরি প্রভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয়ে লাভ-ক্ষতির নির্মম হিসাব ঢুকে পড়ে। যার এখন বাড়-বাড়ন্ত অবস্থা, সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
ফলে দেশে তো সেই অর্থে গবেষণামূলক বিজ্ঞান পত্রিকা নেই বললেই চলে। তা ছাড়া শীর্ষ পর্যায়ের ‘নেচার’ ও ‘সায়েন্স’-এর মতো পত্রিকাগুলোতে ছাপানো গবেষণাপত্র দেখলেই বোঝা যায় বেশির ভাগেরই কোনো ফলোআপ নেই। ছাপা হয় আর হারিয়ে যায়। কেউ আর মনে রাখে না।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মানের পত্রিকাগুলোতে ভুল স্বীকার করে গবেষণাপত্র প্রত্যাহারের ঘটনা অহরহ ঘটছে। একাডেমি থেকে সামাজিক প্রবাহ বা অপ্রাতিষ্ঠানিক চর্চা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় বিজ্ঞানকে আত্মোপলব্ধির জায়গায় নিতে পারছে না। নিচ্ছে কৌশল এবং লাভ-ক্ষতির জায়গা থেকে। সরাসরি লাভ-ক্ষতির কথা বিবেচনা না করে ব্রিটিশরা তাদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছিল বেশ কিছু দিন আগেও। সে জায়গাটাও এখন পড়তির দিকে। আর আমাদের দেশ তো সে রকম জায়গায় আসতেই পারেনি।
অথচ শিক্ষা মানে জীবনকে মহা বৈশ্বিক দৃষ্টিতে দেখার প্রণোদনা, মানুষের প্রতি মানুষের মমতা আর বৈচিত্র্যময় বিশাল কর্মক্ষেত্র। যেখানে সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটবে। তারই প্রতিফলন আজকের পৃথিবীতে দেখার কথা ছিল। কিন্তু শিক্ষায় কখনো এ কথাগুলো সেভাবে বলা হয়নি বা বলতে দেওয়া হয়নি। সবকিছু নেওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ উল্টো অর্থে। বিজ্ঞান সব সময় দেখিয়েছে বিশ্বজগতের সবকিছু কী প্রবলভাবে সম্পর্কযুক্ত। আর আমরা নিয়েছি কৌশল ও ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠার উপায় হিসেবে। তাহলে বিশ্বের কাছ থেকে মানবিকতা, সহমর্মিতা কেন আশা করব?
আসিফ, বিজ্ঞান বক্তা ও সম্পাদক, মহাবৃত্ত
ঝড়-জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষায় সন্দ্বীপের ব্লক বেড়িবাঁধসহ একাধিক প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৫৬২ কোটি টাকা। এ জন্য টেন্ডারও হয়েছে। প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ শুরু করছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তাগাদায়ও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন...
৮ ঘণ্টা আগেদেশের পরিবহন খাতের অন্যতম নিয়ন্ত্রণকারী ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাইফুল আলমের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিকে নিবন্ধন দেয়নি শ্রম অধিদপ্তর। তবে এটি কার্যক্রম চালাচ্ছে। কমিটির নেতারা অংশ নিচ্ছেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের...
৯ ঘণ্টা আগেআলুর দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়ে এবার নিজেই বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে রাজধানীতে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি করা হবে। একজন গ্রাহক ৪০ টাকা দরে সর্বোচ্চ তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন...
৯ ঘণ্টা আগেসপ্তাহখানেক আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অনেকের ওয়াল বিষাদময় হয়ে উঠেছিল ফুলের মতো ছোট্ট শিশু মুনতাহাকে হত্যার ঘটনায়। ৫ বছর বয়সী সিলেটের এই শিশুকে অপহরণের পর হত্যা করে লাশ গুম করতে ডোবায় ফেলে রাখা হয়েছিল। প্রতিবেশী গৃহশিক্ষকের পরিকল্পনায় অপহরণের পর তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়...
১০ ঘণ্টা আগে