ইশতিয়াক হাসান
দেশের বুনো হাতির কথা বললে প্রথমেই মাথায় আসে চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে পাহাড়ি অরণ্যে বিচরণ করা হাতিদের কথা। ময়মনসিংহ বিভাগের গারো পাহাড়ের সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারত-বাংলাদেশ মিলিয়ে ঘুরে বেড়ানো হাতিদের কথাও বলতে পারেন কেউ কেউ। সিলেটের বিভিন্ন অরণ্যে যে একসময় বুনো হাতির বিচরণ ছিল, এটা হয়তো বিশ্বাসই করতে চাইবেন না অনেকে। তেমনি বেশির ভাগেরই জানা নেই সিলেট বিভাগের একটি অরণ্যে এখনো দেখা মেলে বুনো হাতিদের।
তবে ওই অরণ্যতে ঘুরে বেড়ানো ছোট্ট এই হাতির পালটির বর্তমানে যে অবস্থা, তাতে সিলেট বিভাগের বনে বিচরণ করা শেষ বুনো হাতিরা হয়তো অচিরেই চিরতরে হারিয়ে যাবে। আজ ১২ আগস্ট বিশ্ব হাতি দিবসে বলব সিলেটের বুনো হাতিদের গল্পই।
সিলেটের মৌলভীবাজার জেলা ও ভারতের আসামের করিমগঞ্জ জেলার সীমান্তে অবস্থান পাথারিয়া হিল রিজার্ভের। জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার মোটামুটি বড় একটি এলাকা পড়েছে পাথারিয়া রিজার্ভের মধ্যে। এর একটি অংশ লাঠিটিলা। ২০ বর্গকিলোমিটার সংরক্ষিত অরণ্য পড়েছে লাঠিটিলায়। ২০০৭ সালে প্রথম লাঠিটিলায় গেলে জানতে পারি, বনটিতে বিচরণ আছে বুনো হাতিদের। তবে বছরজুড়ে এরা বাংলাদেশে থাকে না। করিমগঞ্জ আর বাংলাদেশের জঙ্গল মিলিয়ে বিচরণ এদের। বাংলাদেশ অংশে এলে লাঠিটিলাতেই তাদের ঘোরাফেরা বেশি। দুর্ভাগ্যক্রমে কখনো এই বুনো হাতিদের দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি। তবে বনচারী মানুষ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে শুনেছিলাম ২০১১ সালেও দলটিতে ৮-৯টি হাতি ছিল।
একসময় সিলেট বিভাগের বিস্তৃত এলাকায় চরে বেড়াত বুনো হাতিদের পাল। এমনকি গত শতকের মাঝামাঝি এবং তার পরেও হাতিদের এত খারাপ অবস্থা ছিল না। লাঠিটিলার বুনো হাতিদের গল্পে ফেরার আগে বরং সিলেট বিভাগের সেই হারিয়ে যাওয়া হাতিদের নিয়ে কিছু কথা বলা যাক।
কানাইঘাটের পরিত্যক্ত চা-বাগান নুনছড়ির ঝোপ-জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে অন্ধকারে হেঁটে এক দল মানুষ পাচার করত চাল, কাপড় বা অন্য কিছু। সীমান্তের ওপারে পৌঁছে দিলেই মিলবে টাকা। চোরাচালানের দলটার ওপর একবার বুনো হাতির পাল হামলা করে। বিশাল সীমান্ত এলাকার কয়েকজন পুলিশের পক্ষে ওই দলকে সামাল দেওয়া সম্ভব ছিল না। তাদের হয়ে কাজটা করে দেয় পাহাড় থেকে নেমে আসা বুনো হাতিরা। গল্পটা ১৯৫১ সালের। এনায়েত মওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে মেলে এ বর্ণনা।
এই বইয়ে আরেকটি ঘটনার বর্ণনা দেন এনায়েত মওলা। ১৯৫০-এর দশকে লালাখাল আরও বুনো ছিল। সেখানে একবার এক বন্ধুসহ বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। হরিণ শিকার করতে গিয়ে দেখেছিলেন বুনো হাতিদের। অন্ধকার নামলেই খাবারের খোঁজে পাহাড় থেকে বুনো হাতির পাল নেমে আসে এদিককার বাঁশবনে। সরদার হাতির চিৎকারে কেঁপে ওঠে বনানী। অন্ধকারে চুপচাপ মরার মতো পড়ে থাকায় তাদের কয়েক হাত দূরের ছড়া দিয়ে পানিতে ছপ ছপ শব্দ তুলে চলে যায় বুনো হাতির দল।
আবদুর রহমান চৌধুরীর ‘জানোয়ারের খাসমহল’ বইয়েও আছে সিলেট-সুনামগঞ্জের সীমান্ত এলাকায় বুনো হাতিদের দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানোর বিবরণ। অবশ্য বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়েও সিলেট অঞ্চলের এই হাতিরা বছরজুড়ে আমাদের দেশের বনাঞ্চলে থাকত না। ভারতের খাসিয়া-জৈন্তিয়া পাহাড় এবং সিলেট বিভাগের সমতল ও টিলাময় জঙ্গল মিলিয়ে ছিল এদের বিচরণ। এদিকে হবিগঞ্জের কালেঙ্গার জঙ্গলে এই একুশ শতকের গোড়ার দিকেও পাহাড় থেকে হাতির পাল নেমে আসার কথা জানান স্থানীয় গাইড আবদুর রহিম। সীমান্তঘেঁষা বাংলাদেশের বনে গাছপালা কমে যাওয়া ও সীমান্তে ভারতের কাঁটাতারের বেড়ার কারণে এখন লাঠিটিলা ছাড়া সিলেটের কোথাও বন্য হাতির চলাচলের খবর শোনা যায় না বললেই চলে।
স্থানীয় জনগণের দাবি, পাথারিয়া রিজার্ভের এই হাতিগুলো একসময় ছিল আসামের এক ব্যক্তির পোষা। মালিক মারা যাওয়ার পর তাঁর পরিবার হাতি পোষার খরচ জোগাড় করতে না পেরে এগুলো বনে ছেড়ে দেয়। ভারত ও বাংলাদেশের অরণ্যে বিচরণ করতে করতে এগুলো পুরো বুনো হাতিতে পরিণত হয়। মোট নয়টি হাতি ছিল বনে। আটটি মাদি ও একটি পুরুষ হাতি। পরের বছরগুলোয় বিদ্যুতায়িত হওয়াসহ নানা কারণে কয়েকটি হাতির মৃত্যু হয়।
২০১৭ সালে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্থংকর চৌধুরী ও নাজিমুর রহমান তালুকদারের এক গবেষণায় বুনো হাতির সংখ্যা বলা হয়েছিল সাত। তবে ২০১৯ সালে পরিবেশ ও সংরক্ষণবিষয়ক ওয়েব পোর্টাল ‘মোঙ্গাবে’কে চৌধুরী জানান, ২০১৭ সালে বিদ্যুতায়িত হয়ে একটি হাতির মৃত্যুতে সংখ্যাটি ছয়ে নেমে এসেছে। আর দলের শেষ পুরুষ হাতিটির মৃত্যু হয় ২০১২ সালে। অবশ্য তাঁর ধারণা, ১৯৮৪ সালে এই এলাকায় ৩০-৪০টি বুনো হাতি ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, লাঠিটিলা-করিমগঞ্জের অরণ্যে ঘুরে বেড়ানো হাতির সংখ্যা এখন মোটে চার। ২০১৯ সালের পর আরও দুটি হাতির মৃত্যু হয়েছে বিদ্যুতায়িত হয়ে। এদিকে এ চারটিই মাদি হওয়ায় প্রজননের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধির আর কোনো সুযোগ নেই।
বন্য প্রাণী নিয়ে কাজ করা লাঠিটিলা এলাকার বাসিন্দা খোরশেদ আলমের সঙ্গে কথা হয় মোবাইল ফোনে। তিনি জানান, লাঠিটিলা বনের ভেতরে তিন জায়গায় ‘নুন খুলি’ আছে। সেখানে লবণ পানি ওঠে। এই লবণ পানি পানের জন্য এবং বনের বাঁশ খাওয়ার জন্য হাতির পালটির খুব পছন্দের জায়গা লাঠিটিলার অরণ্য। তবে জঙ্গলে বাঁশঝাড়ের পরিমাণ কমে গেছে এখন। এই হাতিগুলো যখন বাংলাদেশে আসে, তখন মানুষের ধানখেত ও সবজিখেতে হামলা চালানোয় বেড়েছে মানুষ-হাতি সংঘাত।
এদিকে চারটি হাতির মধ্যে একটি বেশ কিছুদিন থেকেই অসুস্থ। গত মে মাসে খুব অসুস্থ হয়ে পড়লে লাঠিটিলার বিভিন্ন লোকালয়ে বারবার চলে আসতে দেখা যায়। পরে বন বিভাগের একটি বিশেষজ্ঞ দল দিন দুয়েক খুঁজে বড়লেখা উপজেলার খাসিয়াদের একটি পুঞ্জির কাছে বয়স্ক হাতিটির সন্ধান পায়। ট্রাঙ্কুলাইজার গানের (চেতনাহীন করতে ব্যবহৃত বিশেষ ধরনের বন্দুক) সাহায্যে দূর থেকে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দেওয়া হয় একে। তারপর এটি গভীর বনে ঢুকে পড়ে।
সিলেট বিভাগের এই শেষ বুনো হাতিগুলোকে টিকিয়ে রাখার জন্য এখন সবচেয়ে জরুরি কোনোভাবে এদের বংশবিস্তার করা। এমনিতে ভারতের আসাম বুনো হাতির জন্য বিখ্যাত হলেও হাতির এই পালটির সঙ্গে সেখানকার অন্য কোনো পালের যোগাযোগ আছে—এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। সে ক্ষেত্রে আশপাশের এলাকায় থাকা পোষা পুরুষ হাতির মাধ্যমেও বংশবৃদ্ধির চেষ্টা করা যেতে পারে। আশা করব বন বিভাগ প্রয়োজনে পাশের দেশের বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে। পাশাপাশি লাঠিটিলাসহ পাথারিয়া সংরক্ষিত অরণ্যের বিভিন্ন এলাকায় নতুন প্রাকৃতিক গাছপালার বাগান ও বাঁশবাগান গড়ে তোলার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে হাতিদের খাবারসংকট কাটবে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে হাতি চলাচলের পুরোনো করিডরগুলো শনাক্ত করে, এগুলো বুনো হাতি চলাচলের উপযোগী করাটাও জরুরি। তাহলে হয়তো সিলেট বিভাগের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন বনাঞ্চলে মনের আনন্দে আবারও বিচরণ করবে বুনো হাতির পাল।
লেখক: সাংবাদিক ও প্রকৃতিপ্রেমী
দেশের বুনো হাতির কথা বললে প্রথমেই মাথায় আসে চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে পাহাড়ি অরণ্যে বিচরণ করা হাতিদের কথা। ময়মনসিংহ বিভাগের গারো পাহাড়ের সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারত-বাংলাদেশ মিলিয়ে ঘুরে বেড়ানো হাতিদের কথাও বলতে পারেন কেউ কেউ। সিলেটের বিভিন্ন অরণ্যে যে একসময় বুনো হাতির বিচরণ ছিল, এটা হয়তো বিশ্বাসই করতে চাইবেন না অনেকে। তেমনি বেশির ভাগেরই জানা নেই সিলেট বিভাগের একটি অরণ্যে এখনো দেখা মেলে বুনো হাতিদের।
তবে ওই অরণ্যতে ঘুরে বেড়ানো ছোট্ট এই হাতির পালটির বর্তমানে যে অবস্থা, তাতে সিলেট বিভাগের বনে বিচরণ করা শেষ বুনো হাতিরা হয়তো অচিরেই চিরতরে হারিয়ে যাবে। আজ ১২ আগস্ট বিশ্ব হাতি দিবসে বলব সিলেটের বুনো হাতিদের গল্পই।
সিলেটের মৌলভীবাজার জেলা ও ভারতের আসামের করিমগঞ্জ জেলার সীমান্তে অবস্থান পাথারিয়া হিল রিজার্ভের। জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার মোটামুটি বড় একটি এলাকা পড়েছে পাথারিয়া রিজার্ভের মধ্যে। এর একটি অংশ লাঠিটিলা। ২০ বর্গকিলোমিটার সংরক্ষিত অরণ্য পড়েছে লাঠিটিলায়। ২০০৭ সালে প্রথম লাঠিটিলায় গেলে জানতে পারি, বনটিতে বিচরণ আছে বুনো হাতিদের। তবে বছরজুড়ে এরা বাংলাদেশে থাকে না। করিমগঞ্জ আর বাংলাদেশের জঙ্গল মিলিয়ে বিচরণ এদের। বাংলাদেশ অংশে এলে লাঠিটিলাতেই তাদের ঘোরাফেরা বেশি। দুর্ভাগ্যক্রমে কখনো এই বুনো হাতিদের দেখার সৌভাগ্য আমার হয়নি। তবে বনচারী মানুষ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে শুনেছিলাম ২০১১ সালেও দলটিতে ৮-৯টি হাতি ছিল।
একসময় সিলেট বিভাগের বিস্তৃত এলাকায় চরে বেড়াত বুনো হাতিদের পাল। এমনকি গত শতকের মাঝামাঝি এবং তার পরেও হাতিদের এত খারাপ অবস্থা ছিল না। লাঠিটিলার বুনো হাতিদের গল্পে ফেরার আগে বরং সিলেট বিভাগের সেই হারিয়ে যাওয়া হাতিদের নিয়ে কিছু কথা বলা যাক।
কানাইঘাটের পরিত্যক্ত চা-বাগান নুনছড়ির ঝোপ-জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে অন্ধকারে হেঁটে এক দল মানুষ পাচার করত চাল, কাপড় বা অন্য কিছু। সীমান্তের ওপারে পৌঁছে দিলেই মিলবে টাকা। চোরাচালানের দলটার ওপর একবার বুনো হাতির পাল হামলা করে। বিশাল সীমান্ত এলাকার কয়েকজন পুলিশের পক্ষে ওই দলকে সামাল দেওয়া সম্ভব ছিল না। তাদের হয়ে কাজটা করে দেয় পাহাড় থেকে নেমে আসা বুনো হাতিরা। গল্পটা ১৯৫১ সালের। এনায়েত মওলার ‘যখন শিকারি ছিলাম’ বইয়ে মেলে এ বর্ণনা।
এই বইয়ে আরেকটি ঘটনার বর্ণনা দেন এনায়েত মওলা। ১৯৫০-এর দশকে লালাখাল আরও বুনো ছিল। সেখানে একবার এক বন্ধুসহ বেড়াতে গিয়েছিলেন তিনি। হরিণ শিকার করতে গিয়ে দেখেছিলেন বুনো হাতিদের। অন্ধকার নামলেই খাবারের খোঁজে পাহাড় থেকে বুনো হাতির পাল নেমে আসে এদিককার বাঁশবনে। সরদার হাতির চিৎকারে কেঁপে ওঠে বনানী। অন্ধকারে চুপচাপ মরার মতো পড়ে থাকায় তাদের কয়েক হাত দূরের ছড়া দিয়ে পানিতে ছপ ছপ শব্দ তুলে চলে যায় বুনো হাতির দল।
আবদুর রহমান চৌধুরীর ‘জানোয়ারের খাসমহল’ বইয়েও আছে সিলেট-সুনামগঞ্জের সীমান্ত এলাকায় বুনো হাতিদের দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানোর বিবরণ। অবশ্য বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়েও সিলেট অঞ্চলের এই হাতিরা বছরজুড়ে আমাদের দেশের বনাঞ্চলে থাকত না। ভারতের খাসিয়া-জৈন্তিয়া পাহাড় এবং সিলেট বিভাগের সমতল ও টিলাময় জঙ্গল মিলিয়ে ছিল এদের বিচরণ। এদিকে হবিগঞ্জের কালেঙ্গার জঙ্গলে এই একুশ শতকের গোড়ার দিকেও পাহাড় থেকে হাতির পাল নেমে আসার কথা জানান স্থানীয় গাইড আবদুর রহিম। সীমান্তঘেঁষা বাংলাদেশের বনে গাছপালা কমে যাওয়া ও সীমান্তে ভারতের কাঁটাতারের বেড়ার কারণে এখন লাঠিটিলা ছাড়া সিলেটের কোথাও বন্য হাতির চলাচলের খবর শোনা যায় না বললেই চলে।
স্থানীয় জনগণের দাবি, পাথারিয়া রিজার্ভের এই হাতিগুলো একসময় ছিল আসামের এক ব্যক্তির পোষা। মালিক মারা যাওয়ার পর তাঁর পরিবার হাতি পোষার খরচ জোগাড় করতে না পেরে এগুলো বনে ছেড়ে দেয়। ভারত ও বাংলাদেশের অরণ্যে বিচরণ করতে করতে এগুলো পুরো বুনো হাতিতে পরিণত হয়। মোট নয়টি হাতি ছিল বনে। আটটি মাদি ও একটি পুরুষ হাতি। পরের বছরগুলোয় বিদ্যুতায়িত হওয়াসহ নানা কারণে কয়েকটি হাতির মৃত্যু হয়।
২০১৭ সালে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্থংকর চৌধুরী ও নাজিমুর রহমান তালুকদারের এক গবেষণায় বুনো হাতির সংখ্যা বলা হয়েছিল সাত। তবে ২০১৯ সালে পরিবেশ ও সংরক্ষণবিষয়ক ওয়েব পোর্টাল ‘মোঙ্গাবে’কে চৌধুরী জানান, ২০১৭ সালে বিদ্যুতায়িত হয়ে একটি হাতির মৃত্যুতে সংখ্যাটি ছয়ে নেমে এসেছে। আর দলের শেষ পুরুষ হাতিটির মৃত্যু হয় ২০১২ সালে। অবশ্য তাঁর ধারণা, ১৯৮৪ সালে এই এলাকায় ৩০-৪০টি বুনো হাতি ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, লাঠিটিলা-করিমগঞ্জের অরণ্যে ঘুরে বেড়ানো হাতির সংখ্যা এখন মোটে চার। ২০১৯ সালের পর আরও দুটি হাতির মৃত্যু হয়েছে বিদ্যুতায়িত হয়ে। এদিকে এ চারটিই মাদি হওয়ায় প্রজননের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধির আর কোনো সুযোগ নেই।
বন্য প্রাণী নিয়ে কাজ করা লাঠিটিলা এলাকার বাসিন্দা খোরশেদ আলমের সঙ্গে কথা হয় মোবাইল ফোনে। তিনি জানান, লাঠিটিলা বনের ভেতরে তিন জায়গায় ‘নুন খুলি’ আছে। সেখানে লবণ পানি ওঠে। এই লবণ পানি পানের জন্য এবং বনের বাঁশ খাওয়ার জন্য হাতির পালটির খুব পছন্দের জায়গা লাঠিটিলার অরণ্য। তবে জঙ্গলে বাঁশঝাড়ের পরিমাণ কমে গেছে এখন। এই হাতিগুলো যখন বাংলাদেশে আসে, তখন মানুষের ধানখেত ও সবজিখেতে হামলা চালানোয় বেড়েছে মানুষ-হাতি সংঘাত।
এদিকে চারটি হাতির মধ্যে একটি বেশ কিছুদিন থেকেই অসুস্থ। গত মে মাসে খুব অসুস্থ হয়ে পড়লে লাঠিটিলার বিভিন্ন লোকালয়ে বারবার চলে আসতে দেখা যায়। পরে বন বিভাগের একটি বিশেষজ্ঞ দল দিন দুয়েক খুঁজে বড়লেখা উপজেলার খাসিয়াদের একটি পুঞ্জির কাছে বয়স্ক হাতিটির সন্ধান পায়। ট্রাঙ্কুলাইজার গানের (চেতনাহীন করতে ব্যবহৃত বিশেষ ধরনের বন্দুক) সাহায্যে দূর থেকে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দেওয়া হয় একে। তারপর এটি গভীর বনে ঢুকে পড়ে।
সিলেট বিভাগের এই শেষ বুনো হাতিগুলোকে টিকিয়ে রাখার জন্য এখন সবচেয়ে জরুরি কোনোভাবে এদের বংশবিস্তার করা। এমনিতে ভারতের আসাম বুনো হাতির জন্য বিখ্যাত হলেও হাতির এই পালটির সঙ্গে সেখানকার অন্য কোনো পালের যোগাযোগ আছে—এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। সে ক্ষেত্রে আশপাশের এলাকায় থাকা পোষা পুরুষ হাতির মাধ্যমেও বংশবৃদ্ধির চেষ্টা করা যেতে পারে। আশা করব বন বিভাগ প্রয়োজনে পাশের দেশের বন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে। পাশাপাশি লাঠিটিলাসহ পাথারিয়া সংরক্ষিত অরণ্যের বিভিন্ন এলাকায় নতুন প্রাকৃতিক গাছপালার বাগান ও বাঁশবাগান গড়ে তোলার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে হাতিদের খাবারসংকট কাটবে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে হাতি চলাচলের পুরোনো করিডরগুলো শনাক্ত করে, এগুলো বুনো হাতি চলাচলের উপযোগী করাটাও জরুরি। তাহলে হয়তো সিলেট বিভাগের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন বনাঞ্চলে মনের আনন্দে আবারও বিচরণ করবে বুনো হাতির পাল।
লেখক: সাংবাদিক ও প্রকৃতিপ্রেমী
জমির মালিক হযরত শাহ্ আলী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়। তবে ওই জমিতে ৩৯১টি দোকান নির্মাণ করে কয়েক বছর ধরে ভাড়া নিচ্ছে হযরত শাহ্ আলী মহিলা ডিগ্রি কলেজ। দোকানগুলোর ভাড়া থেকে সরকারের প্রাপ্য প্রায় ৭০ লাখ টাকা ভ্যাটও দেওয়া হয়নি। বিষয়টি উঠে এসেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) তদন্তে।
১৯ ঘণ্টা আগেকুড়িগ্রাম পৌর শহরে বাসচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী ছোট ভাই নিহত ও বড় ভাই আহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে মৎস্য খামারের কাছে কুড়িগ্রাম-চিলমারী সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
৪ দিন আগেবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগের মামলায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৮ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত শনিবার রাতে ও গতকাল রোববার তাঁরা গ্রেপ্তার হন।
৪ দিন আগেএক অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে শিল্পকলা একাডেমিতে। শিল্পকলা একাডেমির তিনটি হলেই কিছুদিন আগেও নাটক চলত। নাট্যকর্মীদের সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটত সেখানে। বহু পরিশ্রমে মাসের পর মাস নিজের খেয়ে, নিজের গাড়িভাড়া দিয়ে নাট্যকর্মীরা একেবারেই স্বেচ্ছাশ্রমে একটি শিল্প তিপ্পান্ন বছর ধরে গড়ে তুলেছেন। শিল্পকলা একাডেমি এখন
৮ দিন আগে